সহীহ হাদীস ও মুহাদ্দিসগণের মতে টাকা (মূদ্রা) দ্বারা ‘‘সাদাকাতুল ফিতর’’ আদায়ের শরয়ী হুকুম ও ভ্রান্তি নিরসন :
মাহে রমজানে অনেক ব্যস্ততা। তাই এই বিষয়ে খুব সংক্ষিপ্ত আলোচনা করবো। ইনশাআল্লাহ। বর্তমানে নতুন করে বাজারে একটি কথা খুব শুনা যাচ্ছে যে, টাকা দিয়ে ফেতরা দেয়া নাকি জায়েজ নেই। তাদের যুক্তি হল, ‘সহীহ বুখারীর মাঝে আছে ফিতরা দিতে হবে গম, খেজুর, কিসমিস, পনীর ইত্যাদি খাদ্য দ্রব্য দিয়ে।’ তারা এখান থেকে বলতে চাচ্ছে যে, টাকা দিয়ে আদায় করলে আদায় হবে না! আসুন জেনে নিই তাদের এই সমস্ত কথাবার্তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য!
প্রথমত, গম, কিসমিস, পনীর ইত্যাদি খাদ্য দ্রব্য দিয়ে ফিতরা আদায় সম্পর্কে :-
ﻋَﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﻋُﻤَﺮَ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻬُﻤَﺎ، ﻗَﺎﻝَ : « ﻓَﺮَﺽَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺯَﻛَﺎﺓَ ﺍﻟﻔِﻄْﺮِ ﺻَﺎﻋًﺎ ﻣِﻦْ ﺗَﻤْﺮٍ، ﺃَﻭْ ﺻَﺎﻋًﺎ ﻣِﻦْ ﺷَﻌِﻴﺮٍ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻌَﺒْﺪِ ﻭَﺍﻟﺤُﺮِّ، ﻭَﺍﻟﺬَّﻛَﺮِ ﻭَﺍﻷُﻧْﺜَﻰ، ﻭَﺍﻟﺼَّﻐِﻴﺮِ ﻭَﺍﻟﻜَﺒِﻴﺮِ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻤُﺴْﻠِﻤِﻴﻦَ، ﻭَﺃَﻣَﺮَ ﺑِﻬَﺎ ﺃَﻥْ ﺗُﺆَﺩَّﻯ ﻗَﺒْﻞَ ﺧُﺮُﻭﺝِ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓِ »
অর্থ : হযরত ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, প্রত্যেক গোলাম, আযাদ, পুরুষ, নারী, প্রাপ্ত বয়স্ক, অপ্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিমের উপর রাসূলুল্লাহ (সা.) ﺯَﻛَﺎﺓَ ﺍﻟﻔِﻄْﺮِ সাদকাতুল ফিতর হিসাবে খেজুর হোক অথবা যব হোক এক সা’ পরিমাণ আদায় করা আবশ্যক করেছেন এবং লোকজনের ঈদের সালাতে বের হওয়ার পূর্বেই তা আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। (বুখারী-২/১৩০, হাদীস-১৫০৫)।
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦُ ﻳُﻮﺳُﻒَ، ﺃَﺧْﺒَﺮَﻧَﺎ ﻣَﺎﻟِﻚٌ، ﻋَﻦْ ﺯَﻳْﺪِ ﺑْﻦِ ﺃَﺳْﻠَﻢَ، ﻋَﻦْ ﻋِﻴَﺎﺽِ ﺑْﻦِ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦِ ﺳَﻌْﺪِ ﺑْﻦِ ﺃَﺑِﻲ ﺳَﺮْﺡٍ ﺍﻟﻌَﺎﻣِﺮِﻱِّ، ﺃَﻧَّﻪُ ﺳَﻤِﻊَ ﺃَﺑَﺎ ﺳَﻌِﻴﺪٍ ﺍﻟﺨُﺪْﺭِﻱَّ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ، ﻳَﻘُﻮﻝُ : « ﻛُﻨَّﺎ ﻧُﺨْﺮِﺝُ ﺯَﻛَﺎﺓَ ﺍﻟﻔِﻄْﺮِ ﺻَﺎﻋًﺎ ﻣِﻦْ ﻃَﻌَﺎﻡٍ، ﺃَﻭْ ﺻَﺎﻋًﺎ ﻣِﻦْ ﺷَﻌِﻴﺮٍ، ﺃَﻭْ ﺻَﺎﻋًﺎ ﻣِﻦْ ﺗَﻤْﺮٍ، ﺃَﻭْ ﺻَﺎﻋًﺎ ﻣِﻦْ ﺃَﻗِﻂٍ، ﺃَﻭْ ﺻَﺎﻋًﺎ ﻣِﻦْ ﺯَﺑِﻴﺐٍ»
অর্থ : হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা এক সা’ পরিমাণ খাদ্য অথবা এক সা’ পরিমাণ যব অথবা এক সা’ পরিমাণ খেজুর অথবা এক সা’ পরিমাণ পনির অথবা এক সা’ পরিমাণ কিসমিস দিয়ে ﺯَﻛَﺎﺓَ ﺍﻟﻔِﻄْﺮِ সাদাকাতুল ফিতর আদায় করতাম। (সহীহ বুখারী-২/১৩১, হাদীস-১৫০৬)।
উল্লেখ্য যে, উক্ত দুটি হাদীস দ্বারা একথা স্পষ্ট যে, কোনো ব্যক্তি চাইলে মাল দ্বারা সাদাকাতুল ফিতর আদায় করতে পারবে। কিন্তু টাকা দ্বারা আদায় করা ভুল এধরণের কোনো আলোচনা এখানে নেই, বরং ইমাম বুখারী (রহ.), ইবনে আবী শায়বা (রহ.) এবং ইমাম বায়হাকী (রহ.) উনারা সকলে অপরাপর সহীহ হাদীস এবং সাহাবীদের আছার সমূহের আলোকে বলেছেন যে, টাকা দিয়ে ফিতরা দিলেও আদায় হয়ে যাবে। নিচে দেখুন বিস্তারিত।
- দিনার দিরহাম সম্পর্কে পাঠকের জ্ঞাতার্থে সংক্ষেপে লিখছি, দিরহাম হল রৌপ্যমুদ্রা। সাধারণত ৩ গ্রাম রূপা দিয়ে ১ দিরহাম তৈরি করা হয়। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সাম্রাজ্যে রূপার পরিমানে হেরফের হয়েছিল। তাই আমরা এর একাধিক মান পেয়ে থাকি। যেমন উসমানি খিলাফত আমলে ১ দিরহাম ৩.২০৭ গ্রাম রূপা দিয়ে তৈরি করা হত। দিরহামের মান নির্ধারণে ফকিহ ইমামদের মতভেদ রয়েছে। যেমন হানাফি ফকিহগণের গবেষণায় ১ দিরহামের মান ৩.১২৫ গ্রাম রূপা। আর অন্য ইমামগণের মতে ২.৯৬ গ্রাম রূপা। এছাড়াও অনেকের মতে ২.৯৭৫ গ্রাম রূপা হল সঠিক মান। যাইহোক আমরা ধরব, ১ দিরহাম = ৩ গ্রাম রূপা। আর ১ গ্রাম রূপার বর্তমান বাজার মূল্য হল ৪৬.২৬ টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারে রূপার মূল্য ১ গ্রাম= ৪৬.২৬ টাকা, কিন্তু দেশীয় বাজারে ১ গ্রাম= ৯০ টাকা, আমরা এখানে আন্তর্জাতিক মূল্যে হিসেব করে পেলাম, ১ দিরহাম = ১৩৯ টাকা।
- পাঠকবৃন্দ! দিনার দিরহাম সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানুন।
দ্বিতীয়ত, ফিতরা টাকা (মুদ্রা) দ্বারা আদায় করা সম্পর্কে :-
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺃَﺑُﻮ ﺃُﺳَﺎﻣَﺔَ، ﻋَﻦْ ﺯُﻫَﻴْﺮٍ، ﻗَﺎﻝَ : ﺳَﻤِﻌْﺖُ ﺃَﺑَﺎ ﺇِﺳْﺤَﺎﻕَ، ﻳَﻘُﻮﻝُ : ﺃَﺩْﺭَﻛْﺘُﻬُﻢْ ﻭَﻫُﻢْ ﻳُﻌْﻄُﻮﻥَ ﻓِﻲ ﺻَﺪَﻗَﺔِ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ ﺍﻟﺪَّﺭَﺍﻫِﻢَ ﺑِﻘِﻴﻤَﺔِ ﺍﻟﻄَّﻌَﺎﻡِ অর্থাৎ হযরত যুহাইর (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূ ইসহাক (রহ.) থেকে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, আমি সাহাবায়ে কেরাম (রা.) কে এই অবস্থায় পেয়েছি যে, তারা রমজানে সাদাকায়ে ফিতর খাবারের বিনিময়ে টাকা দ্বারা আদায় করতেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা-২/৩৯৮, হাদীস-১০৩৭১, এর সনদের মান সহীহ তথা বিশুদ্ধ)। তেমনিভাবে ‘ইবনে আবী শায়বা’-এর হাদীসগ্রন্থে টাকা দ্বারা সাদাকায়ে ফিতর আদায় করার ব্যাপারে হযরত হাসান বসরী (রহ.)-এর আছার এইভাবে বর্ণিত রয়েছে যে –
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻭَﻛِﻴﻊٌ، ﻋَﻦْ ﺳُﻔْﻴَﺎﻥَ، ﻋَﻦْ ﻫِﺸَﺎﻡٍ، ﻋَﻦِ ﺍﻟْﺤَﺴَﻦِ، ﻗَﺎﻝَ : ﻟَﺎ ﺑَﺄْﺱَ ﺃَﻥْ ﺗُﻌْﻄِﻲَ ﺍﻟﺪَّﺭَﺍﻫِﻢَ ﻓِﻲ ﺻَﺪَﻗَﺔِ ﺍﻟْﻔِﻄْﺮِ অর্থ : ইবনে আবী শায়বা (রহ.) বলেন, ওয়াকী আমাকে সূফিয়ান, হিশাম এবং হাসান বছরী সূত্রে জানিয়েছেন যে, হযরত হাসান বছরী (রহ.) বলেছেন, টাকা দ্বারা সাদাকায়ে ফিতর আদায় করার দ্বারা কোনো সমস্যা নেই। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা-২/৩৯৮, হাদীস-১০৩৭০, সনদের মান সহীহ)। অনুরূপভাবে হযরত উমর বিন আব্দুল আজীজ (রহ.) এর একখানা পত্রও উল্লেখ রয়েছে। যেমন,
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻭَﻛِﻴﻊٌ، ﻋَﻦْ ﻗُﺮَّﺓَ، ﻗَﺎﻝَ : ﺟَﺎﺀَﻧَﺎ ﻛِﺘَﺎﺏُ ﻋُﻤَﺮَ ﺑْﻦِ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟْﻌَﺰِﻳﺰِ ﻓِﻲ ﺻَﺪَﻗَﺔِ ﺍﻟْﻔِﻄْﺮِ : ﻧِﺼْﻒُ ﺻَﺎﻉٍ ﻋَﻦْ ﻛُﻞِّ ﺇِﻧْﺴَﺎﻥٍ ﺃَﻭْ ﻗِﻴﻤَﺘُﻪُ ﻧِﺼْﻒُ ﺩِﺭْﻫَﻢٍ অর্থাৎ ইবনে আবী শায়বা বলেন, ওয়াকী (রহ.) কুররাহ সূত্রে আমাদেরকে জানিয়েছেন যে, সাদাকাতুল ফিতর সম্পর্কে হযরত উমর ইবনে আব্দুল আজীজ (রহ.) এর একখানা পত্র আমাদের নিকট এসে পৌঁছে। সেখানে সাদাকাতুল ফিতর মাথাপিছু এক ছা’ অথবা তার সমপরিমাণ মূল্য অর্ধ-দিরহাম আদায় করার নির্দেশ ছিল। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা-২/৩৯৮, হাদীস-১০৩৬৯, সনদের মান সহীহ)। পূর্বের হিসেব অনুযায়ী অর্ধ-দিরহামের বর্তমান বাজার মূল্য হল, প্রায় ৭০ টাকা। উল্লেখ্য, এই বছর (২০২২ ইং) মাথাপিছু সাদাকাতুল ফিতর নির্ধারণ করা হয়েছে সর্বনিম্ন ৭০ বা ৭৫ টাকা।
এছাড়াও বিখ্যাত ইমাম, ইবনে আবী শায়বা কৃত সংকলিত মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা এর ২/৩৯৮ এর মাঝে অনুচ্ছেদ স্থাপন করা হয় এভাবে যে- ﻓِﻲ ﺇِﻋْﻄَﺎﺀِ ﺍﻟﺪَّﺭَﺍﻫِﻢِ ﻓِﻲ ﺯَﻛَﺎﺓِ ﺍﻟْﻔِﻄْﺮِ অর্থাৎ সাদাকায়ে ফিতর টাকা দ্বারা আদায় করা (বৈধ হওয়া) সম্পর্কে। আর ইমাম বায়হাকী (রহ.) তার রচিত কিতাব ‘আস-সুনানুল কুবরা’র ৪/১৮৯ এর মধ্যে এভাবে অনুচ্ছেদ স্থাপন করে গেছেন যে- ﺑَﺎﺏُ ﻣَﻦْ ﺃَﺟَﺎﺯَ ﺃَﺧْﺬَ ﺍﻟْﻘِﻴَﻢِ ﻓِﻲ ﺍﻟﺰَّﻛَﻮَﺍﺕِ অর্থাৎ এই অনুচ্ছেদ হল, টাকা দ্বারা যাকাত আদায় করা অনুমোদিত। তাছাড়া রাসূল (সা.) এর যুগেও ﺯَﻛَﺎﺓَ ﺍﻟﻔِﻄْﺮِ ও ﺯﻛﻮﺓ ইত্যাদি টাকা দ্বারা আদায় করা হতো। তার কিছু প্রমাণ নিম্মে পেশ করা হল –
ﻭَﻗَﺎﻝَ ﻃَﺎﻭُﺱٌ : ﻗَﺎﻝَ ﻣُﻌَﺎﺫٌ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻟِﺄَﻫْﻞِ ﺍﻟﻴَﻤَﻦِ : « ﺍﺋْﺘُﻮﻧِﻲ ﺑِﻌَﺮْﺽٍ ﺛِﻴَﺎﺏٍ ﺧَﻤِﻴﺺٍ – ﺃَﻭْ ﻟَﺒِﻴﺲ ﻓِﻲ ﺍﻟﺼَّﺪَﻗَﺔِ ﻣَﻜَﺎﻥَ ﺍﻟﺸَّﻌِﻴﺮِ ﻭَﺍﻟﺬُّﺭَﺓِ ﺃَﻫْﻮَﻥُ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻭَﺧَﻴْﺮٌ ﻟِﺄَﺻْﺤَﺎﺏِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺑِﺎﻟْﻤَﺪِﻳﻨَﺔِ » ﻭَﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ﻭَﺃَﻣَّﺎ ﺧَﺎﻟِﺪٌ ﻓَﻘَﺪِ ﺍﺣْﺘَﺒَﺲَ ﺃَﺩْﺭَﺍﻋَﻪُ ﻭَﺃَﻋْﺘُﺪَﻩُ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ” ﻭَﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : « ﺗَﺼَﺪَّﻗْﻦَ ﻭَﻟَﻮْ ﻣِﻦْ ﺣُﻠِﻴِّﻜُﻦَّ » ﻓَﻠَﻢْ ﻳَﺴْﺘَﺜْﻦِ ﺻَﺪَﻗَﺔَ ﺍﻟﻔَﺮْﺽِ ﻣِﻦْ ﻏَﻴْﺮِﻫَﺎ، ﻓَﺠَﻌَﻠَﺖِ ﺍﻟﻤَﺮْﺃَﺓُ ﺗُﻠْﻘِﻲ ﺧُﺮْﺻَﻬَﺎ ﻭَﺳِﺨَﺎﺑَﻬَﺎ، ﻭَﻟَﻢْ ﻳَﺨُﺺَّ ﺍﻟﺬَّﻫَﺐَ ﻭَﺍﻟﻔِﻀَّﺔَ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻌُﺮُﻭﺽِ “
অর্থাৎ তাউস (রহ.) বলেন, মু‘আয (ইবনে জাবাল) (রা.) ইয়ামনবাসীদেরকে বললেন, তোমরা যব ও ভুট্টার পরিবর্তে চাদর বা পরিধেয় বস্ত্র আমার কাছে যাকাত স্বরূপ নিয়ে এসো। ওটা তোমাদের পক্ষেও সহজ এবং মদীনায় নবী (সা.) এর সাহাবীগণের জন্যও উত্তম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, খালিদ ইবন ওয়ালীদ (রা.) এর ব্যাপার হল এই যে, সে তাঁর বর্ম ও যুদ্ধাস্ত্র আল্লাহর পথে ওয়াকফ করে দিয়েছেন। (মহিলাদের লক্ষ্য করে) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা তোমাদের অলংকার থেকে হলেও সাদকা কর । [ইমাম বুখারী (রহ.) বলেন] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পণাদ্রব্যের যাকাত সেই পণ্য দ্বারাই আদায় করতে হবে, এমন নির্দিষ্ট করে দেননি। তখন মহিলাগণ কানের দুল ও গলার হার খুলে দিতে আরম্ভ করলেন। [ইমাম বুখারী (রহ.) বলেন] সোনা ও রূপার বিষয়টি পণ্যদ্রব্য থেকে পৃথক করেননি (বরং উভয় প্রকারেই যাকাত স্বরূপ গ্রহণ করা হত)। (দেখুন, সহীহ বুখারী ২/১১৬)। উল্লেখ্য যে, সাদাকাতুল ফিতর টাকা দ্বারা আদায় করা যাবে এটি ইমাম বুখারী (রহ.) এরও উক্তি- ﻗَﻮْﻟُﻪُ ﺑَﺎﺏُ ﺍﻟْﻌَﺮْﺽِ ﻓِﻲ ﺍﻟﺰَّﻛَﺎﺓِ: ﺃَﻱْ ﺟَﻮَﺍﺯُ ﺃَﺧْﺬِ ﺍﻟْﻌَﺮْﺽِ ﻭَﻫُﻮَ ﺑِﻔَﺘْﺢِ ﺍﻟْﻤُﻬْﻤَﻠَﺔِ ﻭَﺳُﻜُﻮﻥِ ﺍﻟﺮَّﺍﺀِ ﺑَﻌْﺪَﻫَﺎ ﻣُﻌْﺠَﻤَﺔٌ ﻭَﺍﻟْﻤُﺮَﺍﺩُ ﺑِﻪِ ﻣَﺎ ﻋَﺪَﺍ ﺍﻟﻨَّﻘْﺪَﻳْﻦِ ﻗَﺎﻝَ ﺑﻦ ﺭَﺷِﻴﺪٍ ﻭَﺍﻓَﻖَ ﺍﻟْﺒُﺨَﺎﺭِﻱُّ ﻓِﻲ ﻫَﺬِﻩِ ﺍﻟْﻤَﺴْﺄَﻟَﺔِ ﺍﻟْﺤَﻨَﻔِﻴَّﺔَ ﻣَﻊَ ﻛَﺜْﺮَﺓِ ﻣُﺨَﺎﻟَﻔَﺘِﻪِ ﻟَﻬُﻢْ ﻟَﻜِﻦْ ﻗَﺎﺩَﻩُ ﺇِﻟَﻰ ﺫَﻟِﻚَ ﺍﻟﺪَّﻟِﻴﻞُ …… ﺍﻟﺦ আল্লামা ইবনু রাশীদ (রহ.) বলেন, উক্ত মাসয়ালাটির মাঝে ইমাম বুখারী (রহ.) হানাফীদের সাথে সহমত পোষন করেছেন….। (ফাতহুল বারী লি ইবনে হাজার- ৩/৩১২)।
…..এ বিষয়ে আহমদ আল গুমারী (রহ.) আরবী ভাষায় ১৫০ পৃষ্ঠায় ﺗﺤﻘﻴﻖ ﺍﻻﻣﺎﻝ ﻓﻰ ﺍﺧﺮﺍﺝ ﺯﻛﻮﺓ ﺍﻟﻔﻄﺮ ﺑﺎﻟﻤﺎﻝ নামে একটি গুরুত্বপূর্ণ পুস্তিকা রচনা করেছেন। যা সকলকে পড়ে রাখা আবশ্যক। এ বিষয়ে আরো দেখুন- বাদায়েউস সানায়ে-২/৯৬৯, আল মাবসুত লিস-সারাখসী-৩/১১৩ ইত্যাদি। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ফেৎনা সৃষ্টি না করে সঠিক দ্বীন বুঝে আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
লিখক, মুফতী ছানাউল্লাহ (হাফিজাহুল্লাহ) ।