মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (১৮৩৯-১৯০৮) একজন ব্রিটিশ ভারতীয় নাগরিক। পুর্বপুরুষ ছিল মোগল। সম্রাট তৈমুরের বংশধর ছিল। তার পরদাদা মির্যা গুল মুহাম্মদ এবং দাদা মির্যা আতা মুহাম্মদ, পিতা মির্যা গোলাম মর্তুজা। প্রত্যেকে শিখদের দ্বারা নিজ জন্মস্থান পাঞ্জাবে অনেক নিপীড়নের সম্মুখীন হয়, জমিজমা হারায়। কিন্তু পাঞ্জাবের মহারাজা রণজিৎ সিং এর রাজত্বের শেষের দিকে ব্রিটিশ সরকার তার পিতা মির্যা গোলাম মর্তুজাকে তাদের হারানো ৫ টি গ্রামের পূর্ণ জমিদারী পুনরায় উদ্ধার করে দেয়।
জাগতিক এ স্বার্থসিদ্ধির শোকরগুজার হিসেবে তাদের প্রত্যেকেই ছিলেন বংশপরম্পরায় ব্রিটিশ সরকারের একান্ত অনুগত ও জীবন উৎসর্গকারী। ১৮৫৭ সালে ব্রিটিশ সরকারের সাহায্যে মির্যা গোলাম মর্তুজা ৫০টি সশস্ত্র ঘোড় সওয়ার পাঠিয়েছিলো। যারা সে সময় ব্রিটিশ সরকারের পক্ষে জীবন-মরণ যুদ্ধ করেছিলো। মির্যা কাদিয়ানী এ ইতিহাস নিজেই তার রচনা ‘কিতাবুল বারিয়্যাহ’ পুস্তকে লিখে গেছেন। তার রচনাসমগ্র রূহানী খাযায়েন খন্ড নং ১৩ পৃষ্ঠা নং ৪-৬ দেখুন।
মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী নিজ পূর্ব পুরুষদের অনুকরণে আজীবন ব্রিটিশ সরকারের পক্ষে বুদ্ধিবৃত্তিক খেদমত আঞ্জাম দিয়ে যান। নিজেকে স্বঘোষিতভাবে ব্রিটিশ সরকারের রোপিত চারাগাছ বলে পরিচয় দিতেন। জীবনের শুরুতে ইসলামের পক্ষেও বহু লিখালিখির কাজ করেন। তবে পরবর্তীতে নিজেকে কখনো ‘মসীহ‘, কখনো বা ইমাম মাহদী, কখনো বা বুরুজি মুহাম্মদ দাবীতে বাজার গরম করে তুলেন। ১৯০১ সালের পর নিজেকে সরাসরি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আধ্যাত্মিক সত্তা বলেও দাবী করেন। দ্বিতীয় মুহাম্মদ বা বুরুজি মুহাম্মদ হবারও দাবী করেন। জীবনের শেষের দিকে নিজেকে শরীয়তী নবী বলেও দাবী করেন।
মির্যা কাদিয়ানী সাহেবকে যারা মানে না তাদের সম্পর্কে তারই রচনার আলোকে নিচে তুলে ধরছি,
তিনি তার ১৮৯৯ সালের দিককার একটি রচনায় পরিষ্কার লিখেছেন,
میرا یہ مذہب ہے کہ میرے دعوے کے انکار کی وجہ سے کوئی شخص کافر یا دجل نہیں ہو سکتا۔
অর্থাৎ “আমার মত হচ্ছে যে, আমার দাবী অস্বীকার করার কারণে কোনো ব্যক্তি কাফের অথবা দজ্জাল হয়ে যাবেনা।” দেখুন, তার রচনা ‘তিরয়াকুল কুলুব‘ পৃষ্ঠা নং ১৩১ উর্দূ, (রূহানী খাযায়েন খন্ড নং ১৫, পৃষ্ঠা নং ৪৩২)। প্রামাণ্য স্ক্যানকপি দ্রষ্টব্য –
কিন্তু মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী সাহেব তার আরেক রচনায় ১৯০৬ সালের মার্চের দিকে দীপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা দিয়ে লিখে গেছেন যে,
خدا تعالی نے میرے پر ظاہر کیا ہے کہ ہر ایک شخص جس کو میرے دعوت پہنچی ہیں اور اس نے مجھے قبول نہیں کیا وہ مسلمان نہیں ہے اور خدا کے نزدیک قابل مؤاخذہ ہے
“খোদাতায়ালা আমার প্রতি প্রকাশ করেছেন যে, যাদের নিকট আমার দাওয়াত পৌঁছা সত্ত্বেও কবুল করেনি তারা মুসলমান নয়, বরং তারা খোদার নিকট ধরপাকড়ের যোগ্য।” দেখুন ‘তাযকিরাহ‘ চতুর্থ এডিশন পৃষ্ঠা নং ৫১৯, উর্দূ ভার্সন। প্রামাণ্য স্ক্যানকপি দ্রষ্টব্য –
শেষকথা– উপরের দীর্ঘ আলোচনা হতে পরিষ্কার হয়ে গেল যে, মির্যা গোলাম কাদিয়ানী সাহেব সত্যিই একজন মানসিক রোগী ছিলেন। তার স্মৃতিশক্তি খুব বেশি লোপ পেয়েছিল। ফলে তিনি সকালে কী বলতেন তা বিকেল পর্যন্ত মনে রাখতে পারতেন না। যখন যা মনে আসত তখন তা নির্দ্বিধায় লিখে যেতেন। আফসোস! তার অধিকাংশ অন্ধ অনুসারীর জন্য। তাদেরকে বুঝিয়ে কোনো ফায়দা নেই। কারণ তারা ব্রেইন ওয়াশ ও অন্ধ। আল্লাহ তাদেরকে সুবোধ দান করুন।
মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর নবুওয়ত অর্জনের ভিত্তি ছিল “ফানা ফির রাসূল” বা রাসূলের মধ্যে বিলীন হয়ে যাওয়া। কিন্তু এখানে আমার ২টি প্রশ্ন রয়েছে। যেমন,
১ মির্যা কাদিয়ানী সাহেবের সেই “ফানা ফির রাসূল” ওয়ালা সাধনাগুলো কী ছিল, যা ইতিপূর্বে উম্মতে মুহাম্মদীয়ার দ্বিতীয় কারো মধ্যে কল্পনা করাও অসম্ভব, যার দরুন মির্যা সাহেবকে সত্যিই ‘রাসূলের মধ্যে বিলীন’ হয়ে যাওয়ার কনসেপ্ট বাস্তব বলে প্রতীয়মান হবে?
২ ফানা ফির রাসূল দ্বারা নবুওয়তের মাকাম লাভ করা যায় এ ধরণের কোনো ইংগিত বা ফরমান কি কুরআন বা সুন্নাহতে পাওয়া যায়? উম্মতে মুহাম্মদীয়ার বিগত চৌদ্দশত বছরের ইসলামের অথেনটিক সাহিত্য সমূহ এ সম্পর্কে আদৌ কি কিছু বলেছে?
উল্লেখ্য, পবিত্র কুরআনের সুস্পষ্ট শিক্ষা হচ্ছে, আল্লাহকে ভালোবাসতে হলে তাঁর রাসূলের পূর্ণ অনুসরণ করতে হবে। আর তাঁর রাসূলের পূর্ণ অনুসরণের মধ্যেই রয়েছে বান্দার প্রতি আল্লাহর ভালোবাসা এবং Forgive বা ক্ষমা। (সূরা আলে ইমরান আয়াত নং ৩১)।
Say: “If you love Allah, then follow me and Allah will love you and forgive your sins.” (Surah Al `Imran: 31)
প্রাসঙ্গিক আলোচনা :-
পবিত্র কুরআনের সূরা জুম’আ আয়াত নং ২ এবং ৩ এর শিক্ষা মতে,
অর্থ- তিনিইনিরক্ষরদের[১] মধ্যে তাদের একজনকে পাঠিয়েছেন রসূলরূপে, যে তাদের নিকট আবৃত্তি করে তাঁর আয়াতসমূহ, তাদেরকে পবিত্র করে এবং শিক্ষা দেয় গ্রন্থ ও প্রজ্ঞা, যদিও ইতিপূর্বে তারা ছিল ঘোর বিভ্রান্তিতে।
শাব্দিক অনুবাদ– ہُوَ তিনি সেই সত্তা الَّذِیۡ যিনি بَعَثَ প্রেরণ করেছেন فِی মধ্যে/মাঝে الۡاُمِّیّٖنَ নিরক্ষরদের/উম্মীদের رَسُوۡلًا একজনকে রাসূল হিসেবে مِّنۡہُمۡ তাদেরই মধ্য থেকে।……… وَّ এবং তিনি প্রেরণ করেছেন اٰخَرِیۡنَ অন্যান্যদের (অনারবদের) মধ্যেও مِنۡہُمۡ তাদের لَمَّا یَلۡحَقُوۡا যারা এখনো মিলিত হয়নি بِہِمۡ ؕ তাদের (আরবের ঐ উম্মী সাহাবীদের) সাথে وَ আর ہُوَ তিনি (আল্লাহ) الۡعَزِیۡزُ পরাক্রমশালী الۡحَکِیۡمُ প্রজ্ঞাময়।
টিকাঃ [১] أُمِّيِّيْنَ (নিরক্ষর) থেকে এমন আরবদেরকে বুঝানো হয়েছে, যাদের অধিকাংশ লেখাপড়া জানত না। এদেরকে বিশেষ করে উল্লেখ করার অর্থ এই নয় যে, রসূল (সা.)-এর রিসালাত অন্যদের জন্য ছিল না। কিন্তু সর্বপ্রথম যেহেতু সম্বোধন তাদেরকেই করা হয়েছে, তাই তাদের উপর ছিল আল্লাহর বেশী অনুগ্রহ।
অর্থ- আর তাদের অন্যান্যদের[২] মধ্যেও (রসূল পাঠিয়েছেন), যারা এখনো তাদের সাথে মিলিত হয়নি। আর আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
টিকাঃ [২] আয়াতে اٰخَرِیۡنَ এর আ’তফ বা সংযোগ হল أُمِّيِّيْنَ এর সাথে এবং উভয়ই যের অবস্থায় বিদ্যমান (ফাতহুল বারী, ইবনু হাজার আসকালানী)। অর্থাৎ, بَعَثَ فِي آخَرِيْنَ مِنْهُمْ আর آخَرِيْنَ বলতে পারসীক এবং অন্যান্য অনারব লোক, যারা কিয়ামত পর্যন্ত রসূল (সা.)-এর উপর ঈমান আনয়ন করবে। কেউ কেউ বলেন, আরব ও অনারবদের সেই সমস্ত লোক, যারা সাহাবাদের যামানার পর কিয়ামত পর্যন্ত আসতে থাকবে। এতে পারস্য, রোম, তুর্কিস্তান, মোগল, কুর্দিস্তান এবং চিন ও ভারত ইত্যাদি দেশের সমস্ত বাসিন্দা (বিশ্ববাসী)রা অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ, রসূল (সা.)-এর নবুওয়ত সবার জন্য। তাই এরা সবাই তাঁর উপর ঈমান আনতে থাকবে। আর ইসলাম গ্রহণ করার পর এরা সবাই مِنْهُمْ (তাদের অন্যান্য) এর দলে শামিল হয়ে যাবে। অর্থাৎ, প্রথম প্রথম ইসলাম গ্রহণকারীরা أُمِّيِّيْن এর অন্তর্ভুক্ত। কেননা, সমস্ত মুসলমান হল একই উম্মত। এই (তাদের) সর্বনামের কারণে কেউ কেউ বলেন, ‘অন্যান্য’ বলতে পরে আগমনকারী আরবদেরকে বুঝানো হয়েছে। কেননা, ‘তাদের’ সর্বনাম দ্বারা (আরব) ‘নিরক্ষরদের’ প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। (ফাতহুল ক্বাদীর, ইমাম আল্লামা শাওকানী রহঃ)।
ইমাম তাবারীও (রহ.) তাফসীরে তাবারী গ্রন্থে লিখেছেন যে,
يقول تعالى ذكره: وهو الذي بعث في الأميين رسولا منهم، وفي آخرين منهم لما يلحقوا بهم، فآخرون في موضع خفض عطفًا على الأميين.
অর্থাৎ আল্লাহ তালার বাণী : ‘তিনি সেই সত্তা যিনি উম্মীদের জন্য তাদেরই মধ্য থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন এবং তাদের অন্যান্যদের জন্যও যারা তাদের সাথে এখনো মিলিত হয়নি’, অতএব آخرين এটি الاميين এর উপর আ’তফ বা সংযোগ হয়ে যের এর স্থলে রয়েছে। (তাফসীরে তাবারী সূরা জুম’আ)।
কিন্তু আহমদী তথা কাদিয়ানীদের এখানে মারাত্মক পর্যায়ের ভ্রান্তিটা হচ্ছে তারা آخَرِيْنَ শব্দকে أُمِّيِّيْنَ এর উপর আ’তফ বা সংযোগ মানেনা। তারা آخرين শব্দকে মাফউল বা কর্ম ধরেই একটি মনগড়া কনসেপ্ট দাঁড় করার চেষ্টা করে থাকে। আর সেই কনসেপ্টটা হচ্ছে, আয়াতটিতে আল্লাহ নাকি و آخَرِيْنَ ‘অন্যান্যদের’ বলে মুহাম্মদ (সা.)-কে বুরুজি রঙে দ্বিতীয়বার পৃথিবীতে প্রেরণ করার সংবাদ দিয়েছেন! নাউযুবিল্লাহ। অথচ آخَرِيْنَ শব্দটি যের এর অবস্থায় রয়েছে এবং সেটি أُمِّيِّيْنَ এর উপর আ’তফ বা সংযোগ। ফলে অর্থ দাঁড়ায় بَعَثَ فِي آخَرِيْنَ مِنْهُمْ তথা আল্লাহ তা’য়ালা উম্মীদের মধ্যে এবং সেই অন্যান্য (অনারব লোক)দের মধ্যে রাসূল প্রেরণ করেছেন, যারা কিয়ামত পর্যন্ত রসূল (সা.)-এর উপর ঈমান আনয়ন করবে। لَمَّا یَلۡحَقُوۡا بِہِمۡ অর্থাৎ যারা এখনো উম্মীদের (আরবদের) সাথে মিলিত হয়নি। সহীহ বুখারী সহ বিভিন্ন বর্ণনায় আয়াতটির ব্যাখ্যায় এসেছে,
لو كان الإيمان عند الثريا لناله رجال او رجل من هؤلاء
অর্থাৎ যদি ঈমান সুরাইয়া নক্ষত্রপুঞ্জের নিকটে থাকত তাহলেও এঁদের (সালমান ফারসীর বংশের দিকে ইংগিত) এক বা কতেক পুরুষ তা অর্জন করত। (বুখারী ৪৮৯৭, সাহাবী আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে)।
অর্থাৎ আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমরা নবী করীম (সা.)-এর কাছে বসেছিলাম। এসময় তাঁর উপর সূরা জুম‘আ অবতীর্ণ হল, যার একটি আয়াত হল- ‘এবং তাদের অন্যান্যের জন্যও যারা এখনও তাদের সাথে মিলিত হয়নি’ (৬২/৩)। তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, তারা কারা? তিনবার জিজ্ঞেস করা সত্ত্বেও তিনি কোনো উত্তর দিলেন না। আমাদের মাঝে সালমান ফারেসী উপস্থিত ছিলেন। রাসূল (সা.) সালমানের উপর হাত রেখে বললেন, ঈমান সুরাইয়া নক্ষত্রপুঞ্জের নিকট থাকলেও এদের কতেক লোক বা কোনো এক ব্যক্তি তা অবশ্যই পেয়ে যেতো’ (বুখারী হা/৪৮৯৭)।
মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে, যদি দ্বীন সুরাইয়া নক্ষত্রপুঞ্জের কাছেও থাকত, তবুও পারস্যের একজন ব্যক্তি তা নিয়ে আসত বা পারস্যের সন্তানদের কেউ কেউ তা পেয়ে যেত’ (মুসলিম হা/২৫৪৬)। সহীহ ইবনু হিব্বান এর বর্ণনায় আরো স্পষ্টভাবে এসেছে যে, রাসূল (সা.) এ সময় সালমানের উরুতে হাত মেরে বললেন, এ ব্যক্তি ও তাঁর জাতি (সহীহ ইবনু হিব্বান হা/৭১২৩)।
হাদীসটির ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনু কাসীর বলেন, অত্র হাদীস দলীল হল এ বিষয়ে যে, রাসূল (সা.) আরব-আ’জমের সকল মানুষের প্রতি প্রেরিত হয়েছিলেন’। ত্বীবী বলেন, জাতি উল্লেখ করে সালমান ফারেসী (রা.)-কে বুঝানো হয়েছে। অথবা এর দ্বারা আরবের বিপরীতে অনারবদের বুঝানো হয়েছে (মিরক্বাত হা/৬২১২-এর ব্যাখ্যা)। যেমন বুখারী, মুসলিম সহ কুতুবে সিত্তাহর মুহাদ্দিসগণ সকলেই অনারব ছিলেন।
অন্যান্য বর্ণনায় এভাবেও এসেছে যে,
