কোথাও লিখলেন, ঈসা (আ.)-এর ইহ জীবদ্দশায় ঈসায়ী ধর্মে কোনো বিকৃতি ঘটতে পারেনা। আবার নিজেই আরেক জায়গায় লিখলেন, ঈসায়ীধর্মে সমস্ত বিকৃতি ঘটেছে সেন্ট পৌলের মাধ্যমে! অথচ সেন্ট পৌলের মৃত্যু যখন হয়, মির্যার বিশ্বাস অনুযায়ী ঈসা (আ.) তখনো ইহ-জগতে ও কাশ্মীরে-ই ছিলেন!
এমন ব্যক্তিও কী করে আপনা দাবীতে সত্য হন?
মির্যা কাদিয়ানী লিখেছেন, ‘মোটকথা এই (ঈসায়ী) ধর্মে সমস্ত খারাবি পৌলের মাধ্যমেই সৃষ্টি হয়েছিল। হযরত মসীহ তো একজন সরলমনা মানুষ ছিলেন, তিনি কখনো চাননি যে কেউ তাঁকে একজন নেক মানুষও বলুক কিন্তু পৌল তাঁকে খোদা বানিয়ে দেয়।’ (চশমায়ে মসীহি, রূহানী খাযায়েন খ-২০/পৃ-৩৭৫)।
স্ববিরোধ কথা : তিনি আরেক জায়গায় সূরা আল মায়েদা আয়াত নং ১১৭ এর فلما توفيتنى (আর যখন আপনি আমাকে তুলিয়া নইলেন…) সম্পর্কে লিখেন, ‘মোটকথা হল, আয়াতটি দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে ঈসায়ীধর্মে সমস্ত ফাসাদ এবং বিভ্রান্তি হযরত ঈসা (আ.)-এর মৃত্যুর পরেই শুরু হয়েছিল।’ (রূহানী খাযায়েন খ-১১/পৃ-৩২১-২২)। প্রামাণ্য স্ক্যানকপি:-
সর্বপ্রথম ত্রিত্ববাদ বিষয়ক বৃক্ষ রোপণ করেন সেন্টপৌল! (চশমায়ে মসীহি, বাংলা অনূদিত কপির পৃষ্ঠা নং ৪৪ থেকে দ্রষ্টব্য)।
এখানে ‘স্ববিরোধ কথা’ কিভাবে হল তা বুঝার জন্য সেন্ট পৌলের মৃত্যু-তারিখটা জানা থাকা জরুরী। সেন্ট পৌলের মৃত্যু হয়েছিল ৬৪ বা ৬৫ ঈসায়ীতে।
- তার প্রমাণের জন্য মাইকেল এইচ হার্ট এর The 100 (দ্য হান্ড্রেড : অ্যা র্যাঙ্কিং অব দ্য মোস্ট ইনফ্লুয়েনশিয়াল পারসন্স ইন হিস্ট্রি) গ্রন্থ দ্রষ্টব্য। এছাড়া ST. PAUL (জন্ম ৪ বা ৫ খ্রিস্টাব্দ) (মৃত্যু ৬৪ খ্রিস্টাব্দ) দ্রষ্টব্য। আরো দেখুন, Brown, Raymond E. (1997) An Introduction to the New Testament, p. 436. Doubleday, Anchor Bible Reference Library, আন্তর্জাতিক বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়া সাইটেও ৬৪ বা ৬৭ খ্রিস্টাব্দ বলেই উল্লেখ পাওয়া যায়।
এবার বুঝে থাকলে বলুন, মির্যা কাদিয়ানী সূরা আল মায়েদা আয়াত নং ১১৭ এর ‘তাওয়াফফা’ হতে রূপক অর্থ মৃত্যু উদ্দেশ্য নিতে যে যুক্তির অবতারণা করে বললেন যে, এই আয়াত দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে ঈসায়ীধর্মে সমস্ত বিভ্রান্তি হযরত ঈসা (আ.)-এর মৃত্যুর পরেই শুরু হয়েছিল’—এ কথা সঠিক হলে তখন তারই বিশ্বাস অনুযায়ী সেন্ট পৌলের মৃত্যুর পরেও ঈসা (আ.) কাশ্মীরে থাকার যৌক্তিকতা কী? উল্লেখ্য, মির্যা কাদিয়ানী তার ‘মসীহ হিন্দুস্তান মে’ বইতে লিখেন, ‘ঈসা (আ.) ১২০ বছর বয়সে কাশ্মিরের শ্রীনগরেই মৃত্যুবরণ করেছেন এবং শ্রীনগরের খান ইয়ার মহল্লায় তার কবর রয়েছে।’ (রূহানী খাযায়েন খ-১৫ পৃ-১৪)। আশাকরি মির্যার স্ববিরোধী কথা কিভাবে হল তা এবার বুঝতে পেরেছেন।
লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী