আশ’আরী এবং মাতুরদী আকীদা কী ও কেন?

0
আশ’আরী এবং মাতুরদী আকীদা কী ও কেন?

ইন্নালহামদা লিল্লাহ ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আ’লা রাসূলিল্লাহ! আম্মা বা’দু…। ইসলামের প্রথম কয়েক প্রজন্ম ধরে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের যে আকীদা প্রচলিত ছিলো তা ছিলো মূলধারার আকীদা। এ আকীদা ছিলো খুবই সংক্ষিপ্ত ও প্রাঞ্জল। এ সময় আলাদা আলাদাভাবে আকীদার একেকটি বিষয় নিয়ে স্বতন্ত্র পুস্তিকা লিখা হতো। যেমন- কিতাবুত-তাওহীদ, কিতাবুল-ঈমান ইত্যাদি। পরবর্তীতে এই মূলধারার আকীদার সব বিষয় একত্রে সন্নেবেশিত করে যে কিতাব আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠে তা হচ্ছে ইমাম ত্বহাবীর ‘আকীদাতুত-ত্বহাবী‘।

এ গ্রন্থটি সহ অন্যান্য খন্ড খন্ড পুস্তিকাগুলো আকীদার একেবারে মৌলিক বিষয়ে আলোকপাত করে। কিন্তু ততদিনে ইসলামী থিওলজী গ্রীক দর্শন সহ পারসিক ভাবাদর্শে আক্রান্ত হতে শুরু করে। ইসলামী আকীদার প্রতি এমন কিছু প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়া হয় যার উত্তর না দেয়া হলে বুদ্ধিবৃত্তিক দৌড়ে ইসলামী আকীদা তার নির্যাস হারাবে। এ সমস্যার উত্তরণে অনেকেই এগিয়ে আসেন। কিছু আলেম মূলধারার সংক্ষিপ্ত আকীদার হালকা প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা দিয়ে চুপ থাকাকে নিরাপদ মনে করলেন। এক্ষেত্রে উনাদের আদর্শ ছিলেন ইমাম মালেক (রহঃ) যিনি অতিরিক্ত প্রশ্ন করাকে বিদআত সাব্যস্ত করেছিলেন। এই স্বল্প পরিসরের ব্যাখ্যা যারা গ্রহণ করে আকীদার চর্চা করেন তারা পরবর্তীতে ‘সালাফী’ আকীদার ধারক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

কিন্তু এই যৎসামান্য ব্যাখ্যা দিয়েও গ্রীক আগ্রাসন ঠেকানো যাচ্ছিলো না। মানুষ যিনদিক হতে শুরু করে। ফলে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মূলধারার আরেকটি ব্যাখ্যাদানকারী উপধারা প্রবাহিত হয়। যারা প্রতিটি বর্ণনার সফল ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করে। এ কাজে প্রসিদ্ধি লাভ করেন ইমাম আবুল হাসান আশআরি ও ইমাম আবু মনসুর মাতুরিদি। উনারা মূলত গ্রীক দর্শনের আঘাত প্রতিহত করতে ‘ইলমুল কালাম’ প্রয়োগ করেন। ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তাদের নিজেদের মধ্যেও বেশ কিছু মতভেদ দেখা যায়।

পরবর্তীতে যারা এই বিস্তর ব্যাখ্যার অনুসারী হিসেবে ইসলামী আকীদা চর্চা করেন তারা আশআরি কিংবা মাতুরিদি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। মনে রাখা উচিত, এই ব্যাখ্যাগুলো আকীদার উচ্চতর গবেষণা হিসেবে ধর্তব্য।

গ্রীকের আগ্রাসন শেষ। কিন্তু ইমাম আশআরি কিংবা মাতুরিদির রেখে যাওয়া ব্যাখ্যা তো শেষ হয়ে যায় নি। আকীদার উচ্চতর গবেষণার শিক্ষার্থীরা যুগে যুগে এইসব ব্যাখ্যা নিয়ে আরও বর্ধিত গবেষণা চালিয়ে গেছে। অবশ্য প্রত্যেক সময়ের অজ্ঞেয়বাদী, সংশয়বাদী ও যিনদিকদের উত্থাপিত প্রশ্নের উত্তর দিতে এইসব আশআরী ও মাতুরিদি ব্যাখ্যা মুসলিমদের সাহস যুগিয়েছে।

  • সুতরাং আমরা বলতে পারি, ইসলামী আকীদার একেবারে মূলধারাটি হলো প্রাইমারীর মতো। সালাফি আকীদা আরেকটু বর্ধিত হয়ে অনেকটা ইন্টারমিডিয়েটের মতো। আর আশআরী-মাতুরিদি আকীদা হলো হাইয়ার এডুকেশন। এখন সহজেই বুঝতে পারবেন- একজন মুসলিমকে প্রকৃত মুমিন হতে হলে ঠিক কোন পর্যায়ের আকীদা লালন করতে হবে? আহলে সুন্নাত অয়াল জামাতের মূলধারার আকীদাই একজন মুসলিমের নাজাতের জন্য যথেষ্ট। তবে বাদ বাকি সালাফি, আশআরি কিংবা মাতুরিদি আকীদাও আহলে সুন্নাতের বাহিরে নয়।

যারা সালাফী আকীদার বিরোধিতা করতে গিয়ে আশআরী-মাতুরিদি আকীদাকে সামনে দাঁড় করাচ্ছেন, কিংবা মাতুরিদি-আশআরী আকীদাকে গলদ সাব্যস্ত করতে গিয়ে সালাফী আকীদার দাওয়াত দিচ্ছেন উভয় পক্ষই আহলে সুন্নাতের মূলধারার আকীদাকে অন্ধকারে রাখার চেষ্টা করছেন। এসব বর্ধিত আকীদা ইসলামের শত্রুদের জন্য ব্যাখ্যাকৃত করা হয়েছিলো। নিজেদের মধ্যে মূলধারার আকীদা বাদ দিয়ে যারা বিতর্কে জড়িয়ে পরে তারা প্রকৃত আকীদার দাঈ হবে কিনা আমার সন্দেহ আছে।

সাধারণ মুসলিম ভাইদের বলবো। আপনারা আতঙ্কিত না হয়ে আকীদার মূলধারার চর্চা করুন। অতি উৎসাহী হয়ে সালাফী-আশআরী-মাতুরিদি আকীদা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করার আগে মৌলিক আকীদা জানুন। আর আখেরাতের নাজাতের জন্য এটুকু আকীদাই যথেষ্ট। এই আকীদা নিয়েই সাহাবীরা দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। যারা ছিলেন ইসলামের সবচেয়ে নিখুঁত প্রজন্ম।”

লিখক শিক্ষাবিদ ও গবেষক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here