Home খাতামুন নাবীঈন প্রত্যেক নবীই কেয়ামতের দিন তাদের উম্মতের সাক্ষী হবেন

প্রত্যেক নবীই কেয়ামতের দিন তাদের উম্মতের সাক্ষী হবেন

0
প্রত্যেক নবীই কেয়ামতের দিন তাদের উম্মতের সাক্ষী হবেন

প্রত্যেক নবীই নিজ নিজ বিদ্রোহী উম্মতদের বিরুদ্ধে কেয়ামতের দিন সাক্ষী হওয়া,

আমরা যখনি কাদিয়ানী অনুসারীদের প্রশ্ন করি, মির্যা কাদিয়ানী যদি তার ‘নবী’ দাবীতে সত্য হয় তাহলে তার উম্মত কারা? আপনারা কীজন্য নিজেদেরকে তার ‘উম্মত’ বলে স্বীকার করেন না? অথচ পৃথিবীতে এমন কোনো নবী নেই যার ‘উম্মত’ ছিল না। (এ সম্পর্কে দলিল প্রমাণ একটু পরেই পেশ করা হবে)। এমন প্রশ্নের উত্তরে তখন তাদের অবস্থা দেখার মত হয়! বেশিরভাগই তখন চিন্তায় পড়ে যায়। কী উত্তর দেবে! তাদের আরও একটি প্রশ্ন করেছিলাম যে, কবরে ফেরেশতা যখন জিজ্ঞেস করবে যে, তোমার নবী কে? তখন কার নাম বলবেন? এ সব প্রশ্নের সামনে তাদেরকে সীমাহীন অসহায় দেখা যায়। বিবাড়িয়ার (কান্দিপাড়া) বেশ কয়জন তরুণ আহমদী (কাদিয়ানী) শুধু প্রশ্নগুলো নিয়ে নিরপেক্ষ চিন্তা থেকেই তওবা করে মুহাম্মদ (সা.)-কে মুক্ত ও স্বাধীন অর্থে ‘শেষনবী’ মেনে নিয়ে ‘ইসলামের মূলধারায়’ ফিরে এসেছেন, আলহামদুলিল্লাহ। ইদানীং তাদের নেতাদের কেউ কেউ উক্ত প্রশ্নদুটি থেকে আত্মরক্ষার জন্য নতুন ডেলিভারি দিচ্ছে, তা হচ্ছে, ‘সব নবীর উম্মত থাকেনা!’ এ যেন রাজ্যবিহীন ‘রাজা’ আর সেনাবিহীন সেনাপতি! অথচ মির্যা কাদিয়ানীর দ্ব্যর্থহীন উক্তি, “আমার আগমন দ্বারা প্রত্যেক নবী জীবন ফিরে পেয়েছে। আর সমস্ত রাসূল আমার জামার মধ্যে গোপন হয়ে আছে।” দেখুন, নুযূলে মসীহ, রূহানী খাযায়েন খ-১৮ পৃ-৪৭৮, (ফার্সি কাব্যাংশের অনুবাদ)। অধিকন্তু তার দাবী হচ্ছে, “আদমের বাগান অদ্য পর্যন্ত ছিল অসম্পূর্ণ; আমার আগমনে তা ফল ও পাতায় হয়ে যায় পরিপূর্ণ।” (দেখুন, বারাহীনে আহমদীয়া ৫ম খন্ড, রূহানী খাযায়েন ২১/১৪৪)। অন্যত্রে আরও লিখেছে, (কথিত ইলহাম: খোদাতালা মির্যাকে বলেছেন) ‘ইন্নী মা’আল আকরাম, লাও লা-কা লামা খালাকতুল আফলাক’ অর্থাৎ আমি বুযূর্গদের সাথেই রয়েছি। যদি তুমি না হতে তাহলে আমি আসমান সমূহকে সৃষ্টি করতাম না। (সূত্র, তাযকিরাহ, চতুর্থ এডিশন পৃষ্ঠা নং ৫২৫; ইলহাম ০৪-০৫-১৯০৬ ইং)। নাউযুবিল্লাহ। কাজেই প্রশ্ন আসে, এমন দম্ভোক্তি যার তার উম্মত থাকবেনা তা কিভাবে হয়? প্রামাণ্য স্ক্যানকপি দ্রষ্টব্য,

রূহানী খাযায়েন খ-১৮ পৃ-৪৭৮

সমস্ত নবী নিজ নিজ উম্মতের জন্য সাক্ষী হওয়া :

আল্লাহতালা বলেছেন, (আরবী) وَ یَوۡمَ نَبۡعَثُ مِنۡ کُلِّ اُمَّۃٍ شَہِیۡدًا ثُمَّ لَا یُؤۡذَنُ لِلَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا وَ لَا ہُمۡ یُسۡتَعۡتَبُوۡنَ

অনুবাদঃ আর যেদিন আমরা প্রত্যেক উম্মত থেকে এক একজন সাক্ষী পেশ করব তারপর যারা কুফরী করেছে তাদেরকে না ওযর পেশের অনুমতি দেয়া হবে, আর না তাদেরকে (আল্লাহ্‌র) সন্তুষ্টি লাভের সুযোগ দেয়া হবে। (সুরা : নাহল, আয়াত : ৮৪)।

তাফসীরঃ ইতিপূর্বে যত নবী এসেছিলেন প্রত্যেকে কেয়ামতের দিন আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাবেন এবং নিজেদের দায়িত্ব পালনের পক্ষে সাক্ষী হবেন। আর বিদ্রোহী উম্মতগণের বিপক্ষে তাদের কুফরি ও মিথ্যারোপের সাক্ষী হবেন (ফাতহুল কাদীর)। তারা সাক্ষ্য দিবেন যে, তারা তাদেরকে তাওহীদ ও আল্লাহর আনুগত্যের দাওয়াত দিয়েছিলেন। অন্য আয়াতেও আল্লাহতালা সেটা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “এটা এমন এক দিন যেদিন না তারা কথা বলবে, আর না তাদেরকে অনুমতি দেয়া হবে ওযর পেশ করার।” (সূরা আল-মুরসালাত ৩৫-৩৬) {তাফসীরে ইবন কাসীর}।

আগের আয়াতে বলা হয়েছিল, বহু মানুষ সত্য অনুধাবনের পরও ঈমান আনে না। তারা কাফির থেকে যায়। আলোচ্য আয়াতে কাফিরদের পরকালীন করুণ পরিণতির বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে। এ আয়াতে তিনটি প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়েছে। এক. কিয়ামতের আদালতে সাক্ষী। দুই. কৈফিয়তের অবকাশ। তিন. আপত্তি গৃহীত না হওয়া।

কিয়ামতের দিন সমস্ত উম্মত থেকে সাক্ষী হাজির করা হবে এবং সাক্ষীরা নিজ সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে সত্য পৌঁছে দেওয়া প্রসঙ্গে সাক্ষ্য দেবে। এমন ব্যক্তিদের সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত করা হবে, যাঁরা আল্লাহ’র কাছে গ্রহণযোগ্য ও মানুষের জন্য তাঁরা আদর্শ। তাঁরা হলেন নবী-রাসুল। প্রত্যেক নবীকে তাঁর জাতির (বিদ্রোহী উম্মতদের বিরুদ্ধে) সাক্ষী হিসেবে উপস্থাপন করা হবে। এ বিষয়ে অন্য আয়াতে এসেছে, (আরবী) فَكَيْفَ إِذٰا جِئْنٰا مِنْ كُلِّ أُمَّةٍ بِشَهِيدٍ وَ جِئْنٰا بِكَ عَلىٰ هٰؤُلاٰءِ شَهِيداً অর্থাৎ ‘তখন কী অবস্থা হবে, যখন আমি প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী (নবী) উপস্থিত করব এবং তোমাকে [মহানবী (সা.)] তাদের (বিদ্রোহী উম্মতদের মিথ্যা অভিযোগের) বিরুদ্ধে সাক্ষীরূপে উপস্থিত করব, (সূরা : নিসা, আয়াত : ৪১)।

সম্পর্কিত আলোচনাঃ ইমাম জালালুদ্দীন আস-সুয়ূতী (রহ.) লিখেছেন, يشهد عليها و هو نبيها অর্থাৎ তাদের প্রত্যেক উম্মতের ব্যাপারে তাদের নবীই সাক্ষ্য দেবেন (জালালাইন)। ইমাম ইবনে কাসীর (রহ.) থেকেও এর তাফসীরে পরিষ্কার উল্লেখ আছে, (আরবী) فكيف يكون الأمر والحال يوم القيامة وحين يجيء من كل أمة بشهيد يعني الأنبياء عليهم السلام অর্থাৎ কেয়ামত দিবসের সেই পরিস্থিতি ও অবস্থা কেমন হবে, যখন আমি প্রত্যেক উম্মত থেকে সাক্ষী তথা নবীগণ (আ.)-কে উপস্থিত করব। (ইবনে কাসীর, সূরা নাহল ৪১)। প্রামাণ্য স্ক্যানকপি দ্রষ্টব্য,

ইবনে কাসীর

শেষকথাঃ আল্লাহতালা পৃথিবীতে যত নবী রাসূল প্রেরণ করেছেন তাদের প্রত্যেককে তিনি কেয়ামতের দিন নিজ নিজ উম্মতের সাক্ষীরূপে উত্থিত করবেন। কোনো কোনো নবী স্বজাতির বিদ্রোহীদের হাতে নৃশংসভাবে হত্যা হওয়ায়, কেউ বা দাওয়াত কাজের দীর্ঘ সুযোগ না পাওয়ায় হাতেগুনে কয়জন উম্মত নিয়ে হাজির হবেন। এমন কোনো নবী থাকবেনা যাঁর কোনো উম্মত ছিলনা। আর এধরণের হওয়ার ব্যাপারটা কল্পনারই বাহিরে। কেননা কোনো নবীর একজন উম্মত-ও না থাকার অর্থ দাঁড়াচ্ছে আল্লাহ উপযুক্ত প্রতিনিধি নির্বাচনে ব্যর্থ ছিলেন। নাউযুবিল্লাহ। যা চিন্তা করাও কুফুরীর শামিল।

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক

প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here