Home মসীহ ঈসা হযরত ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ:) এর পরিচয়

হযরত ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ:) এর পরিচয়

হযরত ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ:) এর পরিচয়

হযরত ঈসা ইবনে মরিয়মের পরিচয়

তিনি (অর্থাৎ হযরত ঈসা আলাইহিস-সালাম) বনী ইসরাইলের প্রতি প্রেরিত একজন রাসূল ছিলেন, رسولا الى بنى اسرائيل (কুরআন ০৩:৪৯)। পুরো নাম আল-মসীহ ঈসা ইবনে মরিয়ম (কুরআন ০৩:৪৫)। ৩৩ খ্রিস্টপূর্ব ফিলিস্তিনের বেথেলহাম শহরে সতীসাধ্বী রমনী বিবি মরিয়মের উদরে পিতা ছাড়াই জন্ম নেন (কুরআন ০৩:৪৭)। নবুওয়ত লাভ করেন সাড়ে ৩২ বছর বয়সে। মাত্র তিন মাস নবুওয়তের দায়িত্ব পালন করেন [আত-তবকাতুল কোবরা ১/৩৫, ইবনে সা’আদ]। তিনি ইঞ্জিল কিতাব লাভ করেন। যা বর্তমানে রহিত। (কুরআন ০৩:৮৫)।

ইহুদীরা যখন উনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করল [কুরআন ০৩:৫৪] এবং পাকড়াও করতে তাঁকে ঘিরে সবাই সমবেত হল [لما اجتمع اليهود على عيسى عليه السلام] ঠিক সেই মুহূর্তে সর্বশ্রেষ্ঠ কৌশলী মহান আল্লাহ তাঁকে নিজের কাছে রফা করেন অর্থাৎ উঠিয়ে নেন (কুরআন ০৪:১৫৮)। তিনি জিবরাইল (আ:)-এর মাধ্যমে তাঁকে এইভাবেই সাহায্য করেন এবং তাঁর কাছে উঠিয়ে নিতে নির্দেশ করেন [কুরআন ০৫:১১০; তারীখে ইবনে আসাকীর ৪৭/৪৭২]।

তারীখে ইবনে আসাকীর ৪৭/৪৭২

আল্লাহতালা সেই মুহুর্তে তাঁর শিষ্যদের একজনকে তাঁরই সাদৃশ করে দেন। [কুরআন ০৪:১৫৭; তাফসীরে জালালাইন, তাবারী ৮/৩৭৪, হা/১০৭৮৯]। ফলে ইহুদীরা তাকে ঈসা ভেবে হত্যা করে দাবী করল, নিশ্চয় আমরা মসীহকে হত্যা করেছি (কুরআন ০৪:১৫৭)। ইহুদীরা ঈসার সাদৃশ একব্যক্তিকে ধরে নিয়ে হত্যা করে অত:পর শূলে চড়িয়ে রাখে [فأخذوا الشبه فقتلوه ثم صلبوه /ফা-আখাযুশ শিবহা ফা-ক্বাতালূহু ছুম্মা ছালাবূহু]। এই হাদীস ইবনে আব্বাস (রা:) হতে সহীহ মুসলিম-এর কৃত শর্তে সনদ দ্বারা বর্ণিত। [ইমাম ইবনে কাসীর রচিত, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ভলিউম ২]।

পবিত্র কুরআন এও বলেছে, ইহুদীরা তাঁর নাগাল পেতেও ব্যর্থ হয় [অর্থাৎ তারা ঈসাকে পাকড়াও করতে পারেনি]। যেমন আল্লাহ বলেন, ওয়া ইয কাফাফতু বানী ইসরাঈলা আনকা… (কুরআন ০৫:১১০)। অর্থ : যখন আমি বনী ইসরাইলকে তোমা হতে নিবৃত্ত রেখেছিলাম…। ইমাম সুয়ূতী (রহ:) লিখেছেন, এটি তখনকার ঘটনা যখন বনী ইসরাইল তাঁকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেছিল (তাফসীরে জালালাইন)। সুতরাং কাদিয়ানীদের আকীদা, ঈসাকে শূলে তুলা হয়েছিল, এটি কুরআন বিরোধী ও কুফুরী আকীদা।

আল্লাহতায়ালা বলেন, নিশ্চয়ই ঈসা কেয়ামতের অন্যতম নিদর্শন (কুরআন ৪৩:৬১)। শেষযুগে তাঁর দ্বিতীয়বার আগমন ঘটবে। কেননা তিনি প্রৌঢ়বয়সে উপনীত হবেন, এই কথা আল্লাহ নিজেই বলেছেন (কুরআন ০৩:৪৬)।

  • মুসলিম শরীফের কিতাবুল ঈমান অংশে ‘ফা আম্মাকুম’ (فامكم) রয়েছে। তার পরের হাদীসে ‘ফা আম্মাকুম’ এর পরে এও রয়েছে ‘বি কিতাবি রাব্বিকুম ওয়া সুন্নাতি নাবিয়্যিকুম’ (بكتاب ربكم و سنة نبيكم) অর্থাৎ তিনি একজন শাসক হিসেবে কুরআন সুন্নাহ দ্বারা তোমাদের নেতৃত্ব (ইমামতে ছোগরা) প্রদান করবেন। (দেখুন হাদীস নং ২৪৬)। তিনি দামেস্কের পূর্বপ্রান্তে [বায়তুল মোকাদ্দাস সীমানায় – মেরকাত ১০/১২০ কিতাবুল ফিতান] শ্বেত মিনারার নিকটে দুইজন ফেরেশতার দুই ডানায় আপনা দুই বাহু রেখে অবতরণ করবেন (মুসলিম, কিতাবুল ফিতান ওয়া আশরাতিশ সা’আহ)। ইমাম আবু বাকর আহমদ ইবনে হুসাইন আল-বায়হাকী (মৃত. ৩৮৪ হিজরী) কর্তৃক সহীহ বুখারীর সমমানের সনদ সহ বর্ণিত সতন্ত্র একখানা হাদীসে উল্লেখ আছে [من السماء فيكم/মিনাছ ছামায়ি ফীকুম] অর্থাৎ ঈসা আকাশ থেকে তোমাদের মাঝে নাযিল হবেন। (রেফারেন্স, আল আসমা ওয়াস সিফাত ২/৩৩১; হাদীস নং ৮৯৫)।

তিনি দাজ্জালকে ‘লূদ’ [বায়তুল মোকাদ্দাস এর নিকটবর্তী একটি এলাকা- রূহানী খাযায়েন ৩/২০৯] নামক ফটকে [বর্শার আঘাতে] হত্যা করবেন (মুসলিম, কিতাবুল ফিতান)।

তিনি চল্লিশ-পয়তাল্লিশ বছর দুনিয়ায় শরীয়তে মুহাম্মদিয়ার ভিত্তিতে রাজ্য পরিচালনা শেষে ইন্তেকাল করবেন (আবুদাউদ, কিতাবুল মালাহিম, হাদীসের মান, সহীহ)। মদীনায় মহানবী (সা:)-এর রাওজায় দাফন হবেন। সেখানে তাঁর কবরটি চতুর্থতম কবর হবে [فيكون قبره رابعا]। (দেখুন, আল মু’জামুল কাবীর ১৩/১৫৯। ইমাম তিরমীযি (রহ:) বলেছেন, হাদীসটির মান: ‘হাসান’। হাদীসটি অপরাপর আরো ৪টি সনদে বর্ণিত হয়েছে)।

তবে ‘কিতাবুল ওয়াফা’ এর একটি বর্ণনায় ‘ফী কবরী’ শব্দ এসেছে। ফলে রাসূল (সা:)-এর কবর খুঁড়ে ভেতরে দাফন করার কথা বুঝাল কিনা তা নিয়ে কাদিয়ানীদের ফালতু চিন্তার কোনো কারণ নেই। কেননা বিশিষ্ট যুগ ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী (রহ:) তার ব্যাখ্যায় ‘ফী মাক্ববারাতী’ [আমার গোরস্তানে] লিখে অনেক আগেই সমাধা দিয়ে গেছেন। (মেরকাত, কিতাবুল ফিতান ১০/১৬৬)।

ইমাম রাজী (রহ:) লিখেছেন, ‘ফী’ বর্ণটি অভিধানে ‘অতি নিকটে’ অর্থ বুঝাতেও ব্যবহৃত হয়। যেমন সূরা আন-নমল আয়াত নং ৮; মূসা (আ:) সম্পর্কে ان بورك من فى النار [অর্থাৎ বরকতময় হোক তিনি যিনি আগুনের মধ্যে আছেন…] উল্লেখ আছে। অথচ তূর পর্বতমালায় তখন মূসা আ. আগুনের অভ্যন্তরে ছিলেন না, বরং অতি নিকটে বা কোনো এক পাশেই ছিলেন (তাফসীরে কাবীর ২৪/১৮৩)।

হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা:) কর্তৃক স্বপ্নে দেখা তিনখানা চন্দ্রের [নবী, আবুবকর এবং উমর] ব্যাখ্যা হল, ওই তিনখানা চন্দ্র উনার জীবদ্দশায় হুজরাখানায় দাফন হবে। হযরত ঈসা (আ:)-কে উক্ত স্বপ্নে দেখতে না পাওয়ার কারণ উনার (আ:) দাফন হওয়ার ঘটনা উনার জীবদ্দশায় ঘটবে না। এখানে আরো বলে রাখা দরকার, হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা:) হতেও বর্ণিত আছে যে, রাসূলের রাওজাতে আবুবকর, উমর এবং হযরত ঈসা দাফন হবেন। দেখুন ‘মসনাদে আহমদ’ ৬/৫৭। (সংক্ষেপে)।

সুতরাং কাদিয়ানী সম্প্রদায় ঈসা (আ:)-কে মৃত সাব্যস্ত করে মির্যা কাদিয়ানীকে কথিত রূপক ঈসা (মসীহ) সাব্যস্ত করতে যে সমস্ত অপব্যাখ্যা, মিথ্যা আর প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে থাকে তা সবই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও প্রত্যাখ্যাত। ইসলামের মূলধারায় রূপক ঈসার কোনো কনসেপশন-ই নেই।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

Previous article মওলানা কাসেম নানুতবী (রহ:) এর নামে মিথ্যাচারের জবাব
Next article হযরত ইমাম মাহদী এর পরিচয়
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! এটি সম্পূর্ণ দ্বীনি ও অলাভজনক একটি ওয়েবসাইট। প্রতি বছর এটির ডোমেইন ও হোস্টিং ফি হিসেবে আমাকে এর ব্যয় বহন করতে হচ্ছে। যদি উক্ত ব্যয় বহন করতে অপারগ হই তাহলে এই সাইটটি নিশ্চিত বন্ধ হয়ে যাবে। সেহেতু আপনাদের সবার নিকট আবেদন থাকবে যে, আপনারা সাইটটির উক্ত ব্যয় বহনে এতে বিজ্ঞাপন দিতে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে উৎসাহিত করবেন এবং নিজেরাও সহযোগিতায় এগিয়ে আসবেন। বিনীত এডমিন! বিকাশ : ০১৬২৯-৯৪১৭৭৩ (পার্সোনাল)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here