যিনি ঈসা তিনিই মাহদী, মহা বিভ্রান্তি ও ভয়ংকর অপব্যাখ্যা!!
তোমরা এই কাদিয়ানী মতের অনুসারী ভদ্রলোকটাকে এগুলো জিজ্ঞেস করে দেখ, জবাব দিতে পারবেনা!
একটি প্রশ্নোত্তরে এই সুলায়মান নামের সোনার ছেলেটা একদম সিলেক্টিভ ভাবে ঈসা (আ.) আর ইমাম মাহদী, দুইজনকে একই সত্তা বানিয়ে দেয়। এমনকি সে দলিলও দেয়! আহা! এই কোন দুনিয়ায় এলাম!! অথচ তার পাশেই বসা ছিল তাদের আহমদীয়া (কাদিয়ানী) জামাতের ন্যাশনাল আমীর আব্দুল আউয়াল সাহেব। কিন্তু তিনিও তার এই সুস্পষ্ট বিকৃত ব্যাখ্যাকে সাপোর্ট দিয়ে গেছেন, থামিয়ে দেননি। আফসোস! সিফাত মওসূফের ব্যবহারিক নিয়ম কেমন, সে সম্পর্কেও যার বিন্দুমাত্র একাডেমিক জ্ঞান নেই সে কিনা اماما مهديا (ইমামান মাহদীয়্যান)-এর অর্থ করতে আসছে ‘ইমাম মাহদীরূপে’! অথচ সিফাত মওসূফ হিসেবে এখানে ‘মাহদীয়্যান’ এর অর্থ আগে তারপর ‘ইমামান’ এর অর্থ। ফলে সঠিক অর্থ হল ‘একজন সুপথপ্রাপ্ত ইমাম‘। অতএব স্পষ্টত বুঝা গেল যে, মসনাদে আহমদ এর এই হাদীস দ্বারাও ঈসা আর ইমাম মাহদী দুইজনকে একজন বুঝায়না।
- হাদীসে এসেছে, রাসূল (সা:) ইরশাদ করেছেন, يوشك من عاش منكم ان يلقى عيسى بن مريم إماما مهديا وحكما عدلا فيكسر الصليب ويقتل الخنزير ويضع الجزية وتضع الحرب أوزارها অর্থ: তোমাদের মধ্য হতে যারা বেঁচে থাকবে তারা অচিরেই ঈসা (আ.)-কে একজন সুপথপ্রাপ্ত ইমাম ও ন্যায়পরায়ণ শাসকরূপে দেখতে পাবে। তিনি ক্রুশ ভাঙবেন এবং শূয়োর হত্যা করবেন। জিজিয়া (কর) তুলে দেবেন তখন যুদ্ধ আপনা সরাঞ্জামগুলোকে ভারমুক্ত করবে (মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ৯১১৭)।
একজন ব্যাকরণের ছাত্র হিসেবে অবশ্যই জানার কথা যে, আরবী থেকে বাংলায় অনুবাদের ক্ষেত্রে সিফাত (বিশেষণপদ)’র অর্থ আগে হয় আর মওসূফ (বিশেষিতপদ)’র অর্থ পরে হয়। যেমন ১. আজরান কারীমা [اجرا كريماً] অর্থাৎ উত্তম প্রতিদান। এখানে প্রথমে ‘কারীমা’ এর অর্থ নিতে হয়েছে। কেননা এটি সিফাত (বিশেষণপদ)। তারপর ‘আজরা’ এর অর্থ নিতে হয়েছে। একই নিয়মে ২. ফাদ্বলান কাবীরা [فضلاً كبيراً] অর্থাৎ মহা অনুগ্রহ। ৩. আযাবান মুহীনা [عذابا مهينا] অর্থাৎ লাঞ্চনাদায়ক শাস্তি। (সূরা আহযাব : ৪৪, ৪৭, ৫৭)। সংক্ষেপে। জনাব সুলায়মান পঞ্চগড়ী! যদি লজ্জাশরম কিছু থাকে তবে এধরণের ছাগলামি আর কখনো করতে আসবেননা। আল্লাহকে ভয় করুন আর তওবা করুন।
যাইহোক আমি তখনি ঐ ভিডিও ক্লিপের নিচে কমেন্টে তার/তাদের ইচ্ছাকৃত ইসলামী শিক্ষার সুস্পষ্ট বিকৃতির স্বরূপ তুলে ধরি। আমি লিখলাম,
জনাব সুলায়মান পঞ্চগড়ী! আপনি হাদীসের অপব্যাখ্যা দিচ্ছেন কেন? কোনো ব্যক্তি গুণগত কারণে ‘মাহদী’ তথা সুপথপ্রাপ্ত হওয়ার মানে কি সেই লোকটি আর ‘প্রকৃত ইমাম মাহদী’ দুইজন একই সত্তা হয়ে যাওয়া?
যেমন ধরুন, কেউ বলল; যায়েদ বাঘেররূপে আবির্ভূত হয়েছে!! এখানে যায়েদ আর বাঘ কি একই সত্তা? চাঁদেররূপে সুন্দরী মেয়ে। এখন মেয়েটি আর চাঁদ কি একই সত্তা? মির্যা গোলাম আহমদ তার বইয়ের এক জায়গায় লিখেছেন, সে দুই বছর পর্যন্ত মরিয়মিরূপে লালিতপালিত হয়েছে। (হাকীকাতুল ওহী, বাংলা অনূদিত কপি দেখুন)। এখন মরিয়ম আর মির্যা কাদিয়ানী কি একই সত্তা?
কাদিয়ানীদের কী হল যে, তারা মির্যা কাদিয়ানীকে একই সাথে ইমাম মাহদী আর ঈসা সাব্যস্ত করার জন্য অসংখ্য সহীহ হাদীসকে পর্যন্ত চোখবুঁজে এড়িয়ে যাচ্ছে! তাদের কলিজায় কি মরণের ভয় নেই? অথচ সহীহ মুসলিম শরীফের কিতাবুল ফিতান অংশে আছে, ঈসা (আ.) দুইজন ফেরেশতার দুই পাখার উপর হাত রেখে দামেস্কে অবতরণ করবেন (واضعا كفيه على اجنحة ملكين)। আবুদাউদ কিতাবুল মাহদী অংশে আছে, ইমাম মাহদী রাসূল (সা.)-এর বংশে বিবি ফাতেমার সন্তানদের মধ্য থেকে হবেন (المهدي من عترتي من ولد فاطمة)। স্পষ্টত বুঝা যায় যে, দুইজন ভিন্ন ভিন্ন দুই ব্যক্তি। এরপরেও ইবনে মাজাহ শরীফের হাদীসের ولا المهدى الا عيسى ابن مريم অংশটি হতে আপনারা কিভাবে এমন অর্থ নিতে পারেন যে অর্থ অগণিত সহীহ হাদীসের বিরুদ্ধে যায়!? আপনারা কি ইবনে মাজাহ’র এই খণ্ডিতাংশের শুরুতেই ‘ওয়াও’ (و) বর্ণ দেখেন না, যেটিকে আরবী ব্যকরণের ভাষায় ‘ওয়ায়ে হালিয়া (الواو )’ তথা সময়-নির্দেশক-ওয়াও বলা হয়? যদ্দরুন এই বাক্যাংশের শুধুমাত্র এই অর্থই দাঁড়ায় যে, أنه لا مهدي كاملاً معصوماً إلا عيسى عليه السلام অর্থাৎ “তখন ঈসা ইবনে মরিয়মই নিষ্পাপ ও পরিপূর্ণ সুপথপ্রাপ্ত ব্যক্তি।” (ইমাম কুরতুবী, শায়খ ইবনুল কাইয়ুম এবং ইমাম ইবনে কাসীর প্রমুখ সকলে এভাবেই এর অর্থ করেছেন—লিখক)। এ কথা বলে শেষ যুগের সেই সময়টির প্রতি ইংগিত করা উদ্দেশ্য; যে সময়টিতে সমগ্র দুনিয়ায় শুধুমাত্র ঈসা ইবনে মরিয়মই পরিপূর্ণ একজন সুপথপ্রাপ্তির মর্যাদা লাভ করবেন। যেহেতু ঈসা (আ.)-এর আগমনের কয়েক বছরের মাথায় হযরত ইমাম মাহদীও ইন্তেকাল করবেন।
মোটকথা, হাদীসের ঐ অংশটি সমস্ত মুহাদ্দেসীনের মতানুসারে খুবই জঈফ বা দুর্বল এবং মুনকার বা অগ্রহণযোগ্য হলেও (দেখুন, মীযানুল ই’তিদাল ৩/৫৩৫; ইমাম যাহাবী/حديثه: ولا المهدى إلا عيسى بن مريم وهو خبر منكر، أخرجه ابن ماجه) সেটি দ্বারা মূলত ঈসা (আ.)-এর অন্যতম একটি গুণ বা বৈশিষ্ট্য বুঝানোই উদ্দেশ্য, ভিন্ন ভিন্ন দুই ব্যক্তিকে একই ব্যক্তি বুঝানো মোটেও উদ্দেশ্য নয়; যা একটু আগেই আমি উপমা দিয়ে বলে এসেছি।
নির্বোধরা কি মির্যা কাদিয়ানীর বইপুস্তক পড়েনা? যদি পড়ে থাকে তাহলে তারা কিজন্য মির্যার ১৯০২ সালের দিকে রচিত ‘তুহফায়ে গোলড়বিয়া’ নামীয় বইটিতে খেয়াল করেনা যে, সে নিজেই ঈসা (আ.) এবং ইমাম মাহদী দুইজনকে ভিন্ন ভিন্ন সত্তা হওয়া লিখে গেছেন। তার ভাষ্যমতে, اور ہم ثابت کر چکے ہیں کہ وہی رجل فارسی مہدی ہے اس لئے ماننا پڑا کہ مسیح موعود اور مہدی اور دجال تینوں مشرق میں ہی ظاہر ہوں گے اور وہ ملک ہند ہے۔ অর্থাৎ এবং আমি প্রমাণ করেছি যে, সেই পারস্যের পুরুষটি-ই মাহদী। যেজন্য মানতে হবে যে, মসীহ মওঊদ, মাহদী এবং দাজ্জাল তিনোজন পূর্বদিকেই প্রকাশিত হবে আর সেই রাষ্ট্রটি হচ্ছে হিন্দুস্থান। (রূহানী খাযায়েন ১৭/১৬৭)। স্পষ্টত বুঝা যাচ্ছে যে, ঈসা আর ইমাম মাহদী কখনোই একই সত্তা হবেন না। আর এটি মির্যা কাদিয়ানীরও কলম থেকে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় যেভাবেই হোক, বেরিয়ে গেছে। কথায় আছে না, চোর যতই চালাক হোক; সে কোনো না কোনো আলামত নিশ্চয়ই ছেড়ে যায়। যার ফলে দেরিতে হলেও তাকে পাকড়াও হতেই হয়। এটাই প্রকৃতির নিয়তি। প্রামাণ্য স্ক্যানকপি
এবার যে কথাটি বলে প্রাসঙ্গিক বিতর্কের ইতি টানতে চাই তা হচ্ছে, আক্ষরিক অর্থে ইসলামের প্রথম চারো খলীফাও خلفاء الراشدين المهديين তথা ‘আল মাহদিয়্যীন’ তথা সুপথপ্রাপ্তগণ। [তিরমিযী শরীফ, কিতাবুল ইলম হা/২৬৭৬]। এই দিক থেকে নবীগণ সবাই ‘মাহদী’। এমনকি হযরত মুহাম্মদ (সা:)-ও ‘মাহদী’। মজার ব্যাপার হল, এই কথাগুলো মির্যা কাদিয়ানী নিজেই লিখে গেছে। (রূহানী খাযায়েন ১৪/৩৯৪)। সুতরাং বুঝা গেল, আক্ষরিক অর্থে ঈসা (আ:)-কে ‘মাহদী’ সম্বোধন করা হলেও সমস্যা নেই। তাতে দুইজনকে একই ব্যক্তি বুঝাবেনা।
এরপরেও যার বুঝে আসবেনা তার জন্য জাহান্নামের আগুনই যথেষ্ট। তাকে আল্লাহর সোপর্দ। আল্লাহর সাথে সে বুঝাপড়া করুক। আল্লাহ হাফেজ!
লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক