কাদিয়ানীরা হযরত আয়েশা (রা.) এবং দারুলউলুম দেওবন্দের প্রতিষ্ঠাতা মওলানা কাসেম নানুতবী (রহ.)-এর প্রসঙ্গও টেনে এনেছেন এবং বুঝাতে চেয়েছেন যে, এঁনাদের বিশ্লেষণের সাথে নাকি তারাও সম্পূর্ণ একমত! তাই প্রথমেই দেখে নেয়া যাক উনাদের সেই বিশ্লেষণটুকু কেমন।
আরো পড়ুন : মওলানা কাসেম নানুতবী (রহ:) এর নামে কাদিয়ানীদের মিথ্যাচারের জবাব Click
- ‘তোমরা বলিও না তাঁর পরে কোনো নবী নেই’- উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা.)-এর খণ্ডিত বক্তব্যে বিভ্রান্তির মুখোশ উন্মোচন :
প্রশ্ন, বিভ্রান্তি কিভাবে ছড়ায়? উত্তর, কাদিয়ানীরা হযরত আয়েশা (রা.)-এর বক্তব্যের শেষের অংশটুকু বাদ দিয়ে বুঝাতে চায়, বর্তমানেও নতুন নবীর আগমন হতে পারার ইংগিত রয়েছে (নাউযুবিল্লাহ)।
প্রশ্ন, তাহলে সম্পূর্ণ রেওয়ায়েতটি কিরকম?
উত্তর, ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে সাল্লাম আল বছরী (মৃত : ২০০ হিজরী) বিরচিত ‘তাফসীরে ইয়াহইয়া ইবনে সাল্লাম’ (تفسير يحي بن سلام) নামক কিতাবে হযরত আয়েশা (রা.)-এর বক্তব্যটি এইরূপ, عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ : لا تَقُولُوا : لا نَبِيَّ بَعْدَ مُحَمَّدٍ ، وَقُولُوا : خَاتَمُ النَّبِيِّينَ ، فَإِنَّهُ يَنْزِلُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ حَكَمًا عَدْلا وَإِمَامًا مُقْسِطًا ، فَيَقْتُلُ الدَّجَّالَ ، وَيَكْسِرُ الصَّلِيبَ ، وَيَقْتُلُ الْخِنْزِيرَ ، وَيَضَعُ الْجِزْيَةَ ، وَتَضَعُ الْحَرْبُ أَوْزَارَهَا অর্থাৎ “তোমরা বলিও না মুহাম্মদ (সা.)-এর পর আর কোনো নবী নেই (তবে) তোমরা ‘খাতামুন নাবিয়্যীন’ বলো। কেননা (অচিরেই) ঈসা ইবনে মরিয়ম একজন ন্যায়পরায়ণ প্রশাসক এবং ইনসাফগার ইমাম হিসেবে অবতরণ করবেন। তিনি দাজ্জাল হত্যা করবেন এবং ক্রুশ ভাঙ্গবেন ও শূয়োর হত্যা করবেন। তিনি রাষ্ট্রিয় টেক্স (কর) রহিত করে দেবেন। তখন (আর কোনো প্রতিপক্ষ না থাকায়) লড়াই তার সরঞ্জামাদি গুটিয়ে নেবে (অনুবাদ শেষ হল)।” (সূরা আহযাব, আয়াত ৪০ দ্রষ্টব্য)।
তারা এই ক্ষেত্রে ‘মাজমাউল বিহার’ গ্রন্থ থেকেও উদ্ধৃতি দেয়। সেক্ষেত্রেও তারা একই বাক্যের শেষের অংশটি বাদ দিয়ে বলে। যেমন, তারা বলে থাকে যে, আয়েশা (রা.) বলেছেন, قولوا خاتم الأنبياء و لا تقولوا لا نبى بعده অর্থাৎ তোমরা খাতামুল আম্বিয়া বলো, (তবে) তোমরা বলবেনা তাঁর পরে আর কোনো নবী নেই।
প্রশ্ন, তারা কোন অংশটি বাদ দিয়ে বলে?
উত্তর, তারা একই বাক্যের পরের অংশটুকু বাদ দিয়ে বলে। অথচ সংশয় নিরসনকারী জবাব তার পরের অংশেই রয়েছে। কেননা পরের অংশটি হচ্ছে, هذا ناظراً إلى نزول عيسى অর্থাৎ এটি ঈসার নাযিল হওয়ার প্রতি দৃষ্টি রেখে। (মাজমাউল বিহার ৫০২; ইমাম তাহের পাটনী গুজরাটী রহ.)।
যাইহোক উল্লিখিত বর্ণনাটি কাটছাঁট না করলে যে কথা বুঝতে কষ্ট হয়না তা হল, মূলত হযরত ঈসা (আ.)-এর দ্বিতীয়বার আগমনের দিকে তিনি ইংগিত করতেই এই কথা বলেছিলেন! অথচ তারা উদ্ধৃত করার সময় শেষের অংশটুকু বাদ দিয়ে দেয়। আল্লাহ তাদের এই সমস্ত খেয়ানত ক্ষমা করে হিদায়াত দান করুন। আমীন।
লিখক, প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী