চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণ রমাজানের ১৩ আর ২৮ তারিখে হওয়া

0
চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণ রমাজানের ১৩ আর ২৮ তারিখে হওয়া

চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণ রমাজানের ১৩ এবং ২৮ তারিখে হওয়ার যুক্তিতর্ক কতটুকু সন্তোষজনক!

এ নিয়ে আগেও দুটি লিখা লিখেছি। সেখানে রেওয়ায়তটির সনদ তথা বর্ণনাসূত্র সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ হাদীসবিশারদদের মতামত তুলে ধরেছি। এছাড়া আরও অনেক বিষয়ে আলোকপাত করেছি। জানতে পড়ুন! আজকে ভিন্ন আরেকটা বিষয় নিয়ে লিখতে চাই, ইনশাআল্লাহ।

চন্দ্রসূর্য গ্রহণ -১

চন্দ্রসূর্য গ্রহণ -২

চন্দ্রসূর্য গ্রহণ -৩

দারে কুতনী, কিতাবুল ঈদাইন

প্রথমে দেখা যাক তাবেয়ী মুহাম্মদ বিন আলী’র নামে বর্ণিত দারে কুতনি’র রেওয়ায়েতটিতে চন্দ্র আর সূর্যগ্রহণ সংক্রান্ত কথা দু’খানা কীরূপ শব্দে এসেছে! আমরা দেখি, চন্দ্রগ্রহণ সম্পর্কে এসেছে و تنكسف القمر لاول ليلة من رمضان (অর্থাৎ চন্দ্রগ্রহণ লাগবে রমাজানের প্রথম রাত্রিতে)। এতে সুস্পষ্ট যে, চন্দ্রগ্রহণের সম্পর্ক তারিখের সাথে নয়, বরং মাসের প্রথম রাত্রির সাথে। হ্যাঁ, যদি এটি তারিখের সাথে সম্পর্ক হত তাহলে বাক্যটি হত لاول ليلة من ليالى الكسوف তথা চন্দ্রগ্রহণ লাগবে গ্রহণের পহেলা রাত্রিতে। কিন্তু বর্ণনায় কথাটি এইরূপ আসেনি। সুতরাং বুঝা গেল, চন্দ্রগ্রহণ চাঁদের ১৩, ১৪ আর ১৫ তারিখের প্রথম তারিখে সংঘটিত হওয়ার উল্লিখিত কাসুন্দি অত্র বর্ণনার لاول ليلة من رمضان কথাটির সম্পূর্ণ বিরোধী। কারণ রমাজানের তের তারিখ আর রমাজানের প্রথম রাত্রি দুটো এক জিনিস না, যা একজন বাচ্চা ছেলেও বুঝে!

নির্বোধরা নতুন চাঁদ আর সাধারণ চাঁদের কাসুন্দি টানার আগে কেন চিন্তা করে দেখেনা যে, হেলাল (هلال) বা নতুন চাঁদ হল চাঁদের সূচনাকালীন সময় থেকে ৩য়-৭ম রাত্রির চাঁদ। আর তার পরবর্তী ধাপ সূচিত হয় قمر বা সাধারণ চাঁদের মাধ্যমে। আর সে হিসেবে সাধারণ চাঁদে গ্রহণ লাগতে হলে তখন لاول ليلة من ليالى الكسوف অর্থাৎ চন্দ্রগ্রহণের পহেলা রাত্রিতে (অর্থাৎ প্রকৃতির সাধারণ নিয়মেই) হতে হয়। আর তখন বর্ণনাটির বাহ্যিক অর্থ কোনোভাবেই ঠিক রাখা সম্ভব হয়না। তাই প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক, চন্দ্রগ্রহণের সম্পর্ক যদি গ্রহণের তারিখের সাথেই সম্পর্কিত হত তবে কিজন্য বর্ণনাটি لاول ليلة من ليالى الكسوف এইরূপ শব্দচয়নে আসেনি? আমি এখানে শুধুমাত্র চন্দ্রগ্রহণ সম্পর্কে বললাম। সূর্যগ্রহণ নিয়ে আজ না-ই বা বললাম। কিন্তু মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী সহ ইতিপূর্বে আরও যতজন ইমাম মাহদী দাবীদার ছিল তাদের সময়টিতে চন্দ্রগ্রহণ এই নিয়মে ঘটেনি; বরং ১৩ ই রমাজানে ঘটেছিল। যা অত্যন্ত প্রকৃতির সাধারণ ঘটনা।

বলে রাখা দরকার, মির্যা কাদিয়ানীর মাহদী দাবীর পূর্বে ১৮৫১ সালেও একই রমাজানের ১৩ তারিখে চন্দ্রগ্রহণ লেগেছিল, তখন আলী মুহাম্মদ বাব ইরানী ছিলেন ইমাম মাহদী দাবীদার। এনসাক্লোপিডিয়া অফ ব্রিটানিকার তথ্য অনুযায়ী প্রতি ২২৩ বছর অন্তর চন্দ্রসূর্য গ্রহণের ঘটনা উল্লিখিত নিয়মেই ঘটতে থাকবে। মরক্কোর বারঘৌতা বারবার রাজ্যের শাসক সালেহ বিন তারিফ ৭৪৪ সালে “নবী” দাবী করেন। ৭৯১ সাল পর্যন্ত শাসন করেন। তিনি নিজেকে ইমাম মাহদীও দাবী করেন। সে বছরই একই রমাজানের ১৩ এবং ২৮ তারিখে চন্দ্রগ্রহণ এবং সূর্যগ্রহনের ঘটনা ঘটে। আর এইরূপ ঘটনা তার জীবদ্দশায় প্রায় চার-চার বার ঘটেছিল। যথাক্রমে ৭৪৪, ৭৪৫, ৭৮৭ এবং ৭৮৮ খ্রিস্টাব্দে। তার ‘সালেহুল মুমিনীন’ নামীয় জামাত প্রায় সাড়ে তিন’শ বছর পর্যন্ত আফ্রিকায় টিকে ছিল। পরে বিলুপ্ত হয়ে যায়। কাদিয়ানী ম্যাগাজিন ‘পাক্ষিক আহমদী’ (পাতা ২৪ তাং ১৫ এপ্রিল ২০১৫ইং) এর একটি প্রকাশিত তথ্যে উল্লেখ আছে, রাসূল (সা.)-এর যুগ হতে বর্তমান যুগ (২০০১ইং) পর্যন্ত একই রমাজানের ১৩ এবং ২৮ তারিখে চন্দ্রগ্রহণ এবং সূর্যগ্রহনের ঘটনা প্রায় ১০৯ বার ঘটে আসছে। আমেরিকার গবেষণা বিভাগ “নাসা”-এর তথ্যমতে এইরূপ গ্রহণের ঘটনা ইতিপূর্বে আরও প্রায় ৫০০০ বার ঘটেছিল। অথচ ঐ বর্ণনার শেষেই রয়েছে যে, و لم تكونا منذ خلق الله السموات و الارض অর্থাৎ এই দুটি নিদর্শন ইতিপূর্বে আল্লাহ যখন থেকে আসমান জমিন সৃষ্টি করেছেন তখন অব্দি সংঘটিত হয়নি। জ্ঞানীদের ভাবিয়ে তুলে কিনা?

অতএব স্পষ্টত বুঝা যাচ্ছে, এইধরনের গ্রহণ শুধুই প্রাকৃতিক, এর সাথে কোনো প্রেরিত মহাপুরুষের আবির্ভাবের সম্পর্ক নেই। নইলে একই রমাজানের ১৩ তারিখে চন্দ্রগ্রহণ এবং ২৮ তারিখে সূর্যগ্রহনের উক্ত ঘটনা ইতিপূর্বে এত হাজার বার ঘটতে পারেনা। কাজেই, মির্যার সময়টিতে এমন ঘটনা ঘটেছিল বলে সাধারণদের এত অবাক হবার কোনো কারণ নেই।

জ্ঞানীদের জন্য বিষয়টির বুঝার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট হবে বলে আমি মনে করি।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here