বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
হযরত ঈসা (আ:) শেষ যামানায় পৃথিবীতে আকাশ থেকে নাযিল হবেন। এই মর্মে সহীহ বুখারী এবং সহীহ মুসলিম শরীফে বহু হাদীস উল্লেখ আছে বটে কিন্তু সেসব হাদীসে পরিষ্কার করে ‘মিনাস সামায়ি’ (من السماء) অর্থাৎ “আকাশ থেকে” শব্দচয়নে উল্লেখ না থাকলেও তা অন্যান্য একাধিক সহীহ হাদীসে ঠিকই উল্লেখ আছে। ফলে আগমনকারী ঈসা ইবনে মরিয়ম একজন “রূপক ঈসা” হবেন—কাদিয়ানীদের এই মতবাদ সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ও বাতিল বৈ কিছুই না।
স্বয়ং মির্যা কাদিয়ানী নিজেও তার রচনার একাধিক জায়গায় স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন যে, শেষ যুগে আগমনকারী হযরত ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ:) “আকাশ থেকে” (من السماء) নাযিল হওয়ার কথা নবীকরীম (সা:)-এর ভবিষ্যৎবাণীতে এসেছে। যেমন তিনি লিখেছেন, ‘এই জন্যই তাঁর সম্পর্কে নিষ্পাপ নবীর ভবিষ্যৎবাণীতে এসেছে যে, তিনি [ঈসা] ‘আসমান’ থেকে নাযিল হবেন। (রূহানী খাযায়েন: ৫/২৬৮; রচনাকাল ১৮৯২ইং)। এছাড়াও তিনি এই কথা আরো অনেক জায়গায় স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন। প্রমাণের জন্য দেখুন, রূহানী খাযায়েন খ-৩/পৃ-১৪২, আরো দেখুন, মালফুযাত খ-৫ পৃ-৩৩। স্ক্রিনশট দ্রষ্টব্য।
এবার ডকুমেন্টারি স্ক্রিনশটগুলো নিচে তুলে ধরছি। ইমাম বায়হাক্বীর কিতাব ‘আল আসমা ওয়াস সিফাত‘ (১/৩৩১) এর একটি হাদীসে পরিষ্কার উল্লেখ আছে, হযরত ঈসা (আ.) আকাশ থেকে নাযিল হবেন। হাদীসের من السماء শীর্ষক শব্দের উপর এক লাহোরি কাদিয়ানী-এর আপত্তির সংক্ষিপ্ত জবাব পড়তে এখানে ক্লিক করুন! ইমাম বায়হাক্বীর সংকলিত কিতাবের স্ক্রিনশট :-
এখানে একটা প্রশ্ন হতে পারে যে, হাদীসটির সহীহ বুখারীর সনদে তো ‘সামা’ বা আকাশ শব্দটি নেই! এখন ইমাম বায়হাক্বীর সনদে এই ‘সামা’ (আকাশ) শব্দ কোত্থেকে বা কিভাবে এলো? এর দালিলিক উত্তর এখানে।
ধূর্ত কাদিয়ানীদের সত্য গোপন করার একটি দৃষ্টান্ত :
অপ্রিয় হলেও সত্য, ধূর্ত কাদিয়ানীরা হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা:)-এর ঐতিহাসিক একখানা বক্তব্যের প্রসঙ্গ রহস্যজনকভাবে এড়িয়ে যায় যেখানে হযরত উমর (রা:) থেকে একথাও বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছিলেন, যে বলবে মুহাম্মদ (সা:) মৃত্যুবরণ করেছেন আমি তাকে আমার এই তলোবারি দ্বারা হত্যা করব। তিনি আরও বলেছিলেন و انما رفع الى السماء كما رفع عيسى ابن مريم عليه السلام এর মানে হল, “নিশ্চয়ই মুহাম্মদ (সা:)-কে আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে যেমনিভাবে ঈসা (আ:)-কে উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল।” (আল মিলাল ওয়ান নিহাল ১/২৪; ইমাম শাহরাস্তানী)। মির্যা কাদিয়ানী সাহেব নিজেও কথাটি উদ্ধৃত করেছেন। রূহানী খাযায়েন ১৫/৫৮১ দ্রষ্টব্য। কিন্তু কাদিয়ানী জ্ঞানপাপীরা হযরত উমর (রা:)-এর বক্তব্যের প্রথমাংশ বললেও শেষের অংশটুকু উদ্দেশ্যমূলকভাবে এড়িয়ে যায়।
স্ক্রিনশট দ্রষ্টব্য।
অথচ উমর (রা:)-এর ঐ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতেই হযরত আবুবকর (রা:) সূরা আলে ইমরান এর ১৪৪ নং আয়াত তুলে ধরে বয়ান দিয়েছিলেন যে, من كان يعبد محمدا فان محمدا قد مات و من كان يعبد اله محمد فانه حى لا يموت و قرأ هذه الاية و ما محمد الا رسول قد خلت من قبله الرسل الخ এর অর্থ হল, “যে মুহাম্মদ (সা:)-এর ইবাদত করে থাকে (সে যেন জেনে নেয়) মুহাম্মদ (সা:) মৃত্যুবরণ করেছেন। আর যে মুহাম্মদ (সা:) এর প্রভুর ইবাদত করে থাকে (তার জেনে রাখা উচিত) নিশ্চয়ই তিনি জীবিত, মৃত্যুবরণ করেননি। (তারপর) আবুবকর এই আয়াত তেলাওয়াত করেন, وما محمد الا رسول قد خلت من قبله الرسل الخ (অর্থ-মুহাম্মদ একজন রাসূল মাত্র তাহার পূর্বে অনেক রাসূল গত হইয়া গিয়াছে)”।
সুতরাং এটি একথারই প্রমাণ যে, ঈসা (আ:) এর আকাশে উঠিয়ে নেয়ার আকিদা স্বয়ং সাহাবীদেরও। নইলে তিনি কেন একথা বললেন। আর আবুবকর (রা:)ও বা কেন সেকথার রদ (প্রত্যাখ্যান) করলেন না!? জ্ঞানীদের নিশ্চয়ই ভাবিয়ে তুলবে!
এ লেখাগুলোও পড়া যেতে পারে
কুরআনের কোথায় আছে ঈসা (আ:)-কে আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে, কাদিয়ানীদের একটি মূর্খতাসুলভ প্রশ্নের উত্তর। Click (FB থেকে)।
১- পবিত্র কুরআন দ্বারাও প্রমাণিত ঈসা (আঃ) এখনো জীবিত এবং তিনি দ্বিতীয়বার পৃথিবীতে ফিরে আসবেন। Click
২- ত্রিশ আয়াতের ভুল ব্যাখ্যার খন্ডনমূলক জবাব Click
৩- হাদীসের অপব্যাখ্যায় কাদিয়ানীদের দুই ঈসা তথ্যের খন্ডন Click
৪- বাইবেল দ্বারাও সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত আছে যে, কথিত রূপক ঈসার কনসেপশন শুধুই মানুষকে ঠকানো! Click
লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী