Home Blog

নবীর শ্রেষ্ঠ গুণ সততা

‘সততা’ ও ‘বিশ্বস্ততা’ নবীর শ্রেষ্ঠ গুণ,

‘আ কুন্তুম মুসাদ্দিকিয়্যা?’ বাক্যের এ খন্ডাংশটি একটি বিখ্যাত হাদীসের অংশ এবং এটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম সহ অন্যান্য প্রামাণিক হাদীস গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। এটি নবুওয়াতের প্রাথমিক যুগে নবী মুহাম্মদ (সা.) কর্তৃক মক্কার সাফা পাহাড়ে দাঁড়িয়ে কুরাইশদের প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার ঘটনার অংশ।

হাদীসের প্রাসঙ্গিক অংশ ও বাংলা অনুবাদ :

হাদীসের মূল বার্তা হলো, শেষনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর নবুওয়াতের সত্যতা ও বিশ্বস্ততা প্রমাণ করার জন্য এই উপমাটি ব্যবহার করেছিলেন। তিনি ইরশাদ করেছিলেন,

أرَأَيْتَكُمْ لو أخْبَرْتُكُمْ أنَّ خَيْلًا بالوَادِي تُرِيدُ أنْ تُغِيرَ علَيْكُم؛ أكُنْتُمْ مُصَدِّقِيَّ؟ قالوا: نَعَمْ، ما جَرَّبْنَا عَلَيْكَ إلَّا صِدْقًا، قالَ: فإنِّي نَذِيرٌ لَكُمْ بيْنَ يَدَيْ عَذَابٍ شَدِيدٍ

অনুবাদ, “তোমরা কি মনে করো, যদি আমি তোমাদের জানাই যে, এই উপত্যকার ওপার থেকে একদল অশ্বারোহী (শত্রু) তোমাদের আক্রমণ করতে উদ্যত হয়েছে, তোমরা কি আমাকে বিশ্বাস করবে? উত্তরে উপস্থিত সবাই বলেছিল, “হ্যাঁ, আমরা আপনাকে বিশ্বাস করব, কারণ আমরা আপনাকে সবসময় সত্যবাদী হিসেবেই পেয়েছি” (অন্য বর্ণনায়, “আমরা আপনার কাছ থেকে কখনও মিথ্যা শুনিনি”)। এরপর তিনি বলেছিলেন, “তবে আমি তোমাদের আসন্ন কঠিন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করছি”। (সহীহ বুখারী, ইবনে আব্বাস থেকে)।

এই হাদীসের তাৎপর্য হচ্ছে, এই ঘটনাটি প্রমাণ করে যে, নবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্ব থেকেই মক্কার লোকেরা, এমনকি তাঁর কট্টর বিরোধীরাও শেষনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে সর্বোচ্চ বিশ্বস্ত ও সত্যবাদী (আল-আমিন) হিসেবে গণ্য করত।

দাওয়াতের পদ্ধতি : তিনি তাদের বিশ্বাস ও আস্থার মানদণ্ড ব্যবহার করে ইসলামের মৌলিক বার্তা – তাওহীদ (একত্ববাদ) এবং আখিরাতের শাস্তি সম্পর্কে সতর্কবাণী পেশ করেছিলেন। আল্লাহ্‌র নির্দেশে (সূরা শু’আরা, ২৬:২১৪) গোপনে দাওয়াতের পরিবর্তে প্রকাশ্যে দাওয়াত শুরু করার এটি ছিল প্রথম ধাপ। এই হাদীসটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের মতো হাদীস গ্রন্থে বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে।

হাদীসটি হতে বুঝা গেল, নবীর সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ গুণ সততা ও বিশ্বাসযোগ্যতা। যদি কেউ সততা এবং নির্ভরযোগ্যতার মানদণ্ডে উত্তীর্ণ না হয় তাহলে তার বিষয়টি সেখানেই সমাপ্ত। সামনে আর বাড়তে দেয়া যাবেনা। কারণ কোনো মিথ্যাবাদী নবুওয়ত ও রেসালত দাবী করার যোগ্যতাই রাখেনা। সুতরাং, আল্লাহর রাসূল (সা.) এর জীবন তথা সীরাত থেকেই আমাদের সবক নিতে হবে।

বলাবাহুল্য যে, ভারতীয় বংশোদ্ভূত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী সহ ইতিপূর্বে যতজনই নবী রাসূল দাবী করেছিল তাদের জীবন-দর্শন থেকে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া গেছে যে, তারা প্রত্যেকে ছিল চরম মিথ্যাবাদী ও ধোকাবাজ। সুতরাং তারা প্রত্যেকে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার জন্য তাদের ঐ নেতিবাচক ক্যারেক্টারই আমাদের শিক্ষা লাভ করার জন্য যথেষ্ট।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী এম এ

কাদিয়ানীদের বয়ানের উপর পালটা বয়ান তৈরি

কাদিয়ানীদের প্রতি এবার এ বয়ানটিও ছুড়ে দিন,

((বয়ান-৩))

মির্যা কাদিয়ানীর বইতেও ঈসা মসীহের পুনরায় আগমনের বয়ান,

সে লিখেছে, “এই আয়াতে (অর্থাৎ সূরা তওবাহ আয়াত নং ৩৩) ইঙ্গিত রয়েছে যে, ঈসা মসীহ সশরীরে ও রাজনৈতিক দর্পণে পৃথিবীতে পুনরায় আসবেন।”

মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর রচিত ‘বারাহীনে আহমদীয়া’ চতুর্থ খন্ড; কাদিয়ানীর রচনাসমগ্র ২৩ খন্ডে প্রকাশিত- রূহানী খাযায়েন ১/৫৯৩

এখন কাদিয়ানীদের প্রশ্ন করতে চাই, যার সশরীরে পুনরায় আগমনী ইঙ্গিত কুরআনেই রয়েছে, সে কুরআনই তাঁকে মৃত সাব্যস্ত করে কিভাবে? প্রামাণ্য স্ক্যানকপি নিম্নরূপ,

কাদিয়ানী বয়ানের উপর পালটা বয়ান তৈরি

কাদিয়ানীদের প্রতি “বয়ান” ছুড়ে দিন এভাবে যে,

((বয়ান-২))

মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী তার বইতে লিখেছে, ঈসা (আ.) একজন শরাবী (মদখোর) ছিল, পতিতা মহিলাদের সাথে তার দহরম মহরম সম্পর্ক ছিল! নাউযুবিল্লাহ। (রেফারেন্স সহ পোস্টের নিচে দীর্ঘ-বাক্যে দেখুন)।

উল্লেখ্য, ঈসা (আ.) সম্পর্কে উল্লিখিত উক্তিগুলি তার নিজের বিশ্বাসের জায়গা থেকেই ছিল। এটি শুধুমাত্র খ্রিস্টানদের খন্ডনে পালটা জবাবি তথা ‘ইলজমি জবাব’ রূপে ছিল, এ কথা মোটেও ঠিক না। যদিও কোনো কোনো কাদিয়ানী মতের অনুসারী মির্যা কাদিয়ানীর পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে এমনটা প্রতিউত্তর করার চেষ্টা করে থাকে।

তাই কাদিয়ানী মতের অনুসারীদের প্রতি আমার চ্যালেঞ্জ রইল, ঈসা (আ.) সম্পর্কে মির্যা কাদিয়ানী নিজ বিশ্বাসের জায়গা থেকে উপরে উল্লিখিত যে আপত্তিকর উক্তি নিজ বইতে লিখে গেছে তা সঠিক এবং বাস্তব প্রমাণ করে দেখান। যদি তা কুরআন হাদীসের আলোকে সঠিক এবং বাস্তব প্রমাণ করতে পারেন তাহলে আমরা মির্যা কাদিয়ানীকে সত্য হিসেবে মেনে নেব।

আর যদি তা প্রমাণ করতে না পারেন, তাহলে নির্দ্বিধায় আপনারাও মেনে নিতে বাধ্য থাকবেন যে, মির্যা কাদিয়ানী ঈসা (আ.) সম্পর্কে আপত্তিকর উক্তিগুলোর ক্ষেত্রে শতভাগ মিথ্যাচারকারী। আর আল্লাহ কোনো মিথ্যাচারকারীকে “নবী” তো দূরের কথা; সাধারণ একজন ওলী-আউলিয়াও বানাবেন না, এটাই চূড়ান্ত কথা।

দীর্ঘ-বাক্যে সম্পূর্ণ উদ্ধৃতি :

  • মির্যা কাদিয়ানী লিখেছে, “ইউরোপের লোকদের মদ এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার কারণ হল, হযরত ঈসা (আ.) মদ পান করত। তা কোন রোগের কারণে বা পুরাতন অভ্যাস থাকার কারণে।” (কিশতিয়ে নূহ পৃষ্ঠা ৮৫ বাংলা অনূদিত, রূহানী খাযায়েন ১৯:৭১)।

আচ্ছা পাঠকবৃন্দ, ঈসা (আ.) সম্পর্কে উল্লিখিত উক্তিটি যার সে একই সাথে ঈসা (আ.)-এর মদ পান করার “কারণ”ও কিন্তু নিজ জবানে বলে দেয়ার পরেও ব্যাপারটি সম্পূর্ণরূপে তার নিজের বিশ্বাসের জায়গা থেকেই নয়, একথা কিভাবে বলা যায়??

  • মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী উলামায়ে কেরামের উদ্দেশ্যে রচিত তার ‘দাফেউল বালা’ নামক বইতে লিখেছে, ‘‘মাসীহের সততা তার সময়কার অন্যান্য সৎ লোকের চেয়ে বেশি বলে প্রমাণিত হয় না; বরং তার চেয়ে ইয়াহইয়া নবীর মর্যাদা এক গুণ বেশি। কেননা, সে মদপান করত না এবং কোনো ব্যভিচারিণী নারী নিজের ব্যভিচার থেকে উপার্জিত অর্থ দ্বারা সুগন্ধি ক্রয় করে তার মাথায় মালিশ করেছে এমন কোনো কথা তার ব্যাপারে শোনা যায়নি। অথবা এমনও জানা যায়নি যে, এরূপ কোনো নারী নিজের হাত বা মাথার চুল দ্বারা তার শরীর স্পর্শ করেছিল অথবা কোনো আনাত্মীয় যুবতী নারী তার সেবা করত। এ কারণে আল্লাহ তাআলা কুরআনে ইয়াহইয়াকে হাসূর (নারী বিরাগী) বলেছেন। কিন্তু মাসীহের এ নামকরণ করা হয়নি। কেননা, উক্তরূপ ঘটনাবলী এরূপ নামকরণের অন্তরায় ছিল।’’ (দাফেউল বালা [উর্দূ] হতে অনুবাদ, মির্যা কাদিয়ানী)।

গোলাম আহমদ কায়িদানীর উক্ত রচনায় হযরত মাসীহ ইবনে মরিয়ম (আ.)-এর প্রতি কয়েকটি অপবাদ পরিদৃষ্ট হয়। (১) তিনি মদ পান করতেন। (২) তিনি ব্যভিচারিণী নারীদের অবৈধ পন্থায় উপার্জিত অর্থ দ্বারা ক্রয়কৃত সুগন্ধি মাথায় লাগাতেন এবং তাদের হাত ও চুল দ্বারা নিজের শরীর স্পর্শ করাতেন। (৩) অনাত্মীয় যুবতী নারীদের থেকে সেবা নিতেন।

অথচ হযরত মসীহ ইবনে মরিয়ম (আ.)-এর মত একজন মহান নবীর প্রতি এসব অশ্লীল ও কদর্য অপবাদ আরোপ করার পর সে এ রায়ও দিয়েছে যে, এসব ঘটনার কারণেই আল্লাহ তাআলা তাকে পবিত্র কুরআনে ‘হাসূর’ (নারী বিরাগী) বিশেষণ দ্বারা বিশেষায়িত করেননি। এতে দৃঢ়ভাবে সাব্যস্ত হচ্ছে যে, উক্ত মানহানিকর কথাগুলো ‘ইলজামি জবাব’ হিসেবে ছিলনা, বরং তার নিজেস্ব বিশ্বাসের জায়গা থেকেই ছিল।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

কাদিয়ানী বয়ানের উপর পালটা বয়ান তৈরি

কাদিয়ানী বয়ানের উপর পালটা কিছু বয়ান

((বয়ান-১))

আপনি যখনি কাদিয়ানীদের সাথে কথা বলবেন তারা তখনি আপনার প্রতি যে বয়ানটি ছুড়ে দেবে সেটি হচ্ছে, কুরআন থেকে ঈসা (আ.)-কে জীবিত প্রমাণ করে দিন। যদি তা প্রমাণ করে দিতে পারেন, তাহলে আর কিছু বুঝাতে হবেনা; আমরা কাদিয়ানীয়ত ছেড়ে দেব। ধারণা করা হয় যে, কাদিয়ানীদের সো-কল্ড চতুর্থ খলীফা মির্যা তাহের আহমদই এ বয়ানের প্রবর্তক। এর আগে কাদিয়ানীদের বয়ান ছিল, ইস্তিখারা করে আল্লাহর কাছ থেকে সমাধান চেয়ে নিন। তিনিই উত্তম সমাধানকারী। বর্তমানেও মাঝেমধ্যে তাদের অনেককে পুরনো এ বয়ানের পেছনে ছুটতে দেখা যায়। আসুন, এবার তাদের উদ্দেশ্যে আমাদের পালটা কিছু বয়ান এখানে উত্থাপন করছি। আমাদের বয়ানগুলো এই যে,

(১) নবুওয়তের দাবীদার গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে শুধুমাত্র একজন ‘সত্যবাদী’ ও ‘আমানতদার’ সাব্যস্ত করে দেখান। তাহলে আর কিছুই করতে হবেনা। আমরা তার সততা আর যোগ্যতার ভিত্তিতেই তার নবুওয়ত দাবীর বৈধতা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.) এর শিক্ষার আলোকে যাচাই করে দেখব। যদি সে নবী হিসেবে সাব্যস্ত হয়ে যায় তাহলে সে ঈসা (আ.) সম্পর্কে আরও যা যা দাবী করে লিখে গেছে আমরা তার সবগুলো দাবী বিনাবাক্যে মেনে নেব। আসুন, তার আগে আপনারা গোলাম আহমদ ইবনে চেরাগবিবিকে শুধুমাত্র একজন ‘সত্যবাদী’ ও ‘আমানতদার’ সাব্যস্ত করতে সংলাপে বসুন। আমরা তারই রচনাবলীর আলোকে তাকে চরম মিথ্যাবাদী ও ধোকাবাজ সাব্যস্ত করব আর আপনারা সেগুলোর খন্ডন করে তাকে ন্যূনতম একজন সৎ মানুষ হিসেবে প্রমাণ করে দেখাবেন।

(২) আপনারা কথায় কথায় ঈসা (আ.) এর বাঁচা-মরা প্রসঙ্গ টেনে আনেন, যা আপনাদের শেষনবী গোলাম আহমদ ইবনে চেরাগবিবির শিক্ষারই বিপরীত। কেননা গোলাম আহমদ ইবনে চেরাগবিবি ‘দাফেউল বালা’ বইতে লিখে গেছে, “ঈসা ইবনে মরিয়মের আলোচনা বাদ দাও, তার চাইতে উত্তম গোলাম আহমদ কাদিয়ানী”। দেখুন, সে ঈসা (আ.) এর আলোচনা বাদ দিতে বলছে আর আপনারা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর শিক্ষার বিরুদ্ধে গিয়ে ঈসা (আ.) এর আলোচনা টেনে আনছেন! সুতরাং আপনাদের বয়ান ঠিক নাই, আগে বয়ান ঠিক করুন, তারপর না হয় সো-কল্ড মসিহি জমাতের তাবলীগ করতে আসবেন।

(৩) ঈসা (আ.)-কে কুরআন দ্বারা জীবিত প্রমাণ করতে বলছেন। আরে ভাই, মির্যা গোলাম আহমদ ইবনে চেরাগবিবি তো নিজেই ১৮৮৪ সালে তার ‘বারাহীনে আহমদীয়া’ (৪র্থ খন্ড) গ্রন্থে পবিত্র কুরআনের সূরা তওবাহ, আয়াত নম্বর ৩৩ (هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَىٰ وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ) দ্বারা দলীল দিয়ে লিখে গেছে যে, এই আয়াতে ইংগিতে একখানা ভবিষ্যৎবাণী রয়েছে যে, মসীহ (ঈসা) এই পৃথিবীতে সশরীরে (جسمانى) এবং রাজনৈতিক দর্পনেই (سياست ملكى) পুনরায় আসবেন।

বারাহীনে আহমদীয়া গ্রন্থে গোলাম আহমদ ইবনে চেরাগবিবির লিখাটি এইরূপ,

اور فرقانی اشارہ اس آیات میں ہیں : هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَىٰ وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ یہ آیات جسمانی اور سیاست ملکی کے طور پر حضرت مسیح کی حق میں پیشگوئی ہیں اور جس غلبہ کاملہ دین اسلام کا وعدہ دیا گیا ہے وہ غلبہ مسیح کے ذریعہ سے ظہور میں آئے گا اور جب حضرت مسیح علیہ السلام دوبارہ اس دنیا میں تشریف لائیں گے تو ان کے ہاتھ سے دین اسلام جمیع آفاق اور اقطار میں پھیل جائے گا لیکن اس عاجز پر ظاہر کیا گیا ہے کہ یہ خاکسار اپنی غربت اور انکسار اور توکل اور ایثار اور آیات اور انوار کے رو سے مسیح کی پہلی زندگی کا نمونہ ہے اور اس عاجز کی فطرت اور مسیح کی فطرت باہم نہایت ہی متشابہ واقع ہوئی ہے گو ایک ہی جوہر کے دو ٹکرے یا ایک ہی درخت کے دو پہل ہیں۔ براہین احمدیہ حصہ چہارم ؛ روحانی خزائن ۱:۵۹۳

(অর্থ-…..) ঐশী ইংগিত এই আয়াতগুলিতে রয়েছে যে, “তিনিই তাঁর রাসূলকে হেদায়েত এবং সত্য ধর্ম সহকারে প্রেরণ করেছেন, যাতে এটিকে সকল ধর্মের উপর প্রকাশ করা যায়, যদিও মুশরিকরা এটিকে অপছন্দ করে।” এই আয়াতগুলি শারীরিক এবং রাজনৈতিক উভয় দিক থেকেই মসীহের পক্ষে একটি ভবিষ্যদ্বাণী। আর ইসলাম ধর্মের পরিপূর্ণ বিজয় প্রতিশ্রুত মসীহের বিজয়ের মাধ্যমেই প্রকাশিত হবে। আর হযরত মসীহ (ঈসা) দুনিয়ার বুকে আবার যখন আসবেন তখন তাঁর হাত ধরেই ইসলাম ধর্ম পৃথিবীর সকল প্রান্তে এবং সকল দেশে ছড়িয়ে পড়বে। কিন্তু এই অধমের নিকট এটা প্রকাশ পেয়েছে যে, এই অধম মানুষটি তার দারিদ্র্য, নম্রতা, আস্থা, ত্যাগ, নিদর্শন এবং নূর সমূহের মাধ্যমে মসীহের প্রথম জীবনেরই একটি নমুনা। আর এই নম্র মানুষের স্বভাব এবং মসীহের স্বভাব খুবই মিল, যেন তারা একই সত্তার দুটি টুকরো অথবা একই গাছের দুটি শাখা। (বারাহীনে আহমদীয়া, ৪র্থ খন্ড, রূহানী খাযায়েন : ৩/৫৯৩)।

এখন কথা হল, আপনারা কুরআন থেকে যে জিনিসটা সাব্যস্ত করতে বলছেন সেটা তো আপনাদের সো-কল্ড মসীহ গোলাম আহমদ ইবনে চেরাগবিবি অনেক আগেই করে দিয়ে গেছেন। তাহলে এখন আবার নতুন করে কী প্রমাণ করার কথা বলছেন? আসুন, যেটা প্রমাণ করতে বলছেন সেটা যখন প্রমাণ হয়েই আছে তখন আমরা আজকে আপনাদের নিকট জানতে চাইব যে, এখন গোলাম আহমদ কাদিয়ানী সাহেব নিজে “ইবনে চেরাগবিবি” থেকে কিভাবে “ঈসা ইবনে মরিয়ম” হয়ে গেলেন?

(৪) আপনি বললেন, ঈসা (আ.)-কে কুরআন থেকে জীবিত প্রমাণ করে দিতে। আচ্ছা, ঠিক আছে। আমি তর্কের খাতিরে আপনার সাথে একমত হলাম যে, ঈসা (আ.) বেঁচে নেই। এখন আপনি আমাকে বলুন, ঈসা (আ.) বাঁচা-মরার সাথে গোলাম আহমদ ইবনে চেরাগবিবির “ঈসা” দাবী করার কী সম্পর্ক? সে কিভাবে ঈসা ইবনে মরিয়ম হল? ইতিপূর্বে তো বাহাউল্লাহ ইরানীও একই বয়ান দিয়েছে এবং নিজেকে ঈসা বলেও দাবী করেছে। কাজেই কেউ ঈসা দাবী করলেই সে যদি সত্যিকার অর্থে ঈসা হয়ে যেত তাহলে তো গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর জন্মের আগে থেকেই বাহাউল্লাহ ইরানীকে “ঈসা মসীহ” মানতে হবে। আপনি কি তাকেও ঈসা মসীহ মানেন?

(৫) ঈসা (আ.) যদি আপনাদের বিশ্বাসমতে মৃত্যুবরণ করে থাকেন, তাহলে প্রশ্ন হল বর্তমানে ঈসা মসীহ (আ.) এর সমাধি তথা কবর কোথায়? আসুন দেখা যাক গোলাম আহমদ ইবনে চেরাগবিবির রচনাবলীতে ঈসা মসীহ (আ.) এর কবরের সন্ধান কিভাবে দেয়া হয়েছে!

সে এক জায়গায় লিখেছে,

اور کیا تعجب کہ حضرت مسیح کی قبر کشمیر یا اس کے نواح میں ہو

অর্থাৎ কি যে আশ্চর্যের ব্যাপার যে, হযরত মসীহ’র কবর কাশ্মীর অথবা তার আশপাশে (তিব্বতে) অবস্থিত। (রূহানী খাযায়েন খণ্ড ১০ পৃষ্ঠা নং ৩০২)।

এতে বুঝা গেল, সে নিজেও কনফিউশানে ছিল। সে তিব্বতে নাকি কাশ্মীরে, কোনটা বলবে নিজেও ঠিক পায়নি।

সে আরেক জায়গায় লিখেছে,

یہ تو سچ ہے کہ مسیح اپنے وطن گلیل میں جا کر فوت ہو گیا ۔ لیکن یہ ہرگز سچ نہیں کہ وہی جسم جو دفن ہو چکا تھا پھر زندہ ہو گیا۔

‘সত্য তো এটাই যে, মসীহ (ঈসা) আপনা মাতৃভুমি গ্যালীলে (সিরিয়া) গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। কিন্তু তাঁর ঐ দেহ যেটি (সেখানে) দাফন হয়েছিল তা আবার জীবিত হয়ে যাওয়া একদমই সত্য নয়।’ (ইযালায়ে আওহাম ২য় খন্ড, রূহানী খাযায়েন: ৩/৩৫৩; রচনাকাল ১৮৯১ইং)।

সে আরেক জায়গায় লিখেছে,

حضرت عیسی علیہ السلام بیت اللحم میں پیدا ہوئے اور بیت اللحم اور بلدہ قدس میں تین کوس کا فاصلہ ہے اور حضرت عیسی علیہ السلام کے قبر بلدہ قدس میں ہیں اور اپ تک موجود ہیں اور اس پر ایک گرجا بنا ہوا ہے اور وہ گرجا تمام گرجاؤں سے بڑا ہیں اور اس کے اندر حضرت عیسی کی قبر ہے اور اسی گرجا میں حضرت مریم صدیقہ کی قبر ہے اور دونوں قبرین علیحدہ علیحدہ ہیں۔ اتمام الحجہ روحانی خزائن ۸: ۲۹۹

অর্থাৎ…. হযরত ঈসা (আ.) এর কবর ‘ফিলিস্তিন’ এর বায়তুল মোকাদ্দাসের আঙ্গিনায়। (দেখুন, ইতমামুল হুজ্জাত, রূহানী খাযায়েন খণ্ড নং ৮ পৃষ্ঠা নং ২৯৯ [টিকা দ্রষ্টব্য])।

এখন প্রশ্ন হল, ঈসা (আ.) গোলাম আহমদ ইবনে চেরাগবিবির দাবীমতে মৃত্যুবরণ করার বিশ্বাস সঠিক হলে, তখন ঈসা (আ.) এর কবর সম্পর্কে সে যা যা লিখে গেছে সবগুলোকে সঠিক বলতে হবে। এখন আপনারা কি ঈসা (আ.) এর কবর ‘বায়তুল মোকাদ্দাসের আঙ্গিনায়, সিরিয়ার গ্যালিল জনপদে, তিব্বত এলাকায় কিংবা কাশ্মীরের শ্রীনগরে’ অর্থাৎ একসাথে সবখানে মানেন? হাস্যকর!

(৬) আপনারা গোলাম আহমদ ইবনে চেরাগবিবিকে ‘নবী’ মানেন, কিন্তু কিসের ভিত্তিতে তা মানেন সেটা ক্লিয়ার করেন না। কখনো বলেন, শেষ যামানায় ঈসা মসীহ আসবেন আর হাদীসে তাঁকে চার-চার বার نبى الله عيسى (আল্লাহর নবী ঈসা) অর্থাৎ “নবী” শব্দে সম্বোধন করা হয়েছে। গোলাম আহমদ ইবনে চেরাগবিবি নিজেকে ঐ ঈসা মসীহ দাবী করায় নাকি আপনারা তাকে নবী মানেন! আবার কখনো সূরা নিসার ৬৯ নম্বর আয়াতের من النبيين و الصديقين দ্বারাও আনুগত্যরূপে নবী হওয়া যায় বলে তাকে ‘নবী’ আখ্যা দেন। আবার দেখা যায় যে, সূরা জুমা’র وآخرين منهم لما يلحقوبهم দ্বারাও ব্যাখ্যা দেন এ বলে যে, এ আয়াতে শেষ যামানায় মুহাম্মদ (সা.)-কে আল্লাহ নাকি জীবিত করে দুনিয়ায় আরেকবার পাঠানোর কথা বুঝিয়েছেন (নাউজুবিল্লাহ), সে হিসেবে নাকি গোলাম আহমদ ইবনে চেরাগবিবিকে আপনারা ‘নবী’ এমনকি মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ-ও মানেন! আমার জানা নেই যে, আসলে এখানে আপনাদের শেষ কথাটা কী!

সে যাইহোক; তাকে যে দিক থেকেই হোক ‘নবী’ মানেন এটি যখন সাব্যস্ত হয়ে গেল, তখন আপনাদের একখানা প্রশ্ন করা উচিত বলে মনে করছি তা হচ্ছে,

আপনারা মৃত্যুর পর কবরের ফেরেশতার و من نبيك অর্থাৎ তোমার নবী কে? প্রশ্নের উত্তরে কার নাম বলবেন? গোলাম আহমদ ইবনে চেরাগবিবির নাম বলবেন? নাকি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম বলবেন? যেহেতু গোলাম আহমদ নিজেকে শেষনবী হওয়ার দাবীও করেছে, (দেখুন, তাযকিরাতুশ শাহাদাতাই-৮২ বাংলা অনূদিত) সেহেতু তাকে ছাড়া আপনারা দ্বিতীয় কারো নাম ফেরেশতার প্রশ্নের উত্তরে উত্থাপন করতে পারেন না।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক
প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী এম.এ

কাদিয়ানী খলীফাদের নানা বয়সী ছবির দৃশ্যাবলি

কাদিয়ানীদের তথাকথিত খলীফাদের শিশু, কিশোর, তরুণ ও মধ্যবয়সী সহ নানা সময়ের বৈচিত্র্যময় ফটো।

মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ। মাহমুদ আহমদ মোট ৭টি বিবাহ করেছিলেন। তারা হলেন, মাহমুদা বেগম, আমতুল হাই, সৈয়দা মরিয়ম নিসা বেগম, সারা বেগম, আজিজা বেগম, মরিয়ম সিদ্দিকা, বুশরা বেগম। এই স্ত্রীদের থেকে তাঁর মোট আঠাশজন সন্তান ছিল, যাদের মধ্যে পাঁচজন শৈশবেই মারা যান। ১৯১৪ সালে হেকিম নূর উদ্দিনের মেয়ে আমতুল হাইকে বিয়ে করেন। কিন্তু পরবর্তীতে সাংসারিক বিবাদে জড়িয়ে তিনি তাকে বিষ পানে হত্যা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তার পুত্র মির্যা নাসের আহমেদ এর মৃত্যুর পর তার আরেক পুত্র মির্যা রফি আহমেদ তাদের জামাতের খলীফা হবার দাবী করেন। পরে তিনি খলীফা না হতে পেরে ‘গ্রীন আহমদীয়ত’ নামে নতুন জামাত প্রতিষ্ঠা করেন।
মির্যা মাসরূর আহমেদ (৫ম খলীফা অফ কাদিয়ানী)। তার মাতার নাম সাহেবজাদী নাসেরা বেগম, যিনি কাদিয়ানী তথা আহমদীয়া সম্প্রদায়ের সো-কল্ড দ্বিতীয় খলিফা মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদের পুত্র মির্যা মনসুর আহমদের স্ত্রী। সে হিসেবে মির্যা মাসরূর আহমেদ হচ্ছেন, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর বংশধর এবং তারই পৌত্র।
মির্যা মাসরূর আহমেদ
মির্যা মাসরূর আহমেদের সাথে বাংলাদেশি কতিপয় কাদিয়ানী মিশনারীর লন্ডনে সাক্ষাৎকার।
মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ এর দ্বিতীয় সংসার মরিয়ম বেগমের গর্ভে জন্মগ্রহণকারী মির্যা তাহের আহমদ (চতুর্থ খলীফা অফ কাদিয়ানী)। তার কবর লন্ডনের টিলফোর্ড শহরে অবস্থিত।
মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ এর প্রথম সংসার মাহমুদা বেগমের গর্ভে জন্মগ্রহণকারী মির্যা নাসের আহমেদ, (তৃতীয় খলীফা অফ কাদিয়ানী), তার সময়ে এবং তারই উপস্থিতিতে পাক ভুট্টো সরকারের আমলে ১৯৭৪ সালের ৭ ই অক্টোবর কাদিয়ানীদের উভয় অংশের ধর্মবিশ্বাসের উপর প্রায় ১৩ দিন ব্যাপী দ্বিপাক্ষিক বাহাস শেষে পাক আইন সভায় সর্বদলীয় ও সম্মিলিত সিদ্ধান্তক্রমে ‘অমুসলিম’ সংখ্যালঘু বলিয়া শুনানি করে। তার পর থেকে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তাদের জন্য মুসলিম পরিচয় দেয়া, ইসলামি পরিভাষা সমূহ ব্যবহার করা এবং হজ্জের জন্য ভিসার আবেদন করা ইত্যাদির উপর সাংবিধানিকভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এ রায়ের পর থেকে তারা পাকিস্তান থেকে তাদের সদরদপ্তর ইংল্যান্ডে গুটিয়ে নেয়।
মির্যা নাসের আহমেদ এর পাশে কাদিয়ানীদের প্রধান মুনাজির জালাল উদ্দীন শামস দাঁড়িয়ে আছেন।
মুলহিদ আব্দুল লতিফ, আফগান সরকারের আমীর হাবীবুল্লাহ খানের নির্দেশে ১৯০৩ সালে তার বিরুদ্ধে মির্যা কাদিয়ানীর সাথে তার যোগসংযোগ প্রমাণিত হলে এবং ইসলাম ত্যাগ করে কাদিয়ানী হওয়ার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে প্রচলিত ব্লাসফেমি আইন অনুসারে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।
যিকরে হাবীব (প্রিয়বন্ধুর আলোচনা) বইয়ের লিখক, মোহাম্মদ সাদিক। মির্যা কাদিয়ানীর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে প্রসিদ্ধ। ১৯১৩ সালে বিবাড়ীয়া সদর জেলার কান্দিপাড়া গ্রামে তৎকালীন একই গ্রামের স্থানীয় পীর আব্দুল ওয়াহিদকে আমীর বানিয়ে প্রথম বঙ্গীয় আহমদীয়া জামাত আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা করে। উক্ত অনুষ্ঠানে ভারতের কাদিয়ান থেকে আগত প্রতিনিধি দলটির নেতৃত্ব দেন মোহাম্মদ সাদিক। তিনিই উক্ত অনুষ্ঠানের সভাপতিত্বের ভুমিকা রাখেন।

কাদিয়ানীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করা কতটুকু সম্ভব?

কাদিয়ানীদেরকে রাষ্ট্রীয় ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করা কতটুকু সম্ভব তা নির্ভর করবে এন্টি কাদিয়ানী মুভমেন্ট কাদিয়ানীদের মুকাবিলায় কতটুকু শক্তিশালী তার উপর। কাদিয়ানীরা একতা, সাহসিকতা, কাঠামোগত, একাডেমিক এবং কর্মতৎপরতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে যতটা অগ্রগামী, তার চেয়েও কয়েকগুণ বেশি অগ্রগামী থাকা জরুরি এন্টি কাদিয়ানী মুভমেন্টের জন্য।

কাদিয়ানীদের রয়েছে শিশু, যুবক, বয়স্ক এবং মহিলা কর্মী বাহিনী। এদের প্রত্যেকের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মশালার ব্যবস্থাও থাকে। ৭ থেকে ১৫ বছরের ছেলে শিশু কর্মীদের বলা হয় আতফাল, আর মেয়ে শিশু কর্মীদের বলা হয় নাসেরাহ (১৯৩৮ ইং)। ১৫ থেকে ৪০ বছরের যুবকদের কর্মী বাহিনীকে বলা হয় খুদ্দাম (১৯৩৮ ইং) আর মহিলা কর্মীদের বলা হয় লাজনা (১৯২২ ইং) আর চল্লিশ বছরের বেশি বয়স্কদের বলা হয় আনসার (১৯৪০ ইং)। মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ কর্তৃক উল্লিখিত সহায়ক সংগঠনগুলো প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

এদের প্রত্যেকের কার্যক্রমগুলো স্ব স্ব অবস্থান থেকে পৃথকভাবে পরিচালিত হয়। প্রত্যেককে নিজ নিজ কার্যক্রমের উপর রিপোর্ট জমা দিতে হয়। প্রত্যেকটি কর্মী সদস্যের সাপ্তাহিক, পাক্ষিক এবং মাসিক কার্যক্রমের উপর মূল্যায়নধর্মী আলাদা ম্যাগাজিন, বুলেটিন প্রকাশ করা হয়। যারা কৃতিত্বের সাক্ষর রাখতে পারেন তাদেরকে কেন্দ্র থেকে বিশেষ সম্মাননা সহ পুরষ্কৃত করা হয়।

এদের ভি টিম হিসেবে যত শাখাপ্রশাখাই থাকুক না কেন, প্রত্যেকেই কেন্দ্রীয়ভাবে অভিন্ন নির্দেশনার মধ্য দিয়েই পরিচালিত হয় এবং সুনির্দিষ্ট টার্গেটেই এগিয়ে যায়।

এদের পুরো সত্তাটাই নির্দিষ্ট একটি কাঠামোর উপর দন্ডায়মান। হাইকমান্ড থেকে যখন যা নির্দেশ আসে তারা তা সুশৃঙ্খলভাবেই তা আঞ্জাম দিয়ে থাকে। তাদের প্রত্যেকটি কাজের জন্য পৃথকভাবে যোগ্য ও অভিজ্ঞ দায়িত্বশীল রয়েছেন। তারা হোম ওয়ার্ক ছাড়া কোনো কাজ করেন না। ফলে তাদের কর্মপদ্ধতি থাকে নিখুঁত। অবশ্যই তাদের কাজ গুলো প্রফেশনালি কর্মীদের মাধ্যমেও আঞ্জাম দেয়া হয়। তাদের প্রতিটি বিভাগ প্রশিক্ষিত কর্মী বাহিনী দ্বারা যেমন পরিচালিত, তেমনি সবাই হাইকমান্ডের নিকট জবাবদিহিতার আওতাভুক্ত।

তাদের নিজেস্ব অভিজ্ঞ ব্যক্তি বিশেষ দ্বারা আইটি সেক্টর পরিচালিত। তাদের রয়েছে একাধিক একাডেমিক ওয়েবসাইট। যেখানে তাদের গুরুত্বপূর্ণ লেখাগুলো সহ গোলাম আহমদ কাদিয়ানী আর তার সো-কল্ড খলীফাদের রচিত বইগুলোর পিডিএফ পাওয়া যায়। তাদের ওয়েব সাইট গুলোতে আরবি, উর্দু এবং বাংলা সহ সব ধরনের বই, ম্যাগাজিন, বুলেটিন, লিফলেট আপলোড থাকে। তারা তাদের বিরোধীদের সমালোচনার উপর খন্ডনমূলক আর্টিকেলও রেখে দিয়েছে।

এ তো গত ১৫ ই নভেম্বর ২০২৫ এর ঢাকা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খতমে নবুওয়ত সম্মেলনের বক্তাদের বক্তব্যগুলোর উপর তারা তাদের পালটা জবাবি ভিডিও প্রকাশ করেছে। যা স্যোসাল মিডিয়ায় পাওয়া যায়। তারা কতটা পূর্ব থেকে সুপরিকল্পিত প্লানিং নিয়ে অগ্রসরমান তা তাদের কাজের ধরণ দেখেই বুঝা যায়।

কাজেই কাদিয়ানীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করানোর সক্ষমতা তাদের বিরোধী পক্ষের কতটুকু আছে বা নেই তা পুরোপুরি নির্ভর করছে বিরোধী পক্ষের কার্যক্রমের টোটাল কাঠামোটা কী রকম! কাদিয়ানীদের সমপর্যায়ের? নাকি তার চেয়েও কম কিংবা বেশি?

খতমে নবুওয়ত এর ব্যানারে যারা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন তাদেরকে জিজ্ঞাসা করতে চাই যে,

১। সারা দেশে কাদিয়ানী আস্তানাগুলোতে কি আপনাদের পদচারণা রয়েছে? কাদিয়ানী মতবাদ যারা গ্রহণ করেছেন তারাও তো ইতিপূর্বে আমাদেরই ভাই বোন ছিলেন। তারা কিজন্য ভুল পথে গেলেন? তারা কি বুঝেশুনে কাদিয়ানী হন নাকি টাকা পয়সার লোভে বা আবেগে কাদিয়ানী হন? কোনো কারণ তো অবশ্যই আছে, তাই নয় কি? একটু ভেবে দেখেছেন?

২। কাদিয়ানীদের দাওয়াতি কর্মপন্থা কী? তারা সাধারণ মানুষকে কেমন বয়ান দ্বারা বুঝায় বা দাওয়াত দেয়? আপনারা কি সে বয়ানগুলো নোট করেছেন? সেসব বয়ানের বিপরীতে আপনারা কি আরও শক্তিশালী কোনো বয়ান তৈরি করতে পেরেছেন? আপনারা কি সেই শক্তিশালী বয়ানের উপর তারবিয়ত তথা প্রশিক্ষণ কর্মশালার ব্যবস্থা করেছেন? কিছু দাঈ তৈরি করে আক্রান্ত এলাকাগুলোয় দাওয়াতি কাজের কোনো উদ্যোগ নিতে পেরেছেন?

৩। কাদিয়ানীদের মত আপনাদের সুনির্দিষ্ট কোনো দক্ষ, যোগ্য, প্রশিক্ষিত, সাহসী এবং কর্মঠ কোনো লিডারশীপ কি আছেন যার সিদ্ধান্তকে সবাই সুপ্রিম সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন? অন্যথা আপনাদের সাপ্তাহিক, পাক্ষিক এবং মাসিক কার্যক্রমগুলো কিভাবে পরিচালিত হচ্ছে? দাঈদের কার্যক্রম গুলো কয়টা শাখায় বিভক্ত? তাদের কার্যক্রমের উপর মনিটরিং সেলে কতজন দায়িত্বশীল রয়েছেন? আইটি সেকশনে কাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাদের মাধ্যমে ওয়েবসাইট, ইউটিউব, স্যোসাল মিডিয়ায় কী কী আপডেট রয়েছে?

৪। বাংলাদেশে কাদিয়ানীরা জাতীয় দৈনিক গুলোতে সম্পূর্ণ পৃষ্ঠা ব্যাপী ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে থাকে। খতমে নবুওয়তের হাইকমান্ড থেকে সেটির প্রতিউত্তরে আমরা কেন কোনো আপডেট দেখিনা। জাতীয় দৈনিক গুলোতে কি খতমে নবুওয়তের হাইকমান্ড থেকে পাঠানো কোনো ডকুমেন্ট প্রকাশ করতে অনিহা প্রকাশ করেছিল?

এভাবে অনেক কিছুই জিজ্ঞেস করার আছে। আমাদের সম্মানিত উলামায়ে কেরামের উচিত, কাদিয়ানীদের মুকাবিলায় যদি সম্ভব হয় যুৎসই উদ্যোগ গ্রহণ করুন। কাঠামোগত ম্যানেজমেন্ট নিয়ে কাজের ময়দানে সুশৃঙ্খলভাবে কার্যক্রম অব্যাহত রাখুন। অন্যথা শুধুশুধু লোকদেখানো কাজ করে কোনো লাভ নেই। ২০০৩ সালে বেগম জিয়ার আমলে কাদিয়ানীদের কিছু বইপুস্তক সে সময় সরকার নিষিদ্ধ করা মাত্রই সারা দুনিয়া থেকে সরকারের উপর অনবরত চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল। প্রায় ১৫শ নিন্দাসূচক ফ্যাক্স এসে জমা হয়েছিল বেগম জিয়া বরাবর। বিশ্বব্যাপী কাদিয়ানীদের হাত কতটা লম্বা তা বোধহয় বেগম জিয়া সে সময় কিছুটা টের পেয়েছিলেন। তারপর থেকে বেগম জিয়া একদম সাইজ হয়ে যান। কাদিয়ানীদের বিরুদ্ধে ভুলেও আর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি তার সরকার। সুতরাং এখন বুঝতেই পারছেন যে, তাহলে এ মুহূর্তে আমাদের আসল করণীয় কাজটা কী? হ্যাঁ, ইউসুফ বিন্নুরী (রহ.), আব্দুস সালাম চাটগামী (রহ.) দুজন মহান ব্যক্তিত্ব খুবই চমৎকার বলে গেছেন। সেটি হচ্ছে, কাদিয়ানীদের নিকট যাওয়া, তাদেরকে ধরে ধরে বুঝাতে থাকা। তাদেরকে মোহাব্বত করে দ্বীনের পথে ডাকা। জবরদস্তি না করা। মাদ্রাসা স্কুলের মেধাবী ছাত্রদের তারবিয়ত দিয়ে আক্রান্ত এলাকাগুলোয় পাঠিয়ে দেয়া। আর এ কাজের জন্য যত টাকা পয়সা দরকার তা সবাই মিলে আঞ্জাম দেয়া।

রাষ্ট্রের প্রধান প্রধান দায়িত্বশীল যারা তাদের কাছে যাওয়া। সাংবাদিক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিজীবী প্রত্যেককে বুঝানো এবং কাদিয়ানীরা কেন ভুল পথে আছে তা তাদের সামনে তুলে ধরা। এ জন্য যত টাকার বইপুস্তক কেনা দরকার তা কিনে লাইব্রেরী আকারে বন্দোবস্তো করা। তাহলে মাত্র দশ বছরও লাগবেনা, এরই মধ্যে প্রায় সব কাদিয়ানীই ভুল বুঝতে পেরে ইসলামে ফিরে আসবে, ইনশাআল্লাহ। ফলে রাষ্ট্রীয় ভাবে তাদেরকে অমুসলিম ঘোষণা করার দরকারও পড়বেনা।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

মির্যা কাদিয়ানীর ‘মসীহ’ দাবীর অসারতা

কাদিয়ানীদের সাথে বিতর্ক করার আগে তাদের বই গুলো তো নিশ্চয়ই পড়া থাকতে হবে, সে সাথে তাদের জ্ঞানের দৌঁড়ও মাপা থাকতে হবে।

খাতাম কিবা খাতিম এ জাতীয় পুরনো ঝগড়াঝাটি বাদ দিয়ে একদম জায়গামতো হাত ঢুকিয়ে দিয়ে তাদের প্রশ্ন করতে হবে। স্যোসাল মিডিয়া ছাড়া কোনো কাদিয়ানীর সাথে আমার পক্ষে সাধারণত বিতর্কে জড়ানোর সুযোগ থাকেনা। বর্তমানে নানা কারণে স্যোসাল মিডিয়া থেকে অনেকটাই দূরে থাকছি। বেশ কিছুদিন আগের একটি তর্কবিতর্ক আজ আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাই। যাতে ‘আকীদায়ে খতমে নবুওয়ত’ টপিকে বিতর্ক আলোচনায় আমি আমার স্পেশাল নিয়মটা সবাইকে জানিয়ে রাখতে পারি।

একবার ওদেরই একজন মিশনারীকে তর্কের এক পর্যায়ে বললাম, আপনি আমাকে একটু ক্লিয়ারেন্স দিন তো, আপনারা কি ইন-জেনারেল নবুওয়তের ধারা অব্যাহত রয়েছে মানেন, নাকি রাসূল (সা.) এর ফরমান মুতাবেক শেষ যামানায় একজন নবী (ঈসা) এর পুনঃআগমন হবে, শুধু এটাই মানেন? যদি ইন-জেনারেল (সাধারণভাবে) নবুওয়তের ধারা অব্যাহত রয়েছে মানেন তাহলে আপনি আমার কথার উত্তর দিন যে, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর পর নবী আসার ধারা কেন চিরতরে বন্ধ বলা হল? এ যে দেখুন, গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর বইতে পরিষ্কার করে লিখা আছে যে, একমাত্র গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকেই নাকি “নবী” নাম পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে। (হাকিকাতুল ওহী ৩৩০, বাংলা সংস্করণ ১৯৯৯ ইং)। তাহলে ইন-জেনারেল নবুওয়তের ধারা অব্যাহত থাকল কোথায়? গোলাম আহমদের পর তো সেটা বন্ধ হয়ে গেল!

আর যদি মনে করেন যে, আপনারা-ও রাসূল (সা.) এর সেই ভবিষ্যৎবাণী মুতাবেক মুসলমানদের ন্যায় শুধুই একজন নবী (ঈসা) এর পুনঃ আগমনে বিশ্বাসী, যা সহীহ বুখারী, মুসলিম সহ হাদীসের বহু কিতাবে বর্ণিত হয়েছে, তাহলে আপনার প্রতি আমার মাত্র একটি প্রশ্ন থাকলো। তা হল, সেই আগত নবী (ঈসা) সম্পর্কে রাসূল (সা.) এর ভবিষ্যৎবাণীগুলোতে যা যা উল্লেখ রয়েছে সেগুলোর সাথে মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে আপনি কি কখনো মিলিয়ে দেখেছেন? আমার বিশ্বাস যে, আপনি মিলিয়ে দেখেননি অথবা আপনি আগে কখনো এভাবে বিষয়টিকে নিয়ে ভাবেননি!

আমি অথেনটিক বর্ণনাগুলো থেকে মাত্র কয়েকটি সম্পূর্ণ বর্ণনা আপনার সামনে তুলে ধরছি, মেহেরবানী করে আমাকে গোলাম আহমদের সাথে মিলিয়ে দেখাবেন। তবে কোনো মনগড়া ব্যাখ্যা দিতে পারবেন না। ব্যাখ্যা যদি দিতেই হয় তাহলে অন্তত গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর জন্মেরও পূর্বেকার মাননীয় যুগ ইমামগণ থেকে (ব্যাখ্যা) দিতে হবে।

