Home Blog

কাদিয়ানীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করা কতটুকু সম্ভব?

কাদিয়ানীদেরকে রাষ্ট্রীয় ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করা কতটুকু সম্ভব তা নির্ভর করবে এন্টি কাদিয়ানী মুভমেন্ট কাদিয়ানীদের মুকাবিলায় কতটুকু শক্তিশালী তার উপর। কাদিয়ানীরা একতা, সাহসিকতা, কাঠামোগত, একাডেমিক এবং কর্মতৎপরতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে যতটা অগ্রগামী, তার চেয়েও কয়েকগুণ বেশি অগ্রগামী থাকা জরুরি এন্টি কাদিয়ানী মুভমেন্টের জন্য।

কাদিয়ানীদের রয়েছে শিশু, যুবক, বয়স্ক এবং মহিলা কর্মী বাহিনী। এদের প্রত্যেকের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মশালার ব্যবস্থাও থাকে। শিশু কর্মীদের বলা হয় আতফাল, যুবকদের কর্মী বাহিনীকে খুদ্দাম আর চল্লিশ বছরের বেশি বয়স্কদের বলা হয় আনসার। মহিলা কর্মীদের বলা হয় লাজনা।

এদের প্রত্যেকের কার্যক্রমগুলো স্ব স্ব অবস্থান থেকে পৃথকভাবে পরিচালিত হয়। প্রত্যেককে নিজ নিজ কার্যক্রমের উপর রিপোর্ট জমা দিতে হয়। প্রত্যেকটি কর্মী সদস্যের সাপ্তাহিক, পাক্ষিক এবং মাসিক কার্যক্রমের উপর মূল্যায়নধর্মী আলাদা ম্যাগাজিন, বুলেটিন প্রকাশ করা হয়। যারা কৃতিত্বের সাক্ষর রাখতে পারেন তাদেরকে কেন্দ্র থেকে বিশেষ সম্মাননা সহ পুরষ্কৃত করা হয়।

এদের ভি টিম হিসেবে যত শাখাপ্রশাখাই থাকুক না কেন, প্রত্যেকেই কেন্দ্রীয়ভাবে অভিন্ন নির্দেশনার মধ্য দিয়েই পরিচালিত হয় এবং সুনির্দিষ্ট টার্গেটেই এগিয়ে যায়।

এদের পুরো সত্তাটাই নির্দিষ্ট একটি কাঠামোর উপর দন্ডায়মান। হাইকমান্ড থেকে যখন যা নির্দেশ আসে তারা তা সুশৃঙ্খলভাবেই তা আঞ্জাম দিয়ে থাকে। তাদের প্রত্যেকটি কাজের জন্য পৃথকভাবে যোগ্য ও অভিজ্ঞ দায়িত্বশীল রয়েছেন। তারা হোম ওয়ার্ক ছাড়া কোনো কাজ করেন না। ফলে তাদের কর্মপদ্ধতি থাকে নিখুঁত। অবশ্যই তাদের কাজ গুলো প্রফেশনালি কর্মীদের মাধ্যমেও আঞ্জাম দেয়া হয়। তাদের প্রতিটি বিভাগ প্রশিক্ষিত কর্মী বাহিনী দ্বারা যেমন পরিচালিত, তেমনি সবাই হাইকমান্ডের নিকট জবাবদিহিতার আওতাভুক্ত।

তাদের নিজেস্ব অভিজ্ঞ ব্যক্তি বিশেষ দ্বারা আইটি সেক্টর পরিচালিত। তাদের রয়েছে একাধিক একাডেমিক ওয়েবসাইট। যেখানে তাদের গুরুত্বপূর্ণ লেখাগুলো সহ গোলাম আহমদ কাদিয়ানী আর তার সো-কল্ড খলীফাদের রচিত বইগুলোর পিডিএফ পাওয়া যায়। তাদের ওয়েব সাইট গুলোতে আরবি, উর্দু এবং বাংলা সহ সব ধরনের বই, ম্যাগাজিন, বুলেটিন, লিফলেট আপলোড থাকে। তারা তাদের বিরোধীদের সমালোচনার উপর খন্ডনমূলক আর্টিকেলও রেখে দিয়েছে।

এ তো গত ১৫ ই নভেম্বর ২০২৫ এর ঢাকা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খতমে নবুওয়ত সম্মেলনের বক্তাদের বক্তব্যগুলোর উপর তারা তাদের পালটা জবাবি ভিডিও প্রকাশ করেছে। যা স্যোসাল মিডিয়ায় পাওয়া যায়। তারা কতটা পূর্ব থেকে সুপরিকল্পিত প্লানিং নিয়ে অগ্রসরমান তা তাদের কাজের ধরণ দেখেই বুঝা যায়।

কাজেই কাদিয়ানীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করানোর সক্ষমতা তাদের বিরোধী পক্ষের কতটুকু আছে বা নেই তা পুরোপুরি নির্ভর করছে বিরোধী পক্ষের কার্যক্রমের টোটাল কাঠামোটা কী রকম! কাদিয়ানীদের সমপর্যায়ের? নাকি তার চেয়েও কম কিংবা বেশি?

খতমে নবুওয়ত এর ব্যানারে যারা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন তাদেরকে জিজ্ঞাসা করতে চাই যে,

১। সারা দেশে কাদিয়ানী আস্তানাগুলোতে কি আপনাদের পদচারণা রয়েছে? কাদিয়ানী মতবাদ যারা গ্রহণ করেছেন তারাও তো ইতিপূর্বে আমাদেরই ভাই বোন ছিলেন। তারা কিজন্য ভুল পথে গেলেন? তারা কি বুঝেশুনে কাদিয়ানী হন নাকি টাকা পয়সার লোভে বা আবেগে কাদিয়ানী হন? কোনো কারণ তো অবশ্যই আছে, তাই নয় কি? একটু ভেবে দেখেছেন?

২। কাদিয়ানীদের দাওয়াতি কর্মপন্থা কী? তারা সাধারণ মানুষকে কেমন বয়ান দ্বারা বুঝায় বা দাওয়াত দেয়? আপনারা কি সে বয়ানগুলো নোট করেছেন? সেসব বয়ানের বিপরীতে আপনারা কি আরও শক্তিশালী কোনো বয়ান তৈরি করতে পেরেছেন? আপনারা কি সেই শক্তিশালী বয়ানের উপর তারবিয়ত তথা প্রশিক্ষণ কর্মশালার ব্যবস্থা করেছেন? কিছু দাঈ তৈরি করে আক্রান্ত এলাকাগুলোয় দাওয়াতি কাজের কোনো উদ্যোগ নিতে পেরেছেন?

৩। কাদিয়ানীদের মত আপনাদের সুনির্দিষ্ট কোনো দক্ষ, যোগ্য, প্রশিক্ষিত, সাহসী এবং কর্মঠ কোনো লিডারশীপ কি আছেন যার সিদ্ধান্তকে সবাই সুপ্রিম সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন? অন্যথা আপনাদের সাপ্তাহিক, পাক্ষিক এবং মাসিক কার্যক্রমগুলো কিভাবে পরিচালিত হচ্ছে? দাঈদের কার্যক্রম গুলো কয়টা শাখায় বিভক্ত? তাদের কার্যক্রমের উপর মনিটরিং সেলে কতজন দায়িত্বশীল রয়েছেন? আইটি সেকশনে কাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাদের মাধ্যমে ওয়েবসাইট, ইউটিউব, স্যোসাল মিডিয়ায় কী কী আপডেট রয়েছে?

৪। বাংলাদেশে কাদিয়ানীরা জাতীয় দৈনিক গুলোতে সম্পূর্ণ পৃষ্ঠা ব্যাপী ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে থাকে। খতমে নবুওয়তের হাইকমান্ড থেকে সেটির প্রতিউত্তরে আমরা কেন কোনো আপডেট দেখিনা। জাতীয় দৈনিক গুলোতে কি খতমে নবুওয়তের হাইকমান্ড থেকে পাঠানো কোনো ডকুমেন্ট প্রকাশ করতে অনিহা প্রকাশ করেছিল?

এভাবে অনেক কিছুই জিজ্ঞেস করার আছে। আমাদের সম্মানিত উলামায়ে কেরামের উচিত, কাদিয়ানীদের মুকাবিলায় যদি সম্ভব হয় যুৎসই উদ্যোগ গ্রহণ করুন। কাঠামোগত ম্যানেজমেন্ট নিয়ে কাজের ময়দানে সুশৃঙ্খলভাবে কার্যক্রম অব্যাহত রাখুন। অন্যথা শুধুশুধু লোকদেখানো কাজ করে কোনো লাভ নেই। ২০০৩ সালে বেগম জিয়ার আমলে কাদিয়ানীদের কিছু বইপুস্তক সে সময় সরকার নিষিদ্ধ করা মাত্রই সারা দুনিয়া থেকে সরকারের উপর অনবরত চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল। প্রায় ১৫শ নিন্দাসূচক ফ্যাক্স এসে জমা হয়েছিল বেগম জিয়া বরাবর। বিশ্বব্যাপী কাদিয়ানীদের হাত কতটা লম্বা তা বোধহয় বেগম জিয়া সে সময় কিছুটা টের পেয়েছিলেন। তারপর থেকে বেগম জিয়া একদম সাইজ হয়ে যান। কাদিয়ানীদের বিরুদ্ধে ভুলেও আর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি তার সরকার। সুতরাং এখন বুঝতেই পারছেন যে, তাহলে এ মুহূর্তে আমাদের আসল করণীয় কাজটা কী? হ্যাঁ, ইউসুফ বিন্নুরী (রহ.), আব্দুস সালাম চাটগামী (রহ.) দুজন মহান ব্যক্তিত্ব খুবই চমৎকার বলে গেছেন। সেটি হচ্ছে, কাদিয়ানীদের নিকট যাওয়া, তাদেরকে ধরে ধরে বুঝাতে থাকা। তাদেরকে মোহাব্বত করে দ্বীনের পথে ডাকা। জবরদস্তি না করা। মাদ্রাসা স্কুলের মেধাবী ছাত্রদের তারবিয়ত দিয়ে আক্রান্ত এলাকাগুলোয় পাঠিয়ে দেয়া। আর এ কাজের জন্য যত টাকা পয়সা দরকার তা সবাই মিলে আঞ্জাম দেয়া।

রাষ্ট্রের প্রধান প্রধান দায়িত্বশীল যারা তাদের কাছে যাওয়া। সাংবাদিক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিজীবী প্রত্যেককে বুঝানো এবং কাদিয়ানীরা কেন ভুল পথে আছে তা তাদের সামনে তুলে ধরা। এ জন্য যত টাকার বইপুস্তক কেনা দরকার তা কিনে লাইব্রেরী আকারে বন্দোবস্তো করা। তাহলে মাত্র দশ বছরও লাগবেনা, এরই মধ্যে প্রায় সব কাদিয়ানীই ভুল বুঝতে পেরে ইসলামে ফিরে আসবে, ইনশাআল্লাহ। ফলে রাষ্ট্রীয় ভাবে তাদেরকে অমুসলিম ঘোষণা করার দরকারও পড়বেনা।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

মির্যা কাদিয়ানীর ‘মসীহ’ দাবীর অসারতা

কাদিয়ানীদের সাথে বিতর্ক করার আগে তাদের বই গুলো তো নিশ্চয়ই পড়া থাকতে হবে, সে সাথে তাদের জ্ঞানের দৌঁড়ও মাপা থাকতে হবে।

খাতাম কিবা খাতিম এ জাতীয় পুরনো ঝগড়াঝাটি বাদ দিয়ে একদম জায়গামতো হাত ঢুকিয়ে দিয়ে তাদের প্রশ্ন করতে হবে। স্যোসাল মিডিয়া ছাড়া কোনো কাদিয়ানীর সাথে আমার পক্ষে সাধারণত বিতর্কে জড়ানোর সুযোগ থাকেনা। বর্তমানে নানা কারণে স্যোসাল মিডিয়া থেকে অনেকটাই দূরে থাকছি। বেশ কিছুদিন আগের একটি তর্কবিতর্ক আজ আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাই। যাতে ‘আকীদায়ে খতমে নবুওয়ত’ টপিকে বিতর্ক আলোচনায় আমি আমার স্পেশাল নিয়মটা সবাইকে জানিয়ে রাখতে পারি।

একবার ওদেরই একজন মিশনারীকে তর্কের এক পর্যায়ে বললাম, আপনি আমাকে একটু ক্লিয়ারেন্স দিন তো, আপনারা কি ইন-জেনারেল নবুওয়তের ধারা অব্যাহত রয়েছে মানেন, নাকি রাসূল (সা.) এর ফরমান মুতাবেক শেষ যামানায় একজন নবী (ঈসা) এর পুনঃআগমন হবে, শুধু এটাই মানেন? যদি ইন-জেনারেল (সাধারণভাবে) নবুওয়তের ধারা অব্যাহত রয়েছে মানেন তাহলে আপনি আমার কথার উত্তর দিন যে, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর পর নবী আসার ধারা কেন চিরতরে বন্ধ বলা হল? এ যে দেখুন, গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর বইতে পরিষ্কার করে লিখা আছে যে, একমাত্র গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকেই নাকি “নবী” নাম পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে। (হাকিকাতুল ওহী ৩৩০, বাংলা সংস্করণ ১৯৯৯ ইং)। তাহলে ইন-জেনারেল নবুওয়তের ধারা অব্যাহত থাকল কোথায়? গোলাম আহমদের পর তো সেটা বন্ধ হয়ে গেল!

আর যদি মনে করেন যে, আপনারা-ও রাসূল (সা.) এর সেই ভবিষ্যৎবাণী মুতাবেক মুসলমানদের ন্যায় শুধুই একজন নবী (ঈসা) এর পুনঃ আগমনে বিশ্বাসী, যা সহীহ বুখারী, মুসলিম সহ হাদীসের বহু কিতাবে বর্ণিত হয়েছে, তাহলে আপনার প্রতি আমার মাত্র একটি প্রশ্ন থাকলো। তা হল, সেই আগত নবী (ঈসা) সম্পর্কে রাসূল (সা.) এর ভবিষ্যৎবাণীগুলোতে যা যা উল্লেখ রয়েছে সেগুলোর সাথে মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে আপনি কি কখনো মিলিয়ে দেখেছেন? আমার বিশ্বাস যে, আপনি মিলিয়ে দেখেননি অথবা আপনি আগে কখনো এভাবে বিষয়টিকে নিয়ে ভাবেননি!

আমি অথেনটিক বর্ণনাগুলো থেকে মাত্র কয়েকটি সম্পূর্ণ বর্ণনা আপনার সামনে তুলে ধরছি, মেহেরবানী করে আমাকে গোলাম আহমদের সাথে মিলিয়ে দেখাবেন। তবে কোনো মনগড়া ব্যাখ্যা দিতে পারবেন না। ব্যাখ্যা যদি দিতেই হয় তাহলে অন্তত গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর জন্মেরও পূর্বেকার মাননীয় যুগ ইমামগণ থেকে (ব্যাখ্যা) দিতে হবে।

বলাবাহুল্য, রাসূল (সা.) এর কোনো কোনো ভবিষ্যৎবাণী শপথ বাক্য সহকারেও উল্লেখ আছে। ফলে সেটিতে উল্লিখিত “ইবনে মরিয়ম” (মরিয়ম পুত্র) হতে রূপক কোনো অর্থ উদ্দেশ্য হতে পারেনা আর সেখানে আগত “নবী” সম্পর্কে পরিষ্কার বলা আছে যে, তিনি ইবনে মরিয়ম তথা মরিয়মের পুত্র, যিনি কেয়ামতের পূর্বে যথাসময়ে নাযিল হবেন। মানে তিনি জন্মগ্রহণ করবেন না, বরং বনী ইসরাইলের জন্য প্রেরিত পুরনো একজন নবী, যার পুনঃআগমন শুধুই ‘উম্মতি’ হিসেবে । আল্লাহ তার শাসনামলে ইসলামকে অপরাপর সমস্ত বাতিল দ্বীনের উপর বিজয় দান করবেন। আর তাঁর নির্দেশে যুদ্ধকর (জিজিয়া) স্থগিত করা হবে। অর্থাৎ সে সময়টিতে জিজিয়ার অপশন বাতিল করে দেয়া হবে। ধর্মযুদ্ধ চলমান থাকার একপর্যায়ে ইসলাম বিরোধীরা হয়ত যুদ্ধে নিহত হবে নয়তো বা আত্মসমর্পণ করে পর্যায়ক্রমে ইসলাম গ্রহণ করবে। ফলে একটি সময়ের ব্যবধানে ঐ ধর্মযুদ্ধটাও স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঐ নবী (ঈসা) এর জীবদ্দশাতেই বন্ধ হয়ে যাবে। এ-সংক্রান্ত সবগুলো সহীহ হাদীসকে একসাথ করে দেখলে সে সময়কার পুরো ঘটনার পটভূমি এটাই দাঁড়াবে।

আমি আপনাকে চ্যালেঞ্জ করছি, আপনি উক্ত ভবিষ্যৎবাণী অনুসারী গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে শতভাগ তো দূরের কথা, ২ পার্সেন্টও প্রমাণ করতে পারবেন না।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, আপনি যার চোখ দিয়ে ইসলাম দেখছেন এবং যার শিক্ষামতে পবিত্র কুরআনের নামে ঈসা (আ.)-কে মেরে ফেলতে বসে আছেন, সেই গোলাম আহমদ কাদিয়ানী নিজেই তার আরেকটি রচনায় লিখে গেছে,

اب ثبوت اس بات کا کہ وہ مسیح موعود جس کے آنے کا قران کریم میں وعدہ دیا گیا ہے یہ عاجز ہی ہے ان تمام دلائل اور علامت اور قرائن سے جو ذیل میں لکھتا ہوں ہر ایک طالب حق پر بخوبی کھل جائے گا۔

অর্থাৎ এখন একথা সাব্যস্ত হয়ে গেল যে, পবিত্র কুরআনে যেই মসীহ মওউদের আসার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে সে এই অধমই। (ইযালায়ে আওহাম, রূহানী খাযায়েন ৩/৪৬৮)।

এখন কথা হল, আহমদীয়া তথা কাদিয়ানী ধর্মমত অনুসারে পবিত্র কুরআন দ্বারাই যেখানে ঈসা (আ.)-কে মেরে ফেলতে এতকাল ধরে মগজের সর্বশক্তি ব্যয় করে আসছেন, সেই ঈসা দুনিয়াতে আবার আসার প্রতিশ্রুতি একই কুরআনে কিভাবে থাকতে পারে?

এখন হয়ত বলবেন যে, কুরআনে যে ঈসার আগমনের প্রতিশ্রুতি থাকার কথা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী লিখে গেছে তা হতে গোলাম আহমদ কাদিয়ানী নিজেই উদ্দেশ্য। যদি তাই হয় তাহলে আপনি দয়া করে আমাকে পবিত্র কুরআন থেকে আগত ঈসা (আ.) এর প্রতিশ্রুতিটা সর্বপ্রথম আয়াতের অনুবাদ দ্বারা বুঝিয়ে দিন। তারপর সেই আয়াতের সাথে গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর সম্পর্ক কী এবং কিভাবে, তা পরিষ্কার করে দিন। দয়া করে এ কষ্টটুকু করুন। যাতে আমিও সত্যিকারের আগত প্রতিশ্রুত সেই ঈসা (আ.)-কে চিনতে পারি এবং গোমরাহ হওয়া থেকে বাঁচতে পারি।

আমার চ্যালেঞ্জ রইল, কোনো কাদিয়ানী মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চেষ্টা করলেও গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে রাসূল (সা.) এর ফরমান মুতাবেক ‘প্রতিশ্রুত ঈসা’ (মসীহ) প্রমাণ করতে পারবেনা।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক
প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী
তারিখ- ০৭/১১/২০২৫

সমস্ত রাসূল গত হইয়া গিয়াছে-এর তাৎপর্য

সূরা আলে ইমরান আয়াত ১৪৪, আল্লাহ বলেছেন, “তাহার পূর্বে রাসূলগণই গত হইয়া গিয়াছে।” কিন্তু কাদিয়ানী তথা আহমদীয়াদের কৃত অনুবাদ হলো, তাহার পূর্বেকার সমস্ত রাসূল গত হইয়া গিয়াছে।

কাদিয়ানীদের সাথে এ নিয়ে যতবারই তর্ক হয়েছে তাদের বক্তব্য একটাই, ঈসা (আ.)-এর মৃত্যু হয়ে যাওয়াটা কুরআনের উক্ত আয়াতটি দ্বারা সাব্যস্ত। কিভাবে? তাদের বক্তব্য হলো, আল্লাহ এখানে মুহাম্মদ (সা.) এর পূর্বে সমস্ত রাসূল গত হয়ে গেছেন, এ কথা হতে তারা প্রত্যেকে মৃত্যুবরণ করেছেন, বলে বুঝিয়েছেন। কেননা, আয়াতে উল্লিখিত الرُّسُلُ শব্দের শুরুতে যুক্ত আলিফ-লামকে ‘ইস্তিগরাকি’ বলা হয়, যা গত হয়ে যাওয়া রাসূলগণের সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করবে। আর যদি তেমনটা না হয় তাহলে এতে দলীল অসম্পূর্ণ থাকবে। কেননা, যদি গত হয়ে যাওয়ার অর্থ থেকে কোনো একজনও বাহিরে থাকে তাহলে কুরআনের যে দাবী ও দলীল উত্থাপন করার ছিল তা আয়াত হতে পরিপূর্ণতা পাবেনা। মির্যা গোলাম আহমদ রচিত ‘ইযালায়ে আওহাম’ গ্রন্থে এসব লিখা আছে। তার রচনাসমগ্র রূহানী খাযায়েন ৩:৫৮৮ দ্রষ্টব্য।

কাদিয়ানীদের বইগুলোতে আরও লিখা আছে যে, আয়াতটিতে খুব খেয়াল করলে দেখা যাবে যে, পূর্বেকার গত হয়ে যাওয়া সমস্ত রাসূলের জন্য মৃত্যুবরণ করাই উদ্দেশ্য। কারণ, একই আয়াতে গত হয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া মাত্র দুটিই বলা হয়েছে। যথা মৃত্যু অথবা নিহত হওয়া। এখন যেহেতু গত হয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াটা পরবর্তীতে উল্লিখিত মৃত্যু আর কতলের সাথে নির্দিষ্ট হয়ে গেল, তখন তৃতীয় কোনো কিছুই এতে উদ্দেশ্য নেয়ার সম্ভাবনা থাকল না।

এবার কাদিয়ানীদের যুক্তি ও দলীলের খন্ডনমূলক জবাব দেয়া হবে। প্রথমতঃ উক্ত আয়াত হতে পূর্বেকার রাসূলগণের সবাইকে মৃত্যুবরণকারী সাব্যস্ত করার মধ্যে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কী উদ্দেশ্য? আল্লাহ কেন এধরণের কোনো আয়াত অবতীর্ণ করলেন? এতে তাঁর মুমিন বান্দাদের জন্য কী শিক্ষা রয়েছে? প্রশ্নগুলো নিয়ে ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করলেই কাদিয়ানীদের তথাকথিত দলীল প্রমাণের নামে সস্তা যুক্তিতর্কের হাকিকত উন্মোচিত হয়ে যাবে। আসুন, প্রথমে আয়াতটির অনুবাদ দেখে নিই। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেছেন,

وَ مَا مُحَمَّدٌ اِلَّا رَسُوۡلٌ ۚ قَدۡ خَلَتۡ مِنۡ قَبۡلِہِ الرُّسُلُ ؕ اَفَا۠ئِنۡ مَّاتَ اَوۡ قُتِلَ انۡقَلَبۡتُمۡ عَلٰۤی اَعۡقَابِکُمۡ ؕ وَ مَنۡ یَّنۡقَلِبۡ عَلٰی عَقِبَیۡہِ فَلَنۡ یَّضُرَّ اللّٰہَ شَیۡئًا ؕ وَ سَیَجۡزِی اللّٰہُ الشّٰکِرِیۡنَ

অর্থাৎ মুহাম্মদ একজন রাসূল মাত্র; তাঁর আগে রাসূলগণই গত হয়ে গেছেন। কাজেই যদি তিনি মারা যান বা নিহত হন তবে কি তোমরা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে? আর কেউ পৃষ্ঠ প্রদর্শন করলে সে কখনো আল্লাহ্‌র ক্ষতি করবে না; আর আল্লাহ শীঘ্রই কৃতজ্ঞদেরকে পুরস্কৃত করবে।”

ব্যাখ্যামূলক তাৎপর্যঃ এ আয়াতে হুঁশিয়ার করা হয়েছে যে, রাসূল (সা.)-এর পরও মুসলিমদের দ্বীনের উপর অটল থাকতে হবে। এতে আরো বুঝা যায় যে, উহুদের যুদ্ধের সময় সাময়িক বিপর্যয়ের সময় রাসূল (সা.) আহত হওয়া এবং তার মৃত্যুসংবাদ প্রচারিত হওয়ার পেছনে যে রহস্য ছিল, তা হলো তাঁর জীবদ্দশাতেই তাঁর মৃত্যু-পরবর্তী সাহাবায়ে-কেরামের সম্ভাব্য অবস্থার একটি চিত্র ফুটিয়ে তোলা, যাতে তাদের মধ্যে কোনো ক্রটি-বিচ্যুতি পরিলক্ষিত হলে রাসূল (সা.) স্বয়ং তা সংশোধন করে দেন এবং পরে সত্যসত্যই যখন তাঁর মৃত্যু হবে, তখন যেন সম্বিত হারিয়ে না ফেলেন। বাস্তবে তাই হয়েছে। রাসূল (সা.) এর ওফাতের সময় যখন প্রধান প্রধান সাহাবীগণও শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েন, তখন আবু বকর সিদ্দীক (রা.) এ আয়াত তেলাওয়াত করেই তাদের শান্তনা দেন। [দেখুন, বুখারীঃ ১২৪১, ১২৪২, ৪৪৫৩, ৪৪৫৪]।

আয়াতটির শানে নুযূল তথা প্রেক্ষাপটের বিচারে এটা মোটেও তার দাবী বলা যায় না যে, পূর্বেকার গত হয়ে যাওয়া প্রত্যেক রাসূলকেই আয়াতটি মৃত সাব্যস্ত করতে চাচ্ছে। কেননা আয়াতের মূলভাব ছিল, রাসূল (সা.) এর মৃত্যুবরণ করার কারণে সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে যেন কোনো ক্রটি-বিচ্যুতি পরিলক্ষিত না হয় এ কথা ভেবে যে, মুহাম্মদ (সা.) মৃত্যুবরণ করতে পারেন না! আর যেহেতু তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন সেহেতু তিনি কেমন ধরনের রাসূল? এরই প্রতিউত্তর স্বরূপ, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর মুমিন বান্দাদের সতর্ক করে দিয়েছেন এ বলে যে, মুহাম্মদ (সা.) তো শুধুই আল্লাহর একজন রাসূল মাত্র, তিনি তো খোদা নন যে চিরঞ্জীব হবেন! তাই তাঁর মৃত্যুবরণ করার সংবাদে তোমাদের শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়ার কোনো কারণ নেই। কারণ, তোমাদের নিশ্চয়ই জানা থাকা উচিত যে, তাঁর পূর্বেও রাসূলগণই গত হয়ে গিয়েছেন। কাজেই তিনিও তাঁদেরই ন্যায় একজন রাসূল মাত্র। তাই তাঁদের মত তাঁর ইহকাল ত্যাগ করে চলে যাওয়াতে তোমাদের অবাক হওয়ার কোনো কারণ থাকতে পারেনা। আয়াতের মূলভাব এটাই। কাজেই, ‘অনেক রাসূল অথবা সমস্ত রাসূল’ এ ধরনের অনর্থক শব্দচয়ন নিয়ে ঝগড়া করে কোনো লাভ নেই।

ইতিহাস প্রমাণ করে যে, হযরত উমর (রা.) এর মত বিশিষ্ট সাহাবীও নবী করীম (সা.)-এর মর্মান্তিক মৃত্যুর সময় চরম উত্তেজনার শিকার হয়ে তাঁর মৃত্যুকে অস্বীকার করে বসেন। আবূ বকর (রা.) বড়ই কৌশল অবলম্বন করে রাসূল (সা.)-এর মিম্বারে দাঁড়িয়ে এই আয়াত তেলাওয়াত করে শোনান। যাতে উমর (রা.) প্রভাবিত হন এবং তাঁর অনুভব হয় যে, যেন এই আয়াত এখনই অবতীর্ণ হল। কাজেই প্রশ্ন আসে, এমতাবস্থায় মৃত্যু এবং কতল বা নিহত হওয়ার নির্দিষ্ট ঐ দুইখানা প্রক্রিয়া যা নবী করীম (সা.) এর সাথেই খাস বা নির্দিষ্ট, সেটির সাথে গত হয়ে যাওয়া রাসূলগণের প্রাসঙ্গিকতা কী? কাদিয়ানীরা এ সমস্ত ধোকাবাজি কেন করে তা আল্লাহই মালুম। অথচ আয়াতে উল্লিখিত ‘খালাত’ (خلت) শব্দটি আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বিশেষ রহস্যের কারণেই ব্যবহার করেছেন। আর সেটি হলো, পূর্বেকার গত হয়ে যাওয়া রাসূলগণের মধ্যে বিশেষভাবে হযরত ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ.) এর ‘গত’ হবার ধরণ যে ভিন্ন ছিল, মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে তিনি শামিল নন; ব্যতিক্রমী এ রহস্যের জট খুলতেই ‘খালাত’ এর মত একটি সাধারণ শব্দ ব্যবহার করেছেন। নইলে তিনি শব্দটির পরিবর্তে সরাসরি মৃত্যু অর্থ বুঝাতে ‘মউত’ (ماتت) শব্দ ব্যবহার করতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি! আরবীতে প্রবাদ আছে, فعل الحاكم لا يخلو عن الحكمة অর্থাৎ জ্ঞানীর কোনো কাজ রহস্য বিনে হয় না। জ্ঞানী যারা তাদেরকে বিষয়টি নিশ্চয়ই ভাবিয়ে তুলবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনের এক জায়গায় ইরশাদ করেছেন, يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَٰكُم مِّن ذَكَرٍۢ وَأُنثَىٰ “হে মানবমণ্ডলী! নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে একজন নর এবং নারী থেকে সৃষ্টি করেছি।” (আল-হুজুরাত ১৩)। এখন আপনি যদি এ থেকে “সমস্ত মানুষ” উদ্দেশ্য নেন এবং তাতে নানা কারীনা বা ইংগিতের ভিত্তিতে তাখছীছের (ব্যতিক্রমের) নীতি না মানেন, তাহলে বলতে হবে যে, হযরত ঈসা (আ.)-এর জন্মও একজন নর এবং নারী উভয় থেকেই হয়েছিল! অথচ এটি পবিত্র কুরআনের শিক্ষার সুস্পষ্ট বিরোধী। অন্য আরেক জায়গায় আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেছেন, “তোমাদের জন্য মৃত, রক্ত এবং শুয়োরের মাংস হারাম করা হয়েছে।” (সূরা মায়েদা ০৩)। এখন নানা কারীনা থাকা সত্ত্বেও আপনি যদি এতেও তাখছীছের নীতি না মানেন, তাহলে বলতে হবে যে, সমস্ত মৃত প্রাণীই হারাম, সেটা হোক মাছ বা টিড্ডি। অথচ মাছ যদি মৃতও হয় তবু সেটি হালাল, কেউই হারাম মনে করেনা। কাদিয়ানীদের ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করা উচিত যে, তেমনি সূরা আলে ইমরান, আয়াত নং ১৪৪ এর মধ্যেও الرُّسُلُ শব্দের শুরুতে যুক্ত ‘আলিফ-লাম’ যদি ‘ইস্তিগরাকি’ বলেও ধরে নেয়া হয়, তথাপি শব্দটির অর্থেও তাখছীছের নীতি গ্রহণ করতে হবে। যেহেতু ঈসা (আ.)-কে উঠিয়ে নেয়া এবং শেষ যামানায় ফিরে আসা সম্পর্কে সূরা আলে ইমরান আয়াত নং ৪৬ এবং ৮১, সূরা নিসা আয়াত নং ১৫৮-৫৯, সূরা যুখরুফ ৬১ সহ বহু ইংগিতস্বরূপ প্রমাণ রয়েছে, যাকে উসূলের পরিভাষায় ইশারাতুন নস বলা হয়। উল্লেখ্য, ইশারাতুন নসও কাতি’ঈ বা অকাট্য জ্ঞান হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে। মজার ব্যাপার হলো, সূরা নিসা আয়াত নং ১৫৮, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেছেন, “বরং তিনি তাঁকে (ঈসাকে) তার দিকে উঠিয়ে নিয়েছেন।”

বলাবাহুল্য যে, বহু সহীহ হাদীস এবং সাহাবী ও তাবেয়ীর তাফসীর হতে সুস্পষ্ট সাক্ষ্য বিদ্যমান আছে যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হযরত ঈসা (আ.)-কে উঠিয়ে নিয়েছিলেন রুহুল কুদস জিবরাইল (আ.) এর মাধ্যমে। সূরা আল মায়েদা আয়াত নং ১১০ وَإِذْ كَفَفْتُ بَنِي إِسْرَائِيلَ عَنكَ إِذْ جِئْتَهُم بِالْبَيِّنَاتِ “তুমি স্মরণ কর যখন আমি তোমার কাছ থেকে বনী ইসরাইলীদের নিবৃত রেখেছিলাম, যখন তুমি তাদের নিকট সুস্পষ্ট নিদর্শন নিয়ে এসেছিলে” এখানে আল্লাহর এ কথা সে সময়ের সাথে সম্পর্কিত যখন তিনি ঈসাকে ইহুদীদের কবল থেকে মুক্ত করে আকাশে উঠিয়ে নিয়েছিলেন (ইমাম সুয়ূতী), সহ অসংখ্য সহীহ হাদীস তারই সমর্থনে সুস্পষ্ট ইঙ্গিতবিশিষ্ট। ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ গ্রন্থে ইমাম ইবনু কাসীর তেমনি একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন এইরূপ যে, لما أراد الله أن يرفع عيسى إلى السماء، خرج على أصحابه “ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, আল্লাহ যখন ঈসাকে আকাশে উঠিয়ে নিতে চাইলেন তখন তিনি (ঈসা) তাঁর সাথীদের দিকে বেরিয়ে এলেন।” হাদীসটি অনেক দীর্ঘ। ইবনে কাসীর (রহ.) এর সনদ সম্পর্কে বলেছেন, ইবনে আব্বাস পর্যন্ত এর বর্ণনাসূত্র সহীহ। সুতরাং কাদিয়ানীদের এখানে যে বক্তব্যটি শুনা যায় যে, ঈসাকে আল্লাহ “রাফিউকা ইলাইয়্যা” বলে অন্য সকল রাসূলের ন্যায় মৃত্যুর পর আধ্যাত্মিক উন্নীত করেছেন, শারীরিকভাবে তুলে নেননি—কাদিয়ানীদের এ সমস্ত কথাবার্তা কিছুতেই যুক্তিক নয়, বরং পুরাই আন্দাজে কথাবার্তা। কেননা জিবরাইল (আ.) কখনো কাউকে মৃত্যু দেন না, বরং এ কাজ শুধুই মালাকুল মউত আজরাইল (আ.) এরই। কিন্তু নির্বোধ কাদিয়ানীদেরকে এ সুক্ষ্ম বিষয়গুলো বুঝানোর সাধ্য কার!

পরিশেষে সর্বজন স্বীকৃত যুগ ইমাম, হযরত শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দেস আদ-দেহলভী (রহ.)-এর একটি বক্তব্য দিয়েই আজকের মত আলোচনা শেষ করব। তিনি তাঁর তাফসীরগ্রন্থে লিখেছেন : فَظَنُّوْا رَفْعَهُ إِلَي السَّمَاءِ قَتْلًا “ফলে তারা (ইহুদীরা) তাঁকে (ঈসাকে) আকাশে উঠিয়ে নেয়াকে হত্যা করার ধারণা করেছিল”। (আল-ফাওযুল কাবীর [আরবী] ৩৮; দারুল গাওছানী লিদ-দিরাসাতিল কুরআনিয়্যা, দামেস্ক হতে প্রকাশিত)। আল্লাহতালা আমাদেরকে আহমদীয়া তথা কাদিয়ানী এ দাজ্জালী ফেতনা থেকে পুরোপুরি রক্ষা করুন। আমীন।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

শেষনবী হওয়ার দাবী

প্রশ্ন : আহমদীয়া তথা কাদিয়ানী কমিউনিটির প্রতিষ্ঠাতা ভারতের পাঞ্জাবের কাদিয়ান গ্রামে জন্মগ্রহণকারী মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর “শেষনবী” দাবীও কি ছিল?

উত্তর :- ভারতীয় বংশোদ্ভূত মির্যা গোলাম আহমদের “নবী ও রাসূল” দাবী তো সুস্পষ্ট একটি প্রমাণিত ইতিহাস, কিন্তু সে যে শেষনবী দাবীও করেছিল তা কিন্তু অনেকেই জানেনা। বেশ কিছু দিন আগের কথা, বাংলাদেশের কাদিয়ানী জামাতের ন্যাশনাল আমীর আব্দুল আউয়াল সাহেব তার এক বক্তব্যে বললেন,

“মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী কখনো শেষনবী দাবী করেননি, তার শেষনবী দাবী নেই; আর আমরা তাকে শেষনবী মানিনা। হ্যাঁ আমরা তাকে “উম্মতিনবী” হিসেবে মানি।” (কাদিয়ানীদের সত্যের ‘সন্ধানে অনুষ্ঠানে’ জনৈক প্রশ্নকারীর প্রশ্নের জবাবে আব্দুল আউয়াল একথা বলে, ভিডিওটির ক্লিপ আমাদের সংরক্ষণে আছে)।

এবার দেখুন, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর শেষনবী দাবী ছিল কিনা?

মির্যা বশির আহমদ এম.এ তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত ‘দৈনিক আল ফজল’ পত্রিকা থেকে সরাসরি অনুবাদঃ-

  • “আমরা হযরত সাহেবের আবির্ভাবের পূর্বেকার মুসলমানদের সকল ফেরকাকে নিঃসন্দেহে মুসলমানই বলতাম। বৈধভাবে এরকমই বলা হত। কিন্তু যখন আখেরি নবী এবং মামুর মিনাল্লাহ (শেষনবী এবং আল্লাহর পক্ষ হতে আদিষ্ট) এর প্রকাশ ঘটল এবং শেষে ঐ সময়টি এসে গেল যে, দুধকে পানি থেকে পৃথক করা গেল। এতে বিপরীতমুখী দুইটি পক্ষ সৃষ্টি হয়ে গেল। অর্থাৎ মুমিন এবং কাফের। হযরত সাহেবকে (অর্থাৎ গোলাম আহমদকে) মান্যকারী মুমিন হিসেবে সাব্যস্ত আর মোহাম্মদ রাসূলুল্লাহ এবং অন্যান্য নবীগণের জামাতসমূহ যারা এই শেষনবীকে মানেনি, (তারা) কাফের সাব্যস্ত।”

(দৈনিক আল ফজল, তারিখ ০৮.০৬.১৯১৪, পৃষ্ঠা নম্বর ১৪, কলাম নম্বর ৩ দ্রষ্টব্য। এডিটর মির্যাপুত্র মির্যা বশির আহমদ এম.এ)।

অপ্রিয় হলেও সত্যকথা, এ দেশের মানুষ সাধারণত উর্দূ পড়তে পারেনা বলেই কাদিয়ানী নেতারা তাদেরকে খুব সহজেই ধোকা দিতে পারে। কারণ, কাদিয়ানী জামাতের বিরুদ্ধে বিশ্বের ইসলামি বিশেষজ্ঞ ও গবেষক উলামায়ে কেরাম যে সমস্ত চরম আপত্তিকর ও কুফুরি বিশ্বাসের দরুন তাকফীর (কাফের ফাতাওয়া) দিয়েছেন তার সিংহভাগই তাদের উর্দূ সাহিত্য রচনাবলীতেই বিদ্যমান। যা ওরা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে দূরে রাখে, সর্বসাধার‍ণ আহমদীয়া কাদিয়ানীরা কল্পানাতেও চিন্তা করতে পারেনা। আর তাদের বেশিরভাগ বাংলা লিটারেচারগুলোয় সেসব স্পর্শকাতর মতবাদের লেশমাত্রও খোঁজে পাওয়া যায়না।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

প্রিন্সিপাল মুহাম্মদ নূরুন্নবী

মসীহ’র কবরস্থান প্রসঙ্গে কাদিয়ানীর আনুমানিক বয়ান

কাদিয়ানী জামাতের প্রতিষ্ঠাতা ভারতীয় বংশোদ্ভূত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (মৃত. ১৯০৮ইং) ইসলামের সুপ্রতিষ্ঠিত কনসেপ্ট বিরোধী ধারণা দিতে গিয়ে একেকটা বিষয়ে পরস্পরবিরোধী বয়ান দিয়ে যায়। তার একটি ইসলাম পরিপন্থী বয়ান ছিল, হযরত ঈসা ইবনু মরিয়ম (আ.) ১২০ বছর বয়সে কাশ্মীরে মারা গিয়েছেন এবং সেখানেই তার কবর বিদ্যমান। আশ্চর্যের কথা হল, ঈসা ইবনু মরিয়ম (আ.) এর অনুসারী প্রায় দুইশত কোটির অধিক খ্রিস্টান সম্প্রদায় যেটা কখনো কল্পনাতেও ভাবেনা সেটাই মির্যা কাদিয়ানী সাহেব বলেছেন এবং অনর্থক একটা বিতর্কের সূত্রপাত করে গেছেন।

  • উল্লেখ্য, ঈসা ইবনু মরিয়ম (আ.) আল্লাহর একজন বান্দা ও রাসূল ছিলেন, আল্লাহ তাঁকে আকাশে উঠিয়ে নিয়েছেন, কেয়ামতের পূর্বে তিনি আকাশ থেকে দামেস্কে অবতরণ করবেন। এ সম্পর্কিত অথেনটিক তথ্যপ্রমাণ দেখতে এখানে Click করুন।

মজার ব্যাপার হল, কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের প্রথম সারীর নেতারাও কখনো চিন্তা করেননি যে, মির্যা কাদিয়ানী সাহেব ঈসা (আ.) এর কবর থাকা সম্পর্কে মতবাদ দিতে গিয়ে কীধরণের অনুমানের আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং কত জঘন্য বিভ্রান্তিকর বক্তব্য রেখে গিয়েছেন।

মির্যা কাদিয়ানীর ‘মালফুযাত’ (উর্দূ এডিশন) গ্রন্থে উল্লেখ আছে,

کشمیر میں مسیح کی قبر کا معلوم ہونے سے بہت قریب ہی فیصلہ ہو جاتا ہے اور سب جھگڑے طے ہو جاتے ہیں

অর্থাৎ “কাশ্মীরে মসীহ এর কবরের অনুসন্ধান দ্বারা খুব শীঘ্রই মীমাংস হয়ে যাবে এবং সকল বিতর্ক মিটে যাবে।” রেফারেন্স, মালফুযাত খন্ড ২ পৃষ্ঠা ৫২৭ মির্যা কাদিয়ানী।

স্ক্রিপ্ট দেখুন

তাছাড়া ১৯০১ সালের দিকে রচিত তারই একজন শিষ্য মির্যা খোদাবক্স কাদিয়ানী রচিত ‘আছলে মুছাফফা’ গ্রন্থে লিখা আছে,

اور جیسے کہ اللہ تعالی نے انہیں بتایا کہ محلہ خان یار سری نگر کشمیر میں ان کی قبر موجود ہیں

অর্থাৎ “আর যেমনিভাবে আল্লাহ তাআলা তাঁকে বলে দিয়েছেন যে, কাশ্মীরের শ্রীনগরের খানইয়ার মহল্লায় তাঁর (মসীহ ঈসা) কবর বিদ্যমান।” রেফারেন্স, আছলে মুছাফফা খন্ড ২ পৃষ্ঠা ২, রচনাকাল ১৯০১ ইং কাদিয়ান।

স্ক্রিপ্ট দেখুন

এখন একজন নিরপেক্ষ পাঠক চিন্তা করলেই বুঝতে পারবেন, কাদিয়ানী জামাতের গোড়াতেই অনুমান নির্ভর কত বিভ্রান্তি, সংশয় আর সন্দেহ জনিত সমস্যার তুফান বয়ে চলছে! একটু চিন্তা করুন, কোথাও লিখা আছে, ঈসা আলাইহিস সালাতু ওয়াসসালামের ‘কবর’ কাশ্মীরে থাকার বিষয়টি সম্পূর্ণ গবেষণা তথা অনুসন্ধান নির্ভর। আবার কোথাও লেখা আছে, এটি মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে কথিত ওহীর মাধ্যমে আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন অর্থাৎ বিষয়টি পুরোপুরি ওহী নির্ভর! আশাকরি কাদিয়ানীদের বিষয়টি অবশ্যই সবাইকে ভাবিয়ে তুলবে।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

কে মুসলমান আর কে মুসলমান না

কাদিয়ানীরা কয়েকটা বয়ান বাংলাদেশে চালায়, এর মধ্যে একটা হচ্ছে,

কে মুসলমান আর কে কাফের, সেটা নির্ধারণ করবেন শুধুমাত্র আল্লাহ, মানুষকে এটি নির্ধারণ করার ক্ষমতা দিয়েছে কে?

কাদিয়ানীদের প্রশ্নের উত্তর : মুসলমান হচ্ছে সেই ব্যক্তি যে ইসলামের সকল শিক্ষাকে নতশিরে মেনে নিয়েছে, আর যে ইসলামের অত্যাবশ্যকীয় কোনো শিক্ষাকে সরাসরি বা অপব্যাখ্যার মাধ্যমে অস্বীকার করে সে অন্য আর যতই আমল করুক; ইসলামের গণ্ডী থেকে বহিষ্কৃত।

কে মুসলমান আর কে কাফের তা ইসলামের অকাট্য শিক্ষার আলোকে ব্যক্তির ধর্মবিশ্বাস যাচাই করা দ্বারাও নির্ধারণ করা সম্ভব। আর তা সম্ভব বলেই যাকাত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে প্রথম খলীফা হযরত আবুবকর (রা.) জিহাদ ঘোষণা করতে পেরেছিলেন।

কাদিয়ানীদের উক্ত সস্তা বয়ান আমলে নিয়ে পালটা প্রশ্ন করতে পারি যে, তাহলে তো দেশের বিচার ব্যবস্থা, আইন আদালত সব কিছুই অপ্রয়োজনীয়, পুলিশ প্রশাসনেরও কোনো দরকার নেই। যেহেতু, কে অপরাধী আর কে অপরাধী নয় তা তো আল্লাহই সব চে ভালো জানেন, রোজ কেয়ামতে আল্লাহই তার বিচার করবেন!

কাদিয়ানীদের বইতে মুসলমানদের “অমুসলিম” বলে আখ্যা দেয়া :

মির্যাপুত্র মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ লিখেছেন, “আমাদের জন্য ফরজ হচ্ছে, আমরা যেন গয়ের আহমদীদেরকে (অ-কাদিয়ানীদেরকে) মুসলমান মনে না করি এবং তাদের পেছনে সালাত না পড়ি। কেননা আমাদের দৃষ্টিতে তারা খোদাতালার একজন নবীকে অস্বীকারকারী। এটি ধর্মীয় মু’আমালা, এতে কিছু করার মত কারো কোনো এখতিয়ার বা সুযোগ নেই।” (আনওয়ারুল উলূম ৩:১৪৮, মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ)।

এখন মির্যাপুত্র মির্যা বশির মুসলমানদের “অমুসলমান” সাব্যস্ত করতে পারলে তখন উক্ত ক্ষমতা শুধুমাত্র আল্লাহর উপর কিভাবে ন্যস্ত রইল?

সত্যি কথা বলতে, কাদিয়ানীদের উপরিউক্ত সস্তা বয়ানটি এক দিকে যেমন স্ববিরোধিতা, অপরদিকে সাধারণ মানুষের মনে ওয়াসওয়াসা সৃষ্টি করতে নির্লজ্জ ভন্ডামি! আল্লাহ আমাদেরকে তাদের সমস্ত ভন্ডামি আর কুফুরী মতবাদ থেকে হেফাজত করুন।

আমার দীর্ঘ আলোচনায় মূল পয়েন্টগুলো হলো,

১. ধর্মবিশ্বাসের ভিত্তি : ইসলামের অকাট্য ও সর্বজনস্বীকৃত শিক্ষাকে যে মেনে নেয়, সে মুসলমান। যে ব্যক্তি ইসলামের মৌলিক কোনো শিক্ষাকে অস্বীকার করে, সে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যায়।

২. উদাহরণ (যাকাত অস্বীকারকারী) : প্রথম খলীফা হযরত আবুবকর (রা.) যাকাত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছিলেন, যা প্রমাণ করে যে ইসলামের মৌলিক বিষয় অস্বীকারকারীদের অমুসলিম হিসেবে চিহ্নিত করা সম্ভব এবং শরীয়তের দৃষ্টিতে তা বৈধ।

৩. কাদিয়ানীদের স্ববিরোধিতা : কাদিয়ানীরা নিজেরা তাদের বইয়ে (যেমন “আমাদের জন্য ফরজ” উল্লেখ করে মির্যাপুত্র মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ-এর লেখা) সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের “অমুসলিম” বা “কাফের” বলে আখ্যা দেয়। এটি তাদের নিজেদের দাবির সম্পূর্ণ বিরোধী। আমি আশাকরছি যে, আমার এই জবাবটি কাদিয়ানীদের বিভ্রান্তিকর প্রচারণার বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী ও তথ্যভিত্তিক যুক্তি হিসেবে কার্যকর ভুমিকা রাখবে।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

ঈসা ইবনু মরিয়ম সম্পর্কে সাহাবায়ে কেরামগণের আকীদা

হযরত ঈসা ইবনু মরিয়ম (আ.) ছিলেন আল্লাহর একজন সম্মানিত নবী ও রাসূল। আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন স্বরূপ তিনি পিতা বিহীন জন্মগ্রহণ করেন। এ সম্পর্কে জানতে পবিত্র কুরআনের সূরা আলে ইমরান, আয়াত নম্বর ৪৭ পড়া যেতে পারে।

ঈসা ইবনু মরিয়ম ফিলিস্তিনের বেথেলহাম শহরে কুমারী মাতা বিবি মরিয়ম বিনতে ইমরানের গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন। আল্লাহতালা তাঁকে ৩৩ বছর বয়সসীমার মধ্যেই রূহুল কুদস জিবরাইল (আ.) এর মাধ্যমে উঠিয়ে নেন। সূরা নিসা, আয়াত নং ১৫৭ দ্রষ্টব্য। ইহুদীরা তাঁর বাড়ী ঘেরাও করে তাঁকে পাকড়াও করার যে পরিকল্পনা নিয়ে আসছিল, তাতে তারা ব্যর্থ হয়। আল্লাহ তাঁকে সে মুহূর্তে রূহুল কুদস জিবরাইল এর মাধ্যমে সাহায্য করেন (সূরা মায়েদা, আয়াত নম্বর ১১০, তাফসীরে জালালাইন-ইমাম সূয়ুতী রহ. দ্রষ্টব্য)। ইহুদীরা বহু চেষ্টা করে তাঁকে পাকড়াও করতে কিন্তু তারা তাঁর নাগাল পেতেও ব্যর্থ হয়, আল্লাহতালা তাঁকে তাদের ধরপাকড় থেকে নিবৃত রাখেন (সূরা মায়েদা, আয়াত ১১০)। পবিত্র কুরআনের বেশ কিছু আয়াতে আল্লাহতালা ইংগিতে সংবাদ দিয়েছেন যে, শেষ যামানায় তিনি তাঁকে পৃথিবীতে আবার পাঠাবেন। এ ধরনের ইংগিত পাওয়া যায় সূরা আলে ইমরান, আয়াত নং ৪৬ এবং ৮১ এর মধ্যে। তাছাড়া সূরা যুখরূফ, আয়াত নম্বর ৬১ আমাদের ডেকে ডেকে বলছে, নিশ্চয়ই ঈসা মসীহ কেয়ামতের একটি নিদর্শন। আয়াতটির ব্যাখ্যায় হাদীসসমূহে পরিষ্কার বলা হয়েছে যে, আল্লাহতালা শেষ যামানায় ঈসা ইবনু মরিয়মকে পৃথিবীতে আবার পাঠাবেন, তিনি এসে শরীয়তে মুহাম্মদীয়ার আদলে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবেন এবং একজন ন্যায়পরায়ণ শাসক ও ন্যায়নিষ্ঠ ইমামের ভূমিকায় থাকবেন। চল্লিশ-পয়তাল্লিশ বছরের মধ্যে তিনি ইন্তেকাল করবেন। ইমাম মাহদী এবং ঈসা ইবনু মরিয়ম দু’জন একই সময় হবেন।

হযরত ঈসা ইবনু মরিয়ম (আ.) শেষ যামানায় আবার ফিরে আসবেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বাণী-

হাদীস : সহীহ বুখারী ৩৪৪৮- وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ لَيُوْشِكَنَّ أَنْ يَنْزِلَ فِيكُمْ ابْنُ مَرْيَمَ حَكَمًا عَدْلًا فَيَكْسِرَ الصَّلِيْبَ وَيَقْتُلَ الْخِنْزِيْرَ وَيَضَعَ الْجِزْيَةَ وَيَفِيْضَ الْمَالُ حَتَّى لَا يَقْبَلَهُ أَحَدٌ حَتَّى تَكُوْنَ السَّجْدَةُ الْوَاحِدَةُ خَيْرًا مِّنْ الدُّنْيَا وَمَا فِيْهَا ثُمَّ يَقُوْلُ أَبُوْ هُرَيْرَةَ وَاقْرَءُوْآ إِنْ شِئْتُمْ وَإِنْ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ إِلَّا لَيُؤْمِنَنَّ بِهٰ قَبْلَ مَوْتِهٰ وَيَوْمَ الْقِيٰمَةِ يَكُوْنُ عَلَيْهِمْ شَهِيْدًا (النساء :159)

অর্থ- আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন, শপথ সেই সত্তার, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, শীঘ্রই তোমাদের মধ্যে মরিয়মের পুত্র ‘ঈসা (আঃ) শাসক ও ন্যায় বিচারক হিসেবে আগমন করবেন। তিনি ‘ক্রুশ’ ভেঙ্গে ফেলবেন, শূকর হত্যা করবেন এবং তিনি জিজিয়া উঠিয়ে দেবেন। তখন সম্পদের ঢেউ বয়ে চলবে। এমনকি কেউ তা গ্রহণ করতে চাইবে না। তখন আল্লাহকে একটি সিজ্দা করা তামাম দুনিয়া এবং তার মধ্যকার সমস্ত সম্পদ হতে অধিক মূল্যবান বলে গণ্য হবে। অতঃপর আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) বলেন, তোমরা ইচ্ছা করলে এর সমর্থনে এ আয়াতটি পড়তে পারঃ ‘‘কিতাবীদের মধ্যে প্রত্যেকে তাঁর (ঈসা (আঃ)-এর) মৃত্যুর পূর্বে তাঁকে বিশ্বাস করবেই এবং কিয়ামতের দিন তিনি তাদের ব্যাপারে সাক্ষ্য দিবেন।’’ (আন-নিসাঃ ১৫৯) – বুখারী ৩৪৪৮।

হযরত ঈসা (আ.) দ্বিতীয়বার ফিরে আসা সম্পর্কে উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহার একটি বর্ণনা নিম্নরূপ,

সনদ সহ সম্পূর্ণ বর্ণনাটি : “الرَّبِيعُ بْنُ صُبَيْحٍ ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ سِيرِينَ ، عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ : لا تَقُولُوا : لا نَبِيَّ بَعْدَ مُحَمَّدٍ ، وَقُولُوا : خَاتَمُ النَّبِيِّينَ ، فَإِنَّهُ يَنْزِلُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ حَكَمًا عَدْلا وَإِمَامًا مُقْسِطًا ، فَيَقْتُلُ الدَّجَّالَ ، وَيَكْسِرُ الصَّلِيبَ ، وَيَقْتُلُ الْخِنْزِيرَ ، وَيَضَعُ الْجِزْيَةَ ، وَتَضَعُ الْحَرْبُ أَوْزَارَهَا“. (519، تفسير يحيى بن سلام، سُورَةُ الأَحْزَابِ، تَفْسِيرُ سُورَةِ الأَحْزَابِ)

অর্থাৎ…. তোমরা বলোনা মুহাম্মদ (সা.) এর পর কোনো নবী নেই, (তবে) তোমরা বলবে ‘খাতামুন নাবিয়্যীন’। কেননা নিশ্চয়ই মরিয়ম পুত্র ঈসা (অচিরেই) একজন ন্যায়পরায়ণ শাসক এবং ন্যায়নিষ্ঠ ইমাম রূপে নাযিল হবেন, তিনি দাজ্জালকে কতল করবেন, ক্রুস ভেঙ্গে ফেলবেন, শুয়োর হত্যা করবেন, রাষ্ট্রীয় ট্যাক্স (জিজিয়া) উঠিয়ে দেবেন, তখন যুদ্ধ আপনা সমস্ত সরঞ্জামাদি গুটিয়ে নেবে। – (তাফসীরে ইয়াহইয়া ইবনু সাল্লাম ৫১৯, সূরা আহযাব ৪০)।

অপ্রিয় হলেও সত্য কথা যে, কাদিয়ানীরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের এ সুস্পষ্ট বাণীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আছে! নির্বোধরা জানেনা যে, ভারতের চেরাগ বিবির পুত্র মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী আগত সেই “মসীহ” দাবীতে জঘন্য একজন মিথ্যাবাদী। তার ব্রেইন ওয়াশ অনুসারীরা হয়ত ভুলে গেছে যে, মুহাম্মদী বেগম সম্পর্কে আল্লাহ’র নাম ভেঙ্গে তার একের পর এক প্রকাশিত তথাকথিত ওহী ইলহাম যেভাবে মিথ্যা প্রমাণিত হল, তার ব্যক্তিত্ব মরে যাওয়ার জন্য আদতে সেসব ঘটনা-ই যথেষ্ট বলা চলে।

আমরা জানি যে, হযরত আবূ হুরাইরাহ (রা.) সহ সকল সাহাবী এবং উম্মতে মুহাম্মদীয়ার সকল সদস্য অকপটে বিশ্বাস করতেন যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.) যে মসীহ তথা মরিয়ম পুত্র ঈসা (আ.) এর আগমনী সংবাদ দিয়েছেন তিনি অবশ্যই শেষ যামানায় যথাসময় ফিরে আসবেন, তাঁর অনুসারী খ্রিস্টান দুনিয়া সে সময়টিতে তাঁর প্রতি ঈমান এনে মুসলিম উম্মাহার দলভুক্ত হয়ে যাবেন। হযরত আবূ হুরাইরাহ (রা.) সূরা নিসা, আয়াত নম্বর ১৫৯ তিলাওয়াত করে পরিষ্কার ঘোষণা দিয়ে গেছেন যে, এ আয়াত আগত ঈসা ইবনু মরিয়ম (আ.) শেষ যামানায় ফিরে আসবেন, এ বিশ্বাসের পক্ষে অকাট্য মজবুত দলিল। ফলে ঈসা ইবনু মরিয়ম (আ.) এর মৃত্যু হয়ে গেছে বলা কিংবা এ ধরনের মতের সমর্থন পবিত্র কুরআনে থাকার দাবী করা নিতান্তই অন্যায় ও সত্য পরিত্যাগের শামিল। এমনকি তাদের ঐ ধরণের দাবী পবিত্র কুরআনকে স্ববিরোধিতার অভিযোগে অভিযুক্ত করার নামান্তর।

  • শায়খ ইবনু তাইমিয়াহ (রহ.) হযরত ঈসা ইবনু মরিয়ম (আ.)-কে আকাশে উঠিয়ে নেয়া বিষয়ে মুসলিম উম্মাহার ইজমা বা সর্বসম্মত মত উল্লেখ করে লিখে গেছেন,

وإجمعت الامة على ان الله رفع عيسى الى السماء

অর্থাৎ উম্মতে মুহাম্মদিয়া এ কথার উপর ইজমা বা একমত হয়েছেন যে, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা ঈসা আলাইহিস সাল্লামকে আকাশে উঠিয়ে নিয়েছেন। (বয়ানু তালবীসিল জাহমিয়্যাহ ২/৪১৯, রচিতা শায়খ ইবনু তাইমিয়াহ রহঃ)।

যাইহোক, সাধারণ কাদিয়ানীদের মনে প্রশ্ন জাগা দরকার যে, আগত যে মসীহ সম্পর্কে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সংবাদ দিয়েছেন তা হতে কোনো “রূপক মসীহ” কিভাবে উদ্দেশ্য হতে পারে? আল্লাহর রাসূল (সা.) শপথ বাক্য দ্বারা যে মসীহ এর ভবিষ্যৎবাণী দিবেন তা হতে যদি “রূপক মসীহ” উদ্দেশ্য হত তাহলে এ ধরনের ভবিষ্যৎবাণীর ক্ষেত্রে শপথ করে কী লাভ হল?

সব চে মজার ব্যাপার হচ্ছে, আগত মসীহ হতে “রূপক” উদ্দেশ্য হলে আল্লাহর রাসূল (সা.) শুধুই “মসীহ” শব্দ বলতেন, তিনি কোনোভাবেই “মরিয়ম পুত্র” বলতেন না। তাছাড়া সাহাবায়ে কেরামগণ-ও আগত মসীহ হতে “রূপক মসীহ” ই বুঝতেন। কিন্তু হয়েছে তার উল্টো। সমস্ত সাহাবী আগত মসীহ হতে “ইবনু মরিয়ম” ই বুঝেছিলেন এবং তাঁরা সেই বুঝ এর সমর্থনে কুরআন থেকে সূরা নিসা আয়াত নম্বর ১৫৯কে উদ্ধৃত করেছেন, সুবহানাল্লাহ।

শেষকথা হল, যাদের নিকট আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এবং সাহাবায়ে কেরামগণের শিক্ষাই একমাত্র শিক্ষা হিসেবেই চূড়ান্ত, তারা কখনো চাঁদাখোর ধোকাবাজ কাদিয়ানী মুরুব্বিদের কথায় কান দেবেনা। মুসলিম উম্মাহার সর্বসম্মত আকীদাই তাদের আকীদা হিসেবে গ্রাহ্য হবে। আল্লাহ আমাদেরকে নিরপেক্ষ ভাবে বিষয়টিকে বুঝার তাওফিক দিন।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

তোমরা বলো না, মুহাম্মদ সা. এর পর কোনো নবী নেই – হাদীসটি কি এতটুকু?

কাদিয়ানীদের স্বভাব হচ্ছে, নিজেদের ভ্রান্ত আকীদাকে সঠিক প্রমাণ করার অসৎ উদ্দেশ্যে হাদীসের আগপাছ বাদ দিয়ে উদ্দেশ্যমূলক অংশটুকু উল্লেখ করে সাধারণ মানুষকে ধোকা দেয়া। আবার সাধারণ মানুষ যেন বিজ্ঞ আলেম উলামার দ্বারেকাছে না ঘেঁষে সে পথটিও বন্ধ করে দেয়া। এ জন্য দেখা যায়, বেশিরভাগ কাদিয়ানী আলেম উলামা বিদ্বেষী। ফলে এদের কপালে কোনোদিন হিদায়াত জুটেনা।

বিজ্ঞ আলেম উলামা থেকে মানুষকে দূরে রাখলে ওদের কী লাভ?

এর উত্তর হচ্ছে, বিজ্ঞ আলেম উলামাগণ বাতিলপন্থীদের তাবৎ বদ আকীদা, অপব্যাখ্যা এবং ধোকাবাজি সম্পর্কে খুব ভালোমত অবগত। ফলে তাদের আশংকা থাকে, সাধারণ মানুষজন আলেম উলামার সান্নিধ্যে গেলে নিশ্চিত যে, তাদের ধোকাবাজি ফাঁস হয়ে যাবে। আর সেজন্য যত গুরুতর বদনাম রটানো যায়, তারা এর ষোলকলাই পূর্ণ করে থাকে। কাদিয়ানী মতবাদ থেকে ফেরত আসা অসংখ্য নও মুসলিমের ইন্টারভিউতে বিষয়টি ভালোমতই উঠে এসেছে। তাদের প্রায় প্রত্যেকে সাক্ষ্য দিয়েছে যে, নতুন কাউকে কাদিয়ানী বানানোর সময় তারা আলেম উলামার বিরুদ্ধে সীমাহীন বিষোদগার করে থাকে। যার কারণে কাদিয়ানী মতবাদ আগাগোড়াই ধোকা হওয়া সত্ত্বেও অধিকাংশ কাদিয়ানী চোখবন্ধ করে জীবন পার করে দিচ্ছেন। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তারা আলেম উলামার সান্নিধ্যে যান না।

কাদিয়ানীদের প্রায় লেকচারে শুনা যায়, তারা উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা এর একটি হাদীসের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করে যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষনবী নন, বরং তাঁর পরেও নবী রয়েছেন। তারা নিজ থেকে আরেকটু সংযোজন করে বুঝাতে চান যে,

  • মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘সর্বশেষ নবী’ – কথাটি আসলে ঠিক নয়। বরং তাঁর পরেও তাঁর আনুগত্যের ফয়েযের দরুন ‘নবী’ আসতে পারে। যিনি স্বতন্ত্র বা শরীয়তী নবী হবেন না। অন্যথা হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বলতেন না যে, “তোমরা বলো না যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পর কোনো নবী নেই।”

কাদিয়ানী চাঁদাখোর ধোকাবাজ মুরুব্বিদের নানা লেকচারে এভাবেই খতমে নবুওয়ত বিরোধী মনগড়া বয়ান দিতে শুনা যায়।

কাদিয়ানীদের সেসব মনগড়া বয়ানের জারিজুরি আজ আপনাদের সামনে ফাঁস করা হবে, ইনশাআল্লাহ। তার আগে আমি ঐ সব কাদিয়ানী চাঁদাখোর মুরুব্বিদের উদ্দেশ্যে কয়েকটি প্রশ্ন রাখতে চাই। তা হচ্ছে,

  • উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা এর হাদীসটি কি শুধু এতটুকু? হাদীসটির প্রথমোক্ত কথাগুলোর কি কোনো প্রাসঙ্গিকতা নেই?
  • যদি উক্ত হাদীসটি এতটুকু না হবে, তাহলে আপনারা কিজন্য সম্পূর্ণ হাদীসটি উল্লেখ না করে মানুষকে ধোকা দিয়ে যাচ্ছেন?
  • হাদীসটির প্রথমোক্ত কথা দ্বারা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরেও নবীগণের আগমনী ধারা অব্যাহত রয়েছে, এ কথা উদ্দেশ্য হলে তাহলে আপনারা মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর আগে এবং পরে ‘নবী’ দাবীদারদের মানেন না কেন?
  • পরিশেষে আরেকটি প্রশ্ন, হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা কি আগত ঐ নবী সম্পর্কে কোনো শর্ত বা কন্ডিশন দিয়ে গেছেন যে, তিনি স্বতন্ত্র বা শরীয়তী নবী ছাড়া ভিন্ন অর্থের তথাকথিত জিল্লি, বুরুজি, উম্মতিনবী টাইপের হবেন? নইলে আপনাদের এ ধারণাগুলোর অথেনটিক উৎস কী যা বিগত চৌদ্দশত বছরের ইসলামী বিশেষজ্ঞগণ দ্বারাও সমর্থিত? সত্য বলতে, চাঁদাখোর ধোকাবাজ কাদিয়ানী মুরুব্বিদের নিকট এর কোনো সদুত্তর নেই।

আসল আলাপে আসছি :

পাঠকবৃন্দ, উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হাদীসটি ধোকাবাজ কাদিয়ানী মুরুব্বিরা কাটছাঁট করেই পেশ করে থাকে। ফলে সাধারণ মানুষ ধোকায় পড়ে যায়। এ জন্য এখানে সম্পূর্ণ হাদীসটি অর্থ সহ তুলে ধরা হল,

সনদ সহ সম্পূর্ণ বর্ণনাটি : “الرَّبِيعُ بْنُ صُبَيْحٍ ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ سِيرِينَ ، عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ : لا تَقُولُوا : لا نَبِيَّ بَعْدَ مُحَمَّدٍ ، وَقُولُوا : خَاتَمُ النَّبِيِّينَ ، فَإِنَّهُ يَنْزِلُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ حَكَمًا عَدْلا وَإِمَامًا مُقْسِطًا ، فَيَقْتُلُ الدَّجَّالَ ، وَيَكْسِرُ الصَّلِيبَ ، وَيَقْتُلُ الْخِنْزِيرَ ، وَيَضَعُ الْجِزْيَةَ ، وَتَضَعُ الْحَرْبُ أَوْزَارَهَا“. (519، تفسير يحيى بن سلام، سُورَةُ الأَحْزَابِ، تَفْسِيرُ سُورَةِ الأَحْزَابِ)

ইয়াহইয়া ইবনু সাল্লাম এর সংক্ষিপ্ত বৃত্তান্ত : أما صاحب التفسير يحيى بن سلام فهو يحيى بن سلام بن أبي ثعلبة، التيمي بالولاء، من تيم ربيعة، البصري ثم الإفريقي القيرواني 124 – 200 هـ = 742 – 815 م.

অর্থাৎ…. তোমরা বলোনা মুহাম্মদ (সা.) এর পর কোনো নবী নেই, (তবে) তোমরা বলবে ‘খাতামুন নাবিয়্যীন’। কেননা নিশ্চয়ই মরিয়ম পুত্র ঈসা (অচিরেই) একজন ন্যায়পরায়ণ শাসক এবং ন্যায়নিষ্ঠ ইমাম রূপে নাযিল হবেন, তিনি দাজ্জালকে কতল করবেন, ক্রুস ভেঙ্গে ফেলবেন, শুয়োর হত্যা করবেন, রাষ্ট্রীয় ট্যাক্স (জিজিয়া) উঠিয়ে দেবেন, তখন যুদ্ধ আপনা সমস্ত সরঞ্জামাদি গুটিয়ে নেবে। – (তাফসীরে ইয়াহইয়া ইবনু সাল্লাম ৫১৯, সূরা আহযাব ৪০)।

হাদীসের মান : সহীহ

রাবীগণের সংক্ষিপ্ত বৃত্তান্ত : গ্রন্থকার ইয়াহইয়া ইবনু সাল্লাম (রহ.) একজন বিশ্বস্ত রাবী ও একজন তাবে তাবেয়ী। তিনি তাইমী বংশীয় ও ইরাকের বসরা নগরের অধিবাসী ছিলেন। জন্ম ১২৪ হিজরীতে এবং মৃত্যু ২০০ হিজরীতে। ইমাম যাহাবী (রহ.) ‘সিয়ারু আলামিন নুবালা’ (سير اعلام النبلاء) কিতাবে তাঁর জীবনী উল্লেখ করে বলেছেন, ابن أبي ثعلبة ، الإمام العلامة أبو زكريا البصري ، نزيل المغرب بإفريقية অর্থাৎ “ইয়াহইয়া ইবনু সাল্লাম এর দাদার নাম ছিল আবূ ছা’লাবাহ, তিনি একজন ইমাম ও আল্লামা, উপাধি আবূ যাকারিয়া আল বসরী, তিনি আফ্রিকার দেশ মরক্কো পাড়ি দেন।” ইমাম আবূ হাতিম তাঁকে সদূক বা সত্যবাদী বলেছেন, ইমাম ইবনু আদী তাঁর কাছ থেকে জ’ঈফ হাদীসগুলোও লিপিবদ্ধ করতেন। তিনি বিখ্যাত ইমামগণ যেমন ইমাম শু’বাহ, ইমাম সুফিয়ান আস সওরী এবং ইমাম মালেক প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ থেকে হাদীস শিখেছেন। তিনি ইরাকের বসরা নগরের বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত রাবী’ বিন ছুবাঈ (মৃত্যু ১৬০ হিজরী) এর কাছ থেকে হাদীস বর্ণনা করতেন। উল্লিখিত হাদীসটিও উক্ত মুহাদ্দিসের কাছ থেকে বর্ণিত। হাদীসটির সনদ মুত্তাসিল, রাবীগণের সবাই ছিকাহ বা নির্ভরযোগ্য।

খতমে নবুওয়ত সংক্রান্ত উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত একটি হাদীস নিম্নরূপ, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

لا يَبْقى بَعدي منَ النُّبوةِ شيءٌ إلَّا المُبشِّراتُ، قالوا: يا رسولَ اللهِ، وما المُبشِّراتُ؟ قال: الرُّؤيا الصالحةُ، يَراها الرَّجلُ، أو تُرى له

অর্থাৎ আমার পর নবুওয়তের কিছুই অবশিষ্ট নেই, তবে মুবাশ্বিরাত অবশিষ্ট থাকবে। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! মুবাশ্বিরাত কী? তিনি উত্তরে বললেন, সত্য স্বপ্ন, মানুষ যা দেখবে, অথবা তাকে দেখানো হবে। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস ক্রমিক নং ২৪৮৫৮, হযরত আয়েশা সিদ্দিকা হতে বর্ণিত, সনদ সহীহ)। বুখারী এবং বায়হাক্বীতেও হাদীসটি বর্ণিত আছে।

এ পর্যায় চাঁদাখোর কাদিয়ানী মুরুব্বিদের জিজ্ঞেস করতে চাই যে, হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা এর প্রথমোক্ত হাদীসে তাঁর উল্লিখিত বক্তব্য “তোমরা বলো না যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পর কোনো নবী নেই” দ্বারা তিনি যদি নবুওয়তের দ্বার এখনো খোলা রয়েছে বুঝাতে চাইতেন তাহলে মুসনাদে আহমদ গ্রন্থে বর্ণিত তাঁরই অপর আরেকটি বর্ণনায় “মুহাম্মদ (সা.) এর পর নবুওয়তের কিছুই অবশিষ্ট নেই” কথাটির কী অর্থ? কাজেই জ্ঞানীদের নিকট এখন পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা’র কথাটি খাস তথা নির্দিষ্ট একজন পুরাতন নবীর পুনরায় দুনিয়াতে আসার সাথে সম্পর্কিত। কাজেই এ ধরনের খাস কোনো বর্ণনা দ্বারা আম বা ব্যপক অর্থ উদ্দেশ্য নেয়া এবং নতুন নতুন নবীর আগমনী ধারা অব্যাহত রয়েছে বলে প্রচার করা সুস্পষ্ট ধোকাবাজি ছাড়া আর কিছু না!

শেষকথাঃ কাদিয়ানী চাঁদাখোর ধোকাবাজ মুরুব্বিরা এবার একটু বলুন তো, আপনাদের কথা অনুসারে উক্ত হাদীস দ্বারা নবী আগমনের ধারা অব্যাহত রয়েছে বুঝালে, তবে তো আপনাদের মানতে হবে যে, মির্যা কাদিয়ানীর পরেও নবী আগমনী ধারা অব্যাহত আছে! কিন্তু আপনারা তো তা মানেন না! বরং আপনাদের মির্যা কাদিয়ানী নিজ সত্তা সম্পর্কে স্বয়ং লিখে গেছেন যে, মুহাম্মদী সিলসিলার শেষনবী এ অধম (তথা মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী)। দেখুন, তাযকিরাতুশ শাহাদাতাইন (বাংলা অনূদিত) পৃষ্ঠা নং ৮২। তো এবার সমীকরণ কিভাবে মিলাবেন? আল্লাহ আপনাদের হিদায়াত দিন। আমীন।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

এলীয় সম্পর্কে কাদিয়ানী ‘বয়ান’ এর খণ্ডন

ভন্ড ও প্রতারক মসীহ দাবীদারদের ব্যাপারে বাইবেলের ‘মথি’ এর গসপেলে ২৪:৪-৫ ভাষ্যমতে সতর্কবাণী নিম্নরূপ-

যীশু (ঈসা) তার দ্বিতীয় আগমনকালে কী ঘটতে পারে সে সম্পর্কে শিষ্যদের বলতে গিয়ে ভণ্ড প্রবক্তারা যে আসবে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। যেমন, বাইবেলের নতুন নিয়মে লেখা আছে, “যীশু বললেন, শোন, সতর্ক থেকো তোমরা; কেউ যেন তোমাদের মন না ভোলায়। কেননা, আমার নাম নিয়ে অনেকেই তো আসবে আর বলবে, আমিই সেই খ্রিষ্ট এবং তারা অনেকের মনও ভুলাবে।” (মথি : অধ্যায় ২৪, পদ নং ৪-৫)।

এতে একদম পরিষ্কার হয়ে গেল যে, বাইবেলের সাক্ষ্যমতেও আগত ঈসা হতে কোনো নান্নুমিয়া বা চক্কুমিয়াকে রূপকের আদলে বুঝাবেনা, বরং মরিয়ম পুত্র ঈসা (আ.)ই উদ্দেশ্য। মুসলিম শরীফের একটি হাদীসে যার আবার এসে হজ্জ করার কথা বলা হয়েছে এবং যাঁর সম্পর্কে নবীকরিম (সা.) চার-চার বার নাবীউল্লাহ ঈসা অর্থাৎ আল্লাহর নবী ঈসা বলেছেন।

ঈসা (আ.) আবার এসে হজ্জ করা সম্পর্কে নবী করীম (সা.) ইরশাদ করেছেন,

وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَيُهِلَّنَّ ابْنُ مَرْيَمَ بِفَجِّ الرَّوْحَاءِ حَاجًّا أَوْ مُعْتَمِرًا أَوْ لَيَثْنِيَنَّهُمَا

অর্থাৎ সে সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ! মরিয়ম পুত্র ঈসা (আ.) নিশ্চিত রাওহা উপত্যকায় হজ্জ্ব (হাজ্জ/হজ) অথবা উমরাহ অথবা উভয়ের তালবিয়াহ্ পাঠ করবেন। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ২৮৯৬, ইসলামীক সেন্টার ২৮৯৫)। এ সম্পর্কে আরও পড়ুন

যাইহোক,

আজকের প্রসঙ্গ “এলীয়” নিয়ে। কাদিয়ানীদের বইগুলো যারাই পড়েছে তারা নিশ্চয়ই এ চরিত্রের সাথে পরিচিত আছেন।

আমি গতকাল তাদের বাংলায় অনূদিত “মালফুযাত” বইটি পড়ে শেষ করলাম। বইটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যতগুলো আলোচনা রয়েছে সেটির কেন্দ্রীয় আগ্রহ সম্পর্কে—আমি যদি একবাক্যে বলি তা হচ্ছে,

প্রত্যেককে গোলাম আহমদের ব্যক্তিসত্তা’কে স্বীকৃতি দেয়া অত:পর তার পছন্দমতো জীবন-যাপনে অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়া।

পৃথিবীর ইতিহাসে আমার জানামতে এমন একজন স্বীকৃত যুগ-ইমাম বা মুজাদ্দিদ অতীত হননি যিনি নিজেকে একবারের জন্যও “মুজাদ্দিদ” অথবা “ইমাম” হওয়ার ন্যূনতম দাবীটুকুও করে গেছেন বা লিখে গেছেন।

শুধু বইটি নয়, তার এভাবে আরও যত বই রয়েছে সবগুলো বইয়ের আবেদন একটাই, মির্যা কাদিয়ানীকে মেনে নেয়ার আহবান, তার সত্তাকে স্বীকৃতি দেয়ার বলিষ্ঠ আহবান। কেন তাকে মেনে নিতে হবে, তাকে মেনে না নিলে কী কী ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে, ইত্যাদি ইত্যাদি।

আমি তার লিখনীর ভেতর আরও একটি বিষয় খুব খেয়াল করেছি, সেটি হচ্ছে

পাঠকদের মস্তিষ্ক ধোলাই করতে যত ধরণের ভেল্কিবাজি রয়েছে তিনি তার ষোলকলাই পূর্ণ করে ছেড়েছেন। তিনি হাদীসের আগপাছ কর্তন করে উদ্দেশ্যমূলক ও খণ্ডিত অংশটি উল্লেখ করেছেন। আয়াত এবং হাদীসের “প্রসঙ্গ” এড়িয়ে গিয়ে খেয়ালখুশি মাফিক বয়ানের পর বয়ান দাঁড় করে গেছেন। তিনি তার উদ্দেশ্যমূলক কোনো দাবীকে গ্রহণযোগ্য মানে দাঁড় করতে প্রথমে একটি “বয়ান” দাঁড় করতেন। তার উক্ত বয়ানের সমর্থনে গ্রহণযোগ্য কোনো ভিত্তি থাকুক বা না থাকুক, তাতে তার কিছুই যায় আসেনা। এরপর তার কাঙ্ক্ষিত সেই আনুমানিক সীদ্ধান্তে (যেমন রূপক মসীহ, বুরুজ্জি মুহাম্মদ ইত্যাদি) পৌঁছার জন্য চলত যারপরনাই নির্লজ্জ ব্যর্থ চেষ্টা।

তন্মধ্যে তৌরাতের সেই ইউহান্না বা যোহনের তথাকথিত ইলিয়া এর আধ্যাত্মিকতায় আগমনের বয়ানটি অতিব প্রসিদ্ধ, যার উপর ভিত্তি করে মির্যা কাদিয়ানী তার কথিত “রূপক মসীহ” দাবীকে জায়েজ করতে চেয়েছিল। অথচ পুরো কাহিনীটাই ভিত্তিহীন ও প্রত্যাখ্যাত। কেননা মির্যা কাদিয়ানী নিজেও ইসরাইলী সোর্সগুলো সম্পর্কে লিখে গেছে,

غرض یہ چاروں انجیلیں جو یونانی سے ترجمہ ہو کر اس ملک میں پہیلائی جاتی ہیں ایک ذرہ بہی قابل اعتبار نہیں۔ تریاق القلوب

অর্থাৎ মোটকথা হচ্ছে এই চারো ইঞ্জিল যা ইউনানি (গ্রীস) ভাষায় অনুবাদ হয়ে এই রাজ্যে প্রচারিত হয়েছে এগুলো এক অণু পরিমাণ-ও গ্রহনযোগ্য নয়।

দেখুন রূহানী খাযায়েন ১৫/১৪২।

তিনি আরও লিখেছেন,

بلکہ سچ تو یہ بات ہے کہ وہ کتابیں آنحضرت صلی اللہ علیہ و سلم کے زمانہ تک ردی کی طرح ہو چکی تہیں اور بہت سے جہوٹ ان میں ملائے گئے تہے جیساکہ قرآن شریف فرمایا گیا ہے کہ وہ کتابیں محرف مبدل ہیں اور اپنی اصلیت پر قائم نہیں رہیں۔ چشمہ معرفت

অর্থাৎ বরং সত্যকথা তো এটাই যে, এ সমস্ত কিতাব [আগের ঐশীগ্রন্থ গুলো–অনুবাদক] হুজুর সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগ পর্যন্ত নষ্ট বস্তুতে পরিণত ছিল এবং প্রচুর মিথ্যা তাতে মিশ্রিত ছিল। যেমনটা কুরআন শরীফে বলা হয়েছে যে, এ সমস্ত কিতাব বিকৃত ও পরিবর্তিত এবং আপনা মৌলিকত্বের উপর প্রতিষ্ঠিত নয়।

দেখুন, রূহানী খাযায়েন ২৩/২৬৬।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, ইউহান্না অর্থাৎ যোহনের ইঞ্জিল এর মধ্যে পরিস্কার উল্লেখ আছে, সে সময়ের জেরুজালেম এর নেতৃস্থানীয় ইহুদীরা ইউহান্না’র নিকট কতিপয় ভবিষ্যদ্বক্তাসহ লোকজন প্রেরণ করেছিলেন এই মর্মে যে, ইউহান্না-ই সেই প্রতিশ্রুত ‘এলীয়‘ কিংবা ‘মসীহ‘ কিনা—তা যেন খোদ ইউহান্না’র মুখ থেকেই জেনে আসেন। তাই ইউহান্নাকে যখন প্রশ্ন করা হল তখন তিনি পরিস্কার করে জানিয়ে দিলেন যে ‘আমি (ইউহান্না) সেই প্রতিশ্রুত মসীহ নই’। তারা তাঁকে আরো জিজ্ঞেস করলো, তাহলে আপনি কে? এলীয়? ইউহান্না উত্তরে বললেন, না, আমি তা-ও নই

দেখুন, ইউহান্না’র ইঞ্জিল ১ম অধ্যায়, আয়াত ১৯-২১।

এবার কাদিয়ানীদের উদ্দেশ্যে আমার জিজ্ঞাসা, ইসরাইলী সোর্সগুলোর উপর বিশ্বাস রাখলে হযরত ইয়াহইয়া (যোহন/ইউহান্না) এবং হযরত ঈসা (যীশু/ইসোয়া) আলাইহিমাস সালাম দু’জনের যে কোনো একজনকে ‘মিথ্যাবাদী’ সাব্যস্ত করতে হচ্ছে। নাউজুবিল্লাহ। যেহেতু মথির গসপেল মতে ঈসা যোহনকে ‘এলীয়’ আখ্যা দিয়েছেন। পক্ষান্তরে ইউহান্নার গসপেল মতে, যোহন নিজেকে ‘এলীয়’ হওয়া অস্বীকার করেছিলেন। সুতরাং ঈমানের তাগিদে আমাদেরকে অবশ্যই মানতে হবে যে, ইসরাইলী রেওয়ায়েতগুলো অথেনটিক নয়, বরং পরিত্যাগযোগ্য।

তর্কের খাতিরে যদি মেনেও নিই যে, ইউহান্না তিনি নিজেকে “এলীয়” হওয়া অস্বীকার করেননি। তা সত্ত্বেও এধরণের অরক্ষিত ও ত্রুটিযুক্ত খ্রিস্টীয় বর্ণনার উপর কিয়াস করে মুহাম্মদে আরাবী (সা.) এর সংরক্ষিত ও বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত হাদীসকে তাবীল (ব্যাখ্যা) করে ‘ঈসা ইবনে মরিয়ম’ হতে “রূপক ঈসা” এর ধারণা কোনোমতেই আলোর মুখ দেখবে না।

অধিকন্তু ইসলামী অথেনটিক সোর্সগুলোতে ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ.)-এর আবার আসা সম্পর্কিত ভবিষ্যৎবাণীতে “শপথ বাক্য” এর উল্লেখ তো আছেই, এমনকি ‘তিনি (ঈসা) অচিরেই ফিরে আসবেন’ শব্দচয়নে বর্ণনাও রয়েছে। যাইহোক, এবার শপথ বাক্য সমেত হাদীসের কৃত ভবিষ্যৎবাণী সম্পর্কে মির্যা কাদিয়ানী কী লিখেছে দেখুন,

  • “শপথ (কসম করে কিছু বলা) একথারই প্রমাণ বহন করে যে, নিশ্চয়ই খবর বা হাদীসটি জাহেরি (আক্ষরিক) অর্থই বুঝাবে। সেখানে কোনো তাবীল (ব্যাখ্যা) চলবে না, ব্যতিক্রম মর্মার্থ নেয়াও চলবেনা। নচেৎ শপথ করে লাভ কী হল?”

দেখুন, হামামাতুল বুশরা (বাংলা) পৃষ্ঠা নং ২৭

এবার দেখা যাক, ঈসা (আ.) এর নুযূল হওয়া সম্পর্কে সহীহ বুখারী’র কিতাবুল আম্বিয়া-তে হাদীসটি কেমন শব্দচয়নে এসেছে! রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন,

  • بَابُ نُزُوْلِ عِيْسَى ابْنِ مَرْيَمَ عَلَيْهِمَا السَّلَام حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ أَخْبَرَنَا يَعْقُوْبُ بْنُ إِبْرَاهِيْمَ حَدَّثَنَا أَبِيْ عَنْ صَالِحٍ عَنْ ابْنِ شِهَابٍ أَنَّ سَعِيْدَ بْنَ الْمُسَيَّبِ سَمِعَ أَبَا هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ لَيُوْشِكَنَّ أَنْ يَنْزِلَ فِيكُمْ ابْنُ مَرْيَمَ حَكَمًا عَدْلًا فَيَكْسِرَ الصَّلِيْبَ وَيَقْتُلَ الْخِنْزِيْرَ وَيَضَعَ الْجِزْيَةَ وَيَفِيْضَ الْمَالُ حَتَّى لَا يَقْبَلَهُ أَحَدٌ حَتَّى تَكُوْنَ السَّجْدَةُ الْوَاحِدَةُ خَيْرًا مِّنْ الدُّنْيَا وَمَا فِيْهَا ثُمَّ يَقُوْلُ أَبُوْ هُرَيْرَةَ وَاقْرَءُوْآ إِنْ شِئْتُمْ وَإِنْ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ إِلَّا لَيُؤْمِنَنَّ بِهٰ قَبْلَ مَوْتِهٰ وَيَوْمَ الْقِيٰمَةِ يَكُوْنُ عَلَيْهِمْ شَهِيْدًا (النساء :159)

গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (তাওহীদ প্রকাশনী) অধ্যায়ঃ ৬০/ আম্বিয়া কিরাম (‘আ.) (كتاب أحاديث الأنبياء) হাদিস নম্বরঃ ৩৪৪৮

৬০/৪৯. মারইয়াম পুত্র ‘ঈসা (আ.)-এর অবতরণ।

৩৪৪৮. আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, শপথ সেই সত্তার, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, শীঘ্রই তোমাদের মধ্যে মরিয়ামের পুত্র ‘ঈসা (আ.) শাসক ও ন্যায় বিচারক হিসেবে আগমন করবেন। তিনি ‘ক্রুশ’ ভেঙ্গে ফেলবেন, শূকর হত্যা করবেন এবং তিনি যুদ্ধের সমাপ্তি টানবেন। তখন সম্পদের ঢেউ বয়ে চলবে। এমনকি কেউ তা গ্রহণ করতে চাইবে না। তখন আল্লাহকে একটি সিজ্দা করা তামাম দুনিয়া এবং তার মধ্যকার সমস্ত সম্পদ হতে অধিক মূল্যবান বলে গণ্য হবে। অতঃপর আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) বলেন, তোমরা ইচ্ছা করলে এর সমর্থনে এ আয়াতটি পড়তে পারঃ ‘‘কিতাবীদের মধ্যে প্রত্যেকে তাঁর (ঈসা (আ.)-এর) মৃত্যুর পূর্বে তাঁকে বিশ্বাস করবেই এবং কিয়ামতের দিন তিনি তাদের (যারা তাঁকে ইশ্বর পুত্র সাব্যস্ত করেছিলো) বিপক্ষে সাক্ষ্য দিবেন।’’ (আন-নিসাঃ ১৫৯) (২২২২) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩১৯৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩২০২)

তাহলে এবার চিন্তা করার বিষয় যে, ঈসা (আ.) এর দ্বিতীয়বারের আগমন সম্পর্কিত হাদীসে ‘শপথ’ বাক্যের উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও সেখানে তাবীল করে ‘রূপক ঈসা‘ এর ধারণা নেয়া কতটুকু গ্রহণযোগ্য? এটি খোদ মির্যা কাদিয়ানীর-ও নীতিবিরুদ্ধ নয় কি?

বলে রাখা জরুরি যে, এলীয় এর ইসলামি সমার্থক নাম ইলিয়াস (আ.)। হযরত ইলিয়াস (আ.) ইসলামের একজন নবী, যিনি বনী ইসরাইল সম্প্রদায়ে আগমন করেছিলেন। তিনি হযরত মূসার (আ.) ভাই হযরত হারুনের (আ.) বংশধর ছিলেন। তিনি বর্তমান জর্ডান নদীর উত্তর অঞ্চলের জিলীআদ নামক স্থানের “আবেল মাহুলা” নামক জায়গার অধিবাসী ছিলেন। খ্রিস্টান এবং ইহুদিদের কাছে তিনি এলীয় (Elijah) নামে পরিচিত। তিনি খৃষ্টপূর্ব ৮৭৫ থকে ৮৫০ অব্দের মাঝামাঝি সময়ে জন্মগ্রহণ করেন। ঐতিহাসিকদের মতে, তিনি হিযকিলের পরে আল ইয়াসার পূর্বে নবী হিসাবে প্রেরিত হন।

যাইহোক, সকল কাদিয়ানী মতবাদের অনুসারীদের বলতে চাই, আপনি কাকে কী বলে মেনে নিচ্ছেন সেটি আপনার ব্যাপার। কিন্তু একটু তো নিজের বিবেককে প্রশ্ন করবেন এবং নিরপেক্ষ বিবেকবুদ্ধি খাটিয়ে নিজের বিশ্বাসের পরিপক্কতা যাচাই করে নেবেন। মৃত্যুর পরে কিন্তু সেই সুযোগ কারো থাকবেনা। তাই আসুন, গোঁড়ামি বাদ দিয়ে মির্যা কাদিয়ানীর দাবীগুলো কী কী এবং সেসব দাবী দাওয়ার জন্য তার মত ব্যক্তি কোনোভাবেই উপযুক্ত কিনা, যাচাই-বাছাই করুন। কেননা একজন মিথ্যাবাদী, প্রতারক আর ধোকাবাজ আর যাইহোক, কিছুতেই ইমাম মাহদী বা নবুওয়ত দাবী করার যোগ্য হতে পারেনা। আল্লাহ হাফেজ।

লিখক প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

হযরত ইমাম মাহদী এর জন্ম কোথায় হবে?

জনৈকা বাংলাদেশী কাদিয়ানী খাতুনের তিনটি প্রশ্নের উপর আমাদের মূল্যায়ন,

কাদিয়ানী ন্যাশনাল আমীর আব্দুল আউয়ালকে উদ্দেশ্য করে কাদিয়ানী খাতুনের প্রশ্নগুলো নিন্মরূপ,

  • প্রশ্ন করা হল যে, ইমাম মাহদী মক্কায় জন্মগ্রহণ না করে তিনি মক্কার বাহিরে অনারবে কিজন্য জন্মগ্রহণ করবেন?
  • প্রশ্ন করা হল যে, হজ্বের সময় মক্কা মদীনায় আহমদীরা তথা কাদিয়ানীরা হারামাইনের ইমামের পেছনে সালাত কেন পড়েন না?
  • প্রশ্ন করা হল যে, ইসলাম ধর্মে তো যাকাত সবার উপর বাধ্যতামূলক নয়, তাহলে কাদিয়ানী জামাতের সবার উপর ‘চান্দা’ বাধ্যতামূলক কেন?

এবার উল্লিখিত প্রশ্নগুলোর উত্তর আব্দুল আউয়াল সাহেব কীভাবে দিলেন সেটা তো জানবোই, তার আগে প্রশ্নগুলোর মূল্যায়নের উপর সংক্ষেপে লিখব। খাতুন সাহেবার প্রথম প্রশ্ন-

“ইমাম মাহদী মক্কায় জন্মগ্রহণ না করে তিনি মক্কার বাহিরে অনারবে কিজন্য জন্মগ্রহণ করবেন?” প্রশ্নকারী যেন বলতে চাচ্ছেন যে, ইমাম মাহদী দাবীদার মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী মক্কার বাহিরে ভারতের পাঞ্জাবের ‘কাদিয়ান’ গ্রামে জন্মগ্রহণ করার কারণ কী?

খাতুন সাহেবার প্রশ্ন সঠিক। তিনি ঠিকই ধরতে পেরেছেন। ইসলামের সেই ইমাম মাহদী যার আগমনী ভবিষ্যৎবাণীতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিষ্কার বলে গেছেন যে ইমাম মাহদী আরব শাসন করবেন। যেমন,

لاَ تَذْهَبُ أَوْ لاَ تَنْقَضِي الدُّنْيَا حَتَّى يَمْلِكَ الْعَرَبَ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ بَيْتِي يُوَاطِئُ اسْمُهُ اسْمِي

অর্থাৎ দুনিয়া ততক্ষণ ধ্বংস হবে না, যতক্ষণ না আমার বংশ থেকে একজন আরবের শাসনকর্তা নিযুক্ত হবে। যার নাম হবে আমার নামের মত। (হাদীসের মান, হাসান)। হাদীসটি সিয়াহ সিত্তাহ’র অন্যতম কিতাব আবুদাউদ শরীফের ‘মাহদী অধ্যায়’ উল্লেখ রয়েছে। হাদীস নম্বর ৪২৩৩।

সুতরাং প্রমাণিত হল যে, ইমাম মাহদী আরবে জন্মগ্রহণ করবেন বলেই তিনি আরবের শাসনকর্তা হবার সুযোগ লাভ করবেন।

ইবনে কাসীর (রহ.) শেষ যুগে আত্মপ্রকাশকারী প্রতীক্ষিত ইমাম মাহদীর সম্পূর্ণ নামটি কিরকম হবে তিনি তার ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া (البداية والنهاية)’ কিতাবে নিম্নরূপ উল্লেখ করে গেছেন, তিনি লিখেছেন,

محمد بن عبد الله العلوي الفاطمي الحسني رضي الله عنهم.

অর্থাৎ ইমাম মাহদীর নাম হবে মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ যিনি আলী, ফাতেমা এবং হাসানের (আল আলীবিয়্যি আল ফাতেমিয়্যি আল হাসানি) সন্তান হবেন; রাদিআল্লাহু আনহুম।

বিশৃঙ্খলা ও মালহামা অধ্যায় খ-১/পৃ-১৭।

সিয়াহ সিত্তাহ’র অন্যতম উক্ত কিতাবের আরেক বর্ণনায় বিশুদ্ধ সনদে আরও উল্লেখ আছে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

الْمَهْدِيُّ مِنِّي أَجْلَى الْجَبْهَةِ أَقْنَى الأَنْفِ يَمْلأُ الأَرْضَ قِسْطًا وَعَدْلاً كَمَا مُلِئَتْ جَوْرًا وَظُلْمًا يَمْلِكُ سَبْعَ سِنِينَ‏

অর্থাৎ মাহদী আমার বংশ থেকে হবে, যার ললাট প্রশস্ত ও নাক উঁচু হবে। যিনি পৃথিবীকে আদ্‌ল-ইনসাফ দ্বারা এরূপ পূর্ণ করবেন, যেরূপ তা অন্যায়-অবিচারে পূর্ণ ছিল। তিনি সাত বছর রাজত্ব করবেন। (হাদীসের মান, হাসান)। হাদীস নম্বর ৪২৩৬।

একটু খেয়াল করুন, আগের হাদীসটির মত এ হাদীসেও ‘ইমাম মাহদী শাসন বা রাজত্ব করবেন’ বলা হয়েছে। যদিও আগের বর্ণনায় পরিষ্কার করে ‘তিনি আরব শাসন করবেন’ বলেই উল্লেখ রয়েছে।

তারপর আরও দেখুন, ইমাম মাহদী সম্পর্কে পরিষ্কার করে এ কথাও ভবিষ্যৎবাণী করা হয়েছে যে, তিনি মদীনা থেকে মক্কায় পালিয়ে যাবেন এবং লোকজন তথা উম্মাহ’র বিশিষ্ট নেতৃবৃন্দ মক্কায় তাঁকে ইমাম মাহদী হিসেবে সনাক্ত করে তার নিকট হাজরে আসওয়াদ ও মাক্বামে ইবরাহীম এর মাঝে বয়’আত নেয়া শুরু করবেন। যেমন,

يَكُونُ اخْتِلاَفٌ عِنْدَ مَوْتِ خَلِيفَةٍ فَيَخْرُجُ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْمَدِينَةِ هَارِبًا إِلَى مَكَّةَ فَيَأْتِيهِ نَاسٌ مِنْ أَهْلِ مَكَّةَ فَيُخْرِجُونَهُ وَهُوَ كَارِهٌ فَيُبَايِعُونَهُ بَيْنَ الرُّكْنِ وَالْمَقَامِ

অর্থাৎ “একজন খলীফার মৃত্যুর সময় মতানৈক্য দেখা দিলে এবং সে সময় মদীনা থেকে এক ব্যক্তি (তথা ইমাম মাহদী) পালিয়ে মক্কায় আসলে, সেখানকার অধিবাসিগণ তার পাশে সমবেত হবে এবং তাঁকে ইমামতি করার জন্য সামনে পাঠাবে। কিন্তু সে ব্যক্তি তা অপছন্দ করবে। এরপর লোকেরা তার হাতে ‘হাজরে-আসওয়াদ’ ও ‘মাকামে-ইব্‌রাহীমের’ মাঝে বয়’আত গ্রহণ করবে। সে সময় শামদেশ থেকে তার বিরুদ্ধে একদল সৈন্য প্রেরিত হবে, যারা মক্কা ও মদীনার মাঝে অবস্থিত ‘বাইদাহ’ নামক স্থানে মাটিতে ধ্বংস প্রাপ্ত হবে।”

আবু দাউদ, মাহদী অধ্যায়, হাদীস নম্বর ৪২৩৭।

বলে রাখা জরুরি যে, হাদীসটি দীর্ঘবাক্যে বর্ণিত হয়েছে, যার শেষের দিকের কথাগুলোর কোনো মুতাবি বা শাহিদ না থাকায় সেগুলোকে আবু দাউদের উক্ত বর্ণনার সনদের দুর্বলতার কারণে যঈফ বলা হয়েছে। কিন্তু বর্ণনার প্রথমোক্ত কথাগুলো অর্থাৎ ইমাম মাহদী মদীনা থেকে মক্কায় এসে বয়’আত গ্রহণ করার কথাগুলো একাধিক বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত। যেমন ইমাম হাকিম (রহ.) ভিন্ন আরেক সনদে তার ‘মুস্তাদরাক’ গ্রন্থে এ কথাগুলো উল্লেখ করে বলেছেন, এর সনদ সহীহ। ইমাম আবুবকর ইবনু আবী শাইবাহ (রহ.)ও নিজ ‘মুসান্নাফ’ কিতাবে এ কথাগুলো বিশুদ্ধ সনদে উল্লেখ করেছেন। যেমন,

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

يبايع لرجل بين الركن والمقام كعدة أهل بدر، فتأتيه عصائب العراق وأبدال الشام، فيغزوهم جيش من أهل الشام، حتى إذا كانوا بالبيداء يخسف بهم.

অর্থাৎ গযওয়ায়ে বদরের সমপরিমাণ লোকজন একব্যক্তির নিকট ‘হাজরে-আসওয়াদ’ এবং ‘মাকামে-ইব্‌রাহীমের’ মধ্যভাগে বয়’আত গ্রহণ করবে। অত:পর শাম ও ইরাকের ওলী-আবদালগণ তাঁর নিকট উপস্থিত হতে থাকবে। (সে সময়) শামদেশ থেকে তাঁর বিরুদ্ধে একদল সৈন্য যুদ্ধের উদ্দেশ্যে প্রেরিত হবে, মক্কা ও মদীনার মাঝে অবস্থিত ‘বাইদাহ’ নামক স্থানে মাটিতে তারা ধ্বংস প্রাপ্ত হবে….।

মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ, খণ্ড নং ১৫, হাদীস নং ১৯০৭০, হাদীসের মান : সহীহ।

সুতরাং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে পরিষ্কার শব্দে ও বিশুদ্ধ সনদে প্রমাণিত হল যে, আগত ইমাম মাহদীর জন্মস্থান হবে আরব। তিনি যথাসময় আরবেই জন্মগ্রহণ করবেন, সেখানেই বেড়ে উঠবেন এবং মদীনায় আসার পর তিনি খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিকে ধাবিত হবেন। বিরোধীপক্ষের সাথে সশস্ত্র লড়াই হবে, আল্লাহ তাঁকে সবকয়টি লড়াইয়ে বিজয় দান করবেন। তারই ধারাবাহিকতায় তিনি আল্লাহর ইচ্ছাতেই আরবের বুকে খিলাফত ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করবেন। তাঁর সেই কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ফরমান ‘ইয়ামলিকুল আরাবা রাজুলুন মিন আহলি বায়তি’ (يَمْلِكَ الْعَرَبَ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ بَيْتِي) “আমার আহলে বায়তের এক ব্যক্তি আরব শাসন করবে” এর পূর্ণতা দান করবেন। ইনশাআল্লাহ।

সুতরাং কাদিয়ানী খাতুন তাদের ন্যাশনাল আমীর আব্দুল আউয়ালকে প্রথম যে প্রশ্নটি করেছেন তা একদমই অর্থবহ ও প্রাসঙ্গিক। যেজন্য আব্দুল আউয়াল সাহেব উক্ত খাতুনকে ভুজুংভাজুং বুঝিয়ে যে সমস্ত আয়াত ও কল্প-কাহিনীর অবতারণা করেছেন সবই বানোয়াট, অপব্যাখ্যা ও বাস্তবতা বহির্ভূত।

আব্দুল আউয়াল সাহেব উক্ত খাতুনকে সূরা জুম’আ এর ২ এবং ৩ নং আয়াত পড়ে বুঝতে পরামর্শ দিয়ে বলেন যে, আল্লাহতালা পবিত্র কুরআনের ঐ আয়াতের ভেতর চোখে আঙ্গুল দিয়েই বলে দিয়েছেন যে, ইমাম মাহদী আরবের বাহিরে অন্য কোনো জাতির ভেতর থেকেই হবেন। নাউযুবিল্লাহ! লানাতুল্লাহি আলাল কাযেবীন।

সূরা জুম’আ এর ২ এবং ৩ নং আয়াতে তাহলে কী কথা রয়েছে? পড়তে ক্লিক করুন

Click

আব্দুল আউয়াল এবং তার তথাকথিত ”ছায়া-নবী” মির্যা গোলাম কাদিয়ানী মূলত ঐ সমস্ত বয়ান-বক্তৃতার মাধ্যমে শুধু গোমরাহিকেই বৃদ্ধি করেনি, বরং ইসলামের আদিম ও সহজ সরল শিক্ষায় মারাত্মক বিকৃতিই ঘটিয়েছে। যার ফলে সর্বসম্মত মুসলিম স্কলারদের মতে এরা ইসলামের গণ্ডি থেকে পুরোপুরি বহিষ্কৃত ও কাফির।

সূরা জুম’আ এর ২ এবং ৩ নং আয়াতে তাহলে কী বলা হয়েছে? নতুন কারো আগমন সম্পর্কে বলা হয়েছে? নাকি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আরব-অনারব নির্বিশেষে সকলের জন্য একজন প্রেরিত রাসূল বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে?

পাঠকবৃন্দ! আয়াতটির শুরুতেই বা’আছা (بعث) ক্রিয়াপদটি অতীতকাল বাচক, সেসাথে ‘আখারীনা’ শব্দটির সংযোগ (আ’তফ) তার আগের বাক্যের ‘উম্মিয়্যীন’ এর উপর, যেটি যের অবস্থায় বিদ্যমান।

কাজেই যারা নাহু-সরফ (আরবী ব্যকরণ) মুটামুটিও বুঝেন তাদের নিকট অন্তত একথা পরিষ্কার যে, আয়াত এবং সংশ্লিষ্ট রেওয়ায়েত দ্বারা ভবিষ্যতে কারো আসার কথা বলা হয়নি। বড়জোর সালমান ফারসীর বংশের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যই (ফজিলত) বর্ণনা করে বলা হয়েছে যে, “ঈমান বা ইলম বা দ্বীন যদি সুরাইয়া নক্ষত্রের নিকটেও থাকত তবু তার সম্প্রদায়ের লোকেরা তা নিয়ে আসত।”

সহীহ ইবনু হিব্বান, সহীহ মুসলিম এবং বুখারী সহ সবখানে ‘বহুবচনাত্মক’ শব্দে যথাক্রমে উল্লেখ আছে, তারা সালমান ফারসীর বংশধর বা و قوم هذا (ইবনু হিব্বান), ফারস্যের সন্তানেরা বা ابناء الفرس (মুসলিম), সালমান ফারসীর বংশধর কতিপয় ব্যক্তি বা لناله رجال او رجل من هؤلاء (বুখারী)।

বিস্তারিত উল্লিখিত ওয়েবসাইট লিংকটি থেকে দেখার আহবান রইল।

দীর্ঘ আলোচনা হতে বুঝা গেল যে, আয়াত এবং সংশ্লিষ্ট রেওয়ায়েতের আলোকে নতুন কাউকে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ”বুরুজ” বা দ্বিতীয় আধ্যাত্মিক সত্তায় (হিন্দুশাস্ত্রে যাকে ‘অবতার বলা হয়) আসা সম্পর্কে ইংগিতেও বলা হয়নি। বড়জোর আয়াতের وَآخَرِينَ مِنْهُمْ لَمَّا يَلْحَقُوا بِهِمْ এর ভেতর সালমান ফারসী (রা.) এর বংশধর সহ সমগ্র অনারবের জন্য যারা তখনও আরবের উম্মী সাহাবীদের মধ্যে শামিল হননি ; প্রত্যেকের জন্য একজন ‘রাসূল’ হিসেবে প্রেরিত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রেসালতের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। সকল তাফসীরকারক আয়াত এবং রেওয়ায়েতগুলোর আলোকে এও বলে গেছেন যে, সেই অনারবদের মধ্যে হযরত সালমান ফারসী (রা.) এর বংশের স্বতন্ত্র ‘ফজিলত’ বর্ণনা দিতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উরুতে হাত রেখে বলেছিলেন,

لو كان الإيمان عند الثريا لناله رجال او رجل من ه‍ؤلاء

অর্থাৎ যদি ঈমান সুরাইয়া নক্ষত্রপুঞ্জের নিকটে থাকত তাহলেও এঁদের (সালমান ফারসীর বংশের দিকে ইংগিত) এক বা কতেক পুরুষ তা অর্জন করত। (বুখারী ৪৮৯৭, সাহাবী আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে)।

কাজেই প্রশ্নকারী কাদিয়ানী খাতুনের প্রথম প্রশ্নের উত্তরে কাদিয়ানী আমীর যে কথাগুলো বলেছেন তা সম্পূর্ণ মনগড়া ও বানোয়াট। যার বিন্দুমাত্র সত্যতার কোনো চাপ না আছে কোনো দুর্বল হাদীসে আর না আছে সূরা জুম’আ এর আয়াত দু’টি এবং তার সংশ্লিষ্ট রেওয়ায়েতগুলোতে, কোথাও নেই।

সুতরাং আব্দুল আউয়াল সাহেব আবারও ভুজুংভাজুং উত্তর দিয়ে ধরা খেয়েছেন। আল্লাহ তাকে সহ তার সমগোত্রীয় সবাইকে ইসলামের সঠিক শিক্ষায় ফিরে এসে ও তাওবা পড়ে শাহাদাহ পাঠ করে ইসলামে শামিল হবার তাওফিক দিন। আমীন।

(বাকি দু’টি প্রশ্নের মূল্যায়ন নিয়ে পরবর্তীতে লিখা হবে, ইনশাআল্লাহ)।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক