আল্লাহর দিক কোনটি? কাদিয়ানীদের উদ্দেশ্যমূলক একটি প্রশ্ন ও আমার জবাব
আপনি যখন পবিত্র কুরআন খুলেই তাদের (কাদিয়ানীদের) ভ্রান্ত আকীদার দাঁতভাঙা জবাব দিতে বলবেন যে, ভালো করে দেখুন, পবিত্র কুরআন বলছে,
(সূরা নিসা আয়াত ১৫৭) ‘চক্রান্তকারী ইহুদীরা ঈসা (আ:)-কে না হত্যা করেছিল আর না ক্রুশবিদ্ধও করেছিল; (শুধু ধাঁধার কারণে) তাদের কাছে এমনি একটা কিছু মনে হয়েছিল; (সঠিক ঘটনা না জানার কারণে) যারা এ ব্যাপারে মতবিরোধ করেছিল, তারাও (এতে করে) সন্দেহে পড়ে গেল, আর এ ব্যাপারে তাদের অনুমানের অনুসরণ করা ছাড়া সঠিক কোনো জ্ঞানই ছিলনা, (তবে) এটুকু নিশ্চিত, তারা তাকে হত্যা করেনি। (আয়াত ১৫৮) বরং আল্লাহ তায়ালাই তাকে তাঁর নিজের কাছে [কেউ কেউ অর্থ করেছেন, নিজের দিকে – লিখক] তুলে নিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা মহাপরাক্রমশালী ও মহাপ্রজ্ঞাময়।৷ – আল কুরআন।
কাদিয়ানীরা এইরূপ অকাট্য দলিলের মুকাবিলায় পুরোদস্তুর অক্ষম হয়ে সরলমনা মুসলমানদের বিভ্রান্ত করতে প্রশ্ন তুলে ‘আল্লাহর দিক কোনটি? তিনি তাঁকে তাঁর কোন্ দিকে তুলিয়া লইয়াছেন?’
তখন আমরাও তাদেরকে পাল্টা প্রশ্ন করি,
পবিত্র কুরআনে উল্লেখ আছে تعرج الملائكة و الروح اليه (তা’রুজুল মালা-ইকাতু ওয়াররূহু ইলাইহি) অর্থাৎ ফেরেশতারা এবং রূহ (জিব্রাইল) আল্লাহর দিকে আরোহন করেন এমন একটি দিনে যার পরিমাণ পঞ্চাশ হাজার বছর (সূরা মা’আরিজ/৭০:০৪)।
এখানে ফেরেশতারা আল্লাহর কোন্ দিকে আরোহন করে বলা হল, বলুন! তখন তাদের কাছে আর কোনো জবাব থাকেনা।
রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) ‘আল্লাহর দিকে উঠিয়ে নেয়া’ এর কী ব্যাখ্যা দিয়েছেন?
উত্তর হল, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) সহ প্রায় সমস্ত তাফসীরকারক অসংখ্য সহীহ হাদীসের আলোকে বলেছেন, ঈসা (আ:)-কে ‘আল্লাহর দিকে’ উঠিয়ে নেয়া হয় বলতে ‘আকাশে’ উঠিয়ে নেয়াই উদ্দেশ্য।
যেমন ইবনে আব্বাস (রা:) বলেন, ঈসা (আ:)-কে যখন পাকড়াও করতে ইহুদীরা একত্রিত হল তখন আল্লাহতায়ালা তাঁকে উদ্দেশ্য করে জানিয়ে দিলেন بانه يرفعه الى السماء و يطهره من صحبة اليهود অর্থাৎ নিশ্চয়ই তিনি তাঁকে আকাশে তুলে নেবেন এবং ইহুদীদের নাগাল পাওয়া থেকে তাঁকে মুক্ত রাখবেন। (রেফারেন্স : ইমাম নাসায়ী সংকলিত হাদীসের কিতাব আস-সুনানুল কোবরা, হাদীস নং ১১৫৯০; তাফসীরে বায়দ্বাভী ২/১৮১)।
এবার ‘আল্লাহর দিক কোনটি’ একথার ব্যাখ্যা খোদ মির্যা কাদিয়ানী সাহেব কী দিয়েছেন সেটি জানব!
মির্যা কাদিয়ানী সাহেবের রচনাবলীর সমষ্টি ২৩ খন্ডে প্রকাশিত রূহানী খাযায়েন এর ১৭ নং খন্ডের ১০৮ নং পৃষ্ঠা খুলুন। সেখানে তিনি ‘আল্লাহর দিক কোনটি’ এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন এভাবে –
خدا کی طرف اور وہ اونچی ہے جسکا مقام انتہائے عرش ہے۔ বাংলা উচ্চারণ – খোদা কি তরফ আওর উয়ো উঁচি হে জেসকা মোক্বাম ইনতিহায়ে আ’রশ হে।
অর্থাৎ খোদার দিক আর তা উপর দিক। যেটির শেষ সীমানা আরশে আজীম। (স্ক্রিনশট দ্রষ্টব্য)।
মির্যা কাদিয়ানীর রচনা হতেও ‘খোদার দিক’ কোনটি, এমন প্রশ্নের উত্তরে আমরা পরিষ্কার শব্দে ‘খোদার দিক যে উপর দিক যার শেষ সীমানা আরশে আজীম‘ তা প্রমাণ করতে পারলাম। চলমান বিষয়ের ইতি টেনে আজকের মত এখানেই শেষ করছি। আল্লাহ তায়ালা আপনাদের সত্যাটা বুঝার অতপর মানার তাওফিক দিন। আমীন।
সংক্ষেপে এটুকু।
লেখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক।