Home মির্যা কাদিয়ানী কাদিয়ানীদের খলীফা ও খিলাফত একটি চরম উপহাস

কাদিয়ানীদের খলীফা ও খিলাফত একটি চরম উপহাস

কাদিয়ানীদের খলীফা ও খিলাফত একটি চরম উপহাস

কাদিয়ানীদের তথাকথিক খলীফা ও খিলাফত প্রসঙ্গ :

কাদিয়ানীদের লিফলেটে উল্লেখ আছে ‘ঐশী খিলাফতই ইসলামের উন্নতির মূলমন্ত্র’। তাতে আরো লিখা আছে, সেই ঐশী খিলাফতের ধারাবাহিকতায় বর্তমানে পঞ্চম খলীফার যুগ চলছে। তাঁর পবিত্র নাম হযরত মির্যা মাসরূর আহমদ। তাদের এ সমস্ত কথাবার্তার সারাংশ হল, শেষ যুগে ইমাম মাহদীর আগমনপূর্বক পৃথিবীতে যেই ‘খিলাফত’ প্রতিষ্ঠার ভবিষ্যৎবাণী সহীহ হাদীসগুলোতে এসেছে এটাই সেই খিলাফত! কিন্তু তাদের এই দাবী সম্পূর্ণ আজগুবি কল্পনা ও মুসলিম উম্মাহার সাথে চরম উপহাস বৈ নয়!

প্রথমত, তাদের কথিত ‘ঐশী খিলাফত’ ইসলামের সোনালী যুগের চার খলীফার নমুনায় সেই ‘খিলাফত’ কখনই নয়। তার অন্যতম কারণ, সহীহ হাদীসগুলোর কোথাও শেষ যামানার ‘খিলাফত’-কে ‘ঐশী‘ শর্তের ফ্রেমে বন্দী করার প্রমাণ নেই বরং হাদীস শরীফে চার খলীফার খিলাফতের ন্যায় শেষ যুগের ইমাম মাহদীর প্রতিষ্ঠিত খিলাফতকেও ‘খিলাফত আ’লা মিনহাজিন নবুওয়ত’ (خلافة على منهاج النبوة) বলেই আখ্যা দেয়া হয়েছে! (দেখুন, মুসনাদে আহমদ হাদীস নং ১৭৬৮০)। তাদের কথিত খিলাফতকে চরম হাস্যকর প্রমাণ করার জন্য সিহাহ সিত্তা’র অন্যতম আবুদাউদ শরীফের দীর্ঘ একটি হাদীসের এই অংশটুকুই যথেষ্ট। যেখানে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে : ‘আল-খিলাফাতু ছালাছূনা সানাতান ছুম্মা তাকূনু বা‘দা যালিকা মালিকান’ (الخلافة ثلاثون سنة ثم تكون بعد ذالك ملكا)। অর্থাৎ ‘খিলাফত ত্রিশ বছর অব্ধি থাকবে তারপর বাদশাহী শাসন আরম্ভ হবে (হা/৪৬৪৬)’। আমরা এখানে স্পষ্টত দেখতে পেলাম, রাসূল (সা:)-এর হাদীসটিতে ‘খিলাফত’ শব্দকে ‘ঐশী’ সহ সব ধরণের Condition বা শর্ত থেকে মুক্ত ও স্বাধীন রাখা হয়েছে। তাই কাদিয়ানীদের বর্তমান নখদন্তহীন কথিত ‘ঐশী খিলাফত’ আর যাইহোক না কেন, কোনোভাবেই সাহাবীদের নমুনার ‘রাষ্ট্র-ব্যবস্থামূলক’ খিলাফত নয়-ই প্রমাণিত হল।

দ্বিতীয়ত, তাদের এই কথিত খিলাফত ‘খিলাফত আ’লা মিনহাজিন নবুওয়ত’ [অর্থাৎ চার খলীফার নমুনায় নবুওয়তে মুহাম্মদী পন্থায় রাষ্ট্রব্যবস্থামূলক খিলাফত] হলে তখন তাদের নিকট নিচের প্রশ্নগুলোর আর কোনোই জবাব থাকেনা। এই পর্যায় প্রশ্নগুলো করার আগে বলে রাখতে চাই যে, আন্তর্জাতিক বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়া’র ভাষ্যমতে, খিলাফত হল, সরকারের ইসলামী রূপ যা মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্ব এবং রাজনৈতিক একতার প্রতিনিধিত্ব করে। এই ধরণের শাসন ব্যবস্থার সরকার প্রধানকে খলীফা বলা হয়। তারপর খলীফা [আরবি : خليفة‎‎] শব্দটির আভিধানিক অর্থ উত্তরাধিকারী, প্রতিনিধিত্বকারী, সেনাপ্রধান। ইসলামী পরিভাষায় খলীফা হলেন এমন ব্যক্তি যিনি যাবতীয় বিষয়ে শরিয়ত অনুযায়ী সমস্ত উম্মতকে পরিচালিত করেন। ইসলামী রাষ্ট্রে খলীফা সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অধিকারী। তিনি রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলে গভর্নর, শাসক, নেতা, [কাযী] নিযুক্ত করেন।

  • ইতিহাস সাক্ষী, ইসলামী সোনালী যুগে প্রতিষ্ঠিত ‘খিলাফত’ সর্বোচ্চ সীমায় উপনীত হওয়ার মধ্য দিয়ে সমগ্র আরব উপদ্বীপ, লেভ্যান্ট থেকে উত্তর ককেসাস, পশ্চিমে মিসর থেকে বর্তমান তিউনিসিয়া ও পূর্বে ইরানীয় মালভূমি থেকে মধ্য এশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। সেই সময় খিলাফতের রাজধানী ছিল, যথাক্রমে মদীনা (৬৩২-৬৫৬খ্রি:) এবং কূফা (৬৫৬-৬৬১খ্রি:)। আরো ছিল সুশৃঙ্খল সামরিক ফোর্স যাতে নিয়মিত সৈন্যবাহিনী ছিল সর্বনিম্ন ১,০০,০০০ (এক লক্ষ)। যাদের বেতন ভাতার জন্য ছিল বায়তুলমাল তথা রাষ্ট্রীয় কোষাগার। তাই আপনাদের [অর্থাৎ কাদিয়ানিদের] এই খিলাফত যদি প্রকৃতই চার খলিফার নমুনায় খিলাফত ব্যবস্থা হয়ে থাকে, তাহলে সর্বাগ্রে প্রশ্ন আসবে, আপনাদের খিলাফত রাষ্ট্র কোথায়? সুনির্দিষ্ট কোনো ভুখন্ড আপনাদের খলীফার শাসনের অধীনে নেই কেন? সাহাবীদের খিলাফত রাষ্ট্র ব্যবস্থা থাকলে আপনাদের কেন থাকবেনা? যেখানে আপনাদের কর্তৃত্বাধীন কোনো খিলাফত রাষ্ট্রই মজুদ নেই সেখানে খিলাফত রাষ্ট্রের রাজধানী কিবা সামরিক ফোর্স নিয়ে কী আর প্রশ্ন করব বলুন! কাজেই ব্রিটিশ আশ্রিত নখদন্তহীন আপনাদের খলীফারা নামমাত্র খলীফা ছাড়া আর কী? ফলে আপনাদের ‘বায়তুলমাল’ প্রতিষ্ঠার দাবীটাও বড্ড হাস্যকর বিনে কিছুই না!

সুতরাং আপনাদের দাবী, ঐশী খিলাফতের ধারাবাহিকতায় বর্তমানে পঞ্চম খলীফার যুগ চলছে, সম্পূর্ণ মিথ্যা ও আজগুবি কথা!

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here