খতমে নবুওয়ত আর খতমে কুরআন ও সংশয় নিরসন

0
খতমে নবুওয়ত আর খতমে কুরআন ও সংশয় নিরসন

খতমে নবুওয়ত আর খতমে কুরআন! কাদিয়ানীদের উদ্দেশ্যমূলক আবোল তাবোল যুক্তির প্রতিউত্তরে

কাদিয়ানী – মোল্লারা(!) নবুওয়ত শেষ বুঝাতে ‘খতমে নবুওয়ত’ কথাটি খুব বলে থাকে; তাহলে ‘খতমে কুরআন’ এর কী অর্থ? অথচ প্রতি রমাযানে হাজারো হাফেজে কুরআন ‘খতমে কুরআন’ করছেন!

মুসলমান – জবাবটা কি কাদিয়ানীদের প্রধান গুরু মির্যা গোলাম আহমদ এর রচনা থেকে দেব?

কাদিয়ানী – হুম, আচ্ছা দিন!

মুসলমান – মির্যা গোলাম আহমদ নিজেও প্রকাশ্যে নবুওয়তের দাবী করার পূর্বে (আনুমানিক ১৮৯৭ সালে) লিখেছে,

  • ان سب باتوں کو مانتا ہوں جو قرآن اور حديث کی رو سے مسلم الثبوت ہیں. اور سیدنا مولانا حصرت محمد مصطفیٰ صلى الله عليه وسلم ختم المرسلين کے بعد کسی دوسرے مدعی نبوت اور رسالت کو کازب اور کافر جانتا ہوں. میرا یقین ہے کہ وحی رسالت حضرت آدم صفی اللہ سے شروع ہوئی اور جناب رسول اللہ محمد مصطفیٰ صلی اللہ علیہ و سلم پر ختم ہو گئی

(উচ্চারণ) “উন সব বাতূ কো মানতা হোঁ যূ কুরআন অওর হাদীস কি রো ছে মুসাল্লামুছ ছবূত হেঁ অওর সাইয়েদানা ওয়া মওলানা হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খতমুল মুরসালীন কে বা’দ কেসি দোসরে মুদ্দায়ীয়ে নবুওয়ত অওর রেসালত কো কাজিব অওর কাফের জানতা হোঁ। মেয়েরা একীন হে, কে ওহীয়ে রেসালত হযরত আদম ছফিউল্লাহ চে শুরু হুয়ি অওর জনাবে রাসূলুল্লাহ মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফর খতম হো গি।”

অনুবাদ, কুরআন হাদীস দ্বারা যেসব বিষয় দৃঢ়ভাবে প্রমাণিত আমি সেসব বিষয় মান্য করি। সায়্যেদিনা মওলানা হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাতমুল মুরসালিন)’র পরে কেউ নবুওয়ত আর রিসালতের দাবি করলে সে মিথ্যাবাদী ও কাফের। আমার ইয়াক্বিন (বিশ্বাস), ওহী এবং রেসালত ছফিউল্লাহ হযরত আদম (আ.) থেকে শুরু হয়ে জনাব রাসূলুল্লাহ মুহাম্মদ মুস্তফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)’র উপর সমাপ্ত হয়ে গেছে। (মাজমু’আয়ে ইশতিহারাত ১/২৩০-৩১; উর্দূ এডিশন ও অনলাইন ভার্সন)।

মির্যা কাদিয়ানীর রচনা-সংকলন ‘মাজমু’আয়ে ইশতিহারাত ১/২৩০-৩১

এখন বলেন, জবাব কি আরো লাগবে?

কাদিয়ানী – বুঝাই দেন!

মুসলমান – মির্যার উপরিউক্ত রচনায় পরিষ্কার করে বলা হয়েছে যে, ওহী-রেসালাত হযরত আদম (আ.) থেকে শুরু এবং মুহাম্মদ মুস্তফা (সা.) পর্যন্ত এসে শেষ বা সমাপ্ত।

আর এটাকেই এককথায় ‘খতমে নবুওয়ত’ বলা হয়। অর্থাৎ নবুওয়তের ধারাক্রম মুহাম্মদ মুস্তফা (সা.) পর্যন্ত এসে শেষ বা সমাপ্ত। এবার আসি ‘খতমে কুরআন’ নিয়ে।

‘খতমে কুরআন’ এর সাধারণ অর্থ হচ্ছে কুরআন পাঠের সমাপ্তি। আরেকটু সহজ করে বলছি, যখন কেউ পবিত্র কুরআনের ১১৪টি সূরার মধ্য হতে সূরা ফাতেহা থেকে শুরু করে সর্বশেষ সূরা—সূরা আন নাস পর্যন্ত এসে পৌঁছে তখন তাকে ‘খতমে কুরআন’ বা কুরআন পাঠের শেষ বা সমাপ্তি বলা হয়।

এখন প্রশ্ন হল, ‘খতমে কুরআন’ এর পরেও কি ভিন্ন ধরণের কথিত জিল্লি বুরুজি খতমের নতুন কোনো ধারণা থাকতে পারে? অবশ্যই না। তাহলে ‘খতমে নবুওয়ত’ অর্থাৎ ওহীয়ে নবুওয়তের ক্রমধারা শেষ বা সমাপ্তির পরেও মির্যায়ী উম্মতেরা ভিন্ন ধরণের কথিত জিল্লি বুরুজি নবুওয়তের নতুন কোনো ধারণা কোত্থেকে আমদানি করে?

আমি জানিনা, কাদিয়ানীরা খতমে কুরআন এর কনসেপ্ট দিয়ে ‘খতমে নবুওয়ত’ এর বুনিয়াদি শিক্ষার বিরুদ্ধে আঙ্গুল তুলে কোন যুক্তিতে?

বলাবাহুল্য, প্রতি রমাযানে হাজারো হাফেজে কুরআন ‘খতমে কুরআন’ করার সাথে ‘খতমে নবুওয়ত’ এর সম্পর্ক ঠিক সেভাবেই যেভাবে উপরে পেশ করা হয়েছে। কাদিয়ানীদের জন্য দুঃসংবাদ এইজন্য যে, ‘খতমে কুরআন”-কে তারা যে আঙ্গিকে বিশ্লেষণ করে ‘খতমে নবুওয়ত’ এর মুখোমুখি করে দাঁড় করতে চাচ্ছে সেটি সম্পূর্ণ হাস্যকর। কেননা ‘খতমে কুরআন’-এর সম্পর্ক উম্মাহার আমলের সাথে, যার ধারাক্রম চিরতরে রুদ্ধ—এভাবে কোথাও বলা নেই। অপরদিকে ‘খতমে নবুওয়ত’ এর বিষয়টির সম্পর্ক ঈমানীয়তের সাথে। আর সেটি রাসূল (সা.)-এর পবিত্র বাণী لا نبى بعدى (আমার পরে আর কোনো নবী নেই) থেকেই চয়িত। অসংখ্য হাদীস দ্বারা সেটির ধারাক্রম চিরতরে রুদ্ধ—এভাবেই বলা আছে। সুতরাং দুটি দুই জিনিস। খতমে নবুওয়ত এর উপর ২০টি সহীহ বর্ণনা – পড়া যেতে পারে।

আল্লাহ আমাদেরকে সহীহ বুঝ দান করুন।

জনৈক কাদিয়ানীর প্রশ্ন, আপনি শুধু একটা প্রশ্নের উত্তর দিন, সব সমস্যার সমাধান হবে। শেষ যুগে আগমনকারী ঈসা (আ.) নবী হয়ে আসবেন কি না? উত্তর এখানে

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here