![হাদীসের অপব্যাখ্যায় কাদিয়ানীদের দুই ঈসা তথ্যের খন্ডন হাদীসের অপব্যাখ্যায় কাদিয়ানীদের দুই ঈসা তথ্যের খন্ডন](https://markajomar.org/wp-content/uploads/2020/05/PicsArt_05-13-02.47.33-768x491.jpg)
তথাকথিত দুই ঈসা’র গোলক ধাঁধাঁয় কাদিয়ানী জামাতের ভ্রান্ত মতবাদের তাত্ত্বিক ও যুক্তিক খন্ডন :
![](http://markajomar.org/wp-content/uploads/2020/09/PicsArt_09-29-08.43.28-1024x437.jpg)
কাদিয়ানীদের দাবী, হাদীসে দুই ঈসা’র বর্ণনা রয়েছে। অতএব শেষ যুগে আগমনকারী ঈসা (আ:) পূর্বের ঈসা নন, বরং তিনি সেই ঈসা যার গায়ের রং গধুম বর্ণের এবং মাথার চুল সােজা। যাকে রাসূল (সা:) স্বপ্নযােগে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করতে দেখেছিলেন। মির্যা কাদিয়ানী ছিলেন সেই গধুম (বাদামী) বর্ণের ঈসা। (কাদিয়ানীদের বক্তব্য শেষ হল)।
তবে কি সত্যই হাদীসে দুই ঈসার বর্ণনা এসেছে??
একথার জবাবে বলা হবে যে, হাদীসে দুই ঈসার বৃত্তান্ত থাকার দাবী সম্পূর্ণরূপে একটি ভুল ও উদ্দেশ্যপ্রণােদিত দাবী। কেননা ‘লালচে’ (احمر) বর্ণ সংক্রান্ত হাদীসে ‘আহমারু’ শব্দের পূর্বে ‘রাবআতুন’ (ربعة) শব্দও রয়েছে (বুখারী, কিতাবুল আম্বিয়া/৩৩৯৪)। ফলে মর্মার্থ দাঁড়াচ্ছে, ঈসা (আ:) মাঝারী আকারের লালচে বর্ণের। যার বিশ্লেষণ রাসূল (সা:) নিজেই করেছেন : মারবূ’উল খালকি ইলাল হুমরাতি ওয়াল বাইয়াদ্বি (مربوع الخلق إلى الحمرة و البياض) অর্থাৎ লালচে এবং সাদা উভয় বর্ণে মিশ্রিত মাঝারী বর্ণের’ (সহীহ বুখারী, কিতাবু বুদুয়িল খালকি, বাবু যিকরিল মালাইকাহ)। আরেক হাদীসে সেটাকেই এককথায় প্রকাশার্থে গধুম (آدم) অর্থাৎ বাদামী বলা হয়েছে (বুখারী, কিতাবুল আম্বিয়া/৩৪৪১)।
মজারব্যাপার হল, মির্যা কাদিয়ানী নিজেও তার বইয়ের এক জায়গায় লিখেছেন, “হযরত মসীহ চুঁকে বালাদে শাম কে রাহনে ওয়ালে থে এসলিয়ে উয়ােহ্ বগাওয়া ইয়ানে সফীদ রং থে।” অর্থাৎ হযরত মসীহ (আ:) শাম দেশের অধিবাসী ছিলেন বলেই তিনি সাদা বর্ণের ছিলেন (রূহানী খাযায়েন ১৫/৮৩)। কাদিয়ানীদের মাথাটা খুব বেশি মোটা না হলে অন্তত মির্যার এই কথাতেও অনেক কিছু ভাবার আছে। কারণ মির্যা কাদিয়ানী যাঁকে হাদীসের উদ্ধৃতিতে “লাল” বর্ণের বলেছেন এখানে ওই একই ব্যক্তিকে “সাদা” বর্ণের-ও বলছেন! ভাবিয়ে তুলে কিনা? কী জবাব?
![](https://markajomar.org/wp-content/uploads/2022/02/iMarkup_20220204_204131-673x1024.jpg)
যাইহোক, বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকারক হাদীসগুলাের মধ্যে সামঞ্জস্যতার বিধান করে লিখেছেন : ‘ওয়া ইয়ুমকিনুল জাময়ু বাইনাল ওয়াছফাইনি (و يمكن الجمع بين الوصفين)…অর্থাৎ উভয় গুণের মাঝে সামঞ্জস্যতার বিধান সম্ভব এইভাবে যে, তাঁকে (ঈসা) আপনা ক্লান্তি আর বিষন্নতার কারণে লালচে বর্ণের দেখাবে তবে কিন্তু তিনি সাধারণভাবে তাম্র ও গােধুম-বর্ণের হবেন (ফাতহুল বারী শরহে সহীহ বুখারী ৬/৩৭৭)।
![](https://markajomar.org/wp-content/uploads/2020/10/PicsArt_10-24-11.52.19-1024x1024.jpg)
হাদীসে কি ঈসা (আ:) এর চুল কোঁকড়ানো বলে উল্লেখ আছে??
একথার জবাবে বলব, ঈসা (আ:) এর শারীরিক গঠন কেমন হবে সে সম্পর্কে হাদীসে উল্লিখিত জা’দ (جعد) শব্দের ব্যাখ্যায় বিশিষ্ট যুগ-ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহ:) লিখেছেন : ‘ওয়া ওয়াছাফাহু লিজাউদাতি ফী জিসমিহি লা শারিহি ওয়াল মুরা-দু বিযা-লিকা ইজতিমা-ইহি ওয়া ইকতিনাযিহি (و وصفه لجعودة في جسمه لا شعره والمراد بذالك إجتماعه و اكتنازه)। অর্থাৎ হযরত মসীহ (আ:) সম্পর্কে জা’দ (جعد) শব্দের উল্লেখ হয়েছে তাঁর শারীরিক গঠন বর্ণনা দিতে, চুলের ধরণ বুঝাতে নয়। ওই জা’দ (جعد) হতে উদ্দেশ্য হল তিনি শক্ত ও সুঠাম দেহের অধিকারী (ফাতহুল বারী ৬/৪৮৬)। কাজেই অভিধানে জা’দ অর্থ কোঁকড়া চুল হলেও হাদীসটিতে শব্দটি শরীরের গাঠনিক বর্ণনা দেয়ার উদ্দেশ্যেই এসেছে বলেই আমরা বুঝতে পারলাম। অতএব, একই ব্যক্তির শারীরিক বর্ণের একাধিক বিশেষণ এসেছে বলেই তিনি কখনো একাধিক ব্যক্তিতে পরিণত হয়ে যাবেন না!
- এরপরেও যারা মির্যা কাদিয়ানীর বক্তব্যের চর্বিতচর্বণ করেই দুই ঈসার অস্তিত্ব ব্যাখ্যা দিয়ে জল ঘােলা করতে চান তাদের উদ্দেশ্যে আমার কয়েকটি প্রশ্ন এই যে,
[১] রাসূল (সা:) এর বিশিষ্ট সাহাবী হযরত ইবনে উমর (রা:) বলেছেন : ما قال النبى صلى الله عليه وسلم لعيسى أحمر (উচ্চারণ) মা ক্বা-লান্নাবিয়্যু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লি-ঈসা আহমারু। অর্থাৎ আল্লাহর শপথ! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি ঈসাকে লাল বর্ণের বলেননি (দেখুন সহীহ বুখারী, কিতাবুল আম্বিয়া, হাদীস নং ৩৪৪১)। বিপরীতে মির্যা গােলামের দাবী হচ্ছে, হযরত ঈসা (আ:)-কে রাসূল (সা:) নাকি লাল বর্ণের বলেছেন! নাউযুবিল্লাহ। যাইহােক, এখন কাদিয়ানীদের কৃত ব্যাখ্যা অনুসারে যদি ঈসা দুইজন হয় তাহলে লালচে আর সাদা উভয় বর্ণে মিশ্রিত সহ এবার ঈসা মােট তিনজন হল কিনা? এমনকি মির্যা নিজেও যে লিখে গেলেন, শামের অধিবাসী হযরত মসীহ (আ:) সাদা বর্ণের ছিলেন। একথাগুলাের কী জবাব?
