Home কাজিবাতে মির্যা মির্যা কাদিয়ানী কর্তৃক ঈসা (আ.)-এর অবমাননা

মির্যা কাদিয়ানী কর্তৃক ঈসা (আ.)-এর অবমাননা

0
মির্যা কাদিয়ানী কর্তৃক ঈসা (আ.)-এর অবমাননা

আহমদীবন্ধু! আপনার নিরপেক্ষ বিবেকের কাছে প্রশ্ন রাখছি

ইউরোপের লোকদের মদ যত অনিষ্ট করিয়াছে, তাহার কারণ এই যে, ঈসা (আ.) মদ্যপান করিয়াছেন।” (কিশতিয়ে-নূহ ৮৫, বাংলা নবম মুদ্রণ জুন ২০১৮ইং)। মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর বই ‘কিশতিয়ে-নূহ’ তে এই কথাটি তার অনুসারীরা যখন পড়ে তখন কি মনে প্রশ্ন জাগেনা যে, আল্লাহর একজন সত্য নবীর শানে মির্যার এইধরনের মন্তব্য শুধু কি জঘন্য? নাকি ঈমান নষ্ট হওয়ার শামিলও! সংশ্লিষ্ট আরো কিছু স্ক্রিনশট দেখানো হল।

হয়ত বলবেন যে, হতে পারে তিনি খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে কোনো বাহাসে প্রতিপক্ষ খ্রিস্টান পাদ্রীদের মুখ বন্ধ করে দিতে এধরণের মন্তব্য ছুড়েছিলেন! অথবা বলবেন যে, এখানে তিনি মূলত খ্রিস্টানদের কল্পিত ইশ্বর মসীহকে বুঝিয়েছেন!

  • এই পর্যায় আমার প্রশ্ন হল, মির্যা সাহেবের এইরকম মন্তব্যের প্রেক্ষিতে খ্রিস্টান ডিবেটার পাদ্রীদের কিছু সময়ের জন্য না হয় মুখ বন্ধ হল কিন্তু তার ঐ মন্তব্যের ফলে হযরত ঈসা (আ.)-এর মান মর্যাদার উপর আঘাত হানা হলো কিনা? যেহেতু এইধরনের কোনো কথারই ইসলামি কোনো অথেনটিক সোর্স দ্বারা প্রমাণিত নয়। মোটাদাগে চিন্তা করলে এই জিনিসটাকে কাদিয়ানী মতাবলম্বীরা কীভাবে গ্রহণ করবেন জানিনা! আরেকটা কথা হল, খ্রিস্টানদের কল্পিত ইশ্বর! আরে জনাব! খ্রিস্টানরা তাদের নবীকে ইশ্বর মানুক কিংবা ইশ্বরের পুত্র মানুক; এটি সম্পূর্ণ তাদের ধর্মীয় ব্যাপার। এর জন্য আল্লাহর নিকট তারা অবশ্যই পাকড়াও হবে। কিন্তু আপনি বা আমি তাদের মুখ বন্ধ করার ঠুনকো ছুতোধরে ও কথার ছলে হযরত ঈসা (আ.)-কে তথাকথিত কল্পিত ইশ্বরের জায়গায় রেখে নির্বিচারে অবমাননা করতে পারিনা। ইসলামের তিন স্বর্ণযুগের কোনো অনুসৃত মুসলিম স্কলারদের কেউই এমন নিয়ম নীতি অবলম্বন করেছিলেন, কেউ এর প্রমাণ দিতে পারবেনা। কেউই প্রমাণ করতে পারেনা যে, খ্রিস্টানদের নবী হযরত ঈসা মসীহ (আ.)-কে আঘাত করতে সালফে সালেহীনগণ কথিত কল্পিত মসীহ’র কনসেপশন দিয়ে গেছেন! যদি এরকম কোনো দৃষ্টান্ত থেকে থাকে তাহলে প্রমাণ করা হোক। আফসোসের বিষয় হল, মির্যা কাদিয়ানী স্বভাবতই হযরত ঈসা (আ.)-এর চরম দুশমন ছিল। তার পুস্তকে এর বহু প্রমাণ এখনো বিদ্যমান। তার পুস্তকের একস্থানে তো একথা পরিষ্কার করে লিখা আছে যে,
  • “মসীহ তো শুধুমাত্র অতি সাধারণ একজন নবী ছিলেন। হ্যাঁ তিনিও নৈকট্য লাভকারী কোটির মধ্যে একজন ছিলেন। তবে তিনি সর্বসাধারণের ঐ শ্রেণীর মধ্যে অতি সাধারণ একজন ছিলেন, এর চেয়ে বেশি ছিলেন না। দেখে নাও ইঞ্জিলে লিখা আছে যে, তিনি (মসীহ) ইয়াহইয়া নবীর মুরিদ ছিলেন এবং শিষ্যদের ন্যায় তিনিও ইস্তেবাগ (খ্রীস্টধর্ম গ্রহণের সূচনাতে বিশেষ একপ্রকার পানি ছিটিয়ে দেওয়ার অনুমোদন) লাভ করেছেন। তিনি শুধুমাত্র নির্দিষ্ট একটি গোত্রের জন্যই এসেছিলেন। হায় আফসোস! তাঁর দ্বারা দুনিয়াতে কারোরই আধ্যাত্মিক উপকারিতা অর্জন হয়নি। তিনি নবুওয়তের এমন একটি দৃষ্টান্ত দুনিয়ায় রেখে গেলেন যার লাভের চেয়ে ক্ষতিই হয়েছে বেশি। তার আগমনে বেদনা আর বিশৃঙ্খলাই বেড়ে যায় এবং দুনিয়ার বিশাল একটি অংশ ধ্বংসের ভাগ্য বরণ করে।” (ইতমামুল হুজ্জাহ, রূহানী খাযায়েন ৮/৩০৮)। নাউযুবিল্লাহ। এবার জ্ঞানীদের নিশ্চয়ই ভাবিয়ে তুলবে।

কেউ কেউ আবার একথাও বলেন, খ্রিস্টান মিশনারীরা আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে গালমন্দ কিবা এটা ওটা বহু ধরনের খারাপ কথা বলত, এখনো বলছে; তাই তাদের নবী ঈসা মসীহকেও অনুরূপ আঘাত করা হবে! আমি জবাবে বলতে চাই, ইসলামের শিক্ষা কি এটাই? খ্রিস্টানরা আমাদের নবীকে সম্মান দেয় না বলে কি আমরাও তাদের মত হয়ে যাব? ঈসা (আ.) আল্লাহর একজন সত্য নবী ও রাসূল ছিলেন, একথার উপর কি আমরা মুসলমানরা ঈমান নিই নি? নিয়েছি। আমরা যদি তাদের মতই হয়ে যাই তাহলে আমাদের আর তাদের মধ্যে পার্থক্য থাকল কোথায়? আচ্ছা, তাদের ওসব গালমন্দের প্রতিউত্তর কি গাল-মন্দ? অশালীন ভাষায় তিরস্কার? কোনো নবীর চরিত্র হনন? নাকি ইসলাম এগুলোর বিপরীতেই সুন্দর ও উত্তম কোনো পন্থাও শিক্ষা দিয়ে রেখেছেন? রাসূল (সা.)-এর সাথে নাজরানের খ্রিস্টানদের কি ডিবেট হয়নি। রাসূল (সা.) কি পারতেন না মির্যা কাদিয়ানীর ন্যায় এমন নিষ্ঠুর পন্থাও অবলম্বন করতে? না, তিনি বরং মোবাহালার পন্থা অবলম্বন করেছিলেন। আর পবিত্র কুরআন তো আমাদের শিক্ষাই দিলেন যে, و جادلهم بالتى هى احسن অর্থাৎ সুন্দর পদ্ধতিতে বিতর্ক করো। এখন কোনো নবীকে কল্পিত ঈশ্বরের জায়গায় রেখে তার শানে যাইচ্ছেতাই বলা কি সুন্দর পদ্ধতি? এর প্রতিক্রিয়ায় প্রতিপক্ষও কি আমাদের নবীর পবিত্র চরিত্রের উপর হামলা করতে উত্তেজিত হবেনা? যেমন মির্যা কাদিয়ানী আর্যদের সম্পর্কে যখন নোংরা মন্তব্য করে বলল যে, “তাদের ঈশ্বর মুসলমানদের নাভীর এক বিঘাত নিচে”। তারই প্রতিক্রিয়া স্বরূপ সেই সময়কার আর্য সমাজের পণ্ডিত লেখরাম মুহাম্মদ (সা.)-এর শানে চরিত্রহনন-মূলক বই রচনা করতে উৎসাহিত হয়। এখন এর জন্য প্রকৃত দায়ী কে? সুতরাং মির্যায়ীদের ঐ সমস্ত বানোয়াট নীতিমালা প্রকারান্তরে ঈমান বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড আর ইসলামের বিরুদ্ধে নির্বোধ অমুসলিমদের ক্ষেপিয়ে দেয়া বৈ কিছুই না।

অন্ততপক্ষে যাদের জ্ঞানটা বিকৃত হয়ে যায়নি, যারা সত্যিকারে সত্যই খোঁজেন তাদের জন্য উচিত অন্ততঃ এই একটি বিষয় নিয়েও নিরপেক্ষভাবে চিন্তা করা। মনে রাখতে হবে যে, দশ মন দুধের ভেতর এক ফোঁটা প্রস্রাব পড়া দ্বারাই তা নাপাক হওয়ার জন্য যথেষ্ট।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here