মুসায়লামা কাজ্জাব কিজন্য মুরতাদ হল?

0
মুসায়লামা কাজ্জাব কিজন্য মুরতাদ হল?

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।

ইতিহাস আরো সাক্ষী, মুসায়লামা কাজ্জাব হযরত মুহাম্মদ (সা:)-কে তার সাথে আরবের উপর কর্তৃত্ব করার ক্ষমতা ভাগাভাগি করার প্রস্তাব জানায়। ১০ম হিজরির শেষের দিকে সে শেষনবী হযরত মুহাম্মদ (সা:)-কে একটি চিঠিতে লিখে :

من مسيلمة رسول الله إلى محمد رسول الله صلى الله عليه و سلم أما بعد، فلكم نصف الأرض ولنا نصفها، ولكن قريشا قوم يعتدون.

অর্থ—“আল্লাহর রাসুল মুসায়লামার পক্ষ থেকে আল্লাহর রাসুল মুহাম্মদের নিকট। আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমাকে আপনার নবুওয়তের অংশীদার করা হয়েছে। পৃথিবীর অর্ধেকটা আমাদের ভাগে এবং অপর অর্ধেক কুরাইশদের ভাগে। তবে কুরাইশরা সবসময় বাড়াবাড়ি করে থাকে।”

ইতিহাস থেকে পাওয়া যায়,

  • মুসায়লামা কাজ্জাব মুহাম্মদ (সা:)-এর নবুওয়তেরও স্বীকারোক্তিকারী ছিল।
  • তার আযানেও ছিল اشهد ان محمدا رسول الله অর্থ- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হযরত মুহাম্মদ (সা:) আল্লাহর একজন রাসূল।
  • সে পবিত্র কুরআনের উপরও বিশ্বাসী ছিল।

লিখেছেন, …..সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী (রহ:)

কিন্তু সে হযরত মুহাম্মদ (সা:)-এর যুগেই নবুওয়তের দাবী করে বসে। ফলে সে মুরতাদ ও কাফের হয়ে যায়। তার দাবী, আল্লাহতালা তার উপর বহু সূরা নাযিল করেছেন। তার মতে وَالْفِيلْ، وَمَا أَدْرَاكَ مَا الْفِيلْ، لَهُ زَلُّومٌ طَوِيلْ. এটিও নাকি তার উপর নাযিল হয়েছিল। নাউযুবিল্লাহ।

ঐতিহাসিক ইয়ামামার যুদ্ধে মুসায়লামা কাজ্জাব ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে হযরত ওয়াহশি ইবনুল হারব (রা:)-এর খঞ্জরের আঘাতে নিহত হন। সেই যুদ্ধের নেতৃত্বে ছিলেন, মহাবীর হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা:)। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইবনে কাসীর)।

জনৈক কাদিয়ানী প্রশ্ন করল, মুসায়লামা কাজ্জাব হযরত মুহাম্মদ (সা:)-এর উপর বিশ্বাস স্থাপন করা সত্ত্বেও সে মুসলমান হিসেবে গন্য হবেনা। কারণ হাদীসে বর্ণিত আছে, সে হযরত মুহাম্মদ (সা:)-এর নিকট বাইয়েত নেয়নি। সুতরাং সে মুরতাদ হয়েছিল নবুওয়তের দাবী করে—এভাবে মনে করার সুযোগ নেই। যেজন্য নবুওয়তের দাবী করায় মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী সাহেবকে মুরতাদ আখ্যা দেয়া ঠিক নয়।

উত্তরে বলতে চাই, আরে আপনারাই তো সহীহ বুখারীর একটি হাদীস উল্লেখ করে বলে থাকেন যে, “যে মুসলমানদের মতই সালাত পড়ে, বায়তুল্লাহকে কেবলা মানে আর মুসলমানদের যবেককৃত জন্তুর গোস্ত খায় সেই মুসলমান।” এখানে আপনাদের দাবী অনুযায়ী বাইয়েত এর শর্ত কেন নেই?

দ্বিতীয় কথা হল, মুসায়লামা কাজ্জাব স্বীয় নবুওয়ত দাবীর পূর্বে হযরত মুহাম্মদ (সা:)-এর রেসালতের স্বীকারোক্তি দেয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র বাইয়েতে শামিল না হওয়ার কারণে যদি মুসলমান হিসেবে গন্য না হয় তাহলে তো একই কারণে কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের কথিত উম্মুল মুমিনীন নুসরাত জাহানও আহমদীয়তের মধ্যে শামিল ছিল না! তার কারণ, সে মির্যা কাদিয়ানীর নিকট কখনো বাইয়েত নেয়নি। আমৃত্যু বাইয়েত ছাড়াই মির্যার সংসার করেছিল। সীরাতে মাহদী খ-১, বর্ণনা নং ২০ দ্রষ্টব্য

  • অর্থ – “অধম (মির্যাপুত্র বশির আহমদ) জিজ্ঞেস করলাম যে, আপনি (মির্যার স্ত্রী) কবে বাইয়েত নিয়েছিলেন? আম্মাজান বললেন, আমার সম্পর্কে প্রসিদ্ধ আছে যে, আমি বাইয়েত থেকে বিরত থেকে বছর কতেক পরেই বাইয়েত করে নিয়েছি। (কিন্তু) এটি ভুল কথা। আমি কখনোই উনার থেকে পৃথক ছিলাম না, সব সময় সাথে ছিলাম। প্রথম থেকেই তিনি আমাকে বাইয়েতের অন্তর্ভুক্তই জানতেন এবং আমার জন্য আলাদাভাবে বাইয়েত করার প্রয়োজন মনে করেননি। তিনি বলেন, হযরত মসীহ মওউদ প্রথমাবস্থায় মসীহিয়ত এবং মাহদীয়তের দাবীদার ছিলেন না। বরং তিনি মুজাদ্দিদীয়তের উপরই বাইয়েত নিতেন।” (সীরাতে মাহদী, বর্ণনা নং ২০; খ-১)।
  • এখানে পরিষ্কার করে বলা আছে যে, اور اپنے لئے باقاعدہ الگ بیعت کی ضرورت نہیں سمجھی অর্থাৎ এবং আমার জন্য আলাদাভাবে বাইয়েত করার প্রয়োজন মনে করেননি। মোদ্দাকথা, মির্যা সাহেব স্বীয় স্ত্রীর কাছ থেকে আলাদাভাবে বাইয়েত নেয়ার প্রয়োজন মনে করেননি। আর তাই মির্যা সাহেবের স্ত্রী নুসরাত জাহান আমৃত্যু বাইয়েত ছাড়াই ছিলেন।

এখন এর কী জবাব দেবেন? শেষকথা হল, মুসায়লামা কাজ্জাব ইতিপূর্বে মুসলমানদের মধ্যে শামিল ছিল বলেই সে নবুওয়ত দাবী করায় শুধু মুরতাদ সাব্যস্ত হয়নি, একজন কাজ্জাব (বড় মিথ্যাবাদী)ও সাব্যস্ত হয়। সুতরাং এই একই কারণে মির্যা কাদিয়ানীও মুরতাদ ও কাফের। এতে যার বিন্দুমাত্র সন্দেহ থাকবে সেও কাফের হয়ে যাবে।

লিখক শিক্ষাবিদ ও গবেষক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here