হায়াতে ঈসা মসীহ প্রসঙ্গ
পবিত্র কুরআন হতেও ইংগিতে প্রমাণিত, হযরত ঈসা (আ.)-এর পুনঃআগমন অকাট্য সত্য!
- কে জানি বলেছিল, ঈসা (আ.) জীবিত নেই, কুরআন নাকি এর সাক্ষী! আমি জবাবে বলতে চাই, এটি একদমই অসত্য দাবী, যে দাবী পরিষ্কার কুরআন বিরোধী।
বিজ্ঞপাঠকবৃন্দ! লক্ষ্য করুন, পবিত্র কুরআনের সূরা আলে ইমরান আয়াত নং ৪৬। সেখানে ঈসা (আ.) সম্পর্কে و يكلم الناس فى المهد و كهلا বলা আছে। অর্থ, ঈসা (আ.) দোলনায় থাকাবস্থায় যেমন মানুষের সাথে কথা বলবেন (শৈশবে বলেছেনও), তদ্রূপ প্রৌঢ় বয়সেও বলবেন।
আরবি অভিধানগ্রন্থ ‘লিসানুল আরব‘ [لسان العرب] দেখুন, كهل (কাহোল) বা প্রৌঢ় বয়স ৩৪ থেকে ৫১-এর মাঝামাঝি বয়সকে বলে। এখন আমার প্রশ্ন হল, ঈসা (আ.) এর উর্ধ্বাকাশে হযরত জিবরাঈলের মাধ্যমে ‘রাফা’ বা উঠিয়ে নেয়া যদি অনূর্ধ্ব তেত্রিশ বছর (Thirty-three years) বয়সে হয় (নিশ্চয় এই রকম বয়সেই তাঁর রাফা হয়েছিল–حين رفع كان ابن اثنتين و ثلاثين سنة و ستة اشهر; তবকাতে ইবনে সা’আদ ১/৩৫-৩৬ ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত), তাহলে তিনি প্রৌঢ় বয়সে কখন পৌছলেন? আর ঐ প্রৌঢ় (তথা পরিণত) বয়সে মানুষের সাথেও বা কখন কথা বললেন? এখন যদি প্রৌঢ় বয়সে তাঁর কথা বলতে হয় তবে কি তাঁকে পৃথিবীতে পুনরায় আসতে হবেনা? অবশ্য আসতে হবে।
উল্লেখ্য, জিবরাঈলের মাধ্যমে সংঘটিত ‘রাফা’ হতে শুধুই রূহ উঠিয়ে নেয়া উদ্দেশ্য হবেনা (فأوحى الله عز وجل إلي جبريل عليه السلام أن أرفع عبدي إلي ;রেফারেন্স তারীখে ইবনে আসাকীর ৪৭/৪৭২, তারীখে বাগদাদ ১১/৩৭৯)।
সুতরাং কুরআনের উক্ত আয়াতের মজবুত ইংগিত, ঈসা (আ.)-এর পুনঃ আগমন অকাট্য সত্য; (কাজেই রূপক তুপক এগুলা আজেবাজে কথা)। অসংখ্য সহীহ হাদীস এ কথারই পরিষ্কার সাক্ষী।
- বলাবাহুল্য, ঈসা (আ.)-এর ১২০ বছর জীবন-যাপন করা মর্মে বর্ণনাটি সহীহ নয়, বরং সর্বসম্মতিক্রমে দুর্বল ও অগ্রহণযোগ্য। তাছাড়া বর্ণনাটির শুরুতে কিন্তু এও উল্লেখ আছে, ‘প্রত্যেক নবী তাঁর পূর্বের নবীর অর্ধেক আয়ুষ্কাল অবশ্যই পেয়েছেন।’ তাই এখন প্রশ্ন দাঁড়াবে, হযরত ইদরীস (আ:) এর পরেই হযরত নূহ (আ:)-এর আগমন হয়। আর হযরত ইদরীস (আ.)-এর বয়স হয়েছিল মাত্র ৮২ বছর। অপরদিকে নূহ (আ:)-এর বয়স ছিল ৯৫০ বছর। অথচ তাঁর বয়স ৮২ বছরের অর্ধেকই হওয়ার কথা। এখন এটি কি সুস্পষ্ট অসঙ্গতিপূর্ণ কথা নয়? রাসূল (সা.) কি এইরূপ অসঙ্গতিপূর্ণ কথা বলবেন? নিশ্চয়ই না। উল্লেখ্য, বাইবেল ‘আদিপুস্তক‘ ৫:১৮-২৪ মতে ইদরীস (আ.) ৩৬৫ বছর জীবিত ছিলেন।
সে যাইহোক, কোনোভাবেই কিন্তু নূহ (আ.) হযরত ইদরীস (আ.)-এর অর্ধেক আয়ুষ্কাল পাননি। এভাবে আরও অনেক উল্লেখ করা যাবে। সংক্ষেপে।
লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী