মুজাদ্দিদে আলফে সানী (রহঃ)-এর নামে কাদিয়ানীদের মিথ্যাচারের জবাব

0
মুজাদ্দিদে আলফে সানী (রহঃ)-এর নামে কাদিয়ানীদের মিথ্যাচারের জবাব
  • মুজাদ্দিদে আলফে সানী (রহঃ)-এর নামে কাদিয়ানীদের মিথ্যাচারের জবাব

প্রশ্ন : ইমামে রাব্বানী সাইয়িদ আহমদ সারহিন্দী (রহঃ) এর কিতাবে কি লেখা আছে যে, শেষ যুগে আলেমগণ ইমাম মাহদীকে গ্রহণ করতে চাইবেনা?

জবাব : আপনি খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করেছেন। অপ্রিয় হলেও সত্য, কাদিয়ানীরা ইমামে রাব্বানী সাইয়িদ আহমদ সারহিন্দী (রহঃ)-এর প্রতি নিজেদের কথাকেই তাঁর কথা বলে চালিয়ে দেয় মূলত মির্যা কাদিয়ানীর “ইমাম মাহদী” দাবীকে হালাল করার জন্য। নিচে মুজাদ্দিদে আলফে সানী’র খণ্ডিত বক্তব্যের উপর তাদের অতিব খেয়ানতপূর্ণ মন্তব্যের খন্ডন করা হল!

প্রিয়পাঠক! প্রথমে মুজাদ্দিদ সাহেবের নাম ভেঙ্গে প্রচারিত কাদিয়ানীদের লেখাটি পড়ুন। জনৈক কাদিয়ানী মতাবলম্বী লিখেছেন :

“হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আ.)-কে আরব অঞ্চলের (নামধারী) উলামাগণ গ্রহণ করেন না কেন? বার’শ শতাব্দীর মুজাদ্দেদ হযরত শায়খ আহমদ সারহিন্দী (রহঃ) লিখেছেন: “বর্ণিত আছে, হযরত মাহদী রাযিআল্লাহু আনহু তাঁর রাজত্ব কালে যখন ধর্মকে প্রতিষ্ঠিত করবেন এবং সুন্নতকে সঞ্জীবিত করবেন, তখন মদীনার আলেম যে কি-না বেদাতের উপর আমল করা নিজ অভ্যাসে পরিণত করেছে এবং এটি (বেদাত)-কে ধর্মের অংশ বানিয়েছে, আশ্চার্যান্বিত হয়ে বলবে, এই ব্যক্তি আমাদের ধর্মকে দূরে ঠেলে দিয়েছে আর আমাদের ধর্ম ও মিল্লাতকে হত্যা এবং বিনষ্ট করেছে।” (মাকতুবাতে ইমাম রাব্বানী, মাকতুবাত নং-২৫৬, উর্দূ তরজমা, ২য় খণ্ড)।

(উক্ত কাদিয়ানী উম্মত তিনি মুজাদ্দিদ সাহেবের খন্ডিত বক্তব্যের উপর মন্তব্য করতে গিয়ে তারপর লিখেছেন) অর্থাৎ আরব অঞ্চলের ‘নামধারী আলেমগণ’ ইমাম মাহদীর বিরোধীতা করবে তা বুযুর্গানে দ্বীন জানতেন। আর আজ তাই ঘটছে।” (কাদিয়ানিদের লেখাটি শেষ হল)।

  • এবার খন্ডনমূলক আলোচনা :

হিজরী দশম শতাব্দীর বরেণ্য মুজাদ্দিদ ইমামে রাব্বানী সাইয়েদ আহমদ সারহিন্দী (রহঃ) এর সম্পূর্ণ বক্তব্য সামনে রাখলে আপনি একজন নিরপেক্ষ পাঠক হিসেবে বুঝতে পারবেন যে, মির্যা কাদিয়ানী আর তার অন্ধভক্তরা কিভাবে সাতপাঁচ ব্যাখ্যা করে আত্মপ্রসাদ লাভ করে থাকেন! কিভাবে তারা সম্পূর্ণ বক্তব্যের আগপাছ বাদ দিয়ে খন্ডিত বক্তব্য দ্বারা অশিক্ষিত ও সহজ সরল আহমদীদের বোকা বানিয়ে যাচ্ছেন!!
এবার ইমামে রাব্বানীর লেখা থেকে যেসব বিষয় পরিষ্কার হচ্ছে তা নিচে দেখানো হল-

(১) ইমামে রাব্বানীর বক্তব্য দ্বারা পরিষ্কার হচ্ছে যে, প্রতীক্ষিত ইমাম মাহদী শাসক হবেন। কারণ ইমামে রব্বানি (রহঃ) তার বক্তব্যে “সুলতানত” শব্দ উল্লেখ করেছেন। অভিধান দেখুন, সুলতানত অর্থ বাদশাহি।

(২) ইমামে রাব্বানী (রহঃ) এর বক্তব্যের ভেতর তিনি ইমাম মাহদীর নামের শেষে “রাদ্বিয়াল্লাহ আনহু” শব্দ উল্লেখ করেছেন। এতে বুঝা গেল, প্রতীক্ষিত ইমাম মাহদী যিনি হবেন তিনি স্রেফ একজন মুজাদ্দিদ হবেন কিন্তু নবুওত পেয়ে “নবী” হবেন না। কারণ নবুওয়তপ্রাপ্ত যারা তাদের নামের শেষে “রাদ্বিয়াল্লাহু” হয় না।

(৩) হযরত ইমামে রাব্বানী (রহঃ) এর সাথে মদীনার কতিপয় বিদয়াতী আলেমের সম্ভাব্য দ্বন্দ্ব হতে পারে “বিদয়াত” বিষয় নিয়ে। আর এমনটি হওয়া-ই স্বাভাবিক। এখনো বহু আলেম নানাভাবে বিদয়াতে লিপ্ত। যা আজ কারো অজানা নয়। কেয়ামতের শেষ সময় এই ধারা হয়ত আরো প্রকট আকার ধারণ করার দিকে তিনি ইংগিত করতে চেয়েছিলেন।

(৪) ইমামে রাব্বানী (রহঃ) তার একই পৃষ্ঠার একই বক্তব্যের তৃতীয় লাইনের শেষের দিকে এটাও লিখেছেন “হযরত ইমাম মাহদী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু নে উস আলেম কো ক্বতল করনে কা হুকুম ফরমায়ে গে।” অর্থাৎ ইমাম মাহদী তখন ওই [মদীনার বিদয়াতি] আলেমকে হত্যার নির্দেশ দেবেন।” এতে আরো পরিষ্কার হয়ে গেল যে, সে সময় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থাকবে ইমাম মাহদীর হাতে। তাই দেশের কাউকে তখন হত্যার নির্দেশ দেয়ার অধিকার তাঁর থাকবে। লিখাটির সংশ্লিষ্ট স্ক্রিনশট নিচে দেখুন

মাকতুবাত, ৪র্থ খন্ড দপ্তরে আউয়াল (উর্দু) পৃষ্ঠা ৫৮৭; মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহঃ
  • এবার আসুন, মির্যা কাদিয়ানির সাথে উপরের ৪টি বিষয় কিভাবে মিলাবেন?

মির্যা সাহেব কি নবুওয়তের দাবি করেননি? করেছেন। নামের শেষে কি “আলাইহিস সালাম” লিখত না? অবশ্যই লিখত। তাহলে বুঝা গেল কী? ইমামে রাব্বানীর বক্তব্যে যার চরিত্রের উল্লেখ আছে তিনি-ই যদি আজকের মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী সাহেব হন তাহলে তার নামের শেষে “রাদ্বিয়াল্লাহু” কোথায়? নাকি ইমামে রাব্বানী ভুল করে গেছেন? যদি ভুল করেন তাহলে উনার নাম ভেঙ্গে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্য কী? তাদের এধরণের ফাজলামি কে শিখাল? সাধারণ মানুষকে কাদিয়ানী বানানোর অপচেষ্টা নয় তো?

মির্যা সাহেব কি নির্দিষ্ট কোনো ভুখন্ডের শাসক ছিলেন? অবশ্য না। যেজন্য ধূর্ত মির্যা আজীবন নিজেকে দুনিয়ার বাদশাহ এর স্থলে “আসমানি বাদশাহ” হবার বুলি আওড়াতেন। কেননা কথিত আসমানি বাদশাহ হতে নির্দিষ্ট ভুখন্ড লাগেনা। যেমন বর্তমানে কিছু অসাধু ব্যক্তি নিজেদের “জ্বীনের বাদশাহ” দাবী করে মানুষকে প্রতারিত করছে।

মির্যায়ীরা সব কিছুতে রূপক খোঁজে। তাই তারা মির্যাকে প্রকৃত অর্থে শাসক না বলে বরং রূপকার্থে শাসক মানতে চায়। তা হল, আসমানি শাসক। কেননা তারা জানে যে, রূপক অর্থের আশ্রয় না নিলে মির্যার ভাঁওতাবাজিও ধোপে টিকেনা।

যাইহোক মির্যা সাহেবের সাথে মদীনার আলেমগণসহ সারা দুনিয়ার ইসলামি স্কলার ও মুফতী মাশায়েখদের দ্বন্দ্বের সূত্রপাত বিশেষত তার নবুওয়ত দাবীর কারণেই। পক্ষান্তরে ইমামে রাব্বানী (রহঃ) লিখে গেছেন ভিন্ন কথা। অর্থাৎ দ্বন্দ্বের অন্যতম কারণ হতে পারে ‘বিদয়াত বা কুসংস্কার বিষয়াবলী’ নিয়ে। তাহলে…?

মির্যা সাহেবকে ইমামে রাব্বানী (রহঃ)-এর উপরিউক্ত বক্তব্যের চরিত্রের সাথে কিভাবে খাপ খাওয়াবেন যেখানে মির্যা সাহেব না নির্দিষ্ট কোনো রাষ্ট্রের শাসক ছিলেন, না শাসনকর্তা হিসেবে মদীনার কোনো বিদয়াতি আলেমকে হত্যার হুকুম দিতে পেরেছেন? বিপরীতে মির্যাকেই সবাই হত্যার ফতুয়া দিয়ে রেখেছেন।

ইতিহাস সাক্ষী, মির্যার বংশটাই ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের পদলেহন করার জন্য। মির্যা সাহেবের লেখিত বই পুস্তক খুলে দেখুন। তিনি ব্রিটিশের কেমন সেবাদাস ছিলেন তা বুঝে আসবে। খোদার প্রেরিত কোনো পয়গম্বর কি কোনো বিধর্মী দখলদার জালিম শাহীর গোলামী করতে পারে?

এর কোনো জবাব আহমদীদের নিকট নেই। শুধু এটুকু স্বীকার করা ছাড়া যে, মূলত ইমামে রাব্বানী মুজাদ্দিদ সাইয়েদ আহমদ সারহিন্দী (রহঃ) এর বক্তব্যের সাথে ভারতীয় ভন্ড মাহদী মির্যা কাদিয়ানীর ন্যূনতম কোনো সম্পর্ক নেই। ইনিয়েবিনিয়ে এবং জোড়াতালি দিয়ে মনগড়া ব্যাখ্যাই হল তাদের শেষরক্ষা।

আল্লাহতালা এসব অর্ধ শিক্ষিত ও বিবেকহীন কাদিয়ানিদের সত্য উপলব্ধি করার তাওফিক দিন। ওয়াসসালাম।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here