বলাবাহুল্য, রাসূল (সা.) এর কোনো কোনো ভবিষ্যৎবাণী শপথ বাক্য সহকারেও উল্লেখ আছে। ফলে সেটিতে উল্লিখিত “ইবনে মরিয়ম” (মরিয়ম পুত্র) হতে রূপক কোনো অর্থ উদ্দেশ্য হতে পারেনা আর সেখানে আগত “নবী” সম্পর্কে পরিষ্কার বলা আছে যে, তিনি ইবনে মরিয়ম তথা মরিয়মের পুত্র, যিনি কেয়ামতের পূর্বে যথাসময়ে নাযিল হবেন। মানে তিনি জন্মগ্রহণ করবেন না, বরং বনী ইসরাইলের জন্য প্রেরিত পুরনো একজন নবী, যার পুনঃআগমন শুধুই ‘উম্মতি’ হিসেবে । আল্লাহ তার শাসনামলে ইসলামকে অপরাপর সমস্ত বাতিল দ্বীনের উপর বিজয় দান করবেন। আর তাঁর নির্দেশে যুদ্ধকর (জিজিয়া) স্থগিত করা হবে। অর্থাৎ সে সময়টিতে জিজিয়ার অপশন বাতিল করে দেয়া হবে। ধর্মযুদ্ধ চলমান থাকার একপর্যায়ে ইসলাম বিরোধীরা হয়ত যুদ্ধে নিহত হবে নয়তো বা আত্মসমর্পণ করে পর্যায়ক্রমে ইসলাম গ্রহণ করবে। ফলে একটি সময়ের ব্যবধানে ঐ ধর্মযুদ্ধটাও স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঐ নবী (ঈসা) এর জীবদ্দশাতেই বন্ধ হয়ে যাবে। এ-সংক্রান্ত সবগুলো সহীহ হাদীসকে একসাথ করে দেখলে সে সময়কার পুরো ঘটনার পটভূমি এটাই দাঁড়াবে।

আমি আপনাকে চ্যালেঞ্জ করছি, আপনি উক্ত ভবিষ্যৎবাণী অনুসারী গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে শতভাগ তো দূরের কথা, ২ পার্সেন্টও প্রমাণ করতে পারবেন না।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, আপনি যার চোখ দিয়ে ইসলাম দেখছেন এবং যার শিক্ষামতে পবিত্র কুরআনের নামে ঈসা (আ.)-কে মেরে ফেলতে বসে আছেন, সেই গোলাম আহমদ কাদিয়ানী নিজেই তার আরেকটি রচনায় লিখে গেছে,

اب ثبوت اس بات کا کہ وہ مسیح موعود جس کے آنے کا قران کریم میں وعدہ دیا گیا ہے یہ عاجز ہی ہے ان تمام دلائل اور علامت اور قرائن سے جو ذیل میں لکھتا ہوں ہر ایک طالب حق پر بخوبی کھل جائے گا۔

অর্থাৎ এখন একথা সাব্যস্ত হয়ে গেল যে, পবিত্র কুরআনে যেই মসীহ মওউদের আসার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে সে এই অধমই। (ইযালায়ে আওহাম, রূহানী খাযায়েন ৩/৪৬৮)।

এখন কথা হল, আহমদীয়া তথা কাদিয়ানী ধর্মমত অনুসারে পবিত্র কুরআন দ্বারাই যেখানে ঈসা (আ.)-কে মেরে ফেলতে এতকাল ধরে মগজের সর্বশক্তি ব্যয় করে আসছেন, সেই ঈসা দুনিয়াতে আবার আসার প্রতিশ্রুতি একই কুরআনে কিভাবে থাকতে পারে?

এখন হয়ত বলবেন যে, কুরআনে যে ঈসার আগমনের প্রতিশ্রুতি থাকার কথা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী লিখে গেছে তা হতে গোলাম আহমদ কাদিয়ানী নিজেই উদ্দেশ্য। যদি তাই হয় তাহলে আপনি দয়া করে আমাকে পবিত্র কুরআন থেকে আগত ঈসা (আ.) এর প্রতিশ্রুতিটা সর্বপ্রথম আয়াতের অনুবাদ দ্বারা বুঝিয়ে দিন। তারপর সেই আয়াতের সাথে গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর সম্পর্ক কী এবং কিভাবে, তা পরিষ্কার করে দিন। দয়া করে এ কষ্টটুকু করুন। যাতে আমিও সত্যিকারের আগত প্রতিশ্রুত সেই ঈসা (আ.)-কে চিনতে পারি এবং গোমরাহ হওয়া থেকে বাঁচতে পারি।

আমার চ্যালেঞ্জ রইল, কোনো কাদিয়ানী মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চেষ্টা করলেও গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে রাসূল (সা.) এর ফরমান মুতাবেক ‘প্রতিশ্রুত ঈসা’ (মসীহ) প্রমাণ করতে পারবেনা।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক
প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী
তারিখ- ০৭/১১/২০২৫

সমস্ত রাসূল গত হইয়া গিয়াছে-এর তাৎপর্য

সূরা আলে ইমরান আয়াত ১৪৪, আল্লাহ বলেছেন, “তাহার পূর্বে রাসূলগণই গত হইয়া গিয়াছে।” কিন্তু কাদিয়ানী তথা আহমদীয়াদের কৃত অনুবাদ হলো, তাহার পূর্বেকার সমস্ত রাসূল গত হইয়া গিয়াছে।

কাদিয়ানীদের সাথে এ নিয়ে যতবারই তর্ক হয়েছে তাদের বক্তব্য একটাই, ঈসা (আ.)-এর মৃত্যু হয়ে যাওয়াটা কুরআনের উক্ত আয়াতটি দ্বারা সাব্যস্ত। কিভাবে? তাদের বক্তব্য হলো, আল্লাহ এখানে মুহাম্মদ (সা.) এর পূর্বে সমস্ত রাসূল গত হয়ে গেছেন, এ কথা হতে তারা প্রত্যেকে মৃত্যুবরণ করেছেন, বলে বুঝিয়েছেন। কেননা, আয়াতে উল্লিখিত الرُّسُلُ শব্দের শুরুতে যুক্ত আলিফ-লামকে ‘ইস্তিগরাকি’ বলা হয়, যা গত হয়ে যাওয়া রাসূলগণের সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করবে। আর যদি তেমনটা না হয় তাহলে এতে দলীল অসম্পূর্ণ থাকবে। কেননা, যদি গত হয়ে যাওয়ার অর্থ থেকে কোনো একজনও বাহিরে থাকে তাহলে কুরআনের যে দাবী ও দলীল উত্থাপন করার ছিল তা আয়াত হতে পরিপূর্ণতা পাবেনা। মির্যা গোলাম আহমদ রচিত ‘ইযালায়ে আওহাম’ গ্রন্থে এসব লিখা আছে। তার রচনাসমগ্র রূহানী খাযায়েন ৩:৫৮৮ দ্রষ্টব্য।

কাদিয়ানীদের বইগুলোতে আরও লিখা আছে যে, আয়াতটিতে খুব খেয়াল করলে দেখা যাবে যে, পূর্বেকার গত হয়ে যাওয়া সমস্ত রাসূলের জন্য মৃত্যুবরণ করাই উদ্দেশ্য। কারণ, একই আয়াতে গত হয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া মাত্র দুটিই বলা হয়েছে। যথা মৃত্যু অথবা নিহত হওয়া। এখন যেহেতু গত হয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াটা পরবর্তীতে উল্লিখিত মৃত্যু আর কতলের সাথে নির্দিষ্ট হয়ে গেল, তখন তৃতীয় কোনো কিছুই এতে উদ্দেশ্য নেয়ার সম্ভাবনা থাকল না।

এবার কাদিয়ানীদের যুক্তি ও দলীলের খন্ডনমূলক জবাব দেয়া হবে। প্রথমতঃ উক্ত আয়াত হতে পূর্বেকার রাসূলগণের সবাইকে মৃত্যুবরণকারী সাব্যস্ত করার মধ্যে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কী উদ্দেশ্য? আল্লাহ কেন এধরণের কোনো আয়াত অবতীর্ণ করলেন? এতে তাঁর মুমিন বান্দাদের জন্য কী শিক্ষা রয়েছে? প্রশ্নগুলো নিয়ে ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করলেই কাদিয়ানীদের তথাকথিত দলীল প্রমাণের নামে সস্তা যুক্তিতর্কের হাকিকত উন্মোচিত হয়ে যাবে। আসুন, প্রথমে আয়াতটির অনুবাদ দেখে নিই। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেছেন,

وَ مَا مُحَمَّدٌ اِلَّا رَسُوۡلٌ ۚ قَدۡ خَلَتۡ مِنۡ قَبۡلِہِ الرُّسُلُ ؕ اَفَا۠ئِنۡ مَّاتَ اَوۡ قُتِلَ انۡقَلَبۡتُمۡ عَلٰۤی اَعۡقَابِکُمۡ ؕ وَ مَنۡ یَّنۡقَلِبۡ عَلٰی عَقِبَیۡہِ فَلَنۡ یَّضُرَّ اللّٰہَ شَیۡئًا ؕ وَ سَیَجۡزِی اللّٰہُ الشّٰکِرِیۡنَ

অর্থাৎ মুহাম্মদ একজন রাসূল মাত্র; তাঁর আগে রাসূলগণই গত হয়ে গেছেন। কাজেই যদি তিনি মারা যান বা নিহত হন তবে কি তোমরা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে? আর কেউ পৃষ্ঠ প্রদর্শন করলে সে কখনো আল্লাহ্‌র ক্ষতি করবে না; আর আল্লাহ শীঘ্রই কৃতজ্ঞদেরকে পুরস্কৃত করবে।”

ব্যাখ্যামূলক তাৎপর্যঃ এ আয়াতে হুঁশিয়ার করা হয়েছে যে, রাসূল (সা.)-এর পরও মুসলিমদের দ্বীনের উপর অটল থাকতে হবে। এতে আরো বুঝা যায় যে, উহুদের যুদ্ধের সময় সাময়িক বিপর্যয়ের সময় রাসূল (সা.) আহত হওয়া এবং তার মৃত্যুসংবাদ প্রচারিত হওয়ার পেছনে যে রহস্য ছিল, তা হলো তাঁর জীবদ্দশাতেই তাঁর মৃত্যু-পরবর্তী সাহাবায়ে-কেরামের সম্ভাব্য অবস্থার একটি চিত্র ফুটিয়ে তোলা, যাতে তাদের মধ্যে কোনো ক্রটি-বিচ্যুতি পরিলক্ষিত হলে রাসূল (সা.) স্বয়ং তা সংশোধন করে দেন এবং পরে সত্যসত্যই যখন তাঁর মৃত্যু হবে, তখন যেন সম্বিত হারিয়ে না ফেলেন। বাস্তবে তাই হয়েছে। রাসূল (সা.) এর ওফাতের সময় যখন প্রধান প্রধান সাহাবীগণও শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েন, তখন আবু বকর সিদ্দীক (রা.) এ আয়াত তেলাওয়াত করেই তাদের শান্তনা দেন। [দেখুন, বুখারীঃ ১২৪১, ১২৪২, ৪৪৫৩, ৪৪৫৪]।

আয়াতটির শানে নুযূল তথা প্রেক্ষাপটের বিচারে এটা মোটেও তার দাবী বলা যায় না যে, পূর্বেকার গত হয়ে যাওয়া প্রত্যেক রাসূলকেই আয়াতটি মৃত সাব্যস্ত করতে চাচ্ছে। কেননা আয়াতের মূলভাব ছিল, রাসূল (সা.) এর মৃত্যুবরণ করার কারণে সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে যেন কোনো ক্রটি-বিচ্যুতি পরিলক্ষিত না হয় এ কথা ভেবে যে, মুহাম্মদ (সা.) মৃত্যুবরণ করতে পারেন না! আর যেহেতু তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন সেহেতু তিনি কেমন ধরনের রাসূল? এরই প্রতিউত্তর স্বরূপ, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর মুমিন বান্দাদের সতর্ক করে দিয়েছেন এ বলে যে, মুহাম্মদ (সা.) তো শুধুই আল্লাহর একজন রাসূল মাত্র, তিনি তো খোদা নন যে চিরঞ্জীব হবেন! তাই তাঁর মৃত্যুবরণ করার সংবাদে তোমাদের শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়ার কোনো কারণ নেই। কারণ, তোমাদের নিশ্চয়ই জানা থাকা উচিত যে, তাঁর পূর্বেও রাসূলগণই গত হয়ে গিয়েছেন। কাজেই তিনিও তাঁদেরই ন্যায় একজন রাসূল মাত্র। তাই তাঁদের মত তাঁর ইহকাল ত্যাগ করে চলে যাওয়াতে তোমাদের অবাক হওয়ার কোনো কারণ থাকতে পারেনা। আয়াতের মূলভাব এটাই। কাজেই, ‘অনেক রাসূল অথবা সমস্ত রাসূল’ এ ধরনের অনর্থক শব্দচয়ন নিয়ে ঝগড়া করে কোনো লাভ নেই।

ইতিহাস প্রমাণ করে যে, হযরত উমর (রা.) এর মত বিশিষ্ট সাহাবীও নবী করীম (সা.)-এর মর্মান্তিক মৃত্যুর সময় চরম উত্তেজনার শিকার হয়ে তাঁর মৃত্যুকে অস্বীকার করে বসেন। আবূ বকর (রা.) বড়ই কৌশল অবলম্বন করে রাসূল (সা.)-এর মিম্বারে দাঁড়িয়ে এই আয়াত তেলাওয়াত করে শোনান। যাতে উমর (রা.) প্রভাবিত হন এবং তাঁর অনুভব হয় যে, যেন এই আয়াত এখনই অবতীর্ণ হল। কাজেই প্রশ্ন আসে, এমতাবস্থায় মৃত্যু এবং কতল বা নিহত হওয়ার নির্দিষ্ট ঐ দুইখানা প্রক্রিয়া যা নবী করীম (সা.) এর সাথেই খাস বা নির্দিষ্ট, সেটির সাথে গত হয়ে যাওয়া রাসূলগণের প্রাসঙ্গিকতা কী? কাদিয়ানীরা এ সমস্ত ধোকাবাজি কেন করে তা আল্লাহই মালুম। অথচ আয়াতে উল্লিখিত ‘খালাত’ (خلت) শব্দটি আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বিশেষ রহস্যের কারণেই ব্যবহার করেছেন। আর সেটি হলো, পূর্বেকার গত হয়ে যাওয়া রাসূলগণের মধ্যে বিশেষভাবে হযরত ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ.) এর ‘গত’ হবার ধরণ যে ভিন্ন ছিল, মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে তিনি শামিল নন; ব্যতিক্রমী এ রহস্যের জট খুলতেই ‘খালাত’ এর মত একটি সাধারণ শব্দ ব্যবহার করেছেন। নইলে তিনি শব্দটির পরিবর্তে সরাসরি মৃত্যু অর্থ বুঝাতে ‘মউত’ (ماتت) শব্দ ব্যবহার করতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি! আরবীতে প্রবাদ আছে, فعل الحاكم لا يخلو عن الحكمة অর্থাৎ জ্ঞানীর কোনো কাজ রহস্য বিনে হয় না। জ্ঞানী যারা তাদেরকে বিষয়টি নিশ্চয়ই ভাবিয়ে তুলবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনের এক জায়গায় ইরশাদ করেছেন, يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَٰكُم مِّن ذَكَرٍۢ وَأُنثَىٰ “হে মানবমণ্ডলী! নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে একজন নর এবং নারী থেকে সৃষ্টি করেছি।” (আল-হুজুরাত ১৩)। এখন আপনি যদি এ থেকে “সমস্ত মানুষ” উদ্দেশ্য নেন এবং তাতে নানা কারীনা বা ইংগিতের ভিত্তিতে তাখছীছের (ব্যতিক্রমের) নীতি না মানেন, তাহলে বলতে হবে যে, হযরত ঈসা (আ.)-এর জন্মও একজন নর এবং নারী উভয় থেকেই হয়েছিল! অথচ এটি পবিত্র কুরআনের শিক্ষার সুস্পষ্ট বিরোধী। অন্য আরেক জায়গায় আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেছেন, “তোমাদের জন্য মৃত, রক্ত এবং শুয়োরের মাংস হারাম করা হয়েছে।” (সূরা মায়েদা ০৩)। এখন নানা কারীনা থাকা সত্ত্বেও আপনি যদি এতেও তাখছীছের নীতি না মানেন, তাহলে বলতে হবে যে, সমস্ত মৃত প্রাণীই হারাম, সেটা হোক মাছ বা টিড্ডি। অথচ মাছ যদি মৃতও হয় তবু সেটি হালাল, কেউই হারাম মনে করেনা। কাদিয়ানীদের ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করা উচিত যে, তেমনি সূরা আলে ইমরান, আয়াত নং ১৪৪ এর মধ্যেও الرُّسُلُ শব্দের শুরুতে যুক্ত ‘আলিফ-লাম’ যদি ‘ইস্তিগরাকি’ বলেও ধরে নেয়া হয়, তথাপি শব্দটির অর্থেও তাখছীছের নীতি গ্রহণ করতে হবে। যেহেতু ঈসা (আ.)-কে উঠিয়ে নেয়া এবং শেষ যামানায় ফিরে আসা সম্পর্কে সূরা আলে ইমরান আয়াত নং ৪৬ এবং ৮১, সূরা নিসা আয়াত নং ১৫৮-৫৯, সূরা যুখরুফ ৬১ সহ বহু ইংগিতস্বরূপ প্রমাণ রয়েছে, যাকে উসূলের পরিভাষায় ইশারাতুন নস বলা হয়। উল্লেখ্য, ইশারাতুন নসও কাতি’ঈ বা অকাট্য জ্ঞান হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে। মজার ব্যাপার হলো, সূরা নিসা আয়াত নং ১৫৮, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেছেন, “বরং তিনি তাঁকে (ঈসাকে) তার দিকে উঠিয়ে নিয়েছেন।”

বলাবাহুল্য যে, বহু সহীহ হাদীস এবং সাহাবী ও তাবেয়ীর তাফসীর হতে সুস্পষ্ট সাক্ষ্য বিদ্যমান আছে যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হযরত ঈসা (আ.)-কে উঠিয়ে নিয়েছিলেন রুহুল কুদস জিবরাইল (আ.) এর মাধ্যমে। সূরা আল মায়েদা আয়াত নং ১১০ وَإِذْ كَفَفْتُ بَنِي إِسْرَائِيلَ عَنكَ إِذْ جِئْتَهُم بِالْبَيِّنَاتِ “তুমি স্মরণ কর যখন আমি তোমার কাছ থেকে বনী ইসরাইলীদের নিবৃত রেখেছিলাম, যখন তুমি তাদের নিকট সুস্পষ্ট নিদর্শন নিয়ে এসেছিলে” এখানে আল্লাহর এ কথা সে সময়ের সাথে সম্পর্কিত যখন তিনি ঈসাকে ইহুদীদের কবল থেকে মুক্ত করে আকাশে উঠিয়ে নিয়েছিলেন (ইমাম সুয়ূতী), সহ অসংখ্য সহীহ হাদীস তারই সমর্থনে সুস্পষ্ট ইঙ্গিতবিশিষ্ট। ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ গ্রন্থে ইমাম ইবনু কাসীর তেমনি একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন এইরূপ যে, لما أراد الله أن يرفع عيسى إلى السماء، خرج على أصحابه “ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, আল্লাহ যখন ঈসাকে আকাশে উঠিয়ে নিতে চাইলেন তখন তিনি (ঈসা) তাঁর সাথীদের দিকে বেরিয়ে এলেন।” হাদীসটি অনেক দীর্ঘ। ইবনে কাসীর (রহ.) এর সনদ সম্পর্কে বলেছেন, ইবনে আব্বাস পর্যন্ত এর বর্ণনাসূত্র সহীহ। সুতরাং কাদিয়ানীদের এখানে যে বক্তব্যটি শুনা যায় যে, ঈসাকে আল্লাহ “রাফিউকা ইলাইয়্যা” বলে অন্য সকল রাসূলের ন্যায় মৃত্যুর পর আধ্যাত্মিক উন্নীত করেছেন, শারীরিকভাবে তুলে নেননি—কাদিয়ানীদের এ সমস্ত কথাবার্তা কিছুতেই যুক্তিক নয়, বরং পুরাই আন্দাজে কথাবার্তা। কেননা জিবরাইল (আ.) কখনো কাউকে মৃত্যু দেন না, বরং এ কাজ শুধুই মালাকুল মউত আজরাইল (আ.) এরই। কিন্তু নির্বোধ কাদিয়ানীদেরকে এ সুক্ষ্ম বিষয়গুলো বুঝানোর সাধ্য কার!

পরিশেষে সর্বজন স্বীকৃত যুগ ইমাম, হযরত শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দেস আদ-দেহলভী (রহ.)-এর একটি বক্তব্য দিয়েই আজকের মত আলোচনা শেষ করব। তিনি তাঁর তাফসীরগ্রন্থে লিখেছেন : فَظَنُّوْا رَفْعَهُ إِلَي السَّمَاءِ قَتْلًا “ফলে তারা (ইহুদীরা) তাঁকে (ঈসাকে) আকাশে উঠিয়ে নেয়াকে হত্যা করার ধারণা করেছিল”। (আল-ফাওযুল কাবীর [আরবী] ৩৮; দারুল গাওছানী লিদ-দিরাসাতিল কুরআনিয়্যা, দামেস্ক হতে প্রকাশিত)। আল্লাহতালা আমাদেরকে আহমদীয়া তথা কাদিয়ানী এ দাজ্জালী ফেতনা থেকে পুরোপুরি রক্ষা করুন। আমীন।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

শেষনবী হওয়ার দাবী

প্রশ্ন : আহমদীয়া তথা কাদিয়ানী কমিউনিটির প্রতিষ্ঠাতা ভারতের পাঞ্জাবের কাদিয়ান গ্রামে জন্মগ্রহণকারী মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর “শেষনবী” দাবীও কি ছিল?

উত্তর :- ভারতীয় বংশোদ্ভূত মির্যা গোলাম আহমদের “নবী ও রাসূল” দাবী তো সুস্পষ্ট একটি প্রমাণিত ইতিহাস, কিন্তু সে যে শেষনবী দাবীও করেছিল তা কিন্তু অনেকেই জানেনা। বেশ কিছু দিন আগের কথা, বাংলাদেশের কাদিয়ানী জামাতের ন্যাশনাল আমীর আব্দুল আউয়াল সাহেব তার এক বক্তব্যে বললেন,

“মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী কখনো শেষনবী দাবী করেননি, তার শেষনবী দাবী নেই; আর আমরা তাকে শেষনবী মানিনা। হ্যাঁ আমরা তাকে “উম্মতিনবী” হিসেবে মানি।” (কাদিয়ানীদের সত্যের ‘সন্ধানে অনুষ্ঠানে’ জনৈক প্রশ্নকারীর প্রশ্নের জবাবে আব্দুল আউয়াল একথা বলে, ভিডিওটির ক্লিপ আমাদের সংরক্ষণে আছে)।

এবার দেখুন, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর শেষনবী দাবী ছিল কিনা?

মির্যা বশির আহমদ এম.এ তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত ‘দৈনিক আল ফজল’ পত্রিকা থেকে সরাসরি অনুবাদঃ-

  • “আমরা হযরত সাহেবের আবির্ভাবের পূর্বেকার মুসলমানদের সকল ফেরকাকে নিঃসন্দেহে মুসলমানই বলতাম। বৈধভাবে এরকমই বলা হত। কিন্তু যখন আখেরি নবী এবং মামুর মিনাল্লাহ (শেষনবী এবং আল্লাহর পক্ষ হতে আদিষ্ট) এর প্রকাশ ঘটল এবং শেষে ঐ সময়টি এসে গেল যে, দুধকে পানি থেকে পৃথক করা গেল। এতে বিপরীতমুখী দুইটি পক্ষ সৃষ্টি হয়ে গেল। অর্থাৎ মুমিন এবং কাফের। হযরত সাহেবকে (অর্থাৎ গোলাম আহমদকে) মান্যকারী মুমিন হিসেবে সাব্যস্ত আর মোহাম্মদ রাসূলুল্লাহ এবং অন্যান্য নবীগণের জামাতসমূহ যারা এই শেষনবীকে মানেনি, (তারা) কাফের সাব্যস্ত।”

(দৈনিক আল ফজল, তারিখ ০৮.০৬.১৯১৪, পৃষ্ঠা নম্বর ১৪, কলাম নম্বর ৩ দ্রষ্টব্য। এডিটর মির্যাপুত্র মির্যা বশির আহমদ এম.এ)।

অপ্রিয় হলেও সত্যকথা, এ দেশের মানুষ সাধারণত উর্দূ পড়তে পারেনা বলেই কাদিয়ানী নেতারা তাদেরকে খুব সহজেই ধোকা দিতে পারে। কারণ, কাদিয়ানী জামাতের বিরুদ্ধে বিশ্বের ইসলামি বিশেষজ্ঞ ও গবেষক উলামায়ে কেরাম যে সমস্ত চরম আপত্তিকর ও কুফুরি বিশ্বাসের দরুন তাকফীর (কাফের ফাতাওয়া) দিয়েছেন তার সিংহভাগই তাদের উর্দূ সাহিত্য রচনাবলীতেই বিদ্যমান। যা ওরা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে দূরে রাখে, সর্বসাধার‍ণ আহমদীয়া কাদিয়ানীরা কল্পানাতেও চিন্তা করতে পারেনা। আর তাদের বেশিরভাগ বাংলা লিটারেচারগুলোয় সেসব স্পর্শকাতর মতবাদের লেশমাত্রও খোঁজে পাওয়া যায়না।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

প্রিন্সিপাল মুহাম্মদ নূরুন্নবী

মসীহ’র কবরস্থান প্রসঙ্গে কাদিয়ানীর আনুমানিক বয়ান

কাদিয়ানী জামাতের প্রতিষ্ঠাতা ভারতীয় বংশোদ্ভূত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (মৃত. ১৯০৮ইং) ইসলামের সুপ্রতিষ্ঠিত কনসেপ্ট বিরোধী ধারণা দিতে গিয়ে একেকটা বিষয়ে পরস্পরবিরোধী বয়ান দিয়ে যায়। তার একটি ইসলাম পরিপন্থী বয়ান ছিল, হযরত ঈসা ইবনু মরিয়ম (আ.) ১২০ বছর বয়সে কাশ্মীরে মারা গিয়েছেন এবং সেখানেই তার কবর বিদ্যমান। আশ্চর্যের কথা হল, ঈসা ইবনু মরিয়ম (আ.) এর অনুসারী প্রায় দুইশত কোটির অধিক খ্রিস্টান সম্প্রদায় যেটা কখনো কল্পনাতেও ভাবেনা সেটাই মির্যা কাদিয়ানী সাহেব বলেছেন এবং অনর্থক একটা বিতর্কের সূত্রপাত করে গেছেন।

  • উল্লেখ্য, ঈসা ইবনু মরিয়ম (আ.) আল্লাহর একজন বান্দা ও রাসূল ছিলেন, আল্লাহ তাঁকে আকাশে উঠিয়ে নিয়েছেন, কেয়ামতের পূর্বে তিনি আকাশ থেকে দামেস্কে অবতরণ করবেন। এ সম্পর্কিত অথেনটিক তথ্যপ্রমাণ দেখতে এখানে Click করুন।

মজার ব্যাপার হল, কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের প্রথম সারীর নেতারাও কখনো চিন্তা করেননি যে, মির্যা কাদিয়ানী সাহেব ঈসা (আ.) এর কবর থাকা সম্পর্কে মতবাদ দিতে গিয়ে কীধরণের অনুমানের আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং কত জঘন্য বিভ্রান্তিকর বক্তব্য রেখে গিয়েছেন।

মির্যা কাদিয়ানীর ‘মালফুযাত’ (উর্দূ এডিশন) গ্রন্থে উল্লেখ আছে,

کشمیر میں مسیح کی قبر کا معلوم ہونے سے بہت قریب ہی فیصلہ ہو جاتا ہے اور سب جھگڑے طے ہو جاتے ہیں

অর্থাৎ “কাশ্মীরে মসীহ এর কবরের অনুসন্ধান দ্বারা খুব শীঘ্রই মীমাংস হয়ে যাবে এবং সকল বিতর্ক মিটে যাবে।” রেফারেন্স, মালফুযাত খন্ড ২ পৃষ্ঠা ৫২৭ মির্যা কাদিয়ানী।

স্ক্রিপ্ট দেখুন

তাছাড়া ১৯০১ সালের দিকে রচিত তারই একজন শিষ্য মির্যা খোদাবক্স কাদিয়ানী রচিত ‘আছলে মুছাফফা’ গ্রন্থে লিখা আছে,

اور جیسے کہ اللہ تعالی نے انہیں بتایا کہ محلہ خان یار سری نگر کشمیر میں ان کی قبر موجود ہیں

অর্থাৎ “আর যেমনিভাবে আল্লাহ তাআলা তাঁকে বলে দিয়েছেন যে, কাশ্মীরের শ্রীনগরের খানইয়ার মহল্লায় তাঁর (মসীহ ঈসা) কবর বিদ্যমান।” রেফারেন্স, আছলে মুছাফফা খন্ড ২ পৃষ্ঠা ২, রচনাকাল ১৯০১ ইং কাদিয়ান।

স্ক্রিপ্ট দেখুন

এখন একজন নিরপেক্ষ পাঠক চিন্তা করলেই বুঝতে পারবেন, কাদিয়ানী জামাতের গোড়াতেই অনুমান নির্ভর কত বিভ্রান্তি, সংশয় আর সন্দেহ জনিত সমস্যার তুফান বয়ে চলছে! একটু চিন্তা করুন, কোথাও লিখা আছে, ঈসা আলাইহিস সালাতু ওয়াসসালামের ‘কবর’ কাশ্মীরে থাকার বিষয়টি সম্পূর্ণ গবেষণা তথা অনুসন্ধান নির্ভর। আবার কোথাও লেখা আছে, এটি মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে কথিত ওহীর মাধ্যমে আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন অর্থাৎ বিষয়টি পুরোপুরি ওহী নির্ভর! আশাকরি কাদিয়ানীদের বিষয়টি অবশ্যই সবাইকে ভাবিয়ে তুলবে।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী