Home কাদিয়ানীদের প্রশ্ন ও আমার জবাব নবীজী (সা:) কি ইউনুস (আ:) অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ নন? সংশয় নিরসন!

নবীজী (সা:) কি ইউনুস (আ:) অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ নন? সংশয় নিরসন!

নবীজী (সা:) কি ইউনুস (আ:) অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ নন? সংশয় নিরসন!

সহীহ হাদীসের মাঝে অসঙ্গতি থাকার অভিযোগ খণ্ডন

(কাদিয়ানীরা তাদের মির্যা গোলাম আহমদের স্ববিরোধী কথার পক্ষে ওকালতি করতে গিয়ে হাদীসের মধ্যেও অসঙ্গতি থাকার মিথ্যা আপত্তি পেশ করে, এখানে এমনি একটি অভিযোগ উল্লেখপূর্বক খণ্ডন করা হবে, ইনশাআল্লাহ)

  • মির্যা কাদিয়ানীর অসম্ভব রকমের স্ববিরোধী কথাবার্তার সিরিজ পড়ুন (এপিসোড ১-৪০) ক্লিক করুন এখানে

প্রশ্নকর্তা (কাদিয়ানী) :- মির্যা সাহেবের কথায় স্ববিরোধিতা খোঁজেন অথচ আপনাদের নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর কথাতেও স্ববিরোধিতা ছিল! যেমন তিনি এক জায়গায় (সুনানু তিরমিজী, হাদীস নং ৩২৪৫) বলেছেন, তাঁকে যে ইউনুস ইবনে মাত্তা (আ.) অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ বলবে সে মিথ্যা বলল (وَمَنْ قَالَ أَنَا خَيْرٌ مِنْ يُونُسَ بْنِ مَتَّى فَقَدْ كَذَبَ)। আবার আরেক জায়গায় (সহীহ মুসলিম হাদীস নং ২২৭৮) বলেছেন, তিনি কেয়ামত দিবসে সকল বনী আদমের সাইয়েদ বা নেতা হবেন (أَنَا سَيِّدُ وَلَدِ آدَمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ)। এখন এর কী জবাব?

অভিযোগ খণ্ডন, কাদিয়ানীদের জন্য দুঃসংবাদ এই কারণে যে, তাদের কাদিয়ানের কৃষ্ণ ও নবুওয়তের দাবীদার মির্যা সাহেবও উক্ত অভিযোগের জবাবে লিখেছেন, “যদি ঐ হাদীসগুলো সহীহও হয় তবু তাঁর ঐ কথা (শুধুমাত্র) বিনয় প্রদর্শনের জন্যই ছিল (وہ بطور انکسار اور تزلل ہے)।” (দেখুন, রূহানী খাযায়েন ৫/১৬৩ মির্যায়ী রচনাসমগ্র)। প্রামাণ্য স্ক্যানকপি :-

মির্যায়ী রচনাসমগ্র

এখন বিনয় প্রদর্শনের জন্য কোনো বিশেষ মর্যাদাবান ব্যক্তি যদি বলেন যে, তোমরা আমাকে কারো চাইতে শ্রেষ্ঠ বলোনা, তবে কি তিনি এমন কথায় স্ববিরোধী প্রবক্তা বলে অভিযুক্ত হবেন? অন্তত মির্যা কাদিয়ানীর দৃষ্টিকোণ থেকেও উত্তর হবে, না; তিনি অভিযুক্ত হবেন না। এখন প্রশ্ন হল, মির্যা কাদিয়ানী সাহেব যে সমস্ত বক্তব্যের কারণে অভিযুক্ত সেগুলোও কি বিনয় সংক্রান্ত? নিশ্চয়ই না। এবার হাদীস দুটোর ব্যাখ্যায় আসি,

মেশকাত কিতাবের শরাহ মেরকাতের লিখক মোল্লা আলী (রহ.) লিখেছেন, “রাসূল (সা.)-এর বাণী ‘যে বলবে আমি ইউনুস ইবনে মাত্তা অপেক্ষা উত্তম…’ এই কথাটি মূলত নবুওয়তের ক্ষেত্রে ধর্তব্য হবে। ফলে তার অর্থ দাঁড়াচ্ছে, যে ব্যক্তি বলবে আমি ইউনুস ইবনে মাত্তা অপেক্ষা নবুওয়তের ক্ষেত্রেও উত্তম তবে সেই ব্যক্তি মিথ্যা বলল। কেননা নবীগণের সকলে নবুওয়তের মর্যাদায় এক ও অভিন্ন। তবে কতিপয় সম্মান ও মর্যাদার দৃষ্টিকোণ থেকে বিশেষত্বতা নিশ্চয়ই রয়েছে (أَيْ: فِي النُّبُوَّةِ :(مَنْ قَالَ: أَنَا خَيْرٌ مِنْ يُونُسَ بْنِ مَتَّى لَقَدْ كَذَبَ) لِأَنَّ الْأَنْبِيَاءَ كُلَّهُمْ مُتَسَاوُونَ فِي مَرْتَبَةِ النُّبُوَّةِ، وَإِنَّمَا التَّفَاضُلُ بِاعْتِبَارِ الدَّرَجَاتِ)।” দেখুন, মেরকাত খণ্ড নং ৯, হা/ক্রমিক নং ৩৬৪৫। এই একই ব্যাখ্যা ইমাম কুরতুবী (রহ.)-এর কাছ থেকেও প্রমাণিত। তিনি লিখেছেন, অবশ্যই নবীগণের এককে অন্যের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিতে নিষেধ রয়েছে। আর তা নিশ্চিতভাবে ও শুধু কেবল নবুওয়তের ক্ষেত্রে। যেহেতু নবুওয়তের ক্ষেত্রে সবার মান সমান। তাতে কেউ অন্যের উপর শেষ্ঠত্ব রাখেনা। অধিকন্তু শ্রেষ্ঠত্ব হচ্ছে, কতেক বিশেষত্ব, সম্মান আর দয়ার আধিক্যতার ক্ষেত্রে (ان المعنى من التفضيل. انما هو من جهة النبوة التى هى خصلة واحدة لا تفاضل فيها. و التفضيل فى زيادة الاحوال و الخصوص و الكرمات و الالطاف)। দেখুন, আল-মুয়াসওআ’তুল ফিকহিয়্যাহ [الموسوعة الفقهية] ৪০/৪৯, কিতাবটি অনলাইনে সর্বমোট ৪৫ খণ্ডে পাওয়া যায়; গ্রন্থনা ও প্রকাশনায়, আওকাফ ও ইসলামিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়, কুয়েত।

অতএব আমরা প্রমাণ করে দিলাম যে, রাসূল (সা.)-এর কথায় সামান্যতমও স্ববিরোধিতার চাপ নেই। কাজেই মির্যা সাহেবের অগণিত মিথ্যা আর অসঙ্গতিপূর্ণ বক্তব্যের পক্ষে ওকালতি করার জন্য রাসূল (সা.)-এর দিকে আঙুল উঠাবেন না। এটি নিঃসন্দেহে একজন সত্য নবী ও রাসূলের শানে চরম বেয়াদবির শামিল। পরিশেষে কাদিয়ানীদের প্রতি আমার প্রশ্ন, মির্যা কাদিয়ানীর যেসব কথাবার্তায় স্ববিরোধিতার অভিযোগ করা হয় সেগুলাও কি বিনয় সম্পর্কিত? আফসোস! ব্রেইন ওয়াশ কাল্টদের বুঝানোর সাধ্য কার!

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here