ঈসা (আ:) শূলিবিদ্ধ হননি! এটাই প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা

0
ঈসা (আ:) শূলিবিদ্ধ হননি! এটাই প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা

ঈসা (আ:)-কে শূলিবিদ্ধ করার এ জঘন্য বিশ্বাস কাদের?

প্রশ্ন :- “ওয়ামা ছালাবূহু” (০৪:১৫৭) এর প্রকৃত মর্মার্থ কী? তাত্ত্বিক ও যুক্তিকভাবে বুঝিয়ে দেবেন! আরো জানতে চাই যে, “ঈসার মৃত্যু নিশ্চিত করার পরে শূলী থেকে নামানো” বিশ্বাস কাদের?

জবাব :- আপনার প্রশ্নের মূল জবাবে একটু পরেই যাচ্ছি। প্রথমে জেনে নিন যে, পবিত্র কুরআনের ভাষায় : ইহুদীদের অন্যতম দাবী এই ছিল “আমরা মরিয়ম পুত্র ঈসাকে হত্যা করেছি”। ব্যস, তাদের দাবী এতটুকুতেই সীমাবদ্ধ। এখন আল্লাহতালা তাদের দাবী খন্ডন করলেন কিভাবে তা জানা প্রয়োজন এবং বুঝাও প্রয়োজন!

খন্ডন :-

আল্লাহতালা তাদের উক্ত দাবী খন্ডন করতে গিয়ে ২টি শব্দ উল্লেখ করেছেন। (১) “তারা তাঁকে হত্যা করেনি।” তার মানে ইহুদীদের দাবীর খন্ডন হয়ে গেল। তারপরেই আল্লাহ বলছেন (২) “তারা তাঁকে শূলেও চড়ায়নি।” এখন ভাবনা জন্ম দেয় যে, ইহুদীদের দাবী তো শুধুই ১টি ছিল। অথচ আল্লাহতালা সেটির খন্ডন করেই পুনরায় বলছেন “তারা তাঁকে শূলেও চড়ায়নি।” এর রহস্য কী?

এর রহস্যের জট খুলতে চাইলে সূরা মায়েদার ১১০ নং আয়াতটি পড়ুন। আপনি দেখতে পাবেন যে, ঈসাকে হত্যার ষড়যন্ত্রকারীদের সম্পর্কে সেখানে পরিষ্কার শব্দে “কাফাফতু বনী ইসরাইলা আনকা অর্থাৎ তখন আমি [আল্লাহ] বনী ইসরাইলকে তোমা থেকে নিবৃত্ত রেখেছিলাম” উল্লেখ আছে।

খ্রিস্টানদের কিতাবেও পবিত্র কুরআনের উক্ত বক্তব্যের সমর্থনে পাওয়া যায় যে, ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার আগের দিন যীশু (আ:) আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছিলেন, তাঁকে ক্রুশবিদ্ধ হওয়া থেকে ইহুদীদের কাছ থেকে রক্ষা করার জন্য (ম্যাথু ২৬:৩৯)। এবার তো পুরোই পরিষ্কার হয়ে গেল যে, ইহুদীরা ঈসাকে শূলে চড়াবে তো দূরে থাক, তারা বরং তাঁর কাছেও ঘেষতে পারেনি।

ফলাফল দাঁড়াল এই যে, ঈসা (আ:)-কে ইহুদীরা ‘শূলে না চড়ানো’ ব্যাপারটিও সুস্পষ্ট হয়ে গেছে। তাই প্রশ্ন আগের মতই থেকে যাচ্ছে যে, তথাপি ইহুদীদের দাবীর খন্ডনে আল্লাহতালা “ওয়ামা ছালাবূহু” কেন বললেন?

এর জবাব হল, সেই সময়কার নিয়ম ছিল “মিথ্যাবাদী ও ভন্ড প্রতারক” শ্রেণীর অপরাধীদের শূলে চড়িয়ে হত্যা করা হত। ইহুদীরা ঈসা (আ:)-কে যেহেতু মিথ্যাবাদী ও প্রতারক আখ্যা দিত, তাই তারা তাঁকে হত্যা করতে যখনি জমায়েত হল তখনি আল্লাহতালা তাঁর থেকে ইহুদীদের নিবৃত রাখলেন এবং আকাশে উঠিয়ে নিলেন।

ঘটনাক্রমে ইহুদীরা ঈসা (আ:)-এর সাদৃশ্যপূর্ণ নিজেদেরই যে লোকটিকে শূলে চড়িয়েছিল সেই লোকটিকে তারা প্রকৃতপক্ষে ঈসা-ই ধারণা করেছিল। আল্লাহতালা পরের অংশে ইহুদীদের এ ধারণাকেও খন্ডন করে দিতে বলেছেন “ওয়ামা ছালাবূহু” (তাফসীরে জালালাইন)। তার মানে “তারা ঈসাকে হত্যা তো করেইনি, হত্যা করার উদ্দেশ্যে শূলিতেও চড়ায়নি।”

তাহলে তাঁকে কী করা হয়েছিল? সোজা উত্তর – “ওয়ালাকিন শুব্বিয়া লাহুম অর্থাৎ কিন্তু তাদের (কোনো একজনকে ঈসার সাদৃশ্য করে দেয়ার ফলে) বিভ্রম হয়েছিল।”

তাদের বিভ্রম হওয়ার প্রেক্ষিতে বাস্তব ঘটনার স্বরূপ :-

এরূপ বিভ্রম হওয়ার ফলে তদানীন্তন ইহুদ এবং খ্রিষ্টানরাও ঈসার ব্যাপারে মতভেদে জড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি পবিত্র কুরআনেও নিম্নরূপ এসেছে। আল্লাহতালা ফরমান : “যারা তার সম্বন্ধে মতভেদ করেছিল তারা নিশ্চয় এ সম্বন্ধে সংশয়যুক্ত ছিল; এ সম্পর্কে অনুমানের অনুসরণ ব্যতীত তাদের কোনো জ্ঞানই ছিলনা। এটি নিশ্চিত যে, তারা তাঁকে হত্যা করে নাই। (তারপর আল্লাহতালা আরো ফরমান) “বাল রাফা’আহুল্লাহু ইলাইহি” তথা বরং আল্লাহ তাঁকে তাঁর নিজের নিকট [আকাশে] তুলিয়ে নিয়েছেন। (বিস্তারিত তাফসীরের কিতাবে দেখে নিন)।

তবে এখানে যারা মনে করেন যে, “ছালাব” অর্থ – শূলিবিদ্ধ করে হত্যা করা, তাদের উদ্দেশ্যেই আমি সব সময় উত্তরে বলি যে, আপনার কথা ধরে নিলেও এটাই সাব্যস্ত হবে যে, ঈসাকে শূলেচড়ানো হয়নি। কারণ, “শূলিবিদ্ধ+হত্যা করা” দুটোই কিন্তু আল্লাহতালা “ওয়া-মা” শব্দ দ্বারা খন্ডন করে দিয়েছেন।

এখন আপনি যদি দাবী করেন যে, ঈসাকে “শূলেচড়ানো” হয়েছিল কিন্তু ঈসা “হত্যা” হননি। তখন তো আপনি আয়াতের আংশিক খন্ডন মানছেন বটে, কিন্তু পুরোটা মানছেন না। অথচ আল্লাহতালা “ওয়া-মা” শব্দ দ্বারা পুরো ব্যাপারটিকেই খন্ডন করতে চেয়েছেন!! এ সূক্ষ্ম ব্যাপারটি আপনাদের ভাবিয়ে তুলেনা কেন?

“ঈসাকে মৃত্যু নিশ্চিত করার পরে শূলী থেকে নামানো হয়” এ বিশ্বাস কাদের? দেখে নিই ইতিহাস কী বলে?

ইদানীংকাল ওরা (কাদিয়ানিরা) ঘটা করে প্রচার করে চলেছে যে, ঈসা (আ:) জীবিত থাকা সম্পর্কিত মুসলমানদের বিশ্বাস নাকি খ্রিষ্টীয় বিশ্বাস থেকে এসেছে। নাউজুবিল্লা। শুনে অবাক হবেন যে, ইতিহাস বলছে ভিন্ন কথা। অর্থাৎ ইহুদ এবং খ্রিষ্টান উভয়ের বিশ্বাস মতে, ঈসাকে শূলিবিদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু শুধুমাত্র খ্রিষ্টানরা একটু ব্যতিক্রম বিশ্বাস করে যে, “ঈসাকে শূলিবিদ্ধ করার পর ইহুদী কর্তৃক তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করে শূলি থেকে তাঁকে নামানো হয়। পরে আল্লাহতালা তাঁকে কয়েক ঘন্টা পরে পুনরায় জীবিত করে আকাশে উঠিয়ে নেন।” অপ্রিয় হলেও সত্য, আহমদী তথা কাদিয়ানিদের যেই মতবাদ সেটি ইহুদীদের সাথে পুরোপুরি এবং খ্রিষ্টান জাতির সাথে আংশিক মিলে যায়। বাংলায় প্রবাদ আছে – উল্টো চমকিলেরে রাম!!

আমি আহমদী তথা কাদিয়ানীদের নিকট প্রশ্ন রাখতে চাই যে, মুসলমানদেরও বিশ্বাস কি এরূপ? অবশ্যই না। বরং মুসলমানদের বিশ্বাস হচ্ছে, “ইহুদীরা ঈসা (আ:)-কে শূলিবিদ্ধ করবে তো দূরে থাক, তারা তাঁর কাছেও ঘেষতে পারেনি। আল্লাহতালা তাঁকে নিরাপদে আকাশে উঠিয়ে নিয়েছেন।”

শুনে আরো অবাক হবেন, ইতিহাস পড়লে বুঝা যায় যে, হযরত ঈসা (আ:) ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার পরেও পুনরায় জীবন লাভ করা – এটি আঠার এবং উনিশ শতকের খ্রিস্টান যাজকদের আবিষ্কৃত, যা swoon hypothesis নামে পরিচিত। তার প্রথম ধারণা দেন খ্রিষ্টান যাজক কার্ল ফ্রেডরিচ বার্ডট (Karl Friedrich Bahrdt)। যিনি ছিলেন unorthodox German biblical scholar, theologian, and polemicist.

(তথ্যসূত্র উইকিপিডিয়া)।

মির্যা কাদিয়ানী সাহেবের জন্মের আগেই সারা দুনিয়ার খ্রিষ্টানদের এ ক্রুশিয় ধারণা দিয়ে গেছেন খ্রিস্টান পণ্ডিতগণ। বিশ্বাস না হলে আপনি গুগল সার্চ দিয়ে দেখুন। যে বাইবেল থেকে এ ধারণা তৈরি হয়েছে সেই বাইবেল থেকে-ই দেখা যায় “ঈসা (আঃ)-এর মৃত্যু নিশ্চিত করার পর তাঁকে ক্রুশ থেকে নামানো হয়েছে।” নাউজুবিল্লা।

এখন চিন্তা করে বলুন- বর্তমান দুনিয়ার কাদিয়ানি সম্প্রদায়ের সাথে খ্রিষ্টানদের উক্ত আকিদার হুবহু মিল পাওয়া যাচ্ছে কিনা? তাই উদরপিণ্ডি বুদোড় ঘাড়ে না চাপিয়ে শেষবারের মত আরেকবার ভেবে দেখুন- কোথাকার জল কোথায় ঢালছেন?

লেখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here