দশ ঢোক দুধ পান ও কুরআনে রজমের আয়াত থাকা

0
দশ ঢোক দুধ পান ও কুরআনে রজমের আয়াত থাকা

শীয়া, আহলে কুরআন, খ্রিস্টান মিশনারী এবং নাস্তিকদের বিভ্রান্তিমূলক জিজ্ঞাসার জবাবে অতিব সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ লিখাটি লিখছি

প্রশ্নকর্তা : কুরআনে রজমের আয়াত নেই কেন?

উত্তর : প্রশ্নকারী হয়ত বিভিন্ন হাদীসে রজম সংক্রান্ত আয়াত নাযিল হওয়ার বিষয়ে জানতে পেরে অতপর সেই আয়াত কুরআনে বিদ্যমান নেই দেখেই বিভ্রান্তিতে নিপতিত হয়েছেন! এমন অনেকের এই বিভ্রান্তি সৃষ্টির প্রধান কারণ হচ্ছে তাদের নাসিখ-মানসূখের পুরোপুরি ইলম (নলেজ) না থাকা। এবার মূলকথায় আসা যাক, রজমের আয়াত সম্পর্কে ঐতিহাসিকভাবে যে তথ্যটি পাওয়া যায় সেখানে আরও একটি তথ্য রয়েছে, নাস্তিক জিন্দিকরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে সেই তথ্যটি চেপে যায় শুধুই কুরআনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য। সে তথ্যটি হল, রজমের আয়াত সম্পর্কে হাদীস দ্বারা পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে যে, সেগুলো কুরআনের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলনা, ফলে সেগুলোর তেলাওয়াত এবং বিধান উভয়টি রহিত। ফলে রাসূল (সা.) কুরআন সংকলনের সময় সেসব আয়াতও পান্ডুলিপিতে সন্নিবেশিত করতে নিষেধ করেন। এ সম্পর্কে হাদীসে এসেছে, হযরত উমার (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.) এর নিকট গিয়েছিলেন এবং জিজ্ঞেস করেছিলেন, يا رسول الله أكتبني آية الرجم قال لا استطيع ذاك অর্থ, হে আল্লাহর রাসুল, আমাকে রজমের আয়াতটি লিখে দেওয়া হোক। তিনি বললেন, আমি তা করতে পারব না। (সুনানুল কুবরা বায়হাকী ৮/২১১ এবং সুনানুল কুবরা লিন-নাসাঈ হাদীস নং ৭১৪৮। তাহকিক, শায়খ আলবানী (রহ.) বলেছেন, এর সনদ সহীহ। রজমের আয়াত সম্পর্কে উত্তর পেলেন।

  • নুসখ বা রহিতের ধরণ চারটি। তন্মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে, যার হুকুম ও তিলওয়াত কোনোটিই বহাল থাকেনা। যেমনঃ মাহরামের হুকুম আরোপ করার উদ্দেশ্যে দশ আর পাঁচ ঢোক দুধ পান করা সংক্রান্ত নাযিলকৃত আয়াত প্রথম দিকে থাকা কিন্তু পরে তা রহিত তথা মিটিয়ে দেয়া। পবিত্র কুরআনে নাসিখ-মানসুখ বা রহিতকরণ সম্পর্কে আল্লাহতালা বলেন, ‘এবং যখন আমি এক আয়াতের স্থলে অন্য আয়াত উপস্থিত করি এবং আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেন তিনিই সে সম্পর্কে ভাল জানেন; তখন তারা বলেঃ আপনি তো মনগড়া উক্তি করেন; বরং তাদের অধিকাংশ লোকই জানে না।’ (সূরা নাহল ১০১)। ‘আমি কোনো আয়াত রহিত করলে অথবা মিটিয়ে দিলে তদাপেক্ষা উত্তম অথবা তার সমপর্যায়ের আয়াত আনয়ন করি। তুমি কি জান না যে, আল্লাহ সব কিছুর উপর শক্তিমান? (সূরা বাকারা ১০৬)।

এবার দশ ঢোক দুধ পান করা সম্পর্কে বলছি শুনুন!

এই দশ ঢোক দুধ পান সংক্রান্ত বিধানটিও রজমের ন্যায় মানসূখ তথা রহিত। এখানে বলে রাখা জরুরি যে, রহিত হয়ে যাওয়ার অন্যতম আরেকটি পদ্ধতি হচ্ছে, তেলাওয়াত বাদ পড়ে যাওয়া, তবে শুধুই হুকুম (বিধান) অক্ষুণ্ণ থাকা। রাসূল (সা.) এর পত্নীগণ থেকেও ব্যাপারটি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। কাজেই এটি কিছুতেই হতে পারেনা যে, এমন একটি বিষয়ে তারা আল্লাহর রাসূল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করে জেনে নেয়া ব্যতীতই একই যুগে সকলে একই রকম বুঝ গ্রহণ করবেন!

যেমন এ সম্পর্কে একখানা সহীহ হাদীসে এসেছে, নবী (সা.) এর অন্যান্য সহধর্মিণী দশ/পাঁচ ঢোক দুধপান করা দ্বারা কোনো পুরুষের তাদের নিকট প্রবেশ করতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করতেন। তারা (আয়িশা রাদ্বি.-কে উদ্দেশ্য করে) বলতেন, আল্লাহর কসম, আমরা মনে করি রাসুল (সা.) সাহলা বিনতে সুহাইল (রা.)-কে যে অনুমতি দিয়েছিলেন তা কেবলমাত্র সালিম (রা.) এর জন্য রাসুল (সা.) এর পক্ষ থেকে রুখসত তথা বিশেষ ছাড় ছিল। কসম আল্লাহর, এইরূপ দুধপান করানো দ্বারা কেউ আমাদের নিকট প্রবেশ করতে পারবেনা। নবী করীম (সা.) এর সকল সহধর্মিণী এই মতের উপর অটল ছিলেন। (সুনান আবু দাউদ, অনুচ্ছেদ ১০৪, হাদীস নং ২০৫৭)।

আশাকরি বুঝতেই পারছেন যে, ১০ বা ৫ ঢোক দুধ পান সংক্রান্ত উভয় বিধান অস্থায়ী ছিল, চূড়ান্ত ছিল না। ইসলামে চূড়ান্ত বিধান হিসেবে নির্ধারিত হচ্ছে দুগ্ধপোষ্য শিশুর দুধপানের আদর্শ বয়স মাত্র দুই-আড়াই বছরই। তাই ১০ আর ৫ ঢোকের আয়াত কুরআনের পাণ্ডুলিপিতে স্থান পায়নি। রাসূল (সা.) নিজেই তা সন্নিবেশিত করেননি। নাসিখ-মানসূখ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে শাহ ওয়ালি উল্লাহ মুহাদ্দিস আদ দেহলভি (রহ.)-এর ‘আল ফাউযুল কাবীর’ কিতাবটিও পড়া যেতে পারে।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here