ঈসা (আ:) কি কাশ্মীরে এসেছিলেন??
(সূরা মুমিনুন, আয়াত ৫০) ‘এবং আমি মরিয়ম পুত্র (ঈসা) ও তাঁর মাকে করেছিলাম এক নিদর্শন। তাঁদেরকে আশ্রয় দিয়েছিলাম এক নিরাপদ ও প্রস্রবণবিশিষ্ট উচ্চ ভূমিতে।’
সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা : উক্ত আয়াতে ঈসা এবং তাঁর মা মরিয়মকে আল্লাহর ক্ষমতার এক নিদর্শন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কেননা আল্লাহতায়ালা মরিয়মকে বিনা স্বামীতে গর্ভবতী করে ঈসা (আ:)-কে বিনা পিতায় সৃষ্টি করেছেন যা আল্লাহতায়ালারই ক্ষমতার অন্যতম এক নিদর্শন। তারপর আয়াতটিতে রাবওয়াহ (উচ্চভূমি) শব্দও উল্লেখ রয়েছে। যার অর্থ এমন উচ্চভূমি যা সমতল এবং আশপাশের এলাকা থেকে উঁচু। এটি বায়তুল মুকাদ্দাসেরই একটি স্থানকে বুঝানাে হয়েছে। আরেকটি শব্দ এসেছে ‘মা’ঈন’ (বহমান ঝর্ণা) । আরবীতে মা’ঈন বলতে সেই ঝর্ণাকে বুঝানাে হয়েছে যা মহান আল্লাহ ঈসা (আ:)-এর জন্মের সময় মরিয়ম (আ:)-এর পদতলে অলৌকিকভাবে প্রবাহিত করেছিলেন যেমনটি সূরা মরিয়মে (১৯:২৪) উল্লেখ রয়েছে। আয়াতের আরবী, فَنَادَاهَا مِن تَحْتِهَا أَلَّا تَحْزَنِي قَدْ جَعَلَ رَبُّكِ تَحْتَكِ سَرِيًّا অর্থ, ‘অত:পর তিনি (জিবরাইল) তাঁকে (মরিয়ম) তাঁর নিম্ন দিক (-এর পাহাড়ের পাদদেশ) থেকে আহবান করে বললেন, তুমি চিন্তিত হয়ো না। তোমার প্রভু তোমার (পদতলে) নিচ দিয়ে একটা বহমান ঝর্ণা সৃষ্টি করে দেবেন।’ তাফসিরে ইবনে কাসীর। কিতাবটি পড়তে ক্লিক করুন।
এখানে বলে রাখা জরুরি, সূরা মরিয়মের ২৩ নং আয়াত সাক্ষী, উক্ত নিরাপদ ও প্রস্রবণ বিশিষ্ট উচ্চভূমিতে তাঁদের দু’জনের আশ্রয়-মুহূর্তে বিবি মরিয়ম (আ:) গর্ভবতী ছিলেন। ফলে প্রসব-বেদনার দরুন তিনি জেরুজালেমের নিকটস্থ উঁচু ও সমতল কোনাে নিরিবিলি জায়গায় খেজুর গাছের কান্ডের কাছে চলে গিয়েছিলেন।
নাতি-দীর্ঘ বিশ্লেষণ : এই পর্যায় আয়াতটির রাবওয়াহ এবং মা’ঈন শব্দদুটি নিয়ে একটু কথা বলব। হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে যাহহাক (রহ:) বর্ণনা করেন যে, রাবওয়াহ বলা হয় ঐ উঁচু ভূমিকে যা সবুজ-শ্যামল ও কৃষি কাজের উপযােগী (দুররে মানছুর ৬/১০০)। হযরত মুজাহিদ, ইকরিমাহ, সাঈদ ইবনে যােবাইর এবং কাতাদাহ প্রমুখও অনুরূপ বলেছেন (তাফসীরে তাবারী ৫/৫৩৬-৩৭)। মা’ঈন সম্পর্কে হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) বলেছেন, এটি হল ভূমির উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া পানির প্রবাহ (তাফসীরে তাবারী ১৯/৩৮)। মুজাহিদ, ইকরিমাহ, সাঈদ ইবনে যােবাইর এবং কাতাদাহ প্রমুখও অনুরূপ বলেছেন। সে যাইহােক আয়াতে রাবওয়াহ বলে প্রকৃতপক্ষে আরবের কোন স্থানটিকে বুঝানাে উদ্দেশ্য সে সম্পর্কে তাফসীরে ইবনে কাসীর থেকে এখানে উল্লেখ করছি। তাফসীরে তাবারীর (১৯/৩৭) মধ্যে ইবনে আবী হাতেম হতে হযরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়িব (রহ:) এর সূত্রে জায়গাটির নাম ‘দামেস্ক’ উল্লেখ আছে। আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম, হাসান বসরী, যায়িদ ইবনে আসলাম এবং খালিদ ইবনে মাদানও প্রায় অনুরূপ বলেছেন। লাইস ইবনে আবী সুলাইম (রহ:) তিনি মুজাহিদ (রহ:) হতে বর্ণনা করেছেন, আয়াতাংশে ঈসা (আ:) এবং তাঁর মা মরিয়ম দামেস্কের [বর্তমান জেরুজালেম দামেস্কের প্রাচীন ভৌগোলিক সীমানারই অন্তর্ভুক্ত – লিখক] কোনাে এক সমতল ভূমিতে আশ্রয় নেয়ার কথাই বলা হয়েছে (দুররে মানছুর ৬/১০০)। আব্দুর রাজ্জাক (রহ:)-এর ‘মুসান্নাফ’ গ্রন্থে হযরত আবু হােরায়রা (রা:) হতে ফিলিস্তিনের ‘রামাল্লা’ এলাকার কথা বলা হয়েছে। তবে সব চেয়ে বেশি নির্ভরযােগ্য যে বিবরণ পাওয়া যায় তা হল, ইবনে আব্বাস (রা:) হতে প্রাপ্ত আল আউফী’র বর্ণনা। ইবনে আব্বাস (রা:) বলেছেন, আয়াতের অর্থ হচ্ছে প্রবাহিত পানি এবং ঐ ঝর্ণা যা “ক্বদ জা’আলা রাব্বুকি তাহতাকি ছারিইইয়া” অর্থাৎ তােমার প্রভু তােমার পদতলে একটি ঝর্ণা সৃষ্টি করেছেন (সূরা মরিয়ম/১৯:২৪) আয়াতে আল্লাহতায়ালা উল্লেখ করেছেন। সুতরাং এটা হল জেরুজালেম (ফিলিস্তিন) এর একটি স্থান। তবে এই আয়াতটি যেন ঐ আয়াতেরই তাফসীর। আর পবিত্র কুরআনের তাফসীর প্রথমত: কুরআন দ্বারা, তারপর হাদীস দ্বারা এবং এরপর আছার (বিশেষজ্ঞ সাহাবীদের তাফসীর) দ্বারা করা উচিত (তাফসিরে ইবনে কাসীর, সূরা মুমিনুল আয়াত নং ৫০ এর তাফসীর অংশ দ্রষ্টব্য) । উল্লেখ্য, জেরুজালেম প্রাচীন যুগের শাম বা দামেস্কের ভৌগােলিক সীমানারই অংশ বিশেষ।
- একটি হাদীসে এসেছে, রাসূল (সা.) ‘রাবওয়া’ শব্দ হতে ফিলিস্তিনের “রামাল্লাহ” শহরকেই উদ্দেশ্য নিয়েছিলেন। এইভাবে আরো দলিল প্রমাণ সহ জানতে ক্লিক করুন এখানে। ক্লিক
শেষকথা : পবিত্র কুরআনে পরিষ্কারভাবে জায়গার নাম উল্লেখ না থাকায় বিশেষজ্ঞ যুগ ইমামগণের মাঝে ‘রাবওয়াহ’ বলতে জেরুজালেমের কোন স্থানকে বুঝানো উদ্দেশ্য তা নিয়ে মতানৈক্য হয়ে যায়। কিন্তু তা সত্ত্বেও সবাই একমত যে, উল্লিখিত আশ্রয় লাভের ঘটনা হযরত ঈসার (আ:) ভুমিষ্টকালীন সময়েই ঘটেছিল এবং সেটি আরবের কোনাে এক স্থানেই। তবে সব চেয়ে নির্ভরযােগ্য বর্ণনামতে এমনকি ইবনে আব্বাস হতে অন্য আরেকটি সূত্রে সেই স্থানটি জেরুজালেমের (বর্তমান ফিলিস্তিন) রামাল্লা নামক স্থানই ছিল। রাসূল (সা.) হতে মারফূহ সূত্রে এটি প্রমাণিতও বটে। হাদীসটির স্ক্রিনশট দ্রষ্টব্য।
সুতরাং মির্যা কাদিয়ানী আর তার অনুসারীদের দাবী : উক্ত আয়াতে ঈসা (আ:) আর তাঁর মা মরিয়ম কাশ্মীরে আগমন করার কথাই বলা হয়েছে, এটি সর্বান্তকরণে মিথ্যা, অপব্যাখ্যা ও পবিত্র কুরআনের নিকৃষ্টতম বিকৃতির শামিল। কেননা তখন প্রশ্ন আসবে, তবে কি ঈসা (আ:) ভারতের কাশ্মীরেই ভূমিষ্ট হয়েছিলেন? আরাে প্রশ্ন আসবে, বিবি মরিয়ম তিনি ঈসা (আ:)-কে প্রসব করার জন্য আপনা বসতি থেকে প্রায় ৪৬৬০ কিলােমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সুদূর ভারতের কাশ্মীরে কিভাবে গেলেন আর কেনই বা যাবেন? ভাবিয়ে তুলে কিনা! আশাকরি কাদিয়ানী সম্প্রদায় মির্যা কাদিয়ানীর ন্যায় একজন সিজোফ্রেনিয়া রুগীর যতসব উদ্ভট দর্শন নিয়ে শেষবারের মত ভেবে দেখবেন। মির্যা কাদিয়ানীর সিজোফ্রেনিয়া রোগ থাকা সম্পর্কে এখানে পড়ুন।
- সম্পূর্ণ লিখাটি আমার ফেইসবুক পেইজ থেকে পড়ুন!