[২] তর্কের খাতিরে মানলাম, ঈসা দুইজন। সে হিসেবে মির্যা কাদিয়ানী যদি দ্বিতীয় ঈসা হন তাহলে তিনি নিজেকে ইসরায়েলি ঈসার রূপক দাবী করলেন কেন?
[৩] আর যদি তিনি ইসরায়েলি ঈসার রূপক সত্তা হন তখন রাসূল (সা:) কর্তৃক স্বপ্নে দেখতে পাওয়া কথিত দ্বিতীয় ঈসার কী হবে? সত্য বলতে, এমন জগাখিচুড়ি মতবাদ জগতে দুই একটা আছে কিনা আল্লাহ মালুম।
[৪] তাছাড়া দুই ঈসা’র অস্তিত্ব থাকলে এবং তিনি (মির্যা) দ্বিতীয় ঈসা হলে: তখন প্রশ্ন দাঁড়ায়, তিনি জীবনে কখনাে কাবার তাওয়াফ (طواف) করতে সক্ষম হলেন না কিজন্য? (সীরাতে মাহদী ২/১১৯)। তবে কি কথিত দ্বিতীয় ঈসা (মির্যা)-কে স্বপ্নে কা’বা শরীফ তাওয়াফ করতে দেখাটা রাসূল (সা:)-এর ভুল ছিল বলবেন? নাউযুবিল্লাহ। উল্লেখ্য, দাজ্জালের তাওয়াফ এর ব্যাখ্যায় মির্যা কাদিয়ানী নিজেই লিখে গেছেন, তার মানে হচ্ছে ‘কাবার আশপাশে চোরের ন্যায় ঘুরাঘুরি করা, অভ্যন্তরে প্রবেশ না করা।’ (রূহানী খাযায়েন ১৪/২৭৫)।
সুতরাং বুঝা গেল, দাজ্জাল এর তাওয়াফ বলতে শরয়ীপন্থার তাওয়াফ উদ্দেশ্য নয়, বরং অভ্যন্তরে ঢুকতে না পেরে চোরের মত চারদিকে ঘুরাঘুরি করাই উদ্দেশ্য। কেননা অভিধানে চারপাশে ঘুরাঘুরি করাকেও ‘তাওয়াফ’ বলে।
[৫] সুনানু আবু দাউদ শরীফের “কিতাবুল মালাহিম” অধ্যায়ে উল্লেখ আছে, রাসূল (সা:) বলেছেন: আমার আর ঈসার মধ্যখানে আর কোনাে নবী নেই। নিশ্চয়ই তিনি (ঈসা) নাযিল হবেন (হাদীস নং ৪৩২৪]। আর এদিকে মির্যার ভাষ্যমতে, হাদীসটিতে বর্ণিত আগত এই ঈসা নাকি মির্যা নিজেই। তাই প্রশ্ন আসে, এই ঈসা যদি মির্যা-ই হন, তাহলে তিনি একই সাথে কথিত দ্বিতীয় ঈসা-ও কিভাবে হন? সমীকরণ তাে মিলেনা! কিংবা রাসূল (সা:) থেকে অন্ততপক্ষে একটি হাদীসেও ‘রূপক’ শব্দের আরবী সমার্থক “মাছীল” (مثيل) শব্দটিও কেন উল্লেখ হলনা? আশাকরি বুঝতেই পেরেছেন, ওদের কথিত দুই ঈসা তত্ত্বের গােড়াতে কী পরিমানে অসঙ্গতি নিহিত!
লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক