Home Careers কাদিয়ানীদের মিথ্যাচার কাদিয়ানীবাদ মুসলিম দেশ সমূহের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি কিভাবে?

কাদিয়ানীবাদ মুসলিম দেশ সমূহের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি কিভাবে?

0
কাদিয়ানীবাদ মুসলিম দেশ সমূহের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি কিভাবে?

ঐতিহাসিক ‘বেলফোর ঘোষণা‘ থেকে কাদিয়ানীবাদ : সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে অশনি সংকেত

ভুমিকা ছাড়াই বলছি। বাংলাদেশে আহমদীয়া তথা কাদিয়ানীবাদ ধীরেধীরে বেলফোর ঘোষণার ঐতিহাসিক পটভূমির দিকেই এগুচ্ছে সম্পূর্ণ পর্দার আড়ালে। এতে জনমনে প্রতিনিয়ত আতংক বাড়ছে বৈ নয়। মানে পশ্চিমা পরাশক্তিগুলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যেভাবে ফিলিস্তিনিদের ভিটামাটি কেড়ে নিয়ে ইহুদীবাদীদের বসাতে ‘বেলফোর ঘোষণা’ নামক চুক্তিতে সম্মত হয়েছিল, অনুরূপ কাদিয়ানীবাদের অনুসারীদের পুনর্বাসিত করতে আরেকটা ‘বেলফোর ঘোষণা’ সময়ের অপেক্ষা মাত্র। আর এই জন্যই যুক্তরাজ্য ভিত্তিক BBC সহ প্রায় সমস্ত গণমাধ্যম কাদিয়ানীবাদের পক্ষে সরব। যা আমরা প্রায়শই দেখছি। তথ্য-প্রমাণাদি সামনে দেখুন।

উল্লেখ্য, বেলফোর ঘোষণা (তারিখ ২ নভেম্বর ১৯১৭) হল, ব্রিটিশ ইহুদি সম্প্রদায়ের একজন নেতা ব্যারন রথচাইল্ডের কাছে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র সচিব আর্থার জেমস বেলফোরের লেখা একটি চিঠি। জায়নিস্ট ফেডারেশন অব গ্রেট ব্রিটেন এন্ড আয়ারল্যান্ড নামক সংগঠনের কাছে পাঠানোর জন্য চিঠিটি তাকে দেয়া হয়। চিঠিটিতে প্রথম স্বাক্ষরকারী ছিলেন যুক্তরাজ্যের সেই পররাষ্ট্র সচিব আর্থা‌র জেমস বেলফোর। এর উদ্দেশ্য, ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে ফিলিস্তিনে ইহুদি জাতীয় আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার জন্য সমর্থনের নিশ্চয়তা। চিঠির মূল কপিটি ব্রিটিশ লাইব্রেরীতে আজো সংরক্ষিত আছে। চিঠিতে লিখা ছিল,

বেলফোর এবং তার প্রেরিত চিঠি
  • His Majesty’s government view with favour the establishment in Palestine of a national home for the Jewish people, and will use their best endeavours to facilitate the achievement of this object, it being clearly understood that nothing shall be done which may prejudice the civil and religious rights of existing non-Jewish communities in Palestine, or the rights and political status enjoyed by Jews in any other country.

ইতিমধ্যে বাংলাদেশের উত্তরাংশে পঞ্চগড়ের সদর জেলা, সাতক্ষীরার সুন্দরবনে কাদিয়ানীবাদের অনুসারীদের অপতৎপরতা চোখে পড়ার মত। দেশের অনেক এলাকার নামও তারা পরিবর্তন করে ‘আহমদনগর’ রেখে দিয়েছে। তারা প্রতিদিনই এই সমস্ত জেলায় শত শত একর জমি ক্রয় করে মাটিভরাট করছে এবং সারা দেশ থেকে তাদের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নিজ অনুসারীদের একত্রিত করতে শুরু করেছে। সত্যমিথ্যা নিশ্চিত করতে তদন্ত হওয়া উচিত, তবেই দেখা যাবে; সেখানে স্থানীয়দের চেয়ে বহিরাগতদের সংখ্যাই অনেক বেশি।

অপ্রিয় হলেও সত্য, এই কাদিয়ানীবাদকে মনে করা হয়, রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে আরেকটি ‘ছায়ারাষ্ট্র’। তার অন্যতম কারণ, কাদিয়ানীবাদের অনুসারীরা দেশের যেই প্রান্তেই থাকুক না, তারা ঢাকার বকশিবাজারের কাদিয়ানীকেন্দ্রের নির্দেশ মানতে বাধ্য, আর্থ-সামাজিক বা পারিবারিক সর্বক্ষেত্রে তারা শুধুমাত্র তাদেরই কেন্দ্রের সীদ্ধান্ত মানতে বাধ্য, কোনোভাবেই নিজেদের মনোনীত প্রতিনিধির (ন্যাশনাল আমীর, সদর আমীর, সদর নায়েবে আমীর) দুয়ার ছেড়ে দেশের কোনো প্রতিনিধির দুয়ারে যাওয়ার অনুমতি নেই। প্রত্যেক কাদিয়ানীবাদের সদস্যকে নিজের আয়ের ১৬% চাঁদা প্রতিমাসে কাদিয়ানীবাদের ফাণ্ডে জমা দেয়া বাধ্যতামূলক। কাদিয়ানীবাদ ত্যাগ করে সম্প্রতি যতজনই ইসলামে ফিরে এসেছেন তাদের প্রত্যেকে এমনই ভয়ংকর তথ্য ফাঁস করেছেন। নও মুসলিম জনাব আনোয়ার সাদাত তাদের মধ্যে অন্যতম। শুনতে ভিডিওটিতে ক্লিক করুন – ক্লিক

উল্লেখ্য, বি-বাড়িয়ার (তিতাস নদীর তীরবর্তী) কান্দিপাড়া গ্রামের নও মুসলিম (সাবেক কাদিয়ানী) আনোয়ার সাদাত সহ এক সাথে ২০ জন কাদিয়ানীবাদ ত্যাগ করেছেন ২০১৬ সালে। তাছাড়া গত ৭ই মার্চ ২০২২ ইং জাতীয় প্রেসক্লাবে আব্দুস সালাম হলে সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী এবং দেশের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে বক্তব্যদানকালে উলামা প্রতিনিধিদলের একজন শীর্ষ স্কলারশিপ বক্তা তার বক্তব্যেও এই বিষয়গুলো তুলে ধরেন এবং সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। জাতীয় প্রেসক্লাবে ঐ বক্তার ২০ মিনিটের বক্তব্যটির ডকুমেন্টারি ভিডিও লিংক – ক্লিক

সুতরাং এতে সুস্পষ্ট হয়ে গেল যে, বিশ্ব পরাশক্তিগুলো ঐতিহাসিক ‘বেলফোর’ যুক্তি মতে যেভাবে ফিলিস্তিনে ইহুদীবাদের পুনর্বাসনে ষড়যন্ত্র করেছিল সেই একই কায়দায় কাদিয়ানীবাদকেও বাংলাদেশে পুনর্বাসন করতে তারা মরিয়া। ইতিমধ্যে তারই প্রক্রিয়া অত্যন্ত সতর্কতার সাথে অনেকদূর অগ্রসরমান বললেও ভুল হবেনা। এর কয়েকটি কারণ হল,

১- কাদিয়ানীবাদের উদ্ভব হয় ১৮৮৯ সালে ব্রিটিশ ভারতে ও বর্তমান পাকিস্তানের লুধিয়ানা শহরে (আহমদ চরিত ৮, প্রকাশকাল মে, ২০০৯)। কিন্তু আজকের এই দিন পর্যন্ত পৃথিবীর কোথাও এরা নির্দিষ্ট কোনো ভুখণ্ডের অধিকারী হতে পারেনি। যদিও আলাদা ভুখণ্ডের উদ্দেশ্যে ১৯৬৪ সালের পর থেকে তাদের তৃতীয় খলীফা মির্যা নাসের আহমদের মাধ্যমে আফ্রিকার নাইজার, ঘানা, তানজানিয়া এবং আলজেরিয়া সহ বেশ কিছু দেশে সংখ্যা বৃদ্ধির জোরালো চেষ্টা বহু আগ থেকে শুরু হয়েছে। বলাবাহুল্য, যখনি তারা কোনো ভুখণ্ডের উপর সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে তখনি তারা যে কোনো মূল্যে হোক ঐ ভুখণ্ডের উপর আধিপত্য কায়েম করতে বদ্ধপরিকর। যেহেতু তাদের লক্ষ্য হচ্ছে, ৩০০ (তিন’শ) বছরের মধ্যে সারা পৃথিবী কব্জায় নিয়ে একই নেতার মাধ্যমে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা। মির্যা কাদিয়ানীর পুত্র ও তাদের কথিত দ্বিতীয় খলীফা বশির উদ্দিন মাহমুদের রচনাবলীর সমষ্টি ‘আনওয়ারুল উলূম‘ এর মধ্যে একদম পরিষ্কার ভাষায় তার পিতার কথিত ইলহামের উদ্ধৃতিতে সারা বিশ্ব কব্জায় নেয়ার ইংগিত উল্লেখ রয়েছে। এই সম্পর্কে মির্যা কাদিয়ানীর রচিত ‘তাযকিরাতুশ শাহাদাতাইন‘ (বাংলায় প্রকাশকাল, ২৭ শে মে ২০০৯ ইং) পৃষ্ঠা নং ৮০ দেখা যেতে পারে।

মির্যা কাদিয়ানীর রচনা

সম্প্রতি পাকিস্তানের সাড়ে ৯ বর্গ মাইল শহর চনাবনগরের দিকে তাকিয়ে দেখলেই ব্যাপারটি পরিষ্কার হয়ে যাবে যে, কাদিয়ানীবাদ সেখানে কত ধূর্ততার সাথে আরেকটি ছায়া-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে; কিভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের সম্পূর্ণ বাহিরে থেকেই নিজেস্ব ফোর্স-মিলিটারি দ্বারা সব কিছু পরিচালনা করছে, জানলে চোখ কপালে উঠে যাবে! জানতে এখনি গুগল করতে পারেন! অতএব, কাদিয়ানীবাদকে যারাই এতদিন শুধুই ধর্মীয়-ইস্যু ভেবে চোখ বন্ধ করে বসেছিলেন এখন নিশ্চয়ই অনুভব করবেন যে, এদের ব্যাপারটি ধর্মীয় ইস্যুতে সীমাবদ্ধ নয়, বরং খতরনাক রাজনৈতিক ইস্যুতেও বিশ্লেষণের দাবী রাখে।

২- আন্তর্জাতিক বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়া’র তথ্যমতে বর্তমানে তারা সারা দুনিয়ার প্রায় ৬৬টি রাষ্ট্রে পরাশক্তিগুলোর লেজুড়বৃত্তি হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। লাহোরি জামাত রয়েছে ১৯টি রাষ্ট্রে। কোথাও ১টি পরিবার, কোথাও মাত্র ৫/১০টি পরিবার। উদাহরণ স্বরূপ প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলীয় দ্বীপ ওশেনিয়া অঞ্চলের দেশ ‘মার্শাল আইসলেন্ড‘। ২০০৯ সাল পর্যন্ত সেখানে কাদিয়ানী জামাতের সদস্য সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ জন। উইকিপিডিয়ায় সেই দেশটিও তালিকাভুক্ত হওয়া থেকে বাদ পড়েনি। যাইহোক, তাদের নেতারা গণমাধ্যমে হরহামেশাই নিজেদেরকে নির্যাতিত-নিপীড়িত হিসেবে জাহির করে যাতে খুব শীঘ্রই বিশ্বব্যাপী মানুষের সহানুভূতি লাভ করতে পারে। অনেকটা ইহুদিবাদী হলোকাস্ট চরিত্রেরই নব্য-সংস্করণ। এর উদ্দেশ্য, বিশ্বের পরাশক্তিগুলো যেন তাদের পুনর্বাসনের জন্যও সেইম ইহুদীদের মতই আরেকটি পৃথক মানচিত্র ও আলাদা রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে। তার প্রমাণ অনেক দেয়া যাবে।

  • উল্লেখ্য, ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। তখন জার্মানীর নাৎসি নেতা প্রেসিডেন্ট এডলফ হিটলার প্রায় ৬০ লক্ষ ইহুদী নিধন করে। ব্রিটিশরা ইহুদী নিধনকে সহজে তুলে ধরার জন্য ‘হলোকাস্ট’ শব্দটি ব্যবহার করা শুরু করে। হলোকাস্ট ইহুদীদের ইতিহাসের অন্যতম বৃহত্তম ট্র্যাজেডি হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে। এই হলোকাস্টের ঘটনা ইহুদীদের জন্য এমন এক রাষ্ট্রের উত্থানের সূচনার পয়েন্ট হয়ে ওঠে যেখানে ইহুদীরা সুরক্ষা এবং শান্তি খুঁজে পেতে পারে।

জ্ঞানীদের নিশ্চয়ই জানা আছে যে, ১৮ ই জুলাই ২০১৯ সালে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রিয়া সাহা যখন আমেরিকায় গিয়ে রাষ্ট্র বিরোধী প্রপাগাণ্ডা ছড়িয়েছিল সেই সময়টিতেই পাকিস্তানের চনাবনগরের আব্দুশ শকুর নামক একজন কাদিয়ানী-ও আমেরিকা গিয়েছিল এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিকট পাকিস্তান গভমেন্টের বিরুদ্ধে প্রিয়া সাহা’র অনুরূপ জঘন্য মিথ্যাচার করেছিল। মুসলিমরা নাকি সেখানে তাদের বাড়ীঘর এবং দোকানপাট জ্বালিয়ে দিয়েছে, ইত্যাদি ইত্যাদি! এরা অদূর-ভবিষ্যতে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধেও একেকজন প্রিয়া সাহার ভুমিকায় উত্তীর্ণ হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিকট পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে একজন পাকিস্তানি কাদিয়ানীর প্রপাগাণ্ডামূলক অভিযোগ দায়ের করার দৃশ্য, তাং ১৮ জুলাই ২০১৯ ইং

সেযাইহোক, পশ্চিমা দুনিয়ার দৃষ্টি এখন বাংলাদেশের দিকে। কারণ একে তো এই দেশটি নানা পীর-তরিকার উর্বর ভূমিতে পরিণত। ফলে এই জায়গার সহজ সরল মানুষগুলোকে প্রতারণামূলক “তরিকা”-এর আড়ালে সুকৌশলে ধর্মান্তরিত করাও সম্ভব। আর এই সুযোগটাই ‘ঈসায়ী-খ্রিস্টানরা’ তরিকাবন্দি নামে যেমন লুপে নিয়েছে; তেমনি কাদিয়ানীবাদের মিশনীরাও নিজেদের সংখ্যাবৃদ্ধিতে সেটি কাজে লাগাচ্ছে।

দ্বিতীয়ত, এই ক্ষেত্রে পশ্চিমা দুনিয়ার ইন্টারেস্ট (ফায়দা) হল, ইসলামের মোড়কে তাদেরই পছন্দের একখানা “নকল ইসলাম” প্রতিষ্ঠা করা, যেমনটি ইহুদীবাদী সাধু সেন্ট পৌল ইঞ্জিলের পরিবর্তে বাইবেল রচনা করে গোটা খ্রিস্টানিটির স্বরূপ বদলে ফেলেছিল। অবাক করা ব্যাপার হল, কাদিয়ানীবাদের নিকটেও পশ্চিমা দুনিয়ার পছন্দের “নকল ইসলাম” এর অপর নাম দেয়া হয়েছে ‘ইসলাম আহমদীয়ত’। পশ্চিমা দুনিয়ার পক্ষে এই কাজ কোনো দুরূহ নয় এই জন্যই যে, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত কাদিয়ানীবাদের পরমবন্ধু। যে দেশটির “কাদিয়ান” (পাঞ্জাব) গ্রাম তাদের তীর্থস্থানও। এখানে বলে রাখা দরকার, পশ্চিমা দুনিয়ার দৃষ্টি ইতিপূর্বে যদিও পাকিস্তানের দিকে ছিল কিন্তু ৭ই সেপ্টেম্বর ১৯৭৪ সালে পাক সরকার তাদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম সংখ্যালঘু ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে পশ্চিমারা সেই দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেয় আমাদের দিকে।

ইসরায়েলে নিয়োজিত কাদিয়ানী আমীর (ডানে কালোটুপি) শরীফ উদাহ -এর সাথে ভারত সরকার নরেন্দ্র মোদির করমর্দন। পেছনে দাঁড়িয়ে আছেন ইসরাইলি প্রেসিডেন্ট নেতা নিয়াহু।

৩- কাদিয়ানীবাদের প্রতিষ্ঠাতা মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (১৮৩৯-১৯০৮)। তারই বিভিন্ন রচনাবলী হতে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায় যে, সে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদের স্বার্থ রক্ষাকারী ও একনিষ্ঠ এজেন্ট হিসেবে জীবনোৎসর্গকারী ছিল। এর বহু প্রমাণ দেয়া যাবে। তারই ভাষ্যমতে, “আমি বরাবরই আমার মত প্রকাশ করেছি যে, ইসলামের দুইটি অংশ। প্রথমত, আল্লাহর আনুগত্য করা। দ্বিতীয়ত, এই (ব্রিটিশ) সরকারের আনুগত্য করা যে নিরাপত্তা দিয়েছে।” (মির্যা কাদিয়ানীর রচনাসমগ্র ‘রূহানী খাযায়েন’ খ-৬/পৃ-৩৮০)।

অপ্রিয় হলেও সত্য, মির্যা কাদিয়ানী নিজেকে ব্রিটিশের লাগানো চারাগাছ বলে পরিচিত হতেও পছন্দ করতেন। এ সম্পর্কে তার সম্পূর্ণ বক্তব্যটি এরকম,

“নিজেদের হাতে রোপিত এই চারাগাছটির ব্যাপারে খুব সতর্কতা ও অনুসন্ধানের সাথে অগ্রসর হবেন এবং আপনার অধীনস্তদের বলবেন তারা যেন এই পরিবারের ত্যাগ ও নিষ্ঠার কথা মনে করে আমার দলের প্রতি সদয় দৃষ্টি জ্ঞাপন করেন। আমাদের পরিবার ইংরেজ সরকারের কল্যাণে নিজেদের খুন বইয়ে দিতে ও জীবন দিতেও দ্বিধা করেনি আর না এখনো দ্বিধা করছে।” (মাজমু’আয়ে ইশতিহারাত খ-৩/পৃ-২১-২২ নতুন এডিশন ও অনলাইন ভার্সন)।

এতেই বুঝা যায় যে, ব্রিটিশদের জন্য তার আত্ম-ত্যাগের কোনো শেষ ছিলনা। কাজেই ব্রিটিশরা অতটা নিমকহারাম নয় যে, তারা তার সেই ত্যাগের কথা ভুলে যাবে, কোনো প্রতিদান দেবেনা! আর তাই আরেকটি ‘বেলফোর ঘোষণা’ চুক্তি হওয়াও কোনো বিচিত্র নয়।

৪- বর্তমানে যুক্তরাজ্যের ডেভিড ক্যামেরন সরকারের কনজার্ভেটিভ পার্টিতে প্রভাবশালী এমনও অনেকে রয়েছে যারা কাদিয়ানীবাদের শুধু সমর্থক নয়, বরং অনুসারীও। লর্ড তারিক মাহমুদ আহমদ। (জন্ম ৩ই এপ্রিল ১৯৬৮ইং, লন্ডন) তাদেরই মধ্য হতে অন্যতম। তার পৈত্রিক নিবাস ভারতের পাঞ্জাব। তিনি যুক্তরাজ্যের ডেভিড ক্যামেরন সরকারের কনজার্ভেটিভ পার্টির একজন মন্ত্রী। তিনি জন্মসূত্রে কাদিয়ানী এবং ব্রিটেনের কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের একজন সদস্য। একই সাথে ব্রিটেনের দক্ষিণ এশিয়া, জাতিসঙ্ঘ ও কমনওয়েলথ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীও।

লর্ড তারেক মাহমুদ আহমদে

উইকিপিডিয়ার তথ্যানুসারে তিনি সাধারণ কোনো কাদিয়ানী নন, বরং তিনি কাদিয়ানী জামাতের একজন রক্ষণশীল ঘরানার ব্যক্তি এবং তিনি ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সহ-সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন এএমওয়াই নামের একটি ব্রিটিশ ‘কাদিয়ানী যুব সংগঠনের‘। এই লর্ড তারিক মাহমুদ বাংলাদেশে যতবারই এসেছেন তিনি ততবারই ঢাকার বকশিবাজারস্থ কাদিয়ানীবাদের আস্তানা পরিদর্শন করেছেন, কাদিয়ানী নেতাদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। এখানে প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক যে, লর্ড তারিক মাহমুদ বাংলাদেশে এত ঘনঘন কী উদ্দেশ্যে সফর করছেন? এর অন্তরালে সাবেক যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র সচিব আর্থার জেমস বেলফোরের অনুরূপ নতুন কোনো নীল নকশার ইংগিত নয় তো?

৫- কাদিয়ানীবাদের মৌলিক বিশ্বাস হচ্ছে, তাদের মতবাদের বাহিরে কেউই মুসলমান নন। কাদিয়ানীবাদের কথিত দ্বিতীয় খলীফা মির্যাপুত্র বশির উদ্দিন মাহমুদের রচনা থেকে তুলে দিচ্ছি, দেখুন! তিনি লিখেছেন, کل مسلمان جو حضرت مسیح موعود کی بیعت میں شامل نہیں ہوئے خواہ انہوں نے حضرت مسیح موعود کا نام بھی نہیں سنا وہ کافر اور اسلام سے خارج ہیں۔ (آئینہ صداقت ; انوار العلوم) অর্থাৎ সকল মুসলমান, যারা হযরত মাসীহে মওউদ (মির্যা গোলাম আহমদ)-এর বাইয়েতে শামিল হয়নি, চাই তারা হযরত মাসীহে মওউদের নামও না শুনে থাকুক; সবাই কাফের এবং ইসলাম থেকে খারিজ। (আয়নায়ে সাদাকাত, আনওয়ারুল উলূম ৬/১১০; লিখক মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ)।

পশ্চিমা বিশ্ব মূলত এই জন্যই এদেরকে দুনিয়ার সামনে ‘মূলধারার মুসলমান’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতে চায় যাতে কনভার্টেট মুসলিমরা “কাদিয়ানীবাদ”-কেই মূলধারার ইসলাম মনে করে প্রতারিত হয় এবং একটি অন্ধকার থেকে বেরিয়ে এসে যেন আরেকটি অন্ধকারে ঢুকে পড়ে। ভেবে দেখুন তো, এটি ইসলামের বিরুদ্ধে কত বড় খতরনাক চক্রান্ত! কত নিকৃষ্ট নিরব ষড়যন্ত্র! ব্রিটেনে এমন কিছু অমুসলিম কাদিয়ানীবাদকে “ইসলাম” ভেবে প্রতারিত হওয়ার একটি ভিডিও দেখুন। লিংক – ক্লিক

পরিশেষে, পশ্চিমা দুনিয়া কাদিয়ানীবাদের পৃষ্ঠপোষকতা করাই প্রকারান্তরে ইসলাম এবং মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার শামিল। একথা আমরা যত তাড়াতাড়ি বুঝতে পারব ততই আমাদের জন্য বিপদ আসান হবে। প্রিয় দেশ-প্রেমিকবন্ধুরা! আমি বিষয়টির প্রতি সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, কলামিস্ট ও সংগ্রামী ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। যাতে অন্তত দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় হলেও বিষয়টিকে সিরিয়াসভাবে নেন। বলে রাখতে চাই, আমি এই প্রিয় মাতৃভূমিকে ভালোবাসি বলেই লিখাটি লিখতে বাধ্য হয়েছি। আল্লাহর নিকট দোয়া করছি, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সমস্ত চক্রান্তের শিকড় উপড়ে ফেলতে আমরা যেন সব সময় তৈরি থাকতে পারি, ইনশাআল্লাহ।

আল্লাহ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে সব ধরণের ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করুন। আমীন। (লিখাটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন)।

ছবি : বেলফোর ও তার প্রেরিত চিঠি। উইকিপিডিয়া থেকে সংগৃহীত।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

Previous article মির্যা কাদিয়ানী কি ইসলামের খাদেম?
Next article জাফরান রং-এর কাপড় পরার শরয়ী হুকুম
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! এটি সম্পূর্ণ দ্বীনি ও অলাভজনক একটি ওয়েবসাইট। প্রতি বছর এটির ডোমেইন ও হোস্টিং ফি হিসেবে আমাকে এর ব্যয় বহন করতে হচ্ছে। যদি উক্ত ব্যয় বহন করতে অপারগ হই তাহলে এই সাইটটি নিশ্চিত বন্ধ হয়ে যাবে। সেহেতু আপনাদের সবার নিকট আবেদন থাকবে যে, আপনারা সাইটটির উক্ত ব্যয় বহনে এতে বিজ্ঞাপন দিতে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে উৎসাহিত করবেন এবং নিজেরাও সহযোগিতায় এগিয়ে আসবেন। বিনীত এডমিন! বিকাশ : ০১৬২৯-৯৪১৭৭৩ (পার্সোনাল)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here