‘ফা-লাম্মা তাওয়াফফাইতানী’-এর অপব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ফেঁসে গেলেন মির্যা কাদিয়ানী

0
‘ফা-লাম্মা তাওয়াফফাইতানী’-এর অপব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ফেঁসে গেলেন মির্যা কাদিয়ানী

কোনো কাদিয়ানী কি এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারবে?

ত্রিশ আয়াতের ভুল ব্যাখ্যার খন্ডনমূলক জবাব

প্রশ্নকর্তা :

আমি মির্যা কাদিয়ানীর বইতে পড়েছি তিনি লিখেছেন, সূরা মায়েদার ১১৭ নং আয়াত মতে হযরত ঈসা (আ.) যতকাল পর্যন্ত জীবিত ছিলেন ততকাল ঈসায়ীদের ঈমানও ঠিক ছিল। অর্থাৎ ততকাল পর্যন্ত ঈসায়ীরা তাঁকে না খোদার পুত্র সাব্যস্ত করেছিল আর না ইলাহ তথা উপাস্য বলে গ্রহণ করেছিল, কোনোটাই না। মির্যা কাদিয়ানী তারপর লিখেছেন, হযরত ঈসা (আ.) ১২০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। এখন এর তাৎপর্য দাঁড়াল যে, ত্রিত্ববাদী শিরিক ঈসায়ীধর্মে ১২০ বছর পরেই অনুপ্রবেশ করে। কিন্তু মির্যা সাহেব তারই পুস্তকের অন্য আরেক জায়গায় লিখেছেন, সেন্ট পৌল ঈসা (আ.)-কে খোদা বানিয়ে দেয় (চশমায়ে মসীহি, রূহানী খাযায়েন ২০/৩৭৫) এবং তিনি ৬৫ ঈসায়ীতে মৃত্যুবরণ করেন। তার অর্থ হল, সেন্ট পৌল হযরত ঈসা (আ.)-এর ৫৫ বছর পূর্বেই মৃত্যুবরণ করেছিলেন। এখন সম্পূর্ণ তাৎপর্য দাঁড়ালো, হযরত ঈসা (আ.) মৃত্যুবরণ করার পূর্বেই খোদা সাব্যস্ত হয়েছিলেন। তার মানে তিনি কাশ্মিরে যখন জীবিত তিনি তখনো ফিলিস্তিন কিংবা অন্যান্য স্থানে খোদা সাব্যস্ত হয়ে রয়েছেন! সেন্ট পৌল সম্পর্কে উইকিপিডিয়া থেকে

এখন আমার প্রশ্নটি হল, মির্যা সাহেব যে লিখলেন, যদি ঈসা (আ.) আসমানে জীবিত থাকেন তাহলে দুনিয়ায় ঈসায়ীধর্মে ত্রিত্ববাদী শিরিকের অনুপ্রবেশের সুযোগই নেই। এখন যেহেতু আসমান চেয়েও কাশ্মির আমাদের অনেক নিকটে সেহেতু বর্তমানে তাঁর খোদা সাব্যস্ত হওয়ায় আসমানে জীবিত থাকা গ্রহণযোগ্য না হলে, একই কারণে তিনি কাশ্মিরেও জীবিত থাকতে পারেন কিভাবে? অতএব, ঈসা (আ.)-কে মৃত সাব্যস্ত করে নিজে ‘রূপক ঈসা’ সাজতে  মির্যা সাহেব যে সমস্ত দলিল প্রমাণের আশ্রয় নিয়েছেন তা এখন অযুক্তিক আর মিথ্যা প্রমাণিত হল কিনা?
 
প্রশ্ন-সংশ্লিষ্ট উদ্ধৃতির রেফারেন্স ও ঈসা (আ.) ১২০ বয়সে মৃত্যুবরণ করা :

অত্র লিখাটির সংশ্লিষ্ট ডকুমেন্ট গুলোর প্রামাণ্য স্ক্রিনশট

মির্যা কাদিয়ানী সাহেব তার ‘মসীহ হিন্দুস্তান মে’ এবং রূহানী খাযায়েন খ-১৫ পৃ-১৪ এবং ৫৫ এর মধ্যে লিখতেছেন: প্রথমে পৃষ্ঠা নং ১৪ দেখুন ‘আমি এই কিতাবে প্রমাণ করব যে, হযরত মসীহ (আ.) শূলিবিদ্ধ হননি, আকাশেও যাননি আর না কখনো আশা রাখা যায় যে, তিনি পৃথিবীতে আকাশ থেকে নাযিল হবেন। বরং তিনি ১২০ বছর বয়সে কাশ্মিরের শ্রীনগরেই মৃত্যুবরণ করেছেন এবং শ্রীনগরের খান ইয়ার মহল্লায় তার কবর রয়েছে।’ তারপর পৃষ্ঠা নং ৫৫ দেখুন ‘এখন পরিষ্কার হল যে, যদি তিনি শুধু কেবল ৩৩ বছর বয়সে আকাশের দিকে উঠে চলে যান তাহলে ঐ অবস্থায় ১২৫ বছরের বর্ণনাটি সহীহ থাকেনা।’

বলে রাখতে চাই যে, হযরত ঈসা (আ.) ১২০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন, একথার অর্থ দাঁড়াল যে, তিনি ১২০ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেছেন। কেননা ঈসায়ী ক্যালেন্ডারের সূচনা হয় হযরত ঈসা (আ.)-এর জন্ম তারিখ হিসেবে।

সূরা মায়েদা আয়াত নং ১১৭ সম্পর্কিত মির্যা কাদিয়ানীর বক্তব্য :

“হযরত ঈসা (আ.) যদি আকাশে জীবিত থাকেন তাহলে ঈসায়ীরা এখনও পথভ্রষ্ট হয়নি বলে মেনে নিতে বাধ্য।” (রূহানী খাযায়েন ১১/১৩৫)।

“কুরআন শরীফ পরিষ্কার বলছে যে, মসীহ মৃত্যুবরণ করে আকাশে উঠে গেছেন। সুতরাং তাঁর অবতরণ হবে বুরুজিভাবে, হাকিকিভাবে নয় এবং ‘ফালাম্মা তাওয়াফফাইতানী’ (فلما توفيتنى) আয়াত দ্বারা সুস্পষ্ট হয়ে গেছে যে, মৃত্যু ঈসার উপর এসে গেছে। কেননা এই আয়াত দ্বারা উদ্দেশ্য হল, ঈসায়ীরা পথভ্রষ্ট হবে ঈসার মৃত্যুর পর, জীবিত অবস্থায় নয়। যদি মেনে নেয়া হয় যে, হযরত ঈসা (আ.) এখনো মৃত্যুবরণ করেননি তাহলে এটিও মানতে হবে যে, ঈসায়ীরা এখনো পথভ্রষ্ট হয়নি। অথচ এটি স্পষ্ট বাতিল। অধিকন্তু আয়াত বলছে যে, ঈসায়ীরা শুধু কেবল মসীহ (আ.)-এর জীবদ্দশা পর্যন্ত সত্যের উপর বহাল থাকবে। এতেই বুঝা যায় যে, হাওয়ারীদের যুগেই খারাবি (পথভ্রষ্টতা) শুরু হয়ে গিয়েছিল। যদি হাওয়ারীদের যুগেও ঈসায়ীরা সত্যের উপর থাকতে পারত তাহলে খোদাতালা ঐ আয়াতে মসীহর জীবনের স্পষ্ট শর্ত দিতেন না, বরং হাওয়ারীদের জীবনেরও শর্ত দিতেন। সুতরাং এখান থেকেই একটি অতি উন্নত সূক্ষ্মতা ঈসায়ী যুগের ফাসাদ ও বিশৃংখলার কথা জানা যাচ্ছে। আর সেটি এই যে, প্রকৃতপক্ষে হাওয়ারীদের যুগেই ঈসায়ীধর্মে শিরিকের অনুপ্রবেশ করেছিল।” (রূহানী খাযায়েন ১১/৩২১)।

এই আর্টিকেলের শেষাংশে (খ-১১/পৃ-৩২২) মির্যা সাহেব লিখতেছেন : “মোদ্দাকথা হল, আয়াতটি দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে ঈসায়ীধর্মে সমস্ত ফাসাদ এবং বিভ্রান্তি হযরত ঈসা (আ.)-এর মৃত্যুর পরেই শুরু হয়েছিল।”

সম্পূর্ণ আলোচনার সারাংশ :

মির্যা কাদিয়ানী সাহেবের মতে,
১। ঈসায়ীরা শুধু কেবল হযরত ঈসা (আ.)-এর জীবদ্দশা পর্যন্ত সত্যের উপর বহাল ছিল। অর্থাৎ তাঁকে খোদা, খোদার পুত্র সাব্যস্ত করার ঘটনা তাঁর জীবদ্দশায় ঘটেনি।
২। যাবতীয় শিরিক, বিশেষভাবে ত্রিত্ববাদী মতবাদের উদ্ভব তাঁর মৃত্যুর পরেই ঈসায়ীধর্মে প্রবেশ করেছিল।
৩। হযরত ঈসা (আ.) যতকাল জীবিত ছিলেন ততকাল পর্যন্ত তাঁর ধর্মে শিরিকের অনুপ্রবেশ করার সুযোগ ছিল না। মির্যা কাদিয়ানীর ভাষ্যমতে, ‘ফালাম্মা তাওয়াফফাইতানী’ (فلما توفيتنى) আয়াতের মধ্যে শুধু কেবল ঈসা (আ.)-এর জীবিত থাকার শর্তই আরোপিত হয়।
৪। মির্যা কাদিয়ানীর কিতাব ‘মসীহ হিন্দুস্তান মে’ অনুযায়ী হযরত ঈসা ১২০ ঈসায়ীতে মৃত্যুবরণ করলে তখনি ১২০ ঈসায়ীর পরবর্তী সময়ে শিরিক প্রবেশ করে, ১২০ ঈসায়ীর পূর্বে শিরিক প্রবেশ করার কোনোই সুযোগ নেই।

এবার সেন্ট পৌল ৬৫ ঈসায়ীতে মৃত্যুবরণ করা :

মির্যা লিখতেছেন, “মোটকথা এই ধর্মে সমস্ত খারাবি পৌলের মাধ্যমেই সৃষ্টি হয়েছিল। হযরত মসীহ তো একজন সরলমনা মানুষ ছিলেন, তিনি কখনো চাননি যে কেউ তাঁকে একজন নেক মানুষও বলুক কিন্তু পৌল তাঁকে খোদা বানিয়ে দেয়।” (চশমায়ে মসীহি, রূহানী খাযায়েন ২০/৩৭৫)।

“এবং সে (পৌল) সর্বপ্রথম ত্রিত্ববাদের খারাপ বীজ বপন করে দামেস্কে এবং এই পৌলীয় ত্রিত্ববাদ দামেস্ক থেকেই আরম্ভ হয়। সেদিকেই হাদীসে নববীতে ইংগিত করে বলা হয়েছে যে, আগত মসীহ দামেস্কের পূর্বপ্রান্তে নাযিল হবেন।” (চশমায়ে মসীহি, রূহানী খাযায়েন ২০/৩৭৭)।

মির্যা সাহেব তার রচিত ‘চশমায়ে মসীহি’ গ্রন্থে পরিষ্কার বলেছেন, হযরত ঈস (আ.)-কে পৌলই খোদা বানিয়েছিল। আর সেই পৌলের মৃত্যু ৬৪ বা ৬৫ ঈসায়ীতে হয়। তার প্রমাণ হিসেবে দেখুন,

  • মাইকেল এইচ হার্ট এর The 100 (দ্য হান্ড্রেড : অ্যা র‍্যাঙ্কিং অব দ্য মোস্ট ইনফ্লুয়েনশিয়াল পারসন্স ইন হিস্ট্রি) গ্রন্থ থেকে নেয়া। ST. PAUL (জন্ম ৪ বা ৫ খ্রিস্টাব্দ) (মৃত্যু ৬৪ খ্রিস্টাব্দ) দ্রষ্টব্য। আরো দেখুন, Brown, Raymond E. (1997) An Introduction to the New Testament, p. 436. Doubleday, Anchor Bible Reference Library, আন্তর্জাতিক বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়া সাইটেও ৬৪ বা ৬৭ উল্লেখ আছে। স্ক্রিনশট দেখুন,

এখন যেহেতু মির্যা কাদিয়ানীর ইমাম মাহদী এবং মসীহ দাবী মিথ্যা প্রমাণিত হল সেহেতু তার নবী হওয়ার দাবীটাও মিথ্যা প্রমাণিত হয়ে গেল। কেননা কোনো সত্য নবী কখনই ইমাম মাহদী হওয়ার মিথ্যা দাবী করবেনা, করতে পারেনা।

মূল : আল্লামা ইলিয়াস সাত্তার (হাফিজাহুল্লাহ)
কিতাব : কিয়া কাদিয়ানী/আহমদী জবাব দে ছেকতে হেঁ?
(৩৫ মিলিয়ন বা সাড়ে ৩ কোটি রূপী পুরষ্কার বিষয়ক রচনা)
প্রকাশনায় : ছাওতুল ইসলাম ট্রাস্ট (রেজিঃ), করাচি পাকিস্তান।
পরিচালনায় : বায়তুল মা’মুর রিসার্চ সেন্টার করাচি পাকিস্তান।
অনুবাদক : মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ
এডমিন : মারকায উমর ডটকম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here