শুরুকথা :
প্রথমেই বলে রাখি, মিথ্যাবাদীর উপর আল্লাহর অভিশাপ (و لعنة الله على الكاذبين )! তাই আসুন, শুনা শুনা কথায় নয়, নগদে সঠিক ইতিহাস জেনে নিই। যাদের ইতিহাস তাদেরই বই থেকে জেনে নিন! তবেই ক্লিয়ার হতে পারবেন যে, মির্যা কাদিয়ানীর মৃত্যু কোথায় এবং কিভাবে হয়েছিল! আর এই কথা যে দুনিয়াবাসীর বানানো কোনো কথা নয়, বরং বাস্তব একটি সত্য ঘটনা তাতে কোনো সন্দেহ থাকবেনা। অত্র লিখাটির প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে দুটি। কাদিয়ানের কৃষ্ণ মির্যা গোলাম আহমদ এর মৃত্যু “কলেরা” এবং “টাট্টিতে” হয়েছিল কিনা? কলেরাকে তিনি তার নিজের জন্য ‘অভিশপ্ত মৃত্যু’ স্বরূপ গণ্য করতেন কিনা?
অপ্রিয় হলেও সত্য, আধুনিক অনেক কাদিয়ানী-ই বিশ্বাস করেনা যে মির্যা কাদিয়ানীর মৃত্যু কলেরায় এবং মলমুত্রে হয়েছিল! আফসোস! সম্প্রতি অধিকাংশ কাদিয়ানী এগুলোকে উলামায়ে কেরামের বানানো গল্প মনে করেন। যদিও সত্য মিথ্যা যাচাই করে অন্তত নিজ চোখে একবার হলেও দেখে নেয়া উচিত! যাতে কাজ্জাব মির্যা কাদিয়ানীর হাকিকত পর্যন্ত পৌছা সহজ হয়! যেন বোধগম্য হয় যে, এরকম অপমানকর ও অভিশপ্ত মৃত্যু কোনোভাবেই কোনো নবীর হতে পারেনা। হে আল্লাহ তুমি তাদের সুমতি দাও! জেনে অবাক হবেন, এ ব্যাপারগুলো সঠিক প্রমাণ করতে কাদিয়ানী ঘরানার বইগুলোই আমাদের জন্য যথেষ্ট। বহু শীর্ষ স্থানীয় কাদিয়ানী উম্মত(?) নিরবে এগুলোকে সঠিক স্বীকার করলেও উদ্দেশ্যমূলক কারণে প্রকাশ করতে চান না!
মির্যায়ীদের অথেনটিক বইপুস্তক থেকে : মির্যার ছেলে মির্যা বশির আহমদ (এম এ) রচিত সিরাতে মাহদী‘র ১ম খন্ডের ১১ নং পাতা খুলে দেখুন। কলেরার সুস্পষ্ট ইংগিত ও মৃত্যুক্ষণের বীভৎস ঘটনার প্রমাণসহ তার পায়খানায় (রেডিমেড চার-পায়া টাট্টির উপর) উল্টে পড়ে জীবন-মৃত্যুুুর সন্ধিক্ষণে পৌঁছে যাওয়ার প্রমাণ দেখতে পাবেন। যেমন, তাদেরই বইয়ের ভাষায় :
“(মির্যা কাদিয়ানীর স্ত্রী বলেন)…কিন্তু তিনি এমনি দুর্বল ছিলেন যে, টয়লেটেও যেতে পারছিলেন না, তাই আমি (খাটের) চারপায়ার নিকটেই (রেডিমেড টাট্টির) ব্যবস্থা করে দিই। তিনি সেখানেই বসে সেরে ফেলেন এবং পুনরায় উঠে বসে পড়েন। (তারপর) আমি তার পা দাবাতে থাকি। কিন্তু (তার) দুর্বলতা খুবই বেড়ে গিয়েছিল। তারপর (তার) আরেকবার ডায়রিয়া হল। আরো একবার বমিও বল। তারপর তিনি বমি সেরে বসতে চাইলেন। তখন দুর্বলতা এতখানি ছিল যে, তিনি বসতেই পেছন দিকে চারপায়ার (রেডিমেড টাট্টির ) উপর উল্টে পড়ে যান এবং তার মাথা চারপায়ার পট্টির সাথে লেগে যায় আর (তার) অবস্থা খুব শোচনীয় হয়ে যায়। তখন আমি ঘাবড়ে গিয়ে বললাম, ও আল্লাহ! এটা কী হতে চলল!”
তারপর ১৯০৮ সালের ২৫ই মে মঙ্গলবার (মির্যার মৃত্যুর আগের দিন) মির্যা সাহেবের মুরিদ ও তদীয় শ্বশুর (কাদিয়ানির দ্বিতীয় স্ত্রী নুসরাত জাহানের পিতা) মীর নাসির সাহেবকে মির্যা কাদিয়ানী উদ্দেশ্য করে রাত্রবেলায় মুমূর্ষু অবস্থায় বলেছিলেনঃ- میر صاحب مجہے وباہی ہیضہ ہوگیا ہے অর্থাৎ মীর সাহেব! আমাকে কলেরার বিপদ পেয়ে বসেছে। (রেফারেন্স – হায়াতে নাসির– ১৪; লিখক কাদিয়ানী মুরুব্বী শেখ ইয়াকুব আলী ইরফানি কাদিয়ানী [এডিটর, আল হিকাম]) এই পর্যায় মির্যার স্বীকারোক্তি দ্বারাই প্রমাণ করা হয়েছে যে, তার মৃত্যু হয়েছিল হাইদ্বাহ তথা কলেরায়। উল্লেখ্য, কলেরাকে উর্দূতে ‘হাইদ্বাহ’ বলে। স্ক্রিনশট নিচে দেখুন-
এবার মির্যার শ্বশুর মুহাম্মদ আলী খান (মীর নাসের নামে পরিচিত) এর মুখ থেকে শুনুন! তিনি বলেন :
- “হযরত (মির্যা) সাহেবের যেই রাতে অসুখ হল সেই রাতেই আমি আমার জায়গায় গিয়ে শুয়ে পড়ি। যখন তার খুব কষ্ট হচ্ছিল তখন আমাকে জাগানো হল আর আমি হযরতের নিকট যখনি গিয়ে পৌঁছলাম এবং তার কষ্ট দেখলাম তখন তিনি আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, মীর সাহেব! আমাকে কলেরার বিপদ পেয়ে বসছে। তারপর থেকে আমার জানামতে তিনি আর কোনো কথা বলেননি। এই অবস্থায় দ্বিতীয় দিন সকাল দশটায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।” (হায়াতে নাসের পৃষ্ঠা ১৪; পুরাতন এডিশন)।
এখানে বলে রাখা প্রয়োজন যে, মির্যা কাদিয়ানী কলেরার মৃত্যুকে তার নিজের জন্য অভিশপ্ত মৃত্যু হিসেবে নির্ধারণ করেছিল। তিনি ১৯০৭ সালে ১৫-ই এপ্রিল ভারতের অমৃতসরের প্রখ্যাত আলেম সানাউল্লাহ অমৃতসরী (জন্মমৃত্যু : ১৮৬৮-১৯৪৮)-এর প্রতি লেখিতভাবে একটি দীর্ঘ প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করেন। সেখানে উল্লেখ করেন :
- যদি আমি এইরূপই একজন মিথ্যাবাদী এবং ফাসাদ সৃষ্টিকারী হয়ে থাকি যেরকমটি আপনি আপনার লিখাতে উল্লেখপূর্বক অধিকাংশ সময় আমাকে স্মরণ করে থাকেন তাহলে আমি আপনার জীবদ্দশাতেই ধ্বংস হয়ে যাব। কেননা আমি জানি কোনো ফাসাদ সৃষ্টিকারী এবং মিথ্যাবাদীর হায়াত বেশী হয়না। (দেখুন মাজমু’আয়ে ইশতিহারাত ৩/৫৭৯)।
ইতিহাস স্বাক্ষী, মির্যা কাদিয়ানীর মৃত্যু মওলানা সানাউল্লাহ (রহ:) এর আগেই ১৯০৮ সালে হয়েছে আর সানাউল্লাহ সাহেবের মৃত্যু হয়েছে ১৫ ই মার্চ ১৯৪৮ সালে। উল্লেখ্য, মির্যা কাদিয়ানী নিজের মিথ্যাবাদী হওয়া শর্তে “হাইদ্বাহ” তথা কলেরার মৃত্যু চেয়ে নিজের উপর বদ-দোয়াও করেন। দেখুন, মাজমু’আয়ে ইশতিহারাত খন্ড ৩ পৃষ্ঠা ৫৭৮। স্ক্রিনশট নিচে দেখুন-
মির্যার স্বীকারোক্তি ছিল, মুবাহালাকারীর যেই পক্ষ মিথ্যাবাদী সে সত্যবাদীর জীবদ্দশাতে মারা যাবে। দেখুন, মালফূজাত খন্ড ৫ পৃষ্ঠা ৩২৭। তারপরের ইতিহাস সবার জানা। মির্যা কাদিয়ানীর সাথে মুবাহালায় অংশগ্রহণকারী শায়খ আব্দুল হক গজনভী (রহ:) এর মৃত্যু হয় ১৬ই মে ১৯১৭ সালে। তার মানে শায়খের আগেই মির্যা কাদিয়ানী মৃত্যুবরণ করার মাধ্যমেও প্রমাণ করে গেলেন যে, তিনি একজন জঘন্য মিথ্যাবাদী! স্ক্রিনশট নিচে দেখুুন-
আরো একটি কথা বলে রাখা দরকার। শায়খ আব্দুল হক গজনভী (রহ:) এর সাথে মির্যা কাদিয়ানীর মুবাহালা হয়েছিল ১৮৯৩ সালে অমৃতসরের ঈদগাহ ময়দানে। (রূহানী খাযায়েন ৬/৩৭২)। নিচে স্ক্রিনশট দেখুন!
এখানে লক্ষনীয় বিষয় হল, সীরাতে মাহদী আর ‘হায়াতে নাসের’ বই দুটোর বর্ণনা মতে মির্যার কলেরায় মৃত্যু হওয়াটা যদিও ১০০% নিশ্চিত কিন্তু তার মৃত্যুটা টাট্টিতেই হয়েছিল বিষয়টি সুস্পষ্ট নয়। তবে হ্যাঁ, টাট্টিতে উল্টে পড়ে যাওয়া এবং অবস্থা চরম শোচনীয় হওয়া, এইটুকু পরিষ্কার। সম্ভবত, কাদিয়ানীরা এই জন্য মির্যার মৃত্যু টাট্টিতে হওয়ার বিরুধিতা করেন। কিন্তু তাদের ‘হায়াতে নাসের‘ বইটির একদম পুরাতন এডিশন দেখলে পরিষ্কার হয়ে যায় যে, মির্যা কাদিয়ানীর মৃত্যু টাট্টিতে হওয়া ১০০% সত্য, সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। যেখানে মির্যার কলেরায় আক্রান্ত হওয়ার বক্তব্য তো আছেই, সে সাথে তার মৃত্যু টাট্টিতে হওয়ার উল্লেখও পরিষ্কার শব্দে রয়েছে। দুঃখের বিষয় হল, কাদিয়ানীরা সেটির পরবর্তী এডিশনে ‘মৃত্যু টাট্টিতে হওয়া’ এর তথ্যটি গায়েব করে ফেলে। তারপরের এডিশনে ‘কলেরায় আক্রান্ত হওয়া’ এর তথ্যটিও গায়েব করে ফেলে। এই সম্পর্কে ৩ ঘণ্টার উর্দূ এই ডিবেটটা দেখা যেতে পারে। তারিখ ২০২০ ইং। কাদিয়ানীদের পক্ষে মুরুব্বী দাউদ নাসের কথা বলছেন। তিনি অবশেষে বিষয়টি স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন। ভিডিওতে ক্লিক করুন।
আগের এডিশনগুলোতে তথ্য গায়েব করার প্রামাণ্য ডকুমেন্ট এখানে!
অবশেষে বলতে পারি, মির্যা কাদিয়ানী এবং তার মুরিদদের বই দ্বারাও আমরা প্রমাণ করতে পারলাম যে, মির্যার মৃত্যু কলেরাতে হয়েছিল এবং পায়খানাতে হয়েছিল। কাজেই কাদিয়ানিদের নিকট আমাদের শুধু প্রশ্ন একটাই। তা হল, মির্যা সাহেবের রাওজা শরিফ(?) লাহোরে আহমদী বিল্ডিং এর অভ্যন্তরে মলমুত্রে না হয়ে পাঞ্জাবের “কাদিয়ান” পল্লিতে কেন হল? অথচ সে ছিল একজন নবী দাবিদার। আর তিরমিজি শরীফের একটি হাদীসে এসেছে ما قبض الله تعالى نبيا، الا فى الموضع الذي يحب أن يدفن فيه অর্থ:- আল্লাহতালা কোনো নবীকে এমন কোনো স্থানে মৃত্যু দেননা যে স্থানটি তাঁর সমাধি হিসেবে প্রিয় নয়। (হাদীসের মান, সহীহ)।
সুতরাং মির্যা সাহেবের টাট্টিতে উপড়ে পড়ে মৃত্যুবরণ করার ঘটনা কাদিয়ানীরা যতভাবেই অস্বীকার করেনা কেন, প্রকৃতপক্ষে ঘটনা বাস্তব সত্য। তাই বলা যায়, মির্যা কাদিয়ানীর মৃত্যুই তার মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য যথেষ্ট! কাজেই যাদের চোখ আছে দেখবে আর যাদের অন্তর আছে উপলব্ধি করবে। সবাইকে ধন্যবাদ। ওয়াসসালাম।
লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক