কাদিয়ানীদের এই দলিলগুলো সিয়াহ সিত্তার বাহিরের সংকলন থেকে

0
কাদিয়ানীদের এই দলিলগুলো সিয়াহ সিত্তার বাহিরের সংকলন থেকে

আহমদী-কাদিয়ানীবন্ধুদের হীতে বিপরীত কতিপয় অর্বাচীন মন্তব্য তুলে ধরছি

আমরা যখনি সিজোফ্রেনিয়া পাড়ার বন্ধুদের বরাবর সহীহ বুখারী মুসলিমের বাহিরেও হাদীসের অন্যান্য সংকলন থেকে হাদীস সমূহ রেফার করি, তখন তারা কী বলে শুনুন,

“আরে ভাই, এই সমস্ত কিতাব বাদ দেন। পারলে বুখারী বা মুসলিম শরীফ থেকে হাদীস দেখান।”

তখন প্রতিউত্তরে তাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় যে, আপনারা মির্যা কাদিয়ানীকে ইমাম মাহদী সাব্যস্ত করার জন্য যেই চন্দ্রসূর্য গ্রহণের রেওয়ায়ত দেখান সেটি কি বুখারী আর মুসলিম শরীফ থেকে দেখান? নির্লজ্জ এই ব্যাচারার তখন লম্বা জিহবা চিরতরে খামুশ হয়ে যায়!

  • সহীহ বুখারী-মুসলিম এমনকি সিয়াহ সিত্তার বাহিরের অন্যান্য সংকলন থেকে কাদিয়ানীদের উদ্ধৃত করার কিছু প্রমাণ এখানে তুলে ধরছি,

১. “একই রমাযানে চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণের রেওয়ায়েত (إن لمهدينا آيتين لم تكونا منذ خلق السماوات والأرض)।” সিয়াহ সিত্তার বাহিরের সংকলন ‘দারে কুতনী, কিতাবুল ঈদাইন’ থেকে। উল্লেখ্য, এই ধরণের ঘটনা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ও সাধারণ। যার ভুরি ভুরি দৃষ্টান্ত দেয়া যাবে। তাছাড়া এটি ‘হাদীস’ হিসেবে প্রমাণিতও নয়। অবাক করার ব্যাপার হল, দারে কুতনী নামক কিতাবের বর্ণনাটিতে উল্লেখ আছে, آيتين لم تكونا {আয়াতাঈনি লাম তাকূনা} অর্থাৎ এই দুটি এমন নিদর্শন যা (ইতিপূর্বে আর) সংঘটিত হয়নি’- তাহলে রাসূল (সা:) এর যুগ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত এটি কম করে হলেও প্রায় ১০৯ বার কী কারণে সংঘটিত হল? যদিও বা নাসা’র বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে আজ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ হাজারেরও অধিক এই ধরণের গ্রহণের ঘটনা ঘটেছিল বলে উল্লেখ রয়েছে। বিস্তারিত, ক্লিক

২. “যদি মূসা ও ঈসা দুইজনই জীবিত থাকত তাহলে আমার আনুগত্য ছাড়া তাঁদের আর কোনো উপায় থাকত না (لو كان موسى وعيسى حيين ، لما وسعهما إلا اتباعي)।” সিয়াহ সিত্তার বাহিরের সংকলন ‘তাফসীর ইবনে কাসীর’ থেকে। উল্লেখ্য, ইমাম ইবনে কাসীর এটিকে ভিত্তিহীন হওয়া সত্ত্বেও শুধুই সংগ্রহের উদ্দেশ্যে গ্রন্থবদ্ধ করেছেন। অধিকন্তু তাঁর নিজেরও আকীদা ছিল, ঈসা (আ.)-এর এখনো মৃত্যু হয়নি, তিনি শেষযুগে আকাশ থেকে নাযিল হবেন। তার বক্তব্য এইরূপ, (ذكر الأحاديث الواردة في نزول عيسى بن مريم إلي الأرض من السماء في آخر الزمان قبل يوم القيامة)। দেখুন, তাফসীরে ইবনে কাসীর, সূরা নিসা আয়াত-১৫৭-৫৮ সংশ্লিষ্ট তাফসীর। শায়খ আলবানী (রহ.) লিখেছেন, ঈসা শব্দে উল্লিখিত রেওয়ায়েত সহীহ নয়, তবে শুধুই মূসা শব্দে উল্লিখিত রেওয়ায়েতটি বহু সূত্রের সমষ্টিতে শক্তিশালী (فذكر عيسى في هذا الحديث لا يصح ، الحديث قوي بمجموع طرقه لذكر موسى :(لو كان موسى حيا لما وسعه إلا إتباعى) তথ্যসূত্রঃ, ফাতাওয়া আ’বরুল হাতিফ ওয়াস সাইয়ারাহ (فتاوى عبر الهاتف والسيارة) পৃ-১৪১। বিস্তারিত, ক্লিক

৩. ইমাম মাহদী ইয়েমেনের ‘কার’আ’ [কাদিয়ানীরা শব্দটিকে বিকৃত করে ‘কাদেয়া’ শব্দে] নামক গ্রাম থেকে বেরুবেন (يخرج المهدي من قرية باليمن يقال لها كرعة)। সিয়াহ সিত্তার বাহিরে ইমাম সুয়ূতির সংকলন ‘আল আরফুল ওয়ারদি ফী আখবারিল মাহদী’ পৃ-৫৬ থেকে। উল্লেখ্য, ঐ একই বর্ণনায় ‘ইয়েমেন’ দেশটিরও উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু কাদিয়ানী নেতারা সম্পূর্ণ রেওয়ায়েত থেকে ‘ইয়েমেন’ (اليمن) শব্দটি আস্তে করে হজম করে ফেলে। শুধু তাই নয়, কার’আ (كرعة) শব্দকে “কাদেয়া” (كدعة) শব্দেও পরিবর্তন করে ফেলে। যাইহোক, এটি জাল ও অগ্রহণযোগ্য রেওয়ায়েত। হাদীসশাস্ত্রের প্রায় ১৬ জন বিশেষজ্ঞ যারা মির্যা কাদিয়ানীর জন্মেরও শতাধিক বছর আগেকার, তারা প্রত্যেকে এর সনদ (সূত্র) পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে পরিষ্কার লিখে গেছেন ‘এটি জাল তথা বানোয়াট হাদীস’। বিস্তারিত, ক্লিক

৪. “একটি দল আহমদ নামের মাহদী’র সঙ্গী হয়ে হিন্দুস্তানে সশস্ত্র যুদ্ধ করবে (اصابة تغزوا الهند و هى تكون مع المهدى اسمه أحمد)।” সিয়াহ সিত্তার বাহিরের সংকলন ”আত-তারীখুল কাবীর’ গ্রন্থ থেকে। উল্লেখ্য, মির্যার বাড়ী হিন্দুস্তানে হওয়ায় রেওয়ায়েতটিতে “হিন্দুস্তান” (الهند) শব্দ দেইখা খুশি হবার কোনো কারণ নেই। কেননা প্রথমত, রেওয়ায়েতটি ভিত্তিহীন। দ্বিতীয়ত, এই রেওয়ায়েতেই ঐ মাহদী হিন্দুস্তানে কাফের-মুশরিকদের সাথে সশস্ত্র যুদ্ধকরা প্রসঙ্গে গাজওয়াহ (غزوة/Armed struggle) শব্দ স্পষ্টভাবে এসেছে। অথচ মির্যা কাদিয়ানী আজীবন যুদ্ধবিগ্রহেরই বিরোধিতা করে আসছে। তাহলে এখন এই রেওয়ায়তটিও মির্যার সাথে কিভাবে মিলাবেন?

৫. “ঈসা ইবনে মরিয়ম ১২০ বছর জীবনযাপন করেছেন (إنه لم يكن نبي إلا عاش نصف عمر الذي كان قبله وأخبرني أن عيسى بن مريم عاش عشرين ومائة سنة ولا أراني إلا ذاهباً على رأس الستين فبكت)।” সিয়াহ সিত্তার বাহিরের সংকলন ইমাম সোলায়মান ইবনে আহমদ আত-তাবারানী’র ‘মু’জামুল কাবীর ৫/১১৬’ এবং ইবনে কাসীর সংকলিত ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ ২/৯৫ থেকে। উল্লেখ্য, দেওয়ায়েতটির ধারাবাহিক বর্ণনা সূত্র খুবই দুর্বল ও মুনকার। হাফেজুল হাদীস ইমাম ইবনে আসাকির (রহ.) লিখেছেন, বিশুদ্ধ কথা হল, ان عيسى لم يبلغ هذا العمر অর্থাৎ নিশ্চয়ই ঈসা এই বয়সে পৌঁছেননি। অধিকন্তু একই বর্ণনার শেষের লাইনে লিখা আছে, ‘প্রত্যেক নবী তাঁর পূর্বের নবীর অর্ধেক আয়ুষ্কাল অবশ্যই পেয়েছেন (أَنَّهُ لَمْ يَكُنْ نَبِيٌّ إِلَّا عَاشَ نِصْفَ عُمَرَ الَّذِي قَبْلَهُ)। এখন যারা এই রেওয়ায়ত অথেনটিক মানেন তাদেরকে জিজ্ঞেস করতে চাই, এই জ্যামিতিক হিসাবে নবী দাবীদার খোদ মির্যার বয়সটিও হওয়া উচিত ছিল হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ৬৩ বছরের অর্ধেক অর্থাৎ ন্যূনতম ৩১ বছর। কিন্ত আফসোস এটাও সম্ভবপর হয়নি! বরং মির্যা কাদিয়ানী (১৮৩৯/৪০-১৯০৮) মারা যান ৬৮/৬৯ বছর বয়সে! (রূহানী খাযায়েন ১৩/১৭৭) কবি নিরব! বিস্তারিত, ক্লিক

৬. আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, “তোমরা খাতামুল নাবিয়্যীন বলো, (তবে) তোমরা বলবেনা তাঁর পরে আর কোনো নবী নেই (قُولُوا خَاتَمُ النَّبِيِّينَ , وَلا تَقُولُوا : لا نَبِيَّ بَعْدَهُ)।” সিয়াহ সিত্তা’র বাহিরের সংকলন ইমাম তাহের পাটনী (রহ.) সংকলিত ‘মাজমাউল বিহার’ পৃ- ৫০২ থেকে। উল্লেখ্য, তারা এর পরের অংশটুকু আর বলে না! অথচ সংশয় নিরসনকারী জবাব তার পরের অংশেই উল্লেখ রয়েছে। কেননা পরের অংশটি হচ্ছে (আরবী) هذا ناظراً إلى نزول عيسى অর্থাৎ এটি ঈসার নাযিল হওয়ার প্রতি দৃষ্টি রেখে। যাইহোক, এভাবে বললে অনেক বলা যায়। বিস্তারিত, ক্লিক

এখন প্রশ্ন হল, কাদিয়ানীরা যখন প্রতিপক্ষের নিকট দলিল প্রমাণ শুধুই কেবল সহীহ বুখারী আর মুসলিম শরীফ থেকে কিংবা সিয়াহ সিত্তার সংকলন থেকে দিতে দাবী করেন তখন নিজেদের এই সমস্ত উদ্ধৃতির সোর্স-এর কথা কেন স্মরণ থাকেনা? আরে জনাব! একটু তো সুবিচার করবেন, তাই না! এত নির্মম আর নিকৃষ্ট দ্বৈত আচরণ আল্লাহ সহ্য করবেন না!

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here