Home কাদিয়ানী মতবাদ খণ্ডন মির্যা কাদিয়ানীর ‘দ্বিতীয় মুহাম্মদ’ হবার আজগবি দাবীর দলিল খন্ডন

মির্যা কাদিয়ানীর ‘দ্বিতীয় মুহাম্মদ’ হবার আজগবি দাবীর দলিল খন্ডন

0

ইন্নাল হামদা লিল্লাহ ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসূলিল্লাহ, আম্মা-বা’দু;

পবিত্র কুরআনের যে আয়াতটির অপব্যাখ্যা করে মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (لعنة الله عليه) নিজেকে ‘দ্বিতীয় মুহাম্মদ‘ বলে দাবী করে গেছেন এবং শেষ যামানায় পৃথিবীতে মুহাম্মদ (সা.) দ্বিতীয়বার আগমন করবেন বলে নতুন যে কনসেপ্ট দিয়ে গেছেন সেটি সম্পর্কে আজকে আরেকটু বিশ্লেষণ মূলক আলোকপাত করছি। অনুগ্রহপূর্বক সবাই এই বিশ্লেষণটি বুঝার চেষ্টা করবেন এবং কমেন্ট বক্সে মতামত দেবেন! আর হ্যাঁ, সম্পূর্ণ বিশ্লেষণটি বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) এর লেখিত “ফাতহুল বারী” (فتح الباري فى شرح الصحيح البخارى) এর আলোকে করা হবে।

নিচে ফাতহুল বারী কিতাবের সংশ্লিষ্ট অংশের স্ক্রিনশট তুলে ধরা হল। পুরো লিখাটি লিখকের পেইজ থেকেও পড়তে পারেন। ক্লিক করুন।

সম্পূর্ণ বিশ্লেষণটি বুঝার সুবিধার্থে সূরা জুমার আয়াত নং ২-৩ এর অনুবাদ “ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে অনুবাদকৃত কপি থেকে” ভালো করে কয়েকবার পড়ে নিন। নিচে দেয়া হল।

বিশ্লেষণ শুরু-

সম্পূর্ণ বিশ্লেষণের সার কথা হল, কাদিয়ানীরা ঐ আয়াতের “আখারীনা” (آخرين) শব্দ হতে যেই কন্সেপ্ট নিয়ে থাকে সেটি পুরোপুরি ভিত্তিহীন, অপ্রমাণিত ও কুরআনের উক্ত আয়াতের সুস্পষ্ট বিকৃতির শামিল।

  • সূরা জুমা’র ৩ নং আয়াতে কি মুহাম্মদ (সা.)-এর দ্বিতীয়বার আগমন করার ইংগিত আছে কি? কাদিয়ানীদের উদ্দেশ্যে পালটা কিছু প্রশ্ন দেখুন! ক্লিক করুন।

প্রথমতঃ (সূরা জুমা ২-৩) আয়াতের “আখারীনা” (آخرين) শব্দ এবং সহীহ বুখারী সহ অন্যান্য কিতাবে বর্ণিত একখানা হাদীসের رجال বা رجل (অর্থাৎ এক বা একাধিক ব্যক্তি) সম্পর্কে আলোকপাত করব, ইনশাআল্লাহ….।

  • لو كان الايمان عند الثريا لناله رجال او رجل من هؤلاء
  • হাদীসের অর্থ, ঈমান যদি ছুরাইয়া নক্ষত্রপুঞ্জের নিকটও থাকত এদের মধ্য থেকে এক বা একাধিক ব্যক্তি তা (ঈমান/দ্বীন/ইলম) নিশ্চয়ই অর্জন করত। (সহীহ বুখারী)।
  • কুরআন এবং হাদীসের সমষ্টিগত বুঝ ও শিক্ষা-

(১) এর দ্বারা একথা বুঝায়নি যে, ভবিষ্যতে মুহাম্মদ (সা.) আরেকবার আসবেন। বরং হযরত সালমান ফারসী (রা.)-এর বংশধর থেকে এক বা একাধিক ব্যক্তি (অন্য বর্ণনা মতে, তার গোত্রের লোকেরা) ছুরাইয়া নক্ষত্রপুঞ্জ হতে (হলেও) ঈমান বা দ্বীন বা ইলম অর্জন করে ফেলত, বলেই বলা হয়েছে। উল্লেখ্য, ছুরাইয়া নক্ষত্রপুঞ্জ হতে অর্জিত জিনিসটা হাদীসের মধ্যে বিভিন্ন সূত্রে বিভিন্ন নামে এসেছে। ঈমান, দ্বীন এবং ইলম। শায়খ আলবানী (রহ.) সবগুলো বর্ণনার সূত্রকে সহীহ বলেছেন। দেখুন,

لو كانَ العلمُ بالثّريّا وفي لفظٍ آخرَ لو كانَ الإيمانُ عندَ الثريّا ، وفي لفظٍ ثالثٍ لو كانَ الدّينُ بالثّريّا لنالهُ رجالٌ مِن أبناءِ فارس

(২) আর তারা এক বা একাধিক ব্যক্তি কিংবা একটি গোত্রও হতে পারে। হাদীসের শব্দটি হচ্ছে,

رجال او رجل او قوم هذا

যার অর্থ হচ্ছে, সালমান ফারসীর পুরো গোত্রটি অথবা ঐ গোত্রের এক বা একাধিক ব্যক্তি তা (ঈমান, দ্বীন, ইলম) অর্জন করতো। আগেই এ সম্পর্কে বলেছি।

(৩) মুসলিম শরীফের হাদীসে ابناء فارس অর্থ পারস্যের সন্তানেরা (বহুবচন) উল্লেখ আছে।

(৪) তারা সবাই সালমান ফারসীর বংশধর হবেন এবং পারস্য বংশীয় হবেন।

  • উল্লেখ্য, মির্যা কাদিয়ানীর বংশ সম্পর্কে স্ববিরোধ অনেক তথ্য রয়েছে। এক জায়গায় লিখা আছে, তার বংশ ছিল মোগল অর্থাৎ তুর্কী তাতারি জাতি। আর তার পূর্বপুরুষ ছিল, মোগল সেনাপতি তৈমুর লং। একথা লিখা আছে, কাদিয়ানীদের “আহমদ চরিত” বইয়ের ১ নং পৃষ্ঠাতেও। আরো দেখুন, রূহানী খাযায়েন ১৩/১৬২। আরেক জায়গায় লিখা আছে, চায়নিজ বংশীয় (রূহানী খাযায়েন ১৭/১২৭)। আরেক জায়গায় লিখা আছে, ফাতেমি এবং ইসরাইলী বংশীয় (রূহানী খাযায়েন ১৮/২১৬)। তবে আরেকটি জায়গায় অবশ্যই পারস্য বংশীয় বলেও লিখা আছে (রূহানী খাযায়েন ১৩/১৬৩)। উফ! এ কেমন পাঁচমিশালি বংশীয় কথিত মসীহ মওউদ সাহেব! যাইহোক, এতেই সাব্যস্ত হচ্ছে যে, মির্যা কাদিয়ানীর সুনির্দিষ্ট কোনো বংশ-পরিচয় ছিলনা, বরং তার বংশ ছিল (বেশুমার) অগণিত।

(৫) আর এটি (ابناء فارس / একাধিক ব্যক্তির কনসেপশন) কুরআনের সূরা জুমার ৩ নং আয়াত و آخرين এরই মর্মার্থের অন্যতম প্রকাশ। ফলে ‘আখারীনা’ বা آخرين (অন্যান্যরা) শব্দটি বহুবচনাত্মক হওয়ায় তারই ইংগিতস্বরূপ বুখারী-মুসলিমে উল্লিখিত অপরাপর শব্দগুলোর অন্যতম رجال আর ابناء فارس (একাধিক ব্যক্তি, পারস্যের সন্তানেরা) উদ্দেশ্য হওয়াই বেশি জোরালো ও সঙ্গতিপূর্ণ।

(৬) আয়াতে উল্লিখিত ‘আখারীনা’ বা آخرين (অর্থাৎ অন্যান্যরা) শব্দটি বাক্যে مجرورا عطفا على الاميين হয়ে بعث (অতিতকাল বাচক) ক্রিয়াপদের সাথে সম্পর্কযুক্ত বটে, কিন্তু কর্ম বা মাফউল নহে। যদি মাফউল হত তাহলে এটি কখনোই جار তথা যের-এর অবস্থায় পতিত হত না। যার ফলে নতুন কেউ আসবে বুঝায়নি, বরং একজন রাসূল হিসেবে আগমনকারী (بعث فى الاميين) হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর অনারবী উম্মতের একটি বিশেষ শ্রেণীর কথা বুঝানো হয়েছে যারা অচিরেই আরবের উম্মী(নিরক্ষর)দের সাথে (اميين শব্দটি جار তথা যের-এর অবস্থায় রয়েছে, এর দ্বারা সাহাবীদের বুঝানো হয়েছে) মিলিত হবেন। এখানে ‘আখারীনা (آخرين) শব্দটি পূর্ব বাক্যের اميين এর উপর عطف বা সম্পর্কযুক্ত হওয়ায় বিষয়টি পুরোই পরিষ্কার যে, ভবিষ্যতে কারো আসার কথা এখানে বুঝায়নি, বরং মুহাম্মদ (সা.)-কে আল্লাহ উম্মিয়্যীন (আরবী) আর আখারীন (অনারবী)দের মাঝে প্রেরণ করিয়াছেন, একথাই বুঝানো হয়েছে। (তাফসীরগ্রন্থ সমূহ দ্রষ্টব্য)।

(৭) এই ‘আখারীনা’ (آخرين বা অন্যান্যরা) বলতে কুরআন কী বুঝাল? এমন প্রশ্নের উত্তর কুরআন (সূরা জুমা) নিজেই উপরিউক্ত ২ নং আয়াতে দিচ্ছে। অর্থাৎ ঐ অন্যান্যরা হচ্ছেন সেসব অনারবী জাতি (আরবের বাহিরের জাতি, বিশেষভাবে পারস্যের সন্তানেরা) যাদের মধ্য হতেও নবী মুহাম্মদ (সা:)-কে একজন রাসূল হিসেবে পাঠানো হয়েছে (بعث /অতিতকাল বাচক-প্রেরণ করা হইয়াছে)।

এবার তাহলে এই ‘আখারীনা’ (آخرين) শব্দ যের-এর অবস্থায় থাকা সত্ত্বেও এবং بعث ক্রিয়াপদের সাথে সম্পর্কযুক্ত হয়েও কিভাবে এমন কোনো অর্থের নির্দেশ করতে পারে যার ফলে بعث অতিতকালবাচক ক্রিয়াপদের অর্থ ‘ভবিষ্যতবাচক ক্রিয়াপদের অর্থে‘ বদলে ফেলা লাগে এবং آخرين শব্দকে اميين এর উপর আতফ (عطف) হওয়াও অমান্য করে সেটিকে বরং بعث ফে’ল এর “দ্বিতীয় মাফউল” (مفعول ثانى) মানা লাগে! কেউ আছেন আমার এই লিখাটিকে সঠিক পন্থায় ভুল প্রমাণ করতে পারবেন? অপেক্ষায় থাকলাম।

পরিশেষে, এখন কাদিয়ানীদের ভন্ডামি, অজ্ঞতা আর বিকৃতি সম্পর্কে যদি বলি তাহলে রাত দিন শেষ হবেনা। শুধু এখানে নয়, পুরো কুরআনের ভেতর তারা ভয়ংকর আকারে বিকৃতির আশ্রয় নিয়ে থাকে। এখন যাদের আরবী শব্দভাণ্ডার আর ব্যাকরণ বিষয়ে জ্ঞান নেই তাদের কী সাধ্য ওদের প্রতারণা আর বিকৃতি ধরতে পারার? আমি কি এমনিতেই এদেরকে মিথ্যুক, প্রতারক আর কুরআনের মর্মার্থ বিকৃতকারী বলি!?

আল্লাহ তাদেরকে কুরআনের অপব্যাখ্যা আর বিকৃতি থেকে ফিরে আসার তাওফিক দিন।

(লিখাটি কপি করে প্রচার করুন)

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী এম.এ

শিক্ষাবিদ ও গবেষক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here