ইমাম মাহদীর নামের শেষে ‘আলায়হেস সালাম’ বলা

0
ইমাম মাহদীর নামের শেষে ‘আলায়হেস সালাম’ বলা
  • ইমাম মাহদী যদি “নবী” না হন তাহলে তাঁর নামের পর ‘আলায়হেস সালাম’ (সংক্ষেপে আঃ) কেন লিখা হয় বা বলা হয়? কাদিয়ানীদের প্রশ্ন ও আমার জবাব :

আমার জবাব, পবিত্র কুরআন বলছে, ওয়া খাতামান নাবিয়্যীন (খতম করনে ওয়ালা নবীয়ুঁ কা [উর্দূ]) অর্থাৎ তিনি (মুহাম্মদ সাঃ) নবীগণের আগমনীধারা সমাপ্তকারী। সূরা আহযাব, আয়াত নং ৪০; অনুবাদ- রূহানী খাযায়েন খন্ড ৩ পৃষ্ঠা ৪৩১; মূল মির্যা কাদিয়ানী। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, ১ যদি আমার পরে কেউ নবী হত তাহলে উমর ইবনে খাত্তাবই নবী হত। অন্য জায়গায় তিনি সাঃ আরো ইরশাদ করেছেন, ২ আমি আখেরি নবী আর তোমরা আখেরি উম্মত। তিনি আঃ এও ইরশাদ করেছেন, ৩ আমার মাধ্যমে নবীগণের আগমনীধারা খতম করে দেয়া হয়েছে। তিনি আঃ আরেক জায়গায় ইরশাদ করেছেন, ৪ আমার পরে আর কোনো নবী নেই তবে অচিরেই বহু খলিফা হবে। তিনি আঃ এও ইরশাদ করেছেন, ৫ নিশ্চয়ই রেসালত এবং নবুওয়তের ধারা বন্ধ হয়ে গেছে। সুতরাং আমার পর না কোনো নবী রয়েছে আর না কোনো রাসূল রয়েছে। সংক্ষেপে। সুতরাং বুঝা গেল, মুহাম্মদ সাঃ এর পরে নবুওয়তের ধারা বন্ধ, তাঁর পরে আল্লাহতালা আর কাউকে নবী বানাবেন না। উদ্ধৃতিগুলোর রেফারেন্স নিন্মরূপ!

রেফারেন্স :- ১ তিরমিজি শরীফ। ২ ইবনে মাজাহ, কিতাবুল ফিতান বাবুদ দাজ্জাল। ৩ সহীহ বুখারী। ৪ সহীহ বুখারী কিতাবুল মানাকিব। ৫ তিরমিজি শরীফ।

উপরের সংক্ষিপ্ত আলোচনা দ্বারা বুঝতে পারলাম যে, আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর পরে যে কোনো প্রকারের নবুওয়তের দাবীদার মিথ্যুক এবং দাজ্জাল তথা প্রতারক ও মুসাইলামা কাজ্জাবেরই উত্তরসূরী। সেযাইহোক, এখন প্রশ্ন আসে যে, তাহলে শেষযুগে প্রেরিত প্রতীক্ষিত ইমাম মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ আল মাহদী ওয়াল ফাতেমি ওয়াল হাসানী ওয়াল কুরাইশী এর নামের শেষে কিজন্য ‘আলায়হেসসালাম’ লিখা হয় বা বলা হয়? তার কারণ কী?

উত্তর হচ্ছে, কুরআন কিংবা হাদীস থেকে কেউই দেখাতে পারবেনা যে, মাহদীর নামের শেষে ‘আলাইহেসসালাম’ লিখা হয়েছে। আমি চ্যালেঞ্জ করলাম, কেউ পারলে প্রমাণ করুন! আর সেজন্যই মাহদীর নামের শেষে দোয়াস্বরূপ ‘আলায়হেসসালাম’ লিখা বা বলার জন্য আপনার আর আমার মতই সাধারণ মানুষরাই দায়ী। যদিও বা কোনো কোনো যুগ ইমাম এবং মুজাদ্দিদ ইমাম মাহদীর নামের শেষে ‘আলাইহেসসালাম’ লিখা বা বলার পক্ষে ছিলেন না। মুজাদ্দিদে আলফে সানী হযরত শায়খ আহমদ সারহেন্দী (রহ:) তাদেরই মধ্যে অন্যতম। তিনি ইমাম মাহদীর নামের শেষে ‘রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু’ লিখেছেন। প্রমাণ স্বরূপ তারই মাকতূবাত কিতাবের স্ক্রিনশট দেখুন (৪/৫৮৭; দপ্তরে আউয়াল, উর্দু এডিশন) । কিন্তু তিনি ‘আলায়হেসসালাম’ লিখতে কোথাও বারণ করেছেন কিনা তা জানা নেই।

কতিপয় মনীষীর নামের পরে ‘আলায়হেসসালাম’ লিখা বা বলা প্রসঙ্গে :

আমরা জানি, হযরত লোকমান হাকিম, হযরত খিজির, হযরত বিবি আছিয়া, হযরত বিবি মরিয়ম প্রমুখ এঁদের কেউই নবী ছিলেন না। কিন্তু তা সত্ত্বেও এঁদের সকলের নামের শেষে ‘আলায়হেসসালাম’ বা ‘আলায়হাসসসালাম’ (লিঙ্গভেদে হি/হা যোগে) থাকে। তদ্রূপ হযরত ইমাম মাহদীর নামের শেষেও ‘আলায়হেসসালাম’ লিখার অর্থ এই নয় যে, তিনি নবী হবেন!

ইমাম মাহদীর নামের শেষে ‘আলায়হেসসালাম’ লিখার কারণ :

তার কারণ এইও হতে পারে যে, শেষ যুগে আগমনকারী ইমাম মাহদী নবী করীম সাঃ এর আহলে বাইয়েত হতে ও ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা-র পুত্র হযরত হাসানের ওরশে কুরাইশ বংশে জন্মিবেন (সুনানু আবুদাউদ, কিতাবুল মাহদী অধ্যায়) বলেই বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণে তারও নামের শেষে ‘আলায়হেসসালাম’ লিখতে নিরুৎসাহিত করা হয়না। এই পর্যায়ে কেউ কেউ হয়ত প্রশ্ন করতে পারেন যে, আহলে বাইয়েত এর সদস্যদের নামের শেষে ‘আলায়হেসসালাম’ লিখা বা বলার দলিল কোথায়?

উত্তরে বলতে চাই যে, সহীহ বুখারী শরীফের “কিতাবুল ফাজায়েলে সাহাবাহ” অধ্যায়ের (হাদিস নং ৩৭১১, অধ্যায় নং ৬২; আত-তাওহিদ প্রকাশনী) “বাবুল মানাক্বিবে ফাতিমা” শীর্ষক পর্বে নবীজীর কলিজার টুকরো হযরত ফাতিমার নামের শেষে ‘আলায়হাসসালাম’ (عليها السلام) ব্যবহার করা হয়েছে । একই হাদীস গ্রন্থের অর্থাৎ বুখারী শরীফের “বাবুল মানাক্বিবি ক্বরাবাতি রাসূলিল্লাহ ওয়া মানাক্বিবাতি ফাতিমা আলাইহাসসালাম বিনতে নবী” শীর্ষক আলোচনায় (পর্ব নম্বর-৪১/১২) “আলায়হাসসালাম” ব্যবহার করা হয়েছে। ইমাম বুখারী রহঃ এর কৃত অনুরূপ শিরোনামই প্রমাণ করে যে, আহলে বাইয়েত তথা নবী-পরিবারের সদস্যদের নামের শেষে ‘আলাইহেসসালাম’ (যার অর্থ, তাঁর উপর শান্তি বর্ষিত হোক) লিখা বা বলার অনুমতি রয়েছে। তবে বলতেই হবে এইরূপ উৎসাহিত করা হয়নি। অন্যথা মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহঃ ইমাম মাহদীর নামের শেষে ‘রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু’ লিখতেন না।

সুনানু তিরমিজি গ্রন্থে একটি পরিচ্ছেদ এর শিরোনাম আছে “মানাক্বিবুল হাসান ওয়াল হুসাইন আলায়হেমাসসাল্লাম”। তারই সংশ্লিষ্ট একটি হাদীসের (হাদীস নং ৩৭৭৪) খন্ডাংশ اذ جاء الحسن والحسين عليهما السلام যাইহোক, ইমাম হাসান আর হুসাইন এঁদের দুইজনের নামের শেষে (দ্বিবচনে) ‘আলায়হেমাসসালাম’ উল্লেখ থাকাটাও প্রমাণ করে যে, এটি আহলে বাইয়েত এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আর শেষ যুগে আগমনকারী হযরত ইমাম মাহদী যেহেতু আহলে বাইয়েত থেকে কুরাইশ বংশে (আরবে তথা মদীনায়) জন্মিবেন সেহেতু ওই একই বৈশিষ্ট্যের কারণেই তাঁর নামের শেষেও ‘আলায়হেসসালাম’ লিখতে বা বলতে নিরুৎসাহিত করা হয়না। তবে মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহঃ এর লিখনী দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, উত্তম হল ‘রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু’-ই লিখা বা বলা। ওয়াল্লাহু আ’লাম!

শেষকথা : কাদিয়ানী সম্প্রদায় মির্যা গোলাম কাদিয়ানীকে নবী সাব্যস্ত করতে ইমাম মাহদীর নামের শেষে ব্যবহৃত ‘আলায়হেসসালাম’ এর প্রসঙ্গ টেনে এনে যুক্তি দিতে চায়। অথচ উপরের দীর্ঘ আলোচনা হতে আমরা বুঝলাম যে, ইমাম মাহদীর নামের শেষে ‘আলায়হেসসালাম’ এর ব্যবহার তিনি ” নবী” একথা বুঝাতে নয়, বরং তিনি আহলে বাইয়েত এর মধ্য হতে এবং একজন কুরাইশী হবেন-এদিকেই ইংগিত করতে। অন্যথা হযরত লোকমান, হযরত খিজিরসহ তাঁদের সবাই এমনকি জিব্রাইল, মিকাইল, ইস্রাফিল ও আজরাইল ফেরেশতাগণও কাদিয়ানীদের একই যুক্তিতে নবী হয়ে যাচ্ছেন! আল্লাহ আমাদের বুঝার তাওফিক দিন।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here