وَعَنْهُ قَالَ: كُنَّا عِنْدَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم إِذْ نَزَلَتْ عَلَيْهِ سُورَةُ الْجُمُعَةِ فَلَمَّا قَرَأَ {وَآخَرِينَ مِنْهُمْ لَمَّا يَلْحَقُواْ بِهِمْ} قَالَ رَجُلٌ: مَنْ هؤُلَاءِ الَّذِينَ لَمْ يَلْحَقُوا بِنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ فَلَمْ يُكَلَمْهُ حَتَّى سَأَلَهُ مَرَّتَيْنِ أَوْ ثَلَاثاً. قَالَ: وَفِينَا سَلْمَانُ الْفَارِسِيُّ، فَوَضَعَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَدَهُ عَلَى سَلْمَانَ وَقَالَ: لَوْ كَانَ الْإِيمَانُ عِنْدَ الثُّرَيَّا لَنَالَهُ رِجَالٌ مِنْ هؤُلَاءِ
অর্থাৎ আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমরা নবী করীম (সা.)-এর কাছে বসেছিলাম। এসময় তাঁর উপর সূরা জুম‘আ অবতীর্ণ হল, যার একটি আয়াত হল- ‘এবং তাদের অন্যান্যের জন্যও যারা এখনও তাদের সাথে মিলিত হয়নি’ (৬২/৩)। জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলেন, ‘তারা কারা যারা এখনও তাদের সাথে মিলিত হয়নি’? দু’-তিনবার জিজ্ঞেস করা সত্ত্বেও তিনি কোনো উত্তর দিলেন না। বর্ণনাকারী বললেন, আমাদের মাঝে সালমান ফারেসী উপস্থিত ছিলেন। রাসূল (সা.) সালমানের উপর হাত রেখে বললেন, যদি ঈমান সুরাইয়া নক্ষত্রপুঞ্জের নিকটেও থাকত তবু কিছু লোক তা অবশ্যই পেয়ে যেতো’ (মুসলিম, তিরমিজি)।
বুখারীর ব্যাখ্যাকারক ইমাম আ’ঈনী (রহ.) ‘উমদাতুল ক্বারী’ গ্রন্থে رجال من هؤلاء এর ব্যাখ্যায় লিখেছেন,
(لَنَالَهُ رِجَالٌ مِنْ هَؤُلَاءِ”)؛ أي: الفرس بقرينة سلمان الفارسيّ، وقال الكرمانيّ: أي: الفرس؛ يعني: العجم، وفيه نَظَر لا يخفى، ثم إنهم اختلفوا في:{وَآخَرِينَ مِنْهُمْ} ، فقيل: هم التابعون، وقيل: هم العجم، وقيل: أبناؤهم، وقيل: كل من كان بعد الصحابة، وقال أبو روق: جميع من أسلم إلى يوم القيامة، وقال القرطبيّ: أحسن ما قيل فيهم: أنهم أبناء فارس، بدليل هذا الحديث:”لناله رجال من هؤلاء”، وقد ظهر ذلك بالعيان، فإنهم ظهر فيهم الدين، وكثر فيهم العلماء، وكان وجودهم كذلك دليلًا من أدلة صدقه صلى الله عليه وسلم، قاله في “العمدة”
অর্থাৎ “’এদের অনেক লোক এটি অর্জন করতো’ এ থেকে সালমান ফারসীর প্রতি ইংগিত থাকার কারণে পারস্যের অনেক লোককে বুঝানো উদ্দেশ্য। শারেহে বুখারী ইমাম কিরমানী (রহ.) এর মতে, পারস্য বলে অনারবদের বুঝানো হয়েছে। অত:পর ‘ওয়া আখারীনা মিনহুম’ এর তাৎপর্য নিয়ে মতভেদ হয়ে যায়। কেউ বলেছেন, এ থেকে তাবেয়ীগণ উদ্দেশ্য। কেউ বলেন, অনারবগণ উদ্দেশ্য। কেউ বলেছেন, পারস্যের সন্তানগণ উদ্দেশ্য। কেউ বলেন, সাহাবীদের পরবর্তী সবাই উদ্দেশ্য। আবু রাওক্ব বলেন, কেয়ামত পর্যন্ত আগত সকল মুসলমান উদ্দেশ্য। ইমাম কুরতুবী বলেছেন, উত্তম মতটি হল, পারস্যের পুরুষগণ উদ্দেশ্য। হাদীসের দলীল ‘তাদের মধ্য হতে অনেক পুরুষ তা অর্জন করতো’ অনুসারে। বাস্তবতা তেমনই। নিশ্চয়ই তাদের মাধ্যমেই দ্বীনের প্রচারপ্রসার হয়েছে, বহু উলামায়ে কেরাম তাদের মধ্যে আত্মপ্রকাশ করেছে। এ বাস্তবতাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর (ভবিষ্যৎবাণীকে) সত্য প্রমাণ করেছে।” (উমদাতুল ক্বারী)।
দীর্ঘ আলোচনা হতে স্পষ্টতই বুঝা গেল যে, এতে ভবিষ্যতে সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির আগমনের ভবিষ্যৎবাণী ইংগিতেও করা হয়নি, কথিত বুরুজি মুহাম্মদ এর আগমন হবার কনসেপ্ট তো বহুত দূর কি বাত। বড়জোর সুরাইয়া নক্ষত্রের নিকটে চলে যাওয়া ঈমান বা দ্বীন বা ইলম অর্জন করার কথা বলা হয়েছে। তাও এক বা একাধিক জনের জন্য। ফলে এটি সাহাবী সালমান ফারসী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু’র বংশের ফযিলত বর্ণনা করাই হল। নতুবা ইমাম সুয়ূতী (রহ.) সহ বহু যুগ বিখ্যাত ইমাম লিখে যেতেন না যে, সেই পুরুষদের মধ্যে অন্যতম ইমাম আবূ হানীফা (রহ.)। বলাবাহুল্য যে, রাদ্দুল মুহতারে ইমাম ইবনুল আবেদীন শামী (রহ.), তাবয়িদুস সহীফা গ্রন্থের ’তাবশীরুন নবী’ অধ্যায়ে ইমাম সুয়ূতী (রহ) এবং খায়রাতুল হিসান গ্রন্থে ইমাম ইবনু হাজার আল হায়তামী (রহ.) প্রমুখ এ মর্মে বলে গেছেন যে, এ হাদীস দ্বারা ইমাম আবু হানীফা (রহ.)-এর ব্যাপারে সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে (রাদ্দুল মুহতার ১/৫৩)।
সে যাইহোক, হুবহু কথাটির ন্যায় কুরআনেও আল্লাহ বলেছেন,
অর্থাৎ যদি আসমান যমীনে আল্লাহ ব্যতীত বহু ইলাহ থাকত তাহলে উভয়ই ধ্বংস হয়ে যেত। সুতরাং তারা যা বলে আরশের রব তা থেকে পবিত্র। (সূরা আম্বিয়া আয়াত ২২)।
এখন এর মানে আসমান এবং যমীনে সত্যিকারের বহু ইলাহ বিদ্যমান থাকা জরুরি নয়। এটি কথার কথা। জ্ঞানীদের নিশ্চয়ই বুঝার বাকি থাকেনি যে, অনুরূপ সুরাইয়া নক্ষত্রের নিকটে ঈমান প্রকৃতপক্ষে চলেই যাবে, বিষয়টিও জরুরি নয়। বরং সেটিও সূরা আম্বিয়ার ২২ নং আয়াতের ‘যদি আসমান যমীনে বহু ইলাহ থাকত’ এরই ন্যায় কথার কথা মাত্র। আর এগুলো ভাষার অলংকার। যার বাস্তব প্রতিফলন জরুরি নয়। কিন্তু কাদিয়ানীরা তো আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে সূরা জুমার و آخرين منهم (ওয়া আখারীনা মিনহুম) এর অপব্যাখ্যা দিয়ে মুহাম্মদ (সা.) এর দ্বিতীয় আধ্যাত্মিক আগমন অর্থাৎ তথাকথিত বুরুজি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কনসেপ্ট দাঁড় করার চেষ্টায় মরিয়া। মূলত কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা মির্যা গোলাম আহমদ সুরা জুম’আ এর অত্র আয়াতের চরম অপব্যাখ্যা থেকেই নিজের সত্তাকে কথিত বুরুজি মুহাম্মদ বলে দাবী করার প্রয়াস পায়। যা ছিল সম্পূর্ণ উদ্ভট দাবী ও বাতিল দর্শন। সত্যের সাথে যার লেশমাত্র সম্পর্কও নেই। ফলে এ গোষ্ঠীটির পুরো বুরুজি কনসেপ্টটাই ভ্রান্ত ও ব্যাকরণ-বিরুদ্ধ। পবিত্র কুরআনে মারাত্মক বিকৃতি সাধন বৈ নয়।
আল্লাহ! তুমি প্রকৃত সত্যানুসন্ধানীকে সুবোধ দান কর।
মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর রচিত “আরবা’ঈন” বইটি থেকে আজ আরেকটি উদ্ধৃতি এখানে কোড করছি,
মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর জন্ম ভারতে। ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের গুরুদাস পুর জেলার ‘কাদিয়ান’ নামক গ্রামে ১৮৩৯ বা ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে। তখন পুরনো ভারত সহ গোটা উপমহাদেশ ছিল সাম্রাজ্যবাদ ব্রিটিশ সরকারের শাসনের অধীনে। মির্যা গোলাম কাদিয়ানী শুরুতেই নবুওয়তের দাবী করেনি। তবে তার প্রথমদিকের দাবীগুলোর ফাঁকে ফাঁকে ভবিষ্যতে তার নবুওয়ত দাবী করতে পারে এমন ইংগিত বেশ জোরেশোরে দেয়া হয়েছিল। তার অন্ধভক্ত কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের লোকেরা যখন শুনেন যে, মির্যা সাহেব মসীহ এবং ইমাম মাহদী, জিল্লি (ছায়া) নবী ইত্যাদি দাবী করেই বসে থাকেনি, বরং নিজেকে বুরুজি মুহাম্মদ, হুবহু মুহাম্মাদূর রাসূলুল্লাহ হবার-ও দাবী করেছিল। তখন বিশাল আকাশটা যেন তাদের মাথার উপর পড়লো, এমন অবস্থা তাদের মধ্যে সৃষ্টি হয়ে যায়। তারা বিশ্বাসই করতে চায় না যে, সে এধরণের কোনো কিছু দাবী করে লিখে যেতে পারে!
শুধু তাই না, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী নিজেকে প্রকৃতপক্ষে একজন নতুন শরীয়তবাহক রাসূল বলেও দাবী করে লিখে গেছেন। কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের লোকেরা একথাও বিশ্বাস করতে চায় না। তারা চোখ কপালে তুলে বলে, আরে না না; এসব মোল্লা মুন্সীদের মিথ্যাচার! মির্যা সাহেব কখনোই এমন দাবী করতে পারেন না। আজ তাই তাদেরই প্রকাশিত ও মির্যা সাহেবের রচিত ‘আরবা’ঈন’ গ্রন্থের বাংলায় অনূদিত কপি থেকে এখানে ছোট্ট একটা রেফারেন্স সহ উল্লেখ করতে চাচ্ছি। নিচে প্রামাণ্য স্ক্যানকপিও তুলে দিচ্ছি। যাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহের কোনো অবকাশ না থাকে। আসুন, সর্বপ্রথম মির্যা কাদিয়ানী সাহেবের রচনা উর্দূ বইটি থেকেই উর্দূ অংশটি তুলে ধরা যাক,
ما سوا اس کے یہ بھی تو سمجھو کہ شریعت کیا چیز ہے جس نے اپنی وحی کے ذریعہ سے چند امر اور نہی بیان کیئے اور اپنی امت کے لیے ایک قانون مقرر کیا وہی صاحب الشریعت ہو گیا۔ پس اس تعریف کے رو سے بھی ہمارے مخالف ملزم ہیں کیونکہ میرے وحی میں امر بھی ہیں اور نہی بھی۔
উচ্চারণ – মা সেওয়া উস কে ইয়ে ভি তু সমঝো কে শরিয়ত কেয়া চিজ হে জিস নে আফনি ওহি কে জরি’য়া চে চন্দ আমর ওর নাহি বয়ান কিয়ে ওর আফনি উম্মত কে-লিয়ে এক কানুন মুকাররর কিয়া, অ-হি ছাহিবুশ শরিয়ত হো গিয়া। ফস ইস তারিফ কি রো চে ভি হামারে মুখালিফ মুলজিম হেঁ। কিঁউকে হামারে ওহি মে আমর ভি হেঁ ওর নাহি ভি।
অর্থাৎ এ ছাড়া এটিও তো চিন্তা কর শরীয়ত কী বিষয়? যিনি নিজের ওহীর মাধ্যমে কতক আদেশ ও নিষেধ গণনা করেন আর স্বীয় উম্মতের জন্য নিয়ম-কানুন নির্ধারণ করেন তিনি শরীয়ত বাহকও হয়ে যান। সুতরাং এ সংজ্ঞার দৃষ্টিকোণ থেকেও আমাদের বিরোধীরা অভিযুক্ত, কেননা আমার ওহীতে আদেশ-নিষেধ উভয়ই আছে।
উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.)-এর বিবাহের সঠিক বয়স সম্পর্কে,
প্রশ্ন : উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা এর বিয়ে কত বছর বয়সে হয়েছিল?
উত্তর : হযরত আয়েশা (রা.) এর জন্ম হয়েছিল রাসূল (সা.) নবুওয়ত লাভ করার ৫ বছর পূর্বে ও ৬০৪ খ্রিস্টাব্দে এবং বিয়ে হয় দ্বিতীয় হিজরী সনে বদর যুদ্ধের পর শাওয়াল মাসে অর্থাৎ ৬২৩-৬২৪ খ্রিষ্টাব্দে।
সহীহ বুখারীতে এসেছে, আল কোরআনের ৫৪ তম অধ্যায় নাযিলকালে আয়েশা (রা.) একজন কিশোরী (جارية) বয়স্কা ছিলেন। যেমন হযরত আয়েশা (রা.) বলেন,
অর্থাৎ কোনো মেয়ে যখন নয় বছর বয়সে উপনীত হয়, সে তখন জারিয়াহ (কিশোরী) হয়ে যায়। (জামে তিরমিযি হাদীস ১১০৯)।
এবার দেখা যাবে যে,
সর্বসম্মত মুসলিম স্কলারদের মতে ৫৪তম উক্ত অধ্যায় (সূরা আল-ক্বমর) নাযিল হয় মক্কায় মুশরিকদের একটি প্রশ্নের জবাবে (সহীহ মুসলিম)। আনুমানিক ৬১৫ খৃষ্টাব্দের দিকে (তাফসিরে কুরতুবী, সূরা ক্বমার আয়াত নং ২৪ দ্রষ্টব্য)। অর্থাৎ সূরা আত-ত্বরিক আর সূরা ছোয়াদ নাযিলের পর নবুওয়তের পঞ্চমবর্ষে। রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) নিজেও বলেছেন,
قال ابن عباس: كان بين نزول هذه الآية وبين بدر سبع سنين؛ فالآية على هذا مكية. وفي البخاري عن عائشة أم المؤمنين رضى الله عنها قالت: لقد أنزل على محمد صلى الله عليه وسلم بمكة وإني لجارية ألعب
অর্থাৎ বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হওয়া আর এই সূরাটি নাযিল হওয়া উভয়ের মধ্যখানে সাত (৭) বছরের তফাৎ রয়েছে। আর এই ক্ষেত্রে আয়াতটি মক্কায় নাযিল হয়। এবং বুখারীতে এসেছে যে, উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত আছে, আয়াতটি যখন মক্কায় নাযিল হয় তখন আমি কিশোরী ছিলাম, খেলা করতাম।
শেষকথা– দীর্ঘ তথ্য উপাত্ত হতে পরিষ্কার সাব্যস্ত হচ্ছে যে, হযরত আয়েশা (রা.) ৬১৫ খ্রিস্টাব্দেও ৯ বছর বয়সের একজন কিশোরী ছিলেন। আর যখন ৬২৩ বা ৬২৪ সালে উনার বিবাহ হয় তখন উনি ১৭-১৮ বছরের তরুণী ছিলেন। কাজেই ৬ বছর বয়সে বিবাহ সংক্রান্ত বর্ণনাটি শাজ ও মারজূ।
শাজ হাদীস সম্পর্কে হাফেয ইবনু হাজার আসকালানী রাহিমাহুল্লাহ্ বলেছেন,
“مخالفة المقبول لمن هو أولى منه” (النزهة:صـ٩٨ )
অর্থাৎ মাকবুল রাবীর তার চেয়ে উত্তম রাবীর বিরোধিতা করা শাজ”। এখানে মাকবুল দ্বারা উদ্দেশ্য সহীহ ও হাসান হাদীসের রাবী আর উত্তম দ্বারা উদ্দেশ্য এক বা একাধিক সেকাহ রাবী। অর্থাৎ মাকবুল রাবী একাধিক মাকবুল কিংবা অধিক সেকাহ রাবীর বিরোধিতা করলে তার হাদীস শাজ। (আন-নুযহাহ পৃ. ৯৮)।
আব্দুল্লাহ কাশ্মীরীর তদন্ত রিপোর্ট পালটে দেয়ার ঐতিহাসিক মির্যায়ী নামা
কাশ্মীরের খান ইয়ার মহল্লায় সমাহিত ইউজ আসেফ নামীয় এক ব্যক্তির “কবর” সম্পর্কে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে সেখানে পাঠানো হয়েছিল আব্দুল্লাহ কাশ্মীরীকে। যিনি মির্যা কাদিয়ানীর একজন খাস শিষ্য ও এডুকেটেড পার্সোন এবং একজন মওলভী ও উকিল ছিলেন। কাশ্মীর শ্রীনগর হাইকোর্টে ‘ওকালতি’ তার পেশা ছিল।
তিনি দীর্ঘ তদন্ত শেষে উক্ত কবর সম্পর্কে পর্যাপ্ত রিপোর্ট জমা দেন। মির্যা কাদিয়ানী তার উক্ত রিপোর্ট বিকৃত করেন এবং নিজ থেকে মনগড়া বেশকিছু কথা যুক্ত করে “আল হুদা” নামক একটি বইও রচনা করে ফেলেন এবং দুনিয়াব্যাপী তা প্রচার করতে শুরু করেন।
তিনি আব্দুল্লাহ কাশ্মীরীর তদন্ত রিপোর্টের আলোকে প্রচার করলেন,
ইউজে আসেফ একজন পর্যটক নবী এবং ইসরাইলী ছিলেন। কাশ্মীরের প্রাচীনতম ঐতিহাসিক সুত্র দ্বারাও সাব্যস্ত যে, এই কবর একজন ইসরাইলী নবীর কবর। স্থানীয়রাও একথার সাক্ষী, বরং সেখানকার স্থানীয় হাজার হাজার মানুষ এ কথার সাক্ষী দিচ্ছেন।
আব্দুল্লাহ কাশ্মীরীর প্রতিবাদঃ
আব্দুল্লাহ উকিল কাশ্মীরী সাহেব মির্যা কাদিয়ানীর জালিয়াতির প্রতিবাদ করে ‘শু’লাতুন নার ফী মাক্ববেরায়ে খানইয়ার’ নাম দিয়ে একটি বইও রচনা করেন। বইটিতে তিনি জোরগলায় প্রতিবাদ করেন এভাবে যে,
پس خان یار کے مقبرے کے متعلق ان باتوں میں سے کوئی بات میرے خط میں موجود نہیں۔ جو خط میں نے حضرت مرزا صاحب کو لکھا اور جس کو انہوں نے شائع کر دیا اور نہ کوئی بات مطابق واقعہ ہے بلکہ یہ تمام باتیں حضرت مرزا صاحب نے اپنی خیال سے ایجاد کر کے بڑے زور کے ساتھ دنیا میں شائع کر دی
অর্থ- “অতএব খান ইয়ার মহল্লার সমাধি সম্পর্কে এ সবের কিছুই আমার চিঠিতে নেই। হযরত মির্যা সাহেবকে আমি যে চিঠি লিখেছিলাম এবং যা তিনি প্রকাশ করেছেন তার কোনোটিই বাস্তব সম্মত নয়, বরং এর সবই হযরত মির্যা সাহেবের মনগড়া সৃষ্টি, যা সারা বিশ্বে প্রবল শক্তির সাথে তিনি প্রচার করেছেন।” (শু’লাতুন নার ফী মাক্ববেরায়ে খানইয়ার, আব্দুল্লাহ উকিল কাশ্মীরী)।
প্রামাণ্য স্ক্যানকপি
উল্লেখ্য, উক্ত ঘটনার পরপরেই মির্যা কাদিয়ানীর উপর আব্দুল্লাহ কাশ্মীরী আর আস্থা রাখতে পারলেন না। তিনি বেরিয়ে গেলেন মির্যায়ী বাইয়েত থেকে। যোগ দিলেন অন্য আরেক মসীহ দাবীদার বাহাউল্লাহ ইরানীর (১৮১৭-১৮৯২ইং) ‘বাহায়ী জামাতে’। কিন্তু আফসোস, কাদিয়ানী নেতারা আব্দুল্লাহ কাশ্মীরীর মির্যার বাইয়েত ভঙ্গ করার অন্তর্নিহিত কারণ প্রকাশ করে না।
মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (১৮৪০-১৯০৮ ইং)-এর কলম থেকে ব্রিটিশ রাণী ভিক্টোরিয়াকে পত্র প্রদান –
কাদিয়ানী সাহেব ১৮৯৮ সালের দিকে কোনো এক প্রেক্ষিতে তৎকালীন ভারত সম্রাজ্ঞী ও ব্রিটিশ রাণী আলেকজান্ড্রিনা ভিক্টোরিয়া বরাবর নিজেকে কিংবা নিজের প্রতিষ্ঠিত “জামাত” সম্পর্কে পত্রে লিখেছেন,
اس خودکشتہ پودہ کی نسبت نہایت حزم اور احتیاط اور تحقیق اور توجہ سے کام لے اور اپنے ماتحت حکام کو اشارہ فرمائے کہ وہ بھی اس خاندان کے ثابت شدہ وفاداری اور اخلاص کا لحاظ رکھ کر مجھے اور میرے جماعت کو ایک خاص عنایت اور مہربانی کی نظر سے دیکھے ۔ ہمارے خاندان نے سرکار انگریزی کی راہ میں اپنے خون بہانے اور جان دینے سے فرق نہیں کیا اور نہ اب فرق ہے۔ لہذا ہمارا حق ہے کہ ہم خدمت گزشتہ کے لحاظ سے سرکار دولتمدار کی پوری عنایت اور خصوصیت توجہ کی درخواست کریں تا ہر یک شخص بیوجہ ہمارے آبروریزی کے لیے دلیری نہ کر سکے اب کسی قدر اپنی جماعت کے نام ذیل میں لکھتا ہوں۔
“নিজেদের হাতে রোপিত এই চারাগাছটির ব্যাপারে খুব সতর্কতা ও অনুসন্ধানের সাথে অগ্রসর হবেন এবং আপনার অধীনস্তদের বলবেন তারা যেন এই পরিবারের ত্যাগ ও নিষ্ঠার কথা মনে করে আমার এবং আমার জামাতের প্রতি সদয় দৃষ্টি জ্ঞাপন করে। আমাদের পরিবার ইংরেজ সরকারের কল্যাণে নিজেদের খুন বইয়ে দিতে ও জীবন দিতেও দ্বিধা করেনি আর না এখনো দ্বিধা করছে। অতএব, আমাদের অতীতের পরিষেবার প্রেক্ষিতে সরকারের পূর্ণ অনুগ্রহ এবং বিশেষ মনোযোগের অনুরোধ করার অধিকার রয়েছে, যাতে আমাদের সুনামের জন্য কেউই (কোনো বিরুদ্ধবাদী আমাদের বিরুদ্ধে ইন্ধনদানে) দুঃসাহসী হয়ে উঠতে না পারে। এখন আমি নিচে আমার জামাতের নাম লিখছি।” (মাজমু’আয়ে ইশতিহারাত ৩/২১-২২; নতুন এডিশন)। প্রামাণ্য স্ক্যানকপি নিচে দেয়া হল
মির্যা কাদিয়ানী সাহেব কোনো রাখঢাক ছাড়াই লিখলেন خود کاشتہ پودا (খোদ কাস্তা পুদা) অর্থাৎ ‘নিজেদের হাতে রোপিত চারাগাছ’। আমি মির্যার উপরের কথার ব্যাখ্যা জানতে চেয়ে কাদিয়ানীদের প্রকাশিত ‘হান্ড্রেট এলিগেশন’ নামীয় একটি লিখায় দেখলাম, তারা লিখেছে,
মির্যা সাহেব তার ‘খোদ কাস্তা পুদা’ বলে “আহমদীয়া কমিউনিটি” বা “তার নিজের” সম্পর্কে উদ্দেশ্য নেননি, বরং তিনি তার পরিবার পরিজনকেই উদ্দেশ্য নিয়েছেন। মির্যা সাহেব বুঝাতে চেয়েছিলেন যে, তার পরিবার পরিজন ব্রিটিশ সরকারের একান্ত খায়েরখাঁ বা কল্যাণকামী।
কিন্তু তাদের উক্ত ধারণাটি মোটেও সঠিক নয়, বরং সত্য গোপন করার নিকৃষ্ট প্রয়াস। কেননা, মির্যা পত্রটি লিখেছিলেন মূলত তার প্রতিষ্ঠিত “আহমদীয়া কমিউনিটি” বা “কাদিয়ানী মতের অনুসারী” দলটির প্রতি রাষ্ট্রের পক্ষ হতে সার্বিক সহযোগিতা এবং সমর্থন চেয়ে। একজন উর্দূ ভাষী উপরের আংশিক উদ্ধৃতিটির আরও উপর থেকে পড়ে দেখলেই বিষয়টি একদম পরিষ্কার হয়ে যাবে। আমি এজন্যই মির্যা গোলাম আহমদ এর ৩ খন্ডে প্রকাশিত উর্দূ রচনা “মাজমু’আয়ে ইশতিহারাত” এর ৩ নম্বর খন্ড থেকে ২১ এবং ২২ নম্বর পৃষ্ঠা দুটি এখানে তুলে ধরছি। যাতে কেউই আমার লিখাটিকে ভিত্তিহীন বা পক্ষপাতমূলক আখ্যা দিতে না পারে।
কী প্রমাণিত হল?
উত্তর, আহমদীয়া বা কাদিয়ানী কমিউনিটি স্বঘোষিত ভাবেই “ব্রিটিশ সৃষ্ট” একটি ফেইক মুসলিম কমিউনিটি। যাদের ধর্মবিশ্বাস কুরআন সুন্নাহ পরিপন্থী মনগড়া ব্যাখ্যাসাপেক্ষ। ইসলামের অথেনটিক শিক্ষা ও চরিত্রের বিপরীতে সম্পূর্ণ নতুন একটি শিক্ষা ও চরিত্র। যাদের বিশ্বাস হচ্ছে, নবুওয়তের দ্বার বন্ধ হয়নি, ফলে মির্যা গোলাম কাদিয়ানী একজন নবী ও রাসূল (নাউযুবিল্লাহ)। যারা তাকে স্বীকার করবেনা কিংবা যারা তার নামও শুনেনি প্রত্যেকে পাক্কা কাফের ও জাহান্নামী।
নবুওয়ত দাবী করার ডজন খানেক ডকুমেন্টারি প্রমাণ এখানে ক্লিক
প্রশ্ন হতে পারে যে, কেউ কি নিজকে বা নিজের দলকে এভাবে প্রকাশ্যে “ব্রিটিশ সরকারের রোপিত চারাগাছ” বলে লিখতে পারে?
উত্তরে বলব, মির্যা কাদিয়ানীর নিকট তা অবশ্যই সম্ভব ছিল। কারণ সে ব্রিটিশ সরকারের দৃশ্যমান অপরাজেয় শক্তি ও দাপট দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যায়। ফলে তার দৃঢ় বিশ্বাস হয়ে উঠেছিল যে, ব্রিটিশ সরকারের এ ক্ষমতা, প্রতিপত্তি ও দাপট আজীবনের জন্য প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেছে, কখনো তার পতন হবেনা। কাজেই তার এধরনের লিখনী ভবিষ্যতেও কোনো বিপদের কারণ হবেনা।
বলে রাখা জরুরি যে, মির্যা কাদিয়ানীর পরদাদা মির্যা গুল মুহাম্মদ এবং দাদা মির্যা আতা মুহাম্মদ তারপর পিতা মির্যা গোলাম মর্তুজা শিখদের দ্বারা পাঞ্জাবে অনেক নিপীড়নের সম্মুখীন হয়, জমিজমা হারায়। কিন্তু পাঞ্জাবের মহারাজা রণজিৎ সিং এর রাজত্বের শেষের দিকে ব্রিটিশ সরকার তার পিতা মির্যা গোলাম মর্তুজাকে তাদের হারানো ৫ টি গ্রামের পূর্ণ জমিদারী পুনরায় উদ্ধার করে দেয়।
জাগতিক এ স্বার্থসিদ্ধির শোকরগুজার হিসেবে তাদের প্রত্যেকেই ছিলেন বংশপরম্পরায় ব্রিটিশ সরকারের একান্ত অনুগত ও জীবন উৎসর্গকারী। ১৮৫৭ সালে ব্রিটিশ সরকারের সাহায্যে মির্যা গোলাম মর্তুজা ৫০টি সশস্ত্র ঘোড় সওয়ার পাঠিয়েছিলো। যারা সে সময় ব্রিটিশ সরকারের পক্ষে জীবন-মরণ যুদ্ধ করেছিলো। মির্যা কাদিয়ানী এ ইতিহাস নিজেই তার রচনা ‘কিতাবুল বারিয়্যাহ’ পুস্তকে লিখে গেছেন। তার রচনাসমগ্র রূহানী খাযায়েন খন্ড নং ১৩ পৃষ্ঠা নং ৪-৬ দেখুন।
কিন্তু আফসোস! মির্যা কাদিয়ানীর বর্তমান অধিকাংশ অনুসারীই মির্যা গোলাম আহমদের পরিবারের দেশের আযাদী আন্দোলনের সাথে গাদ্দারী ইতিহাস জানেনা। যাদের ইতিহাসটাই “গাদ্দারী” ইতিহাস, তারা কিভাবে তাদের সেই বিদেশী প্রভুদের বিরুদ্ধে কথা বলবে, কিভাবে নিজ মাতৃভূমির সার্বভৌমত্বের পক্ষে দাঁড়াতে পারে তা অন্তত আমার হিসেবে মিলেনা।
অর্থাৎ “শয়তানরা তাদের বন্ধুদের নিকট ওহী করে (তথা প্ররোচনা দেয়), যাতে তারা তোমাদের সাথে ঝগড়াবিবাদ করে। আর যদি তোমরা তাদের আনুগত্য করো তবে নিশ্চয়ই তোমরা মুশরিক।”
– সূরা আন’আম ১২১
প্রশ্ন করতে পারেন যে, মির্যা কাদিয়ানী মিথ্যাবাদী ছিল, আপনি কি প্রমাণ করতে পারবেন?
উত্তরে বলা হবে যে, জ্বী হ্যাঁ। অবশ্যই তা প্রমাণ করতে পারব, ইনশাআল্লাহ। একজন সত্যের সন্ধানী মানুষের জন্য এ একটি উদাহরণই যথেষ্ট। পড়তে ক্লিক করুন।
যাইহোক, এবার আপনাকে দেখাতে চাই যে, মির্যা কাদিয়ানী নিজেও শয়তানী ওহী ইলহাম এর কনসেপ্ট স্বীকার করতেন। এ যেমন তিনি লিখেছেন,
یاد رہے کہ وہ کاہن جو عرب میں آنحضرت صلی اللہ علیہ وسلم کے ظہور سے پہلے بکثرت تھے ان لوگوں کو بکثرت شیطانی الہام ہوتے تھے اور بعض وقت وہ پیشگوئیاں بھی الہام کی ذریعے سے کیا کرتے تھے اور تعجب یہ ہیں کہ ان کی بعض پیشگوئیاں سچی بھی ہوتی تھیں۔
অর্থাৎ “স্মরণ রাখবে যে, রাসূল (সা.)-এর আত্মপ্রকাশের পূর্বে আরবে অধিক সংখ্যক গণক ছিলো। তাদেরও বহু পরিমাণে শয়তানী ইলহাম হত। কোনো কোনো সময় তারা ইলহামের মাধ্যমে ভবিষ্যৎবাণী করতো আবার তাদের কিছু কিছু ভবিষ্যৎবাণী সত্যও হতো।” (জরুরাতুল ইমাম, রূহানী খাযায়েন ১৩/৪৮৮)।
শায়খ আলবানী সাহেবের একটি গলদ ইজতিহাদ ও তার পর্যালোচনা
প্রশ্ন : শায়খ নাসিরুদ্দিন আলবানী ইমাম আবূ হানীফাহ (রহ.)-এর দুর্বল হওয়ার পক্ষে ‘তাকরীবুত তাহযীব’ গ্রন্থের রেফারেন্স উল্লেখ করে বলেছেন, হাফেয ইবনে হাজার ‘তাকরীবুত তাহযীব’ গ্রন্থে ইমাম আবূ হানীফাহ’র ব্যাপারে শুধু বলেছেন ‘তিনি একজন সুপ্রসিদ্ধ ফকীহ’ আর কিছু উল্লেখ করেনি! (এটা তাঁর দুর্বল হবার প্রমাণ) [সিলসিলাহ য‘ঈফাহ: ৫৭২]। এর কী জবাব?
জবাব : এমন কথা সেই বলতে পারে যে ‘তাকরীবুত তাহযীব’ গ্রন্থটি রচিত হওয়ার কারণ ও এ গ্রন্থটির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আদৌ জানে না!
হাফেজ ইবনে হাজার (রহ.) রচিত ‘তাকরীবুত তাহযীব’ গ্রন্থটি হল তাঁরই রচিত আরেকটি প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘তাহযীবুত তাহযীব’ গ্রন্থের সংক্ষিপ্ত রূপ! এই ‘তাহযীবুত তাহযীব’ গ্রন্থটি হল আবার হাফেজ মিযযী রচিত ‘তাহযীবুল কামাল’ গ্রন্থের সংক্ষিপ্ত রূপ। আর হাফেয মিযযী রচিত ‘তাহযীবুল কামাল’ গ্রন্থটি হল হাফেজ মাকদীসী রচিত ‘আল-কামাল ফী আসমাইর রিজাল’ গ্রন্থের সংক্ষিপ্ত রূপ। আর ‘আল-কামাল ফী আসমাইর রিজাল’ গ্রন্থটি হলো, সুপ্রসিদ্ধ ছয়টি গ্রন্থ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সংকলিত রূপ এবং বুখারী রচিত ‘তারীখ’ ও ইবনে আবী হাতিমের ‘আল-জারহু ওয়াত-তা’দীল’ এবং ইবনে মা‘ঈন ও তার সাথি-সঙ্গী এবং তাঁর মত অন্যান্য ইমামদের রচিত কিতাবসমূহের সারনির্যাস।
অর্থাৎ তাকরীবুত তাহযীব গ্রন্থটি হলো, সংক্ষিপ্ত এর সংক্ষিপ্ত এর সংক্ষিপ্ত এর সংক্ষিপ্ত রূপ; তথা এক্সট্রিম কম্প্রেসড ফাইল— যা কয়েক ধাপে সংকুচিত হয়েছে।
এই গ্রন্থটি রচনার ব্যাপারে ইবনে হাজার নিজেই বলেন, “বিশেষজ্ঞ ছাত্রদের কাছে তাহযীবুত তাহযীব কিতাবটি ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে, কিন্তু এটি মূল কিতাবের এক তৃতীয়াংশ ছাড়িয়ে যাওয়ায় দীর্ঘ হয়ে গেছে। তাই আমার কিছু ভাই আমাকে শুধু রাবীদের নামগুলো আলাদা করতে অনুরোধ করেন। কিন্তু আমি এটি পছন্দ করিনি। কারণ, এই শাস্ত্রের ছাত্রদের জন্য শুধু রাবীদের নাম আলাদা করার উপকারিতা কম। পরে আমি তাদের ইচ্ছা পূরণ করতে মনস্থ করি এবং গ্ৰন্থটিকে এমনভাবে সংক্ষিপ্ত করি যাতে তাদের উদ্দেশ্যও অর্জিত হয় এবং কাঙ্খিত উপকারিতাও আরো বেশি বৃদ্ধি পায়। আর তা হলো, আমি প্রত্যেক রাবী সম্পর্কে সংক্ষিপ্ততম বাক্যে এবং স্পষ্টতম ইঙ্গিতে (সবচেয়ে সুপরিচিত পদবী কিংবা গুণ উল্লেখ করে) এমন একটি (পূর্ণাঙ্গ) রায় দিয়েছি, যা তাদের সম্পর্কে বলা সবচেয়ে সঠিক কথা এবং তাদের সম্পর্কে করা সবচেয়ে ন্যায়সঙ্গত উক্তি। (আর খেয়াল রেখেছি) যাতে প্রতিটি রাবীর আলোচনা সাধারণত এক লাইনের বেশি না হয়।” [ভূমিকা: তাকরীবুত তাহযীব]
প্রিয় পাঠক, উপরের আলোচনা থেকে জানা গেল, মূলত এই গ্রন্থ রচনার উদ্দেশ্য রাবীদের সুবিস্তৃত ইতিহাস জানানো নয় বরং রাবীদেরকে অতি সংক্ষেপে সঠিকভাবে চিহ্নিত করাই এই গ্রন্থ রচনার উদ্দেশ্য। যার কারণে ইবনে হাজার গ্রন্থটি রচনা করার সময়ই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, সাধারণভাবে তিনি প্রতিটি রাবীর আলোচনা এক লাইনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখবেন। আর রাবী সম্পর্কে সে কথাটাই তিনি উল্লেখ করবেন যা তার সম্পর্কে বলা সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ ও ন্যায়সঙ্গত হবে। বিশেষ করে হাদীসের ছাত্ররা যেন এই এক লাইনের সুসংক্ষিপ্ত মন্তব্যের মাধ্যমেই তাকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়।
ফলে এই সুসংক্ষিপ্ত গ্রন্থ ‘তাকরীবুত তাহযীব’ এর মধ্যে ইমাম আবূ হানীফাহ’র সম্পর্কে শুধু এ কথা বলাটাই সবচেয়ে সঠিক ও ন্যায়সঙ্গত ছিল যে, ‘তিনি একজন সুপ্রসিদ্ধ ফকীহ’! কারণ, ‘আবূ হানীফাহ’ নামে একাধিক রাবী আছে! এই কারণে তিনি তাঁর নামের সাথে ‘সুপ্রসিদ্ধ ফকীহ’ যুক্ত করে দিয়েছেন যাতে করে এক কথাতেই তার পরিচিতি জানা যায়! তাছাড়া ইমাম আবূ হানীফাহ’র পরিচিতির জন্য এর চেয়ে বড় পরিচয় এর কোনো প্রয়োজনও নেই। মূলত ‘সুপ্রসিদ্ধ ফকীহ’ বাক্যটাই তাঁর সবচেয়ে বড় পরিচয়! এ কারণেই তিনি এই বাক্যটিকেই বেছে নিয়েছেন।
সুতরাং আলবানীর মত লোকেরা যদি বলে যে, হাফেয ইবনে হাজার ’তাকরীবুত তাহযীব’ গ্রন্থে ইমাম আবূ হানীফাহ’র ব্যাপারে ‘সুপ্রসিদ্ধ ফকীহ’ বলেই ক্ষান্ত ছিলেন, যা তার দুর্বল হওয়ার প্রমাণ! তাহলে এটা তার অল্পবিদ্যার বহিঃপ্রকাশই মাত্র!
অথচ ইবনে হাজার রহ. তাঁর অন্যান্য গ্রন্থে ইমাম আবূ হানীফাহ’র ভরপুর প্রশংসা করেছেন এবং সুবিস্তৃত আলোচনা করেছেন! এবং তিনি তার ভালো বিষয় ছাড়া অন্য কোন বিষয় মোটেই উল্লেখ করেননি।
যেমন তিনি তাঁর ‘তাহযীবুত তাহযীব’ গ্রন্থে পৃষ্ঠাব্যাপী ইমাম আবূ হানীফাহ’র সুবিস্তৃত আলোচনা ও গুণাবলী উল্লেখ করার পর নিজস্ব বক্তব্য প্রদান করেন যে,
مناقب الإمام أبي حنيفة كثيرة جدًّا؛ فرضِيَ الله تعالى عنه، وأسكنه الفردوسَ، آمين
আবূ হানীফাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর গুণাবলী ‘কাছীরাতুন জিদ্দান’! তথা তিনি অগণিত গুণাবলীর অধিকারী ছিলেন। আল্লাহ তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হোন। তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউছে স্থান দিন। আমীন। [তাহযীবুত তাহযীব: ৫/৬৩১]
শুধু এই না, ইবনু হাজার আসকালানীর দৃষ্টিতে ইমাম আবূ হানীফাহ (রহ.) এর ব্যাপারে অন্যদের জারহ গ্রহণযোগ্যও নয়। এ কারণেই যখন তাঁকে তাঁর ছাত্র হাফিয সাখাবী (রহ.) জিজ্ঞেস করলেন, “নাসাঈ ইমাম আবূ হানীফাহ’র ব্যাপারে বলেছেন যে, তিনি হাদীসে শক্তিশালী নন”। এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী, তা কি আদৌ সঠিক?
উত্তরে ইবনু হাজার (রহ.) বললেন, “নাসাঈ যা বলেছেন, তা তাঁর বাহ্যিক জ্ঞান ও নিজস্ব ইজতিহাদ অনুযায়ী বলেছেন। মনে রেখো, প্রত্যেক ব্যক্তির প্রত্যেক কথাই মেনে নেওয়া হবে ব্যাপারটা এমন নয় (অর্থাৎ ইমাম আবূ হানীফাহ-কে নাসাঈর দুর্বল বলাটা গ্রহণযোগ্য নয়)।
এরপর তিনি আরো বলেন, “প্রথমে তাঁর ব্যাপারে এমনটা বলা হলেও পরবর্তীতে নাসাঈ ও পরবর্তীকালের ইমামগণ ঐসব কথা থেকে ফিরেও এসেছেন। কারণ, তাঁরা দেখলেন যে, ইমাম আবূ হানীফাহ (রহ.) শ্রবণের পর থেকে হুবহু মুখস্থ রাখা ব্যতীত কোনো হাদীস বর্ণনা করতেন না।” [আল-জাওহার ওয়াদ দুরার ফী তারজামাতি ইবনু হাজার: ২/৯৪৭]
তিনি এখানেই ক্ষান্ত নন, বরং ইমাম আবূ হানীফাহ সম্পর্কে তথাকথিত জারহ-চর্চা করা যাবে কিনা- এ সম্পর্কেও তিনি সুন্দর উপদেশ দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে তিনি তাঁর ছাত্রের উদ্দেশ্যে বলেন-
وفي الجملة، تَرْكُ الخَوْضِ في مثل هذا أولى، فإنَّ الإمامَ وأمثالَه ممَّن قفزوا القَنْطَرَة، فما صار يُؤَثِّرُ في أحد منهم قولُ أحدٍ، بل هم في الدرجة التي رفعهم اللَّه تعالى إليها مِنْ كونهم متبوعين مقتدى بهم، فليُعتَمَدْ هذا، واللَّه ولي التوفيق
অর্থ: সারকথা হলো, এমন ধরনের বিষয়ে (ইমাম আ’যমের জারহ/সমালোচনায়) ডুবে থাকা ও অনর্থক কথাবার্তা ত্যাগ করাই উত্তম। কারণ, ইমাম আবূ হানীফাহ ও তাঁর মতো ইমামগণ সেতু পার করে ফেলেছেন। অতএব তাদের ব্যাপারে কারোরই কোনো সমালোচনা (জারহ) প্রভাব ফেলবে না। বরং, তারা তো সেই উঁচু স্তরে রয়েছেন যে স্তরে সর্বশক্তিমান আল্লাহই তাদের উঠিয়েছেন। ফলে তাঁরা মানুষের অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় হয়েছেন! অতএব সকলকে এটিতেই বিশ্বাসী থাকতে হবে। আর আল্লাহই একমাত্র সফলতা দানকারী। [আল-জাওহার ওয়াদ দুরার ফী তারজামাতি ইবনু হাজার: ২/৯৪৭]
যাইহোক, ইবনে হাজার (রহ.) ইমাম আবূ হানীফাহ (রহ.) এর ব্যাপারে এত এত প্রশংসা ও দিফা‘ করলেও আলবানীর সেসব চোখে পড়েনি! আলবানী শুধু তাঁর ‘তাকরীব’ গ্রন্থটাই দেখেছেন, যেখানে তিনি সংক্ষিপ্ততার লক্ষ্যে শুধুমাত্র একটি বাক্যে তাঁর পরিচয় দিয়েছেন!
জবাব : বলে রাখা জরুরি যে, এ ধরনের প্রশ্ন কাদিয়ানীরাই ছুড়ে দেয়, যাতে তারা মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর কথিত ‘রূপক মসীহ’ দাবীকে বৈধতা দিতে পারে।
জ্ঞানীদের নিকট গোপন থাকেনি যে, ‘সালাত এবং যাকাত’ এগুলো ওয়াক্ত কিবা সময়ের সাথে সম্পর্কিত। আর আমরা জানি যে, সময় নির্ণয় হয় সূর্যের উদয় আর অস্তমিত হবার মাধ্যমে। কাজেই বুঝা গেল, সূর্যের উদয় অস্ত ব্যতীত যেহেতু সময় নির্ণয় হয়না সেহেতু সূর্যকে বাদ দিয়ে সালাত এবং যাকাত আদায়ের প্রশ্নই আসতে পারেনা।
যেজন্য সূরা মরিয়মের ৩১ নং আয়াত দ্বারা হযরত ঈসা (আ:) সম্পর্কে অনুরূপ প্রশ্ন তোলা ভুল। কেননা ঈসা (আ:) এমন এক জগতে রয়েছেন যেখানে সময়ের নির্ণায়ক সূর্য তো নেই, উপরন্তু সেখানকার সকল নিয়ম-কানূন পৃথিবী হতে সম্পূর্ণ ভিন্ন। ফলে ঈসা (আ:)-এর উপর সালাত এবং যাকাতের হুকুম পৃথিবীতে পুনরায় ফিরে আসার পূর্ব পর্যন্ত স্থগিত।
মনে করুন, আপনি এ মাত্র আসরের সালাত আদায় করলেন। একটু পরেই মাগরিব আদায় করার অপেক্ষায়। আর সবাই জেনে থাকবেন যে, সূর্য অস্তমিত না হলে মাগরিবের ওয়াক্ত হয়না।
তেমনি সূর্য আপনা কক্ষপথ দিয়ে পুরোপুরি একবার পরিভ্রমণ করার মাধ্যমে দিবারাত্রির পালাবদল হয়ে থাকে। এভাবে ৩৬৫ দিন অন্তে বছর পূর্ণ হয়ে থাকে। সুতরাং আকাশে যখন সূর্যের কোনো উপস্থিতি-ই নেই তখন দিবারাত্রির কল্পনা করতে পারি কিভাবে? আর যেখানে দিবারাত্রির কোনো পালাবদল নেই সেখানে বছর কী দিয়ে হবে? তো তাহলে যাকাতের জন্য যে বছরপূর্তি হতে হয় তার কী হবে?? এইবার বুঝে থাকলে বলুন, ঈসা (আ:)-এর জন্য আকাশে যাকাতের হুকুম কিজন্য বিধিবদ্ধ নয়!!
একজন জ্ঞানী মাত্রই জানবেন যে, নেসাব পরিমাণ সম্পদের উপর পূর্ণ একবছর গত না হওয়া পর্যন্ত যাকাত ফরজ হয়না। এ সম্পর্কে রাসূল (সা:) ইরশাদ করেছেন – ليس في المالِ زكاةٌ حتَّى يحولَ عليه الحوْلُ অর্থাৎ “যে মাল বা সম্পদ পূর্ণ এক বছর মালিকের মালিকানায় থাকেনি তাতে যাকাত ফরজ নয়।” (তিরমিজি, বায়হাক্বী, মুসনাদে বাজ্জার, ইবনু মাজাহ)। (ক্লিক)
তাই হযরত ঈসা (আ:) যতদিন আকাশে থাকবেন ততদিন তাঁর ব্যাপারে সালাত এবং যাকাতের প্রশ্ন তোলা ঠিক হবেনা।
হয়ত প্রশ্ন করতে পারেন যে, পৃথিবীতে তো এমনও বহু জায়গা রয়েছে যেখানে ৫/৬ মাসও সূর্যের উপস্থিতি সত্ত্বেও দিবারাত্রির পরিবর্তন হয় না। তাহলে কি সেখানকার মুসলিমরা সালাত আদায় করবেনা?
জবাবে বলা হবে যে, সেখানকার মুসলমানগণ কিভাবে সালাত আদায় করবে এ সম্পর্কে ইসলামের শিক্ষা হল, তাদেরকে আনুমানিকভাবে সময়ের তারতম্য করে সালাত আদায় করতে হবে। কেননা, ওই জায়গায় দিবারাত্রির পালাবদল অনিয়মিত হলেও কিন্তু সময়ের চাকা ঘূর্ণায়মান অর্থাৎ সময় অবিরত চলমান। ফলে তাদের জীবনযাত্রা থেমে থাকেনা। শিশুরা কৈশোরকালে আর কৈশোররা তারুণ্যে উপনীত হয়, ইত্যাদি।
পক্ষান্তরে ঈসা (আ:) যেই জগতে সেখানকার সব কিছুই আপনা হালে স্থির ও সময়ের চাকা অঘূর্ণায়মান। মূলত এই কারণেই আকাশে যতদিন ঈসা (আ:) থাকবেন ততদিন তাঁকে এগুলো করতে হবেনা।
এখন আবার প্রশ্ন জাগতে পারে যে, আকাশে সময়ের চাকা অঘূর্ণায়মান হবার দলিল কোথায়?
জবাবে বলব, (১) সহীহ মুসলিম শরীফের “কিতাবুল ফিতান” অধ্যায় হতে একটি হাদীসে রাসূলে করীম (সা:) থেকে বর্ণিত আছে, “দুজন ফেরেশতার পাখায় ঈসা (আ:) আপনা বাহুদ্বয় রেখে পৃথিবীতে অবতরণ করবেন। তখন তিনি মাথা নিচু করলে সদ্য গোসলখানা থেকে বেরিয়ে আসা ব্যক্তির মাথা থেকে যেভাবে পানি ঝরতে থাকে সেভাবে তাঁর মাথা থেকে পানির ফোটা ঝরতে থাকবে।”
এখন কৌতূহল জাগবে যে, উনার মাথায় পানির ফোটা কোত্থেকে এল? তার জবাব পাবেন বিশিষ্ট তাফসীরকারক ইমাম ইবনে আবী হাতিম (রহঃ) এর তাফসীরে। তিনি বিশিষ্ট সাহাবী হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) হতে এই মর্মে একটি হাদীস উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলেন, “আল্লাহতালা যখন ঈসা (আ:)-কে আকাশে উঠিয়ে নিতে ইচ্ছে করলেন তখন ঘটনা ছিল, বায়তুল মুকাদ্দেসের একটি কক্ষে ঈসা (আ:)-এর ১২ জন হাওয়ারী অবস্থান করছিলেন। তিনি মসজিদের একটি ঝরনায় গোসল করে ওই কক্ষে শিষ্যদের নিকট যান। তাঁর মাথার চুল থেকে তখনো পানি ঝরে পড়ছিল।… (সেখানে আপনা হাওয়ারীদের সাথে কথোপকথন শেষে) জিব্রাইল (আ:) মসজিদের একটি বাতায়ন পথে ঈসা (আ:)-কে আকাশে উঠিয়ে নেন।” এটাই সেই পানি যেটি আকাশে সময়ের স্থিরতা হেতু ঈসা (আ:)-এর মাথায় অনবরত অপরিবর্তিত ছিল। ফলে তিনি যখন নাযিল হবেন তখন তাঁর মাথা থেকে গড়িয়ে পড়তে শুরু করবে। (সংক্ষেপে)
(২) আরো একটি দলিল দেব। হযরত আবু হোরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত আছে রাসূলে করীম (সা:) বলেছেন – فإنه شاب و ضيئ أحمر “ফা-ইন্নাহু শা-ব্বুন ওয়া দ্বী’য়ুন আহমারু” অর্থাৎ (ঈসা ইবনে মরিয়ম যখন নাযিল হবেন তখন তাঁকে চেনার আলামত হল) “তিনি নওজোয়ান এবং খুবই পবিত্র পরিচ্ছন্ন আর লাল বর্ণের হবেন।” (মুসান্নাফ ইবনু আবী শাইবাহ ৮/৬৬০)। ক্লিক
খুব খেয়াল করুন, তিনি আকাশে চলে গেলেন যা আজকের দিন পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার বছরের চেয়ে বেশি। তদুপরি তিনি যখন নাযিল হবেন তখনো কিনা “যুবক”-ই থাকবেন। তাঁর বয়স বাড়ল না, শারীরিক কোনো পরিবর্তনও হলনা। তার কারণ তো এটাই যা আমি উপরে বলে এসেছি।
যাইহোক, প্রমাণিত হল যে, আকাশে যেহেতু দিবারাত্রির কোনো পরিবর্তন নেই, সময়ও এক অবস্থায় বিদ্যমান; তাই তাঁর জন্য সালাত এবং সাওম ইত্যাদি কিছুই বিধিবদ্ধ নয়।
অতএব, যারা ঈসা (আ:)-কে মৃত সাব্যস্ত করতে খোঁড়া যুক্তির জোড়াতালি প্রদর্শন করেন এবং তিনি আকাশেও সালাত, যাকাত আদায় করে কিনা, এইরূপ কাণ্ডজ্ঞানহীন প্রশ্ন ছুড়ে দেন; তারা কি আকাশে সূর্য উদয় আর অস্ত যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়ে এসেছেন? সময়ের চাকা ঘূর্ণায়মান রেখে এসেছেন? কবি এখানে নিরব!!!
আয় আল্লাহ এই কোন বোকাজাতি! আপনা জ্ঞান বুদ্ধি অন্যত্রে বন্ধক রেখে তারা এইরূপ সহজ একটা বিষয়ে এই কেমন জগাখিচুড়ী পাকিয়ে বসল!!
আহমদীবন্ধুরা! আপনাদের কথিত ‘তবলিগি পকেট বুক’ থেকে এভাবে চর্বিতচর্বণ বাদ দিয়ে ভয় করুন শেষদিবসের মালিককে। খোদাতায়ালার পবিত্র কালামের বিরুদ্ধে আপনা বিকৃত যুক্তি যে একটা সময় ভেস্তে যাবে তা কি এখনো বুঝে আসেনি? আল্লাহ আপনাদের হিদায়াত দিন! আমীন।