Home মসীহ ঈসা শায়খ ইবনে কাইয়ুম (রহ:) এর আকীদা ঈসা (আ:) জীবিত

শায়খ ইবনে কাইয়ুম (রহ:) এর আকীদা ঈসা (আ:) জীবিত

0
শায়খ ইবনে কাইয়ুম (রহ:) এর আকীদা ঈসা (আ:) জীবিত
  • ইমাম ইবনে কাইয়ুম (রহ:)-এর আকিদা ঈসা (আ:) জীবিত ও আকাশেই আছেন!

প্রথমে বলে রাখা দরকার যে, কাদিয়ানিদের দৃষ্টিতে ইমাম ইবনে কাইয়ুম (রহ:) ছিলেন সপ্তম শতাব্দির মুজাদ্দিদ। দেখুন মির্যা খোদা বখশ কাদিয়ানী রচিত ‘আছলে মুছাফফা’ ১/১৬৪। স্বয়ং মির্যা কাদিয়ানী সাহেব লিখেছেন, ইবনে কাইয়ুম (রহ:) তদানীন্তন সময়ের একজন মুহাদ্দিস, মুফাসসির এবং যুগের ইমাম ছিলেন। (রূহানী খাযায়েন ১৩/২২১)। এবার আমরা ইবনে কাইয়ুম (রহ:) -এর বক্তব্য জানব। ইবনে কাইয়ুম (রহ:) লিখেছেন : وهذا المسیح ابن مریم حی لم یمت وغذأہ من جنس غذاء الملائكة অর্থাৎ মসীহ ইবনে মরিয়ম তিনি জীবিত, মৃত্যুবরণ করেননি। ফেরেশতাদের (আধ্যাত্মিক) খাবারের মতই তাঁকেও খাওয়ানো হয়। (দেখুন, আত-তিবইয়ান ফী আকসামিল কুরআন: পৃষ্ঠা নং ২৫৫; মাকতাবাতুল মুতানাব্বী কায়রো মিশর, মূল লিখক, ইবনে কাইয়ুম কৃত)।

মূল লিখক, বরেণ্য যুগ ইমাম শায়খ ইবনুল কাইয়ুম রহ:

ইমাম ইবনুল কাইয়ুম (রহ:) আরো লিখেছেন : و اجتمعوا على قتل المسيح و صلبه فضانه الله من ذلك و أكرمه ان يهينه على أيديهم و ألقى شبهه على غيره فقتلوه و صلبوه. অর্থাৎ ইহুদীরা ঈসাকে হত্যা এবং ক্রুসবিদ্ধ করতে সবাই একত্রিত হলে আল্লাহতালা তাঁকে তা হতে রক্ষা করেন এবং তাঁকে তাদের হাতে অপদস্ত হওয়া থেকে সম্মানিত করেন আর তিনি অন্য একজনকে তাঁঁর সাদৃশ করে দেন। ফলে তারা তাকে হত্যা করে এবং ক্রুসবিদ্ধ করে। (হিদায়াতুল হাইয়ারা ফী আজবিবাতিল ইয়াহুদ ওয়ান নাসারা, পৃষ্ঠা নং ৪৮; ইবনুল কাইয়ুম রহ:)। স্ক্রিনশট দ্রষ্টব্য

ইমাম ইবনে কাইয়ুম (রহ:) তিনি আরো লিখেছেন : المسلمین الذی ینتظرونه هو عبدﷲ ورسوله وروحه وکلمته القاها الی مریم العذراء البتول عیسیٰ ابن مریم اخو عبدﷲ ورسوله محمد بن عبد ﷲ فیظهر دین ﷲ وتوحیدہ ویقتل اعداء الدین اتخذوہ وامه الٰهين من دون ﷲ واعداء لا الیهودة الذین رموہ وامه بالعظائم فهذا هو الذی ینتظرہ المسلمون وهو نازل علی المنارۃ الشرقية بدمشق واضعاً یدیه علی منکبي ملکین یراہ الناس عیاناً بابصارهم نازلاً من السماء فیحکم بکتاب ﷲ وسنة رسوله অর্থাৎ মসীহ’র জন্য মুসলমানরা অপেক্ষা করতেছে। তিনি আল্লাহ’র বান্দা এবং আল্লাহ’ রাসূল। তিনি আল্লাহ’র রূহ এবং আল্লাহ’র ঐ কালিমা যা তিনি মরিয়ম (আ:)-এর প্রতি নাযিল করেছেন। অর্থাৎ ঈসা ইবনে মরিয়ম আল্লাহ’র বান্দা এবং আল্লাহ’র রাসূল হযরত মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ (সা:)-এর একজন ভাই (হাদিসে এসেছে, নবীগন পরস্পর বৈপিত্রেয় ভাই)। তিনি আল্লাহ’র দ্বীন এবং তাওহীদকে জয়ী করবেন এবং নিজ দুশমনদের (লড়াইয়ের মাধ্যমে) হত্যা করবেন, যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাঁকে এবং তাঁর মাতাকে উপাস্য বানিয়েছে। আর তিনি সেসব ইহুদী দুশমনদের হত্যা করবেন যারা তাঁর উপর এবং তাঁর মাতার উপর অপবাদ রটিয়েছে। তিনিই হলেন মসীহ মুসলমানগণ যার অপেক্ষায় রয়েছেন। তিনি দামেস্কের পূর্ব প্রান্তে সাদা মিনারার নিকটে এমন অবস্থায় নাযিল হবেন যে, তখন তাঁর দুই হাত দুই ফেরেশতার দুই পাখার উপর রাখা থাকবে। লোকেরা তখন স্বচক্ষে তাঁকে আসমান থেকে অবতরণ করতে দেখবে। তিনি আল্লাহ’র কিতাব এবং রাসূলের সুন্নাত দ্বারা বিচারকার্য পরিচালনা করবেন।” দেখুন, হিদায়াতুল হাইয়ারা ফী আজবিবাতিল ইয়াহুদ ওয়ান- নাসারা; লেখক ইমাম ইবনে কাইয়ুম (রহ:)।

উপরের দীর্ঘ বক্তব্য দ্বারা ঈসা (আ:) সম্পর্কে ইমাম ইবনে কাইয়ুম (রহ:)-এর আকিদা সুস্পষ্ট হয়ে গেছে। কেননা সেখানে তিনি সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, ঈসা (আ:) তিনি আকাশে জীবিত আছেন। তিনি দুইজন ফেরেশতার দুই পাখার উপর হাত রেখে যখন নাযিল হবেন তখন সমসাময়িককালের মুসলমানরা স্বচক্ষে সেই দৃশ্য দেখবেন।

  • এবার কাদিয়ানীরা ইবনে কাইয়ুম (রহ:)-এর যে বক্তব্যটিকে নিজেদের পক্ষে দলিল বানিয়ে মিথ্যাচার করে বেড়ায় সেটি নিচে দেখুন:

ইমাম ইবনে কাইয়ুম (রহ:) ‘মাদারিজুস সালিকীন’ কিতাবের ২য় খন্ডের ২৪৩ এবং ৩১৩ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন : ومحمدﷺ مبعوث الی جمیع الثقلین فرسالتة عامة لجمیع الجن والانس فی کل زمان ولو کان موسیٰ وعیسیٰ حیین لکانا من اتباعه واذا نزل عیسیٰ ابن مریم فانما یحکم بشریعة محمدﷺ অর্থাৎ হযরত (সা:)-এর নবুওয়ত তামাম জীন এবং ইনসানের জন্য এবং প্রত্যেক যামানার জন্য। যদি হযরত মূসা এবং ঈসা (অদ্যাবধি পার্থিব) হায়াতে থাকত তাহলে তাদেরকে অবশ্যই হযরত (সা:)-এর অনুসরণ করতে হত। আর ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ:) যখন নাযিল হবেন তখন তিনি শরীয়তে মুহাম্মদীর উপরই আমল করবেন।”

  • যদি হযরত মূসা এবং ঈসা (অদ্যাবধি পার্থিব) হায়াতে থাকত মর্মে এর তাৎপর্য :

মির্যা কাদিয়ানী তার বই পুস্তকের বহু জায়গায় লিখেছেন যে, শায়খ ইবনুল কাইয়ুম (রহ:) ঈসা (আ:)-কে মৃত্যুবরণ করেছেন বলেই বিশ্বাস করতেন! নাউযুবিল্লাহ। শায়খের অসংখ্য বক্তব্যকে পাশ কাটিয়ে ‘মাদারিজুস সালিকীন’ গ্রন্থের একখানা উদ্ধৃতির حیین (হাইয়ীন) শব্দকে আশ্রয় করে মির্যা কাদিয়ানী উনার নামে এমন জঘন্য মিথ্যাচার করে বসে। অথচ ওই শব্দের প্রকৃত তাৎপর্য হল, যদি মূসা এবং ঈসা তারা দুইজনই পার্থিব জীবনে বর্তমান থাকতো! আরো সহজ করে বললে, যদি মূসা আর ঈসা দুইজনই পৃথিবীতে বর্তমান থাকত! একথার বিপরীত দিক হল, যেহেতু মূসা আর ঈসা তারা পার্থিব জীবনে বর্তমান নেই সেহেতু তাদের কেউই বর্তমানে নবী করিম (সা:)-এর আনুগত্য করতে বাধ্য নয়। তবে হ্যাঁ, শেষ যামানায় হযরত ঈসা (আ:) আবার যখন পার্থিব জীবনে ফিরে আসবেন তখন তিনি অবশ্যই শরীয়তে মুহাম্মদীর উপরই আমল করবেন। শায়খ ইবনুল কাইয়ুম (রহ:) আপনা মাদারিজুস সালিকীন পুস্তকে واذا نزل عیسیٰ ابن مریم فانما یحکم بشریعة محمدﷺ অনুরূপ বক্তব্যের মাধ্যমে তা একদমই পরিষ্কার করে দিয়েছেন।

সেযাইহোক এই পর্যায় আমি কাদিয়ানীদের উদ্দেশ্যে কয়েকটা প্রশ্ন করতে চাই। (১) যদি لو کان حیین (লাও কানা হাইয়ীন) শব্দের মাধ্যমে তিনি ঈসা (আ:)-কে জীবিত নেই বলেই বুঝাতে চাইতেন তাহলে তিনি তাঁর পুস্তকের অন্যান্য জায়গায় কিজন্য লিখলেন যে, ঈসা (আ:) জীবিত তিনি মৃত্যুবরণ করেননি। আল্লাহতালা অন্য একজনকে ঈসার সাদৃশ করে দেন। ফলে তারা তাঁকে হত্যা করে এবং ক্রুসবিদ্ধ করে। ঈসা (আ:) দামেস্কের পূর্ব প্রান্তে সাদা মিনারার নিকটে এমন অবস্থায় নাযিল হবেন যে, তখন তাঁর দুই হাত দুই ফেরেশতার দুই পাখার উপর রাখা থাকবে। লোকেরা তখন স্বচক্ষে তাঁকে আসমান থেকে অবতরণ করতে দেখবে, ইত্যাদি। (২) শায়খ তার উক্ত শব্দচয়নের মাধ্যমে যদি অনুরূপ কোনো কথা বুঝাতে চাইতেন তাহলে ‘মাদারিজুস সালিকীন’ পুস্তকের ২য় খন্ডের ২৪৩ ও ৩১৩ নং পৃষ্ঠায় ওই একই শব্দের পরপরই তিনি واذا نزل عیسیٰ ابن مریم فانما یحکم بشریعة محمدﷺ [আর ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ:) যখন নাযিল হবেন তখন তিনি শরীয়তে মুহাম্মদীর উপরই আমল করবেন]–এমন কথা কিজন্য লিখলেন? মরিয়ম পুত্র ঈসা (আ:) মৃত্যুবরণ করে থাকলে ‘আর যখন ঈসা ইবনে মরিয়ম নাযিল হবেন’—শায়খের একথার কী অর্থ? মরা মানুষ কি কেয়ামতের আগে পুনরায় ফিরে আসতে পারে? ভাবিয়ে তুলে কিনা? (৩) বাঁচা-মরা এসবের সাথে অপার্থিব জগতের কী সম্পর্ক? শায়খ ইবনুল কাইয়ুম (রহ:) হযরত ঈসা (আ:)-কে বর্তমানে অপার্থিব জগতেরই একজন বাসিন্দা বলে বিশ্বাস করা সত্ত্বেও তিনি حیین (হাইয়ীন) শব্দকে আশ্রয় করে মূসা আর ঈসা (আলাইহিমাস সালাম) সম্পর্কে ‘যদি তারা জীবিত থাকত’—অনুরূপ তাৎপর্য কিভাবে নিতে পারেন? এবার একটু গোঁড়ামি ছেড়ে ইসলামের মূলধারায় ফিরে আসুন।

পরিশেষে খুবই দৃঢ়তার সাথে বলতে পারি যে, ইমাম ইবনে কাইয়ুম (রহ:)-এরও আকিদা ছিল, হযরত ঈসা (আ:)-ই কেয়ামত পূর্ব সময়ে আকাশ থেকে নাযিল হবেন এবং তিনি বর্তমানে জীবিত। কাজেই মির্যা কাদিয়ানী একজন মিথ্যুক এবং ভন্ড। এমনকি সে মছীলে ঈসা দাবী করায় ইমাম ইবনুল কাইয়ুম (রহ:)-এর ফতুয়াতেও ‘শয়তানের ওলী’ সাব্যস্ত হয়ে যায়। আল্লাহ আমাদের ঈমানকে হেফাজত করুন। আমীন!

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

Previous article ঈসা (আ:)-এর কবর কোথায় হবে?
Next article মুফতি আব্দুস সালাম চাটগামী (হাফিঃ)
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! এটি সম্পূর্ণ দ্বীনি ও অলাভজনক একটি ওয়েবসাইট। প্রতি বছর এটির ডোমেইন ও হোস্টিং ফি হিসেবে আমাকে এর ব্যয় বহন করতে হচ্ছে। যদি উক্ত ব্যয় বহন করতে অপারগ হই তাহলে এই সাইটটি নিশ্চিত বন্ধ হয়ে যাবে। সেহেতু আপনাদের সবার নিকট আবেদন থাকবে যে, আপনারা সাইটটির উক্ত ব্যয় বহনে এতে বিজ্ঞাপন দিতে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে উৎসাহিত করবেন এবং নিজেরাও সহযোগিতায় এগিয়ে আসবেন। বিনীত এডমিন! বিকাশ : ০১৬২৯-৯৪১৭৭৩ (পার্সোনাল)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here