Home কাজিবাতে মির্যা সূরা তওবাহ আয়াত ৩৩ দ্বারাও ঈসা (আ.) জীবিত থাকা প্রমাণিত

সূরা তওবাহ আয়াত ৩৩ দ্বারাও ঈসা (আ.) জীবিত থাকা প্রমাণিত

0
সূরা তওবাহ আয়াত ৩৩ দ্বারাও ঈসা (আ.) জীবিত থাকা প্রমাণিত

কাদিয়ানীদের জন্য উচিত, পুরো আর্টিকেলটি ভালো মত পড়া এবং নিরপেক্ষ ভাবে কথাগুলোর উপর চিন্তা করে নিজের মনকে প্রশ্ন করা!

সূরা আত-তওবাহ, আয়াত নং ৩৩ : هُوَ ٱلَّذِيٓ أَرۡسَلَ رَسُولَهُۥ بِٱلۡهُدَىٰ وَدِينِ ٱلۡحَقِّ لِيُظۡهِرَهُۥ عَلَى ٱلدِّينِ كُلِّهِۦ وَلَوۡ كَرِهَ ٱلۡمُشۡرِكُونَ অর্থ— তিনিই মহান আল্লাহ, যিনি (তোমাদের কাছে) সুস্পষ্ট হেদায়াত ও সঠিক জীবনবিধান সহকারে তাঁর রাসূলকে পাঠিয়েছেন, যেন তিনি এ (বিধান)-কে (দুনিয়ার) সব কয়টি বিধানের উপর বিজয়ী করে দিতে পারেন, মুশরিকরা (এ বিজয়কে) যত খারাপই মনে করুক না কেন!

সূরা আলে ইমরান আয়াত নং ৪৬ দ্বারাও ঈসা (আ.) জীবিত থাকা প্রমাণিত! পড়তে ক্লিক করুন Click

পবিত্র কুরআনের সূরা আত-তওবাহ আয়াত নং ৩৩ এর মধ্যে হযরত ঈসা (আ.) সশরীরে ও রাজনৈতিক দর্পনেই (حكما عدلا তথা ন্যায়পরায়ণ প্রশাসক হিসেবে – বুখারী কিতাবুল আম্বিয়া) পৃথিবীতে দ্বিতীয়বার আগমন করার ইংগিতে ভবিষ্যৎবাণী রয়েছে, লিখে গেছেন মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী। স্ক্রিনশট দ্রষ্টব্য।

মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী এই কথাগুলো তখন লিখেছিলেন যখন তিনি মামূর মিনাল্লাহ, মুলহাম এবং মুজাদ্দিদ হবার-ও দাবী করতেন। তিনি কিন্তু লিখে গেছেন,

“খোদা ইলহামের মাধ্যমে আমাকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, তুমি এই শতাব্দীর মুজাদ্দিদ এবং আল্লাহ তালার পক্ষ থেকে এই ইলহামও হয়েছে যে, الرحمن علم القرآن… الخ অর্থাৎ খোদা তোমাকে কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন এবং তার সঠিক অর্থ তোমার উপর উন্মোচন করেছেন।” (কিতাবুল বারিয়্যাহ, রূহানী খাযায়েন ১৩/২০১, টিকা; ইলহাম ১৮৮২ ইং, তাযকিরাহ পৃষ্ঠা নং ৩৫, চতুর্থ এডিশন)।

এখন তাহলে কেমনে কী? কেননা, বারাহীনে আহমদীয়া চতুর্থ খণ্ড রচনা করেন ১৮৮৪ ইংরেজিতে। যেখানে তিনি সূরা তওবাহ আয়াত নং ৩৩ উল্লেখ করে কুরআন দ্বারা দলিল দিয়ে লিখেন যে, এই আয়াতে ইংগিতে একখানা ভবিষ্যৎবাণী রয়েছে যে, মসীহ (ঈসা) এই পৃথিবীতে সশরীরে (جسمانى) এবং রাজনৈতিক দর্পনেই (سياست ملكى) পুনরায় আসবেন।

আর আল্লাহর পক্ষ হতে তার পবিত্র ‘কুরআনের সঠিক অর্থ শিক্ষা লাভ করা’র উক্ত কথিত ইলহাম ছিল ১৮৮২ সালের দিককার।

তাই এবার প্রশ্ন হল,

১- মির্যা সাহেব সূরা তওবার ৩৩ নং আয়াত দ্বারা যেখানে মসীহ (আ.)-এর সশরীরে ও রাজনৈতিক দর্পনেই পৃথিবীতে দ্বিতীয়বার আগমনের ইংগিতে ভবিষ্যৎবাণী থাকার কথা লিখলেন সেই আয়াতের বিপরীতে কুরআনের অপরাপর ত্রিশ আয়াত দ্বারা মসীহ’র (ঈসা) মৃত্যু হয়ে যাওয়া কিভাবে সাব্যস্ত হতে পারে? এতে কি পবিত্র কুরআনের ভেতর স্ববিরোধ কথা থাকার জঘন্য অভিযোগ উত্থাপন হল না?

২- আর যদি মির্যা সাহেব কর্তৃক লেখিত “বারাহীনে আহমদীয়া” (খণ্ড নং ৪) এর উক্ত কথাগুলো ভুল বা মিথ্যা হয় তাহলে তো আরও ভীষণ মুসিবত! যার দাবী, আল্লাহ তাকে কুরআনের সঠিক অর্থ শিখিয়ে দিয়েছেন (ইলহাম-১৮৮২ইং) তিনি কিভাবে বারাহীনে আহমদীয়া গ্রন্থের চতুর্থ খণ্ডে (রচনাকাল ১৮৮৪ইং) পরবর্তীতে এত জঘন্য ভুল করতে পারেন! অথচ তার মতে মসীহ’র জীবিত থাকার বিশ্বাস নাকি শিরিক! (রূহানী খাযায়েন ২২/৬৬০)!!

মির্যা সাহেব কিন্তু মুজাদ্দিদ, মামূর এবং মুলহাম দাবী করা অবস্থাতেও প্রায় ১০/১২ বছর পর্যন্ত এই কথাই বিশ্বাস করে আসছিলেন যে, মসীহ আকাশে জীবিত রয়েছেন। (হাকীকাতুন নবুওয়ত ; আনওয়ারুল উলূম ২/৪৬৩; মির্যাপুত্র মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ)।

মির্যা কাদিয়ানী সাহেব নিজের মসীহ দাবীর শখ পূর্ণ করতেই হযরত ঈসা (আ.)-কে মৃত ঘোষণা দিতে চাচ্ছেন এবং এইজন্য পবিত্র কুরআনের বহু আয়াতকেও যাইচ্ছেতাই অপব্যাখ্যা দিতে মরিয়া ছিলেন তা কিন্তু এখন একদমই পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে!

নইলে তিনি যে এও লিখলেন,

“নিশ্চয়ই আল্লাহ তালা আমাকে এক মুহূর্তের জন্যও ভুলের উপর ছাড়েন না এবং আমাকে রক্ষা করেন প্রত্যেক ভুল ভ্রান্তি থেকে এবং শয়তানি পথসমূহ থেকে তিনি আমাকে হেফাজত করেন।” (নূরুল হক, রূহানী খাযায়েন ২২/১৫৪)।

এবার তো অবস্থা আরও খারাপ! যাকে আল্লাহ এক মুহূর্তের জন্যও ভুলের উপর স্থির রাখেন না তিনি প্রায় ১০/১২ বছর এমন একখানা ভুলের উপর কিভাবে স্থায়ী থাকলেন যেই ভুল সাধারণ কোনো ভুল ছিলনা; বরং তার মতে শিরিক ছিল!

এখন হয়ত মির্যা সাহেবের আগের ইলহাম গুলো মিথ্যা ছিল, না হয় তার পরবর্তী ইলিহাম মিথ্যা ছিল বলে মানতে হবে।

একজন নিরপেক্ষ ও চিন্তাশীল আহমদীর মনে নিশ্চয়ই এই বিষয়গুলো ভাবনার জন্ম দেবে এবং ইসলামের মূলধারায় ফিরে আসতে সাহায্য করবে, ইনশাআল্লাহ।

  • কে জানি প্রশ্ন করতে চেয়েছিল যে, মির্যা সাহেব প্রথম দিকে ঈসা (আ.) সম্পর্কে এইভাবে লিখলেও পরবর্তীতে তিনি কি আল্লাহর পক্ষ থেকে ইলহাম পেয়ে ঈসা (আ.)-এর মৃত্যু সম্পর্কে খুলাখুলিভাবে বলে যাননি?

উত্তরে বলতে চাই যে, পরবর্তীতে মির্যা সাহেব যে ইলহামের নাম ভেঙ্গে আগের সব বয়ান থেকে সরে আসলেন, তিনি কি ‘বারাহীনে আহমদীয়া’ গ্রন্থে আগের সেসব বয়ানও ইলহামের মাধ্যমে দিয়ে রাখেননি? তাই প্রশ্ন বরাবরের মতই। কোন ইলহাম সত্য? আগেরটা না পরেরটা?

তাছাড়া নিচের প্রশ্নগুলোরও কোনো উত্তর নেই! যেমন-

১৮৮২ সালের ইলহাম মতে, আল্লাহ তাকে কুরআনের সঠিক অর্থ শিখিয়ে দিয়েছেন। এখন তার ফলাফল কি তিনি ১৮৮৪ সালের দিকে লেখিত বারাহীনের মধ্যে ঈসা (আ.) এর দ্বিতীয়বার আসা এবং সশরীরে ও রাজনৈতিক দর্পনে আগমন করার বিশ্বাস ভুল হতে পারে?

মির্যার কথা অনুসারেই সাব্যস্ত হয়ে যাচ্ছে যে, আগমনকারী মসীহ ‘রূপক কেউ হবেন না’ একথাই চূড়ান্ত। কেননা দ্বিতীয়বার যিনি আসবেন তিনি তো এমন কেউ-ই হবেন যিনি পূর্বেও একবার এসে গিয়েছিলেন, তাই নয় কি? আর তিনি মসীহে ইসরাইলি ব্যতীত আর কে হতে পারেন?

মির্যা কাদিয়ানী সাহেবের দাবীমতে আল্লাহ তাকে কুরআনের সঠিক অর্থ শিখিয়ে দিয়েছেন! এরপরেও সে কিভাবে পরবর্তী দুই বছর পর আগের কথার বিরুদ্ধে গিয়ে বয়ান পালটে ফেলেন? তবে কি আল্লাহ তাকে কুরআনের সঠিক অর্থ শিখিয়ে দেয়ার ঐ ইলহামও মিথ্যা?

মির্যা কাদিয়ানী সাহেবের মতে, আল্লাহ তাকে এক মুহূর্তের জন্যও ভুলের উপর স্থির রাখেন না। (রেফারেন্স উপরে দেয়া হয়েছে)।

এমতাবস্থায় তিনি পরবর্তীতে আরও প্রায় ১০/১২ বছর কিভাবে বিশ্বাস করে আসছিলেন যে, ঈসা (আ.) জীবিত আকাশে? তবে কি তাকে আল্লাহতালা এক মুহূর্তের জন্যও ভুলের উপর স্থির না রাখার দাবীটাই মিথ্যা? নাউযুবিল্লাহ।

মির্যা সাহেবের মতে, মুজাদ্দিদ ব্যক্তি নিজ থেকে বানিয়ে কিছুই বলেন না (রূহানী খাযায়েন ১৯/২২১)। এখন তাহলে তার মুজাদ্দিদ দাবীকালে ঈসা (আ.) সম্পর্কে তিনি যা যা লিখলেন তার সবই ভুল? ইন্না-লিল্লাহ!!! খুব খেয়াল করুন! মির্যা সাহেব নিজের ব্যাপারে একদম পরিষ্কার করে লিখে গেছেন যে, ‘আমি যাই বলেছি সব আল্লাহর নির্দেশেই বলেছি আর আমি নিজের পক্ষ থেকে কিছুই করিনি।’ (রূহানী খাযায়েন ১৯/২২১)। এখন তাহলে পরবর্তীতে তার আগের সব বয়ান থেকে সরে আসার কারণ কী? এত ডজন ডজন অসঙ্গতিপূর্ণ কথাবার্তাও যার পিছু ছাড়েনি তার মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য আর কী বাকি থাকে? এই সমস্ত অসঙ্গতি তার সিজোফ্রেনিয়া আর হিস্টিরিয়া রোগের উপসর্গ নয় কি? সংক্ষেপে।

সুতরাং বুঝা গেল, কোথাও না কোথাও কোনো ফাঁকফোকর অবশ্যই রয়েছে!

প্রিয় পাঠকবৃন্দ! ইফতারের আগে এই লিখাটি লিখলাম। নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, আমি এক বিন্দুও মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে লেখিনি। মিথ্যাবাদীর উপর আল্লাহর অভিশাপ। আমীন।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক।

Previous article আধুনিক কিছু মাসয়ালার শরয়ী সমাধান
Next article ক্বদ খালাত মিন কবলিহির রসুল প্রসঙ্গে – পর্ব ৩
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! এটি সম্পূর্ণ দ্বীনি ও অলাভজনক একটি ওয়েবসাইট। প্রতি বছর এটির ডোমেইন ও হোস্টিং ফি হিসেবে আমাকে এর ব্যয় বহন করতে হচ্ছে। যদি উক্ত ব্যয় বহন করতে অপারগ হই তাহলে এই সাইটটি নিশ্চিত বন্ধ হয়ে যাবে। সেহেতু আপনাদের সবার নিকট আবেদন থাকবে যে, আপনারা সাইটটির উক্ত ব্যয় বহনে এতে বিজ্ঞাপন দিতে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে উৎসাহিত করবেন এবং নিজেরাও সহযোগিতায় এগিয়ে আসবেন। বিনীত এডমিন! বিকাশ : ০১৬২৯-৯৪১৭৭৩ (পার্সোনাল)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here