Home মসীহ ঈসা প্রতিশ্রুত ঈসা (আ:) দ্বিতীয়বার এসে হজ্জ্ব পালন করবেন

প্রতিশ্রুত ঈসা (আ:) দ্বিতীয়বার এসে হজ্জ্ব পালন করবেন

0
প্রতিশ্রুত ঈসা (আ:) দ্বিতীয়বার এসে হজ্জ্ব পালন করবেন

হযরত ঈসা (আ:) পৃথিবীতে দ্বিতীয়বার এসে হজ্জ্ব করার উপর কাদিয়ানীদের উদ্দেশ্যমূলক আপত্তি উত্থাপন ও তার খন্ডন :

গুগোল ম্যাপের আলোকে —by Principal NurunNabi

প্রতিশ্রুত ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ:) শেষযুগে পৃথিবীতে দ্বিতীয়বার যখন আসবেন তখন তিনি হজ্জ্ব এবং উমরাহ পালন করবেন। সহীহ মুসলিম শরীফের একটি হাদীসে রাসূল (সা:) হতে প্রতিশ্রুত ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ:) সম্পর্কে এমনি ভবিষ্যৎবাণী উল্লেখ রয়েছে। (রেফারেন্স : সহীহ মুসলিম [হাঃ একাডেমী] হাদীস নং ২৯২০)।

বলাবাহুল্য যে, উল্লিখিত হাদীসে ঈসা (আ:)-এর শুধুই তালবিয়াহ্ পাঠ করা সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে তিনি ইহরাম কোথা হতে বেঁধে হজ্জ্বের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন সে সম্পর্কে কোনো কথারই উল্লেখ নেই। তবে বহু সহীহ হাদীস আর ভৌগোলিক বিচার বিশ্লেষণ দ্বারা খুব জোরালোভাবে সাব্যস্ত হচ্ছে যে, ঈসা (আ:) দামেস্কের পূর্বপ্রান্তে ও জেরুজালেমের নিকটবর্তী আফীক নামক পাহাড়ে আকাশ থেকে নাযিল হওয়ার পর যথাসময় ওখান থেকেই হজ্জ্বের ইহরাম বেঁধে মক্কার উদ্দেশ্যে (উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে) মদীনারই অন্তবর্তী এলাকা ‘রাওহা‘ উপত্যকায় কাফেলা সহ এসে পৌঁছুবেন। তারপর সেখান থেকে তালবিয়াহ পাঠ আরম্ভ করবেন। কেননা হাদীসে এসেছে, রাসূল (সা:) নিজেও কখনো কখনো হজ্জ্ব আর উমরাহ করার উদ্দেশ্যে মদীনা থেকে রাওহা উপত্যকায় নির্মিত ‘মসজিদে রাওহা’-তে অবতারণ করতেন। সেখান থেকেই তিনি ইহরাম ও তালবিয়াহ পাঠ আরম্ভ করে দিতেন। (ইমাম ইবনে জাওযীর ‘আলওয়াফা’ এর সূূত্রে উইকিপিডিয়া [আরবি])। অতএব, কাদিয়ানীদের উদ্দেশ্যমূলক সমুদয় আপত্তি পুরোপুরি অসার বলেই সাব্যস্ত হল ! (আল্লাহু আ’লাম)।

স্ক্রিনশট :

ঈসা (আ:) আকাশ থেকে ‘আফিক‘ নামক পাহাড়ে নাযিল হবেন। (কাঞ্জুল উম্মাল খন্ড ১৪ পৃষ্ঠা ৬১৯ দ্রষ্টব্য) ।

এক নজরে রাওহা’র ভৌগোলিক অবস্থান :

মক্কা হতে জেরুজালেম (দক্ষিণ -উত্তরে) দূরত্ব ১৪৭৮ কি:মি:| (চারচাকা গাড়ির গতিবেগে) সময় ১৫:৫৩/মি.।

মক্কা হতে রাওহা উপত্যকা (দক্ষিণ -উত্তরে) দূরত্ব ৩৪৬.৪ কি:মি:|সময় ০৩:২৩/মি.।

রাওহা উপত্যকা হতে মদীনা (দক্ষিণ -উত্তরে) দূরত্ব ১০৪ কি:মি:|সময় ০১:০৭/মি.।

মদীনা হতে জেরুজালেম তথা বায়তুল মুকাদ্দাস (দক্ষিণ -উত্তরে) দূরত্ব ১২০০ কি:মি:|সময় ১৩:১৫/মি.।

এখানে জানিয়ে দিতে চাই যে, হযরত ঈসা (আ:) যেই রাওহা উপত্যকার সন্নিকটবর্তী হয়ে হজ্জ্বের তালবিয়াহ পাঠ আরম্ভ করবেন বলে সহীহ মুসলিম শরীফে এসেছে, মক্কার কেন্দ্র থেকে সেটির দূরত্ব ৩৪৬.৪ কিলোমিটার আর রাওহা অঞ্চলের উত্তরের প্রান্তসীমা থেকে মদীনার কেন্দ্রের দূরত্ব ৮০ কিলোমিটার। কারণ রাওহা উপত্যকা ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বিস্তৃত এলাকা। (সূত্র : আধুনিক গুগোল ম্যাপ)। এবার হাদীসটি দেখুন :-

অধ্যায়ঃ ১৬। হজ্জ্ব (كتاب الحج); হাদিস নম্বর : ২৯২০

(আরবী) باب إِهْلاَلِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَهَدْيِهِ ‏ وَحَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ مَنْصُورٍ، وَعَمْرٌو النَّاقِدُ، وَزُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، جَمِيعًا عَنِ ابْنِ عُيَيْنَةَ، قَالَ سَعِيدٌ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ، حَدَّثَنِي الزُّهْرِيُّ، عَنْ حَنْظَلَةَ الأَسْلَمِيِّ، قَالَ سَمِعْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ، رضى الله عنه يُحَدِّثُ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏”‏ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَيُهِلَّنَّ ابْنُ مَرْيَمَ بِفَجِّ الرَّوْحَاءِ حَاجًّا أَوْ مُعْتَمِرًا أَوْ لَيَثْنِيَنَّهُمَا

২৯২০-(২১৬/১২৫২) সাঈদ ইবনু মানসূর, আমর আন নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হারব (রহ:) …… আবু হোরায়রাহ (রা:) রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, সে সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ! মরিয়ম পুত্র ঈসা (আ:) নিশ্চিত রাওহা উপত্যকায় হজ্জ্ব (হাজ্জ/হজ)  অথবা উমরাহ অথবা উভয়ের তালবিয়াহ্ পাঠ করবেন। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ২৮৯৬, ইসলামীক সেন্টার ২৮৯৫)।

ফুটনোট :

এখানে দুটো প্রশ্ন থাকে :-

প্রশ্ন ১ :

রাওহা উপত্যকা কোথায়? সাহাবীদের যুগেও রাওহা উপত্যকা হতে হজ্জ্ব বা উমরাহ এর জন্য তাদের তালবিয়াহ্ পাঠকরার দৃষ্টান্ত আছে কি?

জবাবে বলা হবে যে, ‘রাওহা‘ এটি মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী ২৫ কিলোমিটার বিস্তৃত মদীনারই একটি উপত্যকা। উইকিপিডিয়া (আরবী) দ্রষ্টব্য। ফলে এটি ‘যুল-হুলাইফাহ’ নামক মীকাতের ভুগৌলিক সীমানারই অন্তর্ভুক্ত। ইমাম বুখারী’র শায়খের শায়খ ‘মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা’ (রহ:) তিনি হযরত ইয়াকুব ইবনে যায়েদ (রা:) হতে বর্ণনা করেছেন : كان اصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم لايبلغون الروحاء حتى تبح اصواتهم من التلبية অর্থ : রাসূল (সা:)-এর সাহাবীরা ‘রাওহা’ উপত্যকায় পৌঁছার আগ পর্যন্ত উচ্চাওয়াজে তালবিয়াহ্ পাঠ করতেন না। (মুসান্নাফ ইবেন আবী শাইবা ৩/৩৭২; হাদীস নং ১৫০৫১)। অতএব, সাহাবীদের যুগেও রাওহা উপত্যকা হতে হজ্জ্ব বা উমরাহ এর জন্য তাদের তালবিয়াহ্ পাঠকরার দৃষ্টান্ত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেল এবং হাদীসটির ন্যায় উক্ত হাদীস ঈসা (আ:) এর হজ্জ্বের তালাবিয়াহ্ পাঠের স্থান সম্পর্কেও জানান দিলো।

স্ক্রিনশট :

উইকিপিডিয়া (আরবী) এর স্ক্রিনশট

প্রশ্ন ২ :

সহীহ বুখারীর কিতাবুল হাজ্জ্ব পর্বে হজ্জ্বের মীকাত মাত্র ৪টির উল্লেখ আছে। সেখানে মদীনার সীমান্তবর্তী যে কোনো হজ্জ্ব পালনকারীর ইহরামের ক্ষেত্রে ‘যুল-হুলাইফা’ নামক মীকাতের বর্ণনা এসেছে। অর্থাৎ যুল-হুলাইফা নামক স্থান অতিক্রম করার আগেই ইহরাম বাঁধা আবশ্যক যেভাবে আমাদের বাংলাদেশীরা এয়ারপোর্ট থেকে ইহরাম অবস্থায় ‘ইয়ালামলাম‘ নামক মীকাত অতিক্রম করে থাকে। তো ঈসা (আ:) রাওহা উপত্যকা হতে তালবিয়াহ্ পাঠ আরম্ভ করবেন বুঝলাম কিন্তু উনার মীকাত হিসেবে ওই চারখানা মীকাতের কোনটি ধর্তব্য হবে?

জবাবে বলব, আর যেহেতু ‘রাওহা’ উপত্যকা ‘যুল-হুলাইফাহ’ নামক মীকাতের ভুগৌলিক সীমানারই অন্তর্ভুক্ত হওয়াই প্রমাণিত সেহেতু হযরত ঈসা (আ:)-এর জন্য ওই স্থান থেকেই হজ্জ্বের তালবিয়াহ্ পাঠ করা প্রকারান্তরে ‘যুল-হুলাইফাহ’ থেকেই ইহরাম সহ তালবিয়াহ্ পাঠ করার নামান্তর। সুতরাং কাদিয়ানীদের দৃষ্টিতে সহীহ বুখারীর উক্ত মীকাত শীর্ষক হাদীসের সাথে মুসলিম শরীফের উল্লিখিত হাদীসের বৈপরীত্য থাকার যেই আপত্তি উত্থাপন করা হয় তজ্জন্য মূলত ‘রাওহা‘ এর ভৌগোলিক অবস্থান সম্পর্কে তাদের চরম অজ্ঞতা কিংবা মতলবসিদ্ধ অসৎ উদ্দেশ্যই দায়ী! আশাকরি উত্তর পেয়েছেন।

মির্যা কাদিয়ানীর প্রকৃত পরিচয় Click

কাদিয়ানীদের জন্য দুঃসংবাদ :

কাদিয়ানীদের জন্য দুঃসংবাদ যে, উক্ত হাদীসটি ‘কসম’ সহ বর্ণিত হওয়ায় তার সংবাদটি বাহ্যিক অর্থেই পূর্ণ হবে এর রূপক অর্থ করা যাবেনা। অন্যথা কসম করে কী লাভ হল? মির্যা কাদিয়ানী থেকেও ‘কসম’ সম্বলিত হাদীস সম্পর্কে অনুরূপ মতই উল্লেখ আছে। (দেখুন, হামামাতুল বুশরা [বাংলা] পৃষ্ঠা নং ২৭)।

শেষকথা : ভারতীয় বংশোদ্ভূত নবুওয়তের দাবীদার মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী নিজেকেই ইমাম মাহদী এবং প্রতিশ্রুত ঈসা ইবনে মরিয়ম হওয়ার দাবীও করেছিল। তার অনুসারিরা তাকে একজন রূপক মসীহ বলেও বিশ্বাস করে। অথচ মির্যা কাদিয়ানী জীবনে কখনো হজ্জ্ব বা উমরাহ কোনোটাই করতে পারেনি। আমরা যদি সহীহ মুসলিম শরীফে উল্লিখিত হাদীসটির মানদণ্ডেও মির্যাকে পরিমাপ করতে চাই তাতেও যথেষ্ট হবে যে, হাদীসে বর্ণিত প্রতিশ্রুত সেই মসীহ ঈসা আর যেই হবেনা কেন—সে অন্তত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী হতে পারেনা!! বিষয়টি তার অনুসারীদের অবশ্যই ভাবিয়ে তুলতে সাহায্য করবে, ইনশাআল্লাহ।

স্ক্রিনশট :

মির্যা কাদিয়ানীর ভাগ্যে জীবনে কোনোদিন হজ্জ্ব, উমরাহ, যাকাত, ইতিকাফ করা সম্ভব হয়নি। দেখুন তারই পুত্র মির্যা বশির আহমদ এম.এ রচিত মির্যার জীবনীগ্রন্থ ‘সীরাতে মাহদী‘ খন্ড নং ৩, রেওয়ায়েত নং ৬৭২

পরিশেষে রাসূল (সা:) এর সুস্পষ্ট ভবিষ্যৎবাণীটি আপনাদের উদ্দেশ্যে জানিয়ে দিতে চাই যে, রাসূল (সা:) ঈসা (আ:) সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন : নিশ্চয়ই ঈসা মৃত্যুবরণ করেননি। নিশ্চয়ই তিনি কেয়ামতের পূর্বে তোমাদের নিকট ফিরে আসবেন। (তাফসীরে তাবারী, ৫/৪৪৮)।

স্ক্রিনশট :

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

Previous article কোন ফেরকার ইসলামে ফিরে আসব—কাদিয়ানীদের প্রশ্নের উত্তর
Next article মির্যা কাদিয়ানীর গালিগালাজ
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! এটি সম্পূর্ণ দ্বীনি ও অলাভজনক একটি ওয়েবসাইট। প্রতি বছর এটির ডোমেইন ও হোস্টিং ফি হিসেবে আমাকে এর ব্যয় বহন করতে হচ্ছে। যদি উক্ত ব্যয় বহন করতে অপারগ হই তাহলে এই সাইটটি নিশ্চিত বন্ধ হয়ে যাবে। সেহেতু আপনাদের সবার নিকট আবেদন থাকবে যে, আপনারা সাইটটির উক্ত ব্যয় বহনে এতে বিজ্ঞাপন দিতে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে উৎসাহিত করবেন এবং নিজেরাও সহযোগিতায় এগিয়ে আসবেন। বিনীত এডমিন! বিকাশ : ০১৬২৯-৯৪১৭৭৩ (পার্সোনাল)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here