নবীপুত্র ইবরাহীম যদি জীবিত থাকত

0
নবীপুত্র ইবরাহীম যদি জীবিত থাকত

সিজোফ্রেনিয়া পাড়ার আরেকটা প্রতারণা, ইবরাহীম বেঁচে থাকলে তিনিই নবী হতেন….

এই প্রতারকদের সাহস হয়না মির্যা কাদিয়ানীকে মুক্ত অর্থে “নবী” বলতে। ইনিয়েবিনিয়ে আর শব্দের বক্রব্যাখ্যার মারপ্যাঁচ দিয়ে মির্যার নবী দাবীর বদনাম ঘোচাতে চেষ্টা করে। উম্মতি, বুরুজি আর জিল্লি সহ নানা শ্রেণীতে নবী-এর কনসেপশন তারা ভাগ করে ফেলে। উম্মতে মুসলিমার প্রতিষ্ঠিত ও সর্বসম্মত বিশ্বাসের হাত পা ভেঙে বিকলাঙ্গ করে ছাড়ে। এই একই মানুষগুলো মির্যার নবী দাবীকে বৈধতা দেয়ার জন্য خاتم النبيين (খাতামান নাবিয়্যিন) এর “খাতাম” শব্দকে আক্রমণের নিশানা বানিয়ে থাকে। শব্দটি থেকে আংটি, মোহর ইত্যাদি অভিনব অর্থ গ্রহণ করার মাধ্যমে নিজেদের রক্ষা করার-ও আপ্রাণ চেষ্টা করে। অথচ উম্মাহার সর্বান্তকরণে বিশ্বাস হচ্ছে, মুহাম্মদ (সা.)-এর পর নবুওয়তের দরজায় সীল লেগে গেছে। কেয়ামত পর্যন্ত এই সীল আর কারো জন্য খোলা হবেনা। কাজেই “খাতাম” শব্দের সাধারণ আরও যত অর্থই থাকুক না, এটি মুহাম্মদ (সা.)-এর ক্ষেত্রে ‘শেষ’ বা ‘সমাপ্তি’ অর্থেই ধর্তব্য হবে। আহা! এই নির্বোধদের বুঝানোর সাধ্য কার!

এদেরকে ঠান্ডা মাথায় জিজ্ঞেস করলে উত্তর দেয় যে, মুহাম্মদ (সা.) শেষনবী—তা তো আমরাও বিশ্বাস করি। কিন্তু এই নির্বোধরা তাদের মূলধারার রচনাবলি সম্পর্কে এতই বেখবর যে, তারা কখনো খোঁজ করেও দেখেনা সেসব রচনায় মুহাম্মদ (সা.)-এর খতমে নবুওয়তের সিংহাসনকে কত জঘন্যভাবে আক্রমণের নিশানা বানানো হয়েছে! নতুবা তারা কীজন্য নবুওয়তে মুহাম্মদীর ‘সীল’ ভাঙ্গতে অনবরত যুদ্ধ করে যাবে! কেন অগণিত সহীহ হাদীসের বিপরীতে শাজ, মুনকার রেওয়ায়েতের পেছু নিতে চাইবে!

উম্মতে মুহাম্মদীয়ার সিলসিলায় শেষনবী মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী, নাউযুবিল্লাহ।

ইউটিউবে তাদের একটা ভিডিও চোখে পড়লো। সেখানে তারা খতমে নবুওয়তের সীল ভাঙ্গার জবরদস্ত আক্রমণ চালিয়েছে। যদিও প্রতিটি আক্রমণই ব্যর্থ সাব্যস্ত হয়েছে। সূরা নিসা আয়াত নং ৬৯ দ্বারাও মির্যা কাদিয়ানীর নবী দাবীকে হালাল করতে যারপরনাই চেষ্টা করা হয়েছে। অথচ আয়াতটির প্রেক্ষাপট সম্পর্কে যিনি সামান্যতমও জ্ঞাত তিনি সহজেই ধরতে পারবেন যে, কাদিয়ানী নেতা ফিরোজ আলম আয়াতটির কত জঘন্যতম অপব্যাখ্যার পেছনে দৌঁড়াচ্ছেন! তিনি উক্ত ভিডিওতে আরও একখানা রেওয়ায়েত দিয়ে প্রমাণ করতে চাইছেন যে, মুহাম্মদ (সা.)-এর পরেও নবুওয়তের দরজা খোলা। নাউযুবিল্লাহ। রেওয়ায়েতটি হল, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, لو عاش ابراهيم لكان صديقا نبيا অর্থাৎ যদি ইবরাহীম [তথা হুজুর (সা:) এর সন্তান] জীবিত থাকত তবে সে সত্যবাদী ও নবী হতো।” (সুনানু ইবনে মাজাহ ১/১০৮; ‘তারীখু ইবনে আসাকীর ৩/২৯৫)।

রেওয়ায়েতটি উল্লেখ করার পর যুক্তি দিয়ে তিনি যেন বলতে চাচ্ছেন যে, যদি হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পরেও নবুওয়তের দরজায় সীল লেগে যেত তাহলে নবীজী কিজন্য আপনা সন্তান সম্পর্কে এইরূপ সংবাদ দিলেন? সুতরাং বিষয়টি ক্লিয়ার যে, নবুওয়তের দরজায় সীল লেগে যাওয়া সত্য নয়, বরং নবী আরও আসবে! (নাউযুবিল্লাহ)।

অথচ রেওয়ায়েতটির সনদ খুবই দুর্বল। কেননা এর সূত্রে ইবরাহীম ইবনে উসমান নামীয় রাবীকে মুহাদ্দিসগণ মুনকার (منكر الحديث) এবং মাতরূক (متروك الحديث) বলে আখ্যা দিয়েছেন। (দেখুন, তাহযীযুত তাহযীব ১/১৪৫)। আরও একটি সমস্যা হল, সনদে ইনকিতা (সূত্র-বিচ্ছিন্নতার ক্রুটি) বিদ্যমান। কেননা এর আরেকজন রাবী হিকাম ইবনে উতাইবাহ (الحكم بن عتيبة) সম্পর্কে লিখা আছে যে, ইবরাহীম ইবনে উসমান বর্ণনাটি তার কাছ থেকে শ্রবণ করা প্রমাণিত নয় (দেখুন, তাহযীযুত তাহযীব ২/৪৩৪)। যার ফলে সনদে তাদলীস-এর ক্রুটিও বিদ্যমান। তাই রেওয়ায়েতটি দলিল প্রমাণে গ্রহণযোগ্য নয়, বরং প্রত্যাখ্যাত। সে যাইহোক, এই মুহূর্তে ‘বর্ণনার তাহকিক’ আমার উদ্দেশ্য নয়। আমি নির্বোধদের বলতে চাই, তোমাদের কি নিচের হাদীস গুলো চোখে পড়ে না?

১। হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত আছে (হাদীসে কুদসীতে আল্লাহতালা বলেন) : لو لم أختم به النبيين لجعلت له ولدا يكون بعده نبيا অর্থাৎ যদি তাঁর (মুহাম্মদ) মাধ্যমে নবীগণের আগমনীধারা সমাপ্ত করে না দিতাম তাহলে আমি তাঁর পুত্রকে (নবী হিসেবে) অবশ্যই মনোনীত করতাম। যাতে সে তাঁর পর নবী হতে পারে। (ইমাম ইবনে জাওযি রহ. রচিত, যাদুল মাছীর ফী ইলমিত তাফসীর, সূরা আল আহযাব ৫/১৩৯ দ্রষ্টব্য)। স্ক্যানকপি

২। অন্য আরেকটি হাদীসে হযরত ওক্ববাহ ইবনে আমের (রা.) হতে বর্ণিত আছে যে, عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: لَوْ كَانَ بَعْدِي نَبِيٌّ لَكَانَ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ، فصححه الحاكم ووافقه الذهبي وحسنه الترمذيالترمذي، وكذا حسنه الألباني في صحيح الترمذي অর্থাৎ আমার পর যদি আর কোনো নবী থাকত তাহলে অবশ্যই উমর-ই নবী হত! (জামে তিরমিযী শরীফ, হাদীস নং ৩৬৮৬; হাদীসের মান, সহীহ ও হাসান)।

এখন প্রশ্ন হল, এমতাবস্থায় আলোচ্য হাদীসটি দ্বারা কিভাবে নবুওয়তের দরজা খোলা রয়েছে, এমন কোনো মর্মার্থ দাঁড় করানো সঠিক হয়?

তর্কের খাতিরে মানলাম যে, আলোচ্য হাদীসটি (আপনাদের মতে) নবুওয়তের দরজা খোলা থাকার পক্ষেই ইংগিত। তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায়, হাদীসটির কোন শব্দে বলা আছে যে, শুধুমাত্র কথিত জিল্লি বুরুজি শ্রেণীর নবুওয়তের দরজাই খোলা, অন্য শ্রেণীর (মুস্তাকিল, হাকিকি/শরীয়তবিহীন, শরীয়তবাহক) নবুওয়তের দরজা বন্ধ!?

কোনো উত্তর নেই!

শেষ আরেকটা প্রশ্ন করব! আলোচ্য মুনকার রেওয়ায়েতের “যদি ইবরাহীম [তথা হুজুর (সা:) এর সন্তান] জীবিত থাকত…” বলা দ্বারা যদি নবুওয়তের দরজা খোলা—একথা বুঝায় তাহলে আল্লাহতালার বাণী (সূরা আম্বিয়া-২২) “যদি আসমান-জমিনে আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ থাকত…” (لَوْ كَانَ فِيهِمَآ ءَالِهَةٌ إِلَّا ٱللَّهُ لَفَسَدَتَا ۚ فَسُبْحَٰنَ ٱللَّهِ رَبِّ ٱلْعَرْشِ عَمَّا يَصِفُونَ) একথা থেকে কী ব্যাখ্যা নেবেন? আল্লাহ ছাড়া আরও অনেক বৈধ ইলাহ থাকার ইংগিত রয়েছে… এমন ব্যাখ্যাও কি নেবেন? নাউযুবিল্লাহ। জ্ঞানীদের নিশ্চয়ই বিষয়টি ভাবিয়ে তুলবে!

মহান আল্লাহর নিকট আপনাদের সবাইকে সোপর্দ করছি। তিনিই আপনাদের ভালো মত দেখে নেবেন! ওয়া মা আ’লাইনা ইল্লাল বালাগ!

লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী
শিক্ষাবিদ ও গবেষক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here