Home কাদিয়ানী মতবাদ খণ্ডন সূরা জুম’আ-তে মুহাম্মদ (সা:)-এর পুনঃজন্ম হওয়ার কোনো ইংগিত আছে কি?

সূরা জুম’আ-তে মুহাম্মদ (সা:)-এর পুনঃজন্ম হওয়ার কোনো ইংগিত আছে কি?

0

কুরআনের আয়াতে অপব্যাখ্যা দিয়ে মির্যা কাদিয়ানী নিজেকে “দ্বিতীয় মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম” দাবী করলো যেভাবে?

কাদিয়ানীরা ‘ওয়া আখারীনা মিনহুম লাম্মা ইয়ালহাকূবিহিম’ [আরবী: وآخرين منهم لما يلحقوبهم] (সূরা জুমা : ৩) আয়াত দ্বারা মির্যা কাদিয়ানীকে হযরত মুহাম্মদে আরাবী (সা.) এর ‘দ্বিতীয় আগমনী সত্তা’ সাব্যস্ত করে থাকে। তাদের বিশ্বাস হচ্ছে, পৃথিবীতে মুহাম্মদ (সা)-এর পুনঃ আগমন ঘটেছে গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর প্রতিচ্ছবিতে। (নাউজুবিল্লাহ)।

আমরা এখানে তাদের সেই কুফুরী ব্যাখ্যার খন্ডন করব, ইনশাআল্লাহ।

প্রথমে জেনে নিতে হবে যে, কাদিয়ানীরা উক্ত আয়াতটির কিরূপ অনুবাদ করেন এবং কেমন ব্যাখ্যা দাঁড় করে থাকেন।

(তাদের অনুবাদ) “আর তাদেরই মাঝ থেকে অন্যদের প্রতিও (তিনি তাকে আবির্ভূত করবেন), যারা এখনো তাদের সাথে মিলিত হয়নি। আর তিনি মহাপরাক্রমশালী (ও) পরম প্রজ্ঞাময়।”

  • এবার তাদের অপব্যাখ্যা :

কাদিয়ানীরা আয়াতটির বিকৃত অনুবাদ করার পর তারই আলোকে ব্যাখ্যা দেয় এভাবে যে,

‘এই আয়াতে শেষ যুগে প্রতিশ্রুত মসীহরূপে মহানবী (সা.)-এর দ্বিতীয় আধ্যাত্মিক আবির্ভাব ঘটবে বলে ভবিষ্যৎবাণী রয়েছে। মহানবী (সা.) স্বয়ং এর প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছেন। বিষয়টির উপর একটি প্রসিদ্ধ হাদীস রয়েছে। মহানবী (সা.)-এর এই বর্ণনা থেকে বুঝা যায়, আয়াতটিতে যে ব্যক্তির আগমনের সংবাদ দেয়া হয়েছে তিনি পারস্য বংশীয় হবেন। আহমদীয়া মুসলিম জামাতের প্রতিষ্ঠাতা প্রতিশ্রুত মসীহ(!) পারস্য বংশীয় ছিলেন। (সংক্ষেপে তাদের বক্তব্য শেষ হল)।

এককথায়, তারা উক্ত আয়াত এবং হাদীসে মির্যা কাদিয়ানীর আগমনের সুসংবাদ রয়েছে বলে দাবী করতে চায়।

  • এবার তাদের উক্ত কুফুরী অপব্যাখ্যার খন্ডন করা হল,

প্রথমেই আয়াতটির আগের আয়াতসহ দুইখানা আয়াতের সঠিক অনুবাদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে মুদ্রিত আল কুরআনুল করীম এর বঙ্গানুবাদ থেকে) জেনে নিন!

“(আয়াত নং ২) তিনিই উম্মীদের মধ্যে একজন রাসূল পাঠাইয়াছেন তাঁহাদের মধ্য হইতে, যে তাঁহাদের নিকট আবৃত্তি করে তাঁহার আয়াতসমূহ; তাহাদেরকে পবিত্র করে এবং শিক্ষা দেয় কিতাব ও হিকমত; ইতিপূর্বে তো ইহারা ছিল ঘোর বিভ্রান্তিতে।”

(আয়াত নং ৩) এবং তাহাদের জন্যও যাহারা এখনও এদের সহিত মিলিত হয় নাই। আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।”

  • এই পর্যায় কাদিয়ানীদের উক্ত বিকৃত অনুবাদ এবং অপব্যাখ্যার পরিপ্রেক্ষিতে আমি তাদের উদ্দেশ্যে কয়েকটি প্রশ্ন করতে চাই,

(১) আয়াতের মধ্যে ‘আখারীনা’ (آخرين) শব্দটি যের এর অবস্থায় হওয়ার কারণ এটি ‘উম্মিয়্যীন’ (اميين) উপর আত্ফ হয়েছে। একথা বলেছেন সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যাকারক প্রখ্যাত যুগ-ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.)। দেখুন ফাতহুল বারী, কিতাবু তাফসীরিল কুরআন অধ্যায়।

ফলে দুটো আয়াতের সারমর্ম দাড়াচ্ছে- আল্লাহতায়ালা উম্মীদের মধ্য হতে যেই রসূল প্রেরণ করেছেন তিনি অন্যান্যদের জন্যও প্রেরিত [একজন রসূল] যারা এখনো এঁদের [সাহাবীদের] সাথে মিলিত হয়নি। তাই প্রশ্ন হল এই আয়াতে ভবিষ্যৎকালে অন্য আর কারো আগমনের সুসংবাদ কিভাবে থাকতে পারে?

(২) আয়াতের মধ্যে ভবিষ্যৎকালে যদি কারো আবির্ভূত হওয়ার কথা সত্যিই থাকত তাহলে অনুবাদের মধ্যে ব্রেকেট ব্যবহার করে ‘তিনি তাকে আবির্ভূত করবেন’ এই অংশটি অতিরিক্ত লিখার কী প্রয়োজন ছিল?

(৩) আয়াতের মধ্যে ‘বা’আছা’ (بعث) শব্দটি অতীতকালবাচক ক্রিয়াপদ। যার অর্থ ‘তিনি পাঠাইয়াছেন’। এর মানে আয়াতটি যার উপর নাযিল হয়েছিল এখানে তাঁকেই বুঝানো হয়েছে যে আল্লাহতায়ালা উম্মীদের মধ্য হতে তাঁকে একজন রসূল করে পাঠিয়েছেন। এমতাবস্থায় ঐ রসূল মির্যা কাদিয়ানী কিভাবে উদ্দেশ্য হয়?

(৪) তারপর চলুন, হাদীসটিও দেখে আসি। হাদীসটি সহীহ বুখারী, মুসলিম এবং সহীহ ইবনে হাব্বান প্রভৃতি কিতাবেও রয়েছে। হাদীসে তিনি (সা.) যে, সেই অন্যান্যদের জন্যও প্রেরিত [একজন রসূল] যারা এখনো এঁদের [সাহাবীদের] সাথে মিলিত হয়নি, সেই অন্যান্যদের পরিচয় তুলে ধরতে তিনি হযরত সালমান ফারসী (রা.)-এর উপর হাত রেখে যে কথা বলেছিলেন তা হল (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৮৯৭) “লাও কা-নাল ঈমানু ইন্দাছ ছুরাইয়্যা লানা-লাহু রিজালুন আও রাজুলুন মিন হা-উলা-য়ি।” (আরবী: لو كان الايمان عند الثريا لناله رجال او رجل من هؤلاء) অর্থাৎ ঈমান যদি ছুরাইয়া নক্ষত্রপুঞ্জের নিকটেও থাকত তবুও তাদের কতেক লোক অথবা তাদের এক ব্যক্তি তা অবশ্যই নিয়ে আসত। আবার কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে (সহীহ মুসলিম) ‘আবনাউল ফারাসি’ অর্থাৎ পারস্যবংশীয় সন্তানগণ। সহীহ ইবনে হাব্বান (খন্ড নং ৬, হাদীস নং ৭১২৩) এর বর্ণনায় এসেছে “লাতানা-ওয়ালুহু রিজালুন মিন কওমি হাজা।” (আরবী: لتناوله رجال من قوم هذا) অর্থাৎ ঈমান যদি ছুরাইয়া নক্ষত্রপুঞ্জের নিকটেও থাকত তবুও এর গোত্রের কতেক ব্যক্তি অবশ্যই তা নিয়ে আসত।

সে যাইহোক, হাদীসগুলোর তাৎপর্য দাঁড়াল, সেই অন্যান্যরা বলতে বিশিষ্ট সাহাবী হযরত সালমান ফারসী (রা:)-এর বংশধর কতেক ব্যক্তিকে বুঝানো উদ্দেশ্য। এমতাবস্থায় বহুবচন-সম্বলিত হাদীসটির ‘কতেক ব্যক্তি’ শব্দের مصداق (উদ্দেশ্য) মির্যা কাদিয়ানী কিভাবে হতে পারে?

(৫) মির্যা কাদিয়ানীর পুত্র ও কথিত মুসলেহ মওউদ মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ রচিত “আহমদ চরিত” (বাংলা অনূদীত) বইয়ের ১ নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, মির্যা কাদিয়ানীর পূর্ব পুরুষের নাম ছিল (মোঘল) বরলাস। যিনি সম্রাট তৈমুরের পিতৃব্য ছিলেন।

মজার ব্যাপার হল, মির্যা সাহেব নিজের বংশধর ‘মোঘল বরলাস’ বলে নিজেও লিখে গেছেন। দেখুন ‘রূহানী খাযায়েন’ খন্ড নং ১৩ পৃষ্ঠা নং ১৬২। এখানে কী বলবেন? যিনি নিজেই নিজেকে ‘মোঘল’ বংশধর বলছেন তিনি তার বিপরীতে পারস্যবংশীয় হওয়ার দাবী কিভাবে করতে পারেন? অথচ মোঘল [তুর্কী] আর পারস্য দুটি ভিন্ন ভিন্ন দুই জাতি।

(৬) মির্যা সাহেব নিজেকে কোথাও চায়নিজ বংশীয় (রূহানী খাযায়েন ১৭/১২৭), কোথাও ফাতেমী বংশীয় আবার ইসরাইলী বংশীয় (রূহানী খাযায়েন ১৮/২১৬); কোথাও পারস্যবংশীয় (রূহানী খাযায়েন ১৩/১৬৩) বলেও লিখে গেছেন।

তাই আমার প্রশ্ন হল, এমন পাঁচমিশালি বংশীয় তথাকথিত মসীহ সাহেবের প্রকৃত বংশ পরিচয় একসাথে কি সবগুলোই?

  • সম্পূর্ণ লিখাটি আমার ফেইসবুক পেইজ থেকে কপি করুন!

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here