সূরা আহযাব আয়াত নং ৭ এর সঠিক তাৎপর্য

0
সূরা আহযাব আয়াত নং ৭ এর সঠিক তাৎপর্য

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।

প্রশ্নকর্তা : সূরা আহযাব আয়াত নং ৭ এর মধ্যে উল্লেখ আছে “স্মরণ কর, আমি নবীদের নিকট হতে, তোমার নিকট হতে এবং নূহ, ইব্রাহীম, মূসা, মরিয়ম-তনয় ঈসার নিকট হতে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম; গ্রহণ করেছিলাম দৃঢ় অঙ্গীকার।” এখানে মুহাম্মদ (সা:) সহ সমস্ত নবী-রাসূল থেকে আল্লাহতালা একখানা দৃঢ় অঙ্গীকার গ্রহণ করার বলেছেন। তো সেই অঙ্গীকারটা কী? একজন নবীর আগমন সম্পর্কে কোনো অঙ্গীকার গ্রহণ নয় কি?

উত্তরদাতা : আয়াতটির সঠিক তাৎপর্য কী এ নিয়ে বহু কাদিয়ানী জ্ঞানপাপী আজও দ্বিধাদ্বন্দ্বে নিপতিত। ফলে তাদের অধিকাংশই মনে করছে যে, বোধহয় আয়াতটি নতুন একজন নবীর আগমনের বার্তা দিচ্ছে!! নাউযুবিল্লাহ। অথচ অত্র আয়াতে নতুন নবীর আগমনের বিন্দুমাত্র কোনো ইংগিতই নেই। প্রথমে আয়াতের অর্থ :- وَ اِذۡ اَخَذۡنَا مِنَ النَّبِیّٖنَ مِیۡثَاقَہُمۡ وَ مِنۡکَ وَ مِنۡ نُّوۡحٍ وَّ اِبۡرٰہِیۡمَ وَ مُوۡسٰی وَ عِیۡسَی ابۡنِ مَرۡیَمَ ۪ وَ اَخَذۡنَا مِنۡہُمۡ مِّیۡثَاقًا غَلِیۡظًا অর্থ- স্মরণ কর, আমি নবীদের নিকট হতে, তোমার নিকট হতে এবং নূহ, ইব্রাহীম, মূসা, মরিয়ম-তনয় ঈসার নিকট হতে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম; গ্রহণ করেছিলাম দৃঢ় অঙ্গীকার।

এখন প্রশ্ন হতে পারে, তাহলে এই দৃঢ় অঙ্গীকার বলতে কি বুঝানো হয়েছে? উত্তরে বলতে পারি, এটি ঐ অঙ্গীকার, যার বর্ণনা সূরা (الشورى) আশ-শূরার ৪২:১৩ নং আয়াতে রয়েছে এবং তা এই যে, اَنۡ اَقِیۡمُوا الدِّیۡنَ وَ لَا تَتَفَرَّقُوۡا فِیۡہِ অর্থ—”দ্বীন প্রতিষ্ঠা কর এবং তাতে বিভক্ত হয়ো না।” এবার সূরা আশ-শূরার ১৩ নং আয়াতের অনুবাদ :- شَرَعَ لَکُمۡ مِّنَ الدِّیۡنِ مَا وَصّٰی بِہٖ نُوۡحًا وَّ الَّذِیۡۤ اَوۡحَیۡنَاۤ اِلَیۡکَ وَ مَا وَصَّیۡنَا بِہٖۤ اِبۡرٰہِیۡمَ وَ مُوۡسٰی وَ عِیۡسٰۤی اَنۡ اَقِیۡمُوا الدِّیۡنَ وَ لَا تَتَفَرَّقُوۡا فِیۡہِ ؕ کَبُرَ عَلَی الۡمُشۡرِکِیۡنَ مَا تَدۡعُوۡہُمۡ اِلَیۡہِ ؕ اَللّٰہُ یَجۡتَبِیۡۤ اِلَیۡہِ مَنۡ یَّشَآءُ وَ یَہۡدِیۡۤ اِلَیۡہِ مَنۡ یُّنِیۡبُ অর্থ- তিনি তোমাদের জন্য বিধিবদ্ধ করেছেন দ্বীন, যার নির্দেশ দিয়েছিলেন নূহকে, আর যা আমরা ওহী করেছি আপনাকে এবং যার নির্দেশ দিয়েছিলাম ইবরাহীম, মূসা ও ‘ঈসাকে, এ বলে যে, তোমরা দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত কর এবং তাতে বিভেদ সৃষ্টি কর না।

আয়াতটিতে মুহাম্মদ (সা:)-এর নাম প্রথমে থাকার কারণ সম্পর্কে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) নিজেই হাদীসে ইরশাদ করে গেছেন। তাফসীরে তাবারী-তে এসেছে, তিনি বলেছেন كنت اولهم فى الخلق و آخرهم فى البعث অর্থ আমি (যদিও) আবির্ভাবের দিক থেকে সবার শেষে (তবে কিন্তু) আমি সৃষ্টির দিক থেকে সবার প্রথম।

এখন বিস্ময়কর কথা হল, মহানবী (সা:) যে আয়াত দ্বারা নিজের খতমে নবুওয়তের প্রমাণ দিয়ে গেছেন সেই আয়াত দ্বারা কাদিয়ানীরা নবুওয়ত জারি থাকার প্রমাণ দিচ্ছে! অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, পবিত্র কুরআনের সঠিক মর্মবাণী মহানবী (সা:)-এর চেয়েও কাদিয়ানীরা খুব ভালো বুঝে! নাউযুবিল্লাহ।

  • মির্যা কাদিয়ানীকে কথিত উম্মতিনবী সাব্যস্ত করতে পবিত্র কুরআনের প্রায় ৯টি আয়াতের অপব্যাখ্যার খন্ডনমূলক জবাব পড়ুন! ক্লিক করুন
  • খতমে নবুওয়ত সংক্রান্ত ২০টি সহীহ হাদীস পড়তে ক্লিক করুন

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here