আব্দুল্লাহ কাশ্মীরীর তদন্ত রিপোর্ট পালটে দেয়ার ঐতিহাসিক মির্যায়ী নামা
কাশ্মীরের খান ইয়ার মহল্লায় সমাহিত ইউজ আসেফ নামীয় এক ব্যক্তির “কবর” সম্পর্কে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে সেখানে পাঠানো হয়েছিল আব্দুল্লাহ কাশ্মীরীকে। যিনি মির্যা কাদিয়ানীর একজন খাস শিষ্য ও এডুকেটেড পার্সোন এবং একজন মওলভী ও উকিল ছিলেন। কাশ্মীর শ্রীনগর হাইকোর্টে ‘ওকালতি’ তার পেশা ছিল।
তিনি দীর্ঘ তদন্ত শেষে উক্ত কবর সম্পর্কে পর্যাপ্ত রিপোর্ট জমা দেন। মির্যা কাদিয়ানী তার উক্ত রিপোর্ট বিকৃত করেন এবং নিজ থেকে মনগড়া বেশকিছু কথা যুক্ত করে “আল হুদা” নামক একটি বইও রচনা করে ফেলেন এবং দুনিয়াব্যাপী তা প্রচার করতে শুরু করেন।
তিনি আব্দুল্লাহ কাশ্মীরীর তদন্ত রিপোর্টের আলোকে প্রচার করলেন,
ইউজে আসেফ একজন পর্যটক নবী এবং ইসরাইলী ছিলেন। কাশ্মীরের প্রাচীনতম ঐতিহাসিক সুত্র দ্বারাও সাব্যস্ত যে, এই কবর একজন ইসরাইলী নবীর কবর। স্থানীয়রাও একথার সাক্ষী, বরং সেখানকার স্থানীয় হাজার হাজার মানুষ এ কথার সাক্ষী দিচ্ছেন।
আব্দুল্লাহ কাশ্মীরীর প্রতিবাদঃ
আব্দুল্লাহ উকিল কাশ্মীরী সাহেব মির্যা কাদিয়ানীর জালিয়াতির প্রতিবাদ করে ‘শু’লাতুন নার ফী মাক্ববেরায়ে খানইয়ার’ নাম দিয়ে একটি বইও রচনা করেন। বইটিতে তিনি জোরগলায় প্রতিবাদ করেন এভাবে যে,
پس خان یار کے مقبرے کے متعلق ان باتوں میں سے کوئی بات میرے خط میں موجود نہیں۔ جو خط میں نے حضرت مرزا صاحب کو لکھا اور جس کو انہوں نے شائع کر دیا اور نہ کوئی بات مطابق واقعہ ہے بلکہ یہ تمام باتیں حضرت مرزا صاحب نے اپنی خیال سے ایجاد کر کے بڑے زور کے ساتھ دنیا میں شائع کر دی
অর্থ- “অতএব খান ইয়ার মহল্লার সমাধি সম্পর্কে এ সবের কিছুই আমার চিঠিতে নেই। হযরত মির্যা সাহেবকে আমি যে চিঠি লিখেছিলাম এবং যা তিনি প্রকাশ করেছেন তার কোনোটিই বাস্তব সম্মত নয়, বরং এর সবই হযরত মির্যা সাহেবের মনগড়া সৃষ্টি, যা সারা বিশ্বে প্রবল শক্তির সাথে তিনি প্রচার করেছেন।” (শু’লাতুন নার ফী মাক্ববেরায়ে খানইয়ার, আব্দুল্লাহ উকিল কাশ্মীরী)।
প্রামাণ্য স্ক্যানকপি
উল্লেখ্য, উক্ত ঘটনার পরপরেই মির্যা কাদিয়ানীর উপর আব্দুল্লাহ কাশ্মীরী আর আস্থা রাখতে পারলেন না। তিনি বেরিয়ে গেলেন মির্যায়ী বাইয়েত থেকে। যোগ দিলেন অন্য আরেক মসীহ দাবীদার বাহাউল্লাহ ইরানীর (১৮১৭-১৮৯২ইং) ‘বাহায়ী জামাতে’। কিন্তু আফসোস, কাদিয়ানী নেতারা আব্দুল্লাহ কাশ্মীরীর মির্যার বাইয়েত ভঙ্গ করার অন্তর্নিহিত কারণ প্রকাশ করে না।
মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (১৮৪০-১৯০৮ ইং)-এর কলম থেকে ব্রিটিশ রাণী ভিক্টোরিয়াকে পত্র প্রদান –
কাদিয়ানী সাহেব ১৮৯৮ সালের দিকে কোনো এক প্রেক্ষিতে তৎকালীন ভারত সম্রাজ্ঞী ও ব্রিটিশ রাণী আলেকজান্ড্রিনা ভিক্টোরিয়া বরাবর নিজেকে কিংবা নিজের প্রতিষ্ঠিত “জামাত” সম্পর্কে পত্রে লিখেছেন,
اس خودکشتہ پودہ کی نسبت نہایت حزم اور احتیاط اور تحقیق اور توجہ سے کام لے اور اپنے ماتحت حکام کو اشارہ فرمائے کہ وہ بھی اس خاندان کے ثابت شدہ وفاداری اور اخلاص کا لحاظ رکھ کر مجھے اور میرے جماعت کو ایک خاص عنایت اور مہربانی کی نظر سے دیکھے ۔ ہمارے خاندان نے سرکار انگریزی کی راہ میں اپنے خون بہانے اور جان دینے سے فرق نہیں کیا اور نہ اب فرق ہے۔ لہذا ہمارا حق ہے کہ ہم خدمت گزشتہ کے لحاظ سے سرکار دولتمدار کی پوری عنایت اور خصوصیت توجہ کی درخواست کریں تا ہر یک شخص بیوجہ ہمارے آبروریزی کے لیے دلیری نہ کر سکے اب کسی قدر اپنی جماعت کے نام ذیل میں لکھتا ہوں۔
“নিজেদের হাতে রোপিত এই চারাগাছটির ব্যাপারে খুব সতর্কতা ও অনুসন্ধানের সাথে অগ্রসর হবেন এবং আপনার অধীনস্তদের বলবেন তারা যেন এই পরিবারের ত্যাগ ও নিষ্ঠার কথা মনে করে আমার এবং আমার জামাতের প্রতি সদয় দৃষ্টি জ্ঞাপন করে। আমাদের পরিবার ইংরেজ সরকারের কল্যাণে নিজেদের খুন বইয়ে দিতে ও জীবন দিতেও দ্বিধা করেনি আর না এখনো দ্বিধা করছে। অতএব, আমাদের অতীতের পরিষেবার প্রেক্ষিতে সরকারের পূর্ণ অনুগ্রহ এবং বিশেষ মনোযোগের অনুরোধ করার অধিকার রয়েছে, যাতে আমাদের সুনামের জন্য কেউই (কোনো বিরুদ্ধবাদী আমাদের বিরুদ্ধে ইন্ধনদানে) দুঃসাহসী হয়ে উঠতে না পারে। এখন আমি নিচে আমার জামাতের নাম লিখছি।” (মাজমু’আয়ে ইশতিহারাত ৩/২১-২২; নতুন এডিশন)। প্রামাণ্য স্ক্যানকপি নিচে দেয়া হল
মির্যা কাদিয়ানী সাহেব কোনো রাখঢাক ছাড়াই লিখলেন خود کاشتہ پودا (খোদ কাস্তা পুদা) অর্থাৎ ‘নিজেদের হাতে রোপিত চারাগাছ’। আমি মির্যার উপরের কথার ব্যাখ্যা জানতে চেয়ে কাদিয়ানীদের প্রকাশিত ‘হান্ড্রেট এলিগেশন’ নামীয় একটি লিখায় দেখলাম, তারা লিখেছে,
মির্যা সাহেব তার ‘খোদ কাস্তা পুদা’ বলে “আহমদীয়া কমিউনিটি” বা “তার নিজের” সম্পর্কে উদ্দেশ্য নেননি, বরং তিনি তার পরিবার পরিজনকেই উদ্দেশ্য নিয়েছেন। মির্যা সাহেব বুঝাতে চেয়েছিলেন যে, তার পরিবার পরিজন ব্রিটিশ সরকারের একান্ত খায়েরখাঁ বা কল্যাণকামী।
কিন্তু তাদের উক্ত ধারণাটি মোটেও সঠিক নয়, বরং সত্য গোপন করার নিকৃষ্ট প্রয়াস। কেননা, মির্যা পত্রটি লিখেছিলেন মূলত তার প্রতিষ্ঠিত “আহমদীয়া কমিউনিটি” বা “কাদিয়ানী মতের অনুসারী” দলটির প্রতি রাষ্ট্রের পক্ষ হতে সার্বিক সহযোগিতা এবং সমর্থন চেয়ে। একজন উর্দূ ভাষী উপরের আংশিক উদ্ধৃতিটির আরও উপর থেকে পড়ে দেখলেই বিষয়টি একদম পরিষ্কার হয়ে যাবে। আমি এজন্যই মির্যা গোলাম আহমদ এর ৩ খন্ডে প্রকাশিত উর্দূ রচনা “মাজমু’আয়ে ইশতিহারাত” এর ৩ নম্বর খন্ড থেকে ২১ এবং ২২ নম্বর পৃষ্ঠা দুটি এখানে তুলে ধরছি। যাতে কেউই আমার লিখাটিকে ভিত্তিহীন বা পক্ষপাতমূলক আখ্যা দিতে না পারে।
কী প্রমাণিত হল?
উত্তর, আহমদীয়া বা কাদিয়ানী কমিউনিটি স্বঘোষিত ভাবেই “ব্রিটিশ সৃষ্ট” একটি ফেইক মুসলিম কমিউনিটি। যাদের ধর্মবিশ্বাস কুরআন সুন্নাহ পরিপন্থী মনগড়া ব্যাখ্যাসাপেক্ষ। ইসলামের অথেনটিক শিক্ষা ও চরিত্রের বিপরীতে সম্পূর্ণ নতুন একটি শিক্ষা ও চরিত্র। যাদের বিশ্বাস হচ্ছে, নবুওয়তের দ্বার বন্ধ হয়নি, ফলে মির্যা গোলাম কাদিয়ানী একজন নবী ও রাসূল (নাউযুবিল্লাহ)। যারা তাকে স্বীকার করবেনা কিংবা যারা তার নামও শুনেনি প্রত্যেকে পাক্কা কাফের ও জাহান্নামী।
নবুওয়ত দাবী করার ডজন খানেক ডকুমেন্টারি প্রমাণ এখানে ক্লিক
প্রশ্ন হতে পারে যে, কেউ কি নিজকে বা নিজের দলকে এভাবে প্রকাশ্যে “ব্রিটিশ সরকারের রোপিত চারাগাছ” বলে লিখতে পারে?
উত্তরে বলব, মির্যা কাদিয়ানীর নিকট তা অবশ্যই সম্ভব ছিল। কারণ সে ব্রিটিশ সরকারের দৃশ্যমান অপরাজেয় শক্তি ও দাপট দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যায়। ফলে তার দৃঢ় বিশ্বাস হয়ে উঠেছিল যে, ব্রিটিশ সরকারের এ ক্ষমতা, প্রতিপত্তি ও দাপট আজীবনের জন্য প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেছে, কখনো তার পতন হবেনা। কাজেই তার এধরনের লিখনী ভবিষ্যতেও কোনো বিপদের কারণ হবেনা।
বলে রাখা জরুরি যে, মির্যা কাদিয়ানীর পরদাদা মির্যা গুল মুহাম্মদ এবং দাদা মির্যা আতা মুহাম্মদ তারপর পিতা মির্যা গোলাম মর্তুজা শিখদের দ্বারা পাঞ্জাবে অনেক নিপীড়নের সম্মুখীন হয়, জমিজমা হারায়। কিন্তু পাঞ্জাবের মহারাজা রণজিৎ সিং এর রাজত্বের শেষের দিকে ব্রিটিশ সরকার তার পিতা মির্যা গোলাম মর্তুজাকে তাদের হারানো ৫ টি গ্রামের পূর্ণ জমিদারী পুনরায় উদ্ধার করে দেয়।
জাগতিক এ স্বার্থসিদ্ধির শোকরগুজার হিসেবে তাদের প্রত্যেকেই ছিলেন বংশপরম্পরায় ব্রিটিশ সরকারের একান্ত অনুগত ও জীবন উৎসর্গকারী। ১৮৫৭ সালে ব্রিটিশ সরকারের সাহায্যে মির্যা গোলাম মর্তুজা ৫০টি সশস্ত্র ঘোড় সওয়ার পাঠিয়েছিলো। যারা সে সময় ব্রিটিশ সরকারের পক্ষে জীবন-মরণ যুদ্ধ করেছিলো। মির্যা কাদিয়ানী এ ইতিহাস নিজেই তার রচনা ‘কিতাবুল বারিয়্যাহ’ পুস্তকে লিখে গেছেন। তার রচনাসমগ্র রূহানী খাযায়েন খন্ড নং ১৩ পৃষ্ঠা নং ৪-৬ দেখুন।
কিন্তু আফসোস! মির্যা কাদিয়ানীর বর্তমান অধিকাংশ অনুসারীই মির্যা গোলাম আহমদের পরিবারের দেশের আযাদী আন্দোলনের সাথে গাদ্দারী ইতিহাস জানেনা। যাদের ইতিহাসটাই “গাদ্দারী” ইতিহাস, তারা কিভাবে তাদের সেই বিদেশী প্রভুদের বিরুদ্ধে কথা বলবে, কিভাবে নিজ মাতৃভূমির সার্বভৌমত্বের পক্ষে দাঁড়াতে পারে তা অন্তত আমার হিসেবে মিলেনা।
অর্থাৎ “শয়তানরা তাদের বন্ধুদের নিকট ওহী করে (তথা প্ররোচনা দেয়), যাতে তারা তোমাদের সাথে ঝগড়াবিবাদ করে। আর যদি তোমরা তাদের আনুগত্য করো তবে নিশ্চয়ই তোমরা মুশরিক।”
– সূরা আন’আম ১২১
প্রশ্ন করতে পারেন যে, মির্যা কাদিয়ানী মিথ্যাবাদী ছিল, আপনি কি প্রমাণ করতে পারবেন?
উত্তরে বলা হবে যে, জ্বী হ্যাঁ। অবশ্যই তা প্রমাণ করতে পারব, ইনশাআল্লাহ। একজন সত্যের সন্ধানী মানুষের জন্য এ একটি উদাহরণই যথেষ্ট। পড়তে ক্লিক করুন।
যাইহোক, এবার আপনাকে দেখাতে চাই যে, মির্যা কাদিয়ানী নিজেও শয়তানী ওহী ইলহাম এর কনসেপ্ট স্বীকার করতেন। এ যেমন তিনি লিখেছেন,
یاد رہے کہ وہ کاہن جو عرب میں آنحضرت صلی اللہ علیہ وسلم کے ظہور سے پہلے بکثرت تھے ان لوگوں کو بکثرت شیطانی الہام ہوتے تھے اور بعض وقت وہ پیشگوئیاں بھی الہام کی ذریعے سے کیا کرتے تھے اور تعجب یہ ہیں کہ ان کی بعض پیشگوئیاں سچی بھی ہوتی تھیں۔
অর্থাৎ “স্মরণ রাখবে যে, রাসূল (সা.)-এর আত্মপ্রকাশের পূর্বে আরবে অধিক সংখ্যক গণক ছিলো। তাদেরও বহু পরিমাণে শয়তানী ইলহাম হত। কোনো কোনো সময় তারা ইলহামের মাধ্যমে ভবিষ্যৎবাণী করতো আবার তাদের কিছু কিছু ভবিষ্যৎবাণী সত্যও হতো।” (জরুরাতুল ইমাম, রূহানী খাযায়েন ১৩/৪৮৮)।
শায়খ আলবানী সাহেবের একটি গলদ ইজতিহাদ ও তার পর্যালোচনা
প্রশ্ন : শায়খ নাসিরুদ্দিন আলবানী ইমাম আবূ হানীফাহ (রহ.)-এর দুর্বল হওয়ার পক্ষে ‘তাকরীবুত তাহযীব’ গ্রন্থের রেফারেন্স উল্লেখ করে বলেছেন, হাফেয ইবনে হাজার ‘তাকরীবুত তাহযীব’ গ্রন্থে ইমাম আবূ হানীফাহ’র ব্যাপারে শুধু বলেছেন ‘তিনি একজন সুপ্রসিদ্ধ ফকীহ’ আর কিছু উল্লেখ করেনি! (এটা তাঁর দুর্বল হবার প্রমাণ) [সিলসিলাহ য‘ঈফাহ: ৫৭২]। এর কী জবাব?
জবাব : এমন কথা সেই বলতে পারে যে ‘তাকরীবুত তাহযীব’ গ্রন্থটি রচিত হওয়ার কারণ ও এ গ্রন্থটির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আদৌ জানে না!
হাফেজ ইবনে হাজার (রহ.) রচিত ‘তাকরীবুত তাহযীব’ গ্রন্থটি হল তাঁরই রচিত আরেকটি প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘তাহযীবুত তাহযীব’ গ্রন্থের সংক্ষিপ্ত রূপ! এই ‘তাহযীবুত তাহযীব’ গ্রন্থটি হল আবার হাফেজ মিযযী রচিত ‘তাহযীবুল কামাল’ গ্রন্থের সংক্ষিপ্ত রূপ। আর হাফেয মিযযী রচিত ‘তাহযীবুল কামাল’ গ্রন্থটি হল হাফেজ মাকদীসী রচিত ‘আল-কামাল ফী আসমাইর রিজাল’ গ্রন্থের সংক্ষিপ্ত রূপ। আর ‘আল-কামাল ফী আসমাইর রিজাল’ গ্রন্থটি হলো, সুপ্রসিদ্ধ ছয়টি গ্রন্থ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সংকলিত রূপ এবং বুখারী রচিত ‘তারীখ’ ও ইবনে আবী হাতিমের ‘আল-জারহু ওয়াত-তা’দীল’ এবং ইবনে মা‘ঈন ও তার সাথি-সঙ্গী এবং তাঁর মত অন্যান্য ইমামদের রচিত কিতাবসমূহের সারনির্যাস।
অর্থাৎ তাকরীবুত তাহযীব গ্রন্থটি হলো, সংক্ষিপ্ত এর সংক্ষিপ্ত এর সংক্ষিপ্ত এর সংক্ষিপ্ত রূপ; তথা এক্সট্রিম কম্প্রেসড ফাইল— যা কয়েক ধাপে সংকুচিত হয়েছে।
এই গ্রন্থটি রচনার ব্যাপারে ইবনে হাজার নিজেই বলেন, “বিশেষজ্ঞ ছাত্রদের কাছে তাহযীবুত তাহযীব কিতাবটি ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে, কিন্তু এটি মূল কিতাবের এক তৃতীয়াংশ ছাড়িয়ে যাওয়ায় দীর্ঘ হয়ে গেছে। তাই আমার কিছু ভাই আমাকে শুধু রাবীদের নামগুলো আলাদা করতে অনুরোধ করেন। কিন্তু আমি এটি পছন্দ করিনি। কারণ, এই শাস্ত্রের ছাত্রদের জন্য শুধু রাবীদের নাম আলাদা করার উপকারিতা কম। পরে আমি তাদের ইচ্ছা পূরণ করতে মনস্থ করি এবং গ্ৰন্থটিকে এমনভাবে সংক্ষিপ্ত করি যাতে তাদের উদ্দেশ্যও অর্জিত হয় এবং কাঙ্খিত উপকারিতাও আরো বেশি বৃদ্ধি পায়। আর তা হলো, আমি প্রত্যেক রাবী সম্পর্কে সংক্ষিপ্ততম বাক্যে এবং স্পষ্টতম ইঙ্গিতে (সবচেয়ে সুপরিচিত পদবী কিংবা গুণ উল্লেখ করে) এমন একটি (পূর্ণাঙ্গ) রায় দিয়েছি, যা তাদের সম্পর্কে বলা সবচেয়ে সঠিক কথা এবং তাদের সম্পর্কে করা সবচেয়ে ন্যায়সঙ্গত উক্তি। (আর খেয়াল রেখেছি) যাতে প্রতিটি রাবীর আলোচনা সাধারণত এক লাইনের বেশি না হয়।” [ভূমিকা: তাকরীবুত তাহযীব]
প্রিয় পাঠক, উপরের আলোচনা থেকে জানা গেল, মূলত এই গ্রন্থ রচনার উদ্দেশ্য রাবীদের সুবিস্তৃত ইতিহাস জানানো নয় বরং রাবীদেরকে অতি সংক্ষেপে সঠিকভাবে চিহ্নিত করাই এই গ্রন্থ রচনার উদ্দেশ্য। যার কারণে ইবনে হাজার গ্রন্থটি রচনা করার সময়ই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, সাধারণভাবে তিনি প্রতিটি রাবীর আলোচনা এক লাইনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখবেন। আর রাবী সম্পর্কে সে কথাটাই তিনি উল্লেখ করবেন যা তার সম্পর্কে বলা সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ ও ন্যায়সঙ্গত হবে। বিশেষ করে হাদীসের ছাত্ররা যেন এই এক লাইনের সুসংক্ষিপ্ত মন্তব্যের মাধ্যমেই তাকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়।
ফলে এই সুসংক্ষিপ্ত গ্রন্থ ‘তাকরীবুত তাহযীব’ এর মধ্যে ইমাম আবূ হানীফাহ’র সম্পর্কে শুধু এ কথা বলাটাই সবচেয়ে সঠিক ও ন্যায়সঙ্গত ছিল যে, ‘তিনি একজন সুপ্রসিদ্ধ ফকীহ’! কারণ, ‘আবূ হানীফাহ’ নামে একাধিক রাবী আছে! এই কারণে তিনি তাঁর নামের সাথে ‘সুপ্রসিদ্ধ ফকীহ’ যুক্ত করে দিয়েছেন যাতে করে এক কথাতেই তার পরিচিতি জানা যায়! তাছাড়া ইমাম আবূ হানীফাহ’র পরিচিতির জন্য এর চেয়ে বড় পরিচয় এর কোনো প্রয়োজনও নেই। মূলত ‘সুপ্রসিদ্ধ ফকীহ’ বাক্যটাই তাঁর সবচেয়ে বড় পরিচয়! এ কারণেই তিনি এই বাক্যটিকেই বেছে নিয়েছেন।
সুতরাং আলবানীর মত লোকেরা যদি বলে যে, হাফেয ইবনে হাজার ’তাকরীবুত তাহযীব’ গ্রন্থে ইমাম আবূ হানীফাহ’র ব্যাপারে ‘সুপ্রসিদ্ধ ফকীহ’ বলেই ক্ষান্ত ছিলেন, যা তার দুর্বল হওয়ার প্রমাণ! তাহলে এটা তার অল্পবিদ্যার বহিঃপ্রকাশই মাত্র!
অথচ ইবনে হাজার রহ. তাঁর অন্যান্য গ্রন্থে ইমাম আবূ হানীফাহ’র ভরপুর প্রশংসা করেছেন এবং সুবিস্তৃত আলোচনা করেছেন! এবং তিনি তার ভালো বিষয় ছাড়া অন্য কোন বিষয় মোটেই উল্লেখ করেননি।
যেমন তিনি তাঁর ‘তাহযীবুত তাহযীব’ গ্রন্থে পৃষ্ঠাব্যাপী ইমাম আবূ হানীফাহ’র সুবিস্তৃত আলোচনা ও গুণাবলী উল্লেখ করার পর নিজস্ব বক্তব্য প্রদান করেন যে,
مناقب الإمام أبي حنيفة كثيرة جدًّا؛ فرضِيَ الله تعالى عنه، وأسكنه الفردوسَ، آمين
আবূ হানীফাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর গুণাবলী ‘কাছীরাতুন জিদ্দান’! তথা তিনি অগণিত গুণাবলীর অধিকারী ছিলেন। আল্লাহ তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হোন। তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউছে স্থান দিন। আমীন। [তাহযীবুত তাহযীব: ৫/৬৩১]
শুধু এই না, ইবনু হাজার আসকালানীর দৃষ্টিতে ইমাম আবূ হানীফাহ (রহ.) এর ব্যাপারে অন্যদের জারহ গ্রহণযোগ্যও নয়। এ কারণেই যখন তাঁকে তাঁর ছাত্র হাফিয সাখাবী (রহ.) জিজ্ঞেস করলেন, “নাসাঈ ইমাম আবূ হানীফাহ’র ব্যাপারে বলেছেন যে, তিনি হাদীসে শক্তিশালী নন”। এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী, তা কি আদৌ সঠিক?
উত্তরে ইবনু হাজার (রহ.) বললেন, “নাসাঈ যা বলেছেন, তা তাঁর বাহ্যিক জ্ঞান ও নিজস্ব ইজতিহাদ অনুযায়ী বলেছেন। মনে রেখো, প্রত্যেক ব্যক্তির প্রত্যেক কথাই মেনে নেওয়া হবে ব্যাপারটা এমন নয় (অর্থাৎ ইমাম আবূ হানীফাহ-কে নাসাঈর দুর্বল বলাটা গ্রহণযোগ্য নয়)।
এরপর তিনি আরো বলেন, “প্রথমে তাঁর ব্যাপারে এমনটা বলা হলেও পরবর্তীতে নাসাঈ ও পরবর্তীকালের ইমামগণ ঐসব কথা থেকে ফিরেও এসেছেন। কারণ, তাঁরা দেখলেন যে, ইমাম আবূ হানীফাহ (রহ.) শ্রবণের পর থেকে হুবহু মুখস্থ রাখা ব্যতীত কোনো হাদীস বর্ণনা করতেন না।” [আল-জাওহার ওয়াদ দুরার ফী তারজামাতি ইবনু হাজার: ২/৯৪৭]
তিনি এখানেই ক্ষান্ত নন, বরং ইমাম আবূ হানীফাহ সম্পর্কে তথাকথিত জারহ-চর্চা করা যাবে কিনা- এ সম্পর্কেও তিনি সুন্দর উপদেশ দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে তিনি তাঁর ছাত্রের উদ্দেশ্যে বলেন-
وفي الجملة، تَرْكُ الخَوْضِ في مثل هذا أولى، فإنَّ الإمامَ وأمثالَه ممَّن قفزوا القَنْطَرَة، فما صار يُؤَثِّرُ في أحد منهم قولُ أحدٍ، بل هم في الدرجة التي رفعهم اللَّه تعالى إليها مِنْ كونهم متبوعين مقتدى بهم، فليُعتَمَدْ هذا، واللَّه ولي التوفيق
অর্থ: সারকথা হলো, এমন ধরনের বিষয়ে (ইমাম আ’যমের জারহ/সমালোচনায়) ডুবে থাকা ও অনর্থক কথাবার্তা ত্যাগ করাই উত্তম। কারণ, ইমাম আবূ হানীফাহ ও তাঁর মতো ইমামগণ সেতু পার করে ফেলেছেন। অতএব তাদের ব্যাপারে কারোরই কোনো সমালোচনা (জারহ) প্রভাব ফেলবে না। বরং, তারা তো সেই উঁচু স্তরে রয়েছেন যে স্তরে সর্বশক্তিমান আল্লাহই তাদের উঠিয়েছেন। ফলে তাঁরা মানুষের অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় হয়েছেন! অতএব সকলকে এটিতেই বিশ্বাসী থাকতে হবে। আর আল্লাহই একমাত্র সফলতা দানকারী। [আল-জাওহার ওয়াদ দুরার ফী তারজামাতি ইবনু হাজার: ২/৯৪৭]
যাইহোক, ইবনে হাজার (রহ.) ইমাম আবূ হানীফাহ (রহ.) এর ব্যাপারে এত এত প্রশংসা ও দিফা‘ করলেও আলবানীর সেসব চোখে পড়েনি! আলবানী শুধু তাঁর ‘তাকরীব’ গ্রন্থটাই দেখেছেন, যেখানে তিনি সংক্ষিপ্ততার লক্ষ্যে শুধুমাত্র একটি বাক্যে তাঁর পরিচয় দিয়েছেন!
জবাব : বলে রাখা জরুরি যে, এ ধরনের প্রশ্ন কাদিয়ানীরাই ছুড়ে দেয়, যাতে তারা মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর কথিত ‘রূপক মসীহ’ দাবীকে বৈধতা দিতে পারে।
জ্ঞানীদের নিকট গোপন থাকেনি যে, ‘সালাত এবং যাকাত’ এগুলো ওয়াক্ত কিবা সময়ের সাথে সম্পর্কিত। আর আমরা জানি যে, সময় নির্ণয় হয় সূর্যের উদয় আর অস্তমিত হবার মাধ্যমে। কাজেই বুঝা গেল, সূর্যের উদয় অস্ত ব্যতীত যেহেতু সময় নির্ণয় হয়না সেহেতু সূর্যকে বাদ দিয়ে সালাত এবং যাকাত আদায়ের প্রশ্নই আসতে পারেনা।
যেজন্য সূরা মরিয়মের ৩১ নং আয়াত দ্বারা হযরত ঈসা (আ:) সম্পর্কে অনুরূপ প্রশ্ন তোলা ভুল। কেননা ঈসা (আ:) এমন এক জগতে রয়েছেন যেখানে সময়ের নির্ণায়ক সূর্য তো নেই, উপরন্তু সেখানকার সকল নিয়ম-কানূন পৃথিবী হতে সম্পূর্ণ ভিন্ন। ফলে ঈসা (আ:)-এর উপর সালাত এবং যাকাতের হুকুম পৃথিবীতে পুনরায় ফিরে আসার পূর্ব পর্যন্ত স্থগিত।
মনে করুন, আপনি এ মাত্র আসরের সালাত আদায় করলেন। একটু পরেই মাগরিব আদায় করার অপেক্ষায়। আর সবাই জেনে থাকবেন যে, সূর্য অস্তমিত না হলে মাগরিবের ওয়াক্ত হয়না।
তেমনি সূর্য আপনা কক্ষপথ দিয়ে পুরোপুরি একবার পরিভ্রমণ করার মাধ্যমে দিবারাত্রির পালাবদল হয়ে থাকে। এভাবে ৩৬৫ দিন অন্তে বছর পূর্ণ হয়ে থাকে। সুতরাং আকাশে যখন সূর্যের কোনো উপস্থিতি-ই নেই তখন দিবারাত্রির কল্পনা করতে পারি কিভাবে? আর যেখানে দিবারাত্রির কোনো পালাবদল নেই সেখানে বছর কী দিয়ে হবে? তো তাহলে যাকাতের জন্য যে বছরপূর্তি হতে হয় তার কী হবে?? এইবার বুঝে থাকলে বলুন, ঈসা (আ:)-এর জন্য আকাশে যাকাতের হুকুম কিজন্য বিধিবদ্ধ নয়!!
একজন জ্ঞানী মাত্রই জানবেন যে, নেসাব পরিমাণ সম্পদের উপর পূর্ণ একবছর গত না হওয়া পর্যন্ত যাকাত ফরজ হয়না। এ সম্পর্কে রাসূল (সা:) ইরশাদ করেছেন – ليس في المالِ زكاةٌ حتَّى يحولَ عليه الحوْلُ অর্থাৎ “যে মাল বা সম্পদ পূর্ণ এক বছর মালিকের মালিকানায় থাকেনি তাতে যাকাত ফরজ নয়।” (তিরমিজি, বায়হাক্বী, মুসনাদে বাজ্জার, ইবনু মাজাহ)। (ক্লিক)
তাই হযরত ঈসা (আ:) যতদিন আকাশে থাকবেন ততদিন তাঁর ব্যাপারে সালাত এবং যাকাতের প্রশ্ন তোলা ঠিক হবেনা।
হয়ত প্রশ্ন করতে পারেন যে, পৃথিবীতে তো এমনও বহু জায়গা রয়েছে যেখানে ৫/৬ মাসও সূর্যের উপস্থিতি সত্ত্বেও দিবারাত্রির পরিবর্তন হয় না। তাহলে কি সেখানকার মুসলিমরা সালাত আদায় করবেনা?
জবাবে বলা হবে যে, সেখানকার মুসলমানগণ কিভাবে সালাত আদায় করবে এ সম্পর্কে ইসলামের শিক্ষা হল, তাদেরকে আনুমানিকভাবে সময়ের তারতম্য করে সালাত আদায় করতে হবে। কেননা, ওই জায়গায় দিবারাত্রির পালাবদল অনিয়মিত হলেও কিন্তু সময়ের চাকা ঘূর্ণায়মান অর্থাৎ সময় অবিরত চলমান। ফলে তাদের জীবনযাত্রা থেমে থাকেনা। শিশুরা কৈশোরকালে আর কৈশোররা তারুণ্যে উপনীত হয়, ইত্যাদি।
পক্ষান্তরে ঈসা (আ:) যেই জগতে সেখানকার সব কিছুই আপনা হালে স্থির ও সময়ের চাকা অঘূর্ণায়মান। মূলত এই কারণেই আকাশে যতদিন ঈসা (আ:) থাকবেন ততদিন তাঁকে এগুলো করতে হবেনা।
এখন আবার প্রশ্ন জাগতে পারে যে, আকাশে সময়ের চাকা অঘূর্ণায়মান হবার দলিল কোথায়?
জবাবে বলব, (১) সহীহ মুসলিম শরীফের “কিতাবুল ফিতান” অধ্যায় হতে একটি হাদীসে রাসূলে করীম (সা:) থেকে বর্ণিত আছে, “দুজন ফেরেশতার পাখায় ঈসা (আ:) আপনা বাহুদ্বয় রেখে পৃথিবীতে অবতরণ করবেন। তখন তিনি মাথা নিচু করলে সদ্য গোসলখানা থেকে বেরিয়ে আসা ব্যক্তির মাথা থেকে যেভাবে পানি ঝরতে থাকে সেভাবে তাঁর মাথা থেকে পানির ফোটা ঝরতে থাকবে।”
এখন কৌতূহল জাগবে যে, উনার মাথায় পানির ফোটা কোত্থেকে এল? তার জবাব পাবেন বিশিষ্ট তাফসীরকারক ইমাম ইবনে আবী হাতিম (রহঃ) এর তাফসীরে। তিনি বিশিষ্ট সাহাবী হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) হতে এই মর্মে একটি হাদীস উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলেন, “আল্লাহতালা যখন ঈসা (আ:)-কে আকাশে উঠিয়ে নিতে ইচ্ছে করলেন তখন ঘটনা ছিল, বায়তুল মুকাদ্দেসের একটি কক্ষে ঈসা (আ:)-এর ১২ জন হাওয়ারী অবস্থান করছিলেন। তিনি মসজিদের একটি ঝরনায় গোসল করে ওই কক্ষে শিষ্যদের নিকট যান। তাঁর মাথার চুল থেকে তখনো পানি ঝরে পড়ছিল।… (সেখানে আপনা হাওয়ারীদের সাথে কথোপকথন শেষে) জিব্রাইল (আ:) মসজিদের একটি বাতায়ন পথে ঈসা (আ:)-কে আকাশে উঠিয়ে নেন।” এটাই সেই পানি যেটি আকাশে সময়ের স্থিরতা হেতু ঈসা (আ:)-এর মাথায় অনবরত অপরিবর্তিত ছিল। ফলে তিনি যখন নাযিল হবেন তখন তাঁর মাথা থেকে গড়িয়ে পড়তে শুরু করবে। (সংক্ষেপে)
(২) আরো একটি দলিল দেব। হযরত আবু হোরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত আছে রাসূলে করীম (সা:) বলেছেন – فإنه شاب و ضيئ أحمر “ফা-ইন্নাহু শা-ব্বুন ওয়া দ্বী’য়ুন আহমারু” অর্থাৎ (ঈসা ইবনে মরিয়ম যখন নাযিল হবেন তখন তাঁকে চেনার আলামত হল) “তিনি নওজোয়ান এবং খুবই পবিত্র পরিচ্ছন্ন আর লাল বর্ণের হবেন।” (মুসান্নাফ ইবনু আবী শাইবাহ ৮/৬৬০)। ক্লিক
খুব খেয়াল করুন, তিনি আকাশে চলে গেলেন যা আজকের দিন পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার বছরের চেয়ে বেশি। তদুপরি তিনি যখন নাযিল হবেন তখনো কিনা “যুবক”-ই থাকবেন। তাঁর বয়স বাড়ল না, শারীরিক কোনো পরিবর্তনও হলনা। তার কারণ তো এটাই যা আমি উপরে বলে এসেছি।
যাইহোক, প্রমাণিত হল যে, আকাশে যেহেতু দিবারাত্রির কোনো পরিবর্তন নেই, সময়ও এক অবস্থায় বিদ্যমান; তাই তাঁর জন্য সালাত এবং সাওম ইত্যাদি কিছুই বিধিবদ্ধ নয়।
অতএব, যারা ঈসা (আ:)-কে মৃত সাব্যস্ত করতে খোঁড়া যুক্তির জোড়াতালি প্রদর্শন করেন এবং তিনি আকাশেও সালাত, যাকাত আদায় করে কিনা, এইরূপ কাণ্ডজ্ঞানহীন প্রশ্ন ছুড়ে দেন; তারা কি আকাশে সূর্য উদয় আর অস্ত যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়ে এসেছেন? সময়ের চাকা ঘূর্ণায়মান রেখে এসেছেন? কবি এখানে নিরব!!!
আয় আল্লাহ এই কোন বোকাজাতি! আপনা জ্ঞান বুদ্ধি অন্যত্রে বন্ধক রেখে তারা এইরূপ সহজ একটা বিষয়ে এই কেমন জগাখিচুড়ী পাকিয়ে বসল!!
আহমদীবন্ধুরা! আপনাদের কথিত ‘তবলিগি পকেট বুক’ থেকে এভাবে চর্বিতচর্বণ বাদ দিয়ে ভয় করুন শেষদিবসের মালিককে। খোদাতায়ালার পবিত্র কালামের বিরুদ্ধে আপনা বিকৃত যুক্তি যে একটা সময় ভেস্তে যাবে তা কি এখনো বুঝে আসেনি? আল্লাহ আপনাদের হিদায়াত দিন! আমীন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বহু হাদীসে ভবিষ্যৎবাণী করেছেন যে, শেষ যুগে হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম এর আগমন ঘটবে। তিনি নবী বংশের হবেন, নবীকন্যা হযরত ফাতেমার পুত্র হাসানের বংশে জন্মগ্রহণ করবেন। মাহদী অর্থ সুপথপ্রাপ্ত। এটি তাঁর উপাধি থাকবে। তিনি মদীনায় জন্মিবেন, যথাসময়ে মক্কায় চলে আসবেন। হজ্জের সময় তাওয়াফরত অবস্থায় তিনি প্রতীক্ষিত মাহদী হিসেবে সে সময়কার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের নিকট সনাক্ত হবেন। তিনি হাজরে আসওয়াদ এবং মাকামে ইবরাহীমের মধ্যখানে ‘খিলাফাত’ এবং লি-ই’লায়ে কালিমাতিল্লাহ’র উদ্দেশ্যে জিহাদের উপর বয়াত গ্রহণ করবেন। তাঁর নাম হবে মুহাম্মদ, পিতার নাম হবে আব্দুল্লাহ। তাঁর আত্মপ্রকাশের বছর কতেক পরেই প্রতিশ্রুত ঈসা মসীহ দামেস্কের (উমাইয়া মসজিদের সন্নিকটে-শায়খ ইবনু তাইমিয়াহ রাহিমাহুল্লাহ) শ্বেত মিনারার পাশে ‘আকাশ’ থেকে ফেরেশতার ডানায় ভর করে অবতরণ করবেন। সহীহ মুসলিম শরীফের হাদীসে এসেছে, واضِعًا كَفَّيْهِ على أَجْنِحَةِ مَلَكَيْنِ অর্থাৎ দু’জন ফেরেশতার দুই ডানার উপর তিনি তাঁর দুই বাহু রেখে অবতরণ করবেন (মুসলিম, কিতাবুল ফিতান ওয়া আশরাতুস সা’আহ ৭১০৬)।
প্রসঙ্গত, সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে অবস্থিত উমাইয়া মসজিদ বা দামেস্ক গ্র্যান্ড মসজিদ বিশ্বের বৃহত্তম মসজিদগুলোর মধ্যে অন্যতম। উমাইয়া খলীফা ওয়ালিদ বিন আবদুল মালিকের শাসনামলে ৭০৫ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটির নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। দীর্ঘ নয় বছরের পরিশ্রম শেষে ৭১৪ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটির নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়। ইসলামী বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন যে, সহীহ মুসলিমসহ অন্যান্য হাদিসগ্রন্থের বর্ণনা অনুযায়ী কেয়ামতের আগে এখান থেকেই বনী ইসরাইলি নবী হযরত ঈসা (আ.) পৃথিবীতে ফিরে আসবেন। মসজিদটির দক্ষিন-পূর্ব, দক্ষিন-পশ্চিম কোণ এবং উত্তর দিকে মোট তিনটি মিনার রয়েছে। এরমধ্যে বাম দিকের মিনারটি منارة المسيح বা ‘যিশু মিনার’ (minarat of jesus) নামেও পরিচিত।
ইমাম ইবনু হাজার আল হাইসামী (রহ.)-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, ঈসা মসীহ এর অবতরণের স্থানটি কোথায় হবে?
তিনি এর উত্তরে ‘ফাতাওয়ায়ে হাদীছিয়্যাহ’ কিতাবে লিখেছেন,
أنه سئل أي محل ينزل به عيسى عليه السلام؟ فأجاب بقوله: الأشهر ما صح في مسلم أن ينزل عند المنارة البيضاء شرقي دمشق، وفي رواية بالأردن، وفي أخرى بعسكر المسلمين، ولا تنافي لأن عسكرهم بالأردن ودمشق وبيت المقدس من ذلك
অর্থ- প্রশ্ন করা হয় যে, ঈসা আলাইহিস সালামের অবতরণস্থল কোথায় হবে? এর উত্তর হচ্ছে, অধিক প্রসিদ্ধ আছে যে, মুসলিম শরীফের বিশুদ্ধ বর্ণনামতে তিনি দামেস্কের পূর্বপ্রান্তে শ্বেত মিনারার সন্নিকটে অবতরণ করবেন। অন্য বর্ণনায় আছে তিনি জর্ডান ভূমিতে, অন্য বর্ণনামতে তিনি মুসলমানদের সেনাছাউনিতে অবতরণ করবেন। তবে এ বর্ণনাগুলোয় কোনো অসঙ্গতি নেই। তার কারণ, মুসলমানদের সেনাছাউনি তখন জর্ডান, সিরিয়া এবং জেরুজালেম সহ সবখানেই স্থাপিত হবে।
অর্থ- গ্রন্থাকার নু’আইম বিন হাম্মাদ আল মারূযী থেকে, তিনি আবূ উসামাহ থেকে, তিনি হিশাম থেকে, তিনি মুহাম্মদ থেকে, তিনি বলেন, মাহদী এ উম্মতের মধ্য থেকে হবেন। তিনি ঈসা ইবনু মরিয়মের ইমামত করবেন। (আল ফিতান হাদীস নং ১১০৭)।
হাদীসের মান, সহীহ।
হাদীস ২:-
নু’আইম বিন হাম্মাদ আল মারূযী (রহ.) বর্ণনা করেছেন,
عن عبد الله بن عمرو قال: المهدي ينزل عليه عيسى ابن مريم، ويصلي خلفه عيسى.
অর্থ- সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, ঈসা ইবনু মরিয়ম ইমাম মাহদীর সময় অবতরণ করবেন এবং তিনি তাঁর পেছনে সালাত আদায় করবেন। (আল ফিতান হাদীস নং ১০৪৩)।
হাদীসের মান : সহীহ।
হাদীস ৩ :-
নু’আইম বিন হাম্মাদ আল মারূযী (রহ.) বর্ণনা করেছেন,
مِنَّا الذي يُصلِّي عيسى ابنُ مريمَ خلفَه
অর্থ- হযরত আবূ সাঈদ আল খুদরী (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, তিনি (ইমাম মাহদী) আমাদের মধ্য থেকে হবেন এবং ঈসা ইবনু মরিয়ম তাঁর পেছনে সালাত পড়বেন। (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ হাদীস নম্বর ২২৯৩)।
প্রসঙ্গত, সংখ্যাগরিষ্ঠ ইমামগণের মতানুসারে ইমাম মাহদীর পেছনে ঈসা (আ.) প্রথম যে সালাতটি আদায় করবেন সেটি ‘ফজরের সালাত’ হবে। কেউ কেউ বলেছেন, ‘আসরের সালাত’ হবে, কিন্তু এ মতটি দুর্বল।
أنَّ عيسى عليه السلامُ يَنزِلُ وقتَ صلاةِ الصبْحِ على المَنارةِ البَيضاءِ شَرقيَّ دِمَشقَ فيَجِدُ الإمامَ المَهْديَّ يُريدُ الصلاةَ فيَحُسُّ به، فيَتأخَّرُ ليَتقدَّمَ عيسى، فيُقدِّمُه عيسى، ويُصلِّي خلفَه، فيكونُ الإمامُ مِن أُمَّةِ النَّبيِّ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم، ولا يكونُ عيسى عليه السَّلامُ الإمامَ، فيُصلِّي مَأْمومًا؛ حتَّى يُعلِمَ الجميعَ أنَّه لم يَنزِلْ بشَرعٍ، أو رسالةٍ جديدةٍ
অর্থ- “ঈসা আলাইহিস সালাম দামেস্কের পূর্ব প্রান্তে শ্বেত মিনারার নিকটে ফজরের সালাতের সময় অবতরণ করবেন। তিনি ইমাম মাহদীর সাক্ষাৎ পাবেন। তিনি সে সময় সালাত আদায় করতে চাইবেন যা ইমাম মাহদী উপলব্ধি করতে পারবেন। ফলে তিনি (ইমামের জায়গা ছেড়ে) পেছনে সরে আসবেন যাতে ঈসা (আ.) সামনে অগ্রসর হতে পারেন। কিন্তু ঈসা (তখন) ইমাম মাহদীকে (ইমামের জায়গায়) এগিয়ে দিবেন এবং তিনি ইমাম মাহদীর পেছনে সালাত আদায় করবেন। এর মাধ্যমে তিনি উম্মতে মুহাম্মদীয়ার মধ্য থেকে একজন ইমামের কৃতিত্ব লাভ করবেন। ঈসা (আ.) ইমাম হবেন না, তিনি বরং (তখন) মুকতাদী হবেন। যাতে সকলেই বুঝতে পারে যে, তিনি নতুন কোনো শরীয়ত এবং রিসালাতের দায়িত্ব নিয়ে অবতরণ করেননি।” (আস-সিলসিলাতুস সহীহাহ হাদীস নম্বর ২২৯৩)।
ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) লিখেছেন,
وقال أبو الحسن الخسعي الآبري في مناقب الشافعي تواترت الاخبار بأن المهدي من هذه الأمة وأن عيسى يصلي خلفه ذكر ذلك ردا للحديث الذي أخرجه ابن ماجة عن أنس وفيه ولا مهدي الا عيسى
অর্থ- “হাফিয আবুল হাসান আল আবরী (২৮৩-৩৬৩ হি.) ‘মানাকিবু শাফেয়ী’ গ্রন্থে বলেছেন, সংবাদ সমূহ এ মর্মে তাওয়াতূর পর্যায়ে উপনীত হয়ে গেছে যে, নিশ্চয়ই ইমাম মাহদী এ উম্মতের মধ্য থেকেই হবেন এবং ঈসা (আ.) তাঁর পেছনে সালাত আদায় করবেন। এটি আনাস হতে ইবনে মাজাহ এর বর্ণিত হাদীসেরই প্রত্যাখ্যানকারী যেখানে ‘ওয়া লাল মাহদী ইল্লা ঈসা’ লিখা রয়েছে।” (ফাতহুল বারী ৬/৩৫৮)।
ইবনে মাজাহ-এর একটি বর্ণনায় এসেছে, কোনো মাহদী নেই ঈসা ব্যতীত, বর্ণনাটির সনদ সর্বসম্মত ইমামগণের মতে খুবই দুর্বল ও মুনকার। এর সূত্র মুনকাতে বা বিচ্ছিন্ন এবং তার একজন রাবী মাজহূল বা অপরিচিত ও অন্য জন মিথ্যাবাদী হিসেবে অভিযুক্ত। এ সম্পর্কে পড়তে ক্লিক করুন।
ইমাম ইবনু বাত্তাহ (রহ.) লিখেছেন,
ثُمَّ الإيمانُ بأنَّ عيسى بنَ مَريَم عليه السَّلامُ يَنزِلُ مِنَ السَّماءِ إلى الأرضِ فيَكسِرُ الصَّليبَ ويَقتُلُ الخِنزيرَ وتَكونُ الدَّعوةُ واحِدةً
অর্থ- “অত:পর বিশ্বাস রাখা (আবশ্যক) এ মর্মে যে, ঈসা ইবনে মরিয়ম আলাইহিসসালাম পৃথিবীতে আকাশ থেকে অবতরণ করবেন, তারপর তিনি ক্রুস ভঙ্গ করবেন এবং শুয়োর হত্যা করবেন আর তখন (শুধুমাত্র) একই (তথা দ্বীনে ইসলামের দিকে) আহবান থাকবে।”
আল ইবানাতুছ ছোগরা-الإبانة الصغرى পৃষ্ঠা নং ২৪১
শারেহে মুসলিম ইমাম নববী (রহ.) লিখেছেন,
ثَبَت في الصَّحيحين أنَّ رَسولَ الله صلَّى اللهُ عليه وسلَّم قال: يَنزِلُ عيسى بنُ مَريَم مِنَ السَّماءِ، ويَقتُلُ الدَّجَّالَ ببابِ لُدٍّ
অর্থ- “সহীহাইন দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন যে, মরিয়ম পুত্র ঈসা আকাশ থেকে অবতরণ করবেন, তিনি দাজ্জালকে লূদ নামক গেইটে হত্যা করবেন।” (ক্লিক)
শরহে সহীহ মুসলিম পৃষ্ঠা নং ২৯৩৭
ইমাম আবুল হাসান মুহাম্মদ ইবনু হোসাইন আল আবরী (২৮৩-৩৬৩ হি.) বলেছেন,
وَقَدْ تَوَاتَرَتِ الأَخْبَارُ وَاسْتَفَاضَتْ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِذِكْرِ الْمَهْدِيِّ وَأَنَّهُ مِنْ أَهْلِ بَيْتِهِ وَأَنَّهُ يَمْلُكُ سَبْعَ سِنِينَ وأنه يؤم الأَرْضَ عَدْلا وَأَنَّ عِيسَى يَخْرُجُ فَيُسَاعِدُهُ عَلَى قَتْلِ الدَّجَّالِ وَأَنَّهُ يَؤُمُّ هَذِهِ الأُمَّةَ وَيُصَلِّي عِيسَى خَلْفَهُ
অর্থ- তাঁর (ইমাম মাহদী) আবির্ভাব এবং আহলে বাইয়েত (নবী বংশ) থেকে হওয়া এবং সাত বছর পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনা করা এবং ভূপৃষ্ঠ ন্যায়বিচার দ্বারা পরিপূর্ণ করা এবং ঈসা আলাইহিস সালামের সাথে (জিহাদের উদ্দেশ্যে ও রণসাজে) বের হওয়া এবং (ফিলিস্তিনের ভূমিতে) ‘লুদ‘ নামক ফটকে দাজ্জালকে হত্যার অভিযানে ঈসাকে সহযোগিতা করা এবং এ উম্মতের ইমামতে কোবরা’র দায়িত্ব পালনকরা ও ঈসা তাঁর পেছনে সালাত আদায় করার সমর্থনে হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বহু মুতাওয়াতির (ধারাবাহিক) বর্ণনা এসেছে।
আল মানারুল মুনীফ পৃষ্ঠা নং ১৪২, ইবনু কাইয়ুম
ইমাম জালালুদ্দীন আস সুয়ূতী (রহ.) লিখেছেন,
هذا من أعجب العجب، فإنّ صلاة عيسى خلف المهدي ثابتة في عدّة أحاديث صحيحة بإخبار رسول اللّه، وهو الصادق المصدّق
অর্থ- ব্যাপারটি অত্যন্ত অবাককরা যে, নিশ্চয়ই মাহদীর পেছনে ঈসার সালাত আদায় করাটা সদা সত্যবাদী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বহু সহীহ হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত।
কাদিয়ানীদের সব চেয়ে জঘন্য অন্যায় হলো তারা ‘খতমে নবুওয়তে’ (অর্থাৎ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুক্ত ও স্বাধীন সর্বশেষ নবী – এটিকে) বিশ্বাস করে না। আর তাদের একখান মেকি গুণ হলো, তারা আপনার সামনে এমনভাবে নবী-প্রেমে বুঁদ হয়ে থাকবে যে আপনি তাদের কোনো ত্রুটিরই টের পাবেন না। এটাকে বলে ‘তাকিয়া’। আর আমার ভাষায় এ তাকিয়ারই অপর নাম ললিপপ। কাদিয়ানীরা জনরোষ সামাল দিতে ও সাধারণদের ধোকা দিতেই যার-তার সাথে উক্ত ‘ললিপপ’ কান্ডে অবতীর্ণ হয়ে থাকে।
আর আপনি জেনে অবাক হবেন যে, পৃথিবীতে কাদিয়ানীদের চেয়ে মারাত্মক ‘নবী বিদ্বেষী’ ও গোস্তাক দ্বিতীয় কাউকে খুঁজে পাবেন না। যেমন- তাদের চেপে রাখা কুফুরী আকীদাগুলোর একটি হচ্ছে-
“এখন কলেমায় পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, ((مُحَمَّدُ رَّسُوْلُ اللهِ))-এর অর্থে নতুন একজন রাসূল বৃদ্ধি হয়ে গেছে।” (কালিমাতুল ফছল পৃ-৬৯, লিখক মির্যাপুত্র মির্যা বশির আহমদ এম.এ)।
আরেক জায়গায় একদম নিখুঁতভাবে লিখা আছে যে,
মির্যা কাদিয়ানী নাকি স্বয়ং মুহাম্মদ (সা.)। তাদের অফিসিয়াল উর্দূ পত্রিকা দৈনিক আল ফজল (২৮-১০-১৯১৫)-এর মধ্যে পরিষ্কার লিখা আছে ((مسيح موعود محمد است و عين محمد است)) অর্থাৎ মসীহ মওউদ হচ্ছেন মুহাম্মদ এবং তিনি প্রকৃতপক্ষেই মুহাম্মদ। নাউযুবিল্লাহ।
একই পৃষ্ঠায় আরো খোলাসা করে লিখা আছে,
“তিনি প্রকৃত মুহাম্মদ (সা.) হওয়ার ব্যাপারে বিন্দু পরিমাণেও কোনো সন্দেহ নেই।”
আরো লিখা আছে,
“আল্লাহর নিকট মসীহ মওউদের সত্তা হযরত (সা.)-এরই সত্তাতে পরিণত। তাদের মধ্যে কোনো ভিন্নতা থাকেনি, তারা একই সত্তা।”
আরেক জায়গায় লিখা আছে,
“এ জগত ধ্বংস হতে এখনও এক হাজার বছর অবশিষ্ট আছে।” (ইসলাম ও এদেশে অন্যান্য ধর্মমত পৃ-৪২)। একই পুস্তকে আরও লিখা আছে,
“সপ্তম সহস্র যা খোদা এবং তাঁর মসীহ’র জন্য নির্ধারিত।” (সূত্র ঐ ৪৯)। উল্লেখ্য, মির্যা কাদিয়ানী নিজেকে “মসীহ” তথা ঈসা আলাইহিস সালাম হওয়ার দাবীও করত।
এতে স্পষ্টত সাব্যস্ত হল যে, মির্যা কাদিয়ানীর বিশ্বাস ছিল, তার দাবীর সময় থেকে কেয়ামত পূর্ব দীর্ঘ এই সময়টি শুধু তারই, কার্যত নবুওয়তে মুহাম্মদীয়া অচল। নাউযুবিল্লাহ। নতুবা তার ঐ কথার কী অর্থ?
আরেক জায়গায় লিখা আছে,
“হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর যুগে মিডিয়া না থাকার দরুন তাঁর দ্বারা দ্বীন প্রচারের কাজ পরিপূর্ণভাবে হয়নি। তিনি পূর্ণ প্রচার করেননি। আমি তাঁর বুরুজী রঙ্গে (অবতাররূপে) এসে তাঁর অসম্পূর্ণ কাজগুলো পূর্ণ করেছি।” (রূহানী খাযায়েন ১৭/২৬৩, সারমর্ম)। নাউযুবিল্লাহ।
যাইহোক,
কাদিয়ানীদের সবচেয়ে বড় স্লোগান হলো “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ”। দেখবেন, তাদের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে, প্রতিটি মাহফিলে-মজমায়, তাদের প্রতিটি পোস্টার-সারকুলারে অনেক বড় অক্ষরে এবং অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন করে এই কালেমা লেখা থাকে। কাদিয়ানীরা কোথাও তাদের “কাদিয়ানী” নাম ব্যবহার করে না। তাদের নাম থাকে আহমদীয়া মুসলিম জামাত। ঢাকার বকশিবাজার আলিয়া মাদরাসার পাশে তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়।
আপনি যদি কোনো কাদিয়ানীকে জিজ্ঞেস করেন সে খতমে নবুওয়তে বিশ্বাস করে কিনা, তাহলে সে ইনিয়ে-বিনিয়ে ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে আপনাকে প্রচুর নবীপ্রেম দেখাবে। তারা এতো নিখুঁতভাবে কথা বলতে জানে যে, অধিকাংশ মানুষ তাদের সাথে বিতর্ক করতে এসে তাদের নবী-ভক্তিমূলক বাক্যালাপের কাছে হেরে যাওয়ার উপক্রম হয়।
কিন্তু তাদের ঈমান(!) খুব টনটনে। তারা ভুলেও একথা স্বীকার করবে না যে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘শেষ নবী’।
আল্লাহ্ বলেন, ‘মুহাম্মাদ’ তোমাদের মধ্য থেকে কোনো পুরুষের পিতা নয়। তিনি হলেন আল্লাহর রাসূল এবং ‘শেষ নবী’ (কুরআন ৩৩:৪০)। আপনি যদি আল্লাহর এই কথাকে বিশ্বাস করেন তাহলে বলুন “কাদিয়ানীরা জিন্দিক ও কাফের এবং ইসলামের সব চেয়ে নিকৃষ্ট দুশমন!”
মির্যাপুত্র মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ এর কথা সঠিক হলে তবে আব্দুল আউয়াল খান সাহেব মিথ্যাবাদী! বিস্তারিত জানতে পড়ুন,
কুরআন থেকে প্রমাণ করুন “ঈসা” আলাইহিস সালাম “জীবিত” – কাদিয়ানী আমীর জনাব আব্দুল আউয়াল খান সাহেবের এমন চ্যালেঞ্জ এর প্রতিউত্তরে
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি-২০২৫ ইং বকশিবাজার কাদিয়ানী আস্তানায় তাদের বার্ষিক সম্মেলন (জলসা) সম্পন্ন হয়। উক্ত জলসায় এদেশীয় কাদিয়ানী প্রধান, আব্দুল আউয়াল খান চৌধুরী সাহেব কাদিয়ানী মতবাদের উপর পর্দা ফেলতে সেই পুরনো ভাঙ্গা ঢোল এবারও বাজিয়েছেন। তিনি মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর সেই পুরনো ডায়লগের পুনঃবৃত্তি করেছেন। এ সম্পর্কে একটু পরেই আসছি।
আব্দুল আউয়াল সাহেব তার বক্তৃতায় অজপাড়াগাঁ থেকে আগত উপস্থিত সহজ-সরল মানুষগুলোকে এবারও বোকা বানাতে চেয়েছেন। গত জলসায় পঞ্চগড়ে একই কায়দায় আগতদের মধ্য থেকে ২৭ জনকে “কাদিয়ানী মতবাদে” প্রবেশ করেছিলেন বলে আমরা জানতে পারি। কিন্তু জলসা শেষে মাত্র এক দিনের ব্যবধানেই ১০ জন “কাদিয়ানী মতবাদ” থেকে ফিরে আসেন এবং তওবাহ করেন। প্রত্যেকেই তওবাহ করার সময় মির্যা কাদিয়ানীর উপর শত সহস্র লানত বর্ষণ করেন। আর বাকি থাকলো ১৭ জন। এদের মধ্য থেকে আর কতজন ফিরে আসছেন তার সুনিশ্চিত কোনো তথ্য এ মুহূর্তে আমার কাছে নেই। আসলে, মিথ্যার পতন অনিবার্য, সেটিকে শঠতাপূর্ণ বাকপটুতা দিয়ে যতই খাওয়ানো হোক না কেন।
যাইহোক, আগত সাধারণ মানুষ গুলোর বিবেকের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতেই আব্দুল আউয়াল সাহেব হরহামেশাই এ ধরনের ভঙ্গি করে থাকেন। সেই ভঙ্গি গুলোর কয়েকটি এ রকম,
(ভঙ্গি নম্বর ১) মির্যা গোলাম আহমদ তিনি কখনোই “নবী” দাবী করেননি। তিনি “উম্মতিনবী” দাবী করেছেন।
উল্লেখ্য, মির্যা কাদিয়ানীকে তার পরবর্তী অনুসারীরা তথাকথিত “উম্মতিনবী” বলে প্রচার করে থাকে মূলত তার “নবী” দাবীর বদনাম ঢাকতে ও মুসলিম উম্মাহার ক্ষোভের আগুন থেকে নিজেদের বাঁচানোর উদ্দেশ্যেই। তারা কখনো বা মির্যার ‘নবী’ দাবীটিকে “মুহাদ্দাস” অর্থেও উদ্দেশ্য নেয়ার কথা বলে। এককথায় মির্যার “নবী” দাবীকে “হালাল” করতে তারা সর্বদা অযথা বিতর্কে জড়িয়ে থাকে। অথচ তারাও জানেনা যে, তারা মির্যাকে কথিত “ছায়ানবী” বা “উম্মতিনবী” বা “বুরুযীনবী” শব্দগুলোর বক্রব্যাখ্যার আড়ালে রক্ষা করতে চাওয়া কতটা আত্মঘাতী! তারা মির্যার “নবী” দাবীকে হালাল করতে এবং সেটিকে “উম্মতি” শব্দে বিশেষিত করতে সূরা নিসার ৬৯ নং আয়াতকে রেফার করার সময় ভুলে যায় যে, তাদের মির্যা কাদিয়ানী নিজেও “উম্মতিনবী” দাবীর সমর্থনে সূরা নিসা থেকে কখনো কোনো আয়াত উদ্ধৃত করেনি।
আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে, মির্যাপুত্র মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ তো পরিষ্কার বলে দিয়েছেন যে,
جب حضرت مسیح موعود نبی ثابت ہوگئے، ایسے ہی نبی جیسے دوسرے انبیاء علیہم السلام تو پھر ان کے بھی وہی حقوق ہیں جو دوسرے انبیاء کے ہیں
“হযরত মসীহ মওউদ (মির্যা সাহেব) যখন একজন নবী বলে সাব্যস্ত হয়ে গেল, ঠিক তেমনি একজন নবী; যেমন অন্যান্য নবীগণ, তখন তো উনার-ও অনুরূপ অধিকার থাকবে যেভাবে অন্যান্য নবীগণের রয়েছে।”
(কাদিয়ানীদের অফিসিয়াল উর্দূ পত্রিকা দৈনিক আল ফজল পৃ-১০ কলাম ৩, তারিখ ৩০-১২-১৯১৬ ইং দ্রষ্টব্য)।
প্রামাণ্য স্ক্যানকপি
মির্যাপুত্রের ভাষ্যমতে বুঝা গেল যে, গোলাম আহমদ কাদিয়ানী সাহেব পূর্ববর্তী নবী রাসূলগণের মতই একজন নবী। তাহলে কি কাদিয়ানী নেতা আব্দুল আউয়াল মির্যাকে শুধুমাত্র কথিত “উম্মতিনবী” আখ্যা দিয়ে মিথ্যাচার করল না? জ্বী, অবশ্যই সে মিথ্যাচার করেছে। কিন্তু তার নির্বোধ কাল্টদের বুঝানোর সাধ্য কার!
(ভঙ্গি নম্বর ২) মির্যা কাদিয়ানী নিজ দাবীতে সত্য ছিল না মিথ্যা ছিল, ইস্তিখারাহ করুন।
উল্লেখ্য, ইসলামের কোনো মীমাংসিত বিষয়ে ইস্তিখারাহ করা নাজায়েজ। যেমন, আপন ভাই বোনে বিবাহ হারাম, এটি ইসলামে একটি মীমাংসিত ও চূড়ান্ত বিধান। এখন কেউ যদি এখানে হারাম বা হালাল নিয়ে কনফিউজড হয় তদ্দ্বারা সে কুফুরীতে চলে যাবে। মির্যা কাদিয়ানী “নবী” দাবী করায় তার ব্যাপারেও সত্য বা মিথ্যা হওয়া নিয়ে ইস্তিখারাহ করাও একই কথা। যেহেতু ঐ অবস্থায় এমন ব্যক্তির অন্তরে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের “খাতামুন নাবিয়্যীন” এর প্রতি যে ঈমান থাকাটা ফরজ ছিল, সেই ঈমান আর বহাল থাকেনা।
(ভঙ্গি নম্বর ৩) ঈসা নবীউল্লাহ (আল্লাহর নবী ঈসা) আবার আসবেন, মুসলিম শরীফের হাদীসে আগত ঈসাকে আল্লাহর নবী তিন তিন বার “নবী” শব্দে উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ আগত ঈসা “নবী” হিসেবেই আসবেন। (নাউযুবিল্লাহ)।
উল্লেখ্য, মুসলিম শরীফের উক্ত হাদীসে আগত সেই ঈসা হতে মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে বুঝায়নি। বরং হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনী ইসরাইলের জন্য পূর্বে প্রেরিত হযরত ঈসা ইবনে মরিয়ম আলাইহিস সালামের আবার আগমন করার ভবিষ্যৎবাণী দিয়েছেন। সে একই হাদীসে আগত ঈসা কোথায় এবং কিভাবে নাযিল হবেন, তিনি এসে কী কী কাজ গুলো করবেন, তিনি ইয়াজুজ-মাজুজ এর আক্রমণের সময় কোথায় এবং কিভাবে আত্মরক্ষা করবেন, ইয়াজুজ-মাজুজ এর ধ্বংস কিভাবে হবে ইত্যাদি পুরো ঘটনাটি প্রায় আড়াইশ শব্দের অধিক দীর্ঘ হাদীসটিতে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু তারা হাদীসটির পুরো বিষয়গুলো চোখবুঁজে এড়িয়ে যায় এবং সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে “ঈসা নাবিউল্লাহ” অতি ক্ষুদ্র একটুকরো আরবী উঠে নিয়ে মনগড়া ব্যাখ্যায় চলে যায়।
আবার আগের কথায় ফিরছি, গত ১৬ ই ফেব্রুয়ারিতে বকশিবাজারে কাদিয়ানী প্রধান আব্দুল আউয়াল সাহেব বললেন,
কোনো মিছিল মিটিংয়ের দরকার নেই, কাফের ঘোষণা দেয়ারও দরকার নেই। সংসদে আইন পাস করে কাদিয়ানীদের “অমুসলিম” রায় দেয়ার-ও দরকার নেই। শুধু পবিত্র কুরআন থেকে ঈসা আলাইহিস সালামকে “জীবিত” প্রমাণ করে দিন। (বক্তব্যের মুটামুটি সারাংশ)।
কাদিয়ানীদের নিকট এ লিখাটির কোনো উত্তর কেয়ামত পর্যন্ত দেয়া সম্ভব নয়, পড়ুন- Click
এখন তার উক্ত চ্যালেঞ্জের জবাব,
আমি তার উক্ত চ্যালেঞ্জের সরল উত্তর ইতিপূর্বেও বহুবার বিভিন্ন ভাবে দিয়ে আসছি। আজকে আবারও দিতে চাই।
তবে তার আগে আমি তার উক্ত চ্যালেঞ্জ গ্রহণপূর্বক তাকে পালটা কয়েকটি প্রশ্ন করব, যেগুলোর উত্তর তাকে এবং তার সম্প্রদায়কে পবিত্র কুরআন থেকেই দিতে হবে। (যেহেতু সে নিজেও তার উল্লিখিত চ্যালেঞ্জ এর উত্তর পবিত্র “কুরআন” থেকেই দিতে বলেছেন, দ্বিতীয় কোনো ফান্ডামেন্টাল সোর্সের কথা তিনি উল্লেখ করেননি-লিখক)।
আসুন! আপনারাও এগুলো কুরআন থেকে প্রমাণ করুন,
(নম্বর ১) শেষ যামানায় একজন রূপক ঈসা আসবেন, যিনি মুসলমানদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে আলাদা দল তৈরি করবেন, একথা কুরআন থেকে প্রমাণ করতে হবে।
উল্লেখ্য, কাদিয়ানী সম্প্রদায় মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে “রূপক ঈসা” মানেন বলেও প্রচার করে থাকেন।
(নম্বর ২) আগত তথাকথিত “রূপক ঈসা” আর “ইমাম মাহদী” দু’জনই একই ব্যক্তি হবেন, এ কথাটিও কুরআন থেকেই প্রমাণ করতে হবে।
উল্লেখ্য, কাদিয়ানীরা আগত ঈসা আর হযরত ইমাম মাহদী – দু’জনকে আলাদা ব্যক্তি মনে করেনা, তারা একই ব্যক্তির দু’টি আলাদা উপাধি বলে থাকেন। আর সে হিসেবে মির্যা কাদিয়ানীকে তারা রূপক ঈসা এবং ইমাম মাহদী দুটি এক সঙ্গে মানেন।
(নম্বর ৩) কথিত রূপক ঈসার উপর ঈমান না আনার কারণে সমস্ত উম্মতে মুহাম্মদীয়া অমুসলিম, জাহান্নামী; এ কথাটিও কুরআন থেকে প্রমাণ করতে হবে।
উল্লেখ্য, মির্যা কাদিয়ানীর মতে যারা তার দাওয়াত (দর্শন ও দাবী দাওয়া) কবুল করেনি তারা মুসলমান নয়। (তাযকিরাহ পৃ-৫১৯)। কাদিয়ানী জামাতের দ্বিতীয় খলীফা মির্যাপুত্র মির্যা বশির উদ্দীন লিখেছেন, যে সকল মুসলমান মির্যা কাদিয়ানীর নিকট প্রতিজ্ঞাবদ্ধ (বয়াত) না হবে তারা যদি তার নামও না শুনে থাকে তবুও তারা কাফের এবং ইসলামের গণ্ডি থেকে বাহিরে। (আয়নায়ে সাদাকাত, আনওয়ারুল উলূম ৬/১১০, মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ)। নাউযুবিল্লাহ।
(নম্বর ৪) কথিত রূপক ঈসাটাই যে ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের কাদিয়ান গ্রামের চেরাগ বিবির সর্বকনিষ্ঠ পুত্র মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (১৮৩৯-১৯০৮), এ কথাটিও কুরআন থেকে প্রমাণ করতে হবে।
উল্লেখ্য, বাহায়ী জামাতের অনুসারীরা-ও বিশ্বাস করে যে, তাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা মির্যা হুসাইন আলী নূরী (বাহাউল্লাহ নামে পরিচিত) একজন “রূপক ঈসা” ছিলেন। ঐতিহাসিকভাবে সত্য যে, বাহাউল্লাহ ইরানী “মসীহ মওউদ” দাবী করেই বসে থাকেনি, বরং সে নবুওয়ত এবং রেসালতের দাবীও করেছিল। তার সুস্পষ্ট ঘোষণা ছিল যে, আল্লাহ তার প্রতি ওহী নাযিল করেছেন। বাহাউল্লাহ ইরানী মসীহ মওউদ দাবী করার পর আরও প্রায় চল্লিশ বছর বেঁচেছিল।
(নম্বর ৫) হযরত ঈসা (আ.) এর কবর ভারতের কাশ্মীরে খান ইয়ার মহল্লাতে, এ কথাটিও কুরআন থেকে প্রমাণ করতে হবে।
উল্লেখ্য, কাদিয়ানীদের আরও একটি অকাট্য বিশ্বাস হচ্ছে, ঈসা (আ.) শামের গ্যালীল জনপদ হয়ে সেই সুদূর জেরুজালেম থেকে কাশ্মীর পালিয়ে আসেন। সেখানেই জীবনযাপন করেন এবং ১২০ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পর তিনি সেখানেই দাফন হন। (নাউযুবিল্লাহ)।
(উক্ত ৫টি প্রশ্নের উত্তর কুরআন থেকে দিতে হবে)।
যদি কুরআন থেকে এগুলোর সঠিক উত্তর দিতে পারেন এবং সাক্ষ্য হিসেবে মাননীয় দুই একজন পূর্ববর্তী যুগ ইমামের উক্তিও পেশ করতে পারে (তাদের মূল কিতাবের স্ক্রিনশট সহকারে) তাহলে আমিই সবার আগে মির্যা কাদিয়ানীকে সাপোর্ট করব। ওয়াল্লাহি।
আর যদি সঠিকভাবে উত্তর দিতে ব্যর্থ হন তাহলে আমার সুস্পষ্ট বক্তব্য, আপনি এবং আপনারা ভন্ড, প্রতারক ও নিঃসন্দেহে যিন্দিক। তাই আহবান থাকবে, আল্লাহকে ভয় করুন। দুনিয়ার সামান্য লোভ লালসায় পড়ে আখেরাতকে বরবাদ করবেন না। অন্ততপক্ষে সাধারণ মানুষের ঈমান নিয়ে আর তামাশা করবেন না। আমার কাজ, সাহস করে সত্যটা তুলে ধরা। আল্লাহর নিকট আপনাদের সোপর্দ করছি। ওয়াল্লাহুল মুস্তা’আন ওয়াল মুহতাদী।
উল্লেখ্য, ‘যিন্দিক‘ এমন ব্যক্তিকে বলা হয় যে মনেপ্রাণে কুফুরী লালন করে-ও নিজেকে বাহ্যিকভাবে মুসলমান পরিচয় দেয়—বলে থাকে যে, আমি মুসলমান। অথচ এমন ব্যক্তি জঘন্য কাফের এবং যিন্দিক। আর ইসলামে যিন্দিকের শাস্তি আর মুরতাদের শাস্তি একই।
এবার পবিত্র কুরআন থেকে প্রমাণ করা হবে যে, হযরত ঈসা ইবনু মরিয়ম (আ.) এর পুনঃ আগমন সত্য। এর পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ ইংগিত রয়েছে। রাসূল (সা.) এর ভবিষ্যৎবাণীতে পরিষ্কার করে এসেছে যে, তিনি যথাসময় আসবেন, তিনি মরিয়মের পুত্র ঈসা, তিনি একজন ন্যায়বিচারক ও সুশাসক হবেন। তিনি শামে অবতরণ করবেন। তিনি দু’জন ফেরেশতার দুই ডানায় দুই হাত রেখেই নাযিল হবেন। তার অবতরণ স্থল হবে সিরিয়ারই ভূখণ্ডে ও পূর্বপ্রাণে (উমাইয়াহ মসজিদের শ্বেত মিনারার পাশে)। মুসনাদে বাজ্জার গ্রন্থের একটি সহীহ হাদীসে এসেছে তিনি আকাশ থেকে নাযিল হবেন।
সহীহ মুসলিম শরীফে আরও এসেছে, ঈসা (আ.) যখন আসবেন তখন মুসলমানদের আমীর (অন্য হাদীসে এ আমীরকে ‘ইমাম মাহদী‘ বলে উল্লেখ করা হয়েছে, দেখুন المنار المنيف لابن القيم পৃষ্ঠা নং ৯৪, সনদের মান- জায়্যিদ তথা ভালো) তাঁকে সালাতের ইমামতি করতে বলবেন কিন্তু তিনি ‘ইমাম মাহদী’কেই সালাত পড়াতে সম্মুখে দাঁড় করিয়ে দেবেন। ইত্যাদি। এ থেকেও প্রমাণিত হল যে, তারা ভিন্ন ভিন্ন দুই ব্যক্তিই হবেন। (প্রামাণ্য স্ক্রিনশট এই যে)
অর্থ- নিশ্চয়ই সে (মরিয়ম পুত্র ঈসা) হবে (মূলত) কেয়ামতের একটি নিদর্শন (হে নবী, তুমি বলো), তোমরা সে (কেয়ামতের) ব্যাপারে কখনো সন্দেহ পোষণ করো না। তোমরা আমারই আনুগত্য করো, এটাই সরল পথ। আয়াতটিতে সে হবে ভবিষ্যতের দিকে ইংগিত। বাকিটা বুঝে নিন! (অনুবাদ-হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ, আল কোরআন একাডেমী পাবলিকেশন্স)।
আয়াতটির নিশ্চয়ই সে (إِنَّهُ) এ কথাটির ইংগিত কী? এমন প্রশ্নের উত্তরে কতিপয় ব্যাখ্যাকরক বলেছেন পবিত্র কুরআন। কিন্তু ইমাম ইবনে কাসীর (রহ.) সহ অধিকাংশ তাফসীরকারকের সর্বসম্মত মত হচ্ছে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হযরত ঈসা ইবনে মরিয়ম। তার কারণ আয়াতটির উপরে উল্লিখিত একটানা ৩টি আয়াত ঈসা (আ.) সম্পর্কে আলোচিত হয়েছে। কাজেই এ আয়াত তারই প্রসঙ্গক্রমে। তিনি আরো লিখেছেন
অর্থ- বরং বিশুদ্ধ মত হচ্ছে নিশ্চয়ই সে (إِنَّهُ) এ কথাটির ইংগিত হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের প্রতি। এর দ্বারা উদ্দেশ্য, তিনি কেয়ামত দিবসের পূর্বে অবতরণ করবেন। আহলে কিতাবীগণ তাঁর মৃত্যুর পূর্বে তাঁর প্রতি বিশ্বাস আনয়ন করবেন। পবিত্র কুরআন (০৩:৫৯) দ্রষ্টব্য। – ইবনে কাসীর।
অর্থ- আহলে কিতাবদের (ইহুদী-খ্রিস্টানদের) মাঝে এমন একজনও থাকবে না, যে ব্যক্তি তাঁর মৃত্যুর আগে তাঁর (তিরোধান সম্পর্কে আল্লাহতালার এই কথার) উপর ঈমান আনবে না, কেয়ামতের দিন সে তো নিজেই এদের উপর সাক্ষী হবে।
আয়াতটিতেও ঈমান আনবে কথাটি ভবিষ্যতের দিকে ইংগিত। এখন ঈসা (আ.) কুরআন নাযিলের আগেই মারা গেলে আহলে কিতাবীরা তাঁর মৃত্যুর আগে আগে তাঁর প্রতি ঈমান আনবে-কথাটির মানে কী?
অর্থ- আল্লাহ যখন তাঁর নবীদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন (তখন তিনি বলেছিলেন, এ হচ্ছে) কিতাব ও (তার ব্যবহারিক) জ্ঞান কৌশল, যা আমি তোমাদের দান করলাম, অতপর তোমাদের কাছে যখন (একজন) রাসূল আসবে, যে তোমাদের কাছে রক্ষিত (আগের) কিতাবের সত্যায়ন করবে, তখন তোমরা অবশ্যই তার (আনীত বিধানের) উপর ঈমান আনবে এবং সাহায্য করবে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি অঙ্গীকার গ্রহণ করছো এবং আমার এ প্রতিশ্রুতির দায়িত্ব পালন করছো? তারা বললো, হ্যাঁ আমরা অঙ্গীকার করছি; তিনি বললেন, তাহলে তোমরা সাক্ষী থেকো এবং আমিও তোমাদের সাথে (এ অঙ্গীকারে) সাক্ষী হয়ে রইলাম। এখানে মুহাম্মদ (সা.)-এর আগমনী প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে।
(ইবনে আব্বাস, আলী প্রমুখও একই কথা বলেছেন, তাফসীরে তাবারী দ্রষ্টব্য)।
একই কথা মির্যা কাদিয়ানীও স্বীকার করে লিখে গেছেন (দেখুন রূহানী খাযায়েন খণ্ড নং ১৮, পৃষ্ঠা নং ৬৭৫)।
রূহের জগতে সমস্ত নবী রাসূল থেকে গৃহিত অঙ্গীকার, তাঁকে পাওয়া মাত্রই সবাই তাঁকে সাহায্য করতে হবে। আর এই অঙ্গীকার সকল নবী রাসূলের পক্ষ হতে পূর্ণ হওয়া তখনি সম্ভব, যখন শেষযুগে ঈসা (আ.) আসবেন এবং তিনি সকলের পক্ষ হতে তাঁর রেসালতের সত্যায়ন করবেন এবং তাঁর রেখে যাওয়া দ্বীনের সাহায্য করবেন।
কাদিয়ানীদের নিকট প্রশ্ন হল, মির্যা কাদিয়ানীর কাছ থেকেও কি ঐ অঙ্গীকার নেয়া হয়েছিল? অন্যথা প্রকৃত ঈসা আসার পরিবর্তে তথাকথিত “রূপক ঈসা” আসার যুক্তিকতা কী?
অর্থ- সে দোলনায় থাকা অবস্থায় (যেমন) মানুষের সাথে কথা বলবে, পরিণত বয়সেও (তেমনিভাবে) কথা বলবে এবং সে হবে নেককারদের একজন।
আয়াতটিতে পরিণত বয়স বুঝাতে আরবী শব্দ কাহাল এসেছে। আরবী অভিধানগ্রন্থ ‘লিসানুল আরব’ (لسان العرب) এর মধ্যে লিখা আছে, “কাহাল” (كَهْلًا) বা পরিণত বয়স বলতে ৩৪ বছর থেকে ৫১ বছরের মাঝামাঝি বয়সীদের বুঝানো হয়।
আমরা জানি, ঈসা (আ.)-কে যখন সশরীরে উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল, তখন তিনি মাত্র ৩৩ বছরের যুবক
(তবকাতে ইবনে সা’আদ ১/৩৬, ইবনে আব্বাস রা. থেকে)।
সুতরাং এই আয়াত পরিষ্কার ইংগিত করছে যে, তাঁর (আ.) ফিরে আসার বিশ্বাস অকাট্য সত্য। অন্যথা কাহাল (প্রৌঢ়) বা পরিণত বয়সে মানুষের সাথে তাঁর কথা বলা কখনো সম্ভব হবেনা। অথচ কুরআন বলছে ইয়ুকাল্লিমুন নাস (وَيُكَلِّمُ النَّاسَ) অর্থাৎ তিনি মানুষের সাথে কথা বলবেন । ভবিষ্যৎকালের দিকে ইংগিত। এ জন্যই এইধরণের নসকে ইশারাতুন নস বলে।
মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী এর “নবী” দাবী করার বিষয়টি শেষ পর্যন্ত আর আড়াল করা সম্ভব হল না! ধন্যবাদ কাদিয়ানী নেতাদের, তারা বেলা শেষে আসল চেহারা নিয়েই আত্মপ্রকাশ করেছে। তাদের সর্বসাধারণ কাদিয়ানী মানুষ গুলোও এবার ভ্রান্তির অন্ধকার থেকে মুক্তি লাভ করতে পারবে, ইনশাআল্লাহ। কেননা, এতদিন তাদেরকে বলে বুঝাত যে, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী ‘নবী’ দাবী করেনি। তাদেরই অন্য আরেকটি পুস্তক ‘হামামাতুল বুশরা’ বইয়ের ৪৮ নং পৃষ্ঠাটি সহ আরও নানা জায়গা থেকে বুঝানোর চেষ্টা করা হত যে, দেখ দেখ মির্যা কাদিয়ানী সাহেব কত সুস্পষ্টভাবে নিজের নবুওয়ত দাবী করাকে অস্বীকার করেছেন!
ঘটনাটি হচ্ছে, মির্যা গোলাম আহমদের আগের বইগুলোতে তার নবী দাবীকে অস্বীকার করার কথা সত্য, কিন্তু ১৯০১ সালের পরে রচিত বইগুলো হতে পরিষ্কার করে জানা যায় যে, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী পরবর্তীতে “নবুওয়ত” এর দাবী করেন এবং দ্ব্যর্থ কন্ঠেই তিনি তা স্বীকার করে যান। তিনি তার একটি ঘোষণাপত্রে কোনো লুকোচুরি ছাড়াই পরিষ্কার ভাষায় বলে দিয়েছেন যে,
“আমি আল্লাহর আদেশ মুতাবেক একজন নবী”। দেখুন- (নবুওয়ত ও খিলাফত পৃষ্ঠা নং ৭৬)।
কাদিয়ানীদের মোটাদাগে কিছু কুফুরি মতবাদের এক পৃষ্ঠার এ পিডিএফ ফাইলটি ডাউনলোড করুন।
কিন্তু আফসোস! এরা এরপরেও নিজেদের আত্মপক্ষ সমর্থনে চাপাবাজী করতেই থাকবে। তারা প্রথমে ‘নবী’ দাবী করার বিষয়টিকে নিজেদেরই মনগড়া কনসেপ্ট কথিত জিল্লি বুরুজি নানা কুটতর্কের মধ্যদিয়ে অস্বীকার করার চেষ্টা করে থাকে। যখনি ধরা পড়ে যায় তখনি প্রসঙ্গ পালটে ফেলে অথবা ‘নবী’ শব্দের আভিধানিক এবং পারিভাষিক নানা বিশ্লেষণের দিকে মুভ করে, যাতে শ্রোতাদের দৃষ্টিকে ভিন্নদিকে ডাইভেট করে দিতে পারে এবং আলোচনার পরিবেশ নষ্ট করতে পারে। আল্লাহ এদেরকে সহীহ সমঝ দিন, আমীন।
বিজ্ঞ পাঠকবৃন্দ, এবার আমি এ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নেয়ার জন্য ঐ বইটির ধারাবাহিক কিছু পৃষ্ঠা এখানে তুলে দিচ্ছি। যাতে পাঠকবৃন্দ ব্যাপারটিকে আরও ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারেন এবং যথাসময়ে ওদেরকেও চ্যালেঞ্জ করতে পারেন।