Home কাজিবাতে মির্যা ঈসা (আ.) এক স্থান থেকে আরেক স্থানে স্থানান্তর হওয়া সম্পর্কে

ঈসা (আ.) এক স্থান থেকে আরেক স্থানে স্থানান্তর হওয়া সম্পর্কে

0
ঈসা (আ.) এক স্থান থেকে আরেক স্থানে স্থানান্তর হওয়া সম্পর্কে

ঈসা (আ.) এক স্থান থেকে আরেক স্থানে স্থানান্তর হয়ে যাওয়া শীর্ষক জাল, মুনকার বর্ণনার আশ্রয় নিয়ে ধোকাবাজি করতে গিয়ে আবারও ধরা খেলেন মির্যা কাদিয়ানী!

জাল, মুনকার জাতীয় অনির্ভরযোগ্য বর্ণনাসমূহ দিয়ে কাদিয়ানী নেতারা সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে থাকে। আর সাধারণ মানুষদেরও কি এত বুঝ-ব্যবস্থা বা শিক্ষাদীক্ষা রয়েছে যে তারা জাল, মুনকার জাতীয় বর্ণনা চিহ্নিত করে সহীহ ও বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত হাদীস বেছে নিবে? কাদিয়ানের সিজোফ্রেনিয়া রোগীটার ধোকা, প্রতারণা আর মিথ্যাচার নিয়ে ইতিপূর্বে অনেক লিখা লিখেছি। আমাদের এই ওয়েবসাইট থেকেও দেখতে পারেন। আজকে এখানে তাদেরই উদ্ধৃত আরেকটা মিথ্যা, মুনকার বর্ণনা যা মির্যার ‘মসীহ হিন্দুস্তান মে’ বইতেও রয়েছে ; উল্লেখ করে সবাইকে জানিয়ে দিতে চাই যে, এটি সম্পর্কে খোদ ইমাম ইবনে জাওজি (ابن الجوزى), ইমাম ইবনে হাব্বান (ابن الحبان), ইমাম যাহাবী (الذهبى) প্রমুখ সহ বহু হাদীস বিশারদ কারণ উল্লেখপূর্বক লিখে গেছেন,

هذا الحديث لا يصح عن رسول الله صلى الله عليه و سلم. قال ابن حبان : هانئ ابن المتوكل كثرت المناكير فى روايته و لا يجوز الاحتجاج به. অর্থাৎ এই হাদীস রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে সহীহ (বিশুদ্ধ) নয়। ইমাম ইবনে হাব্বান বলেছেন, এর সূত্রে উল্লিখিত হানী ইবনে আল মুতাওয়াক্কিল নামীয় বর্ণনাকারীর বর্ণনায় বহু পরিমাণে মুনকার (অগ্রহণযোগ্য/বিশ্বস্ত রাবীর বিপরীতকৃত) বর্ণনা রয়েছে আর তার বর্ণনা দ্বারা দলিল পেশ করা বৈধ হবেনা। (রেফারেন্স, আল ইলালুল মুতানাহীয়াহ ইবনে জাওজি কৃত, পৃষ্ঠা নং ৮০১)। ইবনে জওজি (রহ.) এর কিতাবটির স্ক্রিনশট দেখুন- ক্লিক

  • মুহাদ্দিসগণ এই বর্ণনাটি সম্পর্কে এও লিখেছেন যে, موقوفا من رواية شفي بن ماتع عن كعب الأحبار أو غيره من الإسرائيليين তথা এটি ইসরাইলী বর্ণনা সমূহের অন্তর্ভুক্ত ও সাফি ইবনে মাতে এর সূত্রে (খ্রিস্টান থেকে মুসলিম হওয়া) কা’ব আহবার রা. ও অন্যান্যদের নামে চালিয়ে দেয়া একটি মওকুফ (রাসূল সা.-এর বক্তব্য নয় এমন) রেওয়ায়েত।

উল্লেখ্য, মির্যা কাদিয়ানী সম্পূর্ণ বর্ণনা উল্লেখ না করেই পরের অংশটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে বাদ দিয়ে দেয়। কারণ, পরের অংশটিতে লিখা আছে فوعزتى و جلالى لازوجنك ألفى حوراء و لأولمن عليك اربعمائة عام অর্থ- আমার ইজ্জত ও মহিমার কসম, আমি তোমাকে দুই হাজার হুর-পরীর সাথে বিয়ে করাব এবং চারশত বছর অব্ধি তোমার জন্য ওয়ালিমা (ভোজ সভা) করাব।

  • এবার সম্পূর্ণ বর্ণনাটি দেখুন, أوحى الله تعالى إلى عيسى أن يا عيسى انتقل من مكان إلى مكان لئلا تعرف فتؤذى، فوعزتي وجلالي لأزوجنك ألفى حوراء، ولأولمن عليك أربعمائة عام অর্থাৎ, আল্লাহ ঈসা এর নিকট ওহী করলেন যে, হে ঈসা! তুমি এক স্থান থেকে আরেক স্থানে স্থানান্তর হও যাতে তোমাকে চিনতে না পারে, ফলে তোমাকে কষ্ট দেয়া হবেনা। আমার ইজ্জত ও মহিমার কসম, আমি তোমাকে দুই হাজার হুর-পরীর সাথে বিয়ে করাব এবং চারশত বছর অব্ধি তোমার জন্য ওয়ালিমা (ভোজ সভা) করাব।

বিজ্ঞ পাঠক, বুঝতেই পেরেছেন যে, মির্যা কাদিয়ানী সাহেব কতটা খেয়ানতকারী হলে মুরোদ হাসিল করতে একই বর্ণনার পরের অংশটি গায়েব করে দিতে পারে! আর পরের অংশটি তিনি কেনই বা গায়েব করবেন না! কারণ তখন তো তাকে এও মেনে নিতে হবে যে, ঈসা (আ.)-এর ঐ স্থানান্তরিত জায়গাটি তার দাবী অনুসারে ‘কাশ্মীর’ হলে তিনি সেখানে দুই হাজার হুর-পরীকে বিয়েও করেছিলেন! যদিও বা ইসলাম কিংবা খ্রিস্টীয় কোনো তারিখ বা লিটারেচার দ্বারা ঈসা (আ.)-এর তেত্রিশ বছরের পরবর্তী জীবনের কোনো খোঁজ পাওয়া যায় না। এতদ্ব্যতীত সমস্ত বরেণ্য হাদীস বিশারদ অনেক আগ থেকেই বলে আসছেন যে, এটি মুনকার, অশুদ্ধ এবং ইসরাইলী রেওয়ায়েত, যদ্দ্বারা দলিল প্রমাণ দেয়া বৈধ নয়।

পরিশেষে কথা হল, হানী ইবনে আল মুতাওয়াক্কিল নামীয় মুনকার রাবীর উক্ত মিথ্যা বর্ণনায় কী কথা বলা আছে সেটি তখনি আলোচনার দাবী রাখবে যদি সেটি বিশুদ্ধসূত্রে বর্ণিত হত।

বলে রাখতে চাই যে, ইতিহাসবেত্তা ও বিদগ্ধ আলেমগণের মতে, العلل المتناهية গ্রন্থের লিখক আল্লামা ইবনুল জাওজি (মৃত. ৫৯৭ হিজরী) রহিমাহুল্লাহ ছিলেন সে যুগের বিখ্যাত ইতিহাসবিদ ও মুহাদ্দিস। ইমাম মুহাম্মদ ইবনে জাফর ইবনে ইদরিস আল কাত্তানি (মৃত. ১৩৪৫ হিজরী) তাঁর গ্রন্থের নির্বাচিত অধ্যায়ে লেখেন, ইবনুল জাওজি কুরাইশি তামিমি বকরি সিদ্দিকি বাগদাদি হাম্বলি একজন প্রসিদ্ধ বক্তা। তিনি বিভিন্ন শাস্ত্রে বহু গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর লিখিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় আড়াই শত। ‘আর-রিসালাতুল মুসতাতরিফাহ (الرسالة المستطرفة)’ গ্রন্থেও তিনি এমন অভিমত প্রকাশ করেছেন।

আল্লাহ তুমি এই সহজ সরল কাদিয়ানীদের অন্তত আক্বল/সহীহ সমঝ দান কর। ওরা নিজেদের ইসলামি মৌলিক শিক্ষাদীক্ষার অভাবে নিজেদের নেতাদের জাল, মুনকার আর শাজ জাতীয় সমুদয় বর্ণনাকে সহীহ হাদীস ভেবে গিলে খাচ্ছে আর অজান্তে ইসলাম থেকে বেরিয়ে নতুন অধর্ম মতবাদের শিকার হয়ে জাহান্নামের পথে হাটছে। আল্লাহ তুমি হিদায়াত বখশাও।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

Previous article মির্যা কাদিয়ানী কর্তৃক ঈসা (আ.)-এর অবমাননা
Next article ঈসা (আ.) কি কাশ্মীরে এসেছিলেন?
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! এটি সম্পূর্ণ দ্বীনি ও অলাভজনক একটি ওয়েবসাইট। প্রতি বছর এটির ডোমেইন ও হোস্টিং ফি হিসেবে আমাকে এর ব্যয় বহন করতে হচ্ছে। যদি উক্ত ব্যয় বহন করতে অপারগ হই তাহলে এই সাইটটি নিশ্চিত বন্ধ হয়ে যাবে। সেহেতু আপনাদের সবার নিকট আবেদন থাকবে যে, আপনারা সাইটটির উক্ত ব্যয় বহনে এতে বিজ্ঞাপন দিতে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে উৎসাহিত করবেন এবং নিজেরাও সহযোগিতায় এগিয়ে আসবেন। বিনীত এডমিন! বিকাশ : ০১৬২৯-৯৪১৭৭৩ (পার্সোনাল)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here