ঈসা (আ.) সম্পর্কে অজ্ঞদের একটা হটকারিতামূলক ওয়াস ওয়াসার জবাব :
মক্কা বিজয়ের দিন রাসূল (সা.) শিরিক উৎখাতের অংশ হিসেবে কাবাঘরের অভ্যন্তরে থাকা ৩৬০টি মূর্তি ভেঙে ফেলার নির্দেশ জারি করেন। রাসূল (সা.) তখন পবিত্র কুরআনের এই আয়াত পাঠ করলেন, جاءَ الْحَقُّ وَزَهَقَ الْباطِلُ إِنَّ الْباطِلَ كانَ زَهُوقاً অর্থাৎ সত্য এসেছে আর মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। মিথ্যা তো বিলুপ্ত হওয়ারই। সহীহ বুখারীতে এসেছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (সা.) থেকে বর্ণিত, (আরবী) عن عبد الله رضي الله عنه قال: «دخل النبي صلى الله عليه وسلم مكة يوم الفتح، وحول البيت ستون وثلاثمائة نصب، فجعل يطعنها بعود في يده ويقول: {جاء الحق وزهق الباطل} {جاء الحق وما يبدئ الباطل وما يعيد} অর্থাৎ (মক্কা বিজয়ের দিন) রাসুলুল্লাহ (সা.) মক্কায় প্রবেশ করলেন। তখন কাবাঘরের চারপাশে তিনশ ৩৬০ টি মূর্তি ছিল। তাঁর হাতের ছড়ি দিয়ে তিনি এগুলোকে ঠোকা দিতে লাগলেন এবং বলছিলেন, “সত্য এসেছে আর মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। মিথ্যা তো বিলুপ্ত হওয়ারই” (৩৪ঃ ৪৯) “বল সত্য এসেছে আর অসত্য না পারে নতুন কিছু সৃষ্টি করতে এবং না পারে পুনরাবৃত্তি করতে”। (বুখারী কিতাবুল মাগাজী, হাদীস নং ৪২৮৭)। এখানে উল্লেখ করা জরুরি যে, রাসূল (সা.) যদিও শিরিক উৎখাতের অংশ হিসেবে মূর্তি ধ্বংস করতে আদিষ্ট ছিলেন, তথাপি ইতিহাস প্রমাণ করে যে, রাসূল (সা.) সেদিন কাবাঘরের সবগুলো মূর্তি একাই ভাঙ্গেননি, বরং উদ্বোধন হিসেবে মাত্র কয়েকটা ভেঙ্গেছিলেন আর বাদ বাকি মূর্তিগুলো নিধনের ফরমান জারি করেন। কথামত তাই হল। তবে সর্বাপেক্ষা প্রসিদ্ধ যে কয়টি মূর্তি যেসব সাহাবী ভেঙে ফেলেছিলেন তা হচ্ছে, নাখলাতে উয্যা (عزى), যা হযরত খালেদ বিন ওয়ালিদ (রা.) ভেঙে ফেলেন। বনী হোযায়েলের প্রসিদ্ধ মূর্তি ছু’আ (سواع), যা হযরত আমর ইবনুল আস (রা.) ভেঙে ফেলেন। আউস, খাযরাজ ও গাসসানের প্রসিদ্ধতম মূর্তি মানাত (مناة), যা হযরত সাদ ইবনে যায়েদ (রা.) ধ্বংস করেন। তায়েফের প্রসিদ্ধতম মূর্তি ইয়াউক (يعوق), যা হযরত আলী (রা.) ভেঙে ফেলেন। লাত (لات), ইয়াগুছ (يغوث), হুবল (هبل), উদ (ود) এবং নাসর (نسر) ইত্যাদিও তন্মধ্যে অন্যতম।
মূল আলোচনায় ফিরে আসছি, কেয়ামতের পূর্বে যথাসময়ে আল্লাহতালা ফেরেশতার মাধ্যমে দামেস্কে হযরত ঈসা (আ.)-কে পাঠাবেন। মির্যা কাদিয়ানী নিজেও তার রচনায় স্বীকার করে লিখেছে, ہاں دمشق میں অর্থাৎ হ্যাঁ, ঈসা (আ.) দামেস্কেই নাযিল হবেন (রূহানী খাযায়েন ৩/১৭২)। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, দামেস্কের পূর্বপ্রান্তে বলতে সিরিয়া ভূখণ্ড ভিন্ন অনেক দূরের কোনো দেশ (ইরাক, ইরান, হিন্দুস্তান) উদ্দেশ্য নয়। নতুবা মসীহ দাবীদার বাহাউল্লাহ ইরানীর সাথেও হাদীসটি তার অনুসারীরা ইচ্ছে করলে প্রয়োগ করতে পারে! যা নিতান্তই বিকৃত কনসেপ্ট বৈ নয়। অধিকন্তু মুসলিম শরীফের (كتاب الفتن و اشراط الساعة অধ্যায়) হাদীস বলছে, ঈসা (আ.) দুইজন ফেরেশতার দুইডানায় আপনা দুই বাহু রেখে দামেস্কের পূর্বপ্রান্তে (দামেস্কের একদম পূর্বসীমানায় অবস্থিত উমাইয়া মসজিদের সন্নিকটে–ইবনে কাসীর) নাযিল হবেন। তিনি একজন ন্যায়পরায়ণ শাসক এবং সুপথপ্রাপ্ত ইমাম হবেন। তিনি খ্রিস্টানদের ত্রিত্ববাদি বিশ্বাসের মূলোৎপাটন করতে ক্রুশ ভেঙে ফেলবেন এবং শুয়োর হত্যার মাধ্যমে কার্যত সেটি বেচা-বিক্রি ও লালনপালনের উপর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাবলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবেন। দুর্ভাগা কাদিয়ানী সম্প্রদায় এসব বিষয়ে সাধারণদের বিভ্রান্ত করতে বেশকিছু হটকারিতামূলক প্রশ্নের পেছনে দৌঁড়ায়। তারা যুক্তি দেয়, ঈসা (আ.)-এর পক্ষে দুনিয়ার সমস্ত ক্রুশ আর শুয়োর নিধন করা কি সম্ভব? আসলে তারা এই সংক্রান্ত হাদীসের শব্দগুলোর প্রতি ভালো মত দৃষ্টি দেয়না। হাদীসে ক্রুশ আর শুয়োর শব্দগুলোর আরবী (الصليب ; الخنزير) একবচনে এসেছে। ফলে দুনিয়ার সমস্ত ক্রুশ আর শুয়োর নিধনের প্রশ্ন তোলা একদিকে যেমন অজ্ঞতা, আরেকদিকে হাদীসকে প্রকৃত অর্থ থেকে সরিয়ে মনগড়া রূপক অর্থে প্রয়োগ করার শামিল! জ্ঞানীদের নিকট গোপন থাকেনি যে, অষ্টম হিজরীতে মক্কা বিজয়ের দিন রাসূল (সা.) কাবাঘরের ৩৬০ টি মূর্তি সবগুলো নিজ হাতেই ভাঙ্গেননি, বরং মাত্র কয়েকটি ভেঙ্গেছেন আর বাদ বাকিগুলো ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ জারি করেন। সুতরাং রাসূল (সা.)-এর ফতেহ মক্কার দিনে মূর্তি ভেঙে ফেলার ইতিহাস থেকে আমরা যে শিক্ষা পাই সেটির আলোকে ঈসা (আ.)-এর বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়। কাজেই নির্বোধদের উচিত, অন্ধকারে না থেকে আলোতে বেরিয়ে আসা এবং কাজ্জাব আর দাজ্জাল মির্যায়ী চশমার ফাঁক দিয়ে ইসলামকে বুঝার ব্যর্থ চেষ্টা বাদ দিয়ে বরং ইসলামের আদিম ও সহজ সরল ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের দিকে ফিরে যাওয়া। আর ব্রেইন ওয়াশ কাল্টদের আল্লাহর নিকট সোপর্দ করছি। ওয়াসসালাম।
লিখক, প্রিন্সিপাল মুহাম্মদ নূরুন্নবী এম.এ