প্রশ্ন : ইমামের পেছনে ফাতেহা না পড়লে সালাত হবে না—কথাটি কি ঠিক?
উত্তর : ইমামের পেছনে দাঁড়িয়ে সুরা ফাতেহা না পড়লে সালাত হবে না—কথাটা একদম ঠিক না। ছোট্ট একটা উপমা দিলে বুঝতে সহজ হবে। মনে করুন, আপনি অজু করে মসজিদে ঢুকেই দেখলেন যে ইমাম সাহেব রুকুতে চলে গেছেন। আপনিও ইমামের সাথে রুকুতে শামিল হয়ে গেলেন। এমতাবস্থায় ইমাম সাহেব যখন সালাত শেষ করবেন তখন কি আপনি প্রথম রাকাত পাননি মনে করে দাঁড়িয়ে যান? নিশ্চয়ই না। এখন যদি বিভিন্ন টিভি মিডিয়ার আলখেল্লা পরা কথিত অমুক-তমুকের কথা আমরা সঠিক মেনেও নিই তখন স্রেফ রুকু পাওয়া মুসল্লির সালাতের কী হবে? কারণ সে তো প্রথম রাকাত না পাওয়ার কারণে ফাতেহাও পড়তে পারেনি! সুতরাং বুঝতেই পারছেন যে, সূরা ফাতেহা ছাড়া সালাত হবেনা—কথাটি সবক্ষেত্রে নয়, বরং শুধুমাত্র একাকী সালাত আদায়কারী ব্যক্তির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। একথা কোনো মোল্লামুন্সীর নয়, বরং একথা একদম টনটনে সহীহ হাদীস থেকেই নেয়া। দেখুন (হাদীস) إذا صلى احدكم خلف الإمام فحسبه قراءة الامام অর্থাৎ তোমাদের মধ্য থেকে যখন কেউ ইমামের পেছনে সালাত পড়বে তার জন্য ইমামের ক্বেরাতই যথেষ্ট। (আল মুয়াত্তা-এর শরাহ ‘আত-তামহীদ‘ ১২/৩৭, ইমাম ইবনে আব্দিল বার আল মালেকী, হাদীস সহীহ)! স্ক্রিনশট :
এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে, টিভি মিডিয়ার কতিপয় আলখেল্লা পরা অমুক-তমুক সাহেবদের উপস্থাপনায় পদস্খলনটা কোথায়? আপনি তাদেরকে একটা কথা সচরাচর বলতে শুনবেন যে, সুরা ফাতেহা হলো সালাতের রুকুন। রাসুল (সা.) হাদীসে বলেছেন, যে ব্যক্তি সুরা ফাতেহা পড়ল না তার সালাত হবে না। সুতরাং ঈমামের পেছনে হোক আর একা হোক সূরা ফাতেহা আপনাকে পড়তেই হবে। এটিই সঠিক বক্তব্য। যা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এটা নিয়ে আলেমদের যত কথাই থাকুক না কেন রাসুল (সা.)-এর বক্তব্যটাই অবশ্যই আগে। তিনি স্পস্ট করে দিয়েছেন বিষয়টি। তাই সুরা ফাতেহা পড়াটা বাধ্যতামূলক। (বক্তব্য শেষ হল)। আমি প্রতিউত্তরে বলি, ঠিক আছে; আপনার কথা মত, আলেমদের কথাই বাদ দিলাম। আল্লাহপাক পবিত্র কুরআনে “তোমরা যখন ক্বেরাত শুনবে তখন ধ্যান লাগিয়ে তোমরা তা চুপ থেকে শ্রবণ করবে”।তাফসীরে ইবনে কাসীরে আয়াতটি সম্পর্কে পরিষ্কার লিখা আছে, وقال علي بن أبي طلحة ، عن ابن عباس قوله : ( وإذا قرئ القرآن فاستمعوا له وأنصتوا ) يعني : في الصلاة المفروضة. অর্থাৎ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, وإذا قرئ القرآن فاستمعوا له وأنصتوا আয়াতটি ফরজ সালাত সমূহে ক্বেরাত পাঠ (মুহূর্তে চুপচাপ থেকে শ্রবণ করা) সম্পর্কে নাযিল হয়েছে (ইবনে কাসীর, সূরা আ’রাফ আয়াত নং ২০৪)। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.) এবং ইবনে তাইমিয়া (রহ.) দুইজনও বলেছেন যে, এই আয়াত নামায সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। (মুগনী, ইবনে কুদামাহ ১/৬০৫; ফতুয়ায়ে ইবনে তাইমিয়া ২/৪১২)। উল্লেখ্য, ১৫ খণ্ডে রচিত আল মুগনী (المغنى لابن القدامة) কিতাবের রচয়িতা আল্লামা ইবনে কুদামাহ আল-মাকদীসী মুয়াফফাক আল দ্বীন আবু মুহাম্মদ-আবদুল্লাহ বিন আহমদ বিন মুহাম্মদ (জন্ম-মৃত্যু : ১১৭৪-১২২৩ খ্রিস্টাব্দ) যাকে প্রায়শই ইবনে কুদামাহ বা সংক্ষেপে ইবনে কুদামা নামে অভিহিত করা হয়, ছিলেন একজন আহলে সুন্নাহ’র স্কলার ও ফকীহ আলেম। জন্ম ফিলিস্তিনে। হাম্বালী মাযহাবের গুরুত্বপূর্ণ রচনাসহ ফিকহ ও ধর্মীয় মতবাদের উপর অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রচনা করেছেন তিনি। যাইহোক, এবার কি কুরআনের উপরও আমল বাদ দিতে সাধারণদের নসিহত করবেন?
- সূরা আ’রাফ আগে নাযিল হয় নাকি নামাযের ফরজিয়ত সংক্রান্ত হুকুম আগে নাযিল হয়?
এবার একটি সম্পূরক প্রশ্নের উত্তর দেব, এ বিষয়ে জ্ঞান লাভ করার জন্য একটু ইতিহাসে ফিরে যাওয়া যাক। হযরত খাদিজা (রা.) মারা যান ৬১৯ খ্রিস্টাব্দের ১০ ই রমাযান। আবু তালিব মারা যান ৬২০ খ্রিস্টাব্দের ৭ ই রামাযান। সূরা আ’রাফ নাযিল হয় মক্কায় সূরা আন’আমের পরে অথবা সমসাময়িক একই বছর। আর একথা পরিষ্কার যে, সূরা আন’আম যে বছর নাযিল হয় সে বছরটি ছিল হিজরতে খুব সন্নিকটবর্তী এবং সে সময় হযরত খাদিজা এবং আবু তালিব তাদের কেউই জীবিত ছিলেন না। আর রাসূল (সা.)-এর মেরাজের মধ্য দিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের ফরজিয়ত সংক্রান্ত হুকুম নাযিল হয়েছিল আবু তালিবের মৃত্যুর পূর্বে ৬২০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ শে রজব। এখন এই ইতিহাস যদি ভুল না হয় তাহলে প্রমাণিত হবে যে, সূরা আ’রাফ নাযিল হবার অনেক আগেই মেরাজ সংঘটিত হওয়ার মাধ্যমে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের ফরজিয়ত উম্মাহার উপর বিধিবদ্ধ হয়ে যায়। সুতরাং একথা দাবী করা সঠিক হবেনা যে, সূরা আ’রাফ বা সূরাটির ২০৪ নং আয়াত নাযিলের আগে নামায ফরজ ছিলনা। অধিকন্তু ইবনে আব্বাস (রা.) থেকেও পরিষ্কার বর্ণিত আছে যে, সূরা আ’রাফের ২০৪ নং আয়াত জুমার সালাত অনুষ্ঠিতকালে মক্কায় নাযিল হয়।
