কাদিয়ানীদের এক ডজনেরও বেশি বই থেকে মির্যা কাদিয়ানীর নবী রাসূল দাবীর প্রমাণ দেখুন
প্রশ্নকর্তা : কাদিয়ানীরা কাফের কেন? এর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কারণ জানাবেন!
উত্তরদাতা : প্রশ্নটি করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার প্রশ্নের উত্তরে বলছি শুনুন! তাদের কাফের হওয়ার অন্যতম ও উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কারণ হল,
১। কাদিয়ানীরা এমন একব্যক্তির অনুসারী যে নবুওয়তের দাবীদারও (এক গলতি কা ইযালা [বাংলা অনূদিত] পৃষ্ঠা নং ৩,৫,৮,১০ দ্রষ্টব্য) । ফলে তারা পবিত্র কুরআনের সূরা আহযাবের ৪০ নং আয়াতসহ বহু আয়াত এবং অসংখ্য তাওয়াতূর পর্যায়ের হাদীসেরই অস্বীকারকারী। বিস্তারিত ডকুমেন্টস সহ জানতে ভিজিট করুন : Click
২। কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের বেশিরভাগই জানে না যে, তাদের মির্যা কাদিয়ানীর বইতে কী ধরণের ধর্মবিশ্বাস লিপিবদ্ধ আছে! মির্যা কাদিয়ানীর রচনার একস্থানে ঈসা (আ:)-এর দাদী ছিল বলে লিখা আছে। (দেখুন, রূহানী খাযায়েন ১১/২৯১)। অথচ তার এই কনসেপ্ট পবিত্র কুরআনের সূরা আলে ইমরান এর ৪৭ নং আয়াতের সুস্পষ্ট বিরোধী। কারণ যার দাদী থাকবে তার পিতা থাকাও সাব্যস্ত হবে। অথচ ঈসা (আ:) পিতা ছাড়াই আল্লাহর নিদর্শন স্বরূপ কুমারী মাতা বিবি মরিয়মের উদরে জন্মলাভ করেছিলেন। স্ক্রিনশট এই যে,
৩। কাদিয়ানীরা হযরত ঈসা (আ:) সম্পর্কে তাঁর স্বশরীরে জীবিত আকাশে উত্থিত হওয়া এবং কেয়ামতের পূর্বে তাঁর পুনরায় পৃথিবীতে ফিরে আসা মর্মে বিশ্বাস করেনা। ফলে তারা পবিত্র কুরআনের সূরা নিসার ১৫৮-৫৯, সূরা আলে ইমরানের ৪৬ নং আয়াতের সুস্পষ্ট ইংগিতসহ অসংখ্য তাওয়াতূর পর্যায়ের হাদীস অস্বীকারকারী। একাধিক সহীহ হাদীসের মধ্য হতে এখানে শুধুমাত্র একটি সহীহ হাদীস উল্লেখ করছি যেখানে পরিষ্কার করে ঈসা (আ.) আকাশ থেকে নাযিল হবেন বলেই উল্লেখ আছে। স্ক্রিনশট এই যে,
৪। মির্যা কাদিয়ানী তার রচনাবলীর জায়গায় জায়গায় হযরত ঈসা (আ:) সম্পর্কে অকথ্য ও অবমাননাকর মন্তব্য করার প্রমাণ পাওয়া যায়। ফলে তার কাফের হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। কাদিয়ানী সম্প্রদায় এমন ব্যক্তির অনুসারী হওয়ায় তারাও একই ঝাঁকের কৈ হিসেবে পরিগণিত। যেমন তার বইতে লিখা আছে, “সীমাহীন লজ্জার কথা হল এই যে, তিনি (ঈসা) পাহাড়ি শিক্ষাকে যাকে ইঞ্জিলের নির্যাস বলে (তিনি) ইহুদীদের ‘তালমূদ’ গ্রন্থ থেকে চুরি করে লিখেছেন এবং তিনি (তা) এমনভাবে প্রকাশ করলেন যেন এটি তাঁর নিজেরই শিক্ষা! কিন্তু যখন এই চুরি ধরা পড়ল তখন ঈসায়ীরা খুবই লজ্জিত হল। তিনি (ঈসা) এই কাজ হয়ত এইজন্যই করলেন যে, যাতে তিনি উত্তম কোনো শিক্ষা-দীক্ষার নমুনা প্রদর্শন করে কৃতিত্ব হাসিল করতে পারেন! কিন্তু উনার এই অনর্থক কার্যকলাপের দরুন ঈসায়ীদের চরম অসম্মানী হয়।” (রূহানী খাযায়েন ১১/২৯০)। স্ক্রিনশট এই,
৫। হযরত ঈসা (আ:)-এর অসংখ্য মুজিজা অস্বীকার করাও তাদের কাফের হওয়ার কারণ। কেননা এটি বিশেষত সূরা মায়েদার ১১০ নং আয়াতের সুস্পষ্ট বিরোধিতার শামিল। তাদের মিশনারীদের সাথে যারা উন্মুক্ত আলোচনা করেছেন তারা অবশ্যই এর প্রমাণ পেয়ে থাকবেন। এইজন্য কাদিয়ানীদের প্রকাশনা হতে তাদের অনূদিত কুরআনের কপি হতে (সূরা মায়েদা ১১০ [তাদের হিসেবে ১১১] নং আয়াতের বিশ্লেষণ) দেখুন। মির্যা কাদিয়ানীর বই প্রমাণ এই যে,
৬। মির্যা কাদিয়ানীর বইয়ের অন্য আরেক জায়গায় ঈসা (আ.) সম্পর্কে লিখা আছে, ‘তাঁর এইরকম আচার-আচরণ দ্বারা নিজ সহোদর ভাইও তাঁঁর (ঈসা) প্রতি ভীষণ অসন্তুষ্ট ছিলেন। তার বিশ্বাস ছিল যে, তাঁর (ঈসা) মস্তিষ্কে নিশ্চয়ই কোনো সমস্যা রয়েছে। আর তিনি চাইতেন যেন কোনো দাওয়াখানায় (হাসপাতালে) তাঁঁর নিয়মিত চিকিৎসা চলে যাতে খোদাতালা তাঁকে আরোগ্য দান করেন।” (রূহানী খাযায়েন ১১/২৯০)। স্ক্রিনশট এই যে,
৭। মির্যা কাদিয়ানী সাহেব হযরত ঈসা (আ:) ছাড়াও অন্যান্য নবীগণের শানে এমনকি মুহাম্মদে আরাবি (সা:)-এর শানেও সীমাহীন অমর্যাদাকর মন্তব্য করেছেন। যেমন সে লিখেছে, “রাসূল (সা:)-এর দ্বারা দ্বীন প্রচারের কাজ পরিপূর্ণভাবে হয়নি। তিনি পূর্ণ প্রচার করেননি। আমি পূর্ণ করেছি।” (রূহানী খাযায়েন খন্ড নং ১৭। পৃষ্ঠা নং ২৬৩; সারমর্ম)। কাদিয়ানীরা এমন ব্যক্তিকে ইমাম মাহদী বলে বিশ্বাস করায় প্রকারান্তরে তারাও কাফের জাতির অন্তর্ভুক্ত।
৮। ইসলামের স্বতসিদ্ধ এমন বহু শিক্ষাকে বিকৃত করার কারণেও তারা ইসলাম থেকে খারিজ যেগুলোর স্বরূপ ইসলামের সোনালী যুগ থেকে অদ্যাবধি সুরক্ষিত; বরেণ্য যুগ-ইমামদের কেউই কোনো দিন ভিন্ন ব্যাখ্যায় যাননি। যেমন, দাজ্জাল, ইয়াজুজ-মাজুজ, দাব্বাতুল আরদ, মেরাজ, কবরে সুওয়াল-জবাব, খাতামুন নাবিয়্যীন, ইমাম মাহদীর পরিচয় এবং প্রতিশ্রুত ঈসা (সা:) ইত্যাদী। কিন্তু কাদিয়ানীরা এর প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে মূলধারার মুসলিম উম্মাহার শিক্ষার বিপরীতে মস্তিষ্কপ্রসূত ব্যাখ্যার পেছনে দৌড়ায়। তাদের ধর্মমতে খ্রিস্টান মিশনারীই দাজ্জাল, চীন-রাশিয়াই ইয়াজুজ-মাজুজ, প্লেগের কীটপতঙ্গই দাব্বাতুল আরদ, মেরাজ নিছক একটি স্বপ্ন, কবরে সুওয়াল-জবাব হবেনা, খাতামান নাবিয়্যীন-এর অর্থ সীল মেরে নবীদের নবুওয়তের সত্যায়নকারী, আগমনকারী ইমাম মাহদী এবং ঈসা অভিন্ন ব্যক্তি (নাউযুবিল্লাহ)। মজার ব্যাপার হল, মির্যা কাদিয়ানীর বইতে পরিষ্কার করে একথাও লিখা আছে যে, ইমাম মাহদী সংক্রান্ত হাদীসগুলোর কোনোটিকেই সহীহ বলা যায় না। (হাকীকাতুল ওহী ১৭৩)।
৯। ইসলামের অন্যতম ফরজ বিধান ‘জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ’-এর অস্বীকার করাও তাদের কাফের হওয়ার অন্যতম কারণ। যেমন, মির্যা কাদিয়ানী লিখেছে, “আমি বিশ্বাস রাখি যে, আমার মুরিদ (অনুসারী) যেই হারে বাড়ছে সেই হারে জিহাদের উপর বিশ্বাসীর সংখ্যাও কমছে। কেননা, আমাকে মসীহ মওউদ এবং ইমাম মাহদী মেনে নেয়াই ‘জিহাদ’ অস্বীকার করা।” (মাজমু’আয়ে ইশতিহারাত ৩/১৯; নতুন এডিশন)। এই গোষ্ঠীটির স্ববিরোধী কথার অন্ত নেই। এরা একদিকে বলে কুরআনের কোনো একটি আয়াতও মানসূখ হয়নি। অন্যদিকে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আন্দোলন ঠেকাতে কুরআনের সাড়ে ১১শ জিহাদ আর ক্বিতালের আয়াত মানসূখ মেনে বিরোধিতা করে যায়।
১০। মির্যা কাদিয়ানীকে অস্বীকারকারী সমস্ত মুসলমানকে কাফের, জাহান্নামী আখ্যা দেয়াও তাদের কাফের হওয়ার অন্যতম কারণ। যেমন তাদের বইগুলোতে লিখা আছে, মির্যা কাদিয়ানী লিখেন “খোদাতায়ালা আমার উপর প্রকাশ করে দিয়েছেন যে, যাদের নিকট আমার দাওয়াত পৌঁছেছে আর তারা তা কবুল করেনি এমন ব্যক্তি মুসলমান নয় এবং এরা (পরকালে) পাকড়াও হবে।” (তাযকিরাহ পৃষ্ঠা নং ৫১৯; ইলহাম, মার্চ ১৯০৬ ইং, চতুর্থ এডিশন)।
- মির্যার পুত্র মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ লিখেন, “প্রত্যেক মুসলমান যিনি হযরত মসীহে মওঊদ (মির্যা কাদিয়ানী)’র বাইয়েতে শামিল হয়নি, সে যদিও হযরত মসীহ মওঊদের নামও শুনেনি, এমন ব্যক্তিও কাফের এবং ইসলাম থেকে বাহিরে।” (আয়নায়ে সাদাক্বাত, আনওয়ারুল উলূম ৬/১১০; মির্যাপুত্র মির্যা বশির উদ্দীন মাহমুদ; অনলাইন এডিশন)।
১১। ব্রিটিশ সরকারের আনুগত্যকে ইসলামেরই অংশ বলে আখ্যা দেয়া-ও প্রমাণ করে যে, এই কাদিয়ানী সম্প্রদায় ইসলামের গন্ডিভুক্ত নয় বরং ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদেরই সৃষ্টি ছিল। যেমন সে লিখেছে, “আমি বরাবরই আমার মত প্রকাশ করেছি যে, ইসলামের দুইটি অংশ। প্রথমত, আল্লাহর আনুগত্য করা। দ্বিতীয়ত, এই (ব্রিটিশ) সরকারের আনুগত্য করা যে নিরাপত্তা দিয়েছে। (রূহানী খাযায়েন ৬/৩৮০)।
এভাবে আরো বহু কারণ বিদ্যমান। সংক্ষেপে এটুকু জানানো হল। তাহলে একবার ভেবে দেখুন, এদেরকে জেনে-বুঝে মুসলমান মনে করার অর্থ নিজেদের জীবনে ঈমান বিধ্বংসী পরিণতি ডেকে আনা নয় কি?
লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী
শিক্ষাবিদ ও গবেষক