Home আকীদা সহীহ হাদীসে ইমাম মাহদীর পরিচয়

সহীহ হাদীসে ইমাম মাহদীর পরিচয়

0
সহীহ হাদীসে ইমাম মাহদীর পরিচয়

আমার কলিজার টুকরো কাদিয়ানী ভাইবোনকে বলছি, নিচে উল্লিখিত সহীহ হাদীসগুলোর সাথে আপনাদের মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে মিলিয়ে ‘ইমাম মাহদী‘ প্রমাণ করা যায় কিনা দেখবেন! সম্পূর্ণ লিখাটি মনযোগ সহকারে পড়ার পর দ্বিতীয় এই লিখাটিও পড়ে দেখবেন। তবেই আপনাদের নিকট পানি পানির মত আর দুধ দুধের মত পরিষ্কার হয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ। Click in here : প্রকৃত ইমাম মাহদী এবং মির্যা কাদিয়ানী এই দুইয়ের মাঝে পার্থক্য গুলো কী কী?

১. গ্রন্থঃ সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ)। অধ্যায়ঃ ৩১/ মাহদী (আ.) সম্পর্কে (كتاب المهدى) হাদীস নং ৪২৩০ :

(আরবী) المهدى حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ عُثْمَانَ، حَدَّثَنَا مَرْوَانُ بْنُ مُعَاوِيَةَ، عَنْ إِسْمَاعِيلَ، – يَعْنِي ابْنَ أَبِي خَالِدٍ – عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ، قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏”‏ لاَ يَزَالُ هَذَا الدِّينُ قَائِمًا حَتَّى يَكُونَ عَلَيْكُمُ اثْنَا عَشَرَ خَلِيفَةً كُلُّهُمْ تَجْتَمِعُ عَلَيْهِ الأُمَّةُ ‏”‏ ‏.‏ فَسَمِعْتُ كَلاَمًا مِنَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم لَمْ أَفْهَمْهُ قُلْتُ لأَبِي مَا يَقُولُ قَالَ ‏”‏ كُلُّهُمْ مِنْ قُرَيْشٍ”‏ ‏.‏

অনুবাদঃ আমর ইবনে উসমান (রহ.) …. জাবির ইব্‌ন সামুরা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, এ দ্বীন ততক্ষণ পর্যন্ত কায়েম থাকবে, যতক্ষণ না তোমাদের উপর সর্ব সম্মতিক্রমে নির্বাচিত বার জন খলীফা (নিযুক্ত) হয়। (রাবী বলেন) এরপর আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আরো কিছু বলতে শুনি, কিন্তু আমি তা বুঝতে পারিনি। তখন আমি আমার পিতাকে জিজ্ঞাসা করি যে, তিনি কি বলেছেন? তিনি বলেন, এ সমস্ত খলীফা[১] কুরাইশ বংশ থেকে হবে। (হাদীসের মান, সহীহ)।

নোটঃ [১] ইমাম সুয়ূতী (রহ.) হাদীসটির كُلُّهُمْ مِنْ قُرَيْشٍ (এ সমস্ত খলীফা কুরাইশ বংশ থেকে হবে)-এর ব্যাখ্যায় লিখেছেন, إن في ذلك إشارة إلى ما قاله العلماء : إن المهدي احد الاثني عشر অর্থাৎ এর ইংগিত সে কথার দিকেই যা বিশেষজ্ঞগণ মত ব্যক্ত করে গেছেন, তা হচ্ছে নিশ্চয়ই ইমাম মাহদী ঐ বারোজনেরই একজন হবেন। (আল আরফুল ওয়ারদী, ইমাম সুয়ূতী দ্রষ্টব্য)। শায়খ আলী আহমদ আব্দুল আ’ল আত তাহতাভী রচিত ‘তাম্বীহুল গাফেলীন শরহু কিতাবি আ’লামাতি ইয়াওমিদ দীন‘-২০৮ দ্রষ্টব্য। প্রামাণ্য স্ক্যানকপি দ্রষ্টব্য।

তাম্বীহুল গাফেলীন।

২. গ্রন্থঃ সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ)। অধ্যায়ঃ ৩১/ মাহদী (আঃ) সম্পর্কে (كتاب المهدى) হাদীস নং ৪২৩৩ :

(আরবী) باب المهدى حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، أَنَّ عُمَرَ بْنَ عُبَيْدٍ، حَدَّثَهُمْ ح، وَحَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْعَلاَءِ، حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرٍ، – يَعْنِي ابْنَ عَيَّاشٍ ح وَحَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا يَحْيَى، عَنْ سُفْيَانَ، ح وَحَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ مُوسَى، أَخْبَرَنَا زَائِدَةُ، ح وَحَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، حَدَّثَنِي عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ مُوسَى، عَنْ فِطْرٍ، – الْمَعْنَى وَاحِدٌ – كُلُّهُمْ عَنْ عَاصِمٍ، عَنْ زِرٍّ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏”‏ لَوْ لَمْ يَبْقَ مِنَ الدُّنْيَا إِلاَّ يَوْمٌ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ زَائِدَةُ فِي حَدِيثِهِ ‏”‏ لَطَوَّلَ اللَّهُ ذَلِكَ الْيَوْمَ ‏”‏ ‏.‏ ثُمَّ اتَّفَقُوا ‏”‏ حَتَّى يَبْعَثَ فِيهِ رَجُلاً مِنِّي ‏”‏ ‏.‏ أَوْ ‏”‏ مِنْ أَهْلِ بَيْتِي يُوَاطِئُ اسْمُهُ اسْمِي وَاسْمُ أَبِيهِ اسْمَ أَبِي”‏ ‏.‏ زَادَ فِي حَدِيثِ فِطْرٍ ‏”‏ يَمْلأُ الأَرْضَ قِسْطًا وَعَدْلاً كَمَا مُلِئَتْ ظُلْمًا وَجَوْرًا ‏”‏ ‏.‏ وَقَالَ فِي حَدِيثِ سُفْيَانَ ‏”‏ لاَ تَذْهَبُ أَوْ لاَ تَنْقَضِي الدُّنْيَا حَتَّى يَمْلِكَ الْعَرَبَ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ بَيْتِي يُوَاطِئُ اسْمُهُ اسْمِي ‏”‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو دَاوُدَ لَفْظُ عُمَرَ وَأَبِي بَكْرٍ بِمَعْنَى سُفْيَانَ ‏.‏

অনুবাদঃ মুসাদ্দাদ (রহ.) …. আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি দুনিয়ার মাত্র একদিনও বাকী থাকে, তবুও আল্লাহ্‌ সেদিনকে এত দীর্ঘ করে দেবেন যে, তাতে আমার থেকে অথবা আমার আহলে-বাইয়েত থেকে এমন এক ব্যক্তিকে পয়দা করবেন, যার নাম হবে আমার নামের মত এবং তার পিতার নাম হবে আমার পিতার নামের মত। রাবী ফিত্‌র (রহ.)-এর হাদীছে এরূপ অতিরিক্ত বর্ণিত হয়েছে যে, সে ব্যক্তি যমীনকে আদল ও ইনসাফে পূর্ণ করবে, যেরূপ তা অন্যায়-অবিচারে পূর্ণ হয়েছিল। রাবী সুফিয়ান (রহ.)-এর হাদিছে আছে যে, (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন) দুনিয়া ততক্ষণ ধ্বংস হবে না, যতক্ষণ না আমার বংশ থেকে একজন আরবের শাসনকর্তা নিযুক্ত হবে। যার নাম হবে আমার নামের মত। (হাদীসের মান, হাসান)। ইমাম ইবনে কাসীর (রহ.) শেষ যুগে আত্মপ্রকাশকারী প্রতীক্ষিত ইমাম মাহদীর সম্পূর্ণ নামটি কিরকম হবে তিনি তার ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া (البداية والنهاية)’ কিতাবে নিম্নরূপ উল্লেখ করে গেছেন, তিনি লিখেছেন, محمد بن عبد الله العلوي الفاطمي الحسني رضي الله عنهم. الفتن والملاحم অর্থাৎ [ইমাম মাহদীর নাম হবে] মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ যিনি আলী, ফাতেমা এবং হাসানের (আল আলীবিয়্যি আল ফাতেমিয়্যি আল হাসানি) ঔরসজাত হবেন; রাদিআল্লাহু আনহুম। (বিশৃঙ্খলা ও মালহামা অধ্যায় খ-১/পৃ-১৭)।

৩. গ্রন্থঃ সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ)। অধ্যায়ঃ ৩১/ মাহদী (আ.) সম্পর্কে (كتاب المهدى) হাদীস নং ৪২৩৪ :

(আরবী) باب المهدى حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا الْفَضْلُ بْنُ دُكَيْنٍ، حَدَّثَنَا فِطْرٌ، عَنِ الْقَاسِمِ بْنِ أَبِي بَزَّةَ، عَنْ أَبِي الطُّفَيْلِ، عَنْ عَلِيٍّ، – رضى الله تعالى عنه عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏: “‏ لَوْ لَمْ يَبْقَ مِنَ الدَّهْرِ إِلاَّ يَوْمٌ لَبَعَثَ اللَّهُ رَجُلاً مِنْ أَهْلِ بَيْتِي يَمْلأُهَا عَدْلاً كَمَا مُلِئَتْ جَوْرًا‏”‏ ‏.‏

অনুবাদঃ উসমান ইবনে আবূ শায়বা (রহ.) …. আলী (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি আকাশের একটি দিনও অবশিষ্ট থাকে, তবুও মহান আল্লাহ্‌ আমার আহলে বাইয়েত থেকে এমন এক ব্যক্তিকে সৃষ্টি করবেন, যিনি পৃথিবীকে ইনসাফ দ্বারা পূর্ণ করবেন, যেমন তা জুল্‌ম ও অত্যাচারে পরিপূর্ণ ছিল। (হাদীসের মান, সহীহ)।

৪. গ্রন্থঃ সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ)। অধ্যায়ঃ ৩১/ মাহদী (আ.) সম্পর্কে (كتاب المهدى) হাদীস নং ৪২৩৫।

(আরবী) باب المهدى حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ جَعْفَرٍ الرَّقِّيُّ، حَدَّثَنَا أَبُو الْمَلِيحِ الْحَسَنُ بْنُ عُمَرَ، عَنْ زِيَادِ بْنِ بَيَانٍ، عَنْ عَلِيِّ بْنِ نُفَيْلٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ، عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، قَالَتْ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏ “‏ الْمَهْدِيُّ مِنْ عِتْرَتِي مِنْ وَلَدِ فَاطِمَةَ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ جَعْفَرٍ وَسَمِعْتُ أَبَا الْمَلِيحِ يُثْنِي عَلَى عَلِيِّ بْنِ نُفَيْلٍ وَيَذْكُرُ مِنْهُ صَلاَحًا ‏.‏

অনুবাদঃ আহমদ ইব্‌ন ইবরাহীম (রহ.) …. উম্মে সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, “মাহদী আমার ঔরসজাত ফাতিমার বংশ থেকে হবে।” (হাদীসের মান, সহীহ)।

৫. গ্রন্থঃ সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ)। অধ্যায়ঃ ৩১/ মাহদী (আ.) সম্পর্কে (كتاب المهدى) হাদীস নং ৪২৩৬ :

(আরবী) باب المهدى حَدَّثَنَا سَهْلُ بْنُ تَمَّامِ بْنِ بَزِيعٍ، حَدَّثَنَا عِمْرَانُ الْقَطَّانُ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ أَبِي نَضْرَةَ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ الْمَهْدِيُّ مِنِّي أَجْلَى الْجَبْهَةِ أَقْنَى الأَنْفِ يَمْلأُ الأَرْضَ قِسْطًا وَعَدْلاً كَمَا مُلِئَتْ جَوْرًا وَظُلْمًا يَمْلِكُ سَبْعَ سِنِينَ‏”‏ ‏.‏

অনুবাদঃ সাহ্‌ল ইবনে তাম্মাম (রহ.) …. আবূ সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মাহদী আমার বংশোদ্ভুত হবে, যার ললাট প্রশস্ত ও নাক উঁচু হবে। যিনি পৃথিবীকে আদ্‌ল-ইনসাফ দ্বারা এরূপ পূর্ণ করবেন, যেরূপ তা অন্যায়-অবিচারে পূর্ণ ছিল। তিনি সাত বছর রাজত্ব করবেন। (হাদীসের মান, হাসান)।

৬. গ্রন্থঃ সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ)। অধ্যায়ঃ ৩১/ মাহদী (আ.) সম্পর্কে (كتاب المهدى) হাদীস নং ৪২৩৭ :

(আরবী) باب المهدى حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى، حَدَّثَنَا مُعَاذُ بْنُ هِشَامٍ، حَدَّثَنِي أَبِي، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ صَالِحٍ أَبِي الْخَلِيلِ، عَنْ صَاحِبٍ، لَهُ عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، زَوْجِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏”‏ يَكُونُ اخْتِلاَفٌ عِنْدَ مَوْتِ خَلِيفَةٍ فَيَخْرُجُ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْمَدِينَةِ هَارِبًا إِلَى مَكَّةَ فَيَأْتِيهِ نَاسٌ مِنْ أَهْلِ مَكَّةَ فَيُخْرِجُونَهُ وَهُوَ كَارِهٌ فَيُبَايِعُونَهُ بَيْنَ الرُّكْنِ وَالْمَقَامِ وَيُبْعَثُ إِلَيْهِ بَعْثٌ مِنَ الشَّامِ فَيُخْسَفُ بِهِمْ بِالْبَيْدَاءِ بَيْنَ مَكَّةَ وَالْمَدِينَةِ فَإِذَا رَأَى النَّاسُ ذَلِكَ أَتَاهُ أَبْدَالُ الشَّامِ وَعَصَائِبُ أَهْلِ الْعِرَاقِ فَيُبَايِعُونَهُ بَيْنَ الرُّكْنِ وَالْمَقَامِ ثُمَّ يَنْشَأُ رَجُلٌ مِنْ قُرَيْشٍ أَخْوَالُهُ كَلْبٌ فَيَبْعَثُ إِلَيْهِمْ بَعْثًا فَيَظْهَرُونَ عَلَيْهِمْ وَذَلِكَ بَعْثُ كَلْبٍ وَالْخَيْبَةُ لِمَنْ لَمْ يَشْهَدْ غَنِيمَةَ كَلْبٍ فَيَقْسِمُ الْمَالَ وَيَعْمَلُ فِي النَّاسِ بِسُنَّةِ نَبِيِّهِمْ صلى الله عليه وسلم وَيُلْقِي الإِسْلاَمُ بِجِرَانِهِ إِلَى الأَرْضِ فَيَلْبَثُ سَبْعَ سِنِينَ ثُمَّ يُتَوَفَّى وَيُصَلِّي عَلَيْهِ الْمُسْلِمُونَ”‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو دَاوُدَ : قَالَ بَعْضُهُمْ عَنْ هِشَامٍ ‏”‏ تِسْعَ سِنِينَ”‏ ‏.‏ وَقَالَ بَعْضُهُمْ‏”‏ سَبْعَ سِنِينَ ‏”‏ ‏.‏

অনুবাদঃ মুহাম্মদ ইবনে মুছান্না (রহ.) …. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রী উম্মে সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একজন খলীফার মৃতুর সময় মতানৈক্য দেখা দিলে এবং সে সময় মদীনা থেকে এক ব্যক্তি পালিয়ে মক্কায় আসলে, সেখানকার অধিবাসিগণ তার পাশে সমবেত হবে এবং তাকে ইমামতি করার জন্য সামনে পাঠাবে। কিন্তু সে ব্যক্তি তা অপছন্দ করবে। এরপর লোকেরা তার হাতে ‘হাজরে-আসওয়াদ’ ও ‘মাকামে-ইব্‌রাহীমের’ মাঝে বাইয়েত গ্রহণ করবে। সে সময় শামদেশ থেকে তার বিরুদ্ধে একদল সৈন্য প্রেরিত হবে, যারা মক্কা ও মদীনার মাঝে অবস্থিত ‘বাইদাহ’ নামক স্থানে মাটিতে ধ্বংস প্রাপ্ত হবে। {ইমাম হাকিম (রহ.) ভিন্ন আরেক সনদে তার ‘মুস্তাদরাক’ গ্রন্থে এই অংশটি উল্লেখ করে বলেছেন, এর সনদ সহীহ}। লোকেরা যখন এ অবস্থা দেখবে, তখন শাম ও ইরাকের ওলী-আবদালগণ তার নিকট উপস্থিত হয়ে, ‘হাজরে-আসওয়াদ’ ও মাকামে-ইব্‌রাহীমের’ মাঝে বাইয়েত গ্রহণ করবে। এরপর কুরাইশ বংশে এমন এক ব্যক্তি জন্মগ্রহণ করবে যার মামাগণ হবে ‘কালব’ গোত্রের। যারা তাদের বিরুদ্ধে একদল সৈন্য পাঠাবে এবং এ যুদ্ধে তারা বিজয়ী হবে। এরা ‘কালব’ গোত্রের সেই সৈন্য, যারা মাহ্‌দীর সৈন্যদের হাতে পরাজিত হবে। এই সময় যারা কালব গোত্রের গনীমতের মালের অংশগ্রহণ করার জন্য উপস্থিত হবেনা, তাদের জন্য আফসোস। এরপর মাহ্‌দী (আ.) গনীমতের মাল লোকদের মাঝে বণ্টন করে দিয়ে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নত পুনরুজ্জীবিত করবেন। সে সময় যারা পৃথিবীতে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবে। তিনি সাত বছর জীবিত থাকার পর ইন্তিকাল করবেন এবং মুসলিমরা তাঁর জানাযার সালাত আদায় করবে। (সনদের মান, জঈফ বা দুর্বল)।

৭. গ্রন্থঃ মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ (المصنف ابن أبي شيبة)। খণ্ড নং ১৫ পৃষ্ঠা নং ৪৫, হাদীস নং ১৯০৭০ :

(আরবী) حدثنا عفان قال: حدثنا عمران القطان، عن قتادة، عن أبي الخليل، عن عبد الله بن الحارث، عن أم سلمة قالت: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : يبايع لرجل بين الركن والمقام كعدة أهل بدر، فتأتيه عصائب العراق وأبدال الشام، فيغزوهم جيش من أهل الشام، حتى إذا كانوا بالبيداء يخسف بهم، ثم يغزوهم رجل من قريش أخواله كلب فيلتقون فيهزمهم الله، فكان يقال: الخائب من خاب (من) غنيمة كلب. (المصنف ابن أبي شيبة: المجلد الخامس عشر، رقم الصفحة ٤٥ رقم الحديث ١٩٠٧٠)

অনুবাদঃ আফফান থেকে তিনি ইমরান ইবনে কাতান থেকে তিনি ক্বাতাদাহ থেকে তিনি আবু খলীল থেকে তিনি আব্দুল্লাহ ইবনুল হারেস থেকে তিনি উম্মে সালমাহ থেকে…. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, গযওয়ায়ে বদরের সমপরিমাণ লোকজন একব্যক্তির নিকট ‘হাজরে-আসওয়াদ’ এবং ‘মাকামে-ইব্‌রাহীমের’ মধ্যভাগে বাইয়েত গ্রহণ করবে। অত:পর শাম ও ইরাকের ওলী-আবদালগণ তার নিকট উপস্থিত হতে থাকবে। (সে সময়) শামদেশ থেকে তার বিরুদ্ধে একদল সৈন্য যুদ্ধের উদ্দেশ্যে প্রেরিত হবে, মক্কা ও মদীনার মাঝে অবস্থিত ‘বাইদাহ’ নামক স্থানে মাটিতে তারা ধ্বংস প্রাপ্ত হবে। {উপরের একই বর্ণনা ইমাম হাকিম (রহ.)ও সহীহ সনদে তার ‘মুস্তাদরাক লিল হাকিম’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন}। এরপর কুরাইশ বংশীয় এমন একব্যক্তি (ইমাম মাহদীর সাহায্যে) তাদের (অর্থাৎ ‘কালব’ গোত্রের) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন যার মামাগণ ‘কালব’ গোত্রীয়। এরা মুখোমুখি লড়াইতে লিপ্ত হবে। আল্লাহতালা এদেরকে (কালব গোত্রীয় শত্রুদের) পরাজিত করবেন। (তারপর নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন) {আজকের এ দিন} প্রকৃত বঞ্চিত তারাই যারা কালব গোত্র থেকে প্রাপ্ত গনিমত (যুদ্ধলব্ধ সম্পদ) থেকে বঞ্চিত। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ, খণ্ড নং ১৫, পৃষ্ঠা নং ৪৫, হাদীস নং ১৯০৭০, হাদীসের মান : সহীহ)। সিয়াহ সিত্তার অন্যতম ‘সুনানু আবী দাউদ’ কিতাবের ‘কিতাবুল মাহদী’ অধ্যায় কিছুটা দুর্বল সূত্রে শেষাংশে একথাগুলোও এসেছে যে, এরপর ইমাম মাহ্‌দী (আ.) গনীমতের মাল লোকদের মাঝে বণ্টন করে দিয়ে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নত পুনরুজ্জীবিত করবেন। সে সময় সারা পৃথিবীতে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবে। তিনি সাত বছর জীবিত থাকার পর ইন্তিকাল করবেন এবং মুসলিমরা তাঁর জানাযার সালাত আদায় করবে।

ইমাম সুয়ূতী রহ. এর রচনার স্ক্রিনশট

৮. গ্রন্থঃ সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ)। অধ্যায়ঃ ৩১/ মাহদী (আ.) সম্পর্কে (كتاب المهدى) হাদীস নং ৪২৪০ :

(আরবী) باب المهدى حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا جَرِيرٌ، عَنْ عَبْدِ الْعَزِيزِ بْنِ رُفَيْعٍ، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ ابْنِ الْقِبْطِيَّةِ، عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم بِقِصَّةِ جَيْشِ الْخَسْفِ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَكَيْفَ بِمَنْ كَانَ كَارِهًا قَالَ ‏ “‏ يُخْسَفُ بِهِمْ وَلَكِنْ يُبْعَثُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى نِيَّتِهِ ‏”‏ ‏.‏ الْمُغِيرَةِ، قَالَ حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ أَبِي قَيْسٍ، عَنْ شُعَيْبِ بْنِ خَالِدٍ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، قَالَ قَالَ عَلِيٌّ – رضى الله عنه – وَنَظَرَ إِلَى ابْنِهِ الْحَسَنِ فَقَالَ إِنَّ ابْنِي هَذَا سَيِّدٌ كَمَا سَمَّاهُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم وَسَيَخْرُجُ مِنْ صُلْبِهِ رَجُلٌ يُسَمَّى بِاسْمِ نَبِيِّكُمْ يُشْبِهُهُ فِي الْخُلُقِ وَلاَ يُشْبِهُهُ فِي الْخَلْقِ ثُمَّ ذَكَرَ قِصَّةَ يَمْلأُ الأَرْضَ عَدْلاً ‏.‏ وَقَالَ هَارُونُ حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ أَبِي قَيْسٍ عَنْ مُطَرِّفِ بْنِ طَرِيفٍ عَنْ أَبِي الْحَسَنِ عَنْ هِلاَلِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ سَمِعْتُ عَلِيًّا – رضى الله عنه – يَقُولُ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ يَخْرُجُ رَجُلٌ مِنْ وَرَاءِ النَّهْرِ يُقَالُ لَهُ الْحَارِثُ بْنُ حَرَّاثٍ عَلَى مُقَدِّمَتِهِ رَجُلٌ يُقَالُ لَهُ مَنْصُورٌ يُوَطِّئُ أَوْ يُمَكِّنُ لآلِ مُحَمَّدٍ كَمَا مَكَّنَتْ قُرَيْشٌ لِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَجَبَ عَلَى كُلِّ مُؤْمِنٍ نَصْرُهُ ‏”‏ ‏.‏ أَوْ قَالَ ‏”‏ إِجَابَتُهُ ‏”‏ ‏.‏

অনুবাদঃ উসমান ইবনে আবূ শায়বা (রহ.) …. উম্মে সালামা (রা.) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ‘যমীন-ধসে যাওয়া’ সম্পর্কিত হাদীছ বর্ণনা প্রসংগে বলেনঃ আমি জিজ্ঞাসা করি, ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! তার কী অবস্থা হবে, যে অনিচ্ছা সত্ত্বেও যুদ্ধে যোগদান করবে? তিনি বলেন, সেও তাদের সাথে জমিনে ধসে মারা যাবে, কিন্তু কিয়ামতের দিন তাকে তার নিয়তের উপর উঠানো হবে। (হাদীসের এই অংশটির সনদ সহীহ)। ইমাম আবূ দাউদ (রহ.) হারূন ইব্‌ন মুগীরা থেকে, তিনি আবূ ইসহাক (রহ.) থেকে বর্ণনা করেন যে, একদা আলী (রা.) তাঁর পুত্র হাসানের প্রতি দৃষ্টিপাত করে বলেনঃ আমার এ ছেলে জান্নাতের যুবদের সর্দার, যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তিনি আরো বলেন অতি সত্তর তার বংশে এমন এক ব্যক্তি জন্ম গ্রহণ করবে, যার নাম হবে তোমাদের নবীর অনুরূপ। স্বভাব-চরিত্রে তিনি তাঁরই মত হবেন, তবে আকৃতিতে নয়। এরপর আলী (রা.) বলেন, তিনি পৃথিবীকে আদল-ইনসাফে পরিপূর্ণ করবেন। (এই অংশের উল্লিখিত সনদ জঈফ বা দুর্বল)। হারূন (রহ.) …. আমর ইব্‌ন কায়স (রহ.) থেকে, তিনি হিলাল ইব্‌ন আমর (রহ.) সূত্রে বর্ণনা করেন। তিনি বলেনঃ আমি আলী (রাঃ)-কে এরূপ বর্ণনা করতে শুনেছি যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘অরাউন্‌-নাহার’ (মধ্য এশিয়া) থেকে এমন এক ব্যক্তি বের হবে, যার নাম হবে ‘হারিছ ইব্‌ন হারবাছ’ এবং তার আগে অপর এক ব্যক্তি বের হবে, যাকে লোকেরা ‘মানসূর’ বলবে। তিনি মুহাম্মাদ (অর্থাৎ ইমাম মাহদী)-এর অনুসারী (সেনা)-দের তেমনিভাবে সাহায্য করবেন, যেমনিভাবে কুরাইশগণ রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সাহায্য করেছিল। প্রত্যেক মু’মিনের উচিত হবে তাঁকে সাহায্য করা এবং তাঁর আহবানে সাড়া দেয়া। (এই অংশের উল্লিখিত সনদ জঈফ বা দুর্বল)।

৯. গ্রন্থঃ আখবারুল মাহদী, সংকলক ইমাম বুখারীর উস্তাদ হাফেযুল হাদীস আবু আব্দুল্লাহ নু’আইম বিন হাম্মাদ (রহ.) :

(আরবী) عن أبي سعيد الخدري رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: « ((مِنَّا الذي يُصلِّي عيسى ابنُ مريمَ خلفَه))» . رواه أبو نعيم في ((كتاب المهدي)) كما في ((كنز العمال)) وقال الألباني : صحيح كما فى السلسلة الصحيحة: الصفحة أو الرقم : 2293

অনুবাদঃ হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘আমাদের (আহলে বাইয়েত) হতে (আগমনকারী) তার (ইমাম মাহদী) পেছনে ঈসা ইবনে মরিয়ম সালাত পড়বেন।’ রেফারেন্স : কিতাবুল মাহদী হাদীস নং ৪১, আবু নু’আইম। শায়খ নাসির উদ্দীন আলবানী (রহ.) বলেন, এর সনদ সহীহ। (আস-সিলসিলাতুস সহীহা, হাদীস নং ২২৯৩; আল-বুরহান ফী আলামাতি মাহদী আখিরুয যামান (البرهان في علامات مهدي آخر الزمان) পৃষ্ঠা নং ১৫৮, আল-আ’রফুল ওয়ারদি ফী আখবারিল মাহদী লিস-সুয়ূতি (العرف الوردي في أخبار المهدي للسيوطي) পৃষ্ঠা নং ১৩৪)।

১০. গ্রন্থঃ আল মানারুল মুনীফ (المنار المنيف), পৃষ্ঠা নং ১৪৭। শায়খ ইবনুল কাইয়ুম (রহ.)।

(আরবী) وعن جابر رضي الله عنه قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : ” ينزل عيسى بن مريم فيقول أميرهم المهدي تعال صل بنا ، فيقول : لا إن بعضهم أمير بعض تكرمة الله لهذه الأمة ” . والحديث في صحيح مسلم بلفظ : ” .. فَيَنْزِلُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَيَقُولُ أَمِيرُهُمْ تَعَالَ صَلِّ لَنَا فَيَقُولُ لا إِنَّ بَعْضَكُمْ عَلَى بَعْضٍ أُمَرَاءُ تَكْرِمَةَ اللَّهِ هَذِهِ الأُمَّةَ”. رواه مسلم

অনুবাদঃ হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ঈসা (আ.) অবতরণ করবেন। অতপর মুসলমানদের আমীর ইমাম মাহদী বলবেন, আসুন সালাতে আমাদের ইমামতি করুন! তারপর তিনি বলবেন, না; নিশ্চয় তাদেরই একে অন্যের ইমাম। এটি আল্লাহতালা প্রদত্ত এই উম্মতের সম্মান। (আরো দেখুন, ইমাম বুখারীর উস্তাদ হাফেযুল হাদীস আবু আব্দুল্লাহ নু’আইম বিন হাম্মাদ সংকলিত আখবারুল মাহদী; বিশিষ্ট যুগ ইমাম ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেছেন, এই হাদীসের সনদ জায়্যিদ বা খুবই ভাল; আল-মানারুল মুনীফ পৃষ্ঠা নং ১৪৭; শায়খ আলবানী (রহ.) বলেছেন, হাদীসটির সনদ সহীহ এবং তিনি স্বীয় কিতাব ‘আস-সিলসিলাতুস সহীহা’- তেও এনেছেন। হাদীস নং ২২৩৬)। সহীহ মুসলিম শরীফে হাদীসটি নিম্নোক্ত শব্দচয়নে বর্ণিত আছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কিয়ামত পর্যন্ত আমার উম্মতের একটি দল হক্বের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে বাতিলের বিরুদ্ধে লড়তে থাকবে এবং অবশেষে ঈসা (আ.) অবতরণ করবেন। (সেই সময়কার) মুসলমানদের ‘আমীর’ (নেতা) বলবেন, আসুন সালাতে আমাদের ইমামতি করুন! তারপর তিনি (ঈসা) বলবেন, না; নিশ্চয় আপনারাই একে অন্যের ইমাম। এই হলো আল্লাহ তা’আলা প্রদত্ত এ উম্মতের সম্মান। (রেফারেন্স, সহীহ মুসলিম, খণ্ড নং ১, কিতাবুল ঈমান, হাদীস নং ১৫৬)। এই হাদীসে ঈসা (আ.) অবতরণ করার পরে সেই সময়কার মুসলমানদের আমীরের সাথে তৎক্ষণাৎ সালাতের ইমামতির বিষয়ে দুই পক্ষের কথাবার্তার উল্লেখ রয়েছে। তাদের একজন ঈসা (আ.) আর অন্যজন মুসলমানদের ‘আমীর তথা নেতা’। মূলত, সেই ‘নেতা’—ই ইমাম মাহদী, যা প্রথমোক্ত হাদীসের أميرهم المهدي দ্বারা সুস্পষ্ট প্রমাণিত।

কিতাব : আল মানারুল মুনীফ
কিতাব: আল-আ’রফুল ওয়ারদি ফী আখবারিল মাহদী লিস-সুয়ূতি

১১. গ্রন্থঃ কিতাবুল ফিতান মানাকিবুল মাহদী, সংকলক ইমাম বুখারীর উস্তাদ হাফেযুল হাদীস আবু আব্দুল্লাহ নু’আইম বিন হাম্মাদ (রহ.) :

(আরবী) عن عبدالله ابن عباس رضى الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : يكون في زمن المهدي ويصلى عيسى خلفه. كما في ((كنز العمال)) وقال السيوطى : هذا من أعجب العجب، فإنّ صلاة عيسى خلف المهدي ثابتة في عدّة أحاديث صحيحة بإخبار رسول اللّه، وهو الصادق المصدّق الذي لا يخلف خبره. كما في ((الحاوى للفتاوى))

অনুবাদঃ হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ইমাম মাহদী’র যুগেই ঈসার আগমন হবে এবং তিনি ইমাম মাহদী’র পেছনে সালাত পড়বেন।’ (রেফারেন্স : কাঞ্জুল উম্মাল খণ্ড নং ৫ পৃষ্ঠা নং ৩৮৩; হাদীস নং ৭৩৮৪; কিতাবুল ফিতান মানাকিবুল মাহদী, সংকলক ইমাম বুখারীর উস্তাদ হাফেযুল হাদীস আবু আব্দুল্লাহ নু’আইম বিন হাম্মাদ; মুসনাদে আহমদ, মুস্তাদরিক লিল হাকিম। হাদীসের মান : সহীহ)। বিশিষ্ট যুগ ইমাম আল্লামা সুয়ূতি (রহ.) লিখেছেন, “এটি অতিব বিস্ময়কর ব্যাপার বটে যে, নিশ্চয়ই ইমাম মাহদীর পেছনে হযরত ঈসা (আ.) সালাত আদায় করবেন। এটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিপুল পরিমাণ সংবাদ দ্বারা ও সহীহ হাদীস সমূহ দ্বারা প্রমাণিত। আর তিনি এমন একজন পরম সত্যবাদী যার প্রদত্ত সংবাদে ব্যত্যয় হবেনা।” (ইমাম সুয়ূতি রচিত আল হাভী লিল ফাতাওয়া, খণ্ড নং ২ পৃষ্ঠা নং ১৬৭)।

১২. গ্রন্থঃ আ’রফুল ওয়ারদি ফী আখবারিল মাহদী (العرف الوردي في أخبار المهدي) পৃষ্ঠা নং ১৩৫, সংকলক ইমাম জালাল উদ্দীন আস-সুয়ূতী (রহ.) :

(আরবী) وأخرج ابن أبي شيبة في المصنّف عن ابن سيرين قال: المهدي من هذه الأمّة، وهو الذي يؤمّ عيسى بن مريم

অনুবাদঃ ইমাম বুখারীর শায়খ (উস্তাদ) ইমাম ইবনে আবী শায়বাহ (রহ.) স্বীয় ‘মুসান্নাফ’ গ্রন্থে মুহাম্মদ ইবনে সিরীন (রহ.) হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, ইমাম মাহদী এই উম্মতের মধ্য হতে আগমন করবেন এবং তিনি ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ.)-এর (সালাতের) ইমামতি করবেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ ১৫/১৯৮; হাদীস নং ১৯৪৯৫, হাদীসের মান, হাসান)। এই হাদীসটিও সুস্পষ্ট প্রমাণ করে যে, ইমাম মাহদী এবং ঈসা (আ.) দুইজনই ভিন্ন ভিন্ন দুই ব্যক্তি। হযরত ইমাম মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ আল-মাহদীর পেছনে ঈসা (আ.) সালাত আদায় করবেন মর্মে দীর্ঘ একখানা হাদীসের একটি অংশ এইরূপ, وأنه يؤم هذه الأمة وعيسى يصلي خلفه অর্থাৎ ‘এবং তিনি (ঈসা) নিশ্চয়ই এই উম্মতের নেতৃত্ব দিবেন আর ঈসা তাঁর পেছনে সালাত পড়বেন।’ বিশিষ্ট হাদীস বিশারদ শায়খ নাসির উদ্দীন আলবানী (রহ.) লিখেছেন, এর সনদ বা ধারাবাহিক বর্ণনাসূত্র সহীহ তথা বিশুদ্ধ। (আস-সিলসিলাতুস সহীহাতুল মুখতাছিরাহ [السلسة الصحيحة المختصرة] খণ্ড নং ৫ পৃষ্ঠা নং ৪৮৬)।

ইমাম সুয়ূতির রচনা ‘আল’আরফুল ওয়ারদি ফী আখবারিল মাহদী’ পৃষ্ঠা নং ৫১

১৩. গ্রন্থঃ মুসনাদে আহমদ (المسند لامام احمد ابن الحنبل), ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.) :

(আরবী) وعن عبد الله بن عباس، رضي الله عنهما، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: لن تهلك. أمة أنا في أولها، وعيس ابن مريم في آخرها، والمهدي في وسطها . أخرجه الإمام أحمد بن حنبل، في مسنده ورواه الحافظ أبو نعيم، في عواليه

অনুবাদঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘উম্মতে মুহাম্মদীয়া কখনোই ধ্বংস হবেনা। যেহেতু আমি তাদের শুরুতে রয়েছি এবং ঈসা ইবনে মরিয়ম তাদের শেষাংশে থাকবেন আর তাদের মধ্যখানে থাকবেন ইমাম মাহদী।’ (ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল স্বীয় মসনাদগ্রন্থে এই হাদীস উল্লেখ করেছেন। হাফেযুল হাদীস আবু নু’আইম আল ইস্পাহানী স্বীয় আ’ওয়ালী (عوالي الحارث بن أبي اسامة) কিতাবেও উল্লেখ করেছেন, হাদীসের মান, হাসান)। ইমাম ইবনে হাজার আল হাইতামি আল-মাক্কী (রহ.) হাদীসটির والمهدي في وسطها বাক্যাংশের ব্যাখ্যায় القول المختصر فى علامات المهدى المنتظر নামক গ্রন্থে লিখেছেন, اريد بالوسط قريب آخرها حتى لا ينافى بقية الروايات المصرحة الخ অর্থাৎ ‘হাদীসে উল্লিখিত الوسط বা মধ্যখানে ইমাম মাহদী আগমন করবেন, একথার উদ্দেশ্য হল, উম্মাহার শেষ মুহূর্তের কাছাকাছি কোনো সময়ে আগমন করা, ফলে এটি সুস্পষ্ট অন্যান্য বর্ণনাগুলোর বিরোধিতা করেনা।’ (আল বুরহান ফী আলামাতিল মাহদী আখিরিয জামান -৫৭)। নিচে ইমাম মুনাভী (রহ.) এর ব্যাখ্যাটিও দিয়ে দেয়া হল।

আল বুরহান ফী আলামাতিল মাহদী আখিরিয জামান -৫৭
ইমাম মুনাভী (রহ.) এর বিশ্লেষণ, ইমাম মাহদী মধ্যখানে থাকবেন —একথার অর্থ হল, তিনি শেষ মুহূর্তের পূর্বক্ষণে থাকবেন। কেননা তাওয়াতূর পর্যায়ের হাদীস বলছে, ঈসা (আ.) নাযিল হবেন ইমাম মাহদীর যুগে এবং তিনি ইমাম মাহদীর পেছনে সালাত পড়বেন।

১৪. গ্রন্থঃ মুস্তাদরাক আ’লা আসসহীহাইন, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান ওয়াল মালাহিম, পরিচ্ছেদঃ ‘আকাশ’ থেকে ঈসা (আ.) নাযিল হওয়া : হাদীসঃ ৮৫২০

(আরবী) أخبرني الحسن بن حكيم المروزي ، ثنا أحمد بن إبراهيم الشذوري ، ثنا سعيد بن هبيرة ، ثنا حماد بن زيد ، عن أيوب السختياني ، وعلي بن زيد بن جدعان ، عن أبي نضرة ، قال : فينزل عيسى ابن مريم – عليه الصلاة والسلام – عند صلاة الفجر ، فيقول له إمام الناس : تقدم يا روح الله فصل بنا ، فيقول : إنكم معشر هذه الأمة أمراء بعضكم على بعض ، تقدم أنت فصل بنا ، فيتقدم فيصلي بهم فإذا انصرف أخذ عيسى – صلوات الله عليه – حربته [فينطلق] نحو الدجال فإذا رآه ذاب كما يذوب الرصاص ، فتقع حربته بين ثندوته فيقتله ، ثم ينهزم أصحابه فليس شيء يومئذ يجن منهم أحدا ، حتى إن الحجر يقول : يا مؤمن هذا كافر فاقتله. “هذا حديث صحيح الإسناد على شرط مسلم بذكر أيوب السختياني ، ولم يخرجاه”.

অনুবাদঃ আবী নাদ্বরাহ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন,…. অত:পর ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ.) ফজরের সময় নাযিল হবেন। তখন ইমামুন্নাস তথা লোকদের ইমাম (ইমাম মাহদী) তাঁকে অনুরোধ করবেন যে, হে রূহুল্লাহ আপনি সামনে বাড়ুন আর আমাদের সালাত পড়িয়ে দিন। প্রতিউত্তরে তিনি বলবেন, নিশ্চয়ই তোমরা এই উম্মাহ একের অন্যের নেতৃত্বের মর্যাদায় আশীষ প্রাপ্ত। সুতরাং তুমিই সামনে যাও এবং আমাদের সালাত পড়িয়ে দাও। এরপর তিনি (ইমাম মাহদী) সামনে এগিয়ে যাবেন এবং সালাত পড়াবেন। তারপর তিনি যখন সালাম ফিরাবেন তখন (দেখতে পাবেন) ঈসা সালাতুল্লাহি আ’লাই আপনা বর্শা হাতে তুলে নিচ্ছেন এবং দাজ্জালকে বধ করতে মনোযোগ দিচ্ছেন। তিনি যখনই তাকে দেখবেন তখনি সে (তথা প্রাণের ভয়ে মানসিকভাবে) লবণের ন্যায় গলে যেতে থাকবে। অত:পর তিনি তাঁর বর্শা নিজ বাহুতে বহন করবেন এবং তাকে (দাজ্জালকে) হত্যা করবেন। তারপর তিনি (তথা ঈসার নেতৃত্বে) তাঁর বাহিনীকে পরাজিত করবেন এবং সেদিন তাদের মধ্য থেকে কেউই বাঁচতে পারবে না। এমনকি তখন পাথর (পর্যন্ত) বলবে, হে মুমিন! এ হচ্ছে একজন কাফের! তুমি তাকে হত্যা কর। -সহীহ। (এ হাদীসের সনদ ‘সহীহ মুসলিম শরীফের’ শর্তেই সহীহ)।

অনুবাদ সহ সম্পূর্ণ আরবী ইবারত “বাংলা হাদীস” Apps থেকে সংগৃহীত। আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সহীহ হাদীস এখান থেকে পড়ুন।

কাদিয়ানীদের সহজে চেনার উপায়

শিক্ষাবিদ ও গবেষক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here