Home Blog

আকাশ হতে কেউ অবতীর্ণ হবেনা?

মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর বইতে থাকা বিপরীতমুখী কন্টেন্ট আপনাদের সামনে তুলে ধরছি,

ঈসা (আ.) আকাশ হতে অবতীর্ণ হবে না –

মির্যা কাদিয়ানী সাহেব নিজ সত্তাকে ‘ঈসা মসীহ’ এর জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করতে একদিকে পবিত্র কুরআনের অসংখ্য আয়াতকে অপব্যাখ্যা দিয়েছিল, অপরদিকে ইসলামের অথেনটিক শিক্ষার বিরুদ্ধে গিয়েও ঈসা (আ.) সম্পর্কে বাগাড়ম্বর করে লিখেছে, “প্রতিশ্রুত মসীহের আকাশ হতে অবতরণ একটি মিথ্যা ধারণা মাত্র। স্মরণ রেখো! কেউ আকাশ হতে অবতীর্ণ হবে না।” (তাযকিরাতুশ শাহাদাতাঈন-৭৯ বাংলা অনূদিত)।

প্রামাণ্য স্ক্যানকপি দ্রষ্টব্য

মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর বইয়ের আরেক জায়গায় কী লিখা আছে এবার সেটিও দেখুন!

আকাশ হতে মির্যায়ী জনৈক বংশীয় পুরুষ অবতীর্ণ হবে –

মির্যা কাদিয়ানী সাহেব লিখেছেন,

خدا تعالیٰ نے ایک قطعی اور یقینی پیشگوئی میں میرے پر ظاہر کر رکھا ہے میرے ہی ذریت سے ایک شخص پیدا ہوگا جسکو کئی باتوں میں مسیح سے مشابہت ہوگی وہ آسمان سے اترے گا اور زمین والوں کی راہ سیدہی کر دے گا.

অর্থাৎ খোদাতায়ালা একটি অকাট্য এবং বিশ্বাসযোগ্য ভবিষৎবাণীর মধ্যে আমার উপর প্রকাশ করে রেখেছেন যে, আমার বংশধর থেকে এক ব্যক্তি জন্ম নেবে। মাসীহ’র সাথে তার কিছু সামঞ্জস্যতা থাকবে। সে আকাশ থেকে অবতরণ করবে এবং দুনিয়াবাসীর পথ সোজা করে দেবে।” (রূহানী খাযায়েন খন্ড নং ৩ পৃষ্ঠা নং ১৮০)।

প্রামাণ্য স্ক্যানকপি দ্রষ্টব্য

শেষকথা– মির্যা কাদিয়ানী সাহেব এক মুখে দুইরকম কথা বললেন। আকাশ থেকে কেউ অবতীর্ণ হবেনা! আবার লিখলেন, তার জনৈক বংশীয় পুরুষ মসীহ’র মাসীল হিসেবে অবতীর্ণ হবে। আমার বুঝে আসেনা, এধরণের মানুষের কথায় ওরা কিভাবে আস্থা রাখতে পারে? অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, মির্যা সাহেবের এধরণের স্ববিরোধ কথাবার্তার ফিরিস্তি তুলে ধরলে তা সহজে শেষ হবেনা। অপ্রিয় হলেও সত্য, মির্যা কাদিয়ানীর স্ত্রী এবং তার পুত্র মির্যা বশির আহমদ এম.এ এর সাক্ষ্যমতে তিনি হিস্টিরিয়া এবং সিজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত ছিলেন। যার ফলে তিনি কখন কী বলতেন, কী দাবী করতেন তার কোনো ঠিক-ঠিকানা ছিলনা। কিন্তু তার বর্তমান অনুসারীদের এগুলো বুঝানোর সাধ্য কারো নেই। কারণ তাদের অধিকাংশই নির্বোধ, ব্রেইনওয়াশ। আল্লাহ তাদের সঠিক বুঝ দান করুন।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী এম.এ

ঈসা মসীহ ‘আকাশ’ থেকে নাযিল হবেন

আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় হাবীব মুহাম্মদে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষার বিপরীতে কাজ্জাব মির্যা গোলাম কাদিয়ানীর মতবাদ!

মির্যা কাদিয়ানী ঈসা (আ.)-কে মৃত আখ্যা দিয়ে এবং তাঁর পুনঃ আগমন অস্বীকার করে অর্থাৎ আকাশ থেকে ঈসা (আ.) এর নাযিল হবার ইসলামী অথেনটিক শিক্ষার বিরোধিতা করে লিখে গেছেন যে,

“কেউ আকাশ হতে অবতীর্ণ হবেনা।” (তাযকিরাতুশ শাহাদাতাঈন-৭৯, রূহানী খাযায়েন ২০/৬৭)।

ইসলামী অথেনটিক শিক্ষা :

খাতামুন নাবিয়্যীন তথা শেষনবী মুহাম্মদে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

(ক) “শপথ সেই সত্তার যার হাতের মুঠোয় আমার প্রাণ, নিশ্চয়ই ইবনু মরিয়ম (ঈসা) অচিরেই নাযিল হবেন।” (সহীহ বুখারী হা/৩২০৫, কিতাবুল আম্বিয়া)।

(খ) “মরিয়ম পুত্র (ঈসা) এসে হজ্জ করবেন।” (সহীহ মুসলিম হা/২৮৯৬)।

(গ) তখন ঈসা ইবনু মরিয়ম দু’জন ফেরেশতার দু’ বাহুর উপর আপনা দু’হাত রেখে দামেস্কের পূর্বপ্রান্তে শুভ্র মিনারার নিকটে অবতরণ করবেন।” (সহীহ মুসলিম হা/৭০৭৬, অধ্যায় কিতাবুল ফিতান ওয়া আশরাতুস সা’আহ)।

(ঘ) “অত:পর ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ.) আকাশ থেকে নাযিল হবেন।” (মুসনাদে বাজ্জার, হা/ ৯৬৪২)।

বিজ্ঞ পাঠক ও সত্যান্বেষী ভাই ও বোনেরা!

তাহলে এখানে কার কথা সত্য? এখানে মুসলিম উম্মাহার বিশ্বাস ও ঈমান হচ্ছে, আল্লাহর প্রিয় হাবীব মুহাম্মদে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই সত্য। বিপরীতে মির্যা কাদিয়ানী আপনা উক্ত মতবাদ ও শিক্ষায় অবশ্যই একজন নিকৃষ্ট মিথ্যাবাদী ও কাজ্জাব! তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

সম্পর্কিত আলোচনা :

সর্বাধিক হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবী হযরত আবূ হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.) বলেছেন

ثُمَ يَنْزِلُ عِيْسَى بْنُ مَرْيَمَ مِنَ السَّمَاءِ

অর্থাৎ ‘অতপর মরিয়ম পুত্র ঈসা আকাশ থেকে নাযিল হবেন।’ দেখুন মুসনাদে বাজ্জার, হাদীস নং ৯৬৪২; বিশিষ্ট হাদীসবিশারদ ইমাম নূরউদ্দীন আল হাইছামী (রহ.) উক্ত হাদীসের সনদ সম্পর্কে লিখেছেন

وَرِجَالُهُ رِجَالُ الصَّحِيْحِ غَيْرُ بْنُ الْمُنْذِرِ وَ هُوَ ثِقَةُ

অর্থাৎ হাদীসটির সূত্রে উল্লিখিত সকল বর্ণনাকারী সহীহ (বুখারী)’র, শুধু ‘আলী ইবনে আল মুনযির’ ছাড়া, তবে তিনিও একজন বিশ্বস্থ বর্ণনাকারী। (দেখুন, মাজমাউয যাওয়ায়েদ খ-৭ পৃ-৩৪৯)।

এভাবে একাধিক সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণ করা যাবে যে, আগমনকারী ঈসা ‘রূপক’ কেউ নন, বরং তিনি মরিয়ম (আ.)-এর সন্তান হযরত ঈসা, যার সম্পর্কে স্বয়ং হযরত মুহাম্মদ (সা.) দুইজন ফেরেশতার মাধ্যমে শামের (সিরিয়া, জর্ডান, ফিলিস্তিন সহ বৃহত্তর প্রাচীন এরিয়া) পূর্বপ্রান্তে অবতরণ করবেন বলেই ভবিষ্যৎবাণী করে গেছেন।

অন্য আরেকটি হাদীসে বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবূ যর গিফারী (রা.) হতে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.) বলেছেন

اَلشَّامُ أَرْضُ الْمَحْشَرِ وَ اْلمُنْشَرِ وَ بِهَا يَجْتَمِعُ النَّاسُ رَأسًا وَاحِدًا وَ بِهَا يَنْزِلُ عِيْسَى بْنُ مَرْيَمَ الخ

অর্থাৎ ‘শাম পুনরুত্থিত ও একত্রিত হওয়ার ভূমি। মানুষ সেখানে সারিবদ্ধ হয়ে একত্রিত হবে এবং সেখানে মরিয়মপুত্র ঈসা নাযিল হবেন এবং সেখানেই আল্লাহতালা মসীহে দাজ্জালকে হত্যা করবেন।’ (ইবনু আসাকীর সংকলিত ‘তারীখে দামেস্ক’ ১/১৭০ দ্রষ্টব্য, শায়খ আলবানীর তাহকীক, হাদীসের সনদ সহীহ)।

কাদিয়ানী সহ আরও যারা হযরত ঈসা (আ.) এর পুনঃ আগমন সম্পর্কে সংশয়ে লিপ্ত তাদের জন্য পবিত্র কুরআন থেকে স্রেফ একখানা আয়াত তুলে ধরছি,

তাফসীরে তাবারীতে এসেছে, হযরত ইবনু জারীর আত তাবারী (রহ.) বিশুদ্ধ সনদে সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন,

حدثنا ابن بشار؛ قال: حدثنا سفيان عن أبي حصين عن سعيد بن جبير عن ابن عباس: ” وَإِنْ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ إِلاَّ لَيُؤْمِنَنَّ بِهِ قَبْلَ مَوْتِهِ ” قال: قبل موت عيسى بن مريم “

অর্থাৎ ইবনু বাশশার, সুফিয়ান, আবূ হোছাইন, সাঈদ বিন যোবায়ের, ইবনু আব্বাস থেকে, (আল্লাহতালা বলেন) “আহলে কিতাবীদের প্রত্যেকেই তাঁর মৃত্যুর পূর্বেই তাঁর প্রতি ঈমান আনবে” (সূরা নিসা) এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, ঈসা ইবনু মরিয়ম আলাইহিস সালামের মৃত্যুর পূর্বে। (তাবারী)। ইমাম ইবনু কাসীর (রহ.) উল্লিখিত হাদীসটির সনদ সম্পর্কে বলেছেন,

قال ابن كثير: ” وهذا إسناد صحيح ” (النهاية).

অর্থাৎ এই সনদটি সহীহ। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)।

প্রামাণ্য স্ক্যানকপি দ্রষ্টব্য

সংক্ষেপে।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

ঈসা মসীহ’র চাইতেও নিজেকে ‘শ্রেষ্ঠ’ দাবী করা

মির্যা কাদিয়ানী নিজেকে হযরত ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ.) চেয়েও অধিক শ্রেষ্ঠ বলে দাবী করা,

মির্যা গোলাম আহমদের বই ‘দাফেউল বালা‘ মূলত উর্দূতে রচিত, প্রথম প্রকাশ ১৯০২ ইং কাদিয়ান থেকে। ২০১০ সালের জুলাই’তে এদেশীয় কাদিয়ানী জামেয়ার প্রিন্সিপাল ইমদাদুর রহমান সিদ্দিকি কর্তৃক বইটির শেষ ৬ পৃষ্ঠা বাদ দিয়েই বাংলায় অনুবাদ সম্পন্ন করা হয়। কাদিয়ানী জামাতের প্রকাশনী কিজন্য শেষের ৬ পৃষ্ঠার অনুবাদ করার প্রয়োজন মনে করেনি তা আমাদের জানা নেই। বিজ্ঞ পাঠকবৃন্দ! মূল বইটি সংগ্রহ করে শেষের পাতাগুলো মিলিয়ে দেখবেন। তবেই আমার কথার সত্যতা পেয়ে যাবেন।

সে যাইহোক, এ পর্যায় মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী, যিনি লাহোরে তার এক ভক্তের বাড়ীতে কলেরায় আক্রান্ত হয়ে ১৯০৮ সালের ২৬ শে মে রাতে টাট্টিখানায় মারা যান, এখানে তার একখানা উদ্ভট দাবী প্রমাণসহ তুলে ধরছি। তিনি আল্লাহর বিশিষ্ট ও শরীয়তবাহক নবী ও রাসূল হযরত ঈসা (আ.) চাইতেও নিজেকে সকল মান মর্যাদায় ‘শ্রেষ্ঠ’ বলে দাবী করেন। নাউযুবিল্লাহ। তিনি দাবীটিকে প্রতিষ্ঠিত করার অসৎ উদ্দেশ্যে আরও কী ধরণের হঠকারীতামূলক পন্থা অবলম্বন করলেন সেটি জানলে যে কারোরই মাথা ঘুরে যাবে। তিনি নিজেকে মুহাম্মদ (সা.) এর একজন ‘গোলাম‘ (দাস) আখ্যা দিয়ে প্রথমে মুসলিম উম্মাহার পবিত্র আবেগের জায়গাটিতে সুড়সুড়ি দেন। যাতে ঈসা (আ.) এর চেয়েও নিজ সত্তাকে ‘শ্রেষ্ঠ’ বলে বৈধতা দেয়ার আনুকূল্য পান এবং সম্ভাব্য বাধাগুলো দূর করতে পারেন। যদিও তার এ ভেল্কিবাজি অনেক দুর্বলমনা মানুষকে পথভ্রষ্ট করেছে কিন্তু ইসলাম ও ইসলামী আকীদাশাস্ত্রে যাদের একটুও পড়াশোনা রয়েছে তাদের নিকট তিনি মুহূর্তের মধ্যেই ধরা পড়ে গেছেন এবং একজন মস্ত বড় মিথ্যাবাদী এবং ধোকাবাজ হিসেবে কুখ্যাত হয়ে আছেন। কারণ, আল্লাহ তায়ালার যে কোনো মনোনীত নবী ও রাসূলের শান-মানে আঘাত করে এধরণের হঠকারীমূলক কথাবার্তার দরুন যে কেউই ‘কাফের’ হওয়ার জন্য যথেষ্ট।

বলে রাখা জরুরি যে, মির্যা কাদিয়ানীর উক্ত কুফুরীকে যে ব্যক্তিই ‘সঠিক’ মানবে অথবা মনগড়া ব্যাখ্যার মাধ্যমে হালাল করার চেষ্টা করবে, তার পরিণতিও একই হবে। কোনো সন্দেহ নেই।

In Bengali :

ঈসা (আ.) এর মানহানী করে মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর উদ্ভট দাবীটি নিম্নরূপ-

“সুতরাং আজ খোদাতালা পাদ্রী সাহেবদের থেকে পাপের প্রতিশোধ একটি শব্দ দিয়ে নিয়ে নিচ্ছেন। কারণ খ্রিস্টান পাদ্রী বা প্রচারকেরা ঈসা ইবনে মরিয়মকে খোদা বানিয়েছে এবং আমাদের নেতা, আমাদের অভিভাবক, যিনি প্রকৃত শাফী বা ত্রানকর্তা, তাঁকে তারা গালাগালী করেছে অশ্রাব্য গালী গালাজ ভর্তি বই-পুস্তক দিয়ে এই ভূপৃষ্ঠকে অপবিত্র করে দিয়েছে। ফলত সেই মসীহ যার নাম খোদা রাখা হয়েছে, তার বিপরীতে খোদাতায়ালা এই উম্মতের মাঝে মসীহ মাওউদকে পাঠিয়েছেন, যিনি পূর্বের মসীহ’র তুলনায় সকল প্রকার মর্যাদায় শ্রেয় এবং তিনি এই দ্বিতীয় মুসীহ’র নাম গোলাম আহমদ রেখেছেন যেন এদিকে ইশারা করা যায় যে, খৃষ্টানদের মসীহ কেমন খোদা যে হযরত আহমদ (সা.) এর এক সাধারণ গোলামের সাথে মোকাবেলা করতে পারে না? সেই মসীহ কেমন মসীহ যে নৈকট্য ও শাফায়াতের মর্যাদায় হযরত আহমদ (সা.) এর গোলামের তুলনায় স্বল্প মানসম্পন্ন।”

(দাফেউল বালা, ১৪-১৫, বাংলা অনূদিত, মূললিখক মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী)।

In English :

Mirza Ghulam Ahmad Qadiani’s bizarre claim of defaming Jesus (AS) is as follows-

“So today God is taking revenge from the priests with a word. Because the Christian pastors or preachers have deified Jesus Ibn Maryam and abused our leader, our guardian, the true Shafi or Savior, and defiled this earth with books full of inaudible abuse. As a result, in contrast to the messiah named by God, God sent among this Ummah the messiah Mawud, who is superior in all respects to the previous messiah, and he named this second messiah Ghulam Ahmad. As if to point out that what kind of God is the Messiah of the Christians who cannot deal with a common slave of Hazrat Ahmad (PBUH)? What kind of messiah is he who is inferior to the slave of Hazrat Ahmad (PBUH) in terms of proximity and intercession.”

(Dafeul Bala, 14-15, Bengali, original writer Mirza Golam Ahmad Qadiyani).

প্রামাণ্য স্ক্যানকপি-Certified Scancopy

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

হযরত ঈসা মসীহ (আ.) এর কবর কোথায়?

ঈসা মসীহ (আ.) এর কবর প্রসঙ্গে

প্রশ্ন : হযরত ঈসা মসীহ (আ.) এর কবর কোথায়? তিনি কি মৃত্যুবরণ করেছেন নাকি এখনো করেননি? ইসলামের অথেনটিক সোর্স এর আলোকে জানতে চাই।

উত্তর : পবিত্র কুরআন আমাদের বলছে, كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ অর্থাৎ প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে (কুরআন ৩:১৮৫)। কিন্তু মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা যতক্ষণ না কাউকে মৃত্যু দিচ্ছেন, ততক্ষণ কারো মৃত্যু হবেনা। দুনিয়ার তাবৎ শক্তিগুলো একত্রিত হয়ে চেষ্টা করলেও আল্লাহর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কখনোই জয়লাভ করতে পারবেনা। এটাই আমাদের ঈমান। আদি পিতা ও প্রথম নবী হযরত আদম (আ.) থেকে নবুওয়তের ক্রমধারা আরম্ভ হয়ে আখেরি যামানার নবী ও শেষনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত এসে সমাপ্ত হয়। মুসলিম উম্মাহার সর্বসম্মত আকীদা ও বিশ্বাস হচ্ছে, আল্লাহতালা সমস্ত নবী ও রাসূলকে যথাসময়ে মৃত্যু দান করেছেন, শুধুমাত্র হযরত ঈসা মসীহ (আ.) ছাড়া। তিনি তাঁর (ঈসা) আয়ুষ্কাল শেষ যামানা পর্যন্ত প্রলম্বিত করে দিয়েছেন।

পবিত্র কুরআনের সূক্ষ্মতর ইংগিতে ঈসা মসীহ (আ.) এর পুনঃ আগমনী ভবিষ্যৎবাণী-

পবিত্র কুরআনের সূরা আলে ইমরানে আল্লাহতালা ইরশাদ করেছেন,

وَإِذْ أَخَذَ اللَّهُ مِيثَاقَ النَّبِيِّينَ لَمَا آتَيْتُكُم مِّن كِتَابٍ وَحِكْمَةٍ ثُمَّ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مُّصَدِّقٌ لِّمَا مَعَكُمْ لَتُؤْمِنُنَّ بِهِ وَلَتَنصُرُنَّهُ ۚ قَالَ أَأَقْرَرْتُمْ وَأَخَذْتُمْ عَلَىٰ ذَٰلِكُمْ إِصْرِي قَالُوا أَقْرَرْنَا ۚ قَالَ فَاشْهَدُوا وَأَنَا مَعَكُم مِّنَ الشَّاهِدِينَ

অর্থাৎ “আল্লাহ যখন তাঁর নবীদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন (তখন তিনি বলেছিলেন, এ হচ্ছে) কিতাব ও (তার ব্যবহারিক) জ্ঞান কৌশল, যা আমি তোমাদের দান করলাম, অতপর তোমাদের কাছে যখন (একজন) রাসূল আসবে, যে তোমাদের কাছে রক্ষিত (আগের) কিতাবের সত্যায়ন করবে, তখন তোমরা অবশ্যই তার (আনীত বিধানের) উপর ঈমান আনবে এবং সাহায্য করবে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি অঙ্গীকার গ্রহণ করছো এবং আমার এ প্রতিশ্রুতির দায়িত্ব পালন করছো? তারা বললো, হ্যাঁ আমরা অঙ্গীকার করছি; তিনি বললেন, তাহলে তোমরা সাক্ষী থেকো এবং আমিও তোমাদের সাথে (এ অঙ্গীকারে) সাক্ষী হয়ে রইলাম।”

উক্ত আয়াতে মুহাম্মদ (সা.)-এর আগমনী প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে (ইবনে আব্বাস, আলী প্রমুখও একই কথা বলেছেন, তাফসীরে তাবারী দ্রষ্টব্য)।

এ ব্যাপারটি নবুওয়তের মিথ্যা দাবীদার কাজ্জাব মির্যা কাদিয়ানীও স্বীকার করে লিখে গেছে। দেখুন রূহানী খাযায়েন খণ্ড নং ১৮, পৃষ্ঠা নং ৬৭৫। আয়াতটির আবেদন হচ্ছে, রূহের জগতে সমস্ত নবী রাসূল থেকে গৃহিত অঙ্গীকার, শেষনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে পাওয়া মাত্রই সবাই তাঁকে সাহায্য করতে হবে। আর এই অঙ্গীকার সকল নবী রাসূলের পক্ষ হতে পূর্ণ হওয়া তখনি সম্ভব, যখন শেষযুগে ঈসা (আ.) আসবেন এবং তিনি সকলের পক্ষ হতে তাঁর রেসালতের সত্যায়ন করবেন এবং তাঁর রেখে যাওয়া দ্বীনের সাহায্য করবেন। সুতরাং ঈসা মসীহ (আ.) এর আয়ুষ্কাল শেষ যামানা পর্যন্ত আল্লাহ বিলম্বিত করে দিয়েছেন তাঁর উক্ত অঙ্গীকার যথাসময়ে পূর্ণ করার জন্য। এখন যারা ঈসা মসীহকে আগেই মেরে ফেলতে উঠেপড়ে লেগেছেন তারা কি মনে করেন যে, আল্লাহ তাঁর নেয়া উক্ত অঙ্গীকার অপূর্ণ রাখবেন এবং পূর্বের কোনো নবীকে তিনি উক্ত অঙ্গীকার বাস্তবায়নের জন্য বাঁচিয়ে রাখবেন না?

কাদিয়ানীদের নিকট আরেকটি প্রশ্ন হল, মির্যা কাদিয়ানীর কাছ থেকেও কি ঐ অঙ্গীকার নেয়া হয়েছিল? অন্যথা প্রকৃত ঈসা আসার পরিবর্তে তথাকথিত “রূপক ঈসা” আসার যুক্তিকতা কী?

ঈসা মসীহ (আ.) সম্পর্কে যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস এবং তাফসীরবিদগণের সামান্য কিছু বক্তব্য-

সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যাকারক বিখ্যাত হাদীস বিশারদ ইমাম ইবনু হাজার আসকালানী (রহ.) ঈসা মসীহ (আ.) এর কবর সম্পর্কে ‘ফাতহুল বারী’ কিতাবে পরিষ্কার লিখেছেন,

“ওয়া লাইসা লাহু ক্ববরুন” ((وَلَيْسَ لَهُ قَبْرُ)) অর্থাৎ তাঁর (ঈসা) কোনো কবর-ই নেই। (ফাতহুল বারী, কিতাবুস সালাত, ১/৬৩৪ দ্রষ্টব্য)। তিনি তাঁর অন্য আরেকটি কিতাবে আরো লিখেছেন “সকল হাদীস বিশারদ এবং তাফসীরকারক একমত এই কথার উপর যে, ((اَنَّهُ رَفَعَهُ بِبَدَنِهِ حَيًّا)) অর্থাৎ নিশ্চয় তিনি তাঁকে (ঈসা) সশরীরে জীবিত উঠিয়ে নিয়েছেন। তবে মতভেদ শুধু এতটুকুতে যে, (আকাশে) উঠিয়ে নেয়ার আগে তিনি মৃত্যুবরণ করেছিলেন নাকি [মৃত্যুর সদৃশ] ঘুমিয়ে পড়েছিলেন।” (দেখুন- ‘আত তালখীছুল হাবীর’ কিতাবুত তালাক ৩/৪৬২)।

ইমাম শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দেস আদ-দেহলভী (রহ.) লিখেছেন ((فَظَنُّوْا رَفْعَهُ إِلَي السَّمَاءِ قَتْلًا)) “ফলে তারা (ইহুদীরা) তাঁকে (ঈসাকে) আকাশে উঠিয়ে নেয়াকে হত্যা করার ধারণা করেছিল”। (আল-ফাওযুল কাবীর [আরবী] ৩৮; দারুল গাওছানী লিদ-দিরাসাতিল কুরআনিয়্যা, দামেস্ক হতে প্রকাশিত)।

ইমাম জালালুদ্দীন আস-সুয়ূতী (রহ.) লিখেছেন ((وَاَنَّهُ يَحْكُمُ بِشَرْعِ نَبِيِّنَا وَ وَرَدَتْ بِهِ الأَحَادِيْثُ وَ انْعَقَدَ عَلَيْهِ الْإِجْمَاعُ)) অর্থাৎ নিশ্চয়ই তিনি (ঈসা) আমাদের নবী (মুহাম্মদ সাঃ)’র শরীয়ত দ্বারা বিচার-ব্যবস্থা (কায়েম) করবেন এবং এর প্রমাণে বহু হাদীস বর্ণিত হয়েছে ও এর উপর ইজমা [উম্মতের ঐক্যমত্য] প্রতিষ্ঠিত। (ইমাম সুয়ূতী রচিত ‘আল-হাভী লিল ফাতাওয়া’ ২/১৫৫)।

তিনি আরো লিখেছেন ((ومَكَرَ اللهُ بِهِمْ بِألْقَى شِبْهِ عِيسَى عَلَى مَنْ قَصَدَ قتْلَهُ فَقَتَلُوْهُ وَ رُفِعَ عِيْسَى إِلَى السَّمَاءِ)) “আল্লাহতালা তাদের ষড়যন্ত্রের মুকাবিলায় কৌশল অবলম্বন করেছিলেন। যার ফলে আল্লাহতালা তাদের একজনকে ঈসার সাদৃশ করে দেন, যে তাঁকে হত্যা করার ইচ্ছে করেছিল। তারপর তারা (ইহুদীরা) ঈসার সদৃশ-লোকটিকে (ঈসা ভেবে) হত্যা করে ফেলে। আর (ওদিকে) ঈসাকে [তাদের পাকড়াও হতে নিবৃত রেখে] আকাশে উঠিয়ে নেন।” (তাফসীরে জালালাইন)।

তিনি আরো লিখেছেন ((عن ابن عباس رضى الله عنه : مَدَّ فِىْ عُمْرِهِ حَتَّى اَهْبَطَ مِنَ السَّمَاءِ اِلَى الْاَرْضِ وَ يَقْتُلُ الدَّجَالَ)) “হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত আছে, আল্লাহতালা তাঁর (ঈসা) আয়ুষ্কাল বিলম্বিত করে দিয়েছেন। তিনি আকাশ থেকে পৃথিবীতে অবতরণ করবেন এবং দাজ্জালকে হত্যা করবেন।” (দুররে মানসুর ২/৩৫০, ইমাম সুয়ূতী)।

ঈসা মসীহ (আ.) এর কবর প্রসঙ্গে-

হিজরী দশম শতকের মুজাদ্দিদ মোল্লা আলী ক্বারী (রহ.) ‘তারীখে কাবীর’ এর ১ম খণ্ডের ১৬৩ নং পৃষ্ঠায় একটি হাদীসে উল্লিখিত “ফী কবরি” (فِيْ قَبْرِيْ) এর ব্যাখ্যায় লিখেছেন ‘আমি এবং ঈসা একই কবরে দাফন হব’ একথার অর্থ হচ্ছে একই গোরস্তানে (পাশাপাশি দুইজন) দাফন হব। কারণ, কামূছ [অভিধান]’র ভেতর আছে, কোনো কোনো সময় ‘ফী’ বা فى (মধ্যে) বর্ণটি ‘মিন’ বা من (সন্নিকটে) অর্থেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে।” (মেরকাত শরহে মেশকাত: ১০/১৬৬; কিতাবুল ফিতান)। প্রকাশ থাকে যে, মেশকাত শরীফের ‘ফাজায়েলে সাইয়েদিল মুরসালীন’ অধ্যায় (দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি তার পিতা এবং দাদার সূত্রে বলেন, তাওরাত কিতাবে নবী করীম (সা.)-এর গুণাবলীতে এটিও লিপিবদ্ধ আছে যে ((قَالَ اَبُوْ مَوْدُوْدٍ قَدْ بَقِىَ فِى الْبَيْتِ مَوْضِعُ قَبْرِعِيْسَى ابْنُ مَرْيَمَ يَدْفِنُ مَعَهُ)) “ঈসা ইবনে মরিয়ম নবী করীম (সা.)-এর সাথে দাফন হবেন। বর্ণনাকারী আবু মাওদূদ বলেন, রাওজা শরীফের অভ্যন্তরে একটি কবরের জায়গা (এখনো) খালি রয়েছে।”

হাদীসটির সনদ সম্পর্কে ইমাম তিরমিজি (রহ.) বলেছেন, هذا حديث حسن غريب অর্থাৎ এ হাদীসটি ‘হাসান‘ এবং রাবীর একক সনদে বর্ণিত। (দেখুন, তারীখে দামেস্ক ৪৭/৫২২-২৩)। বলে রাখা জরুরি যে, ‘গরীব’ শব্দটি উসূলে হাদীসের একটি পরিভাষা। যেসব হাদীসের সনদের ভেতর কোনো কোনো স্তরে রাবী শুধুই একজন থাকে, সেই সনদকে ‘গরীব’ (একক সূত্র পরম্পরায়) বলা হয়। আর দুইজন রাবীর পরম্পরায় বর্ণিত সনদকে ‘আযীয’ বলা হয়।

তারীখে দামেস্ক কিতাবে সনদ সহ বর্ণিত আছে-

عن عائشة، قالت: قلت: يا رسول الله، إني أرى أن أعيش من بعدك، فتأذن لي أن أدفن إلى جنبك؟ فقال: “وأنَّى لي بذلك الموضع؟ ما فيه إلا موضع قبري وقبر أبي بكر وقبر عمر، وقبر عيسى بن مريم

অর্থাৎ উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা.) আমার মনে হচ্ছে যে, আমি আপনার ইন্তেকালের পরেও বেঁচে থাকব। অতএব আমাকে অনুমতি দেবেন কি যাতে আপনার পাশেই (মৃত্যুর পর) দাফন হতে পারি? তখন প্রতিউত্তরে তিনি বললেন, এমন স্থানটিতে (দাফন হবার জন্য) আমার নিকট কিভাবে প্রস্তাব রাখতে পার? যে স্থানটিতে আমার কবর থাকবে, আবুবকর এবং উমরের কবর থাকবে এবং ঈসা ইবনু মরিয়মের কবর থাকবে। (দেখুন, তারীখে দামেস্ক ৪৭/৫২২-২৩)।

উল্লেখ্য, অমুসলিম কাদিয়ানী সম্প্রদায় দাবী করে যে, ঈসা (আ.) বর্তমানে জীবিত নেই, বরং তাঁর মৃত্যু হয়ে গেছে। ফলে তারা আলোচ্য হাদীসগুলো অস্বীকার করে, কখনো বা উদ্ভট ব্যাখ্যা দেয়। এ সময় তারা একই বিষয়ে বর্ণিত অপরাপর সবগুলো হাদীসকে পাশ কাটিয়ে একটি হাদীসে উল্লিখিত “ফী কবরি” (فِيْ قَبْرِيْ) এর ‘ইন জেনারেল’ অর্থে বিভ্রান্তি ছড়ায়। তাদের বিভ্রান্তিটা নিম্নরূপ-

হাদীসে এসেছে – রাসূল (সা.) বলেছেন, “আমি এবং ঈসা একই কবরে দাফন হব”। এতে বুঝা গেল, দু’জনের কবর এক-ই হবে। ফলে ঈসা মাসীহ মারা গেলে নবীজীর কবর খুঁড়ে তাঁকে সেটির অভ্যন্তরেই দাফন করার কথাই যেন বলা হয়েছে, যা অসম্ভব। কাজেই হাদীসের বক্তব্যটি রূপক অর্থকেই নির্দেশ করবে। যার ব্যাখ্যা এই যে, আগত ঈসা মসীহ হতে বনী ইসরাইলের সেই মরিয়ম পুত্র ‘ঈসা আলাইহিস সালাম’ উদ্দেশ্য নন, বরং রূপক অর্থে মির্যা গোলাম কাদিয়ানীই উদ্দেশ্য। যিনি ঈসার গুণাবলীর পূর্ণ বিকাশস্থল এবং মুহাম্মদ (সা.) এর সমস্ত মান-মর্যাদা ও যোগ্যতার বুরুযী সত্তা। যাকে সহজ অর্থে বুরুজি মুহাম্মদ বলা হবে। (এ হচ্ছে আগত ঈসা মসীহ এর জায়গায় মির্যা গোলাম কাদিয়ানীর ব্যক্তি সত্তাকে সাব্যস্ত করতে তাদের যতসব উদ্ভট ব্যাখ্যা)।

সর্বশেষ কথা হচ্ছে, পবিত্র কুরআনের প্রায় ২৭টি জায়গায় পরিষ্কার ইঙ্গিত রয়েছে যে, কেয়ামতের পূর্বে যথাসময় দ্বিতীয়বার আগমনকারী ঈসা (আ.)-কে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা আকাশে সশরীরে উঠিয়ে নিয়েছেন, তাঁর পুনঃ আগমন অকাট্য সত্য; তিনি শেষনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর উম্মতের মাক্বাম বা আশীষ লাভ করবেন। তিনি পুনঃ আগমন করে নবুওয়তের দায়িত্বে থাকবেন না, নিজ নবুওয়তি মাক্বামে বহাল থাকবেন এবং শরীয়তে মুহাম্মদীয়ার আলোকে ইনসাফ ভিত্তিক রাষ্ট্র ও বিচার-কার্য পরিচালনা করবেন। কেননা এ উম্মতে মুহাম্মদীয়া-ই শেষ উম্মত এবং মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রাপ্ত নবুওয়তই মুক্ত ও স্বাধীন সর্বশেষ নবুওয়ত। আল্লাহ সবাইকে ইসলামের সঠিক বুঝ ধারণ করার তাওফিক দান করুন।

প্রামাণ্য স্ক্যানকপি দ্রষ্টব্য

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

মুসান্নাফ গ্রন্থে নবী’র ছায়া ছিলনা মর্মে বর্ণনাটির তাহকিক

প্রশ্ন : ‘মুসান্নাফ আব্দির রাজ্জাক’ গ্রন্থে ইবনু আব্বাস (রা.) এর সনদে এমন কোনো বর্ণনা সত্যিই কি রয়েছে যেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ‘ছায়া মোবারক’ না থাকার কথা বলা হয়েছে?

উত্তর : রাসূল (সা.)-এর ছায়া ছিলনা-মর্মে ‘মুসান্নাফ’ গ্রন্থের নামে প্রচারিত বর্ণনাটি মূলত ‘মুসান্নাফ’ গ্রন্থের কোথাও নেই। এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা একটু পরেই আসছে। প্রথমে বর্ণনাটি অপ্রমাণিত একটি সনদ সহ নিম্নরূপ,

عن عبد الرزاق عن إبن جريج قال اخبرني نافع ان ابن عباس قال: لم يکن لرسول الله صلی الله عليه وسلم ظلّ، ولم يقم مع شمس قط إلا غلب ضوءه ضوء الشمس ، ولم يقم مع سراج قط إلا غلب ضوءه ضوء السراج.

অর্থাৎ ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু তাআ’লা আনহু বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কোনো ছায়া ছিল না। সূর্যের আলোতে তাঁর ছায়া পড়তো না বরং তাঁর নূরের ঝলক সূর্যের আলোর উপর প্রভাব বিস্তার করতো। কোনো বাতির আলোর সামনে দাঁড়ালেও বাতির আলোর উপর তাঁর নূরের আলো বিস্তার করতো।

এর রেফারেন্স হিসেবে ইমাম আব্দুর রাজ্জাক ইবনু হুমাম আস সান’আনী (মৃত. ২১১ হি.) সংকলিত ‘মুসান্নাফ আব্দির রাজ্জাক’ এর হাদীস নং ২৫ উল্লেখ করা হলেও মূলত ঐ গ্রন্থে উক্ত সনদে এধরণের কোনো “মতন” (Taxt-মূলপাঠ) খোঁজে পাওয়া যায়না। বরং এটি বানোয়াট ও ফেইক একটি ‘মতন’ যেটি দুবাইয়ের ডক্টর ঈসা মানে আল হিমইয়ারী কর্তৃক প্রকাশিত “আল জুযউল মাফক্বূদ” এরই সৃষ্টি, যেটি অপ্রমাণিত ও অনির্ভরযোগ্য একটি গ্রন্থ। দুনিয়ার সকল মুহাক্কিক গ্রন্থটিকে মওযূ ও জাল আখ্যা দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, শায়খ হিমইয়ারী সাহেবকে ইলমি খিয়ানতের অভিযোগে দেশটির কেন্দ্রীয় উলামা পরিষদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

বিতর্কিত জাল গ্রন্থ ‘আল জুযউল মাফক্বূদ” এর খণ্ডন করে ১৪২৮ হিজরীতে সৌদি আরবের রাজধানী ‘রিয়াদ দারুল মুহাদ্দিস’ প্রকাশনী থেকে প্রকাশ করা হয়েছে, مجموع فى كشف حقيقة الجزء المفقود গ্রন্থটি। এর গ্রন্থকার উক্ত বর্ণনাটির “মতন” সম্পর্কে নিম্নোক্ত মন্তব্য করেন,

قلت: هذا المتن ليس له أصل مرفوعاً، وإنما يذكره المتوسعون في كتب السيرة والخصائص المتأخرة التي يجمع مؤلفوها بين الثابت وما لا يثبت والموضوع وما لا أصل له!

অর্থ -আমি বলি, এ মতনটির এই ধরনের মারফূ কোনো ভিত্তি নেই, বরং প্রচারকারীগণ এ ধরনের মতন পরবর্তীতে রচিত ‘খাসায়েস’ এবং ‘সীরাত’ বইগুলিতে উল্লেখ করেছেন, যাদের লেখকরা ভিত্তিহীন, বানোয়াট এবং প্রমাণিত ও অপ্রমাণিত বর্ণনাই একত্রিত করে গেছেন।

আমার প্রিয় আশেক বন্ধুদের উদ্দেশ্যে কয়েকটা প্রশ্ন,

১. ইমাম জালালুদ্দীন আস সুয়ূতী (মৃত. ৯১১ হি.) তাঁর ‘খাসায়িসুল কোবরা’ গ্রন্থে ইবনু আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে মুসান্নাফ ইবনু আব্দির রাজ্জাক এর সনদে উল্লিখিত রেওয়ায়েতটি আনেননি। কিন্তু কেন? তিনি বরং নাওয়াদিরুল উসূল গ্রন্থের উদ্ধৃতিতে হাকিম তিরমিজি থেকে তাবেয়ী যাকওয়ান (রহ.)-এর রেওয়ায়েতটিই এনেছেন। এতে কী পরিষ্কার বুঝা যায় না যে, মুসান্নাফ ইবনু আব্দির রাজ্জাক এর সনদে ঐ মতনটি মূলত বানোয়াট ও দুবাইয়ের ঈসা মানে’ আল হিমইয়ারীর-ই জালিয়াতি?

২. মুসান্নাফ ইবনু আব্দির রাজ্জাক গ্রন্থে যদি থেকেই থাকে তাহলে আর দেরি কেন, আপনারা সেটির পুরনো কোনো নুসখা থেকে দ্রুত উদ্ধার করে আমাকে দেখিয়ে দিন। আল্লাহর শপথ! আমি নিঃশর্ত মেনে নেব, ইনশাআল্লাহ।

আশাকরি, জ্ঞানীদের জন্য এটুকুই যথেষ্ট।

ধন্যবাদ।

সংশ্লিষ্ট লেখাগুলোও দেখা যেতে পারে –

রাসূল (সা.) এর ছায়া থাকা সংক্রান্ত মারফূ ও মুত্তাসিলুস সানাদ এবং টনটনে সহীহ হাদীস – ক্লিক

রাসূল (সা.)-এর ছায়া মুবারক ছিলনা- সংক্রান্ত দ্বিতীয়তম রেওয়ায়েত এর তাহকিক – ক্লিক

তাবেয়ী যাকওয়ান (রহ.)-এর রেওয়ায়েত ও তার তাহকিক – ক্লিক

সর্ব প্রথম সৃষ্টি কোনটি? আরশ নাকি পানি? ক্লিক

জাবের (রা.)-এর নামে “নূর” এর রেওয়ায়েতটির তাহকিক – ক্লিক

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ

রাসূল (সা.) ‘নূর’ ছিলেন, এর কী অর্থ?

প্রশ্ন : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘নূর’ ছিলেন, এ কথা থেকে উদ্দেশ্য কী?

উত্তর : রাসূল (সা.) নিঃসন্দেহে নূর, তাঁর ছায়ার অস্তিত্ব নিঃসন্দেহে অনস্বীকার্য, তবে মাঝেমধ্যে ‘ছায়া মুবারক’ মুজিজা স্বরূপ জমিনে পতিত হত না, সে কথাও সঠিক! বিস্তারিত….

রাসূল (সা.) নিঃসন্দেহে ‘সিফাতি নূর’ ছিলেন (সূরা মায়েদা ১৫), মাঝেমধ্যে তাঁর ‘ছায়া মুবারক’ জমিনে পড়ত না (সাধারণ ছায়ার মত দৃষ্টিগোচর হত না-লিখক), আর সেটির উল্লেখযোগ্য কারণ ছিল এ যে, উনার ছায়া মুবারক যাতে কেউ পদদলিত করতে না পারে। আর এটিকে উনার (সা.) বিশেষ মুজিজা-ও বলা যায়।

উল্লেখ্য, অস্বাভাবিক ঘটনা-ই মুজিজা হয়ে থাকে, স্বাভাবিক বা সাধারণ কোনো জিনিসকে মুজিজা বা অলৌকিকতা বলেনা। কাজেই, যদি বলা হয় যে, রাসূল (সা.)-এর ছায়া (প্রতিবিম্ব) ছিল-ই না অর্থাৎ ছায়ার অস্তিত্ব অস্বীকার করা হয় তখন “মাঝেমধ্যে ছায়া জমিনে না পড়া কিংবা আলোতে দৃশ্যমান না হওয়া” সাধারণ ঘটনা বলে গণ্য হবে। অথচ একজন প্রকৃত আশেক বা নবী-প্রেমিক তার মা’শুক (নবীজী)-এর মুজিজাকে কখনো অস্বীকার করতে পারেনা। তাফসীরে মাদারিক প্রণেতা খুব চমৎকার বলেছেন,

لئلا يقع انسان قدمه على ذالك الظل

অর্থাৎ আল্লাহতালা নবীজীর ছায়া মুবারক মাটিতে পতিত করেন না, যাতে কেউ উনার ছায়াকে মাড়াতে না পারে। (পারা নং ১৮ দ্রষ্টব্য)। খেয়াল করুন, আমাদের সালফে সালেহীন-ও ছায়ার অস্তিত্ব অস্বীকার করতেন না।

জ্ঞানীদের নিশ্চয়ই ভাবিয়ে তুলবে।

ইমাম সুয়ূতী (রহ.)-এর ছাত্র আল্লামা মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ শামী (মৃত. ৯৪২ হিজরী)। তিনি তাঁর রচিত প্রসিদ্ধ সীরাতগ্রন্থ ‘সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ ফী সীরাতি খাইরিল ইবাদ’ এর মধ্যে হাকিম তিরমিজি থেকে তাবেয়ী যাকওয়ান (রহ.) এর কথাটির ব্যাখ্যাও এনেছেন। যা সাধারণত আমাদের সরলমনা আশেক বন্ধুরা উল্লেখ করতে ভুলে যান। সেটি এইরূপ,

قال ذكوان لم ير لرسول الله ظل في شمس ولا قمر. رواه الحكيم الترمذي. وقال: معناه لئلا يطأ عليه كافر فيكون مذلة له
অর্থাৎ ‘যাকওয়ান (রহ.) বলেন, সূর্যের বা চাঁদের আলোয় রাসূল (সা.)-এর ছায়া দেখা যেত না। হাকীম তিরমিজি কথাটি সংকলন করেছেন। তিনি বলেছেন, এর অর্থ হল, যেন কোনো কাফের তাঁর ছায়া পদদলিত করতে না পারে; কারণ এতে তাঁর অবমাননা হয়।’’ খুব খেয়াল করুন, পূর্ববর্তী ইমামগণের কেউই ছায়ার অস্তিত্ব অস্বীকার করেননি। সুতরাং বিভ্রান্ত হবার কোনো কারণ নেই।

আর হ্যাঁ, অন্যান্য হাদীসে রাসূল (সা.) এর ছায়া মুবারক এর উল্লেখ রয়েছে। ফলে “ছায়া” এর অস্বীকার এক প্রকারের ভ্রান্তি ও হাদীস বিরোধিতা। যা কখনো সঠিক মানহাজ হতে পারেনা।

দলিল –

(ক) উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, হযরত যয়নব (রা.) তিনি নবীজীর ছায়া দেখা সম্পর্কে পরিস্কার বলেছেন : ‘ফা রাআইতু জিল্লাহু।’ আরবী ইবারত –
فرأيت ظله

অর্থাৎ আমি তাঁর ছায়া দেখেছি। (মুসনাদে আহমদ ৭/৪৭৪; হাদীস নং ২৬৩২৫, সহীহ)।

(খ) উম্মুল মুমিনীন হযরত সাফিয়্যাহ বিনতে হুয়াইহি (রা.) হতেও বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, ‘ইয্ আনা বি-জিল্লি রাসূলিল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুক্ববিলুন।’ আরবী ইবারত –

إذ أنا بظل رسول الله صلى الله عليه وسلم مقبل

অর্থাৎ ইত্যবসরে আমি আল্লাহ’র রাসুলের ছায়ার নাগাল পেয়ে যাই। সংক্ষেপে।

সনদ সহ সম্পূর্ণ রেওয়ায়েত –

قال:حَدَّثَنَا عَفَّانُ حَدَّثَنَا حَمَّادٌ قَالَ ثَابِتٌ عَنْ شُمَيْسَةَ عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: فَبَيْنَمَا انَا يَوْما بِنِصْفِ النَّهَارِ اذَا انَا بِظِلِّ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مُقْبِلٌ. وإسناده حسن عند الحافظ، فكل رجاله ثقات إلا شميسة قال الحافظ عنها: مقبولة.

রেফারেন্সঃ মুসনাদে আহমদ ৬/১৩২; হাদীস নং ২৫০০২; হাদীসের সব রাবী ছিক্বাহ।

(গ) নবীজী (সা.)-এর দীর্ঘ দশ বছরের খাদেম হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) হতে মারফূ সনদে ও একদম সহীহসূত্রে বর্ণিত আছে, তিনি (সা.) কোনো এক ঘটনা প্রেক্ষিতে বলেছেন, ‘রাআইতু জিল্লি ওয়া জিল্লাকুম ফীহা’। আরবী ইবারত –

رأيت ظلى و ظلكم فيها

অর্থাৎ তথায় (জাহান্নামের অগ্নির আলোতে) আমি আমার এবং তোমাদের ‘ছায়া’ দেখেছি। সংক্ষেপে।

সনদ সহ সম্পূর্ণ রেওয়ায়েত-

عبد الله بن وهب حدثني معاوية بن صالح عن عيسى بن عاصم عن زر بن حبيش عن أنس بن مالك قال :صَلَّيْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم صَلاَةَ الصُّبْحِ ، قَالَ : .. ثُمَّ عُرِضَتْ عَلَيَّ النَّارُ بَيْنِي وَبَيْنَكُمْ ، حَتَى رَأَيْتُ ظِلِّي وَظِلَّكُمْ. وهذا إسناد صحيح لا غبار عليه.

রেফারেন্সঃ সহীহ ইবনে খোজায়মা ২/৫০, হাদীস নং ৮৯; মুসতাদরাক লিল হাকিম ৫/৬৪৮; হাদীস নং ৮৪৫৬; হাদীসের মান, সহীহ।

(ঘ) মাজমাউয যাওয়ায়িদ থেকে, এর সনদ সহীহ এবং সকল রাবী সহীহ বুখারী ও মুসলিমের, হাদীসের খণ্ডাংশ,

أن رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يمشي في أناس من أصحابه فتستر بثوب، فلما رأى ظله رفع رأسه فإذا هو بملاءة قد ستر بها

অর্থাৎ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর কিছু সঙ্গীদের মধ্যে হেঁটে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি কাপড় দ্বারা ঢেকে থাকলেন। অত:পর তিনি যখন নিজের ছায়া দেখলেন, মাথা উঠালেন; তৎক্ষনাৎ একটি চাদর দ্বারা নিজেকে ঢেকে ফেললেন।

সনদ সহ সম্পূর্ণ রেওয়ায়েত-

وعن عبد الله بن جبير الخزاعي: أن رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يمشي في أناس من أصحابه فتستر بثوب، فلما رأى ظله رفع رأسه فإذا هو بملاءة قد ستر بها ، فقال له : مه. وأخذ الثوب فوضعه ، فقال : إنما أنا بشر مثلكم .رواه الطبراني ، ورجاله رجال الصحيح ..

রেফারেন্সঃ মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৯/২১, হাদীস নং ১৪২২৫, ইমাম নূরউদ্দীন আল হাইসামী (রহ.) বলেন, এর সকল বর্ণনাকারী সহীহ’র বর্ণনাকারী। ইমাম তাবারানী (রহ.)ও এটি তার ‘সুনানু তাবারানী’ গ্রন্থে নিজ সনদে উল্লেখ করেছেন।

যাকওয়ান এর রেওয়ায়েত-এর তাহকিক,

তাবেয়ী হযরত যাকওয়ান (রহ.)-এর বর্ণনাটির সনদ খুবই জইফ। তাহকীক করলে দেখা যাবে, দুইজন রাবীই তাতে যথাক্রমে অভিযুক্ত এবং অজ্ঞাত। আর আকীদার ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো বর্ণনার রেফারেন্স টানাও অন্যায়। কিন্তু আমি যাকওয়ান (রহ.)-এর বর্ণনাটি আমলে নিয়েই কথা বলছি, তার ঐ বর্ণনায় ‘রাসূল (সা.)-এর ছায়া এর অস্তিত্ব ইংগিতেও অস্বীকার করার কোনো রসদ নেই।

জ্ঞানীদের উদ্দেশ্যে সনদের দুজন রাবী সম্পর্কে ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী (রহ.)-এর কিতাব থেকে নিচে তুলে ধরছি, তিনি লিখেছেন,

عبد الرحمن بن قيس، وهو مطعون، عن عبد الملك بن عبد الله بن الوليد، وهو مجهول، عن ذكوان

অর্থাৎ যাকওয়ান থেকে আব্দুল মালেক বিন আব্দুল্লাহ বিন ওয়ালিদ একজন মাজহূল (অপরিচিত), আর আব্দুর রহমান বিন কায়েস একজন মাত্ব’ঊন তথা অভিযুক্ত।

– শারহুশ শিফা ১/৭৫৩, মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী মাতুরিদি।

শেষকথা হচ্ছে, রাসূল (সা.) সহ সকল নবী রাসূল এমনকি সুপথপ্রাপ্ত সমস্ত মুমিন মুসলমান আল্লাহর “সিফাতি নূর”। যদিও নবীগণ আর সাধারণ মুমিনগণের মধ্যকার ঐ “নূর” এর কোয়ান্টিটি সম্পূর্ণ ভিন্ন, বরং তুলনাহীন। সহীহ মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যাকারক কাজী ইয়াজ (রহ) তার ‘ইকমালুল মুসলিম’ কিতাবের ৩য় খন্ডের ১২৫-২৬ নং পৃষ্ঠায় খুব চমৎকার করে বিষয়টি বুঝিয়ে দিয়েছেন। যেমন তিনি  اللهم اجعلنى نورا-এর তাৎপর্য বুঝিয়ে দিতে লিখেছেন, معنى النور هنا بيان الحق والهداية اليه অর্থাৎ এখানে (নবীজীর শানে ব্যবহৃত) ‘নূর’ এর তাৎপর্য হল, তিনি সত্য ও হিদায়াতের দিকে পথপ্রদর্শনকারী। উদাহরণস্বরূপ, আমরা দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে বলি- সোনার বাংলাদেশ। এখানে আর যাইহোক অন্তত বাংলাদেশকে “সোনা” -এর তৈরী বুঝায়নি! অনুরূপ মক্কা হতে ৬ কিঃ মিঃ দূরে অবস্থিত “গারে হেরা”-কে বলা হয় ‘জাবালে নূর’ বা নূরের পাহাড়! তার মানে এই নয় যে, ওই পাহাড়টি “নূরের তৈরী”! এগুলো জাস্ট ভাষার অলংকার কিবা বাগধারা-ই বলা যায়। যাদের একাডেমিক নলেজ ভালো তাদের এগুলো বুঝতে সমস্যা হবার কথা নয়। অল্প শিক্ষিত বা ‘আনাড়ি’ পরিবেশ থেকে উঠে আসা সাধারণদের বুঝানোর সাধ্য কারো নেই, স্বয়ং ফেরেশতা নেমে আসলেও….! সংক্ষেপে।

লিখক, মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ
শিক্ষাবিদ ও গবেষক

দেশের যেসব জেলায় কাদিয়ানী আস্তানার খোঁজ পাওয়া গেছে

কাদিয়ানী আস্তানাগুলোর বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে এখুনি তাদের মাঝে গঠনমূলক দাওয়াতি কাজ আরম্ভ করা জরুরি, নইলে বিভ্রান্ত অনেক ভাই-বোন ‘ঈমানহারা’ হয়ে চিরতরে জাহান্নামি হয়ে যেতে পারে। আল্লাহ আমাদেরকে দ্বীনের জন্য মেহনত করার তাওফিক দিন, আমীন। উল্লেখ্য, তাদের আস্তানা গুলোর তথ্যটি মূলত ২০১৩ সালের জরিপ অনুসারে। এর বাহিরেও আমরা তাদের আরও কিছু নতুন আস্তানা অন্তর্ভুক্ত করেছি। আমরা আপনাদের মাধ্যমে তাদের বাদ পড়া অবশিষ্ট আস্তানাগুলোর খোঁজ পাওয়া মাত্রই এখানে সেগুলোও অন্তর্ভুক্ত করে দেব, ইনশাআল্লাহ। আমাদের সাথে তথ্য শেয়ার করুন এখানে WhatsApp বা nabifeni44@gmail.com।

চট্টগ্রাম বিভাগ :

চট্টগ্রাম-৫টি। ১. মসজিদ বায়তুল বাসেত, চকবাজার, চট্টগ্রাম শহর। ২. ষোলশহর। ৩. পতেঙ্গা হালকা, বিজয়নগর। ৪. মুরাদপুর ইউনিয়ন, সীতাকুন্ড উপজেলা। ৫. নামায কেন্দ্র, মেয়র গলি, চশমা হিল আবাসিক এলাকা, চট্টগ্রাম।

বিবাড়িয়া-১৫টি। ১. মসজিদুল মাহদী, গ্রাম ঘাটুরা, সুহিলপুর ইউ. বিবাড়িয়া সদর উপজেলা। ২. মসজিদে বায়তুল ওয়াহেদ, গ্রাম কান্দিপাড়া, সদর জেলা। ৩. মসজিদে বাইতুল মাহদী, আশুগঞ্জ উপজেলা, দুর্গাপুর ইউ.। ৪. আহমদীয়া মসজিদ, তালশহর ইউ. আশুগঞ্জ উপজেলা। ৫. আহমদীয়া মসজিদ, সরাইল উপজেলা। ৬. বাশারুক গ্রাম নামায কেন্দ্র, নবিনগর উপজেলা। ৭. মসজিদে আলফজল, বিজয়নগর থানার বিষ্ণপুর ইউ.। ৮. ক্ষুদ্র আহমদীয়া মসজিদ, সদর উপজেলার পশ্চিম দিকে সর্বশেষ একটি গ্রাম ক্ষুদ্র ব্রাহ্মণবাড়িয়া -তে এটি অবস্থিত। ৯. মসজিদে বাশারাত, আশুগঞ্জ থানার তারুয়া ইউ.। ১০. আহমদীয়া মসজিদ, গ্রাম শালগাঁও, নটাই (দক্ষিণ) ইউ. বিবাড়িয়া সদর। ১১. আহমদীয়া নামায কেন্দ্র, দেবগ্রাম, আখাউড়া উপজেলা। ১২. শাহবাজপুর ইউ. সরাইল থানা। ১৩. শতবার্ষিকী স্মারক মসজিদ, গ্রাম কোড্ডা, বাসুদেব ইউ. বিবাড়িয়া সদর। ১৪. নামায কেন্দ্র, বাসুদেব, বিবাড়িয়া সদর। ১৫. গ্রাম নাসিরপুর, নাসিরনগর।

চাঁদপুর-১টি। চরদুঃখিয়া (পূর্ব ইউ.) ফরিদগঞ্জ উপজেলা, চাঁদপুর।

কুমিল্লা-১টি। কোটবাড়ি বিশ্বরোড নন্দনপুর গ্রাম, কুমিল্লা।

ফেনী-২টি। ১. গ্রাম ফাজিলপুর, ডব্লিউ. বি ফাজিলপুর কাদরী হাইস্কুল সংলগ্ন, ইউনিয়ন ফাজিলপুর। ২. গ্রাম বাদুরিয়া, মসজিদে নূর সৈয়দ (কুঠিরহাট বাজারের দক্ষিণ পার্শ্বে), বাদুরিয়া ভুঁইয়া বাড়ীর দরজায়, ২নং বগাদানা ইউ. সোনাগাজী, ফেনী।

নোয়াখালী-১টি। আহমদীয়া নামায কেন্দ্র, চৌমুহনী মন্ডল পাড়া, নোয়াখালী।

রাঙ্গামাটি-১টি। মাহিল্লা, কবিরপুর গ্রাম, আমতলী ইউ., বাঘাইছড়ি উপজেলা, রাঙ্গামাটি।

ময়মনসিংহ বিভাগ :

ময়মনসিংহ-৪টি। ১. আহমদীয়া মসজিদ, আমজাদ বেপারী রোড, আকুয়া দক্ষিণপাড়া। ২. আ. মস. ধানীখোলা ইউ. ত্রিশাল উপজেলা। ৩. ফুলবাড়িয়া আ. মস. ফুলবাড়িয়া উপজেলা। ৪. সোহাগি আহমদীয়া মসজিদ, সোহাগি ইউ. ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা।

জামালপুর-৬টি। ১. মসজিদে মোবারাকা, গ্রাম হোসনাবাদ, মহাদান ইউ. সরিষাবাড়ি উপজেলা। ২. ছোনটিয়া আ. মস., ১৪ নং দিগপাইত ইউ. সদর জেলা। ৩. নয়াপাড়া আ. মস. নয়াপাড়া ইউ. সদর জেলা। ৪. বলারদিয়ার আ. মস. ডোয়াইল ইউ. সরিষাবাড়ী। ৫. গ্রাম সেংগুয়া, ডাকঘর তুলসীপুর, সরিষাবাড়ী উপজেলা। ৬. কয়রা নামাযঘর, গ্রাম কয়রা, ডাকঘর পাটাদহ, সাতপোয়া ইউ, মাদারগঞ্জ উপজেলা।

শেরপুর-১টি। মসজিদে নাসের, রাংটিয়া (ভারত সীমান্তবর্তী এলাকা), ঝিনাইগাতী উপজেলা, শেরপুর।

সিলেট বিভাগ :

হবিগঞ্জ-১টি। ১. আহমদীয়া মসজিদ, গ্রাম জামালপুর, চুনারুঘাট, হবিগঞ্জ।

মৌলভীবাজার-১টি। আহমদীয়া মসজিদ, গ্রাম পাগুলিয়া, মুস্তফাপুর ইউ, সদর উপজেলা।

সুনামগঞ্জ-৪টি। ১. আহমদীয়া মসজিদ, ইসলামগঞ্জ, গৌরারং ইউ, সদর উপজেলা। ২. উমেদপুর গ্রাম নামায কেন্দ্র, বেহেলী ইউ. জামালগঞ্জ উপজেলা। ৩. সেলবরষ নামায কেন্দ্র, সেলবরষ ইউ, ধর্মপাশা উপজেলা। ৪. মসজিদে মাসরূর, ইসলামগঞ্জ, সুনামগঞ্জ (সিলেট হাওর অঞ্চল)।

ঢাকা বিভাগ :

ঢাকা-৭। ১. দারুত তবলীগ মসজিদ ও মিশনারী কমপ্লেক্স, বকশিবাজার। ২. আহমদীয়া মসজিদ, গ্রাম উত্তর বাহেরচর, তারানগর ইউ. কেরানীগঞ্জ উপজেলা, ঢাকা। ৩. আহমদীয়া মসজিদ মিরপুর-২ নাসিমবাগ, ঢাকা-১২১৬। ৪. আল বাইতুল ইসলাম মসজিদ, তেজগাওঁ, ঢাকা। ৫. বায়তুল হাদী, ২৮৯ পূর্ব নাখালপাড়া, তেজগাঁও ঢাকা-১২১৫। ৬. মসজিদুল হুদা, পশ্চিম নন্দীপাড়া, ঢাকা-১২১৯। ৭. আহমদীয়া মসজিদ, আশুলিয়া, সাভার।

কিশোরগঞ্জ-৮। ১. আহমদীয়া মসজিদ, কটিয়াদী উপজেলা। ২. মসজিদে হাদী, বীরপাইকশা, শাহেদল ইউ. হোসেনপুর উপজেলা। ৩. বেতাল আ. মস. বেতাল গ্রাম, মসূয়া ইউনিয়ন। ৪. তেরগাতী গ্রাম, মুমুরদিয়া ইউ. কটিয়াদী। ৫. গালিমগাজী, মহিনন্দ ইউ. সদর উপজেলা। ৬. হোসেনপুর আ. মস. হোসেনপুর উপজেলা। ৭. হোসেনপুর উপজেলার চরহাজীপুর গ্রামে আহমদীয়া নামাজ কেন্দ্র। ৮. বৈরাগীরচর হালকা আ. মস., মসূয়া ইউ. কটিয়াদী।

মুন্সিগঞ্জ-১টি। সদর উপজেলার রমজান বেগ আহমদীয়া মসজিদ, মুন্সিগঞ্জ।

নরসিংদী-১টি। মসজিদুল মাহদী, চরসিন্দুর ইউ. পলাশ, নরসিংদী।

নারায়নগঞ্জ-২টি। ১. মসজিদ নূর, ফতুল্লা নারায়নগঞ্জ। ২. মিশনপাড়া আহমদীয়া মসজিদ, নবাব সলিমুল্লাহ রোড।

টাঙ্গাইল-২টি। ১. চাঁনতারা আহমদীয়া মসজিদ, ঘাটাইল উপজেলা, টাঙ্গাইল। ২. বানিয়াজান আহমদীয়া মসজিদ, ধনবাড়ী উপজেলা।

গাজীপুর ১টি। জোরপুকুর পাড়, জয়দেবপুর, গাজীপুর মহানগর। এটি তাদের অস্থায়ী কার্যালয়।লোকেশনঃ জোরপুকুর পাড় মোড়ের ৫০ গজ উত্তরে, তালেব হাজী সাবের বাসার দক্ষিণ পাশে ‘খুকু’ নামের জনৈকার বাসা। তাদের স্থায়ী কার্যালয় হচ্ছে, রাজবাড়ী, জয়দেবপুর, গাজীপুর মহানগর। আর তাদের অস্থায়ী এবং স্থায়ী কার্যালয়ের মধ্যবর্তী দূরত্ব মাত্র অর্ধ কিলোমিটার।লোকেশনঃ রাজবাড়ী মাঠ সংলগ্ন গাজীপুর মহিলা কলেজের পূর্বপাশ হয়ে ‘সাফা টাউয়ার’ এর দক্ষিণে ও ‘সিনা মসজিদ’ সংলগ্ন। জেনে রাখা দরকার যে, কাদিয়ানীরা একই এলাকার বাসিন্দা আল-মাহমুদ হুরফে বাবু, পিতা-শামসুল হক নামের জনৈক ব্যক্তির কাছ থেকে আড়াই কাঠা জমি ‘ওয়াকফ’ বাবদ গ্রহণ করে। সে সাথে আরও আড়াই কাঠা জমি সহ মোট ৫ কাঠা জমির উপর উপাসনালয় নির্মাণের পরিকল্পনা করে। ধারণা করা যাচ্ছে যে, যদি তাদের উক্ত পরিকল্পনা সফল হয় তাহলে বাংলাদেশে তাদের নির্মিত উপাসনালয় গুলোর মধ্যে সব চেয়ে ব্যয়বহুল “উপাসনালয়” হবে গাজীপুরের উক্ত “কাদিয়ানী উপাসনালয়”। এর ফলে ঐ এলাকায় তাদের দাপট আরও বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে এবং সাধারণ মানুষকে তারা আরও অনেক বেশি বিভ্রান্ত করে “কাদিয়ানী” বানাতে সামর্থ্য হবে। উল্লেখ্য, গাজীপুরের ঐ এলাকায় কাদিয়ানীরা আনুমানিক নব্বই দশক থেকেই তৎপরতা চালিয়ে আসছে। বর্তমানে ঐ মহল্লায় সর্বমোট ৪০টির-ও বেশি কাদিয়ানী পরিবার বসবাস করছে।

খুলনা বিভাগ :

খুলনা-৩। ১. বায়তুর রহমান আহমদীয়া মসজিদ, খুলনা সদর। ২. দারুল ফযল আহমদীয়া মস. ১৫/১ নিরালা আবাসিক এলাকা, ক্রস-২, রঘুনাথপুর ইউ, ডুমুরিয়া উপজেলা, খুলনা-৯১০০। ৩. ঘড়িলাল গ্রাম, কয়রা ইউ. কয়রা উপজেলা।

চুয়াডাঙ্গা-৪। ১. ভাটিয়াপাড়া ইউ. চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা। ২. মসজিদে মোবারক, সন্তোষপুর, জীবননগর। ৩. শৈলমারী গ্রাম, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা। ৪. বায়তুস সোবহান আহমদীয়া মসজিদ, উথলী ইউ. জীবননগর উপজেলা।

যশোর-২। মসজিদে মাহমুদ, রঘুনাথপুর গ্রাম, ঝিকরগাছা ইউ. যশোর। ২. সর্পরাজপুর আহমদীয়া মসজিদ, সর্পরাজপুর গ্রাম, জগদীশপুর ইউ. চৌগাছা উপজেলা, যশোর।

কুষ্টিয়া-৪। ১. নাসেরাবাদ, গ্রাম মহিষাখালী, চিথলিয়া ইউ, মিরপুর উপজেলা, কুষ্টিয়া। ২. নাসেরাবাদ, গ্রাম কোলদিয়াড়, থানা দৌলতপুর, কুষ্টিয়া। ৩. কোর্টপাড়া, কুষ্টিয়া সদর। ৪. উত্তর ভবানীপুর, কুষ্টিয়া সদর উপজেলা।

সাতক্ষীরা-৬। ১. মসজিদ বায়তুস সালাম, সুন্দরবন (সাতক্ষীরা থেকে প্রায় ৭০ কি.মি. দূরে শ্যামনগর উপজেলার মুন্সীগঞ্জে অবস্থিত বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন), সাতক্ষীরা। ২. বড়ভেট খালি হালকা আহমদীয়া মসজিদ, যতীন্দ্রনগর গ্রাম, মুন্সীগঞ্জ, শ্যামনগর। ৩. মীরগাং আ. মস. মুন্সীগঞ্জ ইউ. শ্যামনগর উপজেলা। ৪. বলিয়ানপুর, কেরালকাতা ইউ. কলারোয়া উপজেলা, সাতক্ষীরা। ৫. ঝাউডাঙ্গা ইউ. সাতক্ষীরা সদর জেলা। ৬. গ্রাম খেলার ডাঙ্গা, লাবসা ইউ. সদর জেলা।

বরিশাল বিভাগ :

বরগুনা-৩টি। ১. মসজিদুল মাহদী, খাকদান গ্রাম, কুকুয়া ইউ, আমতলী উপজেলা। ২. মসজিদুল হাদী, গ্রাম কৃষ্ণনগর, কুকুয়া ইউ, আমতলী উপজেলা, বরগুনা সদর। ৩. আহমদীয়া মুসলিম জামাত, গ্রাম পূর্ব কাউনিয়া, পোস্ট কাউনিয়া হাট, উপজেলা বেতাগী, জেলা বরগুনা। স্থানীয় কাদিয়ানী মোয়াল্লেম মৌ. ফরহাদ হোসেন (সেপ্টেম্বর ২০২৪ ইং)।

পটুয়াখালী-২টি। ১. আহমদীয়া মসজিদ, মিঠাপুকুর পাড়, পুরান বাজার, সদর উপজেলা, পটুয়াখালী। ২. বড় বাইশদীয়া আহমদীয়া মসজিদ ও মিশনারী কমপ্লেক্স, রাঙ্গাবালী উপজেলা, পটুয়াখালী।

রাজশাহী বিভাগ :

রাজশাহী-৩টি। ১. বাইতুল আওয়াল, রাজশাহী শহর। ২. তাহেরাবাদ (খাঁয়েরহাট) আহমদীয়া মসজিদ, ২ নং গড়গড়ি ইউ. বাঘা উপজেলা। ৩. বাগমারা আহমদীয়া মসজিদ, শুভডাঙ্গা ই্উ. সৈয়দপুর চকপাড়া গ্রাম, রাজশাহী।

বগুড়া-৩টি। ১. আহমদীয়া মসজিদ ও মিশন কমপ্লেক্স, সেউজগাড়ী লেন, গ্রাম সুত্রাপুর, বগুড়া সদর। ২. নিউসোনাতলা আহমদীয়া মসজিদ, সারিয়াকান্দি উপজেলা, বগুড়া। ৩. কড়িতলা আহমদীয়া মসজিদ, চন্দনবাইশা ইউ., সারিয়াকান্দি, বগুড়া।

নাটোর-৪। ১. পুরুলিয়া গ্রাম, গুরুদাসপুর থানা। ২. মহারাজপুর, চাপিলা ইউ. গুরুদাসপুর থানা। ৩. মসজিদে হাশেম তেবাড়িয়া ইউ. নাটোর সদর উপজেলা। ৪. কাফুরিয়া আহমদীয়া মসজিদ, কাফুরিয়া ইউ. নাটোর সদর উপজেলা।

পাবনা-১টি। নূরনগর আহমদীয়া মসজিদ, ৪ নং নূরনগর ইউ., ঈশ্বরদী উপজেলা, পাবনা।

সিরাজগঞ্জ-১টি। সিরাজগঞ্জ আহমদীয়া নামাজ কেন্দ্র।

রংপুর বিভাগ :

রংপুর-৮। ১. মুন্সিপাড়া, সদর জেলা। ২. মাহিগঞ্জ থানা, রংপুর। ৩. শ্যামপুর, বদরগঞ্জ উপজেলা, রংপুর সদর। ৪. দিলালপুর গ্রাম, রাধানগর ইউ, বদরগঞ্জ উপজেলা। ৫. বড় দরগাহ ইউ, পীরগঞ্জ উপজেলা। ৬. দিলালপুর হালকা, রাধানগর ইউ। ৭ শিবপুর, শ্যামপুর আহমদীয়া জামাত, বদরগঞ্জ উপজেলা। ৮. কাউনিয়া আহমদীয়া মসজিদ, টেপামধুপুর ইউ. (তিস্তা নদীর তীরে অবস্থিত) কাউনিয়া উপজেলা, রংপুর।

দিনাজপুর-৯। ১. আউলিয়াপুর, দিনাজপুর সদর। ২. বীরগঞ্জ বড় হাট আহমদীয়া নামায কেন্দ্র। ৩. বীরগঞ্জ উপজেলা। ৪. গ্রাম জগদল, বীরগঞ্জ উপজেলা । ৫. গ্রাম ভাতগাঁও, ৫নং সুন্দরপুর ইউ, কাহারোল উপজেলা। ৬. ডোহাণ্ডা আহমদীয়া মসজিদ, মুকন্দপুর ইউ, কাহারোল। ৭. গ্রাম হেলেঞ্চাকুড়ি (পূর্ব সাদিপুর), ৫নং সাদিপুর ইউ, কাহারোল উপজেলা। ৮. মসজিদে মাহমুদ, রামপুর ইউ, পার্বতীপুর উপজেলা, দিনাজপুর। ৯. বড় গুড়গোলা আহমদীয়া মসজিদ, দিনাজপুর সদর উপজেলা।

গাইবান্ধা-১টি। মসজিদে সালাম, পূর্ব মদনপাড়া গ্রাম, কঞ্চিপাড়া ইউ, ফুলছড়ি উপজেলা।

নীলফামারী-২টি। ১. মসজিদে তাহের, চড়াইখোলা ইউ, সদর উপজেলা। ২. সৈয়দপুর আহমদীয়া নামায কেন্দ্র, সৈয়দপুর উপজেলা।

পঞ্চগড়-৬টি। ১. আহমদনগর আহমদীয়া মসজিদ ও মিশন কমপ্লেক্স, সদর জেলা। ২. দারুল মোবারক আহমদীয়া মসজিদ, গ্রাম আহমদনগর। ৩. সোনাচান্দি, বনগ্রাম ইউ, বোদা উপজেলা। ৪. শালসিঁড়ি মসজিদ ও মিশনারী কমপ্লেক্স। ৫. ডাঙ্গাপাড়া, সাকোয়া ইউ, বোদা। ৬. গ্রাম কমলাপুকুরী, মাড়েয়া বামনহাট ইউ, বোদা।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক মুহাম্মদ নূরুন্নবী।

আল্লাহ’র জাতের জন্য ‘শরীর’ সাব্যস্ত করা যাবে কি?

প্রশ্ন : আল্লাহ’র জাতের জন্য ‘শরীর’ সাব্যস্ত করা যাবে কি?

উত্তর : বিশিষ্ট হাদীসবিশারদ ও দার্শনিক ইমাম, শায়খ ইবনু তাইমিয়্যাহ রাহি. (৭২৮ হি.) এ সম্পর্কে লিখেছেন,

فهذا الجسم في لغة العرب، وعلى هذا فلا يقال للهواء : جسم، ولا للنَّفَسِ الخارج من الإنسان : جسم، ولا لروحه المنفوخة فيه : جسم. ومعلوم أن اللّه ـ سبحانه ـ لا يماثل شيئًا من ذلك، لا بدن الإنسان ولا غيره، فلا يوصف اللّه ـ تعالى ـ بشيء من خصائص المخلوقين، ولا يطلق عليه من الأسماء ما يختص بصفات المخلوقين، فلا يجوز أن يقال : هو جسم، ولا جسد.

অর্থাৎ “আরবী ভাষায় এটিই দেহ। সেই অনুসারে বায়ুকে ‘দেহ’ বলা যায় না। কোনো ব্যক্তির নিঃশ্বাসকেও ‘দেহ’ বলা যাবেনা। মানুষের মধ্যে প্রস্ফুটিত আত্মাকেও ‘দেহ’ বলা যাবেনা। জানা আছে যে, আল্লাহ তালাকে মাখলুকের (সৃষ্টির) কোনো সিফাত বা গুণ দ্বারা গুণান্বিত করা যাবেনা এবং তাঁর জন্য এমন কোনো নাম ব্যবহার করা যাবেনা, যা সৃষ্টির বৈশিষ্ট্যের সাথে খাস। সেহেতু একথা বলা জায়েজ নয় যে, তাঁর (আল্লাহর) শরীর কিংবা দেহ রয়েছে।”

(মাজমু ফাতাওয়া, ইবনু তাইমিয়্যাহ ১৭/৩১৫)।

এ থেকে বুঝা গেল,

১. দেহ শব্দটি সৃষ্টির একটি গুণ, স্রষ্টার সাথে এটি বেমানান।

২. ‘দেহ’ আল্লাহর অন্যতম একটি সৃষ্টি। আর স্রষ্টাকে তাঁর কোনো সৃষ্টি দ্বারা গুণান্বিত করা যাবে না।

৩. আল্লাহর দেহ বা শরীর রয়েছে, এধরণের চিন্তাভাবনা সম্পূর্ণ অনর্থক ও পরিত্যাজ্য।

৪. স্রষ্টার জাত বা সত্তাকে যেখানে দেহ বা শরীর বলে কল্পনা করাই নিষেধ, সেখানে আল্লাহর জন্য ‘ইস্তিওয়া’ বা ‘নুযূল’ শব্দগুলোকে আক্ষরিক অর্থে গ্রহণ করাও অসম্ভব বৈ নয়। তাই ‘সমাসীন’, ‘উপবিষ্ট’, ‘বসা’ বা ‘অবতরণ’ ইত্যাদি শব্দগুলো যথোপযুক্ত রূপকার্থেই উদ্দেশ্য, আক্ষরিক অর্থে উদ্দেশ্য নয়।

লিখক, মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ
শিক্ষাবিদ ও গবেষক

প্রামাণ্য স্ক্যানকপি –

দানিয়াল নবীর দাফন কবে ও কোথায় হয়?

হযরত দানিয়াল (আ.) সম্পর্কিত এ ঘটনাটির সত্যতা আছে কি?

উত্তর :

দানিয়াল (আ.) সম্পর্কিত নিম্নোক্ত ঘটনাটির সনদ প্রমাণিত নয়, বরং ভিত্তিহীন। রাসূল (সা.) থেকে এধরণের কোনো কথার সনদ বা বিশুদ্ধ সূত্র খোঁজে পাওয়া যায়নি।

ঘটনাটি ঐতিহাসিক ইবনু কাসীর (রহ.) “আল বিদায়া” গ্রন্থে এনেছেন, তিনি নিজেও স্বীয় তাফসীর কিতাবের ভূমিকায় ঘটনাটি সম্পর্কে মন্তব্য করে লিখেছেন যে, এটি একটি ইসরাঈলী ঘটনা। আর ইসলামী শরীয়াহ এর বিরোধী না হলে তখন ইসরাঈলী ঘটনা বর্ণনায় কোনো অসুবিধা নেই। হাদীসে এসেছে, ইসরাইলী বর্ণনার ব্যাপারে চুপ থাকাই উত্তম, সত্য বা মিথ্যা কোনোটাই মন্তব্য করা যাবেনা।

ঘটনা :

قال أبو بكر ابن أبي الدنيا في كتاب ” أحكام القبور ” : حدثنا أبو بلال محمد بن الحارث بن عبد الله بن أبي بردة بن أبي موسى الأشعري حدثنا أبو محمد القاسم بن عبد الله عن أبي الأشعث الأحمري قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : إن دانيال دعا ربه عز وجل أن تدفنه أمة محمد فلما افتتح أبو موسى الأشعري تستر ، وجده في تابوت ، تضرب عروقه ووريده ، وقد كان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : من دل على دانيال فبشروه بالجنة . فكان الذي دل عليه رجل يقال له : حرقوص فكتب أبو موسى إلى عمر بخبره ، فكتب إليه عمر أن ادفنه ، وابعث إلى حرقوص ; فإن النبي صلى الله عليه وسلم بشره بالجنة . وهذا مرسل من هذا الوجه ، وفي كونه محفوظا نظر . والله أعلم

আবু বকর ইব্‌ন আবী আদ-দুনিয়া (রহ.)… তাঁর রচিত “কিতাবু আহকামিল কুবুর” গ্রন্থে আবুল আশআছের বরাতে লিখেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : নবী দানিয়াল আল্লাহর নিকট দোয়া করেছিলেন যে, তার দাফনকার্য যেন উম্মতে মুহাম্মাদীর হাতে সুসম্পন্ন হয়।

পরবর্তীকালে আবূ মূসা আশআরী (রা.)-এর হাতে ইরাকের তুস্তর নগরী বিজিত হলে সেখানে হুরমুজান শাসকের বায়তুলমালের অভ্যন্তরে একটি চৌকির উপর এক ব্যক্তির লাশ দেখতে পান। এ সময় তাঁর দেহের শিরা ও কাঁধের মোটা রগ দুটি নড়াচড়া করছিল। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছিলেন, যে ব্যক্তি দানিয়ালের লাশ সনাক্ত করতে পারবে, তাকে জান্নাতের সু-সংবাদ দিবে। হারকুস নামক এক ব্যক্তি দানিয়ালের লাশ সনাক্ত করেছিলেন। আবু মূসা (রা.) হযরত উমর (রা)-কে এ বিষয়ে অবহিত করেন। তখন হযরত উমর (রা) পত্র মারফত তাকে জানান যে, দানিয়ালকে ওখানে (ইরাকে) দাফন কর এবং হারকুস (حرقوص)কে আমার নিকট পাঠিয়ে দাও….!

(আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ২/৩৭৮)।

মান – উল্লিখিত ঘটনাটির সূত্র বা সনদ অপ্রমাণিত, অগ্রহণযোগ্য।

জ্ঞাতব্যঃ বর্ণনাটি বিশ্বাসযোগ্য না হওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে, ঘটনাটির বর্ণনাকারী আবুল আলীয়া’র ধারণামতে, লাশটি ৩০০ বছর পূর্বেকার। যদি তাই হয় তাহলে এ লাশ কিছুতেই দানিয়াল নবীর হতে পারেনা। কেননা সহীহ বুখারী শরীফের বর্ণনা এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ও ঈসা ইব্‌নু মরিয়ামের মাঝখানে অন্য কোনো নবীর আগমন ঘটেনি। আর এ দুই নবীর মধ্যবর্তী সময়ের ব্যবধান কমপক্ষে ৫০০ থেকে ৬০০ বছর।

উল্লেখ্য, দানিয়াল নবী ছিলেন নাকি একজন ওলী ছিলেন, এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। পবিত্র কুরআন এবং বিশুদ্ধ হাদীস সমূহে তাঁর সম্পর্কে তেমন কিছু উল্লেখ নেই। তবে ঐতিহাসিক বিবরণ মতে, তিনি দাউদ (আ.) এর পরের এবং জাকারিয়া (আ.)- এর পূর্বের একজন তাওরাহ অনুসারী ইসরাইলী নবী ছিলেন। তাঁকে তৎকালীন প্রবল প্রতাপশালী বাদশাহ বুখতনসরের নির্দেশে জেরুজালেম থেকে ইরাকে বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে তিনি সেখানেই ইন্তেকাল করেন।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

সোলাইমান নবী (আ.) এর স্ত্রীদের প্রকৃত সংখ্যাটি কেমন?

প্রশ্ন : হযরত সোলাইমান (আ.)-এর স্ত্রীদের প্রকৃত সংখ্যাটি নিয়ে আমি দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছি। আপনি কি আমাকে এর বিহিত একটা সমাধান দিতে পারবেন?

উত্তর : হযরত সোলাইমান (আ.)-এর স্ত্রীদের সংখ্যার ব্যাপারে সহীহ গ্রন্থের হাদীস সমূহে নানা অংক উল্লেখ রয়েছে। যেমন এক জায়গায় উল্লেখ আছে, হযরত সোলাইমান (আ.) বলেছিলেন,

لأَطُوفَنَّ اللَّيلَةَ بِمِائَةِ امرَأَةٍ

অর্থাৎ “আজ রাতে আমি নিশ্চয়ই একশত স্ত্রীর নিকট পরিভ্রমণ (সহবাস) করব।” আপনি যদি সহীহ গ্রন্থগুলো সহ হাদীসের অপরাপর সোর্সগুলোও দেখেন তবে দেখবেন যে, সেখানে হযরত সোলাইমান (আ.) কোনো এক রাত্রিতে নিজ স্ত্রীদের মধ্য থেকে ৬০, ৭০, ৯০, ৯৯ বা ১০০ জন স্ত্রীর নিকট গমনের ঐতিহাসিক ঘটনার উল্লেখ আছে। (বুখারী হা/২৮১৯, ৩৪২৪, ৫২৪২, ৬৬৩৯, ৭৪৬৯; মুসলিম হা/১৬৫৪; মিশকাত হা/৫৭২০)।

ইমাম বুখারী ঐতিহাসিক অসঙ্গতিপূর্ণ বিবরণগুলো তাহলে কিজন্য গ্রন্থবদ্ধ করলেন?

উত্তরে বলা হবে যে, ইমাম বুখারী (রহ.) বিভিন্ন সনদে ঐতিহাসিক বিবরণটি নিজ সহীহ গ্রন্থে শুধুমাত্র সংগ্রহের উদ্দেশ্যেই এনেছেন, স্ত্রীদের সংখ্যা জানান দেয়ার জন্য আনেননি। কারণ এধরণের ঐতিহাসিক ঘটনা উল্লেখের মধ্যে সাধারণদের তেমন কোনো উপকারিতা থাকেনা।

ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) ফাতহুল বারী গ্রন্থে এ সম্পর্কে লিখেছেন যে, বর্ণনাগুলোতে সোলাইমান (আ.)-এর স্ত্রীদের সুনির্দিষ্ট সংখ্যা বর্ণনা মূখ্য নয়, বরং ইন-জেনারেল ঘটনার অবতারণা করাই উদ্দেশ্য।

শারেহে মুসলিম ইমাম নববী (রহ.) আরও সুন্দর কথা বলেছেন, তিনি বলেছেন,

ولا نرى داعياً إلى استقصاء نسائه وحصرها إذ لا يَنْبَنِي على ذلك أمر ديني أو دنيوي

অর্থাৎ আমরা তার স্ত্রীদের (প্রকৃত সংখ্যার) তদন্ত এবং (নির্দিষ্ট সংখ্যায়) সীমাবদ্ধ করার কোনো কারণ দেখি না, কারণ এটি কোনো ধর্মীয় বা পার্থিব বিষয়ের উপর ভিত্তি রাখে না।

যারা ইতিহাসের ছাত্র তাদের জানা থাকার কথা যে, সাধারণত ঐতিহাসিক যে কোনো ঘটনার বর্ণনাকারীদের জন্য সেটিকে স্পেসিফিকভাবে (প্রকৃত সংখ্যা) তুলে ধরা সম্ভব হয়না, মতভেদ হয়ে থাকে। কারণ হচ্ছে, ঘটনাগুলো একাধিক চেইনে বর্ণিত থাকে, ফলে চেইনগুলোর প্রথমদিকের কোনো রাবী যদি ভুল করেন তাহলে পুরো ব্যাপারটাই উলোটপালোট হয়ে যেতে বাধ্য।

উল্লেখ্য, হযরত সোলাইমান (আ.) এর মৃত্যু আনুমানিক ৯৩১ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে। এতে সাহাবায়ে কেরাম এবং তাঁর (আ.) যুগের মাঝখানে প্রায় দেড় হাজার বছরের ব্যবধান। যার ফলে সাহাবায়ে কেরামগণ উক্ত ঘটনার প্রকৃত সনদ বা চেইনের শেষাংশের রাবী হওয়ায় তাঁদের কাউকে উক্ত ঘটনার জন্য অভিযুক্ত করা ঠিক হবেনা। কাজেই ইমাম বুখারী (রহ.) কর্তৃক সহীহ গ্রন্থে এ সকল মতভেদপূর্ণ সংখ্যা উল্লেখ করা নিয়ে চিন্তিত হবার কারণ নেই। বলাবাহুল্য, ইমাম বুখারী (রহ.) নিজ গবেষণার বিচারে ৯০ জনের হাদীসটিকে অধিক বিশুদ্ধ বলেছেন। সে যাইহোক, ফিলিস্তিন বংশোদ্ভূত হযরত সোলাইমান (আ.)-এর স্ত্রীর সংখ্যার ব্যাপারে ইস্রাঈলী সোর্স কিতাবুল মুকাদ্দাসের ভাষ্য হচ্ছে,

أن سليمان “كَانَتْ لَهُ سَبْعُ مِئَةٍ مِنَ ٱلنِّسَاءِ ٱلسَّيِّدَاتِ، وَثَلَاثُ مِئَةٍ مِنَ ٱلسَّرَارِيّ

“সোলাইমান (আ.) এর সাতশত স্ত্রী ও তিনশত উপপত্নী ছিল।” এরই উদ্ধৃতি টেনেছেন প্রখ্যাত মুফাসসির ইমাম ইবনু কাসীর (রহ.) তাঁর ঐতিহাসিক রচনা ‘আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ এর মধ্যেও। বিখ্যাত ইসলামী ডিবেটার ও দাঈ ডক্টর আহমেদ দীদাত (রহ.) তার একটি লেকচারেও সোলাইমান (আ.) এর স্ত্রীর সংখ্যা কত, এমন একটি প্রশ্নের জবাবে ইস্রাঈলীদের সোর্স থেকে অনুরূপ তথ্য দিয়েছেন।

বলে রাখতে চাই যে, আসলে যারা ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যক রেওয়ায়েতগুলোর উপর আঙ্গুল উঁচিয়ে সাহাবীদের দিকে অভিযোগের তীর নিক্ষেপ করতে চাচ্ছেন তাদের বুঝা উচিত যে, ধরুন আজকের এ দিনে কোনো ডাকাতদলের হাতে আপনার গ্রামে এক সাথে ১৫/২০ জন মানুষ খুন হল। এমতাবস্থায় আগামী একশত বছর পরেও কি এ হিসেব একই থাকবে নাকি বদলেও যেতে পারে? অবশ্যই বদলে যেতে পারে। কেননা ঘটনার বর্ণনাকারীদের দুর্বলতা হেতু সময়ের ব্যবধানে হিসেব বদলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। তার অর্থ এই নয় যে, এ জন্য মূল ঘটনাটিই ভিত্তিহীন হয়ে যাবে। হযরত সোলাইমান (আ.) এর স্ত্রীগণের প্রকৃত হিসেবটিকেও একই দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে হবে। যেহেতু এখানে স্ত্রীদের প্রকৃত সংখ্যা কত, তা জানান দেয়া মূখ্য নয়, বরং ঘটনাটির মাধ্যমে নবীদের শক্তি ও ক্ষমতার বিশেষত্ব বর্ণনা দেয়াই মূখ্য। একই রাতে এত জন স্ত্রীর সাথে সহবাস করার শক্তি ও সামর্থ্য কেবল নবীরই থাকতে পারে। উল্লেখ্য, একজন নবী দুনিয়ার জীবনেই জান্নাতি ৪০ জন শক্তিশালী পুরুষের সমপরিমাণ শক্তি একাই প্রাপ্ত হয়ে থাকেন। তাছাড়া স্ত্রীদের সংখ্যা বর্ণনার বাহ্যিক এই ভিন্নতা জামহূর উসূলবিদগণের দৃষ্টিতে পরস্পর সাংঘর্ষিক নয়। কারণ ছোট সংখ্যা উল্লেখের দ্বারা বড় সংখ্যা নাকচ হয়ে যাবেনা।

ঐতিহাসিক ঘটনার বৃত্তান্তে ইন-জেনারেল উপস্থাপনা এবং স্পেসিফিক সংখ্যা বর্ণনায় বিভিন্নরকম হওয়ার দৃষ্টান্ত স্বয়ং পবিত্র কুরআনেও বিদ্যমান। যেমন, সূরা কাহাফ এর ২২ নং আয়াতের মধ্যে আসহাবে কাহাফের (গুহাবাসীদের) ঐতিহাসিক ঘটনার অবতারণা করতে গিয়ে আল্লাহ তালা বলছেন, “অচিরেই তারা বলবে, ‘তারা ছিল তিনজন; তাদের চতুর্থটি ছিল তাদের কুকুর।’ কেউ কেউ বলবে, ‘তারা ছিল পাঁচজন; তাদের ষষ্ঠটি ছিল তাদের কুকুর।’ ওরা অজানা বিষয়ে অনুমান (তীর) চালায়। আর কেউ কেউ বলবে, ‘তারা ছিল সাতজন; তাদের অষ্টমটি ছিল তাদের কুকুর।’ বল, ‘তাদের সংখ্যা আমার প্রতিপালকই ভাল জানেন; তাদের সংখ্যা অল্প কয়েকজনই জানে।’ সুতরাং সাধারণ আলোচনা ব্যতীত তুমি তাদের বিষয়ে বিতর্ক করো না এবং তাদের কাউকেও তাদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করো না।” (কাহাফ)।

খেয়াল করুন, আল্লাহ চাইলে সঠিক সংখ্যাটি বলে দিতে পারতেন, কিন্তু বলেননি। কেননা এটি নিছক একটি ঐতিহাসিক ব্যাপার। এখানে ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণই মূখ্য, স্পেসিফিক সংখ্যা বলে দেয়াতে উম্মাহ’র কোনো উপকারিতা নেই।

দীর্ঘ আলোচনার সামারী হচ্ছে, এ সকল ক্ষেত্রে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের মূলনীতি হ’ল,

إذَا حَدَّثَكُمْ أَهْلُ الْكِتَابِ فلَا تُصَدِّقُوهُمْ وَلَا تُكَذِّبُوهُمْ ، وَقُولُوا: آمَنَّا بِاللهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ ، فَإِنْ كَانَ حَقًّا لَمْ تُكَذِّبُوهُمْ ، وَإِنْ كَانَ بَاطِلًا لَمْ تُصَدِّقُوهُمْ

অর্থাৎ আহলে কিতাবী তথা ইসরাঈলীরা তোমাদেরকে যখন কোনো কথা বর্ণনা করবে তখন তাদের কথাকে সত্যায়ন করবেনা এবং মিথ্যাও বলবেনা। তোমরা বরং বলবে, আমরা আল্লাহ এবং তাঁর কিতাব সমূহ এবং সকল রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছি। কেননা যদি তা সত্য হয়ে থাকে তাহলে তোমরা তাকে মিথ্যা বলতে পারো না, আর যদি বাতিল (মিথ্যা) হয়ে থাকে তাহলে তোমরা তা সত্যায়ন করতে পারো না। (মুসনাদে আহমদ)।

এতে বুঝা গেল, ইস্রাঈলী বর্ণনা সমূহ ইসলামের আকায়েদ ও মৌলনীতির বিরোধী না হলে তার ব্যাপারে সত্য বা মিথ্যা কোনো মন্তব্য করা যাবেনা। (আবুদাউদ হা/৩৬৪৪; আহমাদ হা/১৭২৬৪; সহীহাহ হা/২৮০০)। যেজন্য, ইমাম বুখারী (রহ.) এর উল্লিখিত ঐতিহাসিক ঘটনাটিই যেহেতু ওহী নয়, বড়জোর ইসরাঈলীদের বিভিন্ন চেইন থেকে প্রাপ্ত সংবাদ, সাহাবায়ে কেরামগণও কোনোদিন প্রশ্ন তুলেননি; রাসূল (সা.) থেকেও এগুলোর সত্য বা মিথ্যা হওয়ার স্পেসিফিক কোনো দৃঢ় ফরমান নেই, সেহেতু উম্মাহ’র দায়িত্ব হচ্ছে, এ ব্যাপার গুলোকে ঐতিহাসিক জায়গা থেকে মূল্যায়ন করা, সত্য বা মিথ্যা কোনটাই মন্তব্য না করা। পবিত্র কুরআনের শিক্ষামতে, এ ধরনের প্রেক্ষিতে (Situation) নিশ্চিত জ্ঞান ব্যতীত যারা বিতর্ক করতে চায় তাদের কারও সাথে তর্কে না জড়ানো (কাহাফ ২২)। আল্লাহ আমাদেরকে হাদীস অস্বীকারকারী নির্বোধবন্ধুদের বাড়াবাড়ি থেকে হেফাজত করুন। আমীন।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী – শিক্ষাবিদ ও গবেষক