Home মসীহ ঈসা হযরত ঈসা (আ:) স্বশরীরে আকাশে জীবিত থাকা সম্পর্কে মাননীয় যুগ-ইমামগণের আকীদা

হযরত ঈসা (আ:) স্বশরীরে আকাশে জীবিত থাকা সম্পর্কে মাননীয় যুগ-ইমামগণের আকীদা

হযরত ঈসা (আ:) স্বশরীরে আকাশে জীবিত থাকা সম্পর্কে মাননীয় যুগ-ইমামগণের আকীদা

হযরত ঈসা (আ:) বর্তমানে সশরীরে আকাশে জীবিত এবং শেষ যুগে পুন: আগমন করার সমর্থনে সর্বজন বরেণ্য যুগ ইমাম ও মুজাদ্দিদগণের উক্তি নিচে তুলে ধরা হল:-

[১] যুগশ্রেষ্ঠ মুজতাহিদ ইমাম মালেক (রহ:) লিখে গেছেন, হযরত ঈসা (আ:) বর্তমানে জীবিত। তাঁকে তেত্রিশ বছর বয়সে আকাশে তুলে নেয়া হয়েছিল। তাঁর সম্পূর্ণ উদ্ধৃতি নিম্নরূপ مات و هو ابن ثلاث و ثلاثين سنة و لعله أراد رفعه إلى السماء او حقيقته و يجئى آخر الزمان لتواتر خبر النزول “(ইমাম মালেক বলেন) তাঁকে (ঈসা) আকাশে তুলে নেয়ার ইচ্ছে করায় তিনি [ঈসা] সম্ভবত কিংবা প্রকৃতপক্ষেই নিদ্রা গিয়েছিলেন আর তখন তিনি তেত্রিশ বছরের (যুবক) ছিলেন। নুযূল সম্পর্কিত বহু তাওয়াতূর হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, তিনি [ঈসা] শেষ যুগে পুন:আগমন করবেন।” (রেফারেন্স, মাজমাউ বিহারিল আনওয়ার ১/৫৫৩; লেখক, মির্যা কাদিয়ানী স্বীকৃত মুজাদ্দিদ শায়খ মুহাম্মদ তাহির আস-সিদ্দীক আল-পাটনী)। এবার তাহলে বুঝা গেল কী? স্ক্রিনশট দ্রষ্টব্য :-

ইমাম মালেক (রহ:)-এর বক্তব্যের খোলাসা ও কাদিয়ানিদের মিথ্যাচারের জবাব :

(ক) ইমাম মালেক (রহ:)-এর ভাষ্যমতে, আকাশে যখন উঠিয়ে নেয়া হয় তখন ঈসা (আ:)-এর বয়স ছিল ৩৩ বছর। এখানে তিনি (ইমাম মালেক) মাতা/مات শব্দ বলে ঈসা (আ.)-এর “মৃত্যু” বুঝাননি, বরং নিদ্রা যাওয়া বুঝিয়েছেন। হাদীসেও এসেছে, রাসূল (সা.) নিদ্রার দোয়া শিক্ষা দিতে গিয়ে বলেন اللهم باسمك اموت و احى অর্থ হে আল্লাহ তোমার নামেই আমি মৃত্যুবরণ করছি তথা নিদ্রা যাচ্ছি আর তোমার নামেই জীবিত হব তথা জাগ্রত হব। ইমাম মালেক (রহ.) ঐ একই বক্তব্যে আরও বলেছেন, ঈসা (আ:)-কে আকাশে স্বশরীরে উঠিয়ে নেয়ার সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৩৩ বছর। এখন ঈসা (আ.)-কে তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন বলে থাকলে তিনি কাদিয়ানীদের মতই ১২০ বছরে মারা যাওয়ার উল্লেখ কেন করলেন না? (খ) ইমাম মালেক (রহ:) এর বক্তব্যের চম্বুকাংশ হচ্ছে, مات و هو ابن ثلاث و ثلاثين سنة و لعله أراد رفعه إلى السماء অর্থাৎ তাঁকে আকাশে উঠিয়ে নেয়ার ইচ্ছে করায় তিনি সম্ভবত ঘুমিয়ে পড়েন। বলে রাখা জরুরি, মাতা/مات অর্থ এখানে ঘুম অথবা অচেতন। মির্যা কাদিয়ানীও তার পুস্তক ‘ইযালায়ে আওহাম’-এর ভেতর লিখেছেন, অভিধানে موت শব্দের আরেক অর্থ ঘুম এবং অচেতনও হতে পারে, দেখ কামূস! (রেফারেন্স, রূহানী খাযায়েন ৩/৪৫৯)। (গ) ইমাম মালেক (রহ:)-এর ভাষ্যমতে, তিনি (ঈসা) শেষ যুগে পুনরায় আসবেন। কারণ একথা মুতাওয়াতির হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। প্রিয় আহমদীবন্ধু! এইবার চিন্তা করে দেখুন, আপনার কথিত জিল্লি নবী মির্যা কাদিয়ানী কিভাবে কাটছাঁট করে উদ্ধৃতি দিয়েছে এবং দুনিয়াকে ধোকা দিয়ে বোকা বানাতে চেয়েছে!

কিতাব :- মাজমাউ বিহারিল আনওয়ার, ইমাম তাহের পাটনী রহ.

[২] বিখ্যাত হাদীস সংকলক, হযরত ইমাম বুখারী (রহ:) আপনা কিতাব ‘তারীখে কাবীর’ এর মধ্যে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রা:) এর বর্ণনায় একটি হাদীস নিয়ে এসেছেন। বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রা:) রেওয়ায়েত করেন, لَيَدْفِنَن عيسى بنُ مريمَ مع النبي صلى الله عليه وسلم في بيته. التاريخ الكبير “নিশ্চিত ভাবেই হযরত ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ:)-এর কবর নবী করীম (সা:)-এর রাওজাতে হবে।” [হাদীসের মান, হাসান]। ইমাম বুখারী সংকলিত ‘তারীখে কাবীর [التاريخ الكبير للبخاري]’ খন্ড নং ১ পৃষ্ঠা নং ১৬৩ দ্রষ্টব্য। উল্লেখ্য কিতাবটি সর্বমোট ৯ খন্ডে প্রকাশিত।

  • বলাবাহুল্য যে, এ হাদীসে ‘ফী বাইতিহি’ (فى بيته) শব্দ থাকায় রাসূল (সা:)-এর রাওজা শরিফ খুঁড়ে তার ভেতরে ঈসাকে দাফন করা হবে বুঝাল কিনা এ নিয়ে দুশ্চিন্তা করার দরকার নেই। কারণ আরবী বর্ণ ‘ফী’ (فى) কখনো সখনো ‘নিকট’ অর্থেও ব্যবহৃত হয়। পবিত্র কুরআনের সূরা আন-নামল এর একটি আয়াতে মূসা (আ:) সম্পর্কে নাযিল হয়েছে فَلَمَّا جَاءهَا نُودِيَ أَن بُورِكَ مَن فِي النَّارِ وَمَنْ حَوْلَهَا “অতপর সে (মূসা) যখন (আগুনের) কাছে পৌছলো, তখন তাঁকে (অদৃশ্য থেকে) আওয়াজ দেয়া হল, বরকতময় হোক সে, যিনি এই আগুনের মধ্যে (তথা আগুনের সন্নিকটে) আছে, বরকতময় হোক তারা যারা এর আশেপাশে আছে।” (আন নামল ৮)। জ্ঞানীদের নিকট গোপন থাকেনি যে, তূর পর্বতমালায় সেই সময় মূসা (আ:) আগুনের ভেতর ছিলেন না, বরং আগুনের সন্নিকটে তথা কোনো এক পাশে-ই ছিলেন। তথাপি আয়াতে শব্দটি ‘ফী’ (আরবী: في) যোগেই এসেছে।” [রেফারেন্স, তাফসীরে কাবীর, ইমাম রাজী ২৪/১৮৩ দ্রষ্টব্য] তদ্রপ উক্ত হাদীসেও ‘ফী বাইতিহি’ (فى بيته) বলতে রাওজা শরীফ খুঁড়ে তার অভ্যন্তরে, এই অর্থ নয়; বরং এর উদ্দেশ্য হল, রাওজা শরীফের পার্শ্বে। অতএব দুশ্চিন্তার আর কোনো কারণ থাকল না।

[৩] ইমাম আবুল হাসান আল-আশ’আরী (রহ:) লিখেছেন و أجمعت الأمة على أن الله عز وجل رفع عيسى عليه السلام إلى السماء অর্থাৎ উম্মতে মুহাম্মদিয়া এই ব্যাপারে ইজমা তথা একমত আছেন যে, নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা ঈসা (আ:)-কে আকাশে উঠিয়ে নিয়েছেন। (রেফারেন্স, ইমাম আবুল হাসান আল-আশ’আরী রচিত ‘কিতাবুল আমানত’ পৃষ্ঠা ৪৬)।

[৪] ইমাম আলী ইবনে আহমদ ইবনে হাজম (রহ.) তার রচনাবলীতে ঈসা (আ.)-এর পুনরায় আগমনের যেমন কনসেপ্ট দিয়ে গেছেন, ঠিক তদ্রূপ তিনি তার অন্যতম একটি রচনা ‘আল ফসলু ফিল মিলালি ওয়াল আহওয়ায়ি ওয়ান নাহলি’ (الفصل في الملل والأهواء والنحل) নামীয় কিতাবের ১ম খণ্ডের ৭৭ নং পৃষ্ঠায় আগমনকারী ঈসাকে পরিষ্কার শব্দে ‘বনী ইসরাইলী’ ঈসা (من نزُول عِيسَى عَلَيْهِ السَّلَام الَّذِي بعث إِلَى بني إِسْرَائِيل) বলেই আখ্যা দিয়েছেন। স্ক্রিনশট দ্রষ্টব্য :-

ইবনে হাযম (রহ.) রচিত আল মুহাল্লা-তে ঈসা (আ.) সংক্রান্ত কনসেপ্টটা কী?

ইমাম ইবনে হাযম (মৃত: ৪৫৬ হিজরী)-এর উপরিউক্ত আকীদা সম্পর্কে যাদের কোনো জ্ঞান নেই শুধুমাত্র তারাই তাঁর রচিত ‘আল-মুহাল্লা বিল আছার‘ কিতাবের إنما عنى وفاة الموت কথাটির সঠিক তাৎপর্য না বুঝার দরুন ধোকা খেয়ে যান। কাদিয়ানীদের বইপুস্তক পড়লে দেখবেন, তারা ইবনে হাযমের অন্যান্য রচনাবলীকে উপেক্ষা করে সাধারণদের কিভাবে প্রতারিত করে গেছে! আসুন, এবার ইমাম ইবনে হাজম (রহ.) ‘আল মুহাল্লা’ কিতাবে কী ধরনের কনসেপ্ট দিয়ে গেছেন দেখা যাক। তিনি ইবনে আব্বাস (রা.)-এর তাফসীরকে সামনে রেখে আল মুহাল্লা-তে লিখেছেন, فالوفاة قسمان نوم وموت فقط ولم يرد عيسى عليه السلام بقوله فلما توفيتني وفاة النوم فصح أنه إنما عنى وفاة الموت ومن قال إنه عليه السلام قتل أو صلب فهو كافر مرتد حلال دمه وماله لتكذيبه القرآن وخلافه الإجماع অর্থ- “ওফাত’ দুই প্রকার। শুধুমাত্র নিদ্রা এবং মৃত্যু। হযরত ঈসা (আ:) সম্পর্কে আল্লাহর বাণী: ফা-লাম্মা তাওয়াফফাইতানি (অর্থাৎ [কেয়ামতের দিন আল্লাহর প্রশ্নের উত্তরে ঈসা (আ:) বলবেন] আপনি যখন আমাকে নিয়ে নিলেন – মায়েদা: ১১৭) দ্বারা ‘নিদ্রা’ উদ্দেশ্য নেয়া হয়নি। সুতরাং আমার দৃষ্টিতে (এখানে) ওফাত এর সঠিক অর্থ হল ‘ওফাতুল মওত’ (দুনিয়াতে পুন: আগমনের পর তাঁকে মৃত্যুর মাধ্যমে নিয়ে নেয়া)-ই বুঝানো উদ্দেশ্য (ইবনে হাযমের এই উক্তি ইবনে আব্বাসের ‘و فى آخر الزمان’ তথা ঈসার ওফাত শেষযুগে হবে, উক্তির সাথে মিলে যায়)। (তিনি আরো লিখেছেন) যারা বলবে ঈসা (আ:)-কে হত্যা বা ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছে তারা কাফের, মুরতাদ এমনকি কুরআনকে মিথ্যাপ্রতিপন্ন করায় এবং ইজমার বিপরীতে আকীদা রাখায় তাদের রক্ত হালাল [তাদেরকে মৃত্যুদন্ড দেয়া বৈধ]।” (রেফারেন্স, ইবনে হাযম রচিত ‘আল-মুহাল্লা বিল আছার’ খন্ড ১; আকীদা নং ৪১)।

  • কে জানি প্রশ্ন করল, ইবনে হাযম তার উপরিউক্ত ব্যাখ্যায় হযরত ইবনে আব্বাস (রা.)-এর কৃত তাফসীরের দিকেই ইংগিত করার সুস্পষ্ট কোনো প্রমাণ আছে কি? আমি উত্তরে বলব, জ্বী আছে। ইবনে হাযমের আরেকটা রচনা ‘আল ফসলু ফিল মিলালি ওয়াল আহওয়ায়ি ওয়ান নাহলি’-এর ৪নং খণ্ডের ১৩৮ নং পৃষ্ঠায় পরিষ্কার লিখা আছে, هذا مع سماعهم قول الله تعالى {ولكن رسول الله وخاتم النبيين} وقول رسول الله صلى الله عليه وسلم لا نبي بعدي فكيف يستجيزه مسلم أن يثبت بعده عليه السلام نبيا في الأرض حاشا ما استثناه رسول الله صلى الله عليه وسلم في الآثار المسندة الثابتة في نزول عيسى بن مريم عليه السلام في آخر الزمان

অর্থাৎ ‘এটা তাদের (জানা) শোনা আছে যে, সর্বশক্তিমান আল্লাহ’র বাণী {কিন্তু তিনি আল্লাহ’র রসূল এবং নবীদের সমাপ্তি} এবং রাসূল (সা.)-এর বাণী, আমার পরে আর কোনো নবী নেই। এমতাবস্থায় কিভাবে একজন মুসলিম তাঁকে (ঈসাকে) তাঁর পরে পৃথিবীতে একজন নবী প্রতিষ্ঠা করার অনুমতি দিতে পারে? শেষ যুগে মরিয়ম তনয় ঈসা (আ.)-এর নেমে আসার ব্যাপারে আল্লাহ’র রসূল (সা.) ব্যতিক্রম যা বলে গেছেন তা প্রমাণিত।’

এখানে ইবনে হাযম (রহ.) কতটা সুস্পষ্ট করে নিজের আকীদা পেশ করেছেন তা চিন্তা করুন! আগমনকারী ঈসা আবার এসে নবীর দায়িত্বে থাকবেন না বা একজন নবী হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভের অনুমতি পাবেন না, তিনি বিষয়টি ক্লিয়ার করে যেন কাদিয়ানীদের বিশ্বাসের গোড়ায় কুঠারাঘাত করলেন! তিনি তার পরই লিখলেন, الآثار المسندة الثابتة في نزول عيسى بن مريم عليه السلام في آخر الزمان (শেষ যুগে মরিয়ম তনয় ঈসা (আ.)-এর নেমে আসার ব্যাপারে আল্লাহ’র রসূল (সা.) ব্যতিক্রম যা বলে গেছেন তা প্রমাণিত)। এখন বলুন, ইবনে হাযম (রহ.)-এর আকীদা সুস্পষ্ট করতে এর চেয়ে বেশি আর কী লাগে? কিন্তু সাধারণ কাদিয়ানীরা তো বটে, অধিকাংশ মু’আল্লিম বা মুরুব্বি পর্যায়ের কাদিয়ানীরাও ইবনে হাযম (রহ.)-এর উল্লিখিত আকীদা সম্পর্কে পুরোই অন্ধকারে। কাজেই ইমাম ইবনে হাযম (রহ:)-এর সম্পূর্ণ বক্তব্য চেপে গিয়ে যারা এতকাল উনার খন্ডিত বক্তব্যে ধুম্র জাল সৃষ্টি করে যাচ্ছিলেন এবার তাদের অবশ্য লজ্জা হওয়া উচিত। তারপর চলুন “ইজমা” সম্পর্কে জেনে নিই!

[৫] ইমাম আবুল হাইয়ান আল-উন্দুলূসী (রহ:) লিখেছেন و اجمعت الأمة على ما تضمنه الحديث المتواتر من أن عيسى في السماء حى وأنه ينزل في آخر الزمان “উম্মতে মুহাম্মদিয়া (বহু) মুতাওয়াতির হাদীসের প্রেক্ষিতে এই ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন যে, নিশ্চয়ই ঈসা (আ:) আকাশে (স্বশরীরে) জীবিত এবং শেষ যামানায় তিনি [আকাশ থেকে] নাযিল হবেন।” [রেফারেন্স, আল-বাহরুল মুহীত: ২/৪৭৩]।

[৬] শায়খ ইবনে তাইমিয়া (রহ:) তাঁর আরেকটি কিতাবে লিখেছেন ينزل عيسى بن مريم من السماء على المنارة البيضاء شرقى دمشق “ঈসা ইবনে মরিয়ম দামেস্কের পূর্বে সাদা মিনারার নিকটে আকাশ থেকে নাযিল হবেন।” [রেফারেন্স, ইমাম ইবনে তাইমিয়া রচিত ‘আল-জাওয়াবুস সহীহ’ ২/৩১]। শায়খ ইবনে তাইমিয়া (রহ:) তিনি এর উপর উম্মতের ইজমা সম্পর্কে লিখেছেন و اجمعت الأمة على ان الله رفع عيسى إلى السماء “উম্মতে মুহাম্মদিয়া একথার উপর একমত আছেন যে, নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা ঈসাকে আকাশে উঠিয়ে নিয়েছেন।” [রেফারেন্স, ইমাম ইবনে তাইমিয়া রচিত ‘বায়ানু তালবীসিল জাহমিয়্যা’ ২/৪১৯]।

[৭] ইমাম ইবনে কাইয়ুম (রহ:) সম্পর্কে ‘রূহানী খাযায়েন’ এর ১৩ নং খন্ডের ২২১ নং পৃষ্ঠায় লিখা আছে, ফাযেল, মুহাদ্দিস এবং মুফাসসির ইবনে কাইয়ুম ছিলেন স্বীয় যামানার একজন যুগ ইমাম। এবার ঈসা (আ:) সম্পর্কে উনার আকীদা কেমন ছিল জেনে নিন। তিনি লিখেছেন و هذا المسيح ابن مريم حي لم يمت و غذاه من جنس غذاء الملائكة “এই মসীহ ইবনে মরিয়ম তিনি জীবিত, ইন্তেকাল করেননি আর (আকাশে) তাঁর খাবার-দাবার [’র প্রয়োজনীয়তা] ফেরেশতাজাতির খাবার-দাবারের মতই [আধ্যাত্মিকভাবে পূর্ণতা লাভ করে]।” [রেফারেন্স, আত-তিবইয়ান ফী ঈমানিল কুরআন পৃষ্ঠা নং ২২৮]। ইমাম ইবনে কাইয়ুম (রহ:) ঈসা (আ:) আকাশ থেকে নাযিল হবেন মর্মে লিখেছেন نازلا من السماء فيحكم بكتاب الله وسنة رسوله . هداية الحيارى فى اجوبة اليهود والنصارى “[লোকেরা ঈসাকে] আকাশ থেকে নাযিল হতে দেখবেন। অতপর তিনি কিতাবুল্লাহ এবং তদীয় রাসূলের সুন্নাহ দ্বারা শাসন কায়েম করবেন।” [রেফারেন্স, ‘হিদায়াতুল হাইয়ারা ফী আজবিবাতিল ইয়াহুদ ওয়ান নাসারা’ পৃষ্ঠা নং ১৬৮; লিখক, ইবনে কাইয়ুম রহ:]।

[৮] ইমাম ইবনে কাসীর দামেস্কী (রহ:) তিনি স্বীয় তাফসীর গ্রন্থের অত্র পৃষ্ঠায় হযরত ঈসা (আ:) আকাশ থেকে নাযিল হবেন বলে বর্ণিত হাদীসগুলো উল্লেখপূর্বক শিরোনাম দিলেন নিম্নরূপ ذكر الأحاديث الواردة في نزول عيسى ابن مريم إلى الأرض من السماء في آخرالزمان قبل يوم القيامة “কিয়ামতের পূর্বে শেষ যুগে আকাশ থেকে পৃথিবীতে ঈসা ইবনে মরিয়মের অবতরণকরা সম্পর্কে বর্ণিত হাদীসগুলোর আলোচনা।” (রেফারেন্স, তাফসীরে ইবনে কাসীর, খন্ড ২; সূরা নিসা)। তিনি তাঁর ‘তাফসীরে ইবনে কাসীর’-এর মধ্যে (২/৪৭) একদম পরিষ্কার করে এও লিখেছেন, فإن المسيح عليه السلام لمَّا رفعه الله إلى السماء: تَفَرَّقت أصحابه شيَعًا بعده অর্থাৎ হযরত মসীহ (আ.)-কে আল্লাহতালা যখন আকাশে উঠিয়ে নেন তার পর থেকে তাঁর সাথীরা (অনুসারীরা) দলে দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে। জ্ঞানীরা চিন্তা করুন, যিনি হযরত ঈসা (আ:) এর নাযিল ‘আকাশ থেকে হবে’ মর্মে শিরোনাম দিলেন, ঈসাকে আকাশে উঠিয়ে নেয়ার বিশ্বাসও দুনিয়ার সামনে রেখে গেলেন, তিনি আদৌ কি ঈসা (আ:)-কে মৃত বিশ্বাস করতে পারেন? কখনো না। তাহলে আমাদের আহমদীবন্ধুরা কোথা থেকে এইসব বিভ্রান্তি আমদানি করেন!

[৯] মির্যা কাদিয়ানী স্বীকৃত হিজরী অষ্টম শতকের মুজাদ্দিদ ও সহীহ বুখারির ব্যাখ্যাকারক ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহ:) ‘ফাতহুল বারী’ কিতাবে লিখেছেন و ليس له قبر অর্থাৎ তাঁর (ঈসা) কোনো কবর-ই নেই। [ফাতহুল বারী, কিতাবুস সালাত, ১/৬৩৪ দ্রষ্টব্য]। তিনি তাঁর অন্য আরেকটি কিতাবে আরো লিখেছেন: ‘সকল হাদীস বিশারদ এবং তাফসীরকারক একমত এই কথার উপর যে, انه رفعه ببدنه حيا অর্থাৎ নিশ্চয় তাঁকে (ঈসা) সশরীরে জীবিত উঠিয়ে নিয়েছেন। তবে মতভেদ শুধু এতটুকুতে যে, (আকাশে) উঠিয়ে নেয়ার আগে তিনি মৃত্যুবরণ করেছিলেন নাকি [মৃত্যুর সদৃশ] ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। [রেফারেন্স, ইবনে হাজার রচিত ‘আত-তালখীছুল হাবীর’ কিতাবুত তালাক: ৩/৪৬২]।

[১০] মির্যা কাদিয়ানী স্বীকৃত হিজরী নবম শতকের মুজাদ্দিদ ইমাম জালালুদ্দীন আস-সুয়ূতী (রহ:) লিখেছেন و انه يحكم بشرع نبينا و وردت به الأحاديث و انعقد عليه الإجماع অর্থাৎ নিশ্চয়ই তিনি (ঈসা) আমাদের নবী (মুহাম্মদ)’র শরীয়ত দ্বারা বিচার-ব্যবস্থা (কায়েম) করবেন এবং এর প্রমাণে বহু হাদীস বর্ণিত হয়েছে ও এর উপর ইজমা [উম্মতের ঐক্যমত্য] প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। [রেফারেন্স, ইমাম সুয়ূতী রচিত ‘আল-হাভী লিল ফাতাওয়া’ ২/১৫৫]। ইমাম সুয়ূতী (রহ:) আরো লিখেছেন و مَكَرَ اللهُ بِهِمْ بِألْقَى شِبْهِ عِيسى على مَن قَصَدَ قتْلَهُ فقتلوه و رَفَعَ عيسى إلى السماء . جلالين অর্থাৎ আল্লাহ তিনিও তাদের ষড়যন্ত্রের মোকাবিলায় কৌশল অবলম্বন করেছিলেন। যার ফলে আল্লাহতায়ালা তাদের একজনকে ঈসার সাদৃশ্য করে দেন যে তাঁকে হত্যা করার ইচ্ছে করেছিল। তারপর তারা (ইহুদীরা) ঈসার সদৃশ-লোকটিকে (ঈসা ভেবে) হত্যা করে ফেলে। আর (ওদিকে) ঈসাকে [তাদের পাকড়াও হতে নিবৃত রেখে] আকাশে উঠিয়ে নেন। [রেফারেন্স, তাফসীরে জালালাইন: সূরা আলে ইমরান ৫৫]। মির্যা কাদিয়ানী কর্তৃক স্বীকৃত ৯ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ূতী (রহ:) আরো লিখেছেন ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﻣﺪ ﻓﻲ ﻋﻤﺮﻩ ﺣﺘﻰ ﺍﻫﺒﻂ ﻣﻦ ﺍﻟﺴﻤﺎﺀ ﺍﻟﻲ ﺍﻷﺭﺽ ﻭ ﻳﻘﺘﻞ ﺍﻟﺪﺟﺎﻝ অর্থাৎ হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) হতে বর্ণিত আছে, আল্লাহ তায়ালা তাঁর (ঈসা) আয়ুস্কাল বিলম্বিত করে দিয়েছেন। তিনি আকাশ থেকে পৃথিবীতে অবতরণ করবেন এবং দাজ্জালকে হত্যা করবেন। [রেফারেন্স, দুররে মানছূর ২/৩৫০]।

[১১] হিজরী দশম শতকের মুজাদ্দিদ মোল্লা আলী ক্বারী (রহ:) ‘তারীখে কাবীর’ এর ১ম খন্ডের ১৬৩ নং পৃষ্ঠায় একটি হাদীসে উল্লিখিত في قبري এর ব্যাখ্যায় লিখেছেনفي قبري اى في مقبرتى ، و عبر عنها بالقبر لقرب قبره بقبره فكأنما فى قبر واحد {فأقوم انا و عيسى في قبر واحد} أي من مقبرة واحدة. ففي القاموس : ان في تأتى بمعنى من “[রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন] ঈসা (আ:) আমার কবরে দাফন হবেন’ একথার অর্থ হল তিনি আমার গোরস্তানে [রাওজাতে] দাফন হবেন। তাঁর (ঈসা) কবরটি রাসূলের কবরের একদম সন্নিকটে হওয়াতে যেন (দু’জনের কবরদ্বয়) একই ব্যক্তির কবরে পরিগণিত। [হাদীসের পরের অংশ] ‘অতপর আমি এবং ঈসা একই কবরে দাফন হব’ একথার অর্থ হচ্ছে একই গোরস্তানে [পাশাপাশি দুইজন] দাফন হব। কারণ, কামূছ [অভিধান]’র ভেতর আছে, কোনো কোনো সময় ‘ফী’ (মধ্যে) বর্ণটি ‘মিন’ (সন্নিকটে) অর্থেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে।” [মেরকাত শরহে মেশকাত: ১০/১৬৬; কিতাবুল ফিতান দ্র.]।

[১২] মির্যা কাদিয়ানী স্বীকৃত হিজরী দশম শতকের মুজাদ্দিদ শায়খ মুহাম্মদ গুজরাটী (রহ:) লিখেছেন و يجئى آخر الزمان لتواتر خبر النزول অর্থাৎ তিনি (ঈসা) শেষ যামানায় পুন: আগমন করবেন একথা নাযিল সংক্রান্ত বহু তাওয়াতূর হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। [রেফারেন্স, মাজমাউল বিহার: ১/ ৫৩৪]।

[১৩] ইমাম শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দেস আদ-দেহলভী (রহ:) লিখেছেন فظنوا رفعه إلي السماء قتلا . الفوز الكبير অর্থাৎ ফলে তারা (ইহুদীরা) তাঁকে (ঈসাকে) আকাশে উঠিয়ে নেয়াকে হত্যা করার ধারণা করেছিল। [রেফারেন্স, আল-ফাওযুল কাবীর [আরবী] ৩৮; দারুল গাওছানী লিদ-দিরাসাতিল কুরআনিয়্যা, দামেস্ক হতে প্রকাশিত]।

[১৪] ইমাম মুহম্মদ ইবনে আহমদ ইবনে সালেম ইবনে সোলায়মান আস-সাফারিনী (রহ:) (মৃত: ১১১৪ হিজরী) লিখেছেন العلامة الثالثة : ان ينزل من السماء السيد المسيح عيسى بن مريم و نزوله ثابت بالكتاب و السنة و الإجماع “(কেয়ামতের) তৃতীয় আলামত হচ্ছে, হযরত ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ:)-এর আকাশ থেকে নাযিল হওয়া। তাঁর নাযিল হওয়া এটি কুরআন, সুন্নাহ এবং ইজমা (সকলের ঐক্যমত্য) দ্বারা সাব্যস্ত।” [রেফারেন্স, লাওয়ামিউল আনওয়ারিল বাহিয়্যাহ: ২/৯৪]।

[১৫] হিজরী তের শতকের মুজাদ্দিদ দাবিদার ও একই সাথে ইমাম মাহদী, মসীহে মওঊদ এবং নবুওয়তের দাবীদার কাদিয়ানের ‘কাজ্জাব’ মির্যা গোলাম আহমদ নিজেও ১৮৯৯ সালে স্বীকারোক্তি দিয়ে তার বইয়ের এক জায়গায় লিখে গেছেন, اس پر اتفاق ہو گیا ہے کہ مسیح کے نزول کے وقت اسلام دنیا پر کثرت سے پھیل جائے گا اور ملل باطلہ ہلاک ہو جائیں گی اور راست بازی ترقی کرےگی অর্থাৎ “গোটা উম্মতে মুহাম্মদিয়া এই ব্যাপারে একমত রয়েছেন যে, মসীহ (ঈসা)’র নাযিল হওয়ার প্রাক্কালে দুনিয়াতে ইসলাম বহুলাংশে ছড়িয়ে পড়বে। বাতিল ধর্মমতের অবসান ঘটবে এবং সর্বাত্মক ন্যায়পরায়ণতার উন্নতি ঘটবে।” [রেফারেন্স, মির্যা কাদিয়ানী রচিত ‘আইয়্যামুছ ছুলহি’ (রচনাকাল: ১৮৯৯ ইং) পৃষ্ঠা ১৩৬; রূহানী খাযায়েন ১৪/৩৮১। তিনি ‘বারাহিনে আহমদিয়া’ [রচনাকাল: ১৮৮৪ ইং] নামক বইয়ের ৪র্থ খন্ডের ৪৯৯ পৃষ্ঠায় [উর্দূ] আরো লিখেছেন, جب حضرت مسیح علیہ السلام دوبارہ اس دنیا میں تشریف لائیں تو ان کے ہاتھ سے دین اسلام جمیع آفاق اور أقطار میں پهیل جائے گا অর্থাৎ যখন হযরত মসীহ (ঈসা) আলাইহিস সালাম এই পৃথিবীতে দ্বিতীয়বার আগমন করবেন তখন তাঁর হাতে ইসলামধর্ম বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে। [আরো দেখুন রূহানী খাযায়েন ১/৫৯৩]।

পরিশেষ : পরিশেষে বলতে পারি, ঈসা (আ:) বর্তমানে আকাশে জীবিত থাকা এবং শেষ যুগে পৃথিবীতে তাঁর পুন: আগমন হওয়া একটি অকাট্য সত্য ও সুপ্রমাণিত আবার এটি জুরুরিয়াতে দ্বীনের অন্তর্ভুক্তও। ফলে কোনো মুসলমানের পক্ষে এটি অস্বীকার করার কোনোই সুযোগ নেই।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here