Home খাতামুন নাবীঈন কাদিয়ানীদের বইতে ‘খাতামান নবীঈন’ এর প্রকৃত মর্মার্থ

কাদিয়ানীদের বইতে ‘খাতামান নবীঈন’ এর প্রকৃত মর্মার্থ

কাদিয়ানীদের বইতে ‘খাতামান নবীঈন’ এর প্রকৃত মর্মার্থ
  • কাদিয়ানী সম্প্রদায় হযরত মুহাম্মদ (সা:)-কে ‘খাতামান নবীঈন’ স্বীকারকরার দাবী সুস্পষ্ট প্রতারণা :

কাদিয়ানী সম্প্রদায় তাদের লিফলেট ও বইপুস্তকে ‘খাতামান নবীঈন হযরত মুহাম্মদ (সা:)’ শিরোনামে একটি হাদীস উল্লেখ করে থাকে। হাদীসের অর্থ: ‘আমি নিশ্চয়ই তখনও আল্লাহর বান্দা ও খাতামান নবীঈন ছিলাম যখন আদম (আ:) কর্দমাক্ত অবস্থায় তাঁর সৃষ্টির সূচনায় ছিলেন। (মুসনাদে আহমদ)। তারা এরপর নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গী প্রকাশ করতে গিয়ে যা লিখে থাকেন তার সারসংক্ষেপ এই যে, তারা আরবী ভাষায় ‘খাতাম’ শব্দের যতগুলো অর্থ রয়েছে সব অর্থেই রাসূল (সা:)-কে ‘খাতামান নবীঈন’ বলে মান্য করে। অথচ এটি তাদের সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ধোকা। প্রসঙ্গিক আলোচনায় যাওয়ার ‘শেষনবী’ এর সংজ্ঞা কী, তা জেনে নিই।

আরো পড়ৃন : ঈসা (আ:) পুনঃবার আগমন করলে তখন কে শেষ হবেন?

  • ‘শেষনবী’ বলতে এমন ব্যক্তিই উদ্দেশ্য যাঁকে সবার শেষে ‘নবী’ বানানো হয়েছে। [দেখুন, তাফসীরে কাশশাফ খন্ড ২২; সূরা আহযাব ৪০, বরেণ্য ইমাম যামাখশারী রহ: রচিত]। যেজন্য সবার শেষে নবুওয়ত লাভকারী হিসেবে মুহাম্মদে আরাবী (সা:)ই শেষনবী, অন্য আর কেউ নন। প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখা দরকার, এই একই কারণে ঈসা (আ:) আবার আগমন করলে তিনি ‘শেষনবী’ হবেন না। কেননা তিনি তাঁরও আগ থেকে নবুওয়তপ্রাপ্ত হয়ে নবী হিসেবে মনোনীত।
  • এবার কাদিয়ানীদের উদ্দেশ্যে কিছু প্রশ্ন :

[১] এখন কাদিয়ানী সম্প্রদায় ‘খাতাম’ শব্দের সকল অর্থেই রাসূল (সা:)-কে ‘খাতামান নবীঈন’ বলে মান্য করলে তাদের ‘এক গলতি কা ইযালা’ বইতে উল্লিখিত “সত্য কথা এই যে, আমার প্রতি অবতীর্ণ আল্লাহর পবিত্র ওহী (বাণী)-সমূহে নবী, রাসূল ও মুরসাল শ্রেণীর শব্দ একবার দু’বার নয়, শত শত বার বিদ্যমান রয়েছে” – মির্যা কাদিয়ানির এই কথার কী অর্থ? (রেফারেন্স, এক গলতি কা ইযালা পৃ-৩)।

[২] তাদের কথা থেকেই প্রমাণিত হয় যে, তারা রাসূল (সা:)-কে নিঃশর্তে ‘শেষনবী’ স্বীকার করেনা। বরং তারা মনে করে রাসূল (সা:) শুধুমাত্র শরীয়তবাহক নবী হিসেবেই একজন ‘শেষনবী’। তারমানে নবুওয়তেরধারা বন্ধ হয়নি, নবুওয়তে মুহাম্মদীর পরেও নতুন কেউ শরীয়ত বিহীন নবী হতে পারবে (নাউযুবিল্লাহ)। নতুবা তারা ‘শরীয়তবাহক’ এইরূপ Condition [শর্ত] যুক্ত করে কী বুঝাতে চায়?

অথচ কোনোরূপ শর্ত যুক্ত ছাড়াই রাসূল (সা:) বিনা ব্যতীক্রমে ইরশাদ করেছেন : ‘লা নাবিয়্যা বা’দী’ অর্থাৎ আমার পরে আর কোনো প্রকারের নবী নেই। (বুখারী ২/৬৩৩, মুসলিম ২/২৭৮)। খুবই লক্ষণীয় যে, হাদীসে ‘নবী’ শব্দটি নাকেরা বা অনির্দিষ্টবাচক। তাই এখন এই হাদীসের বিরুদ্ধে যাওয়া ছাড়া তাদের পক্ষে মির্যা কাদিয়ানীকে নবুওত লাভকারী মান্য করা কিভাবে সম্ভব? যদিও বা মির্যায়ী নবুওয়ত(!) তথাকথিত উম্মতি, বুরুজি কিবা জিল্লি প্রভৃতি যেই শ্রেণীরই হোক না কেন! সত্য বলতে, তাদের কাছে এর সঠিক কোনো জবাব নেই!

আসল কথা হল, মির্যার নবুওয়ত দাবীর বদনাম ঘোচানোর উদ্দেশ্যেই সেটিকে ‘উম্মতি’ শব্দে জাহির করা হয়, যা সুস্পষ্ট ধোকা। মনে করুন আপনার সন্তানকে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি করানোর উদ্দেশ্যে গভমেন্ট স্বীকৃত একমাত্র কোনো বিদ্যালয়ে গিয়ে জানতে পারলেন যে, তাদের কোটা পূর্ণ হয়ে গেছে, ভর্তি নেয়া বন্ধ। এখন আপনার সন্তানকে ওই বিদ্যালয়ের কোন শ্রেণীর ছাত্র গণ্য করবেন? পঞ্চম শ্রেণীর তো অবশ্যই না। আবার যেখানে টোটালি ভর্তি-ই বন্ধ, সেখানে ১ম, ২য়, ৩য় কিবা ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্র বলে দাবীটাও কি অবৈধ নয়? তদ্রুপ, যেখানে Unconditionaly নবুওয়তের দ্বারই বন্ধ, সেখানে মির্যার জন্য উম্মতি, বুরুজি কিবা জিল্লি শ্রেণীর নবুওয়ত দাবীর সুযোগ কোথায়?

আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:)-কে কাদিয়ানীদের ‘খাতামান নাবীঈন’ স্বীকার করার তাৎপর্য এটাই। এককথায়, তারা মুহাম্মদে আরাবী (সা:)-কে খাতামান নাবীঈন মানার অর্থ হল, মুহাম্মদ (সা:) শুধুমাত্র শরীয়তবাহক হিসেবেই শেষনবী কিন্তু বিনা ব্যতিক্রমে ও নি:শর্তে তিনি শেষনবী নন। নাউযুবিল্লাহ। আশাকরি তাদের প্রকৃত আকীদা সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পেরেছেন।

  • লিখক শিক্ষাবিদ ও গবেষক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here