আযান ও ইকামতে আঙ্গুলে চুমো দিয়ে চোখে লাগানোর শরয়ী হুকুম কী?
উত্তর, প্রশ্নে উল্লিখিত আমলটি কোনো কোনো মুসলিম সমাজে এখনো দেখা যায়। তারা রাসূল (সা.)-এর নামের প্রতি অত্যাধিক সম্মান প্রদর্শন হেতু এটি করে থাকেন। কিন্তু অধিকাংশই জীবনেও চিন্তা করে দেখেন না যে, উনাদের ঐ আমলের কোনো বিশুদ্ধ দলিল কুরআন বা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত কিনা? আজকে এখানে ভারতবর্ষের প্রখ্যাত বুযূর্গ ও বহু গ্রন্থপ্রণেতা আ’লা হযরত আহমদ রেজাখাঁ বেরেলী (রহ.) এর রচনা থেকে উল্লিখিত প্রশ্নের উত্তর পেশ করব, ইনশাআল্লাহ। আযান ও ইকামতে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নাম শুনে আঙ্গুলে চুমু দিয়ে চোখে লাগানোর শরয়ী হুকুম নিয়ে মাসলাকে বেরেলীর প্রধান, মওলানা আহমদ রেজাখাঁ বেরেলী (রহ.) লিখেছেন, ‘প্রথমত আযানের সময়ে (রাসূলুল্লাহ সা.-এর নাম শুনে) আঙ্গুলে চুমো দেয়া কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রমাণিত নয়। আর এ ব্যাপারে লোকেরা যা কিছুই বর্ণনা করে থাকে তা বিশেষজ্ঞদের নিকট প্রমাণিত নয়। এছাড়া আল্লামা শামী (রহ.) এইরূপ কিছু রেওয়ায়েত উদ্ধৃত করার পর লিখেন, ইমাম জাররাহী (إِسْماعيلُ بْنُ مُحَمَّد الجَرّاحيّ) এই ব্যাপারে বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন অতঃপর বলেছেন, এগুলোর মধ্য হতে কোনো হাদীসই মারফূ পর্যায়ে বিশুদ্ধতার স্তরে পৌঁছেনি’। (রদ্দুল মুহতার খণ্ড ১ পৃষ্ঠা ২৬৭, আযান অধ্যায়)। কিন্তু ইকামতের সময় (আঙ্গুলে চুমো দেয়ার) তো কোনো ভাঙাচুরা হাদীসও নেই। তাই ইকামতের সময় (রাসূলূল্লাহ সা.-এর নাম শুনে) আঙ্গুলে চুমো দেয়া আযানের সময়ে দেয়ার চেয়েও বড় বিদয়াত এবং ভিত্তিহীন আমল। এ কারণেই ফকিহগণ এটিকে একেবারেই পরিত্যাগ করেছেন।’ (ফাতাওয়ায়ে রিজভিয়্যাহ খণ্ড ৫ পৃষ্ঠা নং ৬৩৪)। {উর্দূ থেকে বাংলা অনুবাদ সমাপ্ত হল}। প্রামাণ্য স্ক্যানকপি –
- ফাতাওয়ায়ে রিজভিয়্যাহ কিতাবটি ডাউনলোড লিংক
টিকা– জাররাহী বলতে ইমাম ইসমাঈল ইবনে মুহাম্মদ আল জাররাহী আল-আজলুনী (রহ.) উদ্দেশ্য। উনার পূর্ণ নাম, ইসমাঈল ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল হাদী ইবনে আব্দুল গণী আল জাররাহী (إسماعيل العجلوني هو إسماعيل بن محمد بن عبد الهادي بن عبد الغني الشهير بالجراحي)। তিনি ফিকহে শাফেয়ীর একজন ফকিহও। ইরাক বংশোদ্ভূত। জন্ম ১৬৭৬ খ্রিস্টাব্দ এবং মৃত্যু ১৭৪৯ খ্রিস্টাব্দ। উসমানীয়া খেলাফত যুগেকার, শামে বসবাস করতেন। তিনি অনেক বড়মাপের একজন হাদীস বিশারদও।
লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক