Home কাদিয়ানীদের প্রশ্ন ও আমার জবাব মুহাম্মদ (সা.)-কেও তাওয়াফফা করা মানে কি আকাশে উঠিয়ে নেয়া?

মুহাম্মদ (সা.)-কেও তাওয়াফফা করা মানে কি আকাশে উঠিয়ে নেয়া?

0
মুহাম্মদ (সা.)-কেও তাওয়াফফা করা মানে কি আকাশে উঠিয়ে নেয়া?

কাদিয়ানী মতবাদের ভ্রান্তি ও সংশয় নিরসন

হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কেও কি فلما توفيتنى এর কারণে সশরীরে আকাশে উঠিয়ে নিয়া হল বুঝাবে? উত্তর পড়ুন!

কাদিয়ানীর প্রশ্ন : সহীহ বুখারীর একটি হাদীসে মুহাম্মদ (সা.) আর ঈসা (আ.) দু’জনের ক্ষেত্রেই কিন্তু ‘ফা-লাম্মা তাওয়াফ্ফাইতানী’ (فلما توفيتنى) শব্দ উল্লেখ আছে। এখন এর অর্থ ‘আকাশে উঠিয়ে নেয়া’ হলে তবে কি মুহাম্মদ (সা.)-কেও আকাশে উঠিয়ে নেয়া হল?

মুসলিম উম্মাহা’র পক্ষ হতে উত্তর : (১) ‘তাওয়াফ্ফা’ (توفى) শব্দের আভিধানিক অর্থ ‘পুরোপুরি নিয়ে নেয়া’ (أخذ الشيئ وافيا) বা ‘পূর্ণকরা’। যেমন حتى يتوفهن الموت অর্থ- তাদেরকে মৃত্যু ‘উঠিয়ে নেয়া’ পর্যন্ত। (সূরা নিসা, আয়াত-১৫)। যদিও বা শব্দটি ব্যবহারিক ক্ষেত্রে ক্বারীনার বিভিন্নতার কারণে বিভিন্ন অর্থ পরিগ্রহণ করবে। উল্লেখ্য, মির্যা কাদিয়ানীর বইতে توفى (متوفيك) শব্দের ভিন্ন ভিন্ন ৫ ধরণের অর্থ পাওয়া যায়। সেই অর্থগুলো হচ্ছে ‘পরিপূর্ণ নেয়ামত দান করা’ (রূহানী খাযায়েন ১:৬২০); ‘পরিপূর্ণ পুরষ্কার দেয়া’ (রূহানী খাযায়েন ১:৬৬৪-৬৫); ‘অপমানকর ও অভিশপ্ত মৃত্যু হতে রক্ষাকরা’ (রূহানী খাযায়েন ১২:২৩); ‘জন্মগ্রহণকরা’ (রূহানী খাযায়েন ১৯:৪৯) ইত্যাদী। মজার ব্যাপার হল, মির্যার সবগুলো রচনাতেই ‘তাওয়াফফা’ (توفى) ক্রিয়াপদের কর্তা আল্লাহ এবং কর্ম যীরূহ (প্রাণী)ই হয়েছে। তা সত্ত্বেও ‘তাওয়াফফা’ শব্দটি ‘মৃত্যু’ অর্থে পরিগৃহীত হয়নি। আশ্চর্যের কথা হল, মির্যায়ী মুরিদরা মির্যার এ সমস্ত স্বেচ্ছাচারী কার্যকলাপে কোনোই প্রশ্ন তুলেনা! যত তর্ক-বিরোধ আর যুক্তি প্রমাণ সবই যেন হযরত ঈসা (আ.)-কে মেরে ফেলার জন্য! আহ! মির্যায়ী আহ!! কিভাবে সম্ভব এই দ্বৈত নীতি! কারো যাচ্ছেতাই ‘তাওয়াফফা’ অর্থ নিতে কোনো অভিযোগ নেই, কিন্তু ঈসা (আ.)-এর বেলাতে শব্দটিকে জোর করে হলেও মৃত্যু অর্থের জন্যই বরাদ্দ দেয়া! এমন জুলুম আর অসম বন্টন খোদার আর কোনো সৃষ্টির মাঝেও আছে কিনা জানা নেই!

(২) প্রশ্নকর্তা হয়ত জানেই না যে, আজরাঈল (আ.)-এর মাধ্যমে ‘উঠিয়ে নেয়া’ আর জিবরাঈল (আ.)-এর মাধ্যমে ‘উঠিয়ে নেয়া’ এক জিনিস না। রাসূল (সা.)-এর ‘তাওয়াফফা’ (উঠিয়ে নেয়া)-এর ঘটনা মালাকুল মউত হযরত আজরাঈলের মাধ্যমে ঘটেছিল তাই এর অর্থ মৃত্যুর মাধ্যমে শুধু রূহ ‘উঠিয়ে নেয়া’ উদ্দেশ্য! পক্ষান্তরে ঈসা (আ.)-এর ‘উঠিয়ে নেয়া’র ঘটনা রূহুল কুদস হযরত জিবরাঈল (আ.)-এর মাধ্যমে ঘটেছিল। পবিত্র কুরআনেও এর ইংগিত রয়েছে। দেখুন اذ ايدتك بروح القدس (সূরা মায়েদা-১১০)। এর সুস্পষ্ট বিবরণ রয়েছে একাধিক সহীহ হাদীসে।[1] আশাকরি উত্তর পেয়েছেন।

টিকা : [1] ঈসা (আ.)-এর ‘তাওয়াফফা’ (توفى) তথা উঠিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটেছিল রূহুল কুদস হযরত জিবরাঈল (আ.)-এর মাধ্যমে। এর সমর্থনে একাধিক সহীহ হাদীস বিদ্যমান। হাদীস (আরবী), قال رسول الله صلى الله عليه وسلم في حديث طويل لما أجتمع اليهود على عيسى عليه السلام ليقتلوه وجاء فيه : “… فأوحى الله إلى جبريل أن ارفع إلي عبدي” অর্থাৎ হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যখন ইহুদীরা ঈসা (আ.)-কে হত্যার উদ্দেশ্যে সমবেত হলো তখন জিবরাঈল (আ.) তাঁর নিকট আগমন করেন…আল্লাহতালা তাঁকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, তুমি আমার বান্দা (ঈসা)-কে আমার নিকট উঠিয়ে নিয়ে এসো।’ (ইবনে আসাকির সংকলিত তারীখে দামেস্ক ৪৭/৪৭২; খতিব বাগদাদির তারীখে বাগদাদ ১১/৩৭৯)। প্রামাণ্য স্ক্যানকপি :-

ইবনে আসাকির রহ. সংকলিত হাদীসের সনদ :

أخبرنا أبو الحسن بن قبيس وأبو منصور بن خيرون أنبأنا أبو بكر الخطيب أخبرني الحسن بن محمد الخلال حدثنا أبو حصين ضياء بن محمد الكوفي بها حدثنا الحسين بن مرزوق حدثنا علي بن الحسن بن محمد بن سعيد بن عثمان العكبري حدثنا إبراهيم بن عبد الله الطرسوسي حدثني بلال خادم أنس بن مالك عن أنس بن مالك

(সনদ/ধারাবাহিক বর্ণনাসূত্র) : ইমাম ইবনে আসাকির, আবুল হাসান ইবনু কুবাইস, আবুবকর খতিব, হাসান ইবনু মুহাম্মদ আল খিলাল, আবু হোছাইন জিয়া ইবনু মুহাম্মদ আল কুফী, হোসাইন ইবনে মারযূক্ব, আলী ইবনু হোসাইন ইবনু মুহাম্মদ ইবনু সাঈদ, ইবরাহীম ইবনে আব্দুল্লাহ আত তারতূসি, বিলাল, হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা.)। বলে রাখতে চাই যে, ইমাম ইবনে খুজায়মা (২২৩-৩১১ হিজরী) [ابن خزيمة] (রহ.) স্বীয় ‘সহীহ ইবনে খুজায়মা’ গ্রন্থে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। হাদীসটি চার-এরও অধিক সূত্রে পাওয়া যায়। কোনো কোনো সূত্র জঈফ আবার কোনো সূত্রকে ‘হাসান‘ (أنه [بلال] صدوق حسن الحديث فهو تابعي كبير روى عن أنس بن مالك روى عنه أربعة فمثله حديثه حسن خاصة) বলেও সাব্যস্ত করা হয়েছে।

ইমাম কুরতুবী (রহ.) সংকলিত বিখ্যাত ‘তাফসীরে কুরতুবী’তে সূরা আলে ইমরান আয়াত নং ৫৪ এর ব্যাখ্যাও তিনি উক্ত হাদীসটির আলোকে ব্যাখ্যা দিয়ে গেছেন। যেমন তিনি লিখেছেন, أن اليهود لما اجتمعوا على قتل عيسى دخل البيت هاربا منهم فرفعه جبريل من الكوة إلى السماء অর্থাৎ যখন ইহুদীরা ঈসাকে (যীশুকে) হত্যা করার জন্য জড়ো হয়েছিল, তখন তিনি তাদের কাছ থেকে পালিয়ে গিয়ে ঘরে প্রবেশ করেছিলেন এবং জিবরাঈল (আ.) তাকে জানালা থেকে আকাশে উঠিয়ে নেন। (তাফসীরে কুরতুবী)। উল্লেখ্য, আরবীতে ‘আলকূতু‘ (الكوة) তথা জানালাকেও বুঝায়! ছবিটি দ্রষ্টব্য।

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

Previous article মির্যার স্ববিরোধীতা-৩৮
Next article মায়েদা-১১৭ দ্বারা ঈসা (আ.)-কে মৃত সাব্যস্ত করার দলিল ও যুক্তি খণ্ডন
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! এটি সম্পূর্ণ দ্বীনি ও অলাভজনক একটি ওয়েবসাইট। প্রতি বছর এটির ডোমেইন ও হোস্টিং ফি হিসেবে আমাকে এর ব্যয় বহন করতে হচ্ছে। যদি উক্ত ব্যয় বহন করতে অপারগ হই তাহলে এই সাইটটি নিশ্চিত বন্ধ হয়ে যাবে। সেহেতু আপনাদের সবার নিকট আবেদন থাকবে যে, আপনারা সাইটটির উক্ত ব্যয় বহনে এতে বিজ্ঞাপন দিতে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে উৎসাহিত করবেন এবং নিজেরাও সহযোগিতায় এগিয়ে আসবেন। বিনীত এডমিন! বিকাশ : ০১৬২৯-৯৪১৭৭৩ (পার্সোনাল)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here