কোথাও লিখলেন, আদম প্রথম মানুষ নন, তার আগেও মানুষের প্রজন্ম দুনিয়াতে ছিল। আবার কোথাও লিখেছেন, আদমই সৃষ্টিকূলের মধ্যে সর্বপ্রথম মানুষ এবং সর্বপ্রথম খলিফা, আর আমি তারই সদৃশ সর্বশেষ খলিফা!
- মির্যা কাদিয়ানীর জনৈক মুরিদের দাবী, আদম (আ.) প্রথম মানুষ ছিলেন না। এখানে তার প্রশ্নের উত্তরে লিখতে চাই!
- জনৈক কাদিয়ানী অনুসারীর উক্ত মন্তব্যের উপর আমার পালটা ছোট্ট একটি প্রশ্ন এই যে,
- যদি আদম (আ.)-ই প্রথম মানুষ না হন তাহলে তাঁর দ্বিতীয় পুত্র হাবিল (বাইবেল মতে হেবল) কিজন্য আপন ভগ্নি আকলিমাকে বিয়ে করতে বাধ্য হন। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইবনে কাসীর ১/৯৩)। পৃথিবীতে আদম (আ.) এর আগেও মানব সভ্যতা পূর্ব থেকেই চলে আসলে তবে তো হাবিলের বিয়ের জন্য কন্যাও থাকবে! তা সত্ত্বেও আপন ভগ্নির সাথে বিয়ে কেন? হযরত আদম (আ.)-ই বা এই নিয়ম কিভাবে অনুমোদন দিতে পারেন? সহীহ বুখারী সহ প্রায় সকল হাদীস সংকলনে একথা পরিষ্কার এসেছে, আল্লাহ আদমকে জুমার দিন আসরের পর সৃষ্টি করেছেন (إنَّ من أفضَلِ أيَّامِكُم يومَ الجمُعةِ، فيهِ خُلِقَ آدمُ عليهِ السَّلامُ)। সুনানু নাসাঈ, হাদীস নং ১৩৭৩, হাদীসের মান: সহীহ। এখন এগুলো কি সব আজাইরা কিচ্ছা? নাউযুবিল্লাহ। এবার নিন কুরআন থেকে! সূরা বাক্বারা’র আয়াত নং ৩০; আল্লাহতালা যখন পৃথিবীতে একজন প্রতিনিধি বানানোর ইচ্ছে প্রকাশ করলেন তখন ফেরেশতারা আপত্তি উত্থাপন করে বললেন اتجعل فيها من يفسد فيها و يسفك الدماء؟ অর্থ- আপনি কি এমন একটি জাতি দুনিয়ায় সৃষ্টি করতে চান যারা বিশৃঙ্খলা করবে এবং রক্তপাত করবে….? এখন প্রশ্ন, আদম (আ.)ই যদি প্রথম মানুষ না হন তাহলে ফেরেশতারা কোন আদমের ব্যাপারে ঐ আপত্তিখানা উত্থাপন করেছিলেন?
কোনো উত্তর থাকেনা!
আর আপনি পবিত্র কুরআনের যেসব উদ্ধৃতি দিয়েছেন সেসবে মোটেও আপনার মত (বিশ্বাস) সাব্যস্ত হয়না। আপনি আয়াত উল্লেখ করেন। আমি আপনার মিথ্যা আর অজ্ঞতা দুটোই পরিষ্কার করে দেব, ইনশাআল্লাহ।
মির্যা কাদিয়ানীর স্ববিরোধীতা :
এবার মির্যা কাদিয়ানীর স্ববিরোধ কথাগুলো জেনে নিন! তিনি লিখেছেন, (ক) ‘আমরা এটি দাবী করিনা যে, মানুষের এই সমগ্র প্রজন্ম যা বর্তমানে পৃথিবীর নানা প্রান্তে বিদ্যমান এটি এই সর্বশেষ আদমেরই প্রজন্ম! আমরা তো মনে করি যে, এই আদমের পূর্বেও মানব প্রজন্ম ছিল।‘ (দেখুন, মালফুযাত ৫/৬৭৫; মির্যা কাদিয়ানী, উর্দূ এডিশন)। তিনি তার আরেকটি বক্তব্যে একই মত ব্যক্ত করে এভাবে লিখেছেন যে, (খ) ہمارے آدم سے پہلے بھی کئی امتیں دنیا میں ہو چکی ہیں اس لیے یہ بھی کچھ تعجب کی بات نہیں کہ آریہ لوگ جو کروڑا برسوں کا دعوی کرتے ہیں ان پر وبال آنے کے بعد کچھ لڑکیاں ان کی باقی رہ گئی ہوں انہیں لڑکیوں سے حضرت آدم کے لڑکوں سے نکاح کرلیا ہو অর্থাৎ ‘আমাদের আদমের আগেও পৃথিবীতে অনেক জাতি ছিল, তাই অবাক হওয়ার কিছু নেই যে আর্য জাতি, যারা লক্ষ লক্ষ বছর দাবি করে। তাদের উপর বিপর্যয় নেমে আসার পর তাদের কিছুসংখ্যক মেয়ে দুনিয়ায় তখনও থেকে যায়। সেই মেয়েদের সাথে হযরত আদম (আ.)-এর পুত্রদের বিবাহ হয়।’ (দেখুন, আরিয়া ধরম, রূহানী খাযায়েন ১০/৪০)। এবার স্ববিরোধ কথা :-
মির্যা কাদিয়ানী লিখেছেন, (ক) پھر بعد اس کے ہم دیکھتے ہیں کہ پہلا بیٹا تو نوع انسان میں سے آدم ہی تھا چنانچہ انجیلیں اس بات کا اقرار کرتی ہے اور یہ تو معلوم ہے۔۔۔۔۔۔ অর্থাৎ ‘এরপর আমরা দেখি যে, মানব প্রজাতির মধ্যে সর্বপ্রথম মানব ছিলেন আদমই। ইঞ্জিলসমূহ একথারই সাক্ষ্য দেয়। আর একথা তো জানাই আছে যে, বুযূর্গি (সম্মাননা) প্রথমোক্তেরই হয়ে থাকে। আর এমন কাউকে তো বুযূর্গই বলা যায় না যে (ঈসা আ: এর প্রতি ইংগিত- অনুবাদক) পরে আসেন এবং প্রথমোক্তের কাছ থেকে কোনো কথা মুখে তুলে নেন। আর খোদাতালা তো আদমকে নিজ হাতে এবং স্বীয় আকৃতিতে (গুণে) সৃষ্টি করেছেন এবং খুব ভালোবাসার মাধ্যমে তিনি তাঁর অভ্যন্তরে রূহ ফুঁকে দিয়েছেন।’ (দেখুন, নূরুল হক, রূহানী খাযায়েন ৮/১০৫)। তিনি আরেক জায়গায় লিখেছেন, (খ) ‘এই জন্যই নিয়তির দাবী হল, যে মানুষটা সর্বশেষ খলিফা হবেন তিনি ঐ আদমের সদৃশ হবেন যিনি সমস্ত খলিফার সর্বপ্রথমে ছিলেন এবং সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে সর্বপ্রথম মানুষ ছিলেন। যার প্রতি খোদাতালা রূহ ফুঁকিয়ে ছিলেন।’ (দেখুন, খুতবাতুল ইলহামিয়্যাহ, রূহানী খাযায়েন ১৬/২৫৬)। তিনি আরেক জায়গায় লিখেছেন, (গ) ‘খোদাতালা আদমকে ষষ্ট দিবসে জুমাবারে আসরের পর সৃষ্টি করেছেন। তাওরাত, কুরআন এবং হাদীসসমূহ হতে এটাই সাব্যস্ত হয়। আর খোদাতালা মানুষের জন্য সাতটি দিবস নির্ধারিত করেছেন। এই দিবসগুলোর মুকাবিলায় খোদার প্রতিটি দিবস হাজার বছরের সমান। এর আলোকে উদ্ভাবন করা হয়েছে যে, আদম থেকে নিয়ে দুনিয়ার বয়স সাত হাজার বছর। আর ষষ্ঠতম হাজার যা ষষ্ঠতম দিবসের মুকাবিলায়, সেটি আদমে ছানী বা দ্বিতীয় আদমের (এখানে ‘দ্বিতীয় আদমন’ বলে মির্যা নিজের সত্তাকে ইংগিতে বুঝিয়েছে-অনুবাদক) প্রকাশের দিবস। (দেখুন, যামিমা বারাহিনে আহমদীয়া, রূহানী খাযায়েন ২১/২৬০)।
ক্রমানুসারে প্রামাণ্য স্ক্যানকপি দ্রষ্টব্য।
লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী