মির্যায়ী খলীফা হেকিম নূরুদ্দীন সম্পর্কে একটি জঘন্য মিথ্যাচার ও তার খন্ডন
কিছুদিন আগের কথা। জনৈক আহমদী (কাদিয়ানী) আমাকে বললেন, তাদের (অর্থাৎ কাদিয়ানীদের) প্রথম খলীফা হেকিম নূরুদ্দীন (১৮৪১-১৯১৪ইং) নাকি দেওবন্দেও পড়াশোনা করেছিল!
আমি প্রথমে কিছুক্ষণ হাসলাম তারপর তাকে প্রতিউত্তরে জিজ্ঞেস করলাম, আপনাকে এই উদ্ভট কথা কে শুনাল? উত্তরে বললেন, আমাদের মু’আল্লিমরাই তো আমাদের বলেছেন!
আমি বললাম, তাহলে বলুন তো হেকিম নূরুদ্দীনের জন্ম কত সালে? তিনি বললেন, ১৮৪১ সালে। আমি তাকে বললাম, দারুল উলুম দেওবন্দ কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা জানেন?
বললেন, না; তা তো জানিনা!!
বললাম, ৩১ মে, ১৮৬৬ সালে। আর তখন হেকিম নূরুদ্দীন ২৫ বছরের একজন টগবগে যুবক। তাহলে এবার নিজেই চিন্তা করুন, দারুলউলুম দেওবন্দ (সাহারানপুর জেলা) যখন সবেমাত্র শিশু; মাত্র একখানা ডালিম গাছের নিচে আলিফ বা তা ছা জীম…পাঠদানের মাধ্যমে হাতে গুণে কয়েকজন ছাত্র নিয়ে যাত্রা শুরু করল সেখানে ২৫ বছরের যুবক হেকিম নূরুদ্দীন কেন ভর্তি হবেন? হলে, কোন ক্লাশে হবেন? আপনাদের যুক্তি কী বলে? বিষয়টি পুরোই হাস্যকর নয় কি? দারুলউলুম দেওবন্দ সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন।
হেকিম নূরুদ্দীন মূলত একজন জেনারেল শিক্ষিত। তিনি একাডেমিক পদ্ধতিতে ভারতবর্ষের কোনো দ্বীনি প্রতিষ্ঠানে পড়েছেন বলে প্রমাণিত নয়। তার বাড়ী হল, পাঞ্জাবের শাহপুর জেলার ভেরা নামক স্থানে। তিনি জীবনে কখনো কোনো মাদরাসায়ও পড়েছিলেন বলে জানা যায়না। তবে যতটুকু জানা যায় তা হল, তিনি একজন জেনারেল লাইনের পড়ুয়া এবং স্বীয় পিতা আর বড় ভাই সোলতান আহমদের সহযোগিতায় প্রাইভেট শিক্ষকদের মাধ্যমে ধর্মীয় কিছু বই পুস্তক অধ্যায়ন করেছিলেন মাত্র। সুতরাং তার দেওবন্দে পড়াশুনা করার তথ্যটি একদমই অসত্য এবং ডাহামিথ্যে।
হেকিম নূরুদ্দীন সম্পর্কে জানা যায় যে, তার বয়স যখন ১৬ বা ১৭ তখন তাকে রাওয়ালপিন্ডিতে ‘নর্মাল স্কুলে’ ভর্তি করিয়ে দেয়া হয়। সেখানে ৪ বছর পড়াশুনা শেষে তিনি মাত্র ২১ বছর বয়সে শিক্ষকতার পেশায় নিয়োজিত হন। ভেরা শহরের কয়েক মাইল দূরে ঝিলাম নদীর ওপারে অবস্থিত শহর পীন্ডদাদন খান স্কুলের প্রধান শিক্ষক হন। তিনি সেখানে ৪ বছর ছিলেন। সেখান থেকে চলে এসে আগেরমত আবার ঘরোয়াভাবে নিজে নিজে বইপত্র পড়া আরম্ভ করেন আরো প্রায় দুই বছর পর্যন্ত। তার বয়স যখন ২৭ বছর পূর্ণ হল তখন তিনি লাহোর যান এবং সেখান থেকে পদব্রজে রামপুর যান উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্যে। তিনি সেখানে প্রায় ৩ বছর ছিলেন।
তারপর তিনি চিকিৎসা শাস্ত্রে অধ্যয়নের জন্য লক্ষ্ণৌর হাকীম আলী হোসেনের নিকট চলে যান। তখন তার বয়স ত্রিশের কোটায়। সেখানে ২ বছর অবস্থান করেন। তিনি তার তেত্রিশ বছর বয়সে জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্যে মিরাঠে যান। তারপর ভূপালে যান। তারপর দিল্লি যান। সেখান থেকে হিজাজে। হিজাজ থেকে তিনি নিজ শহর ভেরায় ফিরে এসে চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত হন। তারপর তিনি একটি সময়ের ব্যবধানে কাশ্মীরের মহারাজার প্রধান চিকিৎসক হিসেবে নিয়োগ পান। তখন তার বয়স ছত্রিশের কোটায় । হেকিম নূরুদ্দীন সাহেব মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর সাথে প্রথম যখন সাক্ষাৎ করেন তখন তার বয়স ছিল তেতাল্লিশ বছর (১৮৮২ সাল)। এ তথ্যগুলো মির্যায়ী ঘরানার রচনাবলী হতেই এখানে উল্লেখ করেছি। (দেখুন, মোহাম্মদ জাফরুল্লাহ খান রচিত ‘হযরত মৌলভী নূরউদ্দিন খলীফাতুল মসীহ আউয়াল’ পৃষ্ঠা নং ১৩-৩৭)।
তাহলে এখন বলুন, এমতাবস্থায় হেকিম নূরুদ্দীন সাহেব দারুলউলুম দেওবন্দ (সাহারানপুর জেলা) কখন গেলেন? সুতরাং সস্তা জনপ্রিয়তা কুড়ানোর উদ্দেশ্যে দারুলউলুম দেওবন্দের নামে এই ধরণের অসত্য আর অযুক্তিক প্রচারণা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী।