Home কাজিবাতে মির্যা ইমাম মাহদীর নিকট প্রথম বাইয়েত নেয়ার সংখ্যাটি তিনশত তের হওয়া!

ইমাম মাহদীর নিকট প্রথম বাইয়েত নেয়ার সংখ্যাটি তিনশত তের হওয়া!

0
ইমাম মাহদীর নিকট প্রথম বাইয়েত নেয়ার সংখ্যাটি তিনশত তের হওয়া!

ইমাম মাহদীর নিকট প্রথম বাইয়েত নেবেন যারা তাদের সংখ্যাটি কত? তিনশত তের? এইধরনের কোনো সহীহ হাদীস কি রয়েছে? আজকে এই সম্পর্কে প্রামাণ্য কিছু আলোচনা করব, ইনশাআল্লাহ। প্রথমে এই সম্পর্কে হাদীসটির আরবী পাঠ নিচে দেখুন,

.

ইমাম নু’আইম বিন হাম্মাদ (রহ.) সংকলিত ‘আল ফিতান‘ গ্রন্থে হাদীসটি কয়েকটি সনদেই বর্ণিত আছে। সবগুলো সনদই জাল, মিথ্যা আর দুর্বল বলেই উল্লেখ রয়েছে। এখানে তন্মধ্য হতে যে বর্ণনাটি উল্লেখ করছি সেটি উক্ত ‘আল ফিতান’ এর হাদীস নং ৯৮৬ এবং ইমাম হাকেম (রহ.) এর ‘আল মুস্তাদরাক‘ এর ৮৫৩৭ নং হাদীস। হাদীসটির সনদ বা বর্ণনাসূত্র সহ উল্লেখ করছি, ইমাম নু’আইম বিন হাম্মাদ বলেন,

أبي يوسف المقدسي ، عَنْ عَبْدِ الْمَلِكِ بْنِ أَبِي سُلَيْمَانَ ، عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ ، عَنْ أَبِيهِ ، عَنْ جَدِّهِ ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: فِي ذِي الْقَعْدَةِ تُجَاذِبُ الْقَبَائِلُ وَتُغَادِرُ ، فَيُنْهَبُ الْحَاجُّ ، فَتَكُونُ مَلْحَمَةٌ بِمِنًى ، يَكْثُرُ فِيهَا الْقَتْلَى ، وَيَسِيلُ فِيهَا الدِّمَاءُ ، حَتَّى تَسِيلَ دِمَاؤُهُمْ عَلَى عَقَبَةِ الْجَمْرَةِ ، وَحَتَّى يَهْرُبَ صَاحِبُهُمْ فَيَأْتِي بَيْنَ الرُّكْنِ وَالْمَقَامِ ، فَيُبَايَعُ وَهُوَ كَارِهٌ ، يُقَالُ لَهُ: إِنْ أَبِيتَ ضَرَبْنَا عُنُقَكَ ، يُبَايِعُهُ مِثْلُ عِدَّةِ أَهْلِ بَدْرٍ يَرْضَى عَنْهُمْ سَاكِنُ السَّمَاءِ وَسَاكِنُ الْأَرْضِ

অর্থাৎ আবু নু’আইম বিন হাম্মাদ এটি আবু ইউসুফ আল মাক্বদিসি থেকে তিনি আবুল মালেক ইবনে আবী সুলাইমান থেকে, তিনি আমর বিন শুয়াইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, আর তার পিতা তার দাদার সূত্রে বর্ণনা করেন যে, ‘জিলক্বদ মাসে গোত্রে গোত্রে বিবাদ শুরু হবে। সে বছর হজ্ব নিষিদ্ধ থাকবে। মীনায় তীব্র লড়াই হবে। অধিকাংশ মানুষ তাতে মারা যাবে। প্রচুর রক্ত প্রবাহিত হবে। এমনকি রক্ত জামরাহ পর্যন্ত চলে আসবে। এ খুন চলতে থাকবে যতক্ষণ না মীনা থেকে লোকজন পালিয়ে যায়। তখন তিনি (ইমাম আল মাহদী) রুকনে ইয়ামিনী এবং মাকামে ইবরাহীমের মাঝখানে থাকবেন। তারপর তাঁর হাতে বাইয়েত হবে লোকজন। যদিও তিনি তা অপছন্দ করেন। তখন তাকে বলা হবে, যদি তুমি বাইয়েত গ্রহণে অস্বীকৃতি জানাও তাহলে তোমাকে হত্যা করা হবে। তখন তিনি বদর সংখ্যক (৩১৩জন) অনুসারীকে বাইয়েত করবেন। তার উপর আসমান ও জমিনের অধিবাসীগণ সন্তুষ্ট হবেন। (কিতাবুল ফিতান, হাদীস নং-৯৮৬)।

হাদীসের সনদ বা সূত্র বিশ্লেষণ :
উল্লিখিত হাদীসের বর্ণনাসূত্রে এক ব্যক্তি হলেন আবু ইউসুফ আল মাক্বদিসি। তার প্রকৃত নাম, মুহাম্মদ ইবনে আব্দুর রহমান আল মাক্বদিসি। ইমাম যাহাবী তার সম্পর্কে লিখেছেন هو متهم ، ليس بثقة অর্থাৎ সে (মিথ্যাবাদী হিসেবে) অভিযুক্ত, সে বিশ্বস্ত নয়। (মীযানুল ই’তিদাল রাবী নং ৭৮৪৯)। ইমাম আবুল ফাতহ আল আযদী (রহ.) বলেছেন كذاب، متروك الحديث অর্থাৎ সে ছিল একজন বড় মিথ্যাবাদী, তার বর্ণনাকৃত হাদীস মাতরূক তথা অগ্রহণযোগ্য। (সূত্র, ঐ)। সনদের দ্বিতীয় ব্যক্তি মুহাম্মদ ইবনে উবায়দুল্লাহ আল আ’র‍যামী। তার সম্পর্কে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.) বলেছেন ترك الناس حديثه অর্থাৎ লোকেরা তার হাদীস পরিত্যাগ করেছে। (মীযানুল ই’তিদাল রাবী নং ৭৯০৫)। ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন (রহ.) বলেছেন لا يكتب حديثه অর্থাৎ তার হাদীস লিখাযোগ্য নয়। (সূত্র, ঐ)।

শেষকথা, আহমদী বা কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের নিরপেক্ষ বিবেকের নিকট একটি প্রশ্ন, আপনাদের মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী সাহেবের নানা বইপুস্তকেও উক্ত হাদীসটির উল্লেখ পাওয়া যায়। তবে পুরোপুরি উল্লেখ পাওয়া যায়না, আবার যতটুকু পাওয়া যায় ততটুকুও গোঁজামিলে ভরা। যেমন তিনি লিখেছেন, “যেহেতু সহীহ হাদীসে আছে, ইমাম মাহদীর কাছে একটি কিতাব থাকবে যার মধ্যে ৩১৩ জন সাথীর নাম থাকবে। সে ভবিষ্যতবাণী আজ পূরণ হল।” (রূহানী খাযায়েন ১১:৩২৪)। কিন্তু এধরণের কোনো সহীহ কিংবা জঈফ হাদীস থাকাটাও প্রমাণিত নয়। এখন কথা হল, মির্যা সাহেব কিজন্য উপরিউক্ত সম্পূর্ণ হাদীসটি উল্লেখ না করেই অতিব সংক্ষেপে ও খণ্ডিতাংশ উল্লেখ করে গেছেন তা দেরিতে হলেও নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন। যদিও এই হাদীসটি সনদের বিচারে মোটেও অথেনটিক নয়, পুরোপুরি প্রত্যাখ্যাত কিন্তু আমি সেদিকে এই মুহূর্তে যেতে চাচ্ছিনা। এখানে আমার বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে, একজন ইমাম মাহদী দাবীদার কিভাবে পারলেন, এখানেও পাঠককে ধোকা দিতে? পুরো হাদীসটি উল্লেখ করা হলে পাঠকবৃন্দ কি কখনোই মির্যা গোলাম আহমদ সাহেবকে হাদীসের ফরমান অনুযায়ী ইমাম মাহদী বিশ্বাস করবে? কখনোই না। কেননা, তখন প্রশ্ন আসবে যে, মির্যা সাহেবই যদি হাদীসের ফরমান অনুযায়ী প্রকৃতপক্ষে ইমাম মাহদী হন তবে তিনি কিজন্য উক্ত বাইয়েতটি রুকন এবং মাকামে ইবরাহীমের মধ্যবর্তী স্থানে সম্পন্ন করলেন না? অথচ মির্যা সাহেব বাইয়েত নিয়েছিলেন পাকিস্তানের শিয়ালকোট জেলায় ১৮৮৯ সালের দিকে। তাও তিনি তখন তার উক্ত বাইয়েত মাহদীয়তের উপর নেননি, নিয়েছিলেন তার মুজাদ্দিয়তের উপর। অথচ ইমাম মাহদী প্রথমে মুজাদ্দিয়তের উপর বাইয়েত নেবেন, এমন কোনো কথা কোথাও ইংগিতেও নেই। অন্ততপক্ষে এই একটি মানদণ্ডেও মির্যা গোলাম আহমদ এর মাহদী দাবী মিথ্যা আর প্রতারণা সাব্যস্ত হয়ে যাচ্ছে। মির্যা গোলাম আহমদ সাহেব মূলত এইজন্যই পুরো হাদীসটি উল্লেখ করার সাহস পাননি, কৌশলে এড়িয়ে গিয়েছেন। এখন এর চাইতে বড় জালিয়াতি আর প্রতারণা আর কী হতে পারে? আপনার নিরপেক্ষ বিবেক কী বলে? এমন প্রতারক আদৌ কি ইমাম মাহদী দাবীতে সত্যবাদী হবেন? মির্যা কাদিয়ানীর প্রথম বাইয়েত মাহদীয়তের উপর ছিলনা, ছিল মুজাদ্দিয়তের উপর। ১৮৮৯ সালে। প্রমাণ দেখুন,

সীরাতে মাহদী ১/১৭; বর্ণনা নং ২০

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

Previous article আহমদীয়া অমুসলিম জামা’ত এর ধর্মবিশ্বাস
Next article মির্যা কাদিয়ানী কি ইসলামের খাদেম?
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! এটি সম্পূর্ণ দ্বীনি ও অলাভজনক একটি ওয়েবসাইট। প্রতি বছর এটির ডোমেইন ও হোস্টিং ফি হিসেবে আমাকে এর ব্যয় বহন করতে হচ্ছে। যদি উক্ত ব্যয় বহন করতে অপারগ হই তাহলে এই সাইটটি নিশ্চিত বন্ধ হয়ে যাবে। সেহেতু আপনাদের সবার নিকট আবেদন থাকবে যে, আপনারা সাইটটির উক্ত ব্যয় বহনে এতে বিজ্ঞাপন দিতে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে উৎসাহিত করবেন এবং নিজেরাও সহযোগিতায় এগিয়ে আসবেন। বিনীত এডমিন! বিকাশ : ০১৬২৯-৯৪১৭৭৩ (পার্সোনাল)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here