পবিত্র কুরআনের আলোকে আকীদায়ে খতমে নবুওয়ত বা নবুওয়তের ক্রমধারার সমাপ্তি,
খতমে নবুওয়ত এমন একটি প্রমাণিত বিশ্বাস, যা জরুরিয়াতে দ্বীন অর্থাৎ ইসলামের অত্যাবশ্যকীয় বিশ্বাস সমূহের অন্যতম। নিচে এর দলিল দেওয়া হল, আল্লাহ কুরআনে ইরশাদ করছেন,
(আরবী) مَّا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِّن رِّجَالِكُمْ وَلَٰكِن رَّسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ ۗ وَكَانَ اللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا অর্থ- ”মুহাম্মদ তোমাদের কোনো পুরুষের পিতা ছিলেন না। তবে তিনি আল্লাহর রাসূল এবং সর্বশেষ নবী এবং আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ।” (সূরা আহযাব, আয়াতঃ ৪০)। কুরআনের প্রখ্যাত তাফসীরকারক আল্লামা ইমাম ইবনে কাসীর (রহ.) বলেন, (আরবী) وقد أخبر تعالى فى كتابه ، وأخبر رسوله فى السنة المتواترة عنه ، أنه لا نبى بعده ، ليعلموا أن كل من ادعى هذا المقام بعده فهو كذاب أفاك دجال ضال مضل ، ولو تخرق وشعبذ ، وأتى بأنواع السحر والطلاسم অর্থাৎ সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাঁর কিতাবে বলেছেন এবং তাঁর রাসূল নিজ সম্পর্কে মুতাওয়াতির সুন্নাহ-তে বলেছেন যে, তাঁর পরে আর কোনো নবী নেই, যাতে প্রত্যেকে জানতে পারে যে, তাঁর পরে এই পদের দাবীদার প্রত্যেকেই চরম মিথ্যাবাদী, প্রতারক এবং পথভ্রষ্ট, যদিও বা সে অসাধারণ কর্ম প্রদর্শন করে, ভেল্কি, যাদু-মন্ত্র ইত্যকার ধরণের অলৌকিক কর্ম নিয়ে আসে না কেন! (সূত্র: তাফসীরে ইবনে কাসীর, ৩য় খণ্ড, ৪৯৩ পৃষ্ঠা, মিশরীয় ছাপা)।
যৌক্তিক প্রমাণ : যুক্তি থেকে বিচার করলে দেখা যায় যে, ইতিপূর্বে নবীগণ আসতেন তিনটি কারণে,
১. পূর্ববর্তী নবীর প্রচারিত শিক্ষা বিলুপ্ত বা বিকৃত হয়ে গেলে।
২. পূর্ববর্তী নবী কোনো নির্দিষ্টকাল বা স্থানের জন্য প্রেরিত হলে।
৩. পূর্ববর্তী নবীর প্রচারিত শিক্ষা অসম্পূর্ণ অথবা তাতে কোনো সংযোজন বা বিয়োজন প্রয়োজন হলে।
কিন্তু হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্য এদের একটিরও প্রয়োজন নেই। তাই নতুনভাবে আর কোনো নবী আগমনের প্রয়োজন নেই। কারণ এই যে,
যুক্তি ১: হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর শিক্ষা ও আদর্শ এখনো বিদ্যমান।
যুক্তি ২: হযরত মুহাম্মদ (সা.) সর্বকালের জন্য প্রেরিত হয়েছিলেন। তাঁর প্রচারিত শিক্ষা ও আদর্শ কিয়ামত পর্যন্ত বিদ্যমান থাকবে।
যুক্তি ৩: হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রচারিত শিক্ষা ও আদর্শ পরিপূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ। এতে বিন্দুমাত্র অসম্পূর্ণতা নেই। কুরআনে এ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে,
(আরবী) الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا অর্থাৎ “আজ আমি (আল্লাহ) তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্মকে পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের উপর আমার নিয়ামতকে সম্পূর্ণ করলাম ও ইসলামকে তোমাদের ধর্ম হিসাবে মনোনীত করলাম।” (সূরা মায়েদা: ০৩)।
ইজমাহ : আকীদায়ে খতমে নবুওয়তের উপর উম্মতে মুহাম্মদীয়ার ইজমা বা সর্বসম্মত রায় প্রতিষ্ঠিত।
এ সম্পর্কে ‘তাফসীর রূহুল মা’আনী’ প্রণেতা আল্লামা মাহমুদ আলূসী (রহ.) লিখেছেন, (আরবী) وقال الألوسي في تفسيره: وكونه صلى الله عليه وسلم- خاتم النبيين مما نطق به الكتاب، وصدعت به السنة، وأجمعت عليه الأمة، فيكفر مدعي خلافه. الأديان والفرق অর্থাৎ নবী করীম (সা.) খাতামুন নাবিয়্যীন হওয়ার ব্যাপারে কিতাবুল্লাহ কথা বলে এবং সুন্নাহ তার ঘোষণা দেয়। উম্মাহ এ বিশ্বাসের উপর ঐক্যবদ্ধ। সুতরাং যে বা যারা এ বিশ্বাসের বিপরীত করবে সে বা তারা কুফুরী করলো। (আল আদইয়ান ওয়াল ফিরাক্ব ১০৭)।
কাজেই বর্তমানে এ আকীদার পক্ষে নতুনভাবে দলিল প্রমাণ তলব করা সুস্পষ্ট গোমরাহী ছাড়া আর কিছুই না। ইমাম ইবনুল হাজম জাহেরী (রহ.) এ সম্পর্কে লিখেছেন, (আরবী) و أنه لا نبي مع محمد صلى الله عليه وسلم ولا بعده أبداً অর্থাৎ সবাই একমত এ কথার উপর যে, নিশ্চয়ই মুহাম্মদ (সা.)-এর সাথে অথবা তাঁর পরবর্তীতে কখনোই আর কোনো নবী নেই। (অর্থাৎ আল্লাহ নতুনভাবে কাউকে নবুওয়ত দান করবেন না)। (মারাতিবুল ইজমা পৃষ্ঠা নং ২৬৮)। উক্ত ইজমার বিষয়টি পরিষ্কার করে আরও যে সমস্ত কিতাবে উল্লেখ আছে তন্মধ্যে ইমাম যায়নুদ্দীন ইবনু নাজিম এর الْأَشْبَاهُ وَالنَّظَائِرُ عَلَى مَذْهَبِ أَبِيْ حَنِيْفَةَ النُّعْمَانِ (পৃষ্ঠা ১৭৩), ইমাম মোল্লা আলী ক্বারীর شرح الفقه الاكبر (পৃষ্ঠা ২৪৪), আল্লামা মাহমুদ আলূসী আল-বাগদাদীর روح المعانى (২২/৪৪), ইমাম শারফুদ্দীন আন-নববীর روضة الطالبين (১০/৬৪-৬৫), ইমাম কাযী ইয়াজের الشفاء (২/১০৭০-১০৭১) কিতাব সমূহ অন্যতম। ইবনুল হাজম (রহ.)-এর ‘মারাতিবুল ইজমা‘ কিতাব থেকে প্রামাণ্য স্ক্যানকপি –
লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক