Home মসীহ ঈসা জাফরান রং-এর কাপড় পরার শরয়ী হুকুম

জাফরান রং-এর কাপড় পরার শরয়ী হুকুম

0
জাফরান রং-এর কাপড় পরার শরয়ী হুকুম

একটি অজ্ঞতাপূর্ণ সংশয় ও তার দালিলিক জবাব

প্রশ্ন : বুখারীর একটি হাদীসে এসেছে, পুরুষদের জন্য জাফরানের রং-এর কাপড় পরিধান করা নিষিদ্ধ। তাহলে ঈসা (আ.)-এর ঐ দুইখানা চাদরের রং জাফরানের কিভাবে হতে পারে?

হাদীসটি এই, عن انس قال نهى النبى صلى الله عليه و سلم أن يتزعفر الرجل অর্থ- আনাস (রা.) হতে বর্ণিত আছে, নবী (সা.) পুরুষদের জাফরানী রং-এর কাপড় পরতে নিষেধ করেছেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৮৪৬, মুসলিম ৩৭/২৩, হাদীস ২১০১, আহমদ ১২৯৪১; আধুনিক প্রকাশনী ৫৪২০, ইফা ৫৩১৬)। হাদীসটির সঠিক তাৎপর্য কী? তবে কি পুরুষদের জন্য জাফরানী রং-এর কাপড় পরিধান করা শরীয়তে নিষিদ্ধ বুঝাল? এ সম্পর্কে জানাবেন।

উত্তর : এই হাদীসের সঠিক মর্মার্থ বিশিষ্ট হাদীস বিশারদগণ এভাবে দিয়েছেন যে, نهى النبي -صلى الله عليه وسلم- أن يصبغ الرجل جسده أو ثيابه بالزعفران، وكان ذلك من طيب النساء، فنهي الرجال عن ذلك منعًا من التشبه অর্থ – ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরুষের শরীর ও কাপড়কে জাফরান দ্বারা রঙ্গিন করতে নিষেধ করেছেন। এ ছিল মহিলাদের সাজ সজ্জা। তাই পুরুষদেরকে এ থেকে নিষেধ করার কারণ হচ্ছে (মহিলাদের) সাদৃশ্য থেকে বিরত রাখা।’

এতে বুঝা যায় যে, কাপড়টি জাফরানী রং-এর বুনানো হওয়াকে নিষেধ করেনি, বরং পরিধানকারী আপনা পরিধেয় বস্ত্রে জাফরান নামক সুগন্ধী উপাদান মিশানো কিংবা সাজসজ্জা গ্রহণ করা, এ সমস্ত কার্যকলাপকেই নিষেধ করা উদ্দেশ্য। বিশিষ্ট যুগ ইমামগণ থেকেও হাদীসটির অনুরূপ তাৎপর্য পাওয়া যায়। যেমন, ইমাম তিরমিযি (রহ.), ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) উনারা লিখেছেন, এই হাদিসে ‘আই-ইয়াতাজা’ফারার রাজুল’ (ان يتزعفر الرجل) দ্বারা উদ্দেশ্যে হচ্ছে, পুরুষরা তাদের শরীরকে জাফরান দ্রব্য দ্বারা সুগন্ধমণ্ডিত করা। এটিই অপছন্দনীয়। হাদীসে জাফরানী রং-এর কাপড় পরিধান করা নিষিদ্ধ বুঝায়নি, বরং পুরুষগণ নিজেদের আকর্ষণীয় করার জন্য জাফরান দ্রব্য দ্বারা শরীরকে সুগন্ধমণ্ডিত করতে নিষেধ করা হয়। এই ব্যাখ্যা আরো বহু হাদীস বিশারদ দিয়ে গেছেন। ইমাম তিরমিযি (রহ.) সংকলিত সুনানে তিরমিযি’র ৪র্থ খণ্ডের ৪৪৮ নং পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য। আর ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) আরো কী লিখেছেন দেখুন, وأما نهيه أن يتزعفر الرجل : فالمراد به أن يُخَلِّق بَدَنَه بالزعفران [أي : يتطيب به ، والخلوق هو طيب مركب فيه زعفران] ، فإن طيب الرجل ما ظهر ريحه وخفي لونه. انتهى من “شرح عمدة الفقه”

অর্থ—’এই হাদীস দ্বারা উদ্দেশ্য, পুরুষগণ জাফরান দ্বারা নিজেদের শরীর সুগন্ধমন্ডিত করা। সুগন্ধকারক বস্তুর অন্যতম উপাদান হচ্ছে, জাফরান। কেননা পুরুষের সুগন্ধির মধ্যে ঘ্রাণ প্রকাশ পায় কিন্তু রং অস্পষ্ট থাকে।’ (শরহে উমদাতুল ফিকহ, পৃষ্ঠা ৩৪৩; আরবী অভিধান, তাজুল উরূস ২৫/২৬০)।

বলাবাহুল্য, হাদীসটির উক্ত অনুবাদের মধ্যে “কাপড়” শব্দ উল্লেখ করা ঠিক হয়নি। অনুবাদকের ভুলের কারণেই সম্ভবত এইধরণের প্রশ্ন উঠেছে।

আরো সহজে বুঝার জন্য বলছি, হাদীসটির উদ্দেশ্য হল, পুরুষদেরকে ‘জাফরান’ দ্রব্য ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে। মনে রাখতে হবে, সাজ-সজ্জার জন্য সুগন্ধি দ্রব্য ‘জাফরান’ ব্যবহার আর জাফরানী রং-এর বুনানো কাপড় পরিধান, দুটি এক জিনিস নয়। বুঝার জন্য ছোট্ট আরেকটি উদাহরণ দিচ্ছি, হাদীসে স্বর্ণ ব্যবহার করতে পুরুষকে নিষেধ করা হয়। এখন তাই বলে কি স্বর্ণের রং-এর বুনানো (সোনালী কালারের) জামা কাপড় পরিধান করাও নিষিদ্ধ হবে? নিশ্চয়ই না।

তারপর বলে রাখা জরুরি যে, ঈসা (আ.)-এর দ্বিতীয়বার আগমনকালে তাঁর পরনে যে দুটি চাদর থাকবে সেটির আরবী শব্দ হচ্ছে, بين مهرودتين (বাইনা মাহরূদাতাইন)। (ক্লিক) হাদীস বিশারদগণের মাঝে এটির তাৎপর্য নির্ণয়ের ক্ষেত্রে দুটি প্রসিদ্ধ মত পরিলক্ষিত হয়। কেউ কেউ বলেছেন, এর দ্বারা চাদর দুটির রং জাফরানের রং-এর হওয়া উদ্দেশ্য। তবে বিশিষ্ট হাদীস বিশারদ ইমাম আবু মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ ইবনু মুসলিম ইবনু কুতাইবাহ আদ-দিনাওয়ারী রহ. (মৃত্যু ৮৮৯ খ্রিস্টাব্দ) এটির ব্যাখ্যায় صفراوين (ছফরাওয়াইন) তথা দুটি হলুদ বর্ণের। উল্লেখ্য, মির্যা কাদিয়ানী নিজেও এর অর্থ ‘দুটি হলুদবর্ণের চাদর‘ নিয়েছেন। দেখুন, তাযকিরাতুশ শাহাদাতাইন (বাংলা অনূদিত) পৃষ্ঠা নং ৪৯। স্ক্রিনশট –

জাফরানী রং বা কালার

এই যে ছবিতে জাফরানের রং দেখতে পাচ্ছেন। এই কালারের বুনানো জামা-কাপড় বা পরিধেয় বস্ত্র ব্যবহার করা নিষিদ্ধ নয়। কারণ হাদীসের শব্দটি হচ্ছে, ان يتزعفر الرجل তথা পুরুষের জাফরান ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। আশাকরি উত্তর পেয়েছেন।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here