আসুন, এবার টিভি মিডিয়ার ঐ আলখেল্লা পরা অমুক ইবনে তমুক সাহেবদের চরম ইলমি দৈন্যতার কারণ জেনে নিই। এরা যদিও নিজেদের কথিত সালাফি বলে দাবী করে (অথচ চার মাযহাবের মুকাল্লিদগণই প্রকৃত সালাফী দাবী করার হকদার-লিখক) কিন্তু আসলে এরা সালাফীদের পথ থেকেও ষোল আনা বিচ্যুত। কারণ জানলে আকাশটা আপনার মাথার উপর ভেঙ্গে পড়ার অবস্থা হবে। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.)-এর একটা বক্তব্য পেশ করে চলমান টপিকে আলোচনার ইতি টানছি। তিনি বলেছেন, ما سمعنا أحداً من أهل الإسلام يقول: إن الإمام إذا جهر بالقراءة لا تجزئ صلاة من خلفه إذا لم يقرأ অর্থ-“আমরা কোনো আহলে ইসলামকে (বিশেষজ্ঞকে) এটা বলতে শুনিনি যে, যখন ইমাম উচ্চঃস্বরে ক্বেরাত পাঠ করেন এবং মুক্তাদী তার পেছনে ক্বেরাত পাঠ না করেন তাহলে তার সালাত বাতিল হয়ে যাবে।” (আল মুগনী, ইবনে কুদামাহ ১/৬০)। আল্লামা জফর আহমাদ উসমানী (রহ.) রচিত ইলাউস সুনান (৪/১২৮) কিতাব থেকে স্ক্রিনশট :-
এবার সহজেই প্রশ্ন আসবে যে, আজকের দিনে যেসব আলখেল্লা পরা কথিত অমুক ইবনে তমুকরা ইমামের পেছনে সূরা ফাতেহা না পড়লে সালাত বাতিল বলে ফতুয়া কপচে বেড়াচ্ছেন তাদের ইলম, তাকওয়া আর যোগ্যতা কি ইসলামের প্রথম তিন-চার শতাব্দীর বরেণ্য আয়েম্মায়ে কেরাম থেকেও বেশি হয়ে গেল? অপ্রিয় হলেও সত্য, ডিজিটাল ক্যামরার সামনে আর স্যোসাল মিডিয়ায় একাকী পাণ্ডিত্য জাহির করা খুব সহজ হলেও টেবিল টকশো অত সহজ না। যেজন্য ঐ সমস্ত অমুক ইবনে তমুকদের কখনোই টেবিল টকশোতে দেখা মেলেনা, আর যাদেরই ভুলক্রমে একবার টেবিল টকশোতে দেখা মেলে তাদেরকে একপর্যায়ে বলতে শুনা যায় : আমরা কি আর এত প্রস্তুতি নিয়ে আইছি! এই নির্বোধরা কি তাহলে পূর্ণ প্রস্তুতি ছাড়াই ফতুয়া কপচাইত? রঙ্গিন দুনিয়ার এই সমস্ত শায়খরা তারপর থেকে দ্বিতীয়বার টেবিল টকশোর নামও আর মুখে নেন না! কিন্তু রঙ্গিন দুনিয়ার এই সমস্ত ডিজিটাল শায়খদের ইলমি দৌড় যে কতটা লজ্জাজনক তা আমাদের জেনারেল শিক্ষিতদের বুঝানোর সাধ্য কার? আমাদের অজপাড়া গাঁয়ের নান্নুমিয়া আর চক্ষুমিয়াদের কথা আর না হয় না-ই বললাম! এতক্ষণ যা কিছু লিখলাম তা সাধারণদের জন্য। এবার আলেমদের জন্য একটু ইলমি আলোচনা করতে চাই, দয়া করে এই আলোচনায় যাদের উসূলে হাদীসের উপর একাডেমিক পড়াশোনা নেই তারা প্রবেশ করবেন না!
- কিন্তু কোনো কোনো বর্ণনাতে তো خلف الإمام (ইমামের পেছনে) শব্দযোগেও বর্ণনায় এসেছে যে, لا صلوة لمن لم يقرأ بفاتحة الكتاب অর্থাৎ যে ফাতেহাতুল কিতাব ছাড়া….। এর সমাধান কী?
এর উত্তরে আমি আমার শিক্ষার আলোকে বলতে পারি যে, হাদীস পড়া আর হাদীস বুঝা দুটো দুই জিনিস। যেজন্য হাদীস সংকলনকারীদের মুহাদ্দিস বলা হয় আর হাদীসের উপর জ্ঞানগর্ভ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ দাঁড় করার যোগ্যতাসম্পন্নদের ফকিহ বলা হয়। যুগে যুগে মুহাদ্দিস অগণিত থাকলেও ফকিহ ছিলেন হাতেগনে অল্পকয়জন। এদের মধ্যে প্রসিদ্ধি লাভ করেছিলেন আবু হানিফা, ইমাম মালেক, সুফিয়ান আস ছাওরী, আওযায়ী, ইমাম আবু ইউসুফ, ইমাম মুহাম্মদ ইবনে হাসান, ইমাম যুফার, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল এবং ইমাম শাফেয়ী প্রমুখ। সাধারণদের বুঝার সহজার্থে এভাবেও বলা যায় যে, মুহাদ্দিসগণ হলেন ঔষধ দোকানদারগণের মত আর ফকিহগণ হলেন প্রেসক্রিপশন সহ ঔষধ সরবরাহকারী এমবিবিএস ডাক্টারের মত। যেজন্য হাদীসের বুঝ বা ব্যাখ্যার জন্য ফকিহদের উপর উম্মাহ যুগে যুগে নির্ভর করতেন। উপরের দুই শ্রেণীর বাহিরে তৃতীয় আরেকটা শ্রেণীও ছিলেন তাদেরকে ‘আয়েম্মায়ে জারহু ওয়াত তা’দীল’ বলা হয়। অর্থাৎ হাদীসের সনদ বিশেষজ্ঞ স্কলারশিপ। তাদের মধ্যে ইমাম যাহাবী, ইবনে হাজার আসকালানী, নূরুদ্দীন হাইছামী, আবু যুর’আ, ইবনে হাব্বান, ইবনে জওযী, ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন প্রমুখ অন্যতম। এবার মূলকথায় ফিরে আসছি। ঐ যে একটা বর্ণনায় ‘ইমামের পেছনে সূরা ফাতেহা পড়া...’ সংক্রান্ত দলিল পেশ করা হয় সেটি সম্পর্কে কিতাবে লিখা আছে যে, বর্ণনাটির সূত্রে ইমাম যুহরী (রহ.) রয়েছেন। তিনি নিজেই পরের দিকের আরেকটি বর্ণনায় বলেছেন যে, সূরা আ’রাফ আয়াত ২০৪ (وإذا قرئ القرآن فاستمعوا له وأنصتوا) নাযিল হওয়ার পূর্বে সাহাবায়ে কেরাম ইমামের পেছনে ক্বেরাত পড়তেন। ইমাম যুহরী (রহ.) সহীহ বুখারীর অন্যতম একজন শক্তিশালী রাবী। তাঁর উক্ত বক্তব্য হতে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ পাওয়া গেল যে, ইমামের পেছনে ইতিপূর্বে ফাতেহা পড়া প্রচলিত থাকলেও ঐ আয়াত নাযিলের পর ইমামের পেছনে সূরা ফাতেহা পড়ার আগেকার নিয়ম রহিত হয়ে যায় অর্থাৎ আগে পড়লেও পরবর্তীতে কেউ আর পড়তেন না, বরং আয়াতের শিক্ষা অনুযায়ী সবাই ইমামের পেছনে চুপচাপ থেকে ক্বেরাত শ্রবণ করতেন। এই হচ্ছে মুটামুটি কথা। এখানে বিজ্ঞ আলেমদের জ্ঞাতার্থে আরেকটু ইলমি আলোচনা করা জরুরি। সুনানে বায়হাক্বী থেকে ইমাম যুহরী (রহ.)-এর সনদে যে রেওয়ায়েতটি পেশ করা হয় সেটি ইমাম যুহরী থেকে তার ছাত্রদের আরও প্রায় ১৩ জন বর্ণনা করেছেন কিন্তু তাদের কারো বর্ণনায় خلف الأمام (ইমামের পেছনে) শব্দটি নেই। সেই একমাত্র ছাত্র ইউনুসই এটি বর্ণনা করেছেন। কিন্তু একই সনদে ইমাম দারেমী তার সুনান গ্রন্থে বর্ণনাটি উল্লেখ করা সত্ত্বেও তিনি সেখানে বর্ণনাটিতে خلف الإمام শব্দ আনেননি। ইমাম বায়হাক্বী (রহ.) একই কিতাবের ২৩ নং পৃষ্ঠায় ইউনুস ইবনে উমরের সূত্রে প্রায় একই বর্ণনা উল্লেখ করা সত্ত্বেও তিনিও خلف الإمام শব্দ আনেননি (Click)। এখানে আরও অবাককরা বিষয় হল, ইউনুসের সূত্রে তারও ছাত্রদের যে ৩জন এটি বর্ণনা করেছেন তাদের মধ্যে শুধুমাত্র উসমান বিন উমর ছাড়া বাকি কারো বর্ণনাতেও শব্দটি নেই। আবার উসমান বিন উমর-এর সূত্রে তার দুই ছাত্র এটি বর্ণনা করেছেন। কিন্তু সে দুইজনের একজন হাসান ইবনে মুকরিমের বর্ণনাতেও শব্দটি নেই। শুধুমাত্র আবু ইবরাহীম মুহাম্মদ ইবনে ইয়াহইয়া আছ-ছিপার (ابو ابراهيم محمد بن يحيى الصفار) নামীয় তার এক ছাত্র অতিরিক্ত শব্দটি সহ বর্ণনা করতে দেখা যায়। প্রামাণ্য স্ক্যানকপি :
মজার ব্যাপার হল, সনদ বিশেষজ্ঞ স্কলারশিপ (রিজালশাস্ত্রের ইমামগণ) কেউ তাকে (মুহাম্মদ ইবনে ইয়াহইয়া) সিকাহ বা নির্ভরযোগ্য বলেননি (ইমাম ইবনে হাজার আসকালানীর ‘ফাতহুল বারী’ দ্রষ্টব্য)। এমতাবস্থায় কুরআনের শিক্ষার বিপরীতে এবং অন্যান্য অসংখ্য হাদীসের বিরুদ্ধে ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের উল্লিখিত সাক্ষ্যপ্রমাণ উপেক্ষা করে কিভাবে এমন একটি বর্ণনার অতিরিক্ত ঐ উপবাক্যটির উপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়? অথচ বর্ণনার অতিরিক্ত শাজ (شاذ) অংশটি রাসূল (সা.)-এর মুখনিঃসৃত বাণী হওয়াও নিশ্চিত নয়। তাকওয়ার দাবী তো প্রবৃত্তির অনুসরণ না করে বরং সালফে সালেহীনের পথ অনুসরণ করা, দলাদলির উর্ধ্বে থেকে শুধুই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্য দ্বীন পালন করা, তাই নয় কি? বলাবাহুল্য, এই নাতিদীর্ঘ বিচার বিবেচনা আর সমন্বয় করে মুটামুটি সমস্ত হাদীসের উপর আমল করার বিস্তৃত এই বৈচিত্র্যকেই এককথায় ফিকহ বলা হয়। যাকে আরেক কথায় ‘মাযহাব‘ (ইখতিলাফি বিষয়ে গবেষণালব্ধ ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত) বলা হয়।
লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী।