মুসলমান আর কাদিয়ানীদের মধ্যকার পার্থক্য

0
মুসলমান আর কাদিয়ানীদের মধ্যকার পার্থক্য

মির্যা কাদিয়ানী কোথায় এবং কিভাবে মৃত্যুবরণ করেছিল?

কাদিয়ানী সম্প্রদায় হযরত মুহাম্মদ (সা:)-এর পরে ভারতীয় বংশোদ্ভূত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকেও একজন নবী ও রাসূল বলিয়া বিশ্বাস করে। তাই এরা দুনিয়ার সমস্ত মুসলিম স্কলারদের সর্বসম্মতিক্রমে ইসলাম থেকে বহিষ্কৃত ও কাফের জাতির অন্তর্ভুক্ত। নিচে তাদেরই বিভিন্ন রচনাবলী থেকে তাদের এবং মুসলমানদের মাঝে মৌলিক পার্থক্যগুলো কী কী তা সপ্রমাণে দেখানো হল! স্ক্রিনশট দেখুন

একটি ভুল সংশোধন ৮; মির্যা কাদিয়ানী

এক. কাদিয়ানীদের ধর্মবিশ্বাস :
সকলের অবগতির জন্য বলা জরুরী, কাদিয়ানিদের ‘লিফলেট’ এর মধ্যে ‘নূরুল হক’ নামক যে বই থেকে তাদের ধর্মবিশ্বাস উল্লেখ রয়েছে ওই বইটি মির্যা কাদিয়ানী ১৮৯৪ সালের দিকে লিখেছিলেন। কিন্তু আশ্চর্যকথা হল, ১৯০১ সালের পর মির্যা কাদিয়ানী তার পূর্বেকার নবুওয়ত সংক্রান্ত ধর্মবিশ্বাস পরিবর্তন করে ফেলেন। আমরা এই তথ্য তাদেরই সেকেন্ড খলিফা(!) মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদের বই থেকে পাই। [দেখুন, ২৬ খন্ডে প্রকাশিত তার রচনা-সমগ্র ‘আনওয়ারুল উলূম’ খন্ড নং ২ পৃষ্ঠা নং ৪৪৫]।

তাই আসুন ১৯০১ সালের পর মির্যা কাদিয়ানীর চূড়ান্ত আকীদা কেমন ছিল তার সামান্য কিছু এখান থেকে জেনে নিই।

নবী রাসূল দাবী :
মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী লিখেছেন, আমার দাবী, আমি একজন নবী ও রাসূল। (মির্যা কাদিয়ানির রচিত, মালফুযাত [ঊর্দু] ৫/৪৪৭; নতুন এডিশন)।

অ-কাদিয়ানিরা মুসলমান নয় :
মির্যা কাদিয়ানী বলেছেন, খোদাতালা আমার উপর প্রকাশ করেছেন যে, যাদের নিকট আমার দাওয়াত পৌঁছেছে আর তারা তা কবুল করেনি এরা মুসলমান নয় এবং এরা পাকড়াও হবে। (তাযকিরাহ, পৃষ্ঠা নং ৫১৯; ইলহাম, মার্চ ১৯০৬ ইং, চতুর্থ এডিশন)।

এতেই প্রমাণিত হল, মূলত মির্যা প্রকৃতপক্ষে নবী ও রাসূল হওয়াই দাবী করত। তার জিল্লি বুরূজি আর উম্মতি এই শব্দগুলো নিছক সাধারণ মানুষকে চিন্তাগতভাবে বিভ্রান্ত করার কৌশল ছিল। নইলে তাকে অস্বীকার করলে অমুসলমান হবে কেন?

মুহাম্মদ (সা:) চেয়েও মির্যা কাদিয়ানী শ্রেষ্ঠ :
মির্যা বশির উদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, “এটা সম্পূর্ণ সঠিক কথা যে, প্রত্যেক ব্যক্তি (আধ্যাত্মিক জগতে) উন্নতি সাধন করতে পারে এবং উঁচু থেকে উঁচু মর্যাদা পেতে পারে। এমনকি মুহাম্মদ (সা:)-কে পেছনে রেখে সামনে বেড়ে যেতে পারে।” (আখবারে ফজল, ভারতের পাঞ্জাবের কাদিয়ানী দারুল আমান থেকে প্রকাশিত, নং ৫ জিলদ ১০, তারিখ ১৭ ই জুলাই ১৯২২ ইং)। নাউযুবিল্লাহ। এবার দেখুন, মুহাম্মদ (সা:) থেকেও মর্যাদায় সামনে বেড়ে যাওয়া ব্যক্তিটি নাকি মির্যা কাদিয়ানী! প্রমাণস্বরূপ কাদিয়ানী ঘরানার আরেকটি পত্রিকা ‘আখবারে বদর’ ২৫ অক্টোবর ১৯০৬ ইং সংখ্যায় উল্লেখ আছে, মির্যা কাদিয়ানীর সম্মুখে কাজী জহূর উদ্দিন আকমল একটি কবিতা পাঠ করেছিল।

কবিতার অর্থ ‘মুহাম্মদ আবার আমাদের মাঝে এসেছে এবং মর্যাদায় আগের (মুহাম্মদের) চেয়ে সামনে বেড়ে গেছে, পূর্ণাঙ্গ মুহাম্মদকে যদি কেউ দেখতে চাও তাহলে গোলাম আহমদকে দেখে যাও কাদিয়ানে।’ মির্যা কাদিয়ানী এই কবিতা শ্রবণ করার পর ওই ব্যক্তিকে ‘জাজাকুমুল্লাহ’ বলার কথাও ছাপিয়ে এসেছে। (দেখুন, দৈনিক আখবারে ফজল, পৃষ্ঠা নং ৪, কলাম ১; ২২ শে আগস্ট ১৯৪৪ ইং)। নাউযুবিল্লাহ। এতেই প্রমাণিত হল, মির্যা কাদিয়ানী তার শিষ্যের আবৃত্তির সাথে সহমত। যার ফলে মির্যা কাদিয়ানী নিজেকে মুহাম্মদ (সা:) থেকেও মর্যাদায় বড় দাবী করা সাব্যস্ত হল। এর চেয়ে জঘন্যতম নবী অবমাননা আর কী হতে পারে?

মির্যা কাদিয়ানী তার শিষ্যকে ‘জাজাকুমুল্লাহ‘ বলার ডকুমেন্ট। দৈনিক আল ফজল ২২ আগস্ট ১৯৪৪ ইং

মুমিন হওয়ার মানদন্ড :
‘কালিমাতুল ফছল’ বইতে মির্যা কাদিয়ানীর কথিত একটি ইলহামের উদ্ধৃতি দিয়ে লিখা আছে, ‘এই ইলহাম দ্বারা পরিস্কার বুঝা গেল যে, আল্লাহ তায়ালা এই যামানায় মুমিন হওয়ার মানদন্ড স্থির করেছেন মাসীহ মওঊদ [অর্থাৎ মির্যা কাদিয়ানী]’র উপর ঈমান আনয়ন করাকে। সুতরাং মসীহ মওঊদকে যেই অস্বীকার করে তার পূর্বের ঈমানও যাবে।’ (কালিমাতুল ফছল বা রিভিউ অফ রিলিজন্স (উর্দু), তৃতীয় অধ্যায় পৃষ্ঠা নং ৫২ [হার্ডকপি]; লিখক, মির্যা কাদিয়ানী কর্তৃক ‘কমরুল আম্বিয়া’ খ্যাত মির্যা বশির আহমদ এম. এ, প্রকাশকাল ১লা মে ১৯১৫ ইং, কাদিয়ান দারুল আমান থেকে প্রকাশিত)। এতে সাব্যস্ত হল, তারা নিজেদের বাহিরে কোনো মুসলমানকে মুসলমানই মনে করেনা। কাজেই “কে মুসলমান আর কে কাফের তা একমাত্র আল্লাহই ভাল জানেন” এইরূপ সস্তা কথাবার্তা অন্তত কাদিয়ানীদের মুখে মানায় না। স্ক্রিনশট দেখুন

কলেমার মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র তাৎপর্য :
‘কালিমাতুল ফছল’ বইতে কলেমা তাইয়্যেবাহ সম্পর্কে জনৈক ব্যক্তির প্রশ্নের উত্তরে মির্যা কাদিয়ানীর ছেলে লিখেছেন: “আমাদের নতুন কোনো কলেমার প্রয়োজন নেই। কেননা মসীহে মওঊদ [মির্যা কাদিয়ানী] নবী করীম (সা:) থেকে ভিন্ন কেউ নন। তিনি নিজেও বলতেন, আমার সত্তা তাঁর সত্তাতে পরিণত। এমনকি [তিনি এও বলতেন] যে ব্যক্তি আমার আর মুহাম্মদ মুস্তফার মাঝে পার্থক্য করে সে না আমাকে চিনল, না আমাকে দেখল। এটি এইজন্য যে, আল্লাহতায়ালার ওয়াদা ছিল, তিনি খাতামুন নাবিয়্যীন [মুহাম্মদ মুস্তফা]’কে দুনিয়াতে আরেকবার পাঠাবেন। যেমন ‘ওয়া আখারীনা মিনহুম’ আয়াত দ্বারা সুস্পষ্ট। সুতরাং মসীহে মওঊদ-ই স্বয়ং মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ। যিনি ইসলাম প্রচার করতে দুনিয়াতে দ্বিতীয়বার আগমন করেছেন। তাই আমাদের [কাদিয়ানিদের] জন্য নতুন কোনো কলেমার প্রয়োজন নেই। হ্যাঁ যদি মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র স্থলে অন্য আর কেউ আসত তখনই কেবল [নতুন কলেমার] প্রয়াজন পড়ত।” (কালিমাতুল ফছল ৬৮, ষষ্ঠ অধ্যায়)।

প্রত্যেক বিষয়ে মতবিরোধ :
মির্যার বড় ছেলে এবং কাদিয়ানিদের দ্বিতীয় খলীফা(?) বশির উদ্দিন মাহমুদ তিনি কাদিয়ানে তাদের জুমার খুতবায় ভাষণ দিতে গিয়ে বলেন “তিনি (মির্যা) বলেছেন, এটা ভুল কথা যে, অন্যদের [মুসলমানদের] সাথে আমাদের বিরোধ শুধু ঈসা (আ:) এর মৃত্যু বা আরো কিছু শাখাগত মাসয়ালা নিয়ে। হযরত (মির্যা) সাহেব বলেছেন, আল্লাহতালার সত্তা, রাসূল, পবিত্র কুরআন, নামায, রোজা, হজ্ব ও যাকাত মোটকথা তিনি (মির্যা) বিস্তারিত বলে গেছেন যে, প্রত্যেকটি বিষয়ে তাদের [মুসলমানদের] সাথে আমাদের বিরোধ আছে।” [দৈনিক ‘আল ফজল’ তাং ৩০ জুলাই, ১৯৩১ ইং পৃষ্ঠা নং ৭, কলাম ১]।

এবার চিন্তা করে দেখুন, এইধরণের কথাবার্তা যাদের বইপুস্তকে লিখা থাকে আর যারা এদের অনুসারী হিসেবে নিজেদের ‘আহমদী মুসলমান’ বলে পরিচয় দেয় তাদের সাথে শেষনবী হযরত মুহাম্মদ (সা:)-এর রেখে যাওয়া ইসলামধর্মের ন্যূনতম সম্পর্ক কোথায়? এমন জঘন্য ধর্মমত পোষণকারীর কোনো নেক আমল কস্মিনকালেও কি গ্রহণযোগ্য? দয়াকরে শুধুমাত্র একবার কথাগুলো নিয়ে ভাবুন এবং নিরপেক্ষতার সাথে সত্য-মিথ্যা যাচাই করুন!

  